নীল_আকাশের_শুকতারা,১৫,১৬

0
999

#নীল_আকাশের_শুকতারা,১৫,১৬
(১৫তম পর্ব)

তারার মায়ের কথা শুনে নীল এবার আচমকা বলে উঠলো,তারা এভাবে হঠাৎ করে চলে যেতে পারে না।
উপস্থিত সবাই নীলের দিকে উৎসুক চোখে তাকালেন।
নীল নিজের বলা কথাটায় নিজেই চমকে উঠলো।তারার চলে যাওয়ার কথা শুনে কখন আনমনে মনের কথাটা মুখ ফুসকে বাইরে বেরিয়ে এসেছে বুঝতেই পারে নি।সে আমতা আমতা করে বললো,আমি আর আকাশ মিলে একটা ট্যুরের প্ল্যান করেছি।সবার যাওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে যেহেতু তারাও আমাদের সাথে থাকে তাই ওরটাও করা হয়েছে।
নীলের মুখ থেকে কথা কেড়ে নিয়েই যেন আকাশ বললো,নীল ঠিক বলেছে আমরা সবাই মিলে ট্যুরে যাবো আর তারা চলে যাবে এটা তো হয় না।আমরা সবাই ঘুরে আসি তারপর নাহয় তারা চলে যাবে।
নীল আর আকাশের কথা শুনে নীরা বললো,তোমরা তো আমাকে কিছু জানাও নি।
নীল নীরার কথার উত্তরে বললো,আকাশ চাইছিল সব ব্যবস্থা করে সবাইকে সারপ্রাইজ দিবে তাই আমাকে বলতে দেয়নি।আর আজকেই সে সবাইকে এ ব্যপারে বলতো।
আরাফাত সাহেব এ ব্যপারে সম্মতি জানিয়ে বললেন,ওরা ঠিকই বলেছে বাচ্চারা চাইছে যখন একটু ঘুরবে সবাই মিলে বেড়িয়ে আসুক, তারা মা নাহয় ফিরে এসে আপনার সাথে চলে যাবে ভাবী।
কলি খানিক্ষণ চিন্তা করে বললেন,সমস্যা নেই ভাই তারা তাহলে আজ থাকুক, আপনারা ঘুরে এলে আমি এসে নিয়ে যাবো।
তারা এতক্ষণ চুপ করে ছিল, এবার আরাফাত সাহেবকে উদ্দেশ্য করে বললো,আংকেল আমি মায়ের সাথে আজ চলে গেলেই ভালো হবে আমার আসলে ঘুরতে যাওয়ার কোনো ইচ্ছে নেই।
নীরা তারার কথা শুনে একটু অভিমানী গলায় বললো,বাবা তারাকে ছাড়া কে কোথায় যাবে জানি না কিন্তু আমি অন্তত ঘুরতে যাচ্ছি না।গেলে তারাও আমাদের সাথে যাবে।
তারা নীরার কাছে এসে দাঁড়িয়ে বললো,আপু অনেক দিন পর মা আমাকে নিতে এসেছে আমার চলে যাওয়াটাই ভালো হবে।তোমরা ঘুরে এসো আমি আবার বেড়াতে আসবো তোমাদের বাসায় কথা দিচ্ছি।
নীরা মুখ ফিরিয়ে বললো,এতো কথা দিতে হবে না চলে যাও তুমি।কিন্তু আমি ঘুরতে যাচ্ছি না এটাই আমার শেষ কথা।
হালিমা বেগম তারাকে উদ্দেশ্য করে বললেন,তারা নীরার যেমন খারাপ লাগবে তুমি আজ চলে গেলে আমারও লাগবে মা, থেকে যাও কয়দিন।
আতিয়া খানিকটা বিরক্তি নিয়ে বললেন,
এতোদিন থাকলে, খেলে এই বাসায় আর কয়দিন থাকলে কী এমন মহাভারত অশুদ্ধ হয়ে যাবে মেয়ে?

