নীল_ক্যানভাস,পর্বঃ০৭

0
880

নীল_ক্যানভাস,পর্বঃ০৭
লেখিকা:তানজিল_মীম

“অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে মেঘলা সামনের মেয়েটির দিকে!’কারন মেয়েটি হলো তানভীর যে মেয়েকে প্রপোজ করে ছিল সে!’মেঘলা বুঝতে পারছে না এই মুহুর্তে সে ঠিক কি রিয়েকশন দিবে!’মেঘলার ভাবনার মাঝে মেয়েটি এসে সামনে দাঁড়ালো মেঘলার!’ তারপর বললোঃ

—“আমায় চিনতে পেরেছো কি মেঘলা,,

—“তুমি তো সেদিনের মেয়েটি তোমায় ভুলে যাবো কি করে…

–“যাক ভালো হয়েছে আমায় ভুলো নি,আচ্ছা একটা কথা বলো যাকে এত ভালোবাসো এতো বিশ্বাস কর,সামান্য কিছু জিনিস দেখেই এতটা ভুল বুঝলে কি করে?’এতগুলো দিন কি করে পারলে তাকে ছাড়া থাকতে,তার থেকেও বড় কথা তুমি একবার তানভীরকে জিজ্ঞেস করতে পারতে সবটা?’কিন্তু তা করলে না তুমি নিজেও কষ্ট পেয়েছো আর আমার বন্ধুটাকেও কষ্ট দিয়েছো…

“মেয়েটির কথা শুনে শুভ্রতা অবাক হয়ে বললোঃ

—“বন্ধু!’

“শুভ্রতার কথা শুনে মেয়েটি তাকালো শুভ্রতার দিকে!’তারপর বললোঃ

—“হুম আমি আর তানভীর বন্ধু,আমরা সেই কলেজ লাইফ থেকে একসাথে আছি,কিন্তু তোমার বন্ধ আমাদের বন্ধুত্বটাকে প্রেমিক – প্রেমিকা ভেবে ভুল করেছে…

“মেঘলা স্তব্ধ হয়ে নীরব কন্ঠে বলে উঠলঃ

—“তাহলে সেদিন…

—“আমি বলছি সেদিন কি হয়েছিল,তবে সবটা বলার আগে আমি তোমায় একটা কথা বলি মেঘলা কখনো একদিক দেখে বিবেচনা করো না,মানছি সেদিন তুমি যেভাবে সবটা দেখেছিলে সেক্ষেত্রে তোমার দিক থেকে সব ঠিক!’কিন্তু তারপরও তুমি কি পারতে না একবার তানভীরের সাথে কথা বলতে,সরাসরি কথা না বলতে ফোনে তো এটলিস্ট কথা বলতে পারতে,তাহলে আর যাই হোক এত কষ্ট পেতে হতো না তোমাদের…

“মেঘলার মাথা ভনভন করছে সে বুঝতে পারছে না’ মেয়েটি কি বলছে বা কেন বলছে!’মেঘলা একটু বিস্ময় নিয়ে বললোঃ

—“আমি কিন্তু আপনার কথা কিছু বুঝতে পারছি না!…

—“হুম সব বুঝিয়ে বলছি আমি,,,

“সেদিন তোমার বার্থডের সকালবেলা!’হুট করেই তানভীরের ফোন আসে আমার কাছে,তোমাদের রিলেশনের কথা আমি শুরু থেকেই জানতাম কারন তানভীর সবই বলেছিল আমায়!’সে যাই হোক সেদিন তানভীরের ফোন পেয়ে আমি গিয়েছিলাম তানভীরের বাসায়!’তানভীরের রুমে ঢুকতেই দেখলাম,

.

“রুমের মধ্যে পায়চারি করছে তানভীর!’খাতা হাতে কিছু একটা মুখস্থ করছে সে!’এমন সময় সেখানে হাজির হয় মীরা!’মীরা হলো সেই মেয়েটির নাম!’মীরা তানভীরকে পায়চারি করতে দেখে বলে উঠলঃ

—“কি ব্যাপার সকাল সকাল কেন ডাকলি আমায়…

“মেইলি কন্ঠ শুনতেই তানভীর পিছন ঘুরে তাকালো,সামনেই মীরাকে দেখে এক্সাইটিং হয়ে বললো সেঃ

—“দোস্ত তুই আসছোস..

