#নীল_আকাশের_শুকতারা
(পর্ব-২২)
হালিমা চিৎকার করে বললেন,আমার ছেলেটা বেঁচে আছে তো আকাশ?
ওপাশ থেকে আকাশের কান্না ভেসে এলো।
হালিমা এপাশ থেকে আকাশ-বাতাস কাঁপিয়ে চিৎকার তুললেন।
ওপাশ থেকে আকাশ পরিস্থিতি বুঝতে পেরে নিজেকে সামলে নিয়ে বললো,মামী-মা তোমরা কান্নাকাটি না করে দোয়া করো নীলের অবস্থা ভালো না।ডাক্তার বলেছেন কিছুই বলা যাচ্ছে না। মাথায় প্রচন্ড আঘাত পেয়েছে।
আকাশ ফোন কেটে দিলো।
হালিমা এক নাগাড়ে কেঁদেই চলেছেন।আতিয়াও কাঁদছেন তবে হালিমাকে সান্ত্বনা দেয়ার চেষ্টা করছেন তিনি।
তারা স্তব্ধ হয়ে জায়নামাজে বসে আছে,চোখ থেকে টপটপ করে জল পড়ছে মুখে টু-শব্দটি করছে না।
ভিতরটা বার বার মোচড় দিয়ে উঠছে।বার বার মনে হচ্ছে কেন নীলকে সে বেরিয়ে যাওয়ার সময় আটকায় নি।কেন তখন বুঝতে পারেনি নীলের অনুভূতি।
কেন নিজের মনের কথা বুঝতে এতো দেরী হলো।
নীরা কাঁদতে কাঁদতে কখন ঘুমিয়ে গেছে খেয়ালই নেই হঠাৎ কান্নার সুর কানে বাজতেই তার ঘুম ভেঙে গেল,চোখ কচলে দ্রুত উঠে বসলো।এবার পরিষ্কার শুনতে পাচ্ছে নিচে হালিমার কান্না।উঠে দাঁড়িয়ে এক দৌড়ে নিচে নেমে এলো।বসার ঘরে মেঝেতে জায়নামাজ বিছিয়ে বসে আছেন আতিয়া, হালিমা আর তারা। হালিমা বিরতিহীনভাবে কেঁদেই চলেছেন।আতিয়া হালিমাকে জড়িয়ে ধরে রেখেছেন আর তিনিও ফুপাচ্ছেন।তারার চোখে জল।
সবাইকে এই অবস্থায় দেখে নীরার বুকের ভেতরটা কেঁপে উঠলো।
হালিমা বেগমের পাশে বসে প্রশ্ন করলো,কী হয়েছে মা?
হালিমা কোনো জবাব না দিয়ে নীরাকে জড়িয়ে ধরে হাউমাউ করে কান্না শুরু করলেন।
নীরা অস্থির হয়ে বললো,কী হয়েছে মা বলো আমাকে, ফুপি কী হয়েছে তোমাদের।
আতিয়া চোখ মুছে বললেন,তুই শক্ত হ মা আগে।তোর মাকে সামলাতে হবে যে।
নীরার বুক ছ্যাঁত করে উঠলো।ভ্রু কুচকে কাঁপা গলায় বললো কী হয়েছে,বাবা ঠিক আছে তো ফুপি?
আতিয়া ভাঙা গলায় বললেন,নীলের এক্সিডেন্ট হয়ে গেছে।
কথাটা নীরার বুঝে উঠতে কয়েক সেকেন্ড লেগে গেল। যখন বুঝতে পারলো সবাই নীলের এক্সিডেন্টের কথা বলছে তখন চিৎকার করে কান্না শুরু করলো,কাঁদতে কাঁদতে বললো,আমার ভাইয়া কোথায় আছে এখন?
আতিয়া নীরাকে সামলে নেয়ার চেষ্টা করে বললেন,হসপিটালে আছে ওর চিকিৎসা চলছে, ঠিক হয়ে যাবে।তুইও যদি তোর মায়ের মতো ভেঙে পড়িস তো মাকে সামলাবে কে?
নীরা কান্না জড়ানো কন্ঠে বললো, ভাইয়া বাইরে কেন গিয়েছিল?
