#নেশা
#পর্ব_০২
#Tabassum_Kotha
দুহাত দিয়ে নিজের অর্ধনগ্ন দেহ টা ঢাকার ব্যর্থ চেষ্টা করছি। পরণের লাল বেনারসি শাড়িটার আঁচল ছিড়ে মেঝেতে পরে আছে। ব্লাউজের বাম কাঁধের অনেকটা ছিড়ে কাঁধ দেখা যাচ্ছে। কান্না করার ফলে দুচোখের কাজল লেপ্টে একাকার হয়ে গেছে। তবুও আমি থেমে নেই। নিজেকে বাঁচানোর শেষ চেষ্টা আমি করবোই।
এক পা দু পা করে পিছাতে পিছাতে দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেলো। তবে কি আর শেষ রক্ষা হবে না! আমি কি পারবো না নিজেকে রক্ষা করতে!
নির্ঝর আমার থেকে মাত্র এক হাত দুরত্বে দাড়িয়ে আছে। ভয়ে হার্ট টা অসম্ভব দ্রুত বিট হচ্ছে। উনি এক পা এক পা করে আমার দিকে আসছে আর তার শার্টের বোতামগুলো খুলছে। নির্ঝরের এই রূপ আমার রুহ পর্যন্ত কাঁপিয়ে দিচ্ছে। কালকের ঘটনার ঠিক পরপরই আজকের এই ধাক্কা সামলাতে আমি হিমসিম খেয়ে যাচ্ছি।
.
বন্ধ দরজার ভিতরে আছি আমি আর নির্ঝর। এখান থেকে বের হওয়া অসম্ভব। দরজাটা ভিতর থেকে লক করে দিয়েছে নির্ঝর। ভীষণ কান্না পাচ্ছে কিন্তু ভয়ে গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে আছে। একটা টু শব্দও বেরুচ্ছে না গলা দিয়ে।
কিছুক্ষণ আগে নির্ঝরের লোকজন আমাকে বিয়ে বাড়ি থেকে তুলে এনে এখানে ফেলে গেছে। আর এখন নির্ঝর আমার সাথে জোরপূর্বক শারীরিক সম্পর্ক করার চেষ্টা করছে।
.
নির্ঝর আর আমার মাঝের দুরত্ব ক্রমশ কমে আসছে। এক হাত থেকে নিমিষেই এক ইঞ্চি হয়ে গেলো দুরত্ব। এবার আমি কি করবো? পালানোর কোনো রাস্তা নেই। তবে কি যা হতে চলেছে সব মেনে নিতে হবে!
।
।
।
।
।
।
ঠাস্ করে একটা চড় আমার বাম গালে পরলে আমি ছিটকে মেঝেতে পরে গেলাম। জানতাম আমি এমন কিছুই হবে। তবে সেটার প্রভাব এতোটা তীব্র হবে সেটা জানা ছিল না। নিজেকে সামলে মাথাটা একটু উঁচু করতেই নির্ঝর আমার চুলের মুঠি টেনে ধরলেন।
চুলের মুঠি শক্ত করে ধরে নির্ঝর আমাকে উপরে টেনে তুলছেন। এদিকে ব্যথায় আমি কুকাচ্ছি কিন্তু সেদিকে তার ভ্রুক্ষেপ নেই। উনাকে দেখে মনে হচ্ছে আমার ব্যথায় সে ভীষণ আনন্দ পাচ্ছে। তার চোখে মুখে শয়তানি হাসি ফুঁটে উঠেছে।
— কি হলো? ব্যথা লাগছে বুঝি! একচুয়ালি ব্যথা লাগার জন্যই দিয়েছি।
উনার বলা কথাগুলো কেনো যেনো বিশ্বাস করতে ভীষণ কষ্ট হচ্ছে। এতোটা কষ্ট দিচ্ছে আমাকে সে! কিন্তু তার মধ্যে বিন্দু পরিমাণ অনুশোচনা নেই!
নির্ঝর আমার দিকে ঝুঁকে পুনরায় বলতে শুরু করলেন,
— সে যাই হোক, এখন তো তোমার সাথে আরও ভয়ংকর কিছু হতে চলছে! গেস করো তো কি করবো আমি এখন!
— আপনার কি এসব খেলা মনে হচ্ছে?
— গেইম ই তো এসব। নির্ঝর আহমেদ চৌধুরীর গেইম এর রুল একটাই। সে খেলবেও একা আর জিতবেও একা। সো!
— আমাকে যেতে দিন। অনেক দেরি হয়ে যাচ্ছে। একটু পরেই বিয়ে। আমি না গেলে, আমার দুনিয়া উলোট পালোট হয়ে যাবে।
আমার কথায় উনি বিকট হাসি হেসে বললো,
— অন্যের জীবন আগুনে পুড়িয়ে ছাই করে দিয়ে নিজের জীবনে সুখ আনতে চাও! কতো সেলফিস তুমি জানো?
