#নীল_আকাশের_শুকতারা,১৮,১৯
(১৮তম পর্ব)
নীল কথাগুলো বলে তারার সামনে হাটু গেড়ে বসে বললো,
ভোরের গাঢ় নীল রঙা আকাশের বুকে যদি এক টুকরো শুকতারার অস্তিত্ব দেখতে পাও,
তবে নীলের বুকেই শুকতারার ঠিকানা জেনে নিও।
জীবনে প্রথম বার কোনো ছেলের মুখে ভালোবাসার কথা শুনলে প্রত্যেকটা মেয়েরই অদ্ভুত রকমের অনুভূতি হয়।সেই মিষ্টি অচেনা অনুভূতি শরিরের প্রত্যেকটি শিরা উপশিরায় জানান দেয়। এক মুহুর্তের জন্য রক্ত সঞ্চালন যেন বন্ধ করে দেয়।তারারও সেরকমই অনুভূতি হচ্ছে।হৃদপিণ্ড তড়িৎ বেগে ছুটছে।ভয়ে,লজ্জায়,আতংকে মাটির সাথে মিশে যেতে ইচ্ছে করছে।
তারার মনে হচ্ছে ওর হৃদ স্পন্দন এতোটাই বেড়ে গেছে যে কয়েক হাত দূরে থেকে নীল স্পষ্ট শুনতে পাচ্ছে।সে কয়েক পা পিছিয়ে গেল।তারার পিছিয়ে যাওয়ায় নীল উঠে দাঁড়ালো।তারার দিকে অদ্ভুত এক মায়া নিয়ে তাকালো।
তারার এই প্রথমবার মনে হলো এই দৃষ্টি অন্যদিনের থেকে আলাদা।একদম আলাদা।নীলের ভাষায় এই দৃষ্টিকেই মনে হয় বলে মায়া চোখে ঘায়েল করা।
দ্রুত চোখ নামিয়ে নিয়ে তারা আস্তে আস্তে এক পা এক পা পিছিয়ে যেতে লাগলো।নীলও তারার পায়ের সাথে তাল মিলিয়ে পা ফেলে এগিয়ে যাচ্ছে।
এক পর্যায়ে তারার পিঠ দেয়ালে গিয়ে ঠেকলো।
সে চমকে উঠে পেছনে তাকালো,কিন্তু পেছনে আর যাওয়ার জায়গা নেই দেখে ভয়ে চোখ বন্ধ করে নীলো।
নীল কিছুক্ষণ তারার দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে ওর থেকে কয়েক হাত দূরে সরে এসে বললো,এতো ভয় পাওয়ার কিছু হয়েছে কী?
তারা দ্রুত চোখ মেলে তাকিয়ে নীলের সরে যাওয়া দেখে সুস্থির নিঃশ্বাস ছাড়লো।
তারপর দ্রুত পায়ে হেঁটে নীলকে অতিক্রম করতে যাবে তখনই নীল ডাকলো,চলে যাচ্ছো?
তারা কোনো কথা না বলে নীলকে পাশ কাটিয়ে চলে যেতে লাগলো সেই মুহুর্তে নীল তারার একটা হাত টেনে ধরে ওকে আটকে বললো,কিছু না বলে চলে যাচ্ছো কেন?
তারা কাঁপা গলায় বললো, হাতটা ছাড়ুন।
–কিছু না বলা অব্দি হাত ছাড়বো না।
নীল কথাটা বলে তারার হাত আরও শক্ত করে চেপে ধরলো।
তারা মাথা নিচু করে কাচুমাচু করতে শুরু করলো।
নীল খেয়াল করলো তারার হাত প্রচন্ড কাঁপছে।সঙ্গে সঙ্গে হাতটা ছেড়ে দিলো।
তারপর নরম গলায় বললো, তারা কিছু তো একটা বলো এভাবে চলে গেলে আমার কতটা কষ্ট হবে বুঝতে পারছো না?
তারার চোখ দুটো লাল হয়ে আছে।এক মুহুর্ত চুপ করে থেকে রুঢ় কন্ঠে বললো, না।
তারার মুখ থেকে বেরোনো না শব্দটা নীলের বুকে তীরের মতো বিধলো।
তারা আবার নীলকে পাশ কাটিয়ে চলে যেতে লাগলো।তখন নীল ওর পথ আটকে দাঁড়িয়ে বললো, ফিরিয়ে দিচ্ছো আমাকে?কিন্তু কেন?