আতিয়া আচল দিয়ে মুখ ঢেকে বললেন,সব আমার জন্য হয়েছে , আমি যদি আকাশকে আগেই সব জানিয়ে ওর মত নিয়ে তারপর কথা বাড়াতাম তখন আর সে এটা করতে পারতো না। নীলও রাগ করে বাসা থেকে বেরিয়ে যেতো না আর তোকেও এতোটা কষ্ট পেতে হতো না।
নীরা ডুকরে কেঁদে উঠলো।
ফজরের আযান হতেই সবাই নামাজটা আদায় করে নীলেন।
আকাশ বলেছে ভোর হলেই সে সবাইকে বাসা থেকে হসপিটালে নিয়ে যেতে আসবে।
নীলের অবস্থার কোনো উন্নতি নেই।
আকাশ গাড়ি নিয়ে এলে সবাই হসপিটালের গেল।
আরাফাত সাহেবের চেহারা দেখার মতো অবস্থায় নেই তিনি আইসিসিউর সামনে একটা চেয়ারে বসে আছেন দৃষ্টি নীলের বেডের পাশের গ্লাসে।
আরাফাতকে দেখে হালিমা শব্দ করে কান্না শুরু করলেন।আরাফাত হাত ইশারায় থামতে বলে বললেন,এটা হাসপাতাল, এখানে কোনো রকম কান্নাকাটি করা ঠিক না রোগীদের সমস্যা হবে।হালিমা মুখ চেপে ধরে চোখ টিপে জল ফেললেন।
নীরা বাবার ওনার পায়ের কাছে মেঝেতে বসে বললো,বাবা ভাইয়াকে একবার দেখা যাবে না?
আরাফাত সাহেব আঙুল দিয়ে গ্লাস দেখিয়ে বললেন এখানে গিয়ে দেখে এসো কিন্তু কোনো শব্দ করবে না।
নীরা দ্রুত এগিয়ে গেল।তারাও ওর পেছন পেছন গেল।নীলের মাথায়, হাতে, পায়ে অসংখ্য ব্যান্ডেজ।
তারার বুকের ভিতরটা কেঁপে উঠলো।নীলকে এই অবস্থায় দেখতে তার আর মোটেও ইচ্ছে করছে না।দ্রুত সরে এলো।
নীরাও নিঃশব্দে চোখ মুছে সরে এলো।
প্রায় ঘন্টা ঘানেক পরে একজন ডাক্তার এসে বললেন নীলের জ্ঞান ফিরেছে।
সবার ভিতরে যেন প্রাণ ফিরে এলো।আরাফাত সাহেব এতক্ষণে কান্না চেপে রেখে ভিতরে ভিতরে
শেষ হয়ে যাচ্ছিলেন তিনিও এবার হাউমাউ করে কেঁদে উঠলেন।
আকাশ সবাইকে সামলে নেয়ার চেষ্টা করলো।
প্রায় এক সপ্তাহ পর নীলকে বাসায় নিয়ে আসা হলো।হাটাচলা করতে একটু অসুবিধা হয় কিন্তু মোটামুটি সুস্থ সে।
তারা এই অবস্থায় হালিমা বেগম বা আরাফাত সাহেব আর নীরাকে একা ছেড়ে যেতে চায়নি বলেই থেকে গেছে।
বাসার সমস্ত রান্নাবান্না একা করেছে সে এই কয়দিন।
নীরা বা আতিয়া সাহায্য করতে চাইলেও করতে দেয়নি।
নীরা আগের মতোই মনমরা হয়ে ঘুরে বেড়ায়।তাকে দিয়ে আর কাজ করাতে ইচ্ছে হয়নি তারার।
হালিমা বেশিরভাগ সময় হাসপাতালে নীলের কাছেই থাকতেন।
আকাশও খুব কম সময় বাসায় আসতো।যখনই আসতো কখনই তারা বা নীরার মুখোমুখি হয়নি সে।