কলি মুচকি হেসে বললেন,তারা তুই এতোদিন ওনাদের সাথে ছিলিস সবাই তোকে খুব ভালোবাসেন ওনারা যখন চাইছেন আরও কয়দিন থাক।ওনাদের সাথে ঘুরে আয় তারপর আমি এসে নিয়ে যাবো।আর এখন আমাকে যেতে হবে।
কলি উঠে দাঁড়ালেন।
তারা আর কিছু বললো না।মাকে এগিয়ে দিতে বেড়িয়ে গেল।আরাফাত সাহেবও গেলেন।
আতিয়া মুখ বাঁকিয়ে “আদিখ্যেতা” বলে উঠে চলে গেলেন।হালিমাও চায়ের খালি কাপগুলো তুলে রান্নাঘরের দিকে এগোলেন।
বসার ঘরে নীল,নীরা আকাশ আর মেঘ রয়েছে সবাই চুপচাপ।কিছুক্ষণ পর নীল আঁড়চোখে তারাকে আসতে দেখে না দেখার ভান করে নীরাকে উদ্দেশ্য করে বললো, যে চলে যেতে চায় তাকে ধরে বেধে রেখে দেয়ার মানে কী?তুই যার সাথে অভিমান করবি তার হয়তো সময়ও নেই তোর অভিমান ভাঙানোর।কিছু মানুষ অতিথি পাখির মতো হঠাৎ করে যেমন আসে তেমন হঠাৎ করে আবার চলেও যায়, ফেলে রেখে যায় পালকের মতো মায়া।তবে একটা কথা শুনে রাখ যার তার জন্য বেশি মায়া দেখাতে নেই।সবাই সবকিছু ডিজার্ভ করে না।আর সবাই ভালোবাসা বুঝেও না, অকৃতজ্ঞরা তো একদমই না।
নীলের কথাগুলো তারা অবাক হয়ে শুনলো তারপর ভিতরে না এসে দরজা থেকেই নিজের ঘরে চলে গেল।
তারা চলে যাওয়ার সময় নীরার চোখ পড়লো ওর দিকে ইতস্তত করে বললো,ভাইয়া তারা এখানেই ছিল তোর কথাগুলো শুনতে পেয়েছে এভাবে কেন বললি তুই?ওকে আমি যে এতো ভালোবেসেছি এই ভালোবাসাটা ওর প্রাপ্য ছিল বলেই কিন্তু।আমাদের বাসায় তো মেয়েটা কম অপমান হয়নি, তুই এখনও পর্যন্ত ওকে কথা শুনাতে ছাড়িস না।এখান থেকে চলে গেলেই মেয়েটা শান্তি পাবে আমি জানি তবুও চাই না এভাবে চলে যাক।মাত্র মা তারার সাথে ভালো ব্যবহার শুরু করেছেন।ওর নিজের গুণেই মায়ের ভালোবাসা জিতে নিতে পেরেছে যখন আমি চাই সে যাওয়ার আগে কয়েকটা দিন আমাদের সাথে খুব ভালো ভাবে থাকুক।আর এটাও সত্যি ও চলে গেলে আমার খুব খারাপ লাগবে।সে জন্য অভিমান করে ওকে আটকিয়েছি।তুইও তো সময় মতো ট্যুরের কথাটা বলায় আমি ওকে আটকাতে পারলাম।তাহলে এখন এভাবে কেন কথা বলছিস?
নীল নাক ফুলিয়ে উঠে দাঁড়িয়ে বললো,আমি কাউকে আটকানোর জন্য এসব করিনি আকাশ সবার জন্য প্ল্যানের টিকিট করে রেখেছে সেটা নষ্ট হবে বলেই কথাটা বলেছি।তুই যার জন্য এতো ভাবছিস সেই তারা কী তোর জন্য থাকতে চেয়েছে?সব শুনে ওর মা রেখে যাওয়ায় থেকে গেছে তোর জন্য দরদ দেখিয়ে না।
নীল কথাগুলো বলে হনহন করে বসার ঘর থেকে বেড়িয়ে গেল।
নীরা বিরক্তি নিয়ে উঠে চলে যাচ্ছিলো আকাশ পেছন থেকে ডাকলো।নীরা পেছন ফিরে তাকাতেই আকাশ ডান হাতে বা হাতের নখ খুটতে খুটতে মুচকি হেসে বললো, থ্যাংক ইউ নীরা।
নীরা বিস্ময় নিয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে বললো,কীসের জন্য?
–তারার জন্য করা আমার প্ল্যানের টিকিটটা বাঁচিয়ে দেয়ার জন্য।
এবার নীরা আর আকাশ দুজনেই একসাথে সশব্দে হেসে উঠলো।

তারা নিজের ঘরে এসে মনে মনে ভাবছে,সত্যিই কী মায়ের সাথে চলে যাওয়ার আগ্রহে নীরাকে সে কষ্ট দিয়ে ফেললো।যাদের সাথে এতোদিন ছিল তারা যখন চাইছেন আরও কয়টা দিন তাদের সাথে রাখবেন তবে এভাবে বার বার চলে যাবো, চলে যাবো বলা হয়তো একদম উচিৎ হয়নি তার।
নীল তো ঠিকই বলেছে অকৃতজ্ঞ না হলে আজ কেন সে এমন আচরণ করলো।মায়ের কান্না দেখে মন উতলা হয়ে উঠেছিল,মনে হচ্ছিল মায়ের বুকে মাথা রেখে নির্জন জঙ্গলে গিয়ে বসে থাকতে যেখানে মা আর মেয়ে ছাড়া আর কেউ নেই।
সত্যি আবেগের বসে অকৃতজ্ঞতা করে ফেলেছে সে।
তারা প্রচন্ড অস্বস্তিতে একটা হাতে কপাল চেপে ধরে চোখ বন্ধ করলো।