তারা কোনো জবাব না দিয়ে সোজা ঘরে ঢুকে দরজা বন্ধ করতে যাবে নীল সাথে সাথে দরজাটা টেনে ধরলো যেন না লাগাতে পারে।তারপর তারাকে হাত ধরে টেনে বাইরে বের করে নিয়ে এসে বললো, এরকম কেন করছো তুমি? নীল কিন্তু এই প্রথম বার কোনো মেয়েকে ভালোবাসি বলেছে এমনিই এমনিই ছেড়ে দেয়ার জন্য না।
তারার চোখ দুটো আগুন লাল হয়ে এলো।মনের সমস্ত রাগ যেন কন্ঠস্বরের সাথে মিশে গেছে।ঝাঝালো কন্ঠে বললো,এমনিই এমনিই ছেড়ে দিবেন না তো কী করবেন আপনি?লজ্জা করছে না মাঝরাতে একটা মেয়েকে ঘুম থেকে উঠিয়ে এনে এমন নির্লজ্জের মতো আচরণ করতে।
নীলের চোখদুটো ছলছল করে উঠলো।কাঁপা গলায় বললো,যা খুশি বলতে পারো।এখন তো তোমারই বলার সময় কারণ আমি তোমার ভালোবাসার কাছে আত্মসমর্পণ করে ফেলেছি।এখন তুমি হাজারটা খারাপ কথা বললেও আমার গায়ে লাগবে না।কিন্তু না শব্দটা আর বলো না প্লিজ।সহ্য করতে পারি না।
নীল কথাগুলো বলে এক মুহুর্ত থামলো, তারপর নিজেকে শক্ত করে আবার বললো, তোমার মুখ থেকে না শব্দটা শুনতে চাই না আমি।
–আমি কোন শব্দ উচ্চারণ করবো আর না করবো সেটাও আপনি ঠিক করে দিবেন সেই অধিকার কে দিয়েছে আপনাকে?আপনার থেকে আমি এমন কিছু আশা করিনি।
–অধিকার দাওনি বলেই তো অধিকারটা চাইছি।তোমাকে আমি কোনো জোর – জবরদস্তি করছি না তারা, শুধু চাইছি তুমি যেন আমার মনের অবস্থাটা বুঝতে পারো।আমি কী এমন অন্যায় করেছি যে তুমি আমার থেকে এটা আশা করো না?আমি তোমাকে বিয়ে করতে চেয়েছি।সারা জীবন তোমার সাথে থাকতে চেয়েছি।এটা যদি আমার অপরাধ হয় তবে তুমি তোমার বিচারে আমার যাবত জীবন কারাদণ্ড দিয়ে দাও।আমি তোমার মনের জেলখানায় অপরাধী হয়ে অনায়াসে আমার জীবন কাটিয়ে দিবো।তবুও না শব্দটা উচ্চারণ করো না।এভাবে ফিরিয়ে দিও না আমাকে।
নীল কথা শেষ হওয়ার আগেই তারা যান্ত্রিকভাবে তিনবার “না” শব্দটা উচ্চারণ করলো।তারপর চলে যেতে চাইলে নীল আবার তারাকে আটকানোর জন্য ওর হাত ধরতে গেল,আর তারা চেঁচিয়ে উঠলো,খবরদার একদম আমার হাত ধরবেন না।যখন তখন আমাকে ছুঁয়ার কোনো অধিকার নেই আপনার।যদি আর আমাকে আটকানোর চেষ্টা করেছেন আমি কিন্তু চিৎকার করবো।
তারা এক দৌড়ে ঘরে গিয়ে দরজা বন্ধ করে দিলো।
নীল আহত হৃদয় নিয়ে দাঁড়িয়ে রইলো আর বিড়বিড় করে বললো,তোমাকে আটকে রাখার শক্তি এবং সামর্থ্য দুটোই আমার ছিল তারা।কিন্তু আমি তোমাকে জোর করে আটকে রাখতে চাই না।
তোমার চিৎকার বা কেউ জেনে যাওয়ার ভয় আমি পাই না।ভালোবাসি যখন বলেছি পুরো পৃথিবীর সামনে চিৎকার করে বলার সাহস এই নীলের বুকে আছে।
তারা দরজা বন্ধ করে মেঝেতেই বসে পড়লো।প্রচন্ড যন্ত্রণা হচ্ছে বুকের ভেতরটাতে।নিঃশব্দে ডুকরে কেঁদে উঠলো সে।চোখের সামনে ভয়ংকর অতীত আর অনিশ্চিত বর্তমান যেন ওকে কুড়ে কুড়ে খাচ্ছে।
ভোরবেলা নীরা জাগতেই তারাকে এভাবে মেঝেতে শুয়ে থাকতে দেখে বেশ চমকালো।চোখ কচলে দ্রুত উঠে গিয়ে তারার পাশে বসে ডাকলো।কয়েক বার ডাকার পর তারা চোখ মেলে তাকিয়ে হাই তুললো।নীরা তারার গালে হাত রেখে চিন্তিত হয়ে প্রশ্ন করলো, এখানে শুয়ে ছিলে কেন তারা?
তারার মস্তিষ্ক কেমন যেন ফাঁকা ফাঁকা লাগছে।উঠে বসে চারিদিকটাতে চোখ বুলিয়ে নিয়ে চোখ বন্ধ করে সবটা মনে করার চেষ্টা করলো।রাতের ঘটনা মনে পড়তেই তারার বুকটা ছ্যাঁত করে উঠলো।
তারাকে আচমকা কেঁপে উঠতে দেখে নীরা তারার হাত দুটো ধরে বললো, কী হয়েছে তারা?
তারা হাত দিয়ে কপাল টিপে ধরে বললো,কিছু হয়নি আপু ঘুম ভেঙে উঠে দেখলাম দরজা খোলা লাগানোর জন্য উঠে কখন এখানে ঘুমিয়ে পড়েছি বুঝতেই পারিনি।
নীরা চোখ বড় বড় করে বললো, ওমা দরজা লাগানো ছিল না?
তারপর মুহুর্তেই ওর মনে পড়লো গতকাল রাতে নীল ছিল এই ঘরে সে জন্য দরজা লাগানো হয়নি।আর নীরা কখন ঘুমিয়ে পড়েছে খেয়ালই নেই।কিন্তু নীল উঠে গেলে তো নীরাকে ডেকে দরজা বন্ধ করতে বলতো।এভাবে দরজা খোলা রেখে নিশ্চয়ই চলে যাবে না।নীরার কেন যেন হিসাব মিলছে না।তবুও তারার কথাটা অবিশ্বাস করার তো প্রশ্নই আসে না তাই মুচকি হেসে বললো, এমনিতে পাগলী বলি না তোমাকে।পাগলী মেয়ে দরজা বন্ধ করতে গিয়ে কেউ মেঝেতে ঘুমায় তাও আবার এই ঠান্ডায়।ঠান্ডা লাগেনি তোমার?
