নীল_আকাশের_পরী #এম_আর_এ_আকিব #পর্ব_৩

0
321

#নীল_আকাশের_পরী
#এম_আর_এ_আকিব
#পর্ব_৩
শব্দসংখ্যা: ১২৮৮

পিছনে তাকাতেই তীব্র আলো এসে আকিবের চোখে পড়লো। সে ঠিক মতো চোখ মেলে তাকাতে পারছে না। তীব্র আলোয় তার চোখজোড়া বন্ধ হয়ে এলো। কিছুক্ষণ চোখ বন্ধ করে থাকার পরে মনে হলো আলোর তীব্রতা কমে স্বাভাবিক হয়েছে। তখন সে চোখ মেলে তাকালো। দেখতো সাদা ড্রেস পরে একটা পরী তার সামনে দাঁড়িয়ে। সে যেন তার চোখকে বিশ্বাস করতে পারছে না। সে ভালোভাবে চোখ কচলে পরীকে দেখতে লাগলো। পরীর পিছনে একজোড়া বড়ো ডানা রয়েছে। হাতে রয়েছে একটি লাঠি। যেরকমটা সিনেমায় থাকে ঠিক সেরকম। তবে সিনেমার নায়িকা থেকে অনেক গুণ বেশি সুন্দর এই পরী। ওর চেহারা থেকে যেন এক ধরনের উজ্জ্বলতা ছড়াচ্ছে। আর সেই উজ্জ্বলতায় চারপাশ অনেকটা আলোকিত হয়ে গেছে।

আকিব কী করবে ঠিক বুঝতে পারছে না। দৌড়ে পালাবে না কি এখানে স্থীর হয়ে দাঁড়িয়ে থাকবে বুঝতে পারছে না। তবে তার পা যেন সামনে এগুচ্ছে না। কেউ তার পা যেন আঁকড়ে ধরে রেখেছে।

ধীরে ধীরে দূরে দাঁড়িয়ে থাকা পরীটি তার দিকে এগিয়ে আসতে লাগলো। পরীটি যত তার সামনে এগুচ্ছে তার হৃদ স্পন্দন যেন তত বৃদ্ধি পাচ্ছে। পরীটি যখন তার থেকে ঠিক ৩ ফিট দূরে এলে পৌঁছালো ঠিক তখন পরীটা থেমে গেল। আকিব কিছুটা অবাক হয়ে বুঝার চেষ্টা করলো ব্যাপারটা আসলে কী হচ্ছে। পরীটি হঠাৎ থেমে গেল কেন?

চারপাশ থেকে অসংখ্য নুপুরের ধ্বনি শুনা যাচ্ছে। মনে হচ্ছে কারা যেন নৃত্য পরিবেশন করছে। আকিব মনোযোগ দিয়ে সেই ধ্বনি শুনতে চেষ্টা করছে, ঠিক তখন সবকিছু নীরব হয়ে গেল। এখন আর কোনো নুপুরের ধ্বনি কানে আসছে না।
আকিব আবার সামনে থাকা পরীটির দিকে তাকালো। পরীটি এখন আর চুপ করে থাকলো না। শান্ত কণ্ঠেই বলল, “তুমি ভয় পাচ্ছ না-কি?”

আকিব ছোটবেলা থেকে ভূত ভয় পেলেও আজ চোখের সামনে এক পরী দেখেও তেমন ভয় পাচ্ছে না। স্বাভাবিক কোনো সাহসী মানুষ হঠাৎ কোনো পরী দেখলে যতটুকু ভয় পেত সেও ঠিক ততটুকু ভয় পাচ্ছে। কিন্তু তার তো আরো বেশি ভয় পাওয়ার কথা।

