নীল_আকাশের_পরী #এম_আর_এ_আকিব। #পর্ব_৪

0
263

#নীল_আকাশের_পরী
#এম_আর_এ_আকিব।
#পর্ব_৪
শব্দসংখ্যা: ১৩৪৬

আকিব পিছনে তাকিয়ে দেখলো ঐশী দাঁড়িয়ে। ঐশী একটু দ্রুত হেঁটে আকিব কাছে এলো। আকিব বলল, “কী ব্যাপার? এত দেরি করে কলেজে যাচ্ছ যে? ঐশী কোনো জবাব না দিয়ে হাঁটতে লাগল। আকিবও হাঁটতে লাগল। ঐশী হাঁটতে হাঁটতে বলল, “কী করব! কীভাবে যেন দেরি হয়ে যায়। গতকালও তো দেরি হয়ে গেল।”
“ওহ, আমারও আজ দেরি হয়ে গেল।”
“কীভাবে?”
“রাতে ঘুমাতে দেরি হয়েছিল তাই।”
“কেন? সময় মতো ঘুমাওনি কেন?”
“একটা বিষয় নিয়ে চিন্তা করছিলাম।”
“কী বিষয়?”
“বললে বিশ্বাস করবে না।”
“আরে করবো। বলো।”
“আচ্ছা, বলবো। এখন তো কলেজে চলে এসেছি। চলো ক্লাসে যাই।”
“আচ্ছা চলো।”

আজও আকিব এবং ঐশী দুজন একই বেঞ্চে বসলো। আকিবকে যে প্রশ্নগুলো স্যার করলেন তা ঐশী চুপিচুপি বলে দিলো। আকিব মেয়েটাকে দেখে অবাক হয়! মেয়েটির সাথে মাত্র দুই দিনের পরিচিয় অথচ ওর আন্তরিকতায় মনে হয় অনেক দিনের পরিচয়। আর আকিব অন্তর্মুখী স্বভাবের হওয়ায় সাধারণত কেউ তার সাথে মিশে না কিন্তু ঐশী মেয়েটি এত সহজে কীভাবে মিশে? আকিবের বিশ্বাস হয় না যে এত সুন্দর একটি মেয়ে তার সাথে কথা বলে।

ক্লাস শেষ। আকিব এবং ঐশী ক্যান্টিনে বসে চা খাচ্ছে আর গল্প করছে। হঠাৎ ঐশী বলল, “তখন কী যেন বলবে বলেছিলে?”
আকিব বলল, “না, থাক। কিছু না।”
ঐশী বলল, “কেন? আমাকে বললে সমস্যা না-কি? তুমি আমাকে আপন ভাবো না মনে হয়। আর না ভাবাটাও তো স্বাভাবিক। আমাদের মাত্র দুই দিনের পরিচয়। এই দুই দিনের পরিচয়ে কীভাবেই বা আপন ভাববে? কিন্তু আমি খুব সহজেই মানুষকে আপন করে নেই। না, আমাকে বলতে হবে না।”

আকিব বুঝতে পারলো ঐশী কথাগুলো অভিমান করে বলেছে। কিছু মেয়ে আছে যারা অল্পতেই অভিমান করে। ঐশীও হয়তো তাদের মধ্যে একজন। তারা যখন অভিমান করে তখন তাদের অভিমান ভাঙাতে হয়। না-হয় সেই অভিমান জমে একসময় রাগে পরিণত হয়। তাই আকিব বলল, “আরে তুমি ভুল বুঝছো৷ এখানে আপন কিংবা পরের বিষয় আসছে কেন? আর তুমি তো জানোই যে আমার কোনো ফ্রেন্ড নেই। তুমিই একমাত্র ফ্রেন্ড। তাহলে আমি তোমাকে আপন ভাববো না কেন? আসলে এ বিষয়টা আমি আমার পরিবারের কাউকেও জানাইনি। তাই বলে কি আমার পরিবারের লোকজন আমার আপন না?”

