নীল_আকাশের_পরী #এম_আর_এ_আকিব #পর্ব_১১

0
150

#নীল_আকাশের_পরী
#এম_আর_এ_আকিব
#পর্ব_১১
শব্দসংখ্যা: ১০৪৯

নিশি মুগ্ধ হয়ে বলল, “বাহ! অনেক সুন্দর হয়েছে। আর তুমি বলো কবিতা পারো না।”
আকিব হেসে বলল, “আসলেই পারি না। এখন তুমি কাছে থাকায় পারলাম।”
নিশি বলল, “আচ্ছা, বুঝলাম।”
আকিব বলল, “জায়গাটি কিন্তু খুব সুন্দর।”
নিশি বলল, “হুম, এজন্যই তো তোমাকে এখানে নিয়ে এলাম। আচ্ছা, আমাদের পরীস্থানে যাবে?”
আকিব কিছুক্ষণ ভেবে বলল, “না বাবা, পরে যদি আমাকে আর আসতে দাও না।”

কথাটি শুনে নিশি হাসতে লাগলো। আকিব বলল, “কী ব্যাপার? হাসছো কেন?”
নিশি বলল, “তোমাকে যদি আটকিয়ে রাখার ইচ্ছে হতো তাহলে এখনই তোমাকে পরীস্থানে নিয়ে যেতাম তুমি বাধা দিতে পারতে না।”
আকিব বলল, “হুম, তা-ও ঠিক।”
নিশি বলল, “তাহলে যাবে?”
আকিব বলল, “ওখানে গেলে তো থাকতে হবে তাই না? একদিনে ঘুরে আসা যাবে না ”
“হুম, থাকবে তো।”
“তো ঘরে কী বলবো? আব্বু, আম্মু আর সায়রা ওরা তো আমাকে খুঁজবে।”
“বলবে যে তোমার কোনো বন্ধুর বাসায় যাচ্ছ।”
“আসলে আমার তেমন বন্ধু নেই তো, তাই তেমন কোথাও যাওয়া হয়নি। বললে কি বিশ্বাস করবে?
“তাহলে বলো যে তোমাদের কলেজ থেকে সবাই ট্যুরে যাবে। তাই তুমি যাবে। দুই/তিন দিন থাকতে হবে।”
“হুম, তা বলা যায়। কিন্তু ওখানে গেলে তোমার পরিবারের কেউ কিছু বলবে না?”
নিশি বলল, “না, বলবে না। কারণ সবাই তোমার কথা জানে।”
আকিব অবাক হয়ে বলল, “কী বলো? আমার কথা জানে মানে? তুমি কী বলেছ তাদের?”
“আমি কিছুই বলিনি৷ ছোটবেলা থেকেই তোমার সব ঘটনা আমাদের পরিবারের সবাই জানে৷ তারা-ই তো আমাকে তোমার কথা বলল।”
“ওহ! আচ্ছা।”
“তা যাবে না-কি আমাদের এখানে? সবাই তোমাকে অনেক আদর করবে।”
আকিব বলল, “আচ্ছা, আমি বাড়িতে বলে দেখবো। যদি অনুমতি পাই তবে যাবো।”
“আচ্ছা ”
আকিব বলল, “এখন আমাকে যেতে হবে যে। অনেক দেরি হলো মনে হয়।”
নিশি বলল, “হুম, তাহলে চলো।”

আকিবের আজ খুব-ই ভালো লাগছে। বাড়ি যেতে একদম ইচ্ছে করছে না৷ কিন্তু তারপরেএ তো যেতে হবে।

নিশি পানি থেকে পা তুলে দাঁড়িয়ে বলল, “আমাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরো। শক্ত করে ধরবে না হয় পড়ে যাবে।”
আকিবের এখন আর জড়িয়ে ধরতে লজ্জা করলো না। সে অনেকটা স্বাভাবিক হয়ে গেছে। নিশিকে এখন অনেক আপন মনে হয়। মানুষের মনটাই পরিবর্তনশীল। এখন আর ঐশীর কথা তেমন মনে পড়ে না। ঐশীকে শুধুই বন্ধু ভাবে সে। তবে যখন ঐশীর সাথে কথা বলে তখন আবার ঐশীকে ভালো লাগতে শুরু করে। আকিব জানে এটা অন্যায়। কিন্তু কী করবে! সে তো নিজের মনকেই নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না। একটি কথা আছে, “চোখের আড়াল তে মনের আড়াল।” যতক্ষণ সে নিশির কাছে তাকে ততক্ষণ তার ঐশীর কথা মনে পড়ে না।