তারা নিঃশব্দে না সূচক মাথা নাড়ালো।
নীরা আবার বললো,আচ্ছা উঠে ফ্রেশ হও।
কথাটা বলে নীরা আর তারা দুজনেই একসাথে উঠে দাঁড়ালো।
তারা ওয়াশরুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে এলো,তারপর নীরাকে বললো, আপু তুমি ফ্রেশ হও আমি কটেজের পাশের পুকুরে গিয়ে একটু বসি। পুকুরটা এতো সুন্দর আমার খুব যেতে ইচ্ছে করছে।
নীরা ভ্রু কুচকে বললো, একদম না তোমাকে আর একা একা যেতে দেয়া যাবে না।
তারা একটু আহ্লাদী করে বললো,প্লিজ যাই আপু দূরে কোথাও না এই যে দেখো কটেজের আঙিনার ভিতরেই।
তারা হাত ইশারায় নীরাকে পুকুরটা দেখালো।
নীরা কিছুক্ষণ চিন্তা করে বললো,চলো দুজনেই যাই তাহলে।
তারা মাথা নেড়ে বললো,না আপু ওনারা কেউ যদি এসে দেখেন দুজনেই ঘরে নেই অহেতুক চিন্তা করে আবার আরেকটা কান্ড ঘটাবেন।আমি কয়েক মিনিটে চলে আসবো।তাছাড়া তুমি তো এখান থেকেই দেখতে পাবে আমাকে।
নীরা হেসে বললো,আচ্ছা যাও।কিন্তু তাড়াতাড়ি চলে আসবে আমি তোমাকে আজকে একটা জরুরি কথা বলবো।বাসায় ফিরে গেলে হয়তো আর বলা হবে না।
তারা জোর করে ধরলো এখনই বলতে হবে।নীরাও বলে দিলো।কথাটা শুনে তারার অনেকটা মন ভালো হয়ে গেল।
তারপর নীরাকে বলে বেরিয়ে এলো,গুটিগুটি পা ফেলে পুকুর পাড়ে এসে বসে পানিতে পা ডুবালো।কাল রাতের সেই মুহুর্তটা কিছুতেই মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলতে পারছে না।আনমনেই তারা ভাবছে কোনোভাবে ব্যপারটা যদি স্বপ্ন হয় তবে অদ্ভুত রকম শান্তি পাবে সে।এসব ভাবতে ভাবতে খেয়াল করলো পুকুড়ে অসংখ্য পদ্ম ফুটে আছে।তারার খুব ছুঁতে ইচ্ছে করলো,তার থেকে খানিকটা কাছের পদ্মটা ধরার চেষ্টা করে কিছুতেই ধরতে পারছে না।তখনই একটা হাত পদ্মটাকে ছিড়ে নিয়ে এসে তারার দিকে বাড়িয়ে ধরলো।তারা চমকে উঠে পেছন ফিরে তাকিয়ে আকাশকে দেখতে পেল, পদ্মহাতে ওর পাশে বসে আছে।তারা উঠে দাঁড়িয়ে বললো,আপনি?আমি তো ভয় পেয়ে গিয়ে ছিলাম।
আকাশ মুচকি হেসে বললো, ভূতের ভয় পাও তুমি?কিন্তু এই ভোরবেলা ভূতের দেখা পাবে না নিশ্চিত থাকো।
তারা আকাশের হাসির বিনিময়ে ভদ্রতা করেই একটু হেসে বললো,সে দেখা আমি পেতেও চাই না।
কথাটা বলে তারা পুকুর থেকে উঠে চলে যেতে লাগলে আকাশ পেছন থেকে ডেকে বললো,শুকতারা পদ্মফুলটা নিবে না যেটার জন্য এতো কষ্ট করে হাত বাড়িয়ে ধরার চেষ্টা করছিলে।
তারা পেছন ফিরে তাকিয়ে বললো, ছুঁতে চেয়ে ছিলাম ছিড়ে ফেলতে চাইনি। পদ্মফুল পুকুড়েই সুন্দর।দূর থেকে দেখতে কিংবা অনুভব করেই শান্তি।আমি বোকার মতো ছুঁতে চাইলাম আর আপনিও ছিড়ে ফেললেন।
তারার কথা শুনে আকাশের মুখের হাসি মুহুর্তেই মিলিয়ে গেল।বিচলিত কন্ঠে বললো, কিন্তু এটা তো আর ঠিক করে রাখা যাবে না এখন কী করবো?
তারা হেসে বললো,ঠিক করে রাখতে হবে বা পানিতে রেখে দিন নিঃশেষ হওয়ার আগ পর্যন্ত বাবা মায়ের সাথে থাকুক।
আকাশ কথাটা শুনে সাথে সাথে ফুলটা পানিতে রেখে দিলো।তারপর তারার বলা কথাটার মানে বুঝতে না পেরে একটু অবাক হয়েই তারার পেছন পেছন পুকুর থেকে উঠে এসে বললো, বাবা-মায়ের সাথে থাকুক মানে ফুলের বাবা মা আছে?
–বা রে আমাদের বাবা-মা থাকলে ফুলের কেন থাকবে না তাদেরও তো প্রাণ আছে।
–তাহলে আমি যে ফুলটা ছিড়ে ফেললাম ওর বাবা মা কষ্ট পাবে তাই না?
আকাশের মুখে কষ্টের ছাপ নেমে এলো।যেটা দেখে তারা না চাইতেও হেসে উঠলো।
আকাশ অবাক হয়ে বললো, হাসছো কেন?