ঐশী বলল, “পরিবারের লোকদেরও অনেক কথা বলা যায় না, যা ফ্রেন্ডকে বলা যায়।”
আকিব বলল, “আচ্ছা বলব। আগে বলো তুমি অতিপ্রাকৃতিক কোনো কিছু বিশ্বাস করো।”
ঐশী বলল, “হুম, বিশ্বাস করবো না কেন? থাকতেও তো পারে।”
আকিব বলল, “তাহলে তোমাকে বলা যায়।”
“হুম, বলো।”

গতরাতের সমস্ত ঘটনা আকিব ঐশীকে বলল। তারপর বলল, “সব তো শুনলে। এখন তোমার কি ধারণা? এটি কি আমার হ্যালুসিনেশন ছিল? না কি বাস্তব?”
ঐশী একটু ভেবে বলল, “কী বলব বলো? যেহেতু তুমি দেখেছো তাহলে তুমিই সবচেয়ে ভালো বলতে পারবে। আমি তো দেখিনি, তো আমি কী বলব? তবে আমার মনে হয় সত্যি হতে পারে?”

আকিব অবাক হয়ে বলল, “কী বলছ? সত্যি হতে পারে?”
ঐশী বলল, “হুম, কেন নয়?”
আকিব বলল, “আসলে আমি ভাবছিলাম আমি যাকেই বলব সে-ই এটা নিয়ে ঠাট্টা-বিদ্রুপ করবে। বলবে আমি নাটক করছি। এজন্যই বলিনি।”
ঐশী বলল, “আরে আকিব, আমি অন্যদের মতো না। তুমি আমাকে তোমার মনের মতো ভাবতে পারো।”
“হুম, তুমি আসলেই খুব ভালো।”
ঐশী মুচকি হেসে বলল, “হয়েছে, আর বলতে হবে না।”
আকিব বলল, “আচ্ছা, আজ রাতে কি ওখানে যাবো? তুমি কী বলো?”
“হুম, যাওয়া উচিত।”
“তুমি বলছ?”
“হুম। কারণ ও তো তোমার কোনো ক্ষতি করবে না, তাই না? যদি করার হতো তাহলে তো গতকালকেই করতে পারত। কী বলো?”
“হুম, কথা তো সত্য।”
“তাই বলছি তুমি ওখানে যাও। গিয়ে দেখো কী বলতে চায়। হয়তো কথাগুলো তোমার শুনা উচিত।”
“কিন্তু গিয়ে যদি সে আসে না?”
“কে?”
“পরী।”
“না এলে আর কী করবে! ভাববে তোমার মনের ভুল ছিল। বাড়ি এসে নিশ্চিন্তে ঘুমাবে।”,
ঐশী কথাটি বলে মুচকি হাসলো।
আকিব বলল, ” আচ্ছা, তাহলে আজ যাই।”
“আচ্ছা যাও।”

আকিব ও সায়রা টেবিলে বসে পড়ছে। সায়রা মনোযোগ দিয়ে পড়লেও আকিব যেন শুধু চোখ বুলাচ্ছে। সায়রা মাঝেমধ্যেই তা লক্ষ করছে। আকিবের কেন জানি পড়ায় একদম মন বসছে না।
না, আজ রাতে পরীর সাথে কী হবে তা নিয়ে সে ভাবছে না। সে ভাবছে ঐশীর কথা। তার চোখের সামনে বারবার ঐশীর হাস্যোজ্জ্বল মুখ ভেসে উঠছে। তার কানে বারবার ঐশীর সেই মিষ্টি হাসির সুর বাজছে৷ সে চারদিকে শুধু ঐশীকেই দেখতে পাচ্ছে।

আকিব পড়ায় মনোযোগ দেওয়ার জন্য অনেক চেষ্টা করছে কিন্তু পারছে না৷ সে কিছুই ভেবে পাচ্ছে না। সে কি ঐশীর প্রেমে পড়ে গেল? কিন্তু মাত্র দুই দিনের পরিচয়ে কীভাবে? কিন্তু যেভাবেই হোক, লক্ষণ দেখে তো প্রেমে পড়ছেই বুঝা যাচ্ছে৷