—“হুম তুই ডাকবি আর আমি আসবো না,কিন্তু এত সকালে কেন ডাকলি আমায়?’

—“আর বলিস না আজকে মেঘলার বার্থডে..

—“ওহ এটা তো ভালো কথা..

—“হুম তাই তো ভাবছি আজকে মেঘলাকে অনেক বড় সারপ্রাইজ দিবো…

—“হুম দে না ওকে নিয়ে বড় একটা রেস্টুরেন্টে খাওয়া…

—“না সেটা নয়…

—“তাহলে…

“মীরার তাহলে শুনে তানভীর মুচকি হেঁসে বললোঃ

—“বলছি এক মিনিট…

“এতটুকু বলে তানভীর চলে যায় তার রুমের আলমারির কাছে,তারপর আলমারি থেকে একটা ব্যাগ বের করে আনে সে!’ব্যাগের ভিতর ছিল একটা সুন্দর আংটি, সেটা বের করে মীরাকে দেখিয়ে বলে সে!’

—“ভাবছি আজকে মেঘলাকে প্রপোজ করবো…

—“ওহ,তাহলে তো আরো ভালো হবে মেঘলা খুব খুশি হবে,,

—“হুম কিন্তু…

—“এতে আবার কিন্তু কিসের?’

—“আমি মেঘলাকে আমার ফিলিংসের কথা সব গুছিয়ে বলতে পারছি না…

—“মানে…

—“মানে আবার কি কাল সারারাত ওর জন্য প্রেমপএ লিখছি কিন্তু ওর সামনে সবটা বলতে পারবো কিনা তাতে সন্দেহ আছে আমার…

“এতক্ষণ পর মীরা বুঝতে পারলো তানভীর হাতে খাতা নিয়ে কি মুখস্থ করছিল!”বিষয়টা ভাবতেই হেঁসে দিল মীরা!’

“আচমকা মীরার হাসার কারন বুঝতে না পেরে তানভীর অবাক হয়ে বললোঃ

—“ওই তুই হাসছিস কেনো?

—“হাসবো না তো কি করবো,ভার্সিটির টপ বয় যদি বলে সে গুছিয়ে পড়া বলতে পারবে না তাহলে হাসি পাবে না তো কি পাবে শুনি…

—“আরে বই পড়া আর প্রেমপএ পড়ার মধ্যে অনেক তফাৎ তুই বুঝতে পারছিস না…

—“আচ্ছা সব বুঝলাম এখন আমায় এখানে আসতে বললি কেন?তোর হয়ে আমি কি মেঘলাকে কথাগুলো বলবো…

—“আরে না আমিই বলবো তুই শুধু দেখবি আমি ঠিকভাবে বলতে পারি কিনা?’

—“ঠিক আছে তুই যখন মেঘলাকে প্রপোজ করবি তখন আমি দূর থেকে দাঁড়িয়ে সবটা শুনবো নে,ঠিক আছে…

—???

—“আরে ওইভাবে তাকাচ্ছিস কেন?’

—“তুই কি পাগল আমি কি বলছি আর তুই কি বুঝছিস…

—“আমি সত্যি তোর কথা বুঝতে পারছি না…

—“বেশি বোঝার দরকার নেই, তুই বিছানায় বস আমি বলছি…

“মীরা তানভীরের কথা মতো বিছানায় বসে পরলো!’তারপর তানভীর হাঁটু গেড়ে বসে বললোঃ

—“মনে কর তুই মেঘলা আর আমি তোকে এখন প্রপোজ করবো,…..

—“ওহ এই ব্যাপার আমি টিচার আর তুই এখন পড়া দিবি এই তো…

—“হুম তেমনটাই, এই কি বললি তুই?’

“হাসলো মীরা!’মীরার হাসির মাঝখানে বলে উঠল তানভীরঃ

—“তা ম্যাডাম কমলা বেগম’ আপনার হাসা হয়ে গেলে আমি কি শুরু করতে পারি…

“তানভীরের কথা শুনে মীরা ভাব নিয়ে বললোঃ

—“হুম ছাএ…

—“থাবরাইয়া দাঁত লাল বানাইয়া দিমু…

—“এমন করলে কিন্তু আমি খেলুম না!’