নীল বাসা থেকে বেড়িয়ে এসে খোলা আকাশের নিচে আনমনে হাটছে।বুকের ভেতর অদ্ভুত রকমের স্বস্তি অনুভব হচ্ছে যার কারণ তারার থেকে যাওয়া।তবে কেমন যেন ভেতরটা খচখচ করছে ওকে শুনিয়ে শুনিয়ে অকৃতজ্ঞ বলায়।কিন্তু নীলের কী বা করার আছে অভিমান এক বড্ড বাজে অনুভূতি যার জন্য সৃষ্টি হয় সে যদি না বুঝে তবে ভেতর ভেতর অদ্ভুত রকমের যন্ত্রণা হয়।সেই যন্ত্রণাই বাইরে বেড়িয়ে আসে রাগ হয়ে।সেই রাগ ভেদ করে ভালোবাসার দেয়াল উন্মোচন করতে সবাই পারে না।

আকাশ তারার ঘরের পাশ দিয়েই নীলের ঘরে যাচ্ছিল খেয়াল করলো তারা কপাল চেপে ধরে বিছানায় বসে আছে।আকাশ দরজায় নক করে শব্দ করে গলা পরিষ্কার করলো।
তারা দরজায় তাকিয়ে আকাশকে দেখতে পেয়ে দ্রুত উঠে দাঁড়িয়ে বললো, আপনি?
–এদিক দিয়েই যাচ্ছিলাম দেখলাম তুমি মাথায় হাত দিয়ে বসে আছো।মাথা ব্যথা করছে?
–উহু এমনিতেই বসে ছিলাম মাথা ব্যথা না।
–মন খারাপ করছে মায়ের সাথে যেতে না পেরে?
–সেরকম কিছু না আসলে তখন আমি চলে যাবো বলায় নীরা আপু আমার উপর মন খারাপ করেছে।মন খারাপ করাটাই স্বাভাবিক এতোদিন তাদের বাসায় ছিলাম আজ যখন ওরা আমাকে নিজে থেকেই থাকতে বলছে আমার বোধহয় চলে যাবো বলা উচিৎ হয়নি।
আকাশ দরজা থেকে সরে একটু ভিতরে এসে বললো, তুমি বোধহয় নীলের কথা শুনে মন খারাপ করেছো? ও তো এমনই। আর নীরা কিন্তু তুমি থেকে যাওয়ায় সব মন খারাপ ভুলে গেছে। তুমি এসব নিয়ে ভেবো না।
আকাশ কথাগুলো বলতে বলতে খেয়াল করলো তারা দরজায় তাকাচ্ছে বার বার, মনে হচ্ছে ওর অস্বস্তি হচ্ছে।
আকাশ খানিকটা অবাক হয়ে বললো,বার বার দরজায় তাকাচ্ছো কেন তারা, কী নিয়ে তোমার অস্বস্তি হচ্ছে বলবে?
তারা ঢোক গিলে বললো,কই অস্বস্তি হচ্ছে না তো।আপনার জন্য কফি বানিয়ে আনি?আপনি বরং নীরা আপুর ঘরে গিয়ে বসুন।আমি কফি বানিয়ে আনছি।
–আমাকে তোমার ঘর থেকে চলে যেতে বলছো?
আকাশের কথাশুনে তারা খানিকটা লজ্জাই পেল।আমতা আমতা করে বললো,না না আমি ভাবছিলাম কফি বানিয়ে নীরা আপুর কাছে যাবো তাই আপনার জন্যও বানিয়ে ওখানে নিয়ে যেতাম।
আজ সন্ধ্যায় তো আপনার আর নীরা আপু কারোর কফি খাওয়া হয়নি তাই।
আকাশ মুচকি হেসে বললো,ঠিক আছে কিন্তু তোমার আমার কথা ছিল একে অপরকে তুমি করে বললো,আমি খেয়াল করছি তুমি সেটা করছো না।
