নীল_আকাশের_পরী #এম_আর_এ_আকিব #পর্ব_১৭

0
191

#নীল_আকাশের_পরী
#এম_আর_এ_আকিব
#পর্ব_১৭
শব্দসংখ্যা: ১২৮৩

আকিব, নিশি এবং নিশির আব্বু-আম্মু সবাই একসাথে খাবার টেবিলে বসে আছে৷ ইতোমধ্যে কয়েকজন কাজের লোক টেবিলে খাবার পরিবেশন করেছে। আকিব মনোযোগ দিয়ে খাবারগুলো দেখছে ঠিক-ই কিন্তু চিনতে পারছে না। একটা বাটিতে দেখলো মাছ রাখা আছে। তবে কী মাছ তা সে চিনলো না৷ আবার আরেকটা বাটিতে গোস্ত রাখা আছে। আরো কয়েকটা বাটিতে বিভিন্ন ধরনের তরকারি রাখা। অনেক ধরনের খাবার-দাবার টেবিলে রাখা আছে৷ আর থাকবেই বা না কেন? এটা তো পরীস্থান।

নিশির আব্বু-আম্মু আকিবকে খাওয়া শুরু করতে বললেন। আকিবও খাওয়া শুরু করলো। আকিব জানে এখানে রাখা প্রত্যেকটা জিনিসই খুব সুস্বাদু হবে। আর হলোও তাই। প্রথমে যে খাবারটি সে খেলো তা খেয়েই সে বুঝতে পারলো যে এত সুস্বাদু খাবার ইতোপূর্বে কখনো খায়নি। তারপর একে একে সব খাবার-ই খেতে লাগলো। যা-ই খাচ্ছে তা-ই আগেরটার থেকে বেশি মজাদার বলে মনে হচ্ছে। এখন সে কোনটা রেখে কোনটা খাবে শুধু ভাবছে৷ তা-ও সে একটু একটু করে সবকিছুই খেলো। কিন্তু গোস্ত খেতে পারলো না কারণ সবকিছু দিয়ে একটু একটু খেতে খেতে তার পেটে আর খাওয়ার জায়গা নেই। গোস্ত না খেতে পেরে তার অনেকটা খারাপ লাগলো৷ সে ভাবলো সাধারণ তরকারিগুলোই কতো মজাদার না জানি গোস্ত কীরকম হবে!

সে খাওয়া থেকে উঠে যাচ্ছে দেখে নিশির আব্বু বললেন, “আরে এ কী? গোস্ত তো খাওনি। গোস্ত খাও একটু।”
আকিব বলল, “জি না আঙ্কেল, আমি যথেষ্ট খেয়েছি। আর খেতে পারবো না।”
নিশি তার আব্বুকে উদ্দেশ্য করে বলল, “আব্বু, আকিব তো মানুষ জাতি, তাই সে আমাদের মতো খেতে পারে না। অনেক কম খায়।”
নিশির আব্বুও কথাটায় সায় দিয়ে বললেন, “ও হ্যাঁ, এটা ঠিক বলেছ।”
তারপর আকিবকে উদ্দেশ্য করে বললেন, “তুমি যাও। তোমার ঘরে গিয়ে বসো। খলিলকে দিয়ে তোমার জন্য মিষ্টি পান পাঠাচ্ছি।”

আকিবও হ্যাঁ সূচক মাথা নেড়ে তার ঘরে চলে গেল। আকিব তার ঘরে গিয়ে ভাবতে লাগলো কী থেকে কী হয়ে গেল! এই তো কয়েকদিন আগেও সে ভাবতো সে একজন সাধারণ মানুষ অথচ এখন তার মনে হচ্ছে সে আসলেই সাধারণ কোনো মানুষ না।

কিছুক্ষণের মধ্যেই খলিল পান নিয়ে এলো। আকিব সাধারণত পান খায় না। কিন্তু এটা যেহেতু পরীস্থানের পান তাহলে তো তাকে খেতেই হবে। পরীস্থানের সবকিছুই যেন খেতে অমৃত। আকিব সেই পান মুখে দিতেই দেখলো এই পান পৃথিবীর সাধারণ কোনো পানের মতো নয়। সে খুব-ই মজা করে পান খেলো।

আজকের দিনটা এভাবেই কেটে গেল তার। নিশির সাথেও বেশ কিছুক্ষণ আড্ডা দিয়েছে। নিশি বলেছে রাতে তাকে নিয়ে একটা বাগানে ঘুরতে যাবে। ওইটা না-কি পরীস্থানের সবচেয়ে সুন্দর বাগান। এটা শুনে আকিবের সময় যেন কাটছে না। পরীস্থানের যে-কোনো জায়গায় ঘুরেবেড়াতেই তার ভালো লাগবে। সে যেন পরীস্থানের প্রেমে পড়ে গেছে। তার ইচ্ছে করছে অনন্তকাল এখানে থাকতে। কিন্তু তা তো আর সম্ভব না।