— প্লিজ যেতে দিন আমাকে। আমার এতো বড় ক্ষতি করবেন না প্লিজ।
— এখনও আমি কিছুই করি নি। তবে এখন করবো। ওয়েট!
নির্ঝর আমার ঘাড়ের চুল সরিয়ে ঘাড় চেপে ধরে একটা ক্লিপ আমার ঠোঁটে চেপে ধরলেন। ততক্ষণাৎ আমার ঠোঁটের কোনা কেটে ফিনকি দিয়ে রক্ত পরা শুরু করলো।
নির্ঝরের এহেম কান্ডে রাগে আমার কান দিয়ে ধোয়া বের হচ্ছে। মানসিক রোগী একটা। এমন কেউ করে! ইচ্ছা করছে তার চুল গুলো টেনে ছিড়ে ফেলি কিন্তু আবার ভয়ও করছে,, যদি মারে! রাগ হচ্ছে সেই সাথে ব্যথাও হচ্ছে। চোখ বেয়ে পানি পরছে।
নির্ঝর আমার সামনে দাড়িয়ে দাঁত কেলিয়ে হাসছেন। আমার ঠোঁটের কাটা জায়গায় উনি তার ডান হাতের বৃদ্ধা আঙুল দিয়ে রক্ত মুছে দিলেন।
— তোমার কি মনে হয়েছিল? আমি তোমাকে কিস করবো! নির্ঝর আহমেদ চৌধুরীর লেভেল এতোটাও নিচে নেমে যায় নি যে তোমার মতো একটা রাস্তার মেয়েকে কিস করবো!
— তাহলে কাল সবার সামনে কি করলেন ওটা? ওটা কি কিস ছিল না!
— না একদমই না। ওটা তোমার বিয়ে ভাঙার একটা কৌশল ছিল।
— আপনার সেগুড়ে বালি। বিয়েটা হবে। তন্ময় আপনার মতো এতো লো মেন্টালিটির না যে মিথ্যা কিছু প্রমাণ দেখে বিয়ে ভেঙে দেবে।
— তন্ময়কে মনে হচ্ছে খুব ভালোমতো জানো! কি এমন করেছে তন্ময় যে এতো ভালো করে জানো ওকে! অনেক বেশি সুখ দিয়েছে বুঝি?
— ছিঃ! তন্ময়ের সম্পর্কে একটা বাজে কথাও বলবেন না।
— বাহ! তন্ময়ের জন্য দরদ একদম উতলে উঠছে দেখছি। এখন তো আমার আরও জানতে ইচ্ছা করছে কতোটা গভীর তোমাদের সম্পর্ক!
— আপনার এসব ফালতু কথা রেখে আমাকে যেতে দিন।
— খুব শখ বিয়ে করার তাই না! সরি কিন্তু তোমার এই শখ আমি পূরণ করতে পারছি না।
— কিন্তু কেনো?
নির্ঝর আমার কথার কোনো উত্তর না দিয়ে আমাকে পাঁজাকোলে তুলে নিয়ে সামনের দিকে হাটা ধরলেন। সামনেই একটা চেয়ারে আমাকে বসিয়ে দিয়ে দড়ি দিয়ে বাঁধতে লাগলেন। বিস্ময়ে আমার চোখ বড়বড় হয়ে গেছে। এই লোকটা নির্ঘাত পাগল। কি করছে কিছুই বুঝতে পারছি না। আমাকে চেয়ারে বেঁধে দিয়ে নির্ঝর মদের বোতল হাতে নিয়ে বিছানায় একদম আমার মুখোমুখি বসলেন।
.
.
.
.
.
.
.
নির্ঝরের ডান হাতে মদের গ্লাস আর আঙুলের ভাঁজে সিগারেট। মদের গ্লাসে একটু পর পর চুমুক দিচ্ছেন আর সিগারেটের ধোঁয়া উড়াচ্ছেন।
আমার দিকে ঘোর লাগানো দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছেন। তার দৃষ্টিতে লেগে আছে নেশা! সেটা আমাকে কাছে পাওয়ার নাকি আমাকে কষ্ট দেওয়ার বুঝতে পারছি না।
প্রায় আধা ঘন্টার মতো পাড় হয়ে গেছে নির্ঝর এখনও মদ গিলছেন। এই লোকটাকে কি দিয়ে বানানো হয়েছে কে জানে। অর্ধেক বোতল খালি করে দেওয়ার পরেও তার মধ্যে মদের নেশা কাজ করছে না।
.