–না মানে আমি আপনি বলেই অভস্ত্য দয়া করে কিছু মনে করবেন না।
আকাশ দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো।মনে মনে ভাবলো,তারার আজ কথা বলার ধরণ অন্য দিনের থেকে একদম আলাদা।যেন তার উপস্থিত সে একদম পছন্দ করছে না নাকি কিছু নিয়ে ভয় পাচ্ছে।তবে কী মা তারাকে কিছু বললেন! যার জন্য আকাশের সাথে একা কথা বলতে ভয় পাচ্ছে সে।আকাশের মা তারাকে পছন্দ করেন না এটা যে ওকে কতটা কষ্ট দেয় শুধু সেই জানে।কিন্তু আকাশ এবার নিজেকে মনে মনে নিজেকে প্রস্তুত করছে মায়ের সাথে তারাকে নিয়ে কথা বলতেই হবে।তবে তার আগে তারার সাথে কথা বলাটা জরুরি।
আকাশ ভাবনার রাজ্য থেকে বেড়িয়ে এসে বললো,বন্ধুত্বে কে কাকে কোন নামে, কোন সম্মোধনে ডাকলো সেটা আসলে কোনো ব্যপারই না।তোমার যেটা পছন্দ যেটাতে কম্ফোর্ট সেটাই ডাকবে।
কথাগুলো বলে আকাশ ঘর থেকে বেড়িয়ে গেল।
তারা কফি বানাতে রান্নাঘরে গেল।
হালিমা বেগম রাতের রান্না বসিয়েছেন চুলায়, নীলও মায়ের পাশে একটা চেয়ারে বসে কফি খাচ্ছে।
তারাকে দেখতে পেয়ে হালিমা বেগম বললেন,কিছু লাগবে তারা?
তারা মাথা নাড়িয়ে বললো,কফি বানাবো আন্টি।
–কার জন্য?
–নীরা আপু আর আতিয়া ফুপির বড় ছেলে যে ওনার জন্য।
হালিমা ভ্রু কুচকে বললেন,আতিয়া ফুপির বড় ছেলে কী আবার? আকাশ ভাই বলে ডাকতে পারো তারা।আকাশ তো তোমার থেকে বয়সে বড়ই হবে।
আচ্ছা তুমি নীলকে কী নামে ডাকো?
তারা কাচুমাচু করে নীলের দিকে তাকালো।নীলকে তো সে রাগী দানব বলে ডাকে সেটা নীলও জানে কিন্তু এটা হালিমা আন্টিকে কীভাবে বলবে!
তারা কিছু না বলে মাথা নিচু করে রইলো।
হালিমা কড়াইয়ে মশলা দিয়ে নাড়তে নাড়তে বললেন,নীলকেও ভাইয়া বলেই ডেকো।
নীল মাত্র কফিতে চুমুক দিয়েছিল, কাশতে কাশতে পুরো কফির কাপ উলটে অর্ধেক হাতে আর অর্ধেক রান্না ঘরে ফেলে দিলো।
নীলের এমন কান্ডে তারা হালিমা দুজনেই চমকে উঠেছেন।হালিমা দ্রুত এগিয়ে এসে নীলের হাতে ফু দিতে দিতে বললেন,একটু ঠান্ডা হলে তো খেতে পারিস গরম কফি হাতে ফেলে কী একটা কান্ড করলি।ফোসকা উঠে যাবে তো।
তারা বললো,আন্টি আপনি ওনার হাত পানিতে ভিজিয়ে রাখুন আমি বরফ নিয়ে আসছি।
হালিমা মাথা নাড়ালেন।তারা দ্রুত বরফ আনতে চলে গেল।..
চলবে..
লিখা: উম্মেহানি মিম

