#নেশা
#পর্ব_০৫
#Sumaya_Tabassum_Kotha
নির্ঝর আমার দিকে এক পা এক পা করে এগিয়ে আসছেন আর আমি পিছাচ্ছি। দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেলে নির্ঝর আচমকা আমার কোমড় চেপে ধরলেন। অনেক চেষ্টা করছি চিত্কার করার কিন্তু ভয়ে গলা দিয়ে শব্দ বের হচ্ছে না। নির্ঝর আমাকে কোলে তুলে নিয়ে বিছানায় ফেলে দিলেন। কোমড়ে ভীষণ ব্যথা লেগেছে কিন্তু সেই ব্যথা অগ্রাহ্য করে আমি পিছিয়ে যাচ্ছি। কিন্তু নির্ঝর আমাকে সেই সুযোগ না দিয়ে আমার হাত চেপে ধরলেন। ততক্ষণাৎ আমার ঘুম ভেঙে গেলো।
চোখ খুলতেই নির্ঝর কে সামনে দেখে আমি ঘাবড়ে গিয়ে শুয়া থেকে উঠে বসলাম। এসি অন করা ঘরে, তবুও ঘেমে নেয়ে একাকার হয়ে গেছি আমি। নির্ঝর বিছানার পাশে দাড়িয়ে আছেন ভ্রুঁ কুচকে। নির্ঝরকে দেখে মনে হচ্ছে না সে এতোক্ষণ আমার সাথে এসব করেছে। তার মানে আমি স্বপ্ন দেখছিলাম এতোক্ষণ। দুঃস্বপ্ন! যেটা শীঘ্রই বাস্তবে রূপ নিতে যাচ্ছে।
— হোয়াট হ্যাপেন্ড? এভাবে ঘামছো কেনো?
— ককিছু না। আপনি এভাবে আমার মাথার উপর দাড়িয়ে আছেন কেনো?
— তুমি ঘুমের ঘোরে বিরবির করছিলে! আর ঘেমে ভিজে গেছো তাই দেখতে এসেছিলাম কি প্রব্লেম হলো।
— এতো দরদ দেখাতে হবে না আপনার। আমি ঠিক আছি।
— তা তো দেখতেই পাচ্ছি। দুঃস্বপ্ন দেখেছিলে বুঝি।
— আমার জীবনটাই একটা দুঃস্বপ্ন বানিয়ে দিয়েছেন আপনি!
নির্ঝর কিছু বলতে গিয়েও চুপ করে রইলো।
— আমার টাকা টা কখন দেবেন?
— কবুল বলার ৩ সেকেন্ড পরেই।
— মানে কি? আমি বলেছিলাম আমার টাকা টা বিকেলের আগে লাগবে। আর আপনি এখন বলছেন পরে দেবেন। আমাকে আগেই দিতে হবে টাকা।
— টাকা নেওয়ার পর যদি তুমি বিয়ে টা না করো! তখন?
— আমাকে কি বিশ্বাস হয় না যে আমি টাকা নেওয়ার পরেও বিয়ে টা করবো?
— ইউ নো হোয়াট আই ডোন্ট ট্রাষ্ট ইউ।
আমি কিছু বলতে গিয়েও মুখ দিয়ে আর কথা বের হলো না। যেই মানুষটা আমাকে বিশ্বাসই করে না,, তার কাছে বিশ্বাসের কথা বলাটাই বেকার।
— ঠিক আছে। আপনি বিয়ের প্রিপারেশন নিন। তবে চুক্তি অনুযায়ী কবুল বলার ঠিক পরেই আমার টাকাটা চাই।
— ওকে। গেট রেডি কাজী সাহেব এসে পরবেন কিছুক্ষণের মধ্যেই।
নির্ঝর আমার হাতে একটা প্যাকেট ধরিয়ে দিয়ে সেখান থেকে চলে গেলেন। ঘরের দরজা ভিতর থেকে লক করে প্যাকেট টা বিছানায় ছুড়ে ফেলে দিলাম। এমন বাজে একটা লোকের দেওয়া জিনিসের প্রতি আমার কোনো মোহ নেই। নিজের অসহায়ত্বের কাছে বাঁধা পরেই এখানে পরে রয়েছি। তা না হলে এই মানুষটার কাছে কখনও ফিরতাম না। টাওয়াল নিয়ে ওয়াশরুমে ঢুকে গেলাম। শাওয়ারের নিচে দাড়িয়ে দাড়িয়ে ভাবছি, সর্বোচ্চ দুই কি তিন ঘন্টা হয়েছে আমি ঘুমিয়েছিলাম। এতো কম সময়ের মধ্যে কিভাবে সবকিছু ঠিক করে ফেললো উনি? ওহ আমি তো ভুলেই গিয়েছিলাম উনার অনেক টাকা। শহরের সবচেয়ে ইয়াং সাকসেসফুল হোটেলিয়ার, দ্যা নির্ঝর আহমেদ চৌধুরী! টাকা দিয়ে সব কিনতে পারে,, মানুষকেও!!
