নীল_আকাশের_পরী #এম_আর_এ_আকিব #পর্ব_১২

0
200

#নীল_আকাশের_পরী
#এম_আর_এ_আকিব
#পর্ব_১২
শব্দসংখ্যা: ১০৪৮

আকিব বলল, “আসলে আব্বু টাকাও লাগবে। হঠাৎ মুখ ফসকে বের হয়ে গেছে যে লাগবে না।”
আকিবের আব্বু হেসে বললেন, “পা’গল ছেলে৷ আচ্ছা, আমি খাওয়ার পর তোকে টাকা দিয়ে দেবো। কখন যাবি?”
আকিব বলল, “জি আব্বু, আগামীকাল রাতে।”
আকিবের আব্বু বললেন, “রাতে কেন? ট্যুরে সকালে যাওয়ার কথা না?”
আকিব বলল, “আসলে আব্বু ওখানে যেতে অনেক সময় লাগবে তো তাই রাতে বের হবে। এতে করে জার্নিটা ঘুমিয়ে কাটিয়ে দেওয়া যাবে।”
আকিবের আব্বু বললেন ল, “আচ্ছা সমস্যা নেই।”

খাওয়ার পর আকিবের আব্বু পকেট থেকে হাজার পাঁচ এক টাকা দিয়ে বললেন, “এই নেয় টাকা।” আকিবের টাকার প্রয়োজন ছিল না। কিন্তু তা-ও টাকাগুলো নিতে হলো। সে তার বাবাকে দেখে অবাক হলো। কে বলবে ইনি তার আসল বাবা না? যিনি না চাইতেও কতকিছু দেন তাকে আসল বাবা না বলতে আকিবের সংকোচ হয়।

খাওয়া-দাওয়ার পর্ব শেষ করে আকিব যথারীতি চলে গেল সেই নদীর তীরে। পরী আর এখন বটতলায় আসে না। এর পাশে ছোট্ট একটা নদী রয়েছে। সেই নদীর তীরেই একটা নির্জন জায়গা রয়েছে। এখানেই পরী আসে।

আকিব নিশিকে বলল, “জানো, বাবার কাছ থেকে পারমিশন পেয়েছি। এখন পরীস্থানে যেতে কোনো বাধা নেই।”
নিশি বলল, “সত্যি বলছ? তাহলে তো ভালোই হলো। আমাদের পরিবারের সবার সাথে তোমার দেখা হবে। সবাই তোমাকে অনেক আদর করবে।”
আকিব বলল, “আচ্ছা, তোমাদের পরিবারে মোট কে কে আছে তা তো জানা হলো না।”
নিশি বলল, “আমাদের পরিবারে তো আব্বু, আম্মু আর আমি। তবে আমার চাচাতো ভাই বোনেরাও তোমাকে চিনে। তাদের সাথেও দেখা হবে। আর আমার খালা, খালু এবং খালাতো ভাই-বোনেরাও তোমাকে খুব ভালো করে চেনে। সবার সাথে দেখা হবে।”
আকিব বলল, “আচ্ছা, ওখানে কয়দিন থাকবো?”
নিশি বলল, “তুমি যতদিন থাকতে চাও।”
আকিব বলল, “আমি তো যত তাড়াতাড়ি বাড়ি আসা যায় ততই ভালো মনে করি।”
নিশি বলল, “তাহলে দুই-তিনদিন থাকতে হবে।”
আকিব বলল, “আচ্ছা।”

তারপর আরো অনেকক্ষণ নিশির সাথে কথা হলো। অনেক কথা-ই জানা হলো। তারপর একসময় আমি বাড়িতে চলে এলো। আকিবের মনের মধ্যে অনেক উত্তেজনা কাজ করছে যে সে আগামীকাল পরীস্থানে যাবে। পরীস্থান কীরকম, তার ভালো লাগবে কি-না, ওখানকার লোকগুলো ভালো না কি ম’ন্দ এসব ভাবতে ভাবতে তার ঠিকমতো ঘুম-ই হলো না রাতে।