আকিব বলল, “না, ভয় পাব কেন?”
পরীটি বলল, “তোমার চোখের সামনে পরী দাঁড়িয়ে আর তুমি ভয় পাচ্ছ না? মুখ দেখে তো মনে হচ্ছে ভয় পাচ্ছ। আমি আরেকটু সামনে এগুলো তো মনে হয় ভয় পেয়ে অজ্ঞান হয়ে যেতে।” বলে হুহু করে হেসে ওঠলো। সেই হাসির সাথে আরো অনেকজনের হাসির শব্দও আকিবের কানে এসে পৌঁছালো। কিন্তু এখানে তো আর কেউ নেই। তাহলে কারা হাসছে? আকিব চারপাশে তাকাতে লাগল। কাউকে না দেখতে পেয়ে আবার সামনে থাকা পরীটার দিকে তাকালো৷
পরীটা বলল, “এখন ভয় পাচ্ছ? এতজনের হাসির ধ্বনি শুনে?”
আকিব বলল, “কারা হাসছে?”
“আমার বান্ধবীরা।”
“কিন্তু তাদের দেখতে পারছি না কেন?”
“কারণ তারা আড়ালে আছে।”
“আড়ালে কেন?”
“কারণ এতজন তোমার সামনে এলে তুমি নিশ্চিত ভয় পেতে।”
“ওহ, তা আপনি আমার সামনে কেন এলেন?”
“দরকার আছে তাই।”
“কী দরকার?”
“সে অনেক কথা। তোমাকে অনেক কিছু বলার আছে। অনেক সময়ের ব্যাপার।”
“মানে? আমাকে আবার আপনার কী বলার আছে? আপনি আমার চিনেন না-কি?”
“হ্যাঁ, অনেক আগে থেকে চিনি। শুধু আমি না আমার সব বান্ধবীরাও চিনে।”
“কিন্তু কীভাবে? আমি তো এই বটগাছের নিচে রাতের বেলা এর আগে কখনো আসিনি।”
“শুধু বটগাছের নিচে এলেই তোমাকে চিনতে পারব এরকম কোনো কথা আছে? আর আমরা শুধু এই বটগাছের নিচে থাকি না। সারারাত বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে বেড়াই৷ আর এই জায়গাটা নির্জন বলে এখানে দৃশ্যমান হলাম।”
“তা কেন দৃশ্যমান হলে? কী বলয়ে চাও?”
“সে অনেক কথা। তোমার সম্পর্কেই কথাগুলো। কিন্তু তুমি কথাগুলো জানো না।”
“আমার সম্পর্কে কথা আর আমি জানি না? তাহলে আপনি কীভাবে জানেন?”
“সবকিছুই জানতে পারবে।”
“তাহলে বলেন।”

আকিবের আর এখন একদম ভয় করছে না। স্বাভাবিকভাবে একজন মানুষ যেমন অন্য মানুষের সাথে কথা বলে আকিবের কাছে পরীর সাথে কথা বলতে ঠিক সেরকমই লাগছে৷

পরী বলল, “অনেক সময়ের ব্যাপার। আজ তো তোমার মা অসুস্থ। তুমি ঔষধ নিয়ে যাচ্ছ৷ তাহলে আজ যাও। আগামীকাল এসো কিন্তু।”
আকিব বলল, “না, আমি আসতে পারব না। যা বলার বলেন, না হয় আমি গেলাম।”

পরী হুহু করে হেসে বলল, “আসতে যে তোমাকে হবেই। তোমাকে তো শুনতেই হবে। না হয় তোমার জীবনের অনেক কিছুই তোমার অজানা থেকে যাবে৷ আমি এটা না বললে আমার কিছুই হবে না, কিন্তু তুমি না শুনলে তোমার অনেক ক্ষতিই হবে বলা যায়। এখন তুমি যাও। তোমার মা তোমার জন্য অপেক্ষা করছে।”

কথাটি বলে আবার হুহু করে হাসতে লাগল। আকিব আর একমুহূর্ত না দাঁড়িয়ে দ্রুত বেগে হাঁটতে লাগল।

পাঁচ মিনিটের মধ্যেই সে বাডিতে পৌঁছে গেল। পরীর সাথে কত সময় অতিবাহিত করেছে এটা সে জানে না। কিন্তু ঘরে আসার পর কেউ তাকে দেরি হয়েছে কেন তা জিজ্ঞেস করেনি। তাই সে বুঝতে পারলো তার বেশি দেরি হয়নি।

রাতে বিছানায় শুয়ে শুয়ে আকিব ভাবছে ওই ঘটনাটির কথা। তখন বিষয়টি স্বাভাবিক লাগলেও এখন লাগছে না। সে ভেবে পাচ্ছে না, কীভাবে সে এই নির্জন রাতে একটা পরীর সাথে কথা বলল? আসলেই কী এটা বাস্তব ছিল না কি তার কল্পনা? সে তো মনে হয় প্রায় ১০ মিনিট পরীর সাথে কথা বলেছে, তাহলে ঘরে আসার পরে কেউ বলল না কেন যে তার দেরি হলো কেন? কেউ না বলুক, অন্তত সায়রার তো বলা উচিত ছিল। না, সে কিছুই ভেবে পাচ্ছে না। অনেক কষ্টে ঘুমানোর চেষ্টা করছে কিন্তু কিছুতেই ঘুম আসছে না৷ বারবার মনে হচ্ছে ঘরের মধ্যে সে নুপুরের আওয়াজ শুনতে পাচ্ছে৷ হঠাৎ করে তার খুব ভয় করতে শুরু করলো। সে দ্রুত বিছানা থেকে উঠে বাতি জ্বালালো৷ তারপর আবার বিছানায় শুয়ে ভাবতে লাগলো ঘটনাগুলো।

এখন আকিবের দুটি রূপ সৃষ্টি হয়েছে৷ এক আকিব বলছে যে ঘটনা আসলেই সত্য, আর আরেক আকিব বলছে কখনোই না। অতিপ্রাকৃত কোনো কিছুই একজন স্বাভাবিক মানুষ বিশ্বাস করতে পারে না।