–মজা করছিলাম তাই।
আকাশও এবার হাসলো।তারপর বললো,শুকতারা তোমার সাথে আমার কিছু কথা আছে।জরুরি।
আকাশের কথা শুনে তারা খানিকটা অবাক হলো।মনে মনে ভাবলো,ওনার আবার আমার সাথে কী কথা থাকতে পারে,তবে কী?
তারা আকাশের দিকে তাকিয়ে বললো,বলুন কী বলবেন।আমারও আপনাকে একটা জরুরি কথা বলার আছে।
আকাশ মুচকি হেসে বললো, তাহলে তোমারটা আগে শুনবো।
তারা ভ্রু কুচকে বললো, একদম না আগে আপনি বলবেন বলেছিলেন মানে আগে আপনি বলবেন।
আকাশের কেমন যেন অস্বস্তি হচ্ছে।তারার চোখের দিকে তাকিয়ে কথাগুলো সে বলতে পারবে না তাই পেছন ফিরে তাকিয়ে বলা শুরু করলো,শুকতারা বেশ কয়েক দিন থেকেই এ বিষয়ে তোমাকে বলবো ভাবছিলাম।নিজের ভেতর কথা জমিয়ে রাখতে রাখতে সব কয়টা দলা পাকিয়ে আছে।জানি না কথাগুলো শুনে তুমি কী রিয়েক্ট করবে তবুও আমি বলবো।আমি সরাসরি কথাটা তোমাকে বলে দিচ্ছি হয়তো এতো গুছিয়ে বা ভনিতা করে বলতে পারবো না, তুমি বুঝে নিও।
তারা খেয়াল করে কটেজের বারান্দা থেকে নীরা হাত ইশারায় ওকে ডাকছে।তারা আকাশকে না বলেই নীরার কাছে যায় এবং মিনিট দু-এক পর ফিরে আসে।
এসে শুনতে পায় আকাশ বলছে, কিছু বলছো না কেন শুকতারা তুমি পারবে সব কিছুর সমাধান করতে আমি জানি।তুমি সবার মন জয় করতে পারো।
সত্যি কথা বলতে মা তোমাকে পছন্দ করেন না কিন্তু মামা,মামীরা তো তোমাকে পছন্দ করেন।আর মা আমাকে প্রচন্ড ভালোবাসে আমার খুশিই মায়ের খুশি।তাই আমি মাকে নিয়ে এতো চিন্তা করছি না।ভয় মামা,মামীকে নিয়ে কিন্তু মেয়ে রাজী থাকলে ওনারা নিশ্চয়ই আর এই বিয়েতে অমত করবেন না।
এখন শুধু তুমি চাইলেই সব সম্ভব।
আকাশ ফিরে তাকিয়ে দেখলো তারা হাপাচ্ছে,আকাশ অবাক হয়ে বললো, কী হয়েছে?এতক্ষণ কোনো কথার উত্তর দিলে না এবার তো দাও।
তারা বললো আসলে আমাকে নীরা আপু ডেকেছিল আমি এক দৌড়ে শুনে এলাম।
আকাশ ভ্রু কুচকে বললো, আমার কথা শুনেছো তো?
–যা বলেছেন সেটা শুনেছি আর পরিষ্কার বুঝেছিও।আমি আগেই ভেবে ছিলাম আপনি এমন কিছু বলবেন।
আকাশ মাথা নিচু করে হেসে বললো,জানি তো তুমি বুদ্ধিমতি, বুঝবে।
–আসলে আগে বুঝিনি কিন্তু নীরা আপু আমাকে এই বিষয়ে কিছুটা বলায় আন্দাজ করতে পেরে ছিলাম।
–নীরা জানে এসব?
–হুম জানে বলেই তো আমাকে বলেছে।
আকাশ মুচকি হেসে বললো, এর জন্যই মেয়েটাকে আমি এতো পছন্দ করি।সবার মন অনায়াসে পড়ে ফেলতে পারে।
তারা হেসে বললো,হুম।
আকাশ খানিকক্ষণ চুপ করে থেকে বললো, কিন্তু তোমার মতামত জানালে না আমার কিন্তু খুব চিন্তা হচ্ছে।
তারা মুচকি হেসে বললো, আমার মত না থাকলে এতক্ষণে তো বলেই দিতাম।তাছাড়া আমার মতামত দিয়ে কী হবে যারা আসল মানে ফুপি,আংকেল, আন্টি রাজি থাকলেই হবে।তাছাড়া এতো চিন্তা করবেন না আপনার মতো এতো ভালো একটা মানুষকে ভরসা তো করাই যায়।আংকেল, আন্টি একদম অমত করবেন না দেখবেন।
আপনি তো ওদের ছেলের মতোই।ছেলেকে কেউ ফিরিয়ে দেয় না।ছেলে -মেয়ের খুশিই বাবা মায়ের খুশি।সবাই রাজি হয়ে যাবে দেখবেন।
আকাশ মিষ্টি করে হেসে বললো, শুকতারা আজ আমি কত খুশি তুমি কল্পনা করতে পারবে না।সবাই আসলেই রাজি হবে কারণ ছেলে,মেয়ে দুজনেই তো ওনাদের আপন।
তারা মুচকি হেসে বললো, আমিও অনেক খুশি।এবার আমি আসি নীরা আপু বেশিক্ষণ বাইরে থাকতে না করেছে।আপুকে গিয়ে সবটা না বললে শান্তি পাবো না।আপু তো অনেক খুশি হবে।
আকাশ তারাকে বাধা দিয়ে বললো, এখন কিছু বলতে যেও না সবার জন্য সারপ্রাইজ থাক।বাসায় ফিরে আমি সবাইকে একসাথে বলবো।
তারা মুচকি হেসে মাথা নাড়িয়ে চলে যাচ্ছে তখন আকাশ ওকে পেছন থেকে ডেকে বললো, কী বলবে বলছিলে সেটা তো বলে যাও।
নীরা পেছন ফিরে তাকিয়ে বললো,আপনি যেটা বললেন সেটাই।তারপর এক দৌড়ে চলে গেল কটেজে।
আকাশ দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখছে তারা আসলেই কতটা বাচ্চা মেয়ে নিজের ইচ্ছে মুখ ফুটে বলতে পারে না ঠিকই কিন্তু ইচ্ছে পূরণ হলে বাচ্চাদের মতোই খুশি হয়।..