আকিব নিশিকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো। নিশি ধীরে ধীরে উপরে উঠতে লাগলো। আকিবের খুব-ই ভালো লাগছে। গতবার যেমন ভয় করেছিল এখন এমন করছে না। সে মুগ্ধ দৃষ্টিতে নিশির মুখের দিকে তাকিয়ে আছে। বিধাতা তাকে নিখুঁতভাবে সৃষ্টি করেছেন। যার দিকে সারাজীবন তাকিয়ে থাকা যায়।

আকিব এভাবে কতক্ষণ তাকিয়ে ছিল জানে না। নিশির রূপ যেন তাকে সম্মোহন করে ফেলে। হঠাৎ বুঝলো নিশি ধীরে ধীরে মাটিতে নামছে। আকিব নিচে তাকিয়ে দেখলো দেখলো তারা তাদের গন্তব্য স্থানে পৌঁছে গেছে।

নিশি মাটিতে নামার পর আকিব তাকে ছেড়ে দিলো। যদিও ছাড়তে ইচ্ছে করছে না কিন্তু তারপরেও তো ছাড়তে হবে।
নিশি বলল, “আচ্ছা, তাহলে তুমি যাও। অনেক দেরি হয়ে গেছে।”
আকিব বলল, “আচ্ছা।”

আকিব চলে যেতে লাগলো কিন্তু যাওয়ার সময় বারবার পিছন ফিরে নিশিকে দেখতে লাগলো।

ঘরে পৌঁছার পর তার চোখে যেন রাজ্যের ঘুম চলে এলো। সে দ্রুত বিছানায় নিজের গা এলিয়ে দিলো।

সকালে যথারীতি সায়রার ডাকে ঘুম ভাঙলো। মন ভালো থাকায় সে নাশতা করার সময় সবাইকে ভালো-মন্দ জিজ্ঞেস করলো। সে যে কলেজ থেকে ট্যুরে যাবে তা কি এখন বলে দেবে না কি পরে বলবে তা নিয়ে একড়ু দ্বিধায় পড়লো। পরে ভাবলো যেহেতু তার বাবা এখন বাড়িতে নেই তাহলে এখন বলে লাভ নেই। পরেই বলবে। রাতে যখন সবাই খেতে বসবে তখন বলবে।

নাশতা শেষ করে কলেজ ইউনিফর্ম পরে কাঁধে ব্যাগ ঝুলিয়ে কলেজে চলে গেল। কলেজে দুটি ক্লাস শেষ করে ঐশীর সাথে ক্যান্টিনে গিয়ে বসলো। তারপর পরী নিয়ে অনেক কথা বলল।
পরে বলল,”জানো? সে আমাকে পরীস্থানে যেতে বলেছে। যাবো না-কি?”
ঐশী বলল, “আরে বাহ! পরীস্থানে যাওয়ার এমন অফার ভুলেও মিস করো না। আমি এরকম অফার পেলে তো এক পায়ে রাজি হয়ে যেতাম।”
আকিব বলল, “হুম, আমিও ভাবছি যাবো। কিন্তু ঘরে কী বলব?”
ঐশী বলল, “তুমি ছেলে মানুষ। তুমি কোথাও গেলে এত চিন্তা করো কেন। যেকোনো একটা বলে দিবে৷ তাহলেই হলো।”
আকিব বলল, “কিন্তু কী বলব বলো? ভাবছি বলবো যে কলেজ থেকে ট্যুরে যাবো৷ কী বলো?”
“হুম, ভালো আইডিয়া। বলো, সমস্যা কী?”
“কিন্তু আমি তো রাতে বের হবো৷ তো যদি জিজ্ঞেস করে যে রাতে বের হচ্ছ কেন তাহলে কী বলবো?”