.
.
বেশ লম্বা একটা শাওয়ার নিয়ে বাতরোব টা পরে বাইরে বের হয়ে এসে বিছানার উপর রাখা প্যাকেট টা খুললাম। প্যাকেটে লাল একটা শাড়ি আর হালকা কিছু গয়না রাখা আছে। হয়তো বিয়ে উপলক্ষেই এনেছেন। বিয়ের শাড়িটা খুব সিম্পল কিন্তু দেখেই বোঝা যাচ্ছে ডিজাইনার। এখানেও টাকার শো অফ।
শাড়িটা গায়ে জরিয়ে নিলাম। গয়নাগুলো পরার একদমই ইচ্ছে নেই। যেখানে বিয়েটাই একটা চুক্তি সেখানে এতো সাজগোজের কোনো মানে হয় না। সবকিছুই কেমন বিষাদ মনে হচ্ছে। শাড়ির আঁচল এলোমেলো ভাবে বুকে জরিয়ে এলো চুলে বসে আছি। তখন খট করে দরজা খুলার শব্দে পিছনে ঘুরে তাকালাম।
— তুমি এখনও রেডি হও নি। গেট রেডি! ফাস্ট!
— আমি তৈরিই।
নির্ঝর একনজর আমাকে দেখলেন। হয়তো কনের এমন বেশভুশা দেখে সে হতাশ হয়েছেন। একটা ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে উঠে পরলাম। নির্ঝর আমার মাথায় ঘোমটা টেনে দিয়ে হাত ধরে নিচে নিয়ে গেলেন। কাজী সাহেব আর দুইজন লোক ড্রয়িং রুমে বসে আছে। কিছুক্ষণের মধ্যেই বিয়ে পরানো শুরু হবে।
।
।
।
।
খুবই সাদামাটা ভাবে আমার আর নির্ঝের বিয়েটা হয়ে গেলো। বিয়ে শেষে কাজী সাহেব কে বিদায় দিতে নির্ঝরের সাথে থাকা লোক দুজন বাইরে গেলেন।
— হিয়ার ইজ দ্য মানি। দশ লাখ ক্যাশ আছে। নাও ডু হোয়াটেভার ইউ ওয়ান্ট টু ডু উইথ দিস মানি। আই ডোন্ট কেয়ার। শুধু আমার ওর্ডার মতো চলতে হবে।
উনার হাত থেকে টাকা টা নিয়ে নিলাম। ঘড়িতে ৪:৩৩ বাজে। আমাকে দ্রুত টাকা টা তন্ময়ের হাতে পৌঁছাতে হবে। কিন্তু কিভাবে? এদিকে সময় পার হয়ে যাচ্ছে। তাই ভাবাভাবির কাজ বাদ দিয়ে বেরিয়ে পরলাম।
দরজার কাছে পৌঁছাতেই নির্ঝর পিছন থেকে ডাকলেন,
— কোথায় যাচ্ছো?
— সব প্রশ্নের উত্তর আপনাকে দিতে বাধ্য নই। আমার কাজ আছে।
— সিরিয়াসলি? আমার সব প্রশ্নের উত্তর দিতে তুমি বাধ্য। কারণ তুমি শুধু আমার কেনা গোলামই নও এখন আমার ওয়াইফ। সো ডোন্ট ফরগেট ইট।
— দেখুন আমার যাওয়াটা খুব দরকার। প্লিজ যেতে দিন।
— কি করবে বলে দাও, তোমাকে যেতে দেবো।
— আমার! আমার অনেক কিছু কিনতে হবে। অনেক গয়না, জামাকাপড় আরও অনেক কিছু। এতো টাকা পেয়েছি এখন এসব কিনতেই হবে। যেতে দিন প্লিজ।
আমার উত্তরে মনে হলো নির্ঝর বেশ আহত হলেন। হয়তো আমার মুখ থেকে উনি এই উত্তর টা আশা করেন নি। কিন্তু আমি নিজেকে তার চোখে শুধু খারাপ বানাতে চাই। কোনো মিছে মায়ায় জরাতে চাই না। কি হবে নিজেকে উনার মায়ায় জরিয়ে! যেই সম্পর্কের কোনো ভবিষ্যত নেই সেই সম্পর্কে ভালোবাসা বা বিশ্বাস আনা টা বোকামি।
উনার কাছে থেকে বিদায় নিয়ে বেরিয়ে পরলাম হাসপাতালের উদ্দেশ্যে। কাছে মোবাইল না থাকায় বাসে একজন সহযাত্রীর মোবাইল নিয়ে তন্ময়কে ফোন দিলাম।
.