নীলের জ্ঞান ফেরার পর তারা আর হাসপাতালে যায়নি।কিন্তু প্রত্যেকটা মুহুর্তে সে নীলের জন্য আল্লাহর কাছে দোয়া করেছে।সবার থেকে নীলের খোঁজ নিয়েছে।
আজ নীল ফিরে আসছে।তারা জানে নীল কী খেতে পছন্দ করে কিন্তু সেসব এখব খেতে পারবে না।পুরোপুরি সুস্থ না হওয়া অব্দি নরম আর পুষ্টিকর খাবার খেতে হবে তাকে।তারা নীরার কথা অনুযায়ী নীলের পছন্দের স্যুপ আর চিকেন স্টু করে রেখেছে।
নীলদের গাড়ি এসে বাসার সামনে থেমেছে।হর্ণ শুনেউ তারার বুক ধুকপুক শুরু হলো।হৃদপিণ্ড যেন তড়িৎ বেগে ছুটছে।তারা বুকে হাত চেপে ধরে এক গ্লাস পানি নিয়ে ঢকঢক করে খেয়ে নিলো।তবুও বুক ধুকপুক থামছে না তার।
ওর মনে হচ্ছে এভাবে চলতে থাকলে সবাই বুঝে যাবে তারার মনের মধ্যে কী চলছে তাই নীলকে বাসার ভিতরে নিয়ে আসার আগেই তারা দৌড়ে রান্নাঘরে গিয়ে আশ্রয় নিলো।
কথাবার্তা শুনে সে বুঝতে পারছে নীলকে নিয়ে আসা হয়েছে।তারা ভাবছে এতক্ষণে নিশ্চয়ই নীলকে ঘরে নিয়ে যাওয়া হয়েছে তাই পা টিপে টিপে সে রান্নাঘর থেকে বেরিয়ে এলো।
হঠাৎ হালিমার কন্ঠস্বর তারার কানে এসে লাগলো তিনি বলছেন নীলের খাবার নিয়ে যেতে নীলের ঘরে। তারা খাবারটা নিয়ে নীলের ঘরের দিকে হাঁটা ধরলো।পা যেন চলছে না ওর।তারা বুঝতেই পারছে না এতোটা অস্বস্তি কেন হচ্ছে তার।
তারা দরজার সামনে এসে গলা পরিষ্কার করতেই হালিমা ভিতর থেকে বললেন,ভিতরে এসো।
তারা আস্তে আস্তে ভিতরে প্রবেশ করতেই নীলের সাথে চোখাচোখি হলো।নীল সঙ্গে সঙ্গে চোখ সরিয়ে নিলো।তারার বড্ড অভিমান হলো তাই সেও চোখ নামিয়ে নিলো।হালিমা খাবারটা তারার হাত থেকে নিয়ে খাইয়ে দেয়ার জন্য নীলের কাছে গিয়ে বসলেন।নীল দ্রুত প্রশ্ন করলো রান্নাটা কে করেছে মা?
হালিমা বললেন,তারা।
নীল ভ্রু কুচকে বললো, তুমি জানো না আমি যার তার হাতের রান্না খাই না।তুমি বা নীরা কেন রান্নাটা করলে না?
নীলের কথা শুনে তারার মনটা খারাপ হয়ে গেল।
হালিমা তারার দিকে এক পলক তাকিয়ে নীলের কান টেনে ধরে বললেন,চুপচাপ খেয়ে নে অসুস্থ শরিরে আর মানুষের পিছে লাগিস না।
নীল মুখ ঘুরিয়ে অল্প একটু হাসলো কিন্তু সাথে সাথে সেই হাসি মিলিয়ে গেল তার।নীরার দিকে তাকিয়ে বললো,দূরে দাঁড়িয়ে আছিস কেন ভাইয়ার কাছে আয়।নীরা নীলের কাছে গিয়ে বসলে নীল এক হাতে নীরাকে জড়িয়ে ধরলো।আর নীরা হাউমাউ করে কান্না শুরু করলো।নীল নিজেকে সামলে বললো,কাঁদছিস কেন পাগলী তোর সব কষ্ট দূর করে দেয়ার জন্য তোর ভাইয়া আছে না?
