নীল_আকাশের_পরী #এম_আর_এ_আকিব #পর্ব_১৩

0
199

#নীল_আকাশের_পরী
#এম_আর_এ_আকিব
#পর্ব_১৩
শব্দসংখ্যা: ১০৮৪

আকিব উঠে চলে যাবে এমন সময় পেছনে কারো উপস্থিতি লক্ষ করলো। তাই সে পেছনে ফিরে দেখলো নিশি দাঁড়িয়ে। নিশিকে দেখে তার মনটা মুহূর্তেই ভালো হয়ে গেল। তাহলে সবকিছু তার কল্পনা নয়। সে নিশিকে বলল, “কী ব্যাপার? এসেছ তাহলে?”
নিশি বলল, “হুম, এসেছি।”
আকিব বলল, “এত দেরি করলে কেন? আমি তো ভাবলাম তুমি আর আসবে না। সবকিছুই আমার কল্পনা ছিল মনে হয়।”
নিশি বলল, “আরে আজ একটু দেরি হয়ে গেছে। তোমার জন্য একটা জিনিস নিয়ে এসেছি তাই। আর তোমার জন্য পরীস্থানে সবকিছু রেডি করে এলাম। তুমি কোথায় থাকবে এ সবকিছু।”
আকিব বলল, “তাহলে গতকাল তো আমাকে বলা উচিত ছিল যে তোমার আসতে দেরি হবে। আমি সেই কবে থেকে এসে তোমার জন্য অপেক্ষা করছি।”
নিশি বলল, “আচ্ছা, সরি। এখন কী এনেছি তোমার জন্য তা তো দেখো।”
আকিব অবাক হয়ে বলল, “কী এনেছ? দেখাও তো।”
নিশির হাতে একটি ব্যাগ ছিল। নিশি সেই ব্যাগ থেকে একটা জায়নামাজ বের করলো। তারপর আকিবের দিকে এগিয়ে দিয়ে বলল, “এই নাও।”
আকিব এটি হাতে নিয়ে ভালো করে দেখতে লাগলো। তারপর বলল, “আরে এটা তো জায়নামাজ। এটা আবার আনতে হয়? এগুলো তো আমাদের ঘরে অনেকগুলো আছে।”
নিশি হেসে বলল, “যা ভাবছো তা নয়। এটি সাধারণ কিছু নয়। যদিও দেখতে সাধারণ কিন্তু এর কাজটা হলো অসাধারণ।”
আকিব বলল, “এর কাজটা কী?”
নিশি বলল, “তুমি এই জায়নামাজে করে আমার মতো আকাশে উড়তে পারবে। আমাদের পরীস্থান তো অনেক দূরে তাই তোমার জন্য এটি নিয়ে এলাম।”
আকিব অবাক হয়ে বলল, “আরে বাহ! সত্যি আমি উড়তে পারব? আমার তো বিশ্বাস হচ্ছে না।”
নিশি বলল, “হুম, সত্যি। আর এত বিস্ময়ের কিছু নেই। এখনই চলো দুজন পরীস্থানের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হই।”
আকিব বলল, “চলো।”

আকিব দ্রুত জায়নামাজটি মাটিতে রেখে জায়নামাজের ওপর ওঠলো৷ কিন্তু জায়নামাজ তো উড়ছে না। এটা কীভাবে কাজ করে? কী কর‍তে হবে আকিব বুঝতে পারছে না৷ তার কি এখন কোনো মন্ত্র পড়তে হবে? ছোটবেলায় তো সে দেখেছে এরকম কিছু করতে হলে আগে মন্ত্র পড়তে হয়।
আকিব নিশিকে বলল, “এটা তো উড়ছে না।”
নিশি বলল দাঁড়াও, ওটা এমনি উড়বে না।”

তারপর নিশি তার ব্যাগ থেকে লাঠির মতো কী একটা বের করলো। ওইটা থেকে তীব্র আলো আকিবের চোখে এসে পড়লো। তারপর সেই লাঠিতে কী পড়ে ফুঁ দিয়ে জায়নামাজের দিকে লাঠিটা ধরে রাখলো। আর তাতেই জায়নামাজটা আকিবকে নিয়ে উড়তে লাগল।
হঠাৎ এটি উড়তে শুরু করায় আকিব তার নিয়ন্ত্রণ
হারিয়ে ফেলল। সে জায়নামাজ থেকে পড়ে যাচ্ছিল। কিন্তু পরক্ষণেই নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করলো।