সকালে ঘুম থেকে উঠে নাশতা করে কলেজে চলে গেল। সেখানে ঐশীর সাথে সবকিছু নিয়ে আলোচনা করলো। ঐশীও তাকে যথারীতি অনেক পরামর্শ দিলো। দুই-তিনদিন যে ঐশীর সাথে দেখা হবে না এতে আকিবের একটু খা’রাপ লাগলো। হয়তো ঐশীরও লাগলো তবে সেটা বুঝতে দিলো না। ঐশীর কাছে বিদায় নিয়ে সে একসময় বাড়িতে চলে এলো।

রাতের খাওয়া-দাওয়া শেষ করে আকিব সবার কাছ থেকে বিদায় নিলো। ব্যাগ আগে থেকেই গুছানো ছিল। তাই আর সময় ন’ষ্ট হলো না। আকিব সবার কাছ থেকে বিদায় বিয়ে বেরিয়ে পড়লো। তার আব্বু এগিয়ে দিতে চেয়েছিলেন কিন্তু সে না করলো।

আকিব দাঁড়িয়ে আছে নদীর তীরে। কিন্তু নিশির এখনো কোনো দেখা নেই। নিশি এত দেরি করছে কেন আজ? নিশির সাথে যোগাযোগ করার কোনো উপায়ও আকিবের কাছে নেই। তাই সে চুপচাপ একই জায়গায় দাঁড়িয়ে রইলো। সেই সাথে অনেক কথা-ই তার মনে উদয় হলো। সে ভাবলো আদৌও পরী বলে কেউ আছে না কি সব-ই তার কল্পনা। এখন যদি পরী বলে কেউ না থাকে তাহলে তো তাকে বাড়িতে যেতে হবে। বাড়িতে গিয়ে কী বলবে সে? সে ভাবতে লাগলো। অনেকক্ষণ ভাবার পর সে ঠিক করলো বাড়িতে গিয়ে সে বলবে, “সে পৌঁছার আগেই বাস ছেড়ে দিয়েছে।”

কিন্তু এটি বললে তো আবার আরেকটা ঝা’মেলার সৃষ্টি হবে। তখন পরবর্তী তিনদিন সে কলেজে যেতে পারবে না। কারণ সবাই বলবে যে কলেজ থেকে সবাই যেহেতু ভ্রমণে গেছে তাহলে তো কলেজ বন্ধ এখন।
আকিব ঠিক করলো সে তা-ই করবে। তিনদিন কলেজে যাবে না। কিন্তু এটা ভেবে খা’রপ লাগছে যে এতদিনের সব ঘটনা কি মিথ্যা ছিল? সে যে কল্পনাপ্রবণ এটা সে জানে। কিন্তু তাই বলে এসব তার কল্পনা?

আকিব পকেট থেকে মোবাইল বের করে দেখলো বারোটা বাজছে। তার মানে প্রায় ত্রিশ মিনিট থেকে সে এখানে বসে আছে। কিন্তু এখনো যে নিশির দেখা নেই। আর কতক্ষণ অপেক্ষা করবে সে? না, আর অপেক্ষা করা যায় না। বাড়িতে গেলেও তো বলবে যে বাস যেহেতু চলে গেছে তাহলে সাথে সাথে সে চলে এলো না কেন? না, আর শুধু শুধু এখানে বসে থেকে লাভ নেই। একাকী এই নির্জন রাতে বসে থাকতে তার একদম ভালো লাগছে না। এই জায়গাটি তার কাছে খুব-ই বিরক্তিকর লাগছে। তার চেয়ে যদি বাড়িতে গিয়ে শান্তিতে ঘুমাতে পারতো তাহলে হয়তো মনে শান্তু লাগতো। অথচ গতকালও এই জায়গাটি তার কাছে খুব-ই মনোরম মনে হয়েছিল। অথচ আজ বিরক্তিকর লাগছে। আসলে কোনো জায়গা-ই আমাদের কাছে তেমন প্রিয় হয় না। যখন আমাদের সাথে আমাদের প্রিয় মানুষগুলো থাকে তখন বিরক্তিকর জায়গাও সুন্দর মনে হয় আর যখন আমরা একাকী থাকি তখন সুন্দর জায়গাও বিরক্তিকর মনে হয়।