★#নীল_আকাশের_শুকতারা★
————————-(১৬তম পর্ব)

তারা বললো,আন্টি আপনি ওনার হাত পানিতে ভিজিয়ে রাখুন আমি বরফ নিয়ে আসছি।
হালিমা মাথা নাড়ালেন।তারা দ্রুত বরফ আনতে চলে গেল।
ফিরে এসে দেখলো নীল একা হাত চেপে ধরে বসে আছে হালিমা বেগম নেই।
তারা এগিয়ে গিয়ে জিজ্ঞেস করলো, আন্টি কোথায়?
নীল তারার দিকে না তাকিয়েই উত্তর দিলো,কী জানি মলম আনতে গেছে।বলছি এসব কিছু লাগবে না, এমনিতে ঠিক হয়ে যাবে মা শুনছেই না।
–এমনি কমে যাবে কীভাবে ফোসকা উঠে গেছে হাতে।আপনি এতো অসাবধান কেন বলুন তো?
নীল কিছু না বলে তারার দিকে চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে রইলো।
তারা আবার বললো,কই হাতটা দেখি দ্রুত বরফ ঘষে দিলে সেরে যাবে।
নীল ভ্রু কুচকে বললো,লাগবে না এসব, যাও এখান থেকে।
তারা ওড়নায় পেচিয়ে এক টুকরো বরফ নীলের দিকে বাড়িয়ে দিয়ে বললো,
–বলছি যখন লাগবে চুপচাপ হাতে বরফটা ঘষে নিন।
–কেন শুনবো আমি তোমার কথা?
–কারণ আমার কথা শুনলে আপনার কোনো ক্ষতি হচ্ছে না তাই।
–আমার ক্ষতি হোক বা ভালো হোক সেগুলো নিয়ে তোমাকে ভাবতে কে বলেছে?
–একজন মানুষ হিসেবে আরেকজন মানুষের জন্য এতটুকু যে মানুষ ভাবে না সে তো মানুষই না।
–এতো পকপক না করে যাও এখান থেকে।
–চলেই তো যেতে চেয়ে ছিলাম কিন্তু তখন..
নীল তারাকে কথা শেষ করতে না দিয়ে বললো,নীরা আটকেছে এটাই তো বলবে? সব যে তোমার অযুহাত সেটা আমি জানি।
–অযুহাত দেখিয়ে আপনাদের বাসায় কেন থাকতে যাবো আমি! তার কী সত্যিই কোনো কারণ আছে?
–কারণ নেই?আমাদের টাকায় খাচ্ছো এতো সুন্দর একটা বাসায় থাকছো মায়ের সাথে গেলে তো ছোট্ট একটা বাসায় কোনো রকমে থাকতে হবে।
–কী বলছেন এসব আপনি?
–যা বলেছি সেটাই সত্যি আর সত্য সবার কাছেই তিতা লাগে।
–ঠিক আছে মাকে বলবো আমাকে কাল এসে নিয়ে যেতে তখন আপনার সব সমস্যা সমাধান হয়ে যাবে।
নীল দাঁত কটমট করে বললো, হ্যাঁ চলে যাবেই তো, এখন তো প্রয়োজন ফুরিয়ে গেছে।যখন কোথাও জায়গা হয়নি তখন আমাদের বাসায় এসেছিলে এখন যাওয়ার জায়গা হয়ে গেছে নীরা বা এই বাসার কারোর যদি খারাপও লাগে সেটা তো তোমার দেখার বিষয় না।
তারা ভ্রু কুচকে বললো,যাহ বাবা থাকলেও দোষ চলে গেলেও দোষ! আজব লোক তো আপনি।
–হ্যাঁ আমি আজব আর আকাশ তো অনেক মহান।
–এখানে ওনার কথা আসছে কোত্থেকে? আচ্ছা আপনি সব সময় এমন খ্যাকখ্যাক করে কেন কথা বলেন? একটু ভালো করে দুটো কথা বলা যায় না?
–কোন দেশের মহারানী তুমি যে তোমার সাথে ভালো করে কথা বলতে হবে?
তারা কপাল কুচকে বললো,শুধু মহারানী হলেই তার সাথে ভালো কথা বলতে হয় আর বাকিদের সাথে খ্যাকখ্যাক করতে হয় এটা কে বলেছে আপনাকে?
–এতো যখন খ্যাকখ্যাক করি তো আমার সাথে কথা বলতে কেন আসো?
–আমি আপনার সাথে কথা বলতে আসিনি, আপনার হাতটা পুড়ে গেছে তাই বরফ দিয়ে আপনার উপকার করতে এসেছি।আপনার জায়গায় যে কেউ হলে আমি এটা করতাম।
নীল উঠে দাঁড়িয়ে শব্দ করে চেয়ার সরিয়ে বললো,সবার সাথে একই নাটক করতে লজ্জা লাগে না?
–মানে?
–মানে নকল সহানুভূতি।সব জায়গায় নিজের জায়গা তৈরি করার জন্য যেটা করে থাকো তুমি সেটাকেই নাটক বলে।
নীলের কথা শুনে তারার চেহারায় অন্ধকার নেমে এলো।দম নিয়ে বলা শুরু করলো,আমি কাউকে নকল সহানুভূতি দেখাই না।আর কোথাও নিজের জায়গা তৈরি করার জন্য নাটকও করি না।কিন্তু কারোর সাথে একটু ভালো ব্যবহার আর ভালো কথা বলার মানে যদি আপনার কাছে নাটক হয় তবে এই নাটকটা আপনারও করা উচিৎ বলে আমি মনে করি।পারলে এই নাটকটা করতে শিখুন অন্তত কয়েকটা মানুষ আপনার কথার আঘাত থেকে বেঁচে যাবে।
কথা গুলো বলে তারা দ্রুত রান্নাঘর থেকে বেড়িয়ে গেল।