আকিব ধীরে ধীরে আরো উপরে উঠতে লাগলো। সেই সাথে নিশিও তার ডানায় ভর করে উড়তে লাগলো। আকিবের খুব-ই ভালো লাগছে এভাবে উড়তে।
নিশি বলল, “কেমন লাগছে?”
আকিব বলল, “খুব ভালো।”

তারপর আর কোনো কথা হলো না। দুজন দুজনের দিকে শুধু চেয়ে রইল।

এভাবে কতক্ষণ চললো আকিব জানে না। একসময় লক্ষ করলো তার চারপাশের জায়গাগুলো পরিবর্তন হয়ে গেছে। সে অদ্ভুতভাবে চারদিকে দেখতে লাগলো।
নিশি বলল, “অবাক হয়ে দেখার কিছু নেই। আমরা পরীস্থানে পৌঁছে গেছি। একটু পরেই আমরা আমাদের নির্দিষ্ট গন্তব্যে পৌঁছে যাবো।”
আকিব অবাক হয়ে বলল, “এটাই পরীস্থান?”
নিশি বলল, “হুম।”

আকিব অদ্ভুতভাবে চারপাশের জায়গাগুলো দেখতে লাগলো। কী সুন্দর পরিবেশ! এই পরিবেশের বর্ণনা দেওয়ার মতো ভাষা নেই। চারদিকে অসংখ্য ফুলের বাগান, ফলের বাগান। ফুলের সুবাসে চারদিক মুখরিত। আকিব প্রাণভরে নিঃশ্বাস নিতে লাগল।

কিছুক্ষণ পর নিশি বলল, “আমরা চলে এসেছি। এবার নেমে যাও। দাঁড়াও তোমার জায়নামাজটি নামিয়ে দিচ্ছি।”

তারপর নিশির হাতে থাকা সেই উজ্জ্বল লাঠি দিয়ে সে জায়নামাজটিকে নিচে নামিয়ে দিলো।”

আকিব বলল, “জায়নামাজটি এরকম কেন? তোমার সাহায্য ছাড়া উড়তে বা নামতে না পারলে এই জায়নামাজ দিয়ে কী করব?”

নিশি বলল, “আচ্ছা, তোমারটাতে একটা সিস্টেম করে দেবো। তাহলে তুমি বললে উড়বে, আবার তুমি বললে নামবে।”
আকিব বলল, “হুম, তা-ই করতে হবে।”

আকিব ও নিশি দুজনই মাটিতে নামলো। আকিব জায়নামাজ থেকে নেমে জায়নামাজটি হাতে তুলে নিলো। তারপর সামনে তাকাতেই দেখলো একটা বড়ো প্রাসাদ। এরকম প্রাসাদ সাধারণত আগেকার যুগের রাজা-বাদশাদের থাকতো। এত বড় আর মনোরম প্রাসাদ পৃথিবীতে নেই। সে আপন মনে চারদিক দেখতে লাগল। নিশি বলল, “কী দেখছ এমন করে?”
আকিব বলল, “এত বড় প্রাসাদ কি তোমাদের?”
নিশি বলল, “হুম। চলো, ভেতরে চলো।”

নিশি সামনে যেতেই আকিবও নিশিকে লক্ষ করে সামনের দিকে যেতে লাগল। সামনে একটা বড় গেট দেখতে পেলো। সেখানে একজন দারোয়ান বসে রয়েছে৷ দারোয়ান নিশিকে দেখতে পেয়ে দ্রুত গেট খুলে দিলো। আকিব ও নিশি গেটের ভেতর প্রবেশ করলো। আকিবের মনে কিছুটা ভয় কাজ করছে এ জায়গায় যদি থাকে বন্ধি করে রাখা হয় তাহলে সে কখনোই পালাতে পারবে না। তবে নিশি এমন কাজ করবে বলে মনে হয় না।