আকিবকে এমন পড়ায় অমনোযোগী দেখে সায়রা জিজ্ঞেস করলো, “কী ভাইয়া? না পড়ে এমন বসে আছ কেন?”
সায়রার এমন প্রশ্নে আকিব হকচকিয়ে উঠলো৷ তারপর বলল, “কই? না তো। আমি তো পড়ছি।”

সায়রা বলল, “আমি তোমাকে অনেকক্ষণ ধরে লক্ষ করছি৷ তুমি বইয়ের দিকে তাকালেও মন অন্যদিকে। মাঝেমধ্যে তো মুচকি মুচকি হাসছো, ব্যাপার কী?”
আকিব মুচকি হেসে বলল, “আরে কিছু না, এমনি।”
সায়রা বলল, “বুঝি বুঝি, সবকিছু বুঝি ভাইয়া৷ আমার বুঝার বয়স হয়েছে। তা গতকাল তোমার এক মেয়ে ফ্রেন্ড ফোন দিলো না? আজ দেয়নি?”

আকিব কী বলবে ভেবে পাচ্ছে না। ছোট বোনের মুখে এমন কথা শুনতে তার লজ্জা করছে। যদিও সায়রার এমন বলাটা স্বাভাবিক। কারণ সায়রা থাকে বন্ধুর মতোই ভাবে৷ আকিবকে চুপ থাকতে দেখে সায়রা বলল, “আচ্ছা আচ্ছা, যা বুঝার বুঝে গেছি। তা নাম কী উনার?”
আকিব অবাক হয়ে বলল, “কার?”
“যার কথা ভেবে লেখাপড়ায় মন বসছে না।”
আকিব বলল, “কী যা-তা বলছিস। কার কথা ভাববো? আমি কারো কথা ভাবছি না।”

কথাটি বলতেই আকিবের মোবাইলটা বেজে ওঠলো। কে কল দিয়েছে না দেখেই আকিব বুঝে গেছে। নিশ্চয়ই ঐশী। আকিবের মুখে হাসির রেখা ফুটে ওঠলো। সায়রাও ইতোমধ্যে বুঝে গেছে যে কে কল দিয়েছে। সায়রা বলল, “কী ভাইয়া? এবার তো কল এলো। এখন কি মনটা শান্ত হয়েছে?”
কথাটি বলে খিলখিল করে হাসতে লাগলো।
আকিব ফোন ধরে বলল, “হ্যালো।”
ওপাশ থেকে ঐশী বলল, “কেমন আছ?”
“এই তো ভালো। তুমি কেমন আছ?”
“আমিও ভালো। কী করছ? পড়ছ না-কি?”
“হুম, পড়ছিলাম।”

পাশ থেকে সায়রা একটু জোরেই বলল, “কই পড়ছিলে? মিথ্যা বলো কেন? ফোনটা আমার কাছে দাও। একটু কথা বলি।”

আকিব হাতের ইশায়য় সায়রাকে চুপ থাকতে বলল। কিন্তু সায়রার কণ্ঠ ঐশী অবধি পৌঁছে গেছে। ঐশী বল্পল, “পাশে কে কথা বলে? তোমার বোন।”
আকিব বলল, “হুম, ও খুব-ই দুষ্ট।”
ঐশী বলল, “ওর কাছে ফোন দাও তো। কথা বলি।”
“ওর কাছে কেন?”
“আরে দাও তো, কথা বলি।”
আকিব ফোনটা সায়রাকে দিয়ে বলল, “এই নেয়, কথা বল।”