চলবে..
লিখা: উম্মেহানি মিম
★#নীল_আকাশের_শুকতারা ★
———————–(১৯তম পর্ব)
তারা মুচকি হেসে বললো, আমি অনেক খুশি।এবার আমি আসি, নীরা আপু বেশিক্ষণ বাইরে থাকতে না করেছে।আপুকে গিয়ে সবটা না বললে শান্তি পাবো না।আপু তো অনেক খুশি হবে।
আকাশ তারাকে বাধা দিয়ে বললো, এখন কিছু বলতে যেও না সবার জন্য সারপ্রাইজ থাক।বাসায় ফিরে আমি সবাইকে একসাথে বলবো।
তারা মুচকি হেসে মাথা নাড়িয়ে চলে যাচ্ছে তখন আকাশ ওকে পেছন থেকে ডেকে বললো, কী বলবে বলছিলে সেটা তো বলে যাও।
তারা পেছন ফিরে তাকিয়ে বললো,আপনি যেটা বললেন সেটাই।তারপর এক দৌঁড়ে চলে গেল কটেজে।
আকাশ দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখছে তারা আসলেই কতটা বাচ্চা মেয়ে নিজের ইচ্ছে মুখ ফুটে বলতে পারে না ঠিকই কিন্তু ইচ্ছে পূরণ হলে বাচ্চাদের মতোই খুশি হয়।
সকালের নাস্তা শেষেই নীল সবাইকে তাড়া দিলো তৈরি হওয়ার জন্য।আকাশ যদিও বলেছে এতোটা পথ এসে না ঘুরেই ফিরে যাওয়ার মানে হয় না কিন্তু নীল কথাটা কানেই নেয়নি।সে ফিরে যাওয়ার সিদ্ধান্তে অটল।আকাশ তাই আর কিছু বলেনি।
চলে যাওয়ার কথাটা ছাড়া সকাল থেকে নীল কারোর সাথে একটা কথাও বলেনি।আজকে আকাশে রোদ উঠেনি চারিদিকটা মেঘে ঢেকে আছে।আকাশও যেন বুঝে গেছে আজ নীলের মনের আকাশে মেঘ জমেছে।
কিছু একটা নিয়ে নীলের মুড অফ আছে সেটা নীরা কিছুটা হলেও আন্দাজ করেছে।
তারা আপ্রাণ চেষ্টা করছে নীলের সামনে না পড়ার তাই নাস্তাটাও নীরাকে নিয়ে ঘরে শেষ করেছে।
গাড়িতে উঠার সময় তারা আর নীলের চোখাচোখি হতেই তারা দ্রুত চোখ নামিয়ে গাড়িতে উঠে বসলো।
নীল চুপচাপ ড্রাইভ করছে।আকাশের মন আজ অন্য দিনের তুলনায় অনেক বেশি ভালো।সব কিছুই যেন তার কাছে রঙিন লাগছে।
আকাশ নীলকে ইশারা করে বললো, গান প্লে করা যাবে বস?
নীল কোনো জবাব না দিয়েই নিজের মতো গাড়ি চালাচ্ছে।
আকাশ নিজেই গান প্লে করলো।মেঘলা আকাশ আর চারিদিকে সবুজ চা বাগানে ঘেরা পাহাড়ি রাস্তা দিয়ে গাড়ি চলেছে নিজের গতিতে আর মৃদু স্বরে বাজছে সুবীর নন্দীর সেই বিখ্যাত গান, তোমারে লেগেছে এত যে ভালো
চাঁদ বুঝি তা জানে,
রাতের বাসরে দোসর হয়ে
তাই সে আমারে টানে।।
রাতের আকাশে তারার মিতালী
আমারে দিয়েছে সুরের গীতালী।
এতটুকু বাজতেই নীল দুম করে গান বন্ধ করে দিলো।আকাশ অবাক হয়ে বললো, বন্ধ করলি কেন?
নীল এবারও কোনো জবাব দিলো না।
আকাশ অবাক চোখে পেছন ফিরে নীরার দিকে তাকিয়ে ইশারায় জিজ্ঞেস করলো নীলের কি হয়েছে!
নীরা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে মাথা নাড়ালো, সেও জানে না নীলের এমন অদ্ভুত আচরণের কারণ।
টানা ছয়-সাত ঘন্টা জার্নির পর সন্ধ্যার দিকে এসে বাসায় পৌঁছলো সবাই।
নীল সবার আগে গাড়ি থেকে নেমে হনহন করে বাসার ভিতরে ঢুকে গেল।
আকাশ নীরার গা ঘেসে দাঁড়িয়ে বললো, এই নীরা নীলের আসলে কী হয়েছে বল তো?সকাল থেকে কেমন যেন একটা আচরণ করছে।সকালের নাস্তাও করেনি।হঠাৎ করে ক্ষেপে আছে কেন?