ঐশী বলল, “তোমাকে নিয়ে আর পারি না। এত কথা তোমার মাথায় কীভাবে আসে? কিছু বলবে না তারা।”
আকিব চিন্তিত মুখে বলল, ” কিন্তু যদি বলে? আগে থেকে উত্তর রেডি করে যাওয়া কি জ্ঞানীর কাজ নয়?”
“এহ! আসছে আমার জ্ঞানী রে!”
আকিব বলল, “উঁহু, বলো না কী উত্তর দিবো?”
ঐশী কিছুক্ষণ ভেবে বলল, “বলবে যে অনেক দূরের পথ তো তাই রাতেই রওয়ানা হবে সবাই। যাতে করে ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে রাস্তা পার হওয়া যায়।”
আকিব বলল, “বাহ! এই তো মনের মতো উত্তর৷ তোমার তো অনেক বুদ্ধি।”
ঐশী হেসে বলল, “না না, বুদ্ধি তো আমার নেই। বুদ্ধি তো তোমার। তুমি তো জ্ঞানী তাই তোমার মাথায় অনেক প্রশ্ন আসে।”
আকিব বলল, “আরে বাদ দাও। আচ্ছা আরেকটা কথা বলো।”
ঐশী বলল, “বলো কী কথা।”

আকিব বলল, “আজ রাতে যদি বলি তাহলে কি আগামীকালই চলে যাব? না কি কয়েকদিন আগে বলে কয়েকদিন পরে যাব। আজ বলে কাল যদি চলে যাই বলবে যে মাত্র একদিন আগে বললে কেন?”
ঐশী রেগে বলল, “উফ! তোমাকে নিয়ে আর পারি না। এটাও বলা লাগে? বলবে যে আগামীকালই যেতে হবে। আমি একদিন আগে বললাম।”
আকিব বলল, “আচ্ছা বলব।”
ঐশী বলল, “আচ্ছা, তাহলে আমি এখন যাই। পরীস্থানে গিয়ে কেমন লাগলো আমাকে জানাইও।”
“হুম, তা তো অবশ্যই। আমি যদি ভালোভাবে ফিরে আসি তাহলে পরেরবার তোমাকেও নিয়ে যাবো।”
ঐশী বলল, “আরে না আমি যাবো না।”
আকিব বলল, “কেন রেগে আছ না-কি?”
“না, আব্বু আমাকে আত্মীয়ের বাড়িতেও যেতে দেয় না আর ওখানে যেতে দেবে?”
আকিব বলল, “তা-ও তো কথা।”
ঐশী বলল, “আচ্ছা তাহলে যাই। দেরি হয়ে যাচ্ছে।”
“আচ্ছা যাও।”

আকিব সবার সাথে রাতের খাবার খেতে বসেছে। সে কীভাবে কথাটি বলবে ভাবতে লাগলো। তারপর বলল, “আব্বু।”
আকিবের আব্বু বললেন, “বল।”
আকিব ভয়ে ভয়ে বলল, “আমাদের কলেজ থেকে সবাই ট্যুরে যাবে। ওখানে তিনদিন থাকবে। আমি যেতে চাই।”
“কবে যাবে?”
“জি, আগামীকাল।”
“ওহ! এখন টাকা লাগবে তাই না?”
আকিব হেসে বলল, “না না, টাকা লাগবে না৷ শুধু অনুমতি দিলেই হবে।”
আকিবের আব্বু অবাক হয়ে বললেন, “কী? তিনদিনের সফরে যাবি আর টাকা লাগবে না?”

আকিব কী বলবে বুঝতে পারলো না। তার তো আসলেই টাকা লাগবে না। তাই মুখ দিয়ে সত্যটা বলে দিয়েছে। কিন্তু এখন কী করা যায়?

চলবে…

[বি.দ্র. অসুস্থ বলে লিখতে ক’ষ্ট হচ্ছে। যদি আগামীকাল সুস্থ হই তাহলে পরবর্তী পর্ব পাবেন। আর অসুস্থ থাকলে একটু দেরি হবে।]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here