সায়রা হাসি মুখে ফোনটা নিয়ে বলল, “আসসালামু আলাইকুম আপু।”
ঐশী বলল, “ওয়া আলাইকুমুস সালাম। কেমন আছ?”
“ভালো আপু। আপনি কেমন আছেন?”
“আমিও ভালো। তোমার নাম যেন কী?”
“জি, আমার নাম সায়রা জাহান। আপনার?”
“আমি ইসরাত ফেরদৌস ঐশী। তা তুমি না-কি খুব দুষ্ট?”
“মোটেই না আপু। আমি একদম দুষ্টুমি করি না। মনোযোগ দিয়ে লেখাপড়া করি। কিন্তু ভাইয়ার তো পড়ায় মন বসছে না তাই পড়া বাদ দিয়ে একটু জিজ্ঞেস করছিলাম যে কী হয়েছে।”
“কেন? মন বসছে না কেন?”
“কী জানি! বলছে একটা মেয়ের কথা না-কি খুব মনে পড়ছে। আমি বললাম যে কে? নাম কী? কিছুই বলে না।”
“কী বলো? এটা তো খুবই খারাপ। একটা মেয়ের জন্য লেখাপড়ায় মন বসছে না!”
“সেটাই তো। আমি বলছি যে, এসব বাদ দিয়ে একটু মন দিয়ে পড়ো। পড়লে অনেক মেয়ে পাবে। মেয়ের জন্য লেখাপড়া বাদ দিয়ো না৷ ভাইয়া কী বলে জানো?”
“কী বলে?”
“আমাকে ধমক দিয়ে বলে যে, তুই তো ছোট। তুই এসবের কী বুঝবি? মেয়েটিকে আমি খুব ভালোবাসি৷ ওর কণ্ঠ না শুনলে আমার পড়ায় মন বসে না। আমি শুধু ওকেই চাই। আর কিছুই চাই না।”

সায়রার এত গুছানো মিথ্যা কথা শুনে আকিব লজ্জায় লাল হয়ে গেছে। তারপর টান দিয়ে সায়রার থেকে মোবাইলটা নিয়ে ঐশীকে বলল, “আরে সায়রা যা বলছে সব মিথ্যা। ও বানিয়ে বলছে। আমি তোমাকে পড়ে কল দেবো। রাখছি।”

তারপর ফোন রেখে সায়রাকে ধমক দিতেই সায়রা এক দৌড়ে পালিয়ে গেল।

রাতের খাওয়া শেষ করে আকিব মা’কে বলল, “আম্মু, আমার একটু বাজারে যেতে হবে।”
আম্মু বললেন, “এত রাতে বাজারে কেন?”
“আরে একটু দরকার ছিল।”

পাশ থেকে তার আব্বু বললেন, “আরে যেতে চায় তো যাক না।”
আব্বুর অনুমতি পেয়ে সে আর একমুহূর্ত অপেক্ষা করলো না। দ্রুত বাড়ি থেকে বের হয়ে গেল। মনের মধ্যে ভয়ের চেয়ে উত্তেজনা বেশি কাজ করছে। সে একবার ভাবছে হয়তো সত্যি পরী আছে কিন্তু আবার ভাবছে হয়তো সবই তার মনের কল্পনা। গিয়ে দেখবে কিছু নেই। সে দ্রুত পা ফেলে হাঁটতে লাগল। কিছুক্ষণের মধ্যেই সে বটতলায় পৌঁছে গেল।

কিন্তু এখানে তো অনেক নির্জন। কাউকে দেখা যাচ্ছে না। কেউ-ই নেই এখানে। তবে কি গতরাতের সবকিছু কল্পনা ছিল? আকিব কিছুক্ষণ সেই বটতলায় দাঁড়িয়ে রইলো। কিন্তু পরীর দেখা না পেয়ে ভাবলো আসলেই তার মনের কল্পনা ছিল সব। তার ভাবতেই লজ্জা লাগছে কীভাবে সে অতিপ্রাকৃত কিছু বিশ্বাস করলো। সে নিজেই নিজেকে বকছে যে কেন সে ঐশীকে এসব বলতে গেল? ঐশীকে না বললে তার এ বোকামি কেউ জানতো না।

চলবে…

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here