প্রায় অনেকক্ষণ এভাবে তর্ক-বিতর্ক চলল। রাতটা বোধহয় পার হয়ে যাচ্ছে অথচ আকিবের চোখে ঘুম নেই। সকালে যে কলেজে যেতে হবে৷ গতকালও দেরি করে কলেজে গিয়েছিল। আজও যদি যায় তাহলে কেমন দেখায়। না, তাকে ঘুমাতেই হবে। পাশে রাখা মোবাইলটা হাতে নিয়ে দেখলো ০২:১৫ মিনিট বাজছে। না, আর দেরি করা যাবে না। তাকে ঘুমাতেই হবে। মোবাইলটা পাশে রেখে জোর করে চোখ বন্ধ করে ঘুমানোর চেষ্টা করলো।

রাতের শেষ ভাগে যে কারোই চোখে ঘুম চলে আসে। একজন অতি দুঃখী মানুষও রাতের শেষ ভাগে তার সমস্ত দুঃখ ভুলে গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন হয়। আকিবেরও হয়েছে সে দশা। এই শেষ ভাগে এসে সব চিন্তা ভুলে গিয়ে রাজ্যের সমস্ত ঘুম যেন তার চোখেই নেমে এলো।

আকিব ঘুমিয়ে আছে। গভীর ঘুমে। কিন্তু সে শুনছে সেই পরীর হুহু করা হাসি৷ কিন্তু সে চারদিকে অন্ধকার দেখছে। শুধু শুনতে পাচ্ছে কে যেন তাকে বলছে, “তোমার জন্য হলেও তোমাকে রাতে আসতে হবে এখানে৷ এখানে না আসলে তোমাকে সারাজীবন ভুলের মধ্যে থাকতে হবে। যদি ভুল থেকে বেরিয়ে আসতে চাও তো তোমাকে আসতেই হবে।”

সকালে সায়রার ডাকাডাকিতে ঘুম ভাঙ্গলো আকিবের। সায়রা ডেকে বলল, “কী ভাইয়া? এত বেলা হলো এখনো ঘুমে কেন? কলেজে যাবে না?”

আকিব চোখ কচলিয়ে বলল, “হুম, যাবো তো। তুই যা আমি আসছি।”
“তাড়াতাড়ি আসো৷ আমি টেবিলে অপেক্ষা করছি।” কথাটি বলে সায়রা দ্রুত চলে গেল।

আকিব অনেক কষ্টে বিছানা থেকে উঠে আয়নার সামনে গিয়ে দাঁড়ালো। তার চোখে জ্বলছে। রাতে পর্যাপ্ত ঘুম না হলে এমন জ্বলে। সে অনেক কষ্টে চোখ মেলে দেখলো তার চোখ অনেকটা লাল হয়ে গেছে। রাতে না ঘুমানোর ফল। কিন্তু আম্মু বা সায়রা জিজ্ঞেস করলে কী জবাব দেবে তা ভেবে পাচ্ছে না।

বিছানায় রাখা মোবাইলটা হাতে নিয়ে দেখলো ০৯:০০টা বাজে। অনেক দেরিই হয়েছে বলা যায়৷ সে দ্রুত হাত মুখ ধুয়ে খাবার টেবিলে গেল। তারপর টেবিলে বসতেই তার আম্মু বললেন, “কীরে? আজ এত দেরি হলো যে? তোর তো সাধারণত এমন দেরি হয় না?”

আকিব কোনো কথা না বলে নাশতা খাওয়া শুরু করলো। আজকে কলেজে যেতে দেরি হলে স্যার নিশ্চয়ই বকবেন। একসাথে দুদিনই দেরি করে গেলে তো বকার-ই কথা।

আকিবকে চুপ থাকতে দেখে তার মা বললেন, “চুপ করে আছিস কেন?”
আকিব এবার বলল, “আসলে রাতে ঘুম হয়নি তো তাই। আর এখন কলেজে দেরি হয়ে যাচ্ছে তাই দ্রুত খাচ্ছি।”
“রাতে ঘুম হয়নি? কেন? তোর কি শরীর খারাপ?”
“না আম্মু, আমি ঠিক আছি। হঠাৎ কেন জানি ঘুম আসেনি। তাই। এখন দ্রুত খেতে দাও মা, না হয় কলেজে যেতে দেরি হলে স্যার বকবেন।”
তার মা হেসে বললেন, “বোকা ছেলে, এখন কলেজে পড়িস, এত ভয় পেলে চলবে?”
আকিব আর কোনো প্রতি উত্তর দিলো না। চুপচাপ নাশতা খেতে লাগলো।

নাশতা খাওয়া শেষ হলে কলেজ ইউনিফর্ম আর কাঁধে ব্যাগ ঝুলিয়ে দ্রুত কলেজের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হলো।

কলেজ রোডে পৌঁছাতেই পিছন থেকে একটা মেয়ে কণ্ঠ তাকে “আকিব” বলে ডাক দিলো। সে অনেক দ্রুত হেঁটে যাচ্ছিলো তখন কারো কণ্ঠে নিজের নাম শুনে পিছন ফিরে তাকালো।

চলবে…

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here