বাস আমাকে আমার গন্তব্যে পৌঁছে দিচ্ছে খুব দ্রুত বেগে। হঠাত করেই বৃষ্টি শুরু হয়ে গেলো। যদিও আকাশে মেঘ ছিল না। বাসের জানালার বাইরে তাকিয়ে আছি। বৃষ্টির কিছু ফোঁটা আমার চোখে মুখে ছিটে আসছে। বাইরে যেমন ঝড় হচ্ছে ঠিক তেমনই ঝড় আমার জীবনেও বয়ে যাচ্ছে। জানি না এই ঝড় কখন থামবে আর কখন আমি মুক্তি পাবো!
.
হসপিটালে পৌঁছাতেই তন্ময়ের সাথে দেখা হলো।
— টাকা টা এনেছো তৃষ্ণা?
— হ্যাঁ এই যে। রাখুন। টাকা টা জমা করে দিন। তিতলির ট্রিটমেন্ট কখন শুরু হবে?
— টাকা জমা করার কিছুক্ষণের মধ্যেই।
— তাহলে জমা করে দিন। তিতলিকে একটু দেখবো আমি। আমাকে নিয়ে চলুন প্লিজ।
— তৃষ্ণা। ডাক্তার তিতলিকে অবজারভেশনে রেখেছে। কারো সাথে দেখা করতে বারণ করেছে।
— সকালের মতো এক নজর দেখে চলে যাবো। প্লিজ!
— রিলাক্স তৃষ্ণা। এখন তিতলির ট্রিটমেন্ট হোক, তিতলি সুস্থ হলে একবারে অনেক আদর করো।
— কিন্তু,,
— চলো এখান থেকে। তোমাকে দেখতে একটু ভিন্ন লাগছে। লাল শাড়ি পরেছো এজন্য হয়তো।
তন্ময়ের প্রশ্নের উত্তর দিতে গিয়েও এড়িয়ে গেলাম। নির্ঝর আর আমার বিয়ের কথাটা তন্ময়কে বলা কি ঠিক হবে! তন্ময় আমার সব পরিস্থিতি ইজিলি বুঝে নেন। কিন্তু তবুও মনে এক ভয় কাজ করছে। যদি তন্ময় আমাকে ভুল বুঝেন! সাত পাঁচ চিন্তা করে বিয়ের কথাটা চেপে গেলাম। তন্ময় আমাকে এক প্রকার জোর করে হসপিটাল থেকে পাঠিয়ে দিলেন।
তন্ময়ের ব্যবহার কেমন যেনো ঘোলাটে মনে হলো। মনে হচ্ছে তন্ময় আমার কাছে থেকে কিছু লুকাচ্ছেন। অথবা হয়তো তিতলিকে নিয়ে অনেক টেনশনে আছেন। ওতো সতো না ভেবে হসপিটাল থেকে বেরিয়ে পরলাম। আবার সেই কারাগারে বন্দী হওয়ার জন্য এগিয়ে যাচ্ছি।
.
নির্ঝরের বাসার সামনে এসে কলিং বেল চাপতেই একটা মেয়ে এসে দরজা খুলে দিলো। নির্ঝরকে আশেপাশে কোথায় দেখলাম না। হয়তো বাসায় নেই। যাক ভালো হয়েছে, কিছুক্ষণ সময় একটু শান্তিতে কাটবে। সিড়ি বেয়ে দোতলার ঘরটায় চলে গেলাম। ঘরের দরজা ঠেলে ভিতরে ঢুকে লাইট অন করতেই আমার চোখ কপালে উঠে গেলো।
পুরো ঘর ফুল দিয়ে সাজানো ঠিক বাসর ঘরের মতো। তার মানে কি উনি সকালে যা বলেছিলেন সেটাই করতে যাচ্ছেন! এতোদিন যার কাছে থেকে দূরে দূরে পালিয়ে এসেছি আজ তার হাতে নিজেকে সর্পে দিতে হবে! বুকের বা পাশে চিনচিনে ব্যথা হচ্ছে। বাসর প্রতি মেয়ের নতুন জীবনের প্রথম ধাপ। হাজারো স্বপ্ন থাকে এই রাত টা নিয়ে মেয়েদের। আর আমার জীবনে এই রাত সবচেয়ে কষ্টের রাতের মধ্যে একটি হতে চলেছে!
চলবে..
[পর্ব ছোট করে দেওয়ার জন্য আমি আগেই দুঃখিত। আমি অনেক সমস্যার মধ্যে আছি। এজন্য গুছিয়ে লিখতেও পারি নি। ভুল-ত্রুটি ক্ষমার চোখে দেখবেন।]