শাড়ি ছাড়া শুধু ব্লাউজে বসে আছি উনার সামনে, তাও আবার ব্লাউজটাও ছেড়া। ভীষণ অস্বস্তি হচ্ছে আমার। এই ঘরে কোনো ঘড়ি নেই। তবে আন্দাজ করতে পারছি বিয়ের সময় হয়তো পার হয়ে গেছে।
অস্বস্তি কাটিয়ে আমিই বলতে শুরু করলাম,
— আমার বাঁধন খুলে আমাকে যেতে দিন প্লিজ। বিয়ের সময় পার হয়ে যাচ্ছে!
নির্ঝর মদের গ্লাস থেকে মুখ তুলে ঘোর লাগানো কন্ঠে বললেন,
— তন্ময়কে কিভাবে ফাঁসিয়েছো?
— আপনার কি মনে হয় আমি ছেলেদের ফাঁসাই?
— মনে হওয়ার কি আছে! এটাই তো সত্যি।
— আপনার সাথে তর্কে জরাতে চাই না আমাকে যেতে দিন।
— তুমি চাইলেই তো আর তোমাকে যেতে দেওয়া হবে না! তুমি এখন আমার প্রোপার্টি। আমার অনুমতি ছাড়া এই ঘরের বাইরেও যেতে পারবে না।
— কি বললেন আপনি? আপনার প্রোপার্টি মানে?
— আমি তোমাকে কিনে নিয়েছি। পাঁচ লাখ টাকার বিনিময়ে।
— কিহ! কিসব বাজে বকছেন আপনি? কিনে নিয়েছেন মানে?
— কাল তোমার চাচির হাতে দেওয়া এনভোলোপে পাঁচ লাখ টাকার চেক, সাথে তোমাকে কিনে নেওয়ার কন্ট্রাক্ট ছিল। তোমার চাচি সকালে সেটাতে সিগনেচার করে দিয়েছে।
নির্ঝরের কথায় আমার মাথা ঘুরছে। মনে হচ্ছে চারপাশটায় অন্ধকার ঘনিয়ে আসছে। আমাকে কিনে নিয়েছে সে আর চাচি বিক্রি করে দিয়েছে! আমি কি মানুষ নাকি কোনো পণ্য!
— কি আবোল তাবোল বকছেন আপনি? আমি কি মানুষ নাকি বস্তু? আমি কেনা বেঁচার পণ্য নই,, আমি রক্তে মাংসে গড়া মানুষ।
— সো হোয়াট! মানুষকে বুঝি কেনা যায় না? নির্ঝর চৌধুরী তার টাকার জোরে সব করতে পারে।
— না পারে না। আমার উপর কারো অধিকার নেই। কেউ আমাকে কিনতে পা বেঁচতে পারবে না। চাচি আমার আপন চাচি নয়। তার আমাকে বিক্রি করার কোনো অধিকার নেই।
— আই হ্যাভ কন্ট্রাক্ট বেবস্।
— টু হেল উইথ ইউর কন্ট্রাক্ট! আমি মানি না। আমাকে যেতে দিন।
— আমার ইচ্ছা ছাড়া তুমি এক পা ও নড়তে পারবে না এখান থেকে। গুড নাইট বেবস্। অনেক ঘুম পাচ্ছে।
আমি চেচামেচি করছি কিন্তু নির্ঝর আমার প্রতিটা কথা উপেক্ষা করে বিছানায় গা এলিয়ে দিলেন। অনেক ড্রিংক করার ফলে কিছুক্ষণের মধ্যেই ঘুমের দেশে তলিয়ে গেলেন। ভীষণ কান্না পাচ্ছে আমার। একদিনের মধ্যে এভাবে আমার জীবন পাল্টে যাবে আমি কখনও স্বপ্নেও ভাবি নি।
বিয়ে নিয়ে প্রত্যেকটা মেয়ের হাজার টা স্বপ্ন থাকে। আর আমার বিয়ে আমার জীবনের সবচেয়ে বড় দুঃস্বপ্ন হয়ে দাড়িয়েছে। বুক ফেঁটে যাচ্ছে কষ্টে। শেষ পর্যন্ত বেঁচা কেনার পণ্য হতে হলো আমাকে! দুচোখ দিয়ে অশ্রু কণারা বেয়ে পরছে। তিতলির কথা মনে পরছে। না জানি আমাকে ছাড়া কি অবস্থা হচ্ছে ওর। একা ঘরে কান্না করলেও কেউ নেই তিতলিকে দেখার।
চলবে..
[গল্পটা কেমন লাগছে জানাবেন। আপনাদের ভালো লাগলে কন্টিনিউ করবো। ভুল-ত্রুটি ক্ষমার চোখে দেখবেন। ধন্যবাদ।]