—“আচ্ছা যা সরি টিচার…

—“হুম তাহলে শুরু কর…

“মীরার কথা শুনে তানভীর সস্থির নিশ্বাস ফেলে আংটিটা হাতে নিয়ে মীরার সামনে হাঁটু গেড়ে বসে তার লেখা অনুভূতিগুলো বলতে ছিল আর সেই সময় এসেই হাজির মেঘলা,ঘটনাটা এতটাই দ্রুত হয়ে গিয়েছিল যে মীরা তানভীর কিছু বলার সুযোগই পেল না….

.

“এদিকে….

“মীরার মুখে সব শুনে বাকরুদ্ধ মেঘলা,সে ভাবতেও পারে নি এমন কিছু একটা ঘটেছিল,জীবনে এত বড় ভুল করে বসলো সে,তানভীরকে ভুল বুঝেছে সে!’ভাবতেই কষ্ট হচ্ছে মেঘলার!’মেঘলা মীরাকে কিছু না বলেই ওখান থেকে দৌড়ে ছুটে আসে,এক্ষুনি তাকে তানভীরের সাথে কথা বলতে হবে এক্ষুনি….

“মীরা,শুভ্রতা,দিয়া তিনজনই তাকিয়ে রইল মেঘলার যাওয়ার পানে তারা হয়তো বুঝতে পেরেছে মেঘলা এখন কোথায় যাচ্ছে..?’

“তাই তারা আর তাকে আঁটকালো না নিস্তব্ধে দাঁড়িয়ে রইল তিনজন!’আজকে একটা বিষয় হলো পরিষ্কার যে…

“সবসময় চোখের সামনে দেখা ঘটনাগুলো সত্যি হয় না,চোখের আড়ালেই লুকিয়ে থাকে অনেক বড় সত্যতা!”?

____________

“পুরো ভার্সিটি তন্নতন্ন করে খুঁজে চলেছে মেঘলা তানভীরকে কিন্তু কোথাও খুঁজে পাচ্ছে না সে”….

.
.
.

“অন্যদিকে ভার্সিটির তিনতলার ভবনে মনমরা হয়ে হাঁটছে তানভীর!’কিচ্ছু ভালো লাগছে না তার কিচ্ছু না,,এমন সময় পিছন থেকে হুট করে কেউ এসে শক্ত করে জড়িয়ে ধরল তাকে,হুট করে এমনটা হওয়াতে চমকে উঠলো তানভীর!’পরক্ষণেই স্পর্শ কার বুঝতে পেরে নিজেকে সামলে নিলো সে!’

“মেঘলা তানভীরকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে কাঁদতে বলে উঠলঃ

—“সরি তানভীর ভুল হয়ে গেছে,আই রিয়েলি সরি,,আমি সত্যি বুঝতে পারি নি এমন কিছু হয়েছিল সেদিন…

“বলেই তানভীরকে জড়িয়ে ধরে ঠুকরে কেঁদে উঠলো মেঘলা!’

“তানভীর কিছুক্ষন চুপ থেকে ঘুরলো মেঘলার দিকে!’তানভীর ঘুরতেই মেঘলা বলে উঠলঃ

—“সরি….

—“ব্যস হয়ে গেল…

“মাথা নিচু করে ফেলে মেঘলা!’সে জানে না এই মুহুর্তে সরি ছাড়া আর কি বলবে তানভীরকে…
মেঘলাকে মাথা নিচু করতে দেখে বলে উঠল তানভীরঃ

—“দু দুটো বছর মেঘলা,এক দুদিনের বিষয় নয়,তুমি জানো কতটা কষ্ট পেয়েছি আমি,কতদিন নির্ঘুমে কাটিয়েছি আমি,,একটি বার তো আমার ফোনটা তুলতে পারতে,,

—“সরি…

“এতটুকু বলে তানভীরকে জড়িয়ে ধরতে নেয় মেঘলা!’কিন্তু জড়িয়ে ধরার আগেই বলে উঠল তানভীরঃ