নিশি আকিবকে নিয়ে একটি ঘরে প্রবেশ করলো। ঘরের দরজা খোলা-ই ছিল। তাই আর কাউকে ডাকতে হয়নি। আকিব ঘরের ভেতরে প্রবেশ করতেই মিষ্টি একটা সুগন্ধ তার নাকে এসে লাগলো৷ এত মিষ্টি কোনো সুগন্ধ পৃথিবীর কোনো পারফিউমে নেই। ঘরের চারপাশ নানারকম ফুল দিয়ে সাজানো হয়েছে।
আকিব আরো ভালো করে চারপাশ দেখতে লাগলো। ঘরের মধ্যে বড় একটি খাট রয়েছে। খাটটাও বিভিন্ন ফুল দিয়ে সাজানো হয়েছে। আকিব মুগ্ধ হয়ে বলল, “এত সুন্দর এ ঘর!”
নিশি বলল, “এই যে ফুলগুলো সাজানো দেখছ এগুলো আমি সাজিয়েছি। এটি সাজাতে গিয়েই তো দেরি হয়ে গেল। কেমন হয়েছে বলো?”
আকিব বলল, “এত সুন্দর ঘর! এ ঘরে কোনো কিছু না সাজালেও খুব-ই সুন্দর লাগতো। কিন্তু এখন সাজানোর জন্য সুন্দরটা যেন আরো দ্বিগুণ হয়েছে৷ আমি ভাষায় প্রকাশ করতে পারছি না যে কতটা সুন্দর। আমি মুগ্ধ, আমি সত্যি মুগ্ধ।”
নিশি বলল, “দাঁড়াও, তোমার জন্য নাশতা নিয়ে আসি।”
আকিব বলল, “কিন্তু আর কাউকে দেখছি না যে?”
নিশি বলল, “এখন তো রাত তাই সবাই ঘুমে। সবার সাথে সকালে দেখা হবে। এখন শুধু নাশতা করে ঘুমিয়ে যেয়ো।”
আকিব বলল, “আচ্ছা ”

নিশি চলে গেল। নিশি চলে যাওয়ার পর আকিব আরো ভালো করে ঘরটি দেখতে লাগলো। কী রাজকীয় পরিবেশ! আকিব ধীর পায়ে হেঁটে বিছানায় গিয়ে বসলো৷ তার কাছে এখনো সবকিছু স্বপ্নের মতো লাগছে। সে ভাবছে হয়তো এখনো সে স্বপ্ন দেখছে।

সে এসব ভাবছে তখন নিশি ট্রে-তে করে কী যেন নিয়ে এলো৷ তারপর আকিবের সামনে ট্রে রেখে বললো, “এগুলো খাও। এখন রাত তো তাই কিছু বানাতে পারলাম না। তাই ফলগুলো নিয়ে এলাম।”

আকিব ট্রে-তে রাখা ফলগুলোর দিকে অবাক চোখে চেয়ে দেখলো সবগুলোই অপরিচিত ফল। এ ধরনের ফল ইতোপূর্বে সে পৃথিবীতে কখনো দেখেনি৷ এ ফলগুলোর নামও জানে না। একটা ফল দেখতে আপেলের মতো। আবার আরো বেশ কয়েক ধরনের ফল রয়েছে যা কোনো ফলের সাথে মিল নেই। নিশি বলল, “চেয়ে না থেকে খাও। খেলে ভালো লাগবে।”
আকিব বলল, “এ ধরনের ফল তো আমি কোনোদিন দেখিনি।”
নিশি বলল, “এগুলো পৃথিবীতে নেই, তুমি কীভাবে দেখবে? কিন্তু খেয়ে দেখো। খেতে কিন্তু খুব-ই সুস্বাদু।”
আকিব একটি ফল হাতে নিয়ে মুখে দিলো। ফলটি মুখে দিতেই আকিবের মনে হলো সে যেন অমৃত মুখে দিয়েছে। এত মজাদার ফল সে কোনোদিন খায়নি। পৃথিবীতে যত ধরনের খাবার আছে, সব খাবারের স্বাদ একত্রিত করলেও যেন এ ফলগুলোর মতো সুস্বাদু হবে না। আকিব কোনো কথা না বলে একের পর এক ফল খেতে লাগলো। এখানে বিভিন্ন রকমের ফল রয়েছে। সব ফলের স্বাদ ভিন্ন। সবগুলোই যেন খেতে অমৃতের মতো লাগছে। আকিবের একে একে সব ফল খেয়ে নিলো কিন্তু তার তৃপ্তি মিটলো না।

চলবে…

[বি.দ্র. বেশি বেশি করে লাইক-কমেন্ট এবং শেয়ার করুন।]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here