নীরা মাথা নাড়িয়ে বললো,দুপুরেও তো অল্প একটু খেয়েছে।ভাইয়া কখন ক্ষেপে যায় আর কখন ঠিক থাকে সেটা হয়তো সে নিজেও জানে না আমি বলবো কীভাবে বলো?কিছু সময় যাক ঠিক হয়ে যাবে তুমি এসব নিয়ে ভেবো না।
নীল দরজার সামনে এসে কলিং বেল চাপলো,আরাফাত সাহেব এসে দরজা খুললেন।নীলকে দেখে খানিকটা অবাক হয়েই বললেন,তোমরা ফিরে এসেছো?
নীল চুপচাপ মাথা নাড়িয়ে ভিতরে প্রবেশ করলো।
আকাশ, মেঘ,নীরাও ওর পেছন পেছন এলো।
আরাফাত সাহেব আবার বললেন,তোমাদের তো কয়েক দিন থাকার কথা ছিল হঠাৎ ফিরে এলে কেন কোনো সমস্যা হয়েছে।
আকাশ মুচকি হেসে বললো,না না মামা কোনো সমস্যা হয়নি।আপনাদের একা রেখে গেছি তাই চলে এলাম।
সবার শেষে ঘরে প্রবেশ করলো তারা।ওর মুখটা কেমন যেন দেখাচ্ছে।আরাফাত সাহেব তারাকে লক্ষ করে বললেন,তারা তোমার মুখটা এমন দেখাচ্ছে কেন মা শরির খারাপ করেছে?
তারা দ্রুত মাথা নাড়িয়ে বললো,না আংকেল অনেকটা পথ জার্নি করে এসেছি তো তাই ক্লান্ত লাগছে।
আতিয়া আর হালিমাও নীলদের গলা শুনে রান্নাঘর থেকে বেরিয়ে এসেছেন।
আতিয়া এগিয়ে এসে আকাশে দিকে তীক্ষ দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললেন,তোরা প্লেনের টিকিট করেও গাড়ি নিয়ে কেন গেলি?
আকাশ আচমকা মায়ের প্রশ্ন শুনে ঘাবড়ে গেল।তারার জন্য প্লেনে যাওয়া হয়নি শুনলে উনি ক্ষেপে যাবেন।সে কী বলবে ভেবে উঠার আগে নীল বললো,আমার লং ড্রাউভে যেতে ইচ্ছে হয়েছিল তাই প্লেনে যাইনি ফুপি।প্লেন জার্নিতে মজা নেই।
কথাটা বলেই সে দ্রুত পায়ে সিড়ি বেয়ে উঠে নিজের ঘরে চলে গেল।
আতিয়া আর কিছু বললেন না।
তারা এক দৃষ্টিতে নীলের চলে যাওয়ার দিকে তাকিয়ে রইলো।
সবাই ফ্রেশ হয়ে বিশ্রাম নিতে গেল।তারার শুয়ে থাকতেও ভালো লাগছে না খানিক্ষন এপাশ -ওপাশ করে উঠে সোজা নিচে নেমে এলো।রান্নাঘরে আতিয়া আর হালিমা হাতে হাতে কাজ করছেন।
তারা এগিয়ে এসে বললো,আন্টি কিছু লাগলে আমি করে দেই?
হালিমা অবাক চোখে তারার দিকে তাকিয়ে বললেন,তুমি উঠে এলে কেন এতোটা পথ জার্নি করে এসেছো বিশ্রাম নিতে কিছুক্ষণ।
তারা মুচকি হেসে বললো, আমার বিশ্রাম নেয়া হয়ে গেছে আন্টি।
আতিয়া আড়চোখে তারার দিকে তাকিয়ে বললেন,এবার তো ঘুরাঘুরি শেষ হলো মাকে এসে নিয়ে যেতে বলবে কবে?
তারা খানিক্ষন চুপ করে থেকে বললো, কালকেই চলে যাবো ফুপি।
তারার কথা শুনে হালিমা বললেন,কাল কেন চলে যাবে?
তারা কিছু বলতে যাবে তখনই নীলের গলা শুনতে পেয়ে পেছন ফিরে তাকালো,নীল দরজায় দাঁড়িয়ে বলছে,টেবিলে পানি নেই মা?
হালিমা জগে করে পানি নিয়ে নীলের দিকে এগিয়ে দিলেন নীল চলে যেতে গিয়েও থেমে গেল হালিমা বেগমের কথা শুনে।উনি তারাকে বলছেন কালই চলে যাওয়ার দরকার নেই কয়েকটা দিন পর নাহয় যেও।
তারা বললো, না আন্টি কালই চলে যাবো আমি।
নীল কয়েক মুহুর্ত তারার দিকে তাকিয়ে চলে গেল।
তারা আরও কিছুক্ষণ রান্না ঘরে থাকলেও হালিমা তাকে কোনো কাজ করতে দিলেন না।তাই তারা নিজের ঘরে চলে আসার জন্য সিড়ি বেয়ে উপরে উঠে এলো।ঘরে প্রবেশ করেই চমকে উঠলো নীল ওর বিছানায় বসে আছে।
তারা বেরিয়ে আসার জন্য ফিরতেই নীল দ্রুত পায়ে হেঁটে এসে তারার পথ আটকে দাঁড়িয়ে দরজা বন্ধ করলো।
তারা চমকে উঠে বললো, দরজা বন্ধ করলেন কেন?