রাতের খাওয়া-দাওয়া শেষে আকাশ সবাইকে বসার ঘরে ডাকলো।হালিমা বেগম নীলের জন্য তাড়াহুড়োতে মলম আনতে গিয়ে সিড়িতে পা মচকে ফেলেছেন তাই তিনি আসতে পারেন নি বাকি সবাই এসেছেন।আকাশ একটু চিন্তিত হয়েই আরাফাত সাহেবকে উদ্দেশ্য করে বললো,মামা আমি পরশু দিনের প্ল্যানের টিকিট করে রেখেছি।আপনার সাথে তো আমি কথা বলেছিলাম,বলে ছিলেন ফ্রি থাকবেন কয়দিন।বাকি আমরা সবাই তো ফ্রি।তাই
আমি সবাইকে সারপ্রাইজ দিবো ভেবে কাউকে না জানিয়ে কাজটা করেছি।এখন মামীর এই অবস্থায় কীভাবে যাওয়া যায় সেটাও বুঝতে পারছি না।
আরাফাত সাহেব বললেন,তোরা গিয়ে ঘুরে আয় বাবা আমি আর তোর মামী বাসায় থাকবো।আমি তোর মামীর খেয়াল রাখতে পারবো সমস্যা নেই।
–কিন্তু মামা মামীকে আর আপনাকে একা রেখে এভাবে চলে যাওয়া উচিৎ না।
আরাফাত সাহেবের কথা শুনে নীরা বললো,বাবা রান্নাবান্না তো আর তুমি করতে পারবে না আর একা একা মাকে কীভাবে দেখবে? আমি থেকে যাচ্ছি মায়ের সাথে, তোমরা যাও।
নীরাকে থামিয়ে তারা বললো, আপু আমি আন্টির সাথে থাকবো আমার এমনিতেও বেড়াতে যাওয়ার ইচ্ছে ছিল না। তোমরা ঘুরে এসো।
তারার কথার উত্তরে নীরা বললো,তাহলে আমিও থাকবো।আমি আর তুমি মিলে মায়ের যত্ন করতে পারবো।
আতিয়া এতক্ষণ চুপ করে ছিলেন এবার বললেন,না না নীরা তোর আর আকাশেরই তো ঘুরাঘুরির শখ বেশি তোদের জন্যই আমি যাবো ভেবেছিলাম।আমারও খুব একটা জার্নি করতে ভালো লাগে না।আমি থাকবো বাসায়, ভাইজান থাকলে থাকবে।তোরা বাচ্চারা শখ করেছিস ঘুরে আয়।
আরাফাত বললেন,হ্যাঁ এটাই ভালো হবে তোমরা সবাই যাও আমাদের এখন এসব ঘুরাঘুরির বয়স নেই আরও অসুখ বাধাতাম তার চেয়ে ভালোই হয়েছে।
নীরা কাচুমাচু করে বললো, কিন্তু ফুপি মাকে এভাবে রেখে চলে যেতে ইচ্ছে করছে না আমার।
আতিয়া নীরাকে ধমক দিয়ে বললেন,আমি যখন বললাম থাকছি তবে তোর এতো চিন্তা কীসের বল তো মেয়ে,তোর মায়ের খেয়াল আমি রাখতে পারবো না?তাছাড়া পায়ে একটু ব্যথা পেয়েছে তাই যেতে চাইছে না, এমন বড় কিছু তো হয়ে যায়নি।তুই যাচ্ছিস এটাই ফাইনাল।
আকাশ এবার বললো, সব গোছগাছ কালকের মধ্যেই করে ফেলতে হবে।
নীরা ভ্রু কুচকে বললো,কোন দেশে যাচ্ছি একবার তো বলবে আকাশ ভাই।নাকী মঙ্গলগ্রহে নিয়ে যাচ্ছো যেটা কাউকে বলা যাবে না।
আকাশ হেসে বললো,সিলেট যাচ্ছি।তোর না অনেক দিনের ইচ্ছা সিলেট ঘুরতে যাবি।আগের বার যখন দেশে এসেছিলাম বলে ছিলিস।
নীরা হেসে বললো,তোমার এখনও এটা মনে আছে?
–থাকবে না কেন আমি এতো তাড়াতাড়ি কিছু ভুলি না।আচ্ছা তাহলে এটাই ফাইনাল সবাই যার যার গোছগাছ করে নাও।আমরা পরশু ভোরের ফ্লাইটে যাচ্ছি।

তারা এবার উঠে চলে এলো ওর সাথে নীরাও এলো।নীরা খেয়াল করছে তারার মুখটা কেমন চিন্তিত দেখাচ্ছে।সিড়ি বেয়ে উপরে উঠতে উঠতে নীরা প্রশ্ন করলো,কী হয়েছে তারা তোমাকে এমন চিন্তিত দেখাচ্ছে কেন?
তারা না সূচক মাথা নাড়ালো।
নীরা তারার হাত আলতো চেপে ধরে বললো, আমি জানি কিছু হয়েছে, কী হয়েছে বলবে তো।
তারা কাচুমাচু করে বললো, আগে ভেবে ছিলাম সবাই মিলে যাচ্ছি কিন্তু এখন..
নীরা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললো, বাবা, মা, ফুপি যাচ্ছে না আমারও খারাপ লাগছে কিন্তু সব কিছু যখন ঠিক হয়ে গেছে যেতে তো হবেই।
–আমার খুব চিন্তা হচ্ছে আপু।
–কেন?
–ভেবেছিলাম বড়দের সাথে যাবো।আংকেলও থাকবেন ভয়ের কিছুই নেই।সাহস পাচ্ছিলাম।কিন্তু এখন তো খুব ভয় লাগছে আমি এই প্রথমবার আকাশ পথে ভ্রমণ করবো।তাও আবার ঢাকার বাইরে যাবো।
নীরা হেসে বললো,পাগলী প্ল্যান কী বাবা চালাবে নাকি যে বাবা না গেলে সাহস পাবে না।আমরা আছি তো এতো ভয় পেও না।ভাইয়ারা আছে আমরা খুব মজা করবো ওখানে গিয়ে।
তারা ঢোক গিলে বললো, আপু প্ল্যানে তো পাশাপাশি সিটে বসা যায় তাই না?
–হুম
–তুমি আমার পাশে বসো।
নীরা হাসতে হাসতে বললো,আচ্ছা বসবো এবার চলো সব গোছগাছ করি গিয়ে।