আকিব উঠে চলে যাবে ঠিক তখন ভাবলো ঐশীর সাথে একবার পরামর্শ করে নিই। কিন্তু এত রাতে ঐশী কি জেগে থাকবে? জেগে থাকলেও ওত রাতে কল দেওয়া কি ঠিক হবে? আকিব মোবাইল বের করে দেখলো ১২:১০ মিনিট বাজে। যদিও এত রাতে কাউকে কল দেওয়া উচিত না তারপরেও সে ঐশীকে কল দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিলো৷ কারণ এই মুহূর্তে তার ঐশীর সাথে কথা বলাটা একান্ত প্রয়োজন।

আকিব মোবাইলে ঐশীর নাম্বার বের করে ডায়াল করলো। কিন্তু তার মনটা কেমন জানি অস্থির লাগছে সে ঐশীকে কী বলবে তা নিয়ে। সে বলবে যে এসব কিছু তার কল্পনা ছিল? কী লজ্জার কথা! কিন্তু ঐশী তাকে বুঝে। সে বিষয়টি নিয়ে মজা করবে না।

ঐশীকে কল দিলো। ঐশীর ফোনে কল যাচ্ছে। কিন্তু ঐশী কল ধরলো না৷ আকিব বুঝলো ঐশী ঘুমিয়ে গেছে। না, ঐশীকে এখন আর কল দেওয়া উচিত হবে না। এর চেয়ে বাড়িতে চলে যাওয়া-ই ভালো। আকিব বসা থেকে উঠতেই তার মোবাইলটা বেজে ওঠলো। আকিব পকেট থেকে মোবাইল বের করে দেখলো ঐশীর নাম্বার। সে কল রিসিভ করতেই ঐশী ঘুম জড়ানো কণ্ঠে বলল, “হ্যালো, কল দিয়েছিলে?”
আকিব বলল, “হুম।”
ঐশী বলল, “এত রাতে কেন? তোমার না আজ পরীস্থানে যাওয়ার কথা?”
আকিব চিন্তিত কণ্ঠে বলল, “হ্যাঁ, কিন্তু একটা সমস্যা হয়ে গেছে।”
ঐশী বলল, “কী?”
আকিব বলল, “নিশি তো আসেনি।”
ঐশী বলল, “হয়তো কোনো সমস্যা হয়েছে।”
আকিব বলল, “কিন্তু এতদিন তো দেরি হলো না। আজ কেন? আমি ভাবছি আদৌও সবকিছু আমার কল্পনা কি-না।”
“কী জানি! সেটা তো তুমি জানো৷ আমি নিশ্চিত করে বলতে পারছি না।”
“আচ্ছা, আমি এখন কী করবো?”
“তুমি এখন কোথায়?”
“আমি এখন নদীর তীরে আছি। বাড়িতে চলে যাব কি-না তা ভাবছি।”
“আরো কিছুক্ষণ অপেক্ষা করো।”
“আর কতক্ষণ করবো?”
“এখন কয়টা বাজে?”
“১২:১০ মিনিট।”
“তাহলে ১২:৩০ মিনিট পর্যন্ত অপেক্ষা করো।”
“আচ্ছা, তাহলে রাখি। আমার খুব ঘুম পাচ্ছে।”
“আচ্ছা।”

ঐশী ফোন রেখে দিলো। আকিবের বসে বসে অনেক কিছুই ভাবলো। দেখতে দেখতে ১২:৩০ বেজে গেল। কিন্তু না, নিশির এখনো কোনো দেখা নেই। না, আর অপেক্ষা করা যায় না। আকিব উঠে ধীরে ধীরে বাড়ির দিকে হাঁটতে লাগল।

চলবে…

[বি.দ্র. পাঠক সংখ্যা বৃদ্ধি পেলে আরো লম্বা করে প্রতি পির্ব দিবো। তাই ছোট হয়ে গেছে না বলে গল্পটি অন্যদের পড়াদ জন্য সাজেস্ট করুন।]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here