—“একদম ধরবে না আমায়…

—“সরি বললাম তো…

—“তোমার এইটুকু সরিতে আমার দু’বছরের ক্ষত কমবে না,,

—“আমি কি কষ্ট পাই নি বলো…

—“ওসব আমি জানি না কিন্তু আমার রাগ তোমার এইটুকু সরিতে গলবে না…

”মেঘলা তার চোখের পানি মুছে তার হাত দিয়ে তানভীরের দু’গাল চেপে ধরে বললঃ

—“তাহলে বলো কি করলে তোমার রাগ করবে,তুমি যা বলবে আমি তাই করবো…

—“ভেবে বলছো…

—“হুম,তুমি যা বলবে তাই করবো,তাহলে এখন জড়িয়ে ধরি…

“মাথায় নাড়ায় তানভীর!’মেঘলা আর দুমিনিট দেরি না করে জড়িয়ে ধরে তানভীরকে!’তানভীরও জড়িয়ে ধরে তাকে,মেঘলা তানভীরকে জড়িয়ে ধরে বলেঃ

—“সত্যি সরি,মন থেকে সরি,আমি তোমায় বলছি আর কোনোদিন তোমায় ভুল বুঝবো না,,

“বিনিময়ে তানভীর শুধু শুনে গেছে মেঘলার কথা কিন্তু কিছু বলে নি!’শুধু মেঘলাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে নিশ্বাস ফেলে সে!’মেঘলাও চুপটি করে দাঁড়িয়ে আছে তানভীরকে জড়িয়ে ধরে….

“অনেকদিনের অভিমানের অবসান ঘটলো তাদের!’ভাবতেই দুজনেই খুব খুশি…

“কিছুক্ষন পর….

—“কি দোস্ত আজ সারাদিন কি এভাবেই থাকবি নাকি?’

“তানভীর আনমনেই বলে উঠলঃ

—“হুম…

—“ঠিক আছে তুই থাক আমি রামু চাচারে কইতাছি ভার্সিটির গেট বন্ধ করে চলে যেতে….

—“হুম,কি না…

“ভাবতেই দুজনেই পিছন ঘুরে তাকালো’!!সামনে তাকাতেই দেখতে পেল তারা শুভ্রতা,আয়ুশ,দিয়া আর মীরা চারজনই ঠোঁটে মুচকি হাসি নিয়ে তাকিয়ে আছে তাদের দিকে,

“মেঘলা সবাইকে একসাথে দেখে লজ্জায় কুঁকড়ে উঠল,

—“ছিঃ ছিঃ সবাই কি ভাবলো আমাদের,,,

“মেঘলাকে লজ্জা পেতে দেখে বলে দিয়াঃ

—“হইছে আপনাকে আর লজ্জা পেতে হবে না…

“দিয়ার কথায় আরো লজ্জা পায় মেঘলা!’

“আয়ুশ, শুভ্রতা, দিয়া আর মীরা এসে দাঁড়ালো তানভীর মেঘলার সামনে!’আয়ুশ বলে উঠলঃ

—“এইবার বুঝলাম দোস্ত আমার এতদিন যাবৎ ঘোমরা হয়ে কেন থাকতো?’ইনি তবে আমাদের তানভীরের মেঘলা…

“সাথে সাথে মাথা চুলকায় তানভীর!’

—”আচ্ছা এইবার তাহলে সিরিয়াস কথা বলা যাক…

“আয়ুশের কথা শুনে অতি আগ্রহে বলে উঠল দিয়াঃ

—“কি সিরিয়াস কথা ভাইয়া…

—“কথাটা হলো মেঘলা তানভীরের অভিমানের দেয়াল ভেঙে গেছে সেই উপলক্ষে সবাই মিলে রেস্টুরেন্টে খেতে গেলে কেমন হয়..

“আয়ুশের কথা শুনে দিয়াও বলে উঠলঃ

—“খুব ভালো হবে…

“কিন্তু শুভ্রতা শুরুতে একটু কিন্তু কিন্তু করলেও পরক্ষণেই সবার জোরাজোরিতে রাজি হয় সে..

চলবে……

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here