একদিনে সবার গোছগাছ হয়ে গেল।পরদিন ভোরে সবাই তৈরি হয়ে নিলো।প্রচন্ড ঠান্ডা পড়েছে।
তারার সারারাতই বুক ধুকপুক করেছে।প্ল্যানে উঠার সাহস করতে পারছে না কিছুতেই।নীরা বার বার সাহস দিচ্ছে।তারা নীল রঙের সেলোয়ার-কামিজ পরেছে।সাথে ম্যাচিং করে নীল রেশমি চুড়ি।কানে ছোট দোল।আর নীরা জোর করে একটু কাজল লিপস্টিক দিয়ে দিয়েছে।নীরাও তারার জামার সাথে মিলিয়ে নীল রঙের জামা পরেছে।
নীরা আর তারা একসাথে হালিমা বেগমের ঘরে গিয়ে ওনাদের থেকে বিদেয় নিয়ে দুজনেই বাইরে বেরিয়ে এলো।
আরাফাত সাহেব ওনার গাড়ির চাবি নীলকে দিয়ে বললেন এয়ারপোর্টে রেখে যেতে উনি ওনার পরিচিত ড্রাইভার দিয়ে আনিয়ে নিবেন।
নীল পরেছে সাদা ব্লেজার।
আকাশ আর মেঘ গাঢ় নীল রঙের ব্লেজার পড়েছে।
তারা,নীরা আর মেঘ এনং আকাশের জামার রঙ প্রায় একই শুধু নীল ওদের থেকে আলাদা।নীল ভ্রু কুচকে নীরাকে বললো, ঠিক করে সবাই এক রঙের জামা পরেছো তাই না?তো আমি কী তোদের দলের বাইরে।
নীরা হেসে বললো,ভাইয়া বিশ্বাস কর শুধু আমি আর তারা মিলে ঠিক করে এক রঙের ড্রেস পরেছি আকাশ ভাই বা মেঘ এটা জানতো না।আশ্চর্যজনক ভাবে মিলে গেছে আমাদের।তুই গিয়ে বদলে আয় ফ্লাইটের সময় তো অনেক বাকি।
নীল নাক ফুলিয়ে বললো,না।

নীল,গাড়ি ড্রাইভ করছে,আকাশ ওর পাশের সিটে বসেছে।নীরা তারা আর মেঘ পিছনে।
নীল ড্রাইভ করতে করতে ফ্রন্ট মিররে খেয়াল করলো তারা চোখ বন্ধ করে নিজের মনে বিড়বিড় করছে।
নীল খানিকটা অবাক হয়ে পেছনে এক পলক তাকিয়ে নীরাকে উদ্দেশ্য করে বললো, কী রে মাথা টাতা খারাপ হয়ে গেছে নাকি?
নীরা চোখ বড় বড় করে বললো আমাকে বলছিস ভাইয়া?
না তোর আশেপাশের লোকজনকে।দেখ তো একটু, মাথার স্ক্রু ঢিলা হয়ে গেলে তো সমস্যা।
নীরা মেঘের দিকে এক পলক তাকিয়ে তারার দিকে তাকালো ততক্ষণে তারা নীলের কথা শুনে বিড়বিড় করা বন্ধ করে দিয়ে কাচুমাচু করে তাকিয়ে আছে।
নীরা বিরক্ত হয়ে বললো,ভাইয়া তোর মাথাটাই খারাপ হয়ে গেছে যতসব ভুলভাল কথা বলছিস।