নীরা কাঁদতে কাঁদতে বললো,আমার কোনো দুঃখ নেই ভাইয়া।আমি তো কাঁদছি তোর জন্য,তোর অসাবধানতার জন্য।কতবার বলেছি খেয়াল করে বাইক চালাবি।তা না তড়িৎ গতিতে বাইক চালানো লাগে।যদি তোর কিছু হয়ে যেতো, নীরা আবারও নীলকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে কান্না শুরু করলো।
নীল চেঁচিয়ে উঠে বললো, এই পেত্নী আমার লাগছে।নীরা সাথে সাথে নীলকে ছেড়ে দিয়ে চোখ মুছে বললো।সরি ভাইয়া ভুলে গিয়ে ছিলাম।
নীল হেসে ফেললো,কাঁদছিস তো আমার অসুস্থতার জন্য আবার আমার শরিরে যে অসুস্থতার চিহ্ন থাকবে সেটা ভুলে গেছিস।এমনিতেই পাগলী বলি না তুই আসলেই পাগলী।চোখে পানিও নিয়েও নীরা হেসে দিলো।
ভাই বোনের খুনসুটি দেখে তারার চোখের কোনে জল জমে গেছে। মনে মনে বললো,আল্লাহ এই সম্পর্কটা শত বছর বেঁচে থাকুক।
আকাশ একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে ঘর থেকে বেরিয়ে গেল।
আরাফাত সাহেব ঘরে প্রবেশ করলেন ওনাকে কেমন যেন মনমরা দেখাচ্ছে।হঠাৎ করে ছেলে মেয়ের জীবনে এমন ভয়ংকর ঘটনা ঘটলে কোন বাবারই বা মন -মেজাজ ভালো থাকে।
তিনি তারাকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে বললেন,কলি তোমার সাথে কথা বলতে চায়,ফোনটা নিয়ে কথা বলে এসো।
তারা আরাফাত সাহেবের ফোন নিয়ে ঘর থেকে বেরিয়ে গেল।
মাকে কল দিতেই ওপাশ থেকে কল রিসিভ করে কলি বললেন,তোর আরাফাত আংকেল ফোন দিয়ে আমাকে আসতে বলেছেন।আমি আজ সন্ধ্যায় আসবো। তোকেও তো নিয়ে যেতে হবে তাছাড়া উনি মনে হয় এর জন্যই আমাকে আসতে বললেন।নীল ছেলেটা কেমন আছে?
তারার ভিতরটা মোচড় দিয়ে উঠলো।এই বাসা থেকে চলে যাওয়া মানে নীলের থেকেও দূরে চলে যাওয়া।নীলের থেকে দূরে যেতে যে তারার একদম ইচ্ছে করছে না।প্রতিদিন এক পলক না দেখলে এই মানুষটাকে কেমন করে থাকবে সে।
ভাঙা গলায় বললো,ঠিক আছে মা তুমি এসো আমি সব গুছিয়ে নিচ্ছি।
কলি ফোন রেখে দিলেন।
তারা ফোন নামিয়ে ঘুরতেই আকাশকে ওর সামনে আবিষ্কার করলো।
তারা তাকাতেই আকাশ বললো,তোমার সাথে একটু কথা ছিল।
তারা আস্তে করে বললো, বলুন।
–আমরা কী সত্যিই ঘর বাধতে পারি না?
তারা অপরাধ মিশ্রিত চোখে এক পলক আকাশের দিকে তাকিয়ে বললো , ঘর বাধতে হয় মজবুত খুটি দিয়ে তাহলে সেই ঘর সহজে ভেঙে পড়ে না। আর আপনি তো চাইছেন খুটি বিহীন ঘর বাধতে যেটা কখনই সম্ভব না।আর আপনি চাইলে নীরা আপুর সাথে আপনার রাজপ্রাসাদ গড়তে পারেন।কেন জীবনে ঠিক মানুষটাকে চিনে নিচ্ছেন না?
–আমি রাজপ্রাসাদ চাই না আমার একটা কুড়েঘর থাকলেই হবে।যে ঘরে আমার খুশি থাকবে,আনন্দ থাকবে। তুমি আমার ঘর বাধার খুটি হয়ে আমার জীবনে এলে কী এমন সমস্যা হবে শুকতারা।এই অন্ধকার আকাশে এক টুকরো শুকতারা হয়ে জ্বলে উঠলে কী এমন ক্ষতি হবে?
তারা আকাশের দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়ে বললো, আমি দুঃখিত এটা সম্ভব না কারণ..
আকাশ দ্রুত বললো,কী তার কারণ
–অনেক গুলো কারণ আছে তবে সবচেয়ে বড় কারণ আমি ইতিমধ্যে কেউ একজনের মনের আকাশে শুকতারা হয়ে গেছি।আমি তার আকাশেই আজীবন আলো জ্বেলে রাখতে চাই।
তারা দ্রুত পায়ে হেঁটে নিজের ঘরে চলে গেল।আকাশ ঠোঁট কামড়ে কান্না আটকানোর চেষ্টা করে দাঁড়িয়ে রইলো।
তারা তার ব্যাগপত্র গোছাচ্ছে আর বার বার ভাবছে নীলকে কীভাবে মনের কথাটা জানাবে।
আজকে চলে গেলে যদি নীল আর ওর সাথে যোগাযোগ না করে।যদি নীল সারা জীবনের জন্য ওর থেকে দূরে চলে যায়!
