নীল_আকাশের_পরী #এম_আর_এ_আকিব #পর্ব_১৪

0
193

#নীল_আকাশের_পরী
#এম_আর_এ_আকিব
#পর্ব_১৪
শব্দসংখ্যা: ১১১৩

আকিবের খাওয়া দেখে নিশি বলল, “আচ্ছা, আর খাবে? আমি আরো তোমার জন্য কম করে নিয়ে এলাম। যাই আরো কিছু নিয়ে আসি।”

আকিবকে লজ্জা দেওয়ার জন্য নিশি কথাটি বলেনি। কিন্তু আকিব এতে লজ্জা পেলো। কিছু কিছু সময় এমন হয় যে অন্যজন লজ্জা দেওয়ার জন্য না বললেও অপরজন লজ্জা পেয়ে যায়। আকিব বলল, “না না, আমি আর খাবো না। এই যতটুকু খেয়েছি তা একদম পারফেক্ট। এর বেশি খেলে তো সমস্যা।”

নিশি বলল, “আচ্ছা, তাহলে এখন কী করবে? ঘুমাবে?”
আকিব বলল, “তা ছাড়া আর কী করব?”
নিশি বলল, “আচ্ছা, রাতে কি তোমার কোনো কিছুর প্রয়োজন হবে? যদি হয় তাহলে এই দেখো বেডের কাছে একটি সুইচ রাখা আছে৷ ওটাতে চাপ দিলে ও ঘর থেকে একজন সার্ভেন্ট আসবে। দরজা তাহলে খোলা থাকুক।”

আকিব বলল, “আচ্ছা।”
নিশি বলল, “এই বাতি কি বন্ধ করে দেবো? এত আলোতে তো চোখে ঘুম আসবে না।”
আকিব বলল, “আচ্ছা দাও।”

নিশি উঠে বাতিটি বন্ধ করে অন্য একটি বাতি দিলো। ওই বাতিটির আলো মৃদু হলেও বিভিন্ন রঙের আলো ছড়ায়। ঘরটা একেক সময় একেক রঙের মনে হয়। নিশি বলল, “আমি তাহলে যাই?”
আকিব বলল, “আচ্ছা। শুভরাত্রি।”
নিশি বলল, “শুভরাত্রি। আর হ্যাঁ, তুমি ভয় পাবে না-কি?”
আকিব হেসে বলল, “আরে না। তুমি যাও।”
নিশি আচ্ছা বলে চলে গেল।

নিশি চলে যাওয়ার পর আকিবের মনে কেমন যেন ভয়ের সঞ্চার হলো। সে চারদিকে তাকিয়ে দেখছে কত বড়ো ঘরটি। সে দেখলো ঘরের দেওয়ালে একটি ত’রবারি রাখা। এটি দেখে তার আরো বেশি ভয় করলো।

বাতির আলোয় কখনো ঘরটি লাল রঙের হচ্ছে আবার কখনো নীল রঙের মনে হচ্ছে। এর জন্য আকিবের আরো বেশি ভয় করছে। আকিব ভাবলো এই বাতিটা বন্ধ করে আগের বাতিটি দিয়ে দিলেই হয়তো ভয় অনেকটা দূর হতো। সে ওই বাতির সুইচ কোনটা তা জানে। নিশি যখন বাতিটি বন্ধ করেছিল তখন সে তা লক্ষ করেছে৷ এখন চাইলেই সে বাতিটি জ্বালাতে পারে। কিন্তু বিছানা থেকে যে উঠবে সে সাহস তার হচ্ছে না৷ সে চুপচাপ বিছানায় শুয়ে রইলো।

তার চোখ বারবার দেওয়ালে থাকা তর’বারির দিকে যাচ্ছে। সে ভাবছে গভীর রাতে হয়তো কেউ একজন তাকে এই তর’বারি দিয়ে হ’ত্যা করবে৷ তাকে হ’ত্যা করার জন্যই বোধহয় এই তর’বারিটা এখানে রাখা হয়েছে।