নীল মেঝেতে তাকিয়ে জবাব দিলো, কথা আছে তাই।
–আমি আপনার আর কোনো কথা শুনতে চাই না।
–আমি শুনাতে চাই।
–দরজাটা খুলুন বলছি।
নীল তারার দিকে কয়েক পা এগিয়ে এসে বললো যতক্ষণ না আমার কথা শেষ হবে ততক্ষণ দরজাও খুলবে না আর তুমিও এক পাও বাইরে বেরোতে পারবে না।
তারা পেছনে সরে এসে বললো, কেন এমন করছেন?
–কেন করছি বুঝতে পারছো না? এই প্রশ্নটা তো আমার তোমাকে করা উচিৎ তুমি কেন এমন করছো?
–কী করেছি আমি?
–কেন আমাকে ফিরিয়ে দিচ্ছো তারা?
–কারণ আমি এসবে বিশ্বাস করি না।
–বিয়েতে বিশ্বাস করো না?
–না।
–তারা বিয়ের মতো একটা পবিত্র সম্পর্কে কেন বিশ্বাস নেই তোমার।আজ আমাদের বাবা মা বিয়ে করেছে বলেই তো আমরা পৃথিবীতে এসেছি।এটা পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দর সম্পর্ক জানো তুমি?
তারার চোখদুটো ছলছল করে উঠলো, হ্যাঁ আপনার বাবা মা বিয়ে করে ছিলেন বলে আপনি একটা সুন্দর জীবন পেয়েছেন আর আমার বাবা মা বিয়ে করেছিল বলেই আমি একটা অভিশপ্ত জীবন উপহার পেয়েছি।এই প্রেম, ভালোবাসা কিছুই একটা সময় আর থাকে না। বিয়ে নামক সম্পর্কে জড়িয়ে যাওয়া সহজ তেমন ভেঙে ফেলাও সহজ।একটা সংসার গড়তে অনেকটা সময় লেগে যায় কিন্তু ভাঙতে এক মুহুর্ত লাগে না।বিশ্বাস করি না আমি এসবে।
নীল অবাক চোখে তারার দিকে তাকিয়ে বললো,কেন বলছো এসব?আমার ভালোবাসা এতোটা ঠুনকো না যে এতো সহজে ভেঙে যাবে।ভেঙে ফেলার জন্য কেউ সম্পর্কে জড়ায় না তারা।আমি তোমাকে নিয়ে ঘর বাধার স্বপ্ন দেখছি এভাবে ভেঙে ফেলার জন্য তো না এতটুকু বিশ্বাস কেন করছো না আমাকে?
–বিশ্বাস উঠে গেছে তাই।আমার বাবার ভালোবাসাও ঠুনকো ছিল না, মা সম্পর্কে জড়ায়নি ভেঙে ফেলার জন্য।তবুও আমার বাবা মায়ের সংসার ভেঙে গেছে।কেন ভেঙে গেছে বলতে পারেন?
–ওনাদের মধ্যে হয়তো বোঝাপড়া ভালো ছিল না।সব সম্পর্ক এমনই হবে এটা কেন ভাবছো?
–আমার বাবা মা হুট করে বিয়ে করে নেয়নি।ওরা দুজন দুজনকে জেনেশুনে, পছন্দ করে তারপর ভালোবেসে বিয়ে করেছে।শুধু ভালোবেসে বিয়েই করেনি, মা মামা বাড়ির সবার সাথে এই সম্পর্কের জন্য সম্পর্ক ছিন্ন করেছে।বাবার থেকে দাদু বাড়ির সবাই মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে।
আপনার একবারও মনে হয়নি কেন আমার কোনো নিকট আত্মিয় নেই?কেন আমি আমি এই পৃথিবীতে এতো একা যে আপনাদের বাড়ির আশ্রিতা হতে হয়েছিল আমাকে।
চোখের সামনে আমি ভালোবাসার মৃত্যু হতে দেখেছি।এতো মায়ার সম্পর্কের শেষ পরিনতি দেখেছি।তারপরও আপনি আমাকে বলছেন এসবে বিশ্বাস রাখতে?
তারার চোখের উষ্ণ জল গাল বেয়ে নেমে এসেছে।কিছুক্ষণ থেমে ভেজা কন্ঠে বললো দয়া করে বেরিয়ে যান আর কখনও আমাকে এসব কথা বলতে আসবেন না।
তারার কথাগুলো শুনে নীলের কাছে আর বলার মতো কোনো কথা অবশিষ্ট থাকলো না।সম্পর্কে এমন করুণ পরিনতি দেখে যে মেয়েটার মনে এতোটা ভয় এতোটা আশংকা বাসা বেধে আছে তাকে কীভাবে সম্পর্কের বাধনে বাধবে সে।
ভালোবাসা মানেই যার কাছে ঘৃণার অন্য নাম তাকে কীভাবে ভালোবাসার আসল মানে বুঝাবে।এতো কঠিন সেতু কী করে পাড়ি দিবে সে কী করে তারার মনে নিজের জন্য জায়গা তৈরি করবে!
কিন্তু যত কঠিনই হোক তারার মনের ভুল ধারণা গুলো মুছে দিয়ে ওর মনে ভালোবাসার জন্ম দিবেই সে।
নীল চোখ মুছে দরজা খুলে বেরিয়ে গেল।
তারা কান্নায় ভেঙে পড়লো অথচ এই কান্নার মানে সে নিজেও জানে না।
খাবার টেবিলে অনেক ডাকাডাকি করলেও নীল আসেনি।ওর খাবারটা ঘরেই দেয়া হয়েছে।তারা ভাতের উপর হাত রেখে নাড়াচাড়া করছে শুধু।
নীরা বিষয়টা খেয়াল করে বললো, খাচ্ছো না কেন তারা?