এরকম অসংখ্য দুশ্চিন্তা তারার মাথায় চেপে বসেছে।
তখন নীরা তারার ঘরে প্রবেশ করলো।নীরাকে দেখতে পেয়ে তারা খানিকটা চমকালো।
নীরা এগিয়ে তারার ব্যাগ গোছানো দেখে বললো,চলে যাবে?
তারা মাথা নাড়ালো।
–আজই?
–হু।
–এই বাসায় থেকেও কিন্তু তোমাদের বিয়েটা হয়ে যেতে পারতো তারা।
তারা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললো, আর আমাকে ছোট করো না আপু আমি এবার তোমাকে সবটা খুলে বলতে চাই।
নীরা মুচকি হেসে বললো, পাগলী খুলে বলতে হবে না আমি সব বুঝি। আমাকে যদি একবার বলে দিতে তোমার আকাশ ভাইকে পছন্দ বা আকাশ ভাই তোমাকে পছন্দ করে তখন তো আমি সব ঠিকঠাক করে দিতাম।এতসব কিছুই হতো না।
তারা নীরার হাতদুটো চেপে ধরে বললো,আপু দয়া করে আমার কথাগুলো শুনো তারপর যা বলার বলবে।
নীরা আর কোনো কথা বললো না তারা সবটা খুলে বললো,কীভাবে সে আকাশকে ভুল বুঝেছে।আকাশের জন্য ওর মনে কোনো অনুভূতি নেই সবটা।
সবকিছু শুনে নীরা কিছুক্ষণ স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে রইলো তারপর কাঁপা গলায় বললো, যত চাই হোক আকাশ ভাই তো তোমাকেই পছন্দ করে তারা।
–আমি তো করি না আপু আর এসব কিছু ভুল বুঝাবুঝি ছাড়া কিছুই না দেখবে উনিও একদিন বুঝতে পারবে যে তুমিই ওনার উপযুক্ত জীবন সঙ্গী।
নীরা ছলছল চোখে তারার গালে আলতো করে ছুঁয়ে দিয়ে একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো।তারপর দ্রুত পায়ে হেঁটে ঘর থেকে বেরিয়ে গেল।
তারার মনটা আবার খচখচ করতে শুরু করলো।নীরা আর আকাশ দুজনেই ওর জন্য অসুখী হয়ে যাবে সেটা কিছুইতেই মানতে পারছে না সে।
বিকেল হয়ে গেছে,সন্ধ্যা হলেই কলি ওকে নিতে আসবেন।যেভাবেই হোক এর আগে নীলের সাথে কথা বলতেই হবে।কিন্তু যতবার তারা নীলের ঘরের সামনে গিয়েছে ততবার হালিমা বেগম বা কেউ না কেউ ওর ঘরে রয়েছেন।
এই নিয়ে চতুর্থ বার নীলের ঘরে যাওয়ার জন্য হাঁটছে তারা।ঘরের সামনে গিয়ে দেখলো দরজা খুলা রয়েছে আর ভিতরে নীল ছাড়া আর কেউ নেই।
তারা দ্রুত ভিতরে প্রবেশ করে দরজা বন্ধ করলো।
নীল চোখ বন্ধ করে ছিল দরজা লাগানোর শব্দে তাকিয়ে তারাকে দেখতে পেয়ে বেশ অবাক হলো।
তারা হাপাচ্ছে।অনেক জায়গা দৌড়ানোর পর মানুষ যেমন হাপায় ঠিক সেরকম।অথচ সে আস্তে-ধীরে হেটেই নীলের ঘরে এসেছে।তারাকে হাপাতে দেখে নীল বিচলিত হয়ে উঠার চেষ্টা করে বললো,তারা কী হয়েছে তোমার?
তারা দ্রুত বললো,উঠবেন না আপনি। নড়াচড়া করা নিষেধ আছে আপনার।
নীল কোনরকমে উঠে বসে বললো, কে বলেছে এসব।আমি এখন পুরোপুরি সুস্থ।তোমার কী হয়েছে সেটা বলো।
তারা বিরক্ত হয়ে বললো, আহা! আপনি একটা কথাও শুনেন না।বললাম শুয়ে থাকতে।
–তুমি কী কারোর কথা শুনো? কখন থেকে বলছি কী হয়েছে বলতে।
তারা ঢোক গিলে বললো, আমার আপনার সাথে খুব জরুরি কথা আছে।
–আকাশ আর তোমার বিয়ের ব্যপারে।
তারা দাঁত কটমট করে বললো, কেন এমন করছেন আপনি?