মানুষ যখন একাকী থাকে তখন তার মনে হাজারও প্রশ্নের উদ্ভব হয়। এগুলো সত্যিও হতে পারে, আবার মিথ্যাও হতে পারে। আকিব যা ভাবছে তা কি সত্য না কি মিথ্যা? সম্ভাবনা তো দুটোই হতে পারে৷ যদি মিথ্যা হয় তাহলে তো ভালো। কিন্তু যদি সত্যি হয় তাহলে? আকিব কিছু ভাবতে পারছে না। সে ঘুমাতে চেষ্টা করছে। কিন্তু ঘুম আসছে না। ঘুম আসলে হয়তো সমস্ত চিন্তা দূর হয়ে যেত। এত নরম বিছানায় শুয়েও তার যেন কেমন অস্থির লাগছে। বারবার কীসের আওয়াজ যেন তার কানে আসছে। সে ভাবছে এই বুঝি কেউ চলে এসে তাকে হ’ত্যা করলো।

এসব চিন্তা থেকে মুক্তির মাত্র একটি উপায়। তা হচ্ছে ঘুমানো। ঘুমানোর পর আর কোনো দুশ্চিন্তা কাজ করে না। একজন ফাঁ’সির আ’সামী যার আগামীকাল ফাঁসি হবে, সে-ও যখন রাতে ঘুমিয়ে যায় তখন তার আর কোনো চিন্তা থাকে না। চিন্তা থাকে না যে আগামীকাল-ই তার জীবনের শেষ দিন নিয়ে। সে গভীর ঘুমে হয়তো কোনো সুখের স্বপ্ন দেখতে বিভোর থাকে। আবার এমনও তো হতে পারে সে গভীর ঘুমের মধ্যেও কোনো দুঃস্বপ্ন দেখে চিৎকার করে ওঠে। কিন্তু কথা হলো একজন ফাঁ’সির আসা’মীর কখনো তার ফাঁসির আগের রাতে ঘুম আসে না। তার মনে ভয় হতে থাকে আগামী সকাল নিয়ে। তার যে আর কখনো সুন্দর সকাল দেখা হবে না এ চিন্তায় সে মগ্ন থাকে। মগ্ন থাকে তার জীবনেও করা পাপকাজের কথা ভাবতে ভাবতে। তখন জীবনের সমস্ত পাপকাজের জন্য শুধু আফসোস করতে থাকে। হয়তো সেই রাতেই সে স্রষ্টার নিকট ক্ষমা চেয়ে নেয়। হয়তো দয়াময় স্রষ্টা তাকে ক্ষমা করে দেন, আবার হয়তো দেন না। প্রত্যেকটা মানুষ যদি ভাবতো যে আজ তার জীবনের শেষ দিন, তাহলে সে কখনো পাপকাজ করার সাহস পেতো না।

আকিবের এখন ঘুমাতে হবে। কিন্তু তার ঘুম আসছে না। ছোটবেলায় তার ঘুম না আসলে তার মা তাকে গল্প শোনাতেন। আর সেই গল্প শোনতে শোনতেই সে ঘুমিয়ে যেত। কিন্তু কিছুদিন পর সে যখন একটু বড় হলো তখন তার থাকতে হতো আলাদা বিছানায়। আর তখন যদি তার ঘুম না আসতো তবে সে উল্টো করে সংখ্যাগুলো গণনা করতো। যেমন- ১০০, ৯৯, ৯৮, ৯৭ থেকে ১ পর্যন্ত। কিন্তু ১ পর্যন্ত গণনা করার আগেই তার চোখে ঘুম চলে আসতো। আবার কখনো সে কল্পনা করতো একঝাক মেষ মাঠে ঘাস খাচ্ছে। সে ওই মেষপালগুলো গণনা শুরু করতো। প্রতিবারই সমস্ত মেষপাল গণনা করার আগে তার চোখে ঘুম চলে আসতো।

এখন সে বড় হয়েছে। সে বুঝতে শিখেছে এগুলো কু’সংস্কার। তাই এখন আর এগুলো করে না। কিন্তু আজ তার এগুলো করতে মন চাচ্ছে৷ তা-ও যদি চোখে ঘুম আসে। কিন্তু তার হঠাৎ মনে পড়লো তার পকেটে রাখা মোবাইলটার কথা। সে ভাবলো ঐশীর সাথে একটু কথা বলি। ঐশীকে তো বলা হয়নি যে আমি পরীস্থানে চলে এসেছি। কিন্তু পরে আবার ভাবলো এত রাতে ঐশীকে ফোন দেওয়া ঠিক হবে না। কিন্তু ঠিক-বেঠিকের হিসাব এখন সে করছে না। সে শুধু চাচ্ছে তার ভয়টা দূর হোক। তাই সে পকেট থেকে মোবাইলটা বের করে ঐশীর নাম্বার ডায়াল করলো। কিন্তু ঐশীর নাম্বার ডায়াল করতেই দেখতো পেল স্ক্রিনে লেখা উঠলো, “Emergency call only” সে মোবাইলের নেটওয়ার্কের দিকে চেয়ে দেখলো নেটওয়ার্ক একটুও নেই। সে যখন পকেট থেকে মোবাইলটা বের করেছিল তখন এই লেখাটি তার চোখে পড়েনি। এই পরীস্থানে এসে সিমের নেটওয়ার্ক পাওয়াটা অসম্ভব। কিন্তু তার সাথে যে ঘটনাগুলো ঘটছে সেগুলোও তো অসম্ভবের মতো। তাহলে নেটওয়ার্ক থাকলে কী এমন অসুবিধা হতো?