এয়ারপোর্টে এসে দেখা গেল ফ্লাইট ডিলে হয়েছে।আরও আধ ঘন্টার মতো অপেক্ষা করতে হবে।
সবাই এয়ারপোর্টের ভিতরে ক্যান্টিনে গিয়ে বসলো।আকাশ বললো,কিছু খেয়ে নেয়া যাক।
নীরা বললো, মাত্র নাস্তা খেয়ে এলাম এখন কফি ছাড়া আর কিছু খাবো না।
আকাশ নীল আর মেঘকেও জিজ্ঞেস করলো ওরাও কফি খাবে।
নীরা হঠাৎ বললো,কিন্তু তারা তো কফি খায় না ও কী খাবে?
তারা চুপচাপ বসে আছে আর এদিক-ওদিক তাকিয়ে হাসফাস করছে।
আকাশ কয়েক বার ডাকার পর তারা জবাব দিলো,জ্বি বলুন।
আকাশ হেসে বললো,বেশ কয়েক বার ডাকলাম তোমাকে জবাব দিলে না।
তারার ঠোঁট দুটো কাঁপছে কথা যেন মুখ থেকে বের হতে চায় না।কোন রকমে বললো,শুনতে পাইনি।
–কী খাবে বলো?
আকাশ প্রশ্ন করে তারার দিকে তাকিয়ে রইলো।
তারা দ্রুত তোতলাতে তোতলাতে বললো,কিছু খাবো না।
নীরা চেয়ার টেনে তারার কাছে এসে বসে বললো কী হয়েছে তারা?
তারা না সূচক মাথা নাড়ালো।
নীল খেয়াল করলো তারার ঠোঁটের মতোই ও নিজেও কাঁপছে।
নীল বিচলিত হয়ে বললো,তারা তুমি ঠিক আছো তো?কোনো সমস্যা হচ্ছে?
নীরা তারাকে জড়িয়ে ধরে বললো,এই তারা কী হয়েছে তোমার বলো আপুকে।
আকাশ আর মেঘও চিন্তিত হয়ে তাকিয়ে আছে তারার দিকে।
তারা ফুপাতে ফুপাতে বললো,আপু আমি প্ল্যানে উঠতে পারবো না,আমার পায়ের তলার মাটি পর্যন্ত মনে হচ্ছে কাঁপছে।যখনই মনে হচ্ছে আমি প্ল্যানে করে আকাশে.. তখনই আমার ভয়ে কলিজা কেঁপে উঠছে।আমার খুব অস্থির লাগছে আপু।আমি যাবো না।
নীরা হা করে নীল আর আকাশের দিকে তাকালো।
নীল উঠে দাঁড়িয়ে বললো, মানে ফ্লাইটের সময় প্রায় হয়ে গেছে আর তুমি এখন বলছো প্ল্যানে উঠবে না?
আগে জানতে না প্ল্যানে করে যাবো আমরা।
তারা এবার বাচ্চাদের মতো ভে ভে করে কান্না শুরু করলো তারপর কাঁদতে কাঁদতেই বললো,আমি নীরা আপুকে বলে ছিলাম আমার ভয় লাগছে আমি প্ল্যানে উঠতে পারবো না আপু আমাকে সাহস দিচ্ছিল শুধু আর আমি সারা রাস্তা আল্লাহকে ডাকতে ডাকতে এসেছি কিন্তু এখন মনে হচ্ছে আমি পারবো না।
নীরা তারাকে শান্ত করার অনেক চেষ্টা করলো কিন্তু কাজ হলো না।
আকাশ এক পর্যায়ে বললো,শুনো শুকতারা আমরা সবাই আছি তো একটু সাহস করে চলো যাই দেখবে কিছুক্ষণের মধ্যেই আমরা পৌঁছে যাবো।এরকম করলে কীভাবে হবে বলো যদি তুমি কখনও দেশের বাইরে যাও তবে তো প্ল্যান ছাড়া যেতে পারবে না। ভয়কে জয় করতে হবে শুকতারা।
আমরা সবাই তোমার সাথে সাথে থাকবো।সবাই মিলে বেড়িয়েছি যদি না যাই খারাপ লাগবে তো সবার।
তারা ঢোক গিলে বললো, না না আপনারা কেন যাবেন না?আপনারা যান আমি বাসায় চলে যাই।আমি যেতে পারবো।এখানে এসে আমার আরও ভয় লাগছে আমি বুঝতে পারিনি আসলে এতোটা ভয় লাগবে আমার।সরি।
নীরা তারার চোখ মুছে দিয়ে বললো,তোমাকে আমরা একা একা ছেড়ে চলে যাবো এটা তো হয় না।ঠিক আছে তোমার যখন ভয় লাগছে চলো বাসায় ফিরে যাই।
আকাশ অস্থির হয়ে বললো,নীরা তুই বুঝতে পারছিস না এভাবে একটা ভয়কে আকড়ে বসে থাকলে তো হবে না।আজ আমরা যেতে না পারলে হয়তো কিছু যায় আসে না কিন্তু তারা প্ল্যানে উঠার সাহস না করতে পারলে সমস্যা হবে।
নীল এতক্ষণ চুপ করে ছিল এবার গম্ভীরভাবে বললো,কোনো সমস্যা হবে না।জোর করে ওকে নিয়ে প্ল্যানে উঠার কোনো মানে নেই।এতো ভয় নিয়ে কিছু করলে সেটার ফল ভালো হবে না।
তুই নীরা আর মেঘকে নিয়ে প্ল্যানে করে যা আমি বাবার গাড়ি দিয়ে বাই রোডে তারাকে নিয়ে আসছি।
বেড়িয়েছি যখন ফিরে যাওয়ার মানে হয় না।কথাটা বলে নীল তারার দিকে তাকিয়ে বললো, গাড়িতে করে যেতে তো আর সমস্যা নেই তোমার?

আকাশ কিছুক্ষণ ভেবে বললো,আসলে এটাই ভালো আইডিয়া।আমরা গাড়ি নিয়েই যাই।লং জার্নি খুব ভালো এনজয় করা যায়।প্ল্যানের টিকিট তো আমি মা আর মামা মামীর জন্য করেছিলাম।ওনারা এতো জার্নি করতে পারবেন না তাই।
ওনারা যেহেতু যাচ্ছেন না তো আমরা সবাই মিলে একসাথে যাই কী বলো তোমরা?
নীরা হ্যাঁ সূচক মাথা নাড়ালো।
তারা কাচুমাচু করে বললো,আপনারা চলে যান আমার জন্য কেন গাড়িতে যাবেন?আমি বাসাই চলে যেতে পারবো।
নীল এবার তারাকে খানিকটা ধমক দিয়ে বললো,মুখটা বন্ধ রেখে চুপচাপ আমাদের সাথে এসো।একে তো ভিতুর ডিম তার আবার এতো ফটর ফটর কথা কীসের?আমি তো ভাবতেই পারছি না এতো বড় বড় কথা বলা মেয়ে এতোটা ভিতু।
কথাটা বলে নীল আর আকাশ সামনে এগিয়ে গেল।তারা ওদের পেছন পেছন যাচ্ছে আর মনে মনে খারাপ লাগা কাজ করছে,ওর জন্য সবার ফ্লাইটে যাওয়া হলো না, গাড়িতে করে যাবে ভালোয় ভালোয় এবার গিয়ে পৌঁছালেই হয়।..
চলবে…
লিখা: উম্মেহানি মিম

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here