–কী করলাম আমি?
–আমি কাউকে বিয়ে করছি না।
–চিরকুমারী থাকার প্ল্যানটা কবে করলে আকাশের সাথে ঝগড়া হয়েছে তাই না?
–এরকম কিছুই হয়নি।
–তাহলে হঠাৎ বিয়ে না করার কথা বলছো কেন?
–আমি ওনাকে বিয়ে করতে চাই না তাই।
তারার কথা শুনে নীল ভ্রু উচিয়ে বললো, ওহ আমি তো ভুলেই গিয়ে ছিলাম আমার এক্সিডেন্টটা হওয়ায় তোমাদের বিয়েটা আটকে আছে।আমি চলে গেলেই তোমাদের জন্য ভালো ছিল তাই না।
নীলের কথা শুনে তারার বুকটা ছ্যাঁত করে উঠলো, দ্রুত এগিয়ে গিয়ে নীলের মুখের কাছে হাত নিয়ে বাধা দিয়ে বললো,বাজে কথা একদম বলবেন না।
নীল বেশ অবাক হয়ে তাকিয়ে বললো,বললে কী হবে? তাছাড়া মুখটা তো তুমি চেপেও ধরোনি। এতোটা দূরত্ব রেখে কারোর মুখ বন্ধ রাখতে হয় বুঝি?
তারা সঙ্গে সঙ্গে ওর হাতটা সরিয়ে নিয়ে বললো ,বললে কী হবে জানি না আমি বলছি এসব আর বলবেন না।
নীল বিদ্রুপের হাসি হেসে বললো,তোমার মনে হয় আমি বেঁচে আছি?
তারা ভ্রু কুচকে নীলের দিকে তাকালো।
নীল মুচকি হেসে বললো,এটাকে মরে বেঁচে থাকা বলে।
তারা এবার কাঁদো কাঁদো হয়ে বললো,বললাম না আজেবাজে কথা না বলতে।
–সত্যি কথাই তো বললাম।যাকে জীবনে চাইলাম তাকে যখন পেলামই না সেটাকে কেমন বেঁচে থাকা বলে?
তারা কাচুমাচু করে বললো, পাননি কে বললো আপনাকে?কবে সে আপনার হয়ে গেছে সে তো নিজেই জানে না।
তারার কথাটা বুঝতে নীলের কয়েক সেকেন্ড লেগে গেল।যখন বুঝলো তারা কী বলছে তখন উত্তেজনায় উঠতে গিয়ে ব্যথা পেয়ে মুখ থেকে আর্তনাদ বেড়িয়ে এলো।
তারা বিচলিত হয়ে নীলকে ঠিক করে শুয়ে দেয়ার চেষ্টা করছে তখনই দরজার বাইরে হালিমার গলা শুনা গেল।উনি নিজের ঘরে ছিলেন।ওনাদের ঘর নীলের ঘরের পাশেই তাই ওর আর্তনাদ শুনতে পেয়ে দৌড়ে এসে ঘরে ঢুকার চেষ্টা করতেই আবিষ্কার করলেন দরজাটা ভিতর থেকে বন্ধ।কিন্তু নীলের পক্ষে একা একা দরজা বন্ধ করা সম্ভব না।
এদিকে ভিতরে তারা ভয়ে কী করবে কিছুই বুঝতে পারছে না।নীল চাইলেও দরজাটা খুলতে পারবে না।আর যদি তারা এখন দরজা খুলে হালিমা বেগম ওকে দেখলে কী মনে করবেন ভেবেই ভয়ে ওর হাওয়ায় মিলিয়ে যেতে ইচ্ছে হচ্ছে।
নীলও খানিকটা ভয়ে আছে। তারাকে ওর ঘরে দরজা বন্ধ অবস্থায় কেউ দেখলে বাজে পরিস্থিতিতে পড়তে হবে সেটা নিশ্চিত।নীল, তারা দুজনেই ভেবে পাচ্ছে না এই মুহুর্তে ওদের কী করা উচিৎ!
চলবে..
লিখা: উম্মেহানি মিম