আকিব ফোনটি রেখে দিয়ে উল্টো সংখ্যা গণনা করতে লাগলো। ১০০, ৯৯, ৯৭… এভাবে একসময় সে ১ পর্যন্ত চলে এলো কিন্তু তার চোখে ঘুম এলো না। কিন্তু আগে তো ঠিকই চলে আসতো৷ এর প্রদান কারণ হতে পারে আগে সে এটিকে সত্য ভাবতো আর এখন কু’সংস্কার ভাবে।

কিন্তু তার হাল ছাড়লে চলবে না। সে এখন মাঠের মধ্যে অনেকগুলো মেষ কল্পনা করলো। সে মেষগুলোকে গুণতে শুরু করলো। কিন্তু ঠিক মতো গুণতে পারছে না। ওই তো একটি মেষ দৌড়াতে শুরু করেছে। তার বিরক্ত লাগছে। মেষগুলোর উচিত একটি নির্দিষ্ট জায়গায় স্থীর হয়ে দাঁড়িয়ে থাকা। কিন্তু তারা তা না করে দৌড়াদৌড়ি করছে৷ এজন্য আকিবের গুণতে সমস্যা হচ্ছে।

এরকম অনেকক্ষণ চললো। কিন্তু সে তার গণনা শেষ করতে পারছে না৷ হঠাৎ সে লক্ষ করলো ঘরের মধে কে যেন প্রবেশ করছে। দেখে প্রহরীর মতোই মনে হয়৷ কিন্তু এত রাতে প্রহরী এখানে কেন এলো? সে তো সেই সুইচে চাপ দেয়নি? সে ভালো করে দেখতে লাগলো প্রহরী এসে বড় বড় চোখে তার দিকে তাকালো। যেন অনেকদিনের ক্ষোভ জমে আছে তার ওপর। সে ভয়ে ভয়ে ঘুমের ভান করে শুয়ে রইলো। প্রহরী এবার দেওয়ালের কাছে গিয়ে দেওয়ালে রাখা সেই তর’বারিটা হাতে নিলো। তারপর তর’বারিটা কোষমুক্ত করে তার দিকে এগিয়ে আসতে লাগলো। আকিবের ভয় করছে। কিন্তু সে যে দৌড়ে পালাবে সেই শক্তিটুকু পাচ্ছে না৷ কোনো এক অদৃশ্য শক্তি যেন তাকে বিছানায় বেঁধে রেখেছে। তার গলা থেকে আওয়াজ বের হচ্ছে না। সে চুপচাপ শুয়ে রইলো। প্রহরী তার খুব কাছে এসে তার চোখের দিকে বেশ কিছুক্ষণ তাকিয়ে রইলো। তারপর তারপর হাতে থাকা ত’রবারিটা তার পেটের মধ্যে ডুকিয়ে দিলো। কিন্তু এতেও তার গলা দিয়ে শব্দ বেরুলো না। কিন্তু তার পেট থেকে র’ক্তের বন্যা বয়ে যাচ্ছে। সে যেন নিস্তেজ হতে বিছানায় পড়ে রইলো। সেই প্রহরীটা তর’বারিটা নিয়ে দ্রুত প্রস্থান করলো।

চলবে…

[বি.দ্র. পাঠক সংখ্যা বৃদ্ধি পেলে গল্প আরো বড়ো করে দেবো। তাই পরিচিতদেরকে গল্পটি পড়ার জন্য সাজেস্ট করুন। আর আইডির রিচ নেই। গল্পে গঠনমূলক মন্তব্য করার পাশাপাশি বেশি করে স্ট্রিকার কমেন্ট করুন। ১০০০টা স্ট্রিকার কমেন্ট চাই।]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here