নীল_আকাশের_পরী #এম_আর_এ_আকিব #পর্ব_৫

0
270

#নীল_আকাশের_পরী
#এম_আর_এ_আকিব
#পর্ব_৫
শব্দসংখ্যা: ১১৪২

আকিব চুপচাপ চলে আসছে ঠিক এমন সময় নুপুরের ধ্বনি তার কানে এলো৷ তারপর মৃদু কণ্ঠে কে যেন তাকে বলল, “আকিব।”
ডাক শুনে পিছনে ফিরে তাকালো আকিব। দেখতে পেলো সেই পরী দাঁড়িয়ে আছে৷ আকিব ভেবে পাচ্ছে না এটা আদৌও তার কল্পনা না কি বাস্তব। এটি বাস্তব না কি কল্পনা তা বুঝার জন্য সে তার হাতে চিমটি কাটলো৷ কিন্তু এতে তো তার কল্পনা ভাঙলো না। তবে কি সত্যি?

এদিকে তাকে নিজ হাতে চিমটি কাটতে দেখতে পরীটি হিহিহি করে হাসলো৷ তারপর মিষ্টি কণ্ঠে বলল, “কী ভাবছ? সবকিছু কল্পনা? মোটেই না। যা ঘটছে সব কিছুই বাস্তব।”
আকিব বলল, “হুম, বুঝলাম। কিন্তু কী বলবেন বলেন?”
পরী বলল, “হুম, বলবো৷ তার আগে চলো আমরা অন্য এক জায়গায় যাই। এখানে ভালো লাগছে না।”
“কোথায় যাবে?”
“ওই নদীর পাড়ে ”
“আচ্ছা চলো।”

আকিব নদীর পাড়ে ওই পরীর সাথে বসে আছে। দুজনই চুপচাপ৷ শুধু কয়েকটা ঝিঝি পোকার শব্দ কানে আসছে। আকাশের চাঁদ আজ পূর্ণ আলো ছড়াচ্ছে৷ চাঁদের আলোতে পরীটাকে পরিষ্কার দেখা যাচ্ছে৷ আকিব যে এত রাতে একটা পরীর সাথে বসে আছে এতে তার ভয় করছে না৷ কেন জানি তার সব ভয় চলে গেছে৷

পরীকে চুপ থাকতে দেখে আকিব বলল, “চুপ করে আছেন কেন? বলুন।”
পরী বলল, “হুম, বলবো। তার আগে আমরা পরিচিত হয়ে নেই।”
আকিব বলল, “আচ্ছা।”
“হুম, তোমার পরিচয় তো আমি জানি৷ আমার পরিচয় দেই। আমি নিশি। পরীস্থানে থাকি। বাবা-মায়ের একমাত্র মেয়ে৷”
“আচ্ছা।”
“আমরা কি বন্ধু হতে পারি?”
আকিব অবাক হয়ে বলল, “পরীর সাথে মানুষের কীসের বন্ধুত্ব?”
পরী মানে নিশি বলল, “তুমি সাধারণ মানুষ নয়।”
আকিব অবাক হয়ে বলল, “মানে? আমি মানুষ নয়? তাহলে কী?”
নিশি বলল, “তুমি মানুষ। তবে অন্য সব মানুষের মতো না।”
“মানে? কী বলছেন? কিছুই বুঝতে পারছি না।”
“বিস্তারিত বললে সব বুঝতে পারবে। এর আগে আমাকে তুমি করে বলো। আমার সাথে বন্ধুত্ব করো৷”
“আচ্ছা, তা না হয় করলাম। কিন্তু ঘটনাটা তো বলো।”
“এ অনেক লম্বা ঘটনা। তোমাকে সবকিছু বলার এখনো সময় হয়নি৷ শুধু এতটুকু জেনে রাখো তুমি যাদের বাবা-মা বলে জানো ওরা কিন্তু তোমার বাবা-মা না। আবার তুমি যাকে তোমার বোন বলে জানো সে-ও কিন্তু তোমার বোন না।

