নেশা #পর্ব_১৪ #Tabassum_Kotha

0
1080

#নেশা
#পর্ব_১৪
#Tabassum_Kotha

” নিজেকে কি মনে করো তুমি?”
সিড়ির সামনের আমার হাত চেপে ধরে নির্ঝর কথাটা বললেন।

নির্ঝরের রক্তচক্ষু দেখে রীতিমতো আমার ভয় করছে। তবুও নিজেকে শান্ত করে স্থির দাঁড়িয়ে আছি। এসময় আমার ভয় পেলে চলবে না।

— যখন ইচ্ছা আমার জীবন নিয়ে খেলা করবে,, আমাকে ছেড়ে চলে যাবে তাই তো। সো স্যাড! এবার আমি তোমাকে সে সুযোগটা দিচ্ছে না। আমার জীবন নিয়ে খেলা করার সুযোগ এবার আমি কাউকে দেবো না।

— কি করছেন হাত ছাড়ুন! যেতে দিন আমাকে।

— তোমাকে আর কোথাও যেতে দেবো না আমি। প্রতিবার তুমি আমাকে ছেড়ে যাওয়ার জন্য মিথ্যা বাহানা বানাও। এক বছর আগে চিঠিতে লিখেছিলে, তুমি আমাকে ভালোবাসো না। আমার সাথে তোমার কোনো সম্পর্ক নেই। আমার মত একটা মেয়ে বাজ কে তুমি ভালোবাসতে পারো না।
তোমাকে আমি আগেই বলেছিলাম তৃষ্ণা, আমার জীবনে তুমি আসার আগে অনেক মেয়েই ছিল কিন্তু তুমি আসার পর শেষ নিশ্বাস অব্দি আর কোন মেয়ে আসবেনা। তবুও তুমি আমাকে অবিশ্বাস করার মিথ্যে নাটক করে আমাকে ছেড়ে চলে গিয়েছিলে।

— আমি কোন মিথ্যা নাটক করিনি। আমি আপনাকে আগেও ভালোবাসতাম না, এখনো ভালোবাসি না। এজন্য ছেড়ে চলে গিয়েছিলাম।

— ও আচ্ছা! তাহলে তুমি কাকে ভালোবাসো আমাকে একটু বলো তো প্লিজ, তন্ময় কে?

— হ্যাঁ, তন্ময় কে আমি অনেক ভালোবাসি।

–ভালোবাসো! তাই বুঝি এতোগুলো টাকা তন্ময়কে কে দিয়েছো?

— আপনার কাছে থেকে নেওয়ার পর সে টাকাগুলো আমার হয়েছে। আর আমার টাকা আমি কাকে দেবো সেটা একান্তই আমার ব্যাপার।

— আর কত মিথ্যা বলবে তৃষ্ণা? সব জেনে গেছি আমি। তন্ময় কে তুমি ভালোবাসো না। তুমি শুধু তন্মুয়কে টাকা দিচ্ছিলে তিতলিকে বাঁচানোর জন্য।

— সেটা আমার আর তন্ময় এর নিজস্ব ব্যাপার। আপনার এতে নাক গলাতে হবে না।

— নাক তো অবশ্যই গলাতে হবে। তন্ময় তোমার কাছে থেকে মিথ্যা বলে টাকা নিচ্ছিল। তিতলি অসুস্থ নয়,, তিতলির অসুস্থতার মিথ্যা কথা বলে তোমার কাছ থেকে টাকা নিয়েছিল আর তুমি সেটা ওকে দিচ্ছিলে। টাকাগুলো দেওয়ার পেছনে ভালোবাসা ছিল না,, ছিল শুধু তিতলির প্রতি তোমার চিন্তা, তোমার মাতৃত্বের টান।

— আপনার এই সব কথা শোনার আমার একদম ইচ্ছে নেই। আমাকে যেতে দিন প্লিজ। একটু পরেই আমার বাস ছেড়ে দেবে, আমাকে তার আগে বাসস্ট্যান্ডে পৌঁছাতে হবে।

— টু হেল উইথ ইউর বাস! তুমি আমাকে ছেড়ে কোথাও যেতে পারবে না। আমি তোমাকে কোথাও যেতে দেবো না। আর এমনিতেও তুমি কন্ট্রাক্টে আবদ্ধ। তিন মাসের আগে আমাকে তুমি ছাড়তে পারবে না। তিন মাসের পর আমাদের প্রোপার ডিভোর্স হবে, তারপর তুমি যেতে পারবে। এর আগে তুমি আমার বাড়ি থেকে এক পাও নড়তে পারবে না।

— আপনার কন্ট্রাক্ট আমি আর মানি না। আমি আজকেই এ বাড়ি থেকে চলে যাবো। আর রইল আপনার কন্ট্রাক্ট! আপনার দেওয়া টাকা গুলো আপনি পেয়ে যাবেন। পাই পাই পরিশোধ করে দিব আপনার। কিন্তু তবুও আমি আর পারব না এসব করতে। আপনার শয্যাসঙ্গী হয়ে আমি আর থাকতে পারব না। প্রতিরাতে আপনাকে সুখী করার দায়িত্ব আর নিতে পারবো না।

— জাস্ট শাট আপ তৃষ্ণা। তোমার এসব কথা আমি শুনতে চাই না। তুমি আমাকে ছেড়ে যেতে পারবে না ব্যাস এটাই জানি আর কোন কথা আমি শুনতে চাচ্ছি না। আমি বেঁচে থাকতে তুমি আমাকে ছেড়ে যেতে পারবে না।

— আপনার পাগলামি বন্ধ করুন। আমি এসব আর নিতে পারছিনা আমাকে যেতেই হবে। আপনার সব টাকা আমি আপনার আম্মুর হাতে দিয়ে দেব। আপনার আম্মু আপনাকে দিয়ে দেবে।

— আমার কোন টাকা চাইনা। আমার শুধু তোমাকে চাই।

— এটা আর সম্ভব না। আপনি আমাদের ডিভোর্সের প্রসেসিং শুরু করেন এবং ডিভোর্স লেটার সাইন করে পাঠিয়ে দিন। তারপর আপনি স্নিগ্ধাকে বিয়