রাতে খাওয়া-দাওয়ার পর্ব শেষ করে আকিব আর নিশি বেরিয়ে পড়লো পরীস্থানের সেই বাগানে। না, এবার আর উড়ে উড়ে যেতে হলো না। হেঁটে হেঁটেই দুজন চলে গেল সেই বাগানে। বাগানটি বেশি দূরে নয় বলে যেতে বেশি সময় লাগলো না।

আকিব সেখানে পৌঁছে দেখলো বাগানটি অনেক বড়। পৃথিবীতে এত বড় জায়গায় কেউ বাগান করে না। এত বড় জায়গায় সবাই বাড়ি-ঘর তৈরি করে। বাগানে রয়েছে নানারকম ফুল। এতগুলো ফুলের মধ্যে একটি ফুলও আকিব চিনে না। আকিবের নাকে ফুলের মিষ্টি সৌরভ এসে লাগলো। এত মিষ্টি ঘ্রাণ পৃথিবীর সবচেয়ে দামী পারফিউমকেও হার মানাবে। নিশি বলল, “এই বাগানে প্রায় ২৫০ রকমের ফুল রয়েছে। প্রত্যেকটির-ই আলাদা আলাদা সুবাস। আর সবগুলো এক্ষত্রে হয়ে কী মিষ্টি সুবাস ছড়াচ্ছে, তাই না?”
আকিব বলল, “হুম, সত্যি আমি বিস্মিত।”
নিশি বলল, “চলো, দুজন একটু বাগানের মধ্যে গিয়ে বসি।”
আকিব বলল, “চলো।”

তারা দুজন একটু ভেতরে গিয়ে দেখলো বাগানের মাঝখানে বসার জন্য সুন্দর ব্যবস্থা রয়েছে৷ তারা দুজন সেখানে গিয়ে বসলো। চারদিকে ফুলের সুবাস আর মাঝখানে তারা দুজন সত্যিই খুব ভালো লাগছে।

আকিব আকাশের দিকে তাকিয়ে দেখলো চাঁদটাও পূর্ণ আলো ছড়াচ্ছে। নিশি আকিব কাঁধে মাথা রাখলো। আকিবের খুব-ই ভালো লাগছে। দুজন-ই চুপচাপ। চারদিকে পিনপতন নীরবতা। আকিব নিশির চুলে হাত বুলিয়ে দিচ্ছে। নিশি চুপচাপ আকিবের কাঁধে মাথা রেখে বসে আছে।

এভাবে ঠিক কতক্ষণ কেটে গেল আকিব জানে না। নিশি বলল, “আচ্ছা, চলো এখন যাওয়া যাক।”
আকিব বলল, “এত তাড়াতাড়ি?”
নিশি বলল, “তুমি জানো আমরা এখানে কতক্ষণ ধরে বসে আছি?”
আকিব বলল, “এই তো কিছুক্ষণ হবে।”
নিশি বলল, “আরে না। আমাদের এখানে আসার দুই ঘণ্টা হয়ে গেছে।”
আকিব অবাক হয়ে বলল, “কী বলো? এই তো মাত্র এলাম মনে হলো।”
নিশি বলল, “তোমার তো মনে হবে। মনে হয় ঘুমিয়ে গিয়েছিলে। চলো এখন।”
আকিব বলল, “আচ্ছা, চলো।”

পরদিন সকালটাও আকিবের গতদিনের মতো চলে গেল। তবে আজকে আকিব পৃথিবীতে চলে আসবে ভেবে কিছুটা খারা’প লাগছে। তবে এই দুইদিন থেকে যে সে তার আব্বু, আম্মু, সায়রা, ঐশী কাউকে দেখছে না তার জন্য একটু খা’রাপ লাগছে৷

দ্বিতীয় দিনটাও বেশ সুন্দরভাবে কেটে গেল। রাতের খাওয়া-দাওয়ার পর এলো তার বিদায় নেওয়ার পালা। সে নিশির আব্বু-আম্মুকে সালাম করে বিদায় নিলো। তারাও তার মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে দোয়া করে দিলেন। আকিবের যেন হঠাৎ তাদের খুব আপন মনে হচ্ছে। শুধু তাদের না, পরীস্থানের সবকিছুই তার আপন মনে হচ্ছে। যে খলিলকে তার পছন্দ হতো না সেই খলিলকেও যেন অনেক আপন মনে হচ্ছে। পরীস্থানের প্রত্যেকটা ইটকেও তার আপন মনে হচ্ছে। তার ঘরের দেওয়ালে যে ত’রবারি রাখা ছিল, সেই ত’রবারিকেও তার খুব আপন মনে হচ্ছে। তার এসব ছেড়ে আসতে একদম মন চাচ্ছে না। কিন্তু তা-ও তো তাকে আসতে হবে৷ হয়তো সে চাইলে আরো কিছুদিন এখাবে থাকতে পারে। কিন্তু কী লাভ তাতে! একদিন তো ফিরে আসরেই হবে৷ তখন আরো বেশি মায়া বাড়বে৷ তারচেয়ে আগে চলে আসাই ভালো। অপরদিকে পৃথিবীর কথাও তার খুব মনে পড়ছে। এতদিন যেখানে বড় হলো, আর মাত্র দুই দিনের মায়ায় পড়ে পৃথিবীর লোকদের ভুলে যাওয়া হবে পৃথিবীর মধ্যে শ্রেষ্ঠতম স্বার্থপরতা।