কথাটি শুনে আকিব যেন আকাশ থেকে পড়লো। সে যেন নিজের কানকে বিশ্বাস করতে পারছে না। সে অবাক হয়ে বলল, ” কী যা-তা বলছেন? আপনি বললেই আমি বিশ্বাস করবো?”
নিশি বলল, “আরে আমাকে আপনি করে বলছ কেন? তুমি করে বলো।”
“তা না হয় বলবো। কিন্তু তোমার কথা বিশ্বাস করবো কেন?”
“কারণ তোমাকে বিশ্বাস করতে হবে।”
“কেন করবো?”
“সময় হলে আমি তোমাকে প্রমাণ দেবো।”
“দাও দেখি।”
“এখন দেওয়ার সময় হয়নি। কিন্তু এখন শুধু এতটুকুই বলবো যে এটাই সত্য।”
আকিব রাগ করে বলল, “আমি বিশ্বাস করি না।”

আসলে এতদিনের ধরে যাদের বাবা-মা বলে জেনে এসেছে হঠাৎ এসে যদি কেউ বলে যে ওরা তার বাবা-মা নয়, তাহলে কে-ই বা বিশ্বাস করবে? এজন্য আকিবও বিশ্বাস করতে পারছে না।

নিশি বলল, “আচ্ছা, তোমাকে কিছু প্রশ্ন জিজ্ঞেস করি।”
আকিব বলল, “হুম, করো।”
“বলো তো, তোমার আর তোমার বোনের বয়সের পার্থক্য কতো?”
“এক বছর। কেন?”
“দুই ভাই-বোনের পার্থক্য কি সাধারণত এক বছর হয়? সাধারণত দুই বছর হওয়ার কথা না?”
“হ্যাঁ, কিন্তু দুই বছর না হলেই যে ও আমার আপন বোন না, এর কোনো নিশ্চয়তা আছে? অনেকেরই তো এক বছরের ব্যবধান থাকে।”
“তা থাকে। কিন্তু আমি যেটা বলছি সেটা সত্যি। সময় হলে তুমি সব জানতে পারবে।”
“সময় কখন হবে?”
“তোমার যখন ১৮ বছর হবে তখন তুমি রাতে ঘুমের মধ্যে তোমার আসল বাবা-মা’কে স্বপ্ন দেখবে। তারা-ই তোমাকে সব ঘটনা খুলে বলবে। তোমার ১৮ বছর হতে এখনো ৩ মাস ১৮দিন বাকি আছে।”

আকিব হিসাব করে দেখলো তার ১৮ বছর হতে এখনো ৪ মাস ১৫ দিন বাকি। তাই সে বলল, ‘ভুল বললে। আমার ১৮ বছর হতে এখনো ৪ মাস ১৫ দিন বাকি।”
নিশি হেসে বলল, “তুমি ভুল জানো। তুমি যেটা জানো এটা তোমার পালক বাবা-মায়ের দেওয়া জন্মতারিখ। তারা তো তোমার আপন বাবা-মা না, এজন্য সঠিকটা জানে না।”
“কিন্তু তুমি কীভাবে এতকিছু জানো? তোমার বয়সও তো বেশি বলে মনে হয় না।”
“আমাকে আমার আম্মিজান সবকিছু বলেছেন।”
“তোমার আম্মুও কি পরী?”
নিশি হেসে বলল, “হুম, পরীই তো।”
আকিব বলল, “বুঝলাম না। সব পরী আমার এত খোঁজ নেয় কেন?”
নিশি বলল, “বললাম না, তুমি সাধারণ কোনো মানুষ না।”
আকিব বলল, “তাহলে কি আমি পরী? পরী হলে আমার ডানা কোথায়?”

কথাটি শুনে নিশি হিহিহি করে অট্টহাসিতে ফেটে পড়লো। তার হাসি যেন থামছেই না। তারপর অনেক কষ্টে হাসি থামিয়ে বলল, “ছেলেরা পরী হয় না তো। ছেলেরা হয় জ্বিন।”
কথাটি বলে আবারও হিহিহি করে হাসতে লাগলো।”

নিশির হাসি সুন্দর। কিন্তু এই মুহূর্তে তা আকিবের ভালো লাগছে না। কেমন যেন বিরক্ত লাগছে। তাই সে রেগে বলল, “জ্বিন হলে আমি এখানে কেন? আমি পৃথিবীতে এলাম কীভাবে? আর আমার বাবা-মা’ই বা কে?”
নিশি বলল, “সে এক দুঃখের কাহিনী। তুমি সময় হলে সব জানতে পারবে। কিন্তু তুমি জ্বিনও না।”
আকিব বলল, “উফ! আমি কিছুই ভাবতে পারছি না। আমার মাথাব্যথা করছে। তোমার কথাগুলো শুনার জন্যই আমার মাথাটি কাজ করছে না। কী সব আবুল-তাবুল বকছো। আদৌও তুমি বাস্তবে আছ কি-না তা নিয়েও আমার সন্দেহ। আমি তোমার কথা কোনো মতেই বিশ্বাস করবো না।”