তারা কিছু হয়নি এমন একটা ভান কয়ে এক গ্রাস ভাত তুলে মুখে দিলো।
আরাফাত সাহেব বেশ চিন্তিত ভঙ্গিতে তাকিয়ে আছেন তারার দিকে।
তারা আরাফাত সাহেবকে উদ্দেশ্য করে বললো,আংকেল মাকে একটা ফোন করে বলবেন কাল আমাকে নিতে আসতে।
আরাফাত সাহেব খানিক্ষন চুপ করে থেকে বললেন ঠিক আছে।
আরাফাত সাহেবের এমন সহজেই ঠিক আছে বলার ধরণটা নীরার কাছে কেমন যেন অদ্ভুত লাগলো।তারা কালই চলে যাবে এই কথায় উনি এতো তাড়াতাড়ি হ্যাঁ বলার তো কথা ছিল না।
নীরা অবাক হয়ে বাবার দিকে তাকালো।
হালিমা বললেন,তারা বললাম না কালই যাওয়ার দরকার নেই।
তারা ভাতের থালায় দৃষ্টি রেখে বললো,না আন্টি আমার মায়ের জন্য খুব মন কেমন করছে চলে গেলেই ভালো হবে।
আকাশ বিচলিত হয়ে বললো, তারা কালই কেন চলে যাবে কয়েকটা দিন থাকো এমনিতেই তো চলে যাবে।তাছাড়া.. আকাশ থেমে গেল।
আতিয়া বললেন তাছাড়া কী?
আকাশ মনে মনে ভাবলো আর দেরী করা উচিৎ না।মায়ের কথার উত্তরে বললো,মা তোমাদের সবার সাথে আমার কথা আছে খাওয়া শেষে সবাই একটু বসার ঘরে থেকো।আরাফাত সাহেব আর হালিমা বেগমকে উদ্দেশ্য করেও আকাশ কথাটা বললো।
নীরার নিঃশ্বাস ভারি হয়ে এলো।আকাশ কী বলতে চলছে! নীরার লজ্জায় সারা শরির কাঁপছে।তবে কী এতো দিনের অপেক্ষার অবসান হতে চললো! আকাশ কী সত্যিই এতোদিন পর বুঝতে পেরেছে নীরা নামের মেয়েটি তাকে কতটা ভালোবাসে।
নীরা দ্রুত উঠে দাঁড়ালো।
হালিমা বেগম প্রশ্ন করলেন,ভাত ছেড়ে উঠলি কেন?
নীরা মাথা নিচু করে কাঁপা গলায় বললো,পেট ভরে গেছে।
নীরা দ্রুত পায়ে হেটে চলে গেল।
তারা স্পষ্ট খেয়াল করেছে নীরার লজ্জামাখা মুখ।
এই প্রথম নীরাকে লজ্জা পেতে দেখলো সে।লজ্জায় লাল হয়ে নীরা মুখটা অদ্ভুত মায়াবী দেখাচ্ছিল আর অমনি তারার মনটাও ভালো হয়ে গেল।
কারোর খুশি দেখলে বড্ড ভালো লাগে ওর।আর নীরা তো ওর আপু।নিজের বোনের থেকেও আপন।
তারা মুচকি হাসলো।
আকাশ তারার দিকে আড়চোখে দাকিয়ে মৃদু হাসিমাখা মুখটি লক্ষ করলো আর নিজেও নিঃশব্দে হেসে উঠলো।
খাওয়া শেষে আকাশের কথা মতো সবাই বসার ঘরে এসে বসলেন।তারার প্রচন্ড মাথা ধরেছে তাই সে এলো না।নীরাকে জোর করে পাঠিয়ে দিলো।
নীল যদিও আসতে চায়নি তবুও আকাশ ওকে জোর করে নিয়ে এলো।
তারা আসেনি দেখে আকাশের মন খচখচ করছে তবুও মনে মনে ভাবলো হয়তো লজ্জা পেয়ে আসেনি।
নীরা কাচুমাচু হয়ে এক পাশে বসে আছে।উঠেও যেতে পারছে না কারণ আকাশ বলেছে এখানে থাকতে।একদিকে লজ্জায় ওর হাত পা ঠান্ডা হয়ে আসছে।আর অন্যদিকে চাপা আনন্দে মনটা ভরে আছে।
সবাই অধির আগ্রহে অপেক্ষা করছে আকাশ কী বলবে শুনার জন্য।আরাফাত সাহেবের এতোটা আগ্রহ নেই কারণ তিনি অন্য চিন্তায় ডুবে আছেন।
আতিয়ার মনে মনে আনন্দ হচ্ছে উনি হালিমা বেগমের হাত ধরে বসে আছেন।দুজনেই আন্দাজ করে নিয়েছেন আকাশ কী বলবে।
নীরবতা ভেঙে আতিয়া বললেন,বাবা যা বলবি তাড়াতাড়ি বলে ফেল শুভ কাজ বা শুভ কাজের কথা কোনোটাতেই দেরী করতে নেই।
নীরার কান গরম হয় এসেছে।মনে হচ্ছে বুকের ভেতরে কেউ হাতুড়ি পেটাচ্ছে।
আকাশের পাশেই নীল বসে ছিল ওকে ধাক্কা দিয়ে বললো,বলবি না চলে যাবো?
আকাশ ঢোক গিলে এক নিঃশ্বাসে বলা শুরু করলো,আমি তারাকে খুব পছন্দ করি সবার মতামত নিয়ে আমি ওকে বিয়ে করতে চাই।তারারও এই বিয়েতে কোনো অমত নেই..
চলবে..
লিখা: উম্মেহানি মিম