আকিব আর নিশি দাঁড়িয়ে আছে পরীস্থানের গেটের বাইরে। এই তো দুইদিন আগে সে যখন প্রথম এখানে আসে তখন এত বড় গেট দেখে ভ’য় পেয়েছিল। ভেবেছিল যদি তাকে আসতে দেওয়া না হয় তাহলে সে কীভাবে আসবে? অথচ আজ চলে আসছে দেখেই তার মন খা’রাপ। আসল মানুষের মনটা খুব-ই অদ্ভুত। মুহূর্তেই পরিবর্তন হয়।

নিশি বলল, “কী দেখছ এমন করে? পরীস্থানের মায়ায় পড়ে গেছ বুঝি?”
আকিব বলল, “আরে না, চলো।”
তারপর সামনের দিকে হাঁটা শুরু করলো। আকিবের চোখ থেকে যেন দুফোঁটা জল গড়িয়ে পড়লো। কিন্তু তা নিশির দৃষ্টিগোচর হলো না।

নিশি বলল, “চলো, যাওয়ার আগে তোমাকে আমাদের এখানকার একটি লেক দেখিয়ে আনি।”
আকিব বলল, “আচ্ছা, তবে বেশিক্ষণ থাকবো না।”
নিশি বলল, “আচ্ছা।”

তারপর আকিব আর নিশি পরীস্থানের সুন্দর একটি লেকে গেল। কী সুন্দর লেক! লেকের পানিগুলো নীল রঙের। আকিব মুগ্ধ হয়ে দেখলো। তারপর জলে নেমে হাত এবং মুখ ধুয়ে নিলো। কিছুক্ষণ তারা দুজন হাতে হাত রেখে লেকের পাশে বসে রইলো। কিন্তু আজ আকিবের মনে যেন অস্থিরতা কাজ করছে। কিন্তু এই অস্থিরতা কীসের জন্য? পরীস্থান ছেড়ে চলে আসার জন্য না কি বাড়িতে যাওয়ার জন্য তা সে বুঝলো না। কিছুকিছু সময় ঠিক কী জন্য মন খারাপ হয় তা কিন্তু নিজেও বুঝা যায় না। আকিব বলল, “আচ্ছা, এবার চলো।”
নিশিও বললো, “চলো।”

তারপর নিশি আকিবের দিকে জায়নামাজটা এগিয়ে দিয়ে বলল, “এই নাও। তুমি এটি আনতে ভুলে গিয়েছিলে।”
আকিব এতে একদম অবাক হলো না। সে যে ভুলে যাবে এটা স্বাভাবিক ব্যাপার। মানুষ তখন সুন্দর করে কাজ করে যখন তার মন ভালো থাকে। মন খা’রাপ থাকলে কোনো কাজ-ই সঠিকভাবে করা যায় না।”
আকিব বলল, “ওহ হ্যাঁ, ধন্যবাদ।”
নিশি বলল, “এবার জায়নামাজে ওঠে দাঁড়াও।”
আকিব ওঠে দাঁড়ালে নিশি তার হাতের সেই লা’ঠি দিয়ে কী যেন করলো। আর জায়নামাজটি উড়তে শুরু করলো। নিশিও সাথে সাথে এলো। পুরো রাস্তা দুজন একটিও কথা বলল না।

পৃথিবীতে ফিরে আসার পর নিশি তার লাঠি দিয়ে আকিবের জায়নামাজটি নামিয়ে দিলো। তারপর বলল, “জায়নামাজটা পৃথিবীতে তোমার কোনো কাজে লাগবে না। এটা দিয়ে দাও৷ আবার পরীস্থানে গেলে নিয়ে আসবো।”
আকিব কোনো কথা না বলে দিয়ে দিলো। তার যেন কিছুই ভালো লাগছে না। তারপর নিশি বলল, “আচ্ছা, যাই তাহলে। আর হ্যাঁ, পরীস্থানের ঘটনা কাউকে এখন বলার দরকার নেই। আগে তুমি তোমার লক্ষ্যে পৌঁছো। তোমার আম্মুকে উদ্ধার করো তারপর সব বলবে।”

আকিব মাথা নাড়িয়ে হ্যাঁ বলল। তারপর নিশি বলল, “আমি চলে যাচ্ছি তাহলে। কাল এখানে এসো। কথা হবে।”
আকিব আবারও হ্যাঁ সূচক মাথা নাড়লো। দেখতে দেখেই নিশি চলে গেল। আকিব তার রুমে তালা দিয়ে গিয়েছিল। নিজের কাছে চাবি ছিল। চাবি দিয়ে তালা খুলে ঘরে এসে শুয়ে পড়লো। কারো সাথে আর এতরাতে দেখা করলো না।

চলবে…

[বি.দ্র. রজান শেষ হয়ে যাচ্ছে, অথচ গল্প শেষ হচ্ছে না। সংক্ষেপ করে দেবো এখন।]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here