নিশি বলল, “আচ্ছা, বিশ্বাস করতে হবে না। আর তো মাত্র কয়েকমাসের ব্যাপার। তারপর তুমি নিজেই বুঝতে পারবে সবকিছু।”
“আচ্ছা, তখন দেখা যাবে। আমি এখন যাই।”
“যাবে তো, কিন্তু আগামীকালও আসবে কিন্তু।”
“না, আর আসবো কেন?”
“আরো অনেক কথা-ই তো বলার আছে।”
“কেন? সব তো স্বপ্নে দেখবো বললে। আর কীসের কথা?”
“স্বপ্নে তুমি অনেক কিছু ব্যাখ্যা বুঝতে পারবে না। তোমার অনেক কাজ বাকি। আমি তোমাকে সবকিছু বুঝিয়ে দেবো। তাই তোমাকে প্রতিদিন আসতে হবে?”
“আচ্ছা।”
“আসবে তো?”
“আচ্ছা, দেখি। এখন যাই।”

কথাটি বলে আকিব আর অপেক্ষা করলো না। দ্রুত হাঁটতে শুরু করলো৷ তার মাথায় প্রচণ্ড ব্যথা করছে। এই পরীর কাছে যতক্ষণ থাকবে ততক্ষণ আরো মাথা ব্যথা বাড়বে৷ তারচেয়ে চলে আসা ভালো। আকিব চলে আসছে ঠিক তখন আবার নিশি তাকে ডাক দিলো৷ আকিবের যদিও এখানে থাকার একটুও ইচ্ছে নেই কিন্তু তারপরেও সে পিছন ফিরে তাকালো। সে দেখলো নিশি দৌড়ে আসছে তার দিকে। কী যেন গুরুত্বপূর্ণ কথা বলার বাকি রয়েছে৷ সে দৌড়ানোর সাথে তার পায়ে থাকা নুপুরের ধ্বনি আকিবের কানে বাজছে। সেই সাথে অচেনা এক ফুলের ঘ্রাণও তার নাকে আসছে৷ সে ভালো করে নিশির মুখের দিকে তাকালো। খুবই মায়াবী চেহারা। সে নিজেই নিজেকে প্রশ্ন করলো, নিশি কি ঐশীর থেকে বেশি সুন্দর?”

একবার ভাবলো, “হ্যাঁ, বেশি সুন্দর।” কিন্তু আবার ভাবলো, “না, ঐশীই বেশি সুন্দর।”

ইতোমধ্যে নিশি তার কাছে চলে এসেছে। আকিব বলল, “কী বলবে বলো।”
“তোমাকে একটা কথা বলতে ভুলে গিয়েছিলাম।”
“তো বলো।”
“তুমি যেহেতু সাধারণ কোনো মানুষ না, তাই সাধারণ কোনো মেয়েকে তোমার বিয়ে না করাই ভালো। তোমার যদি কোনো মেয়ে বন্ধু থাকে তা ভালো, কিন্তু সেই মেয়ে বন্ধুকে নিয়ে কোনো স্বপ্ন দেখা চলবে না। বুঝেছ?”

আকিব কী বলবে ভেবে পাচ্ছে না। মেয়েটি কি পরোক্ষভাবে ঐশীর সাথে কথা বলতে মানা করলো? না, আকিব তা করতে পারবে না৷ ঐশীর মতো এত ভালো একটা মেয়ের সাথে কথা না বলে থাকা এটা সে পারবে না।”
তাকে চুপ থাকতে দেখে নিশি বলল, “চুপ করে আছ কেন? একদম কথা না বলতে আমি বলছি না। কথা বলিও, সমস্যা নেই। কিন্তু অন্য কোনো স্বপ্ন দেখতে পারবে না।”

আকিব কোনো জবাব না দিয়ে দ্রুত সেখান থেকে চলে এলো৷ তার খুব ঘুম পাচ্ছে৷ এখন তাকে দ্রুত বাড়িতে গিয়ে ঘুমাতে হবে। না হয় মাথা ব্যথা তীব্র থেকে তীব্রতর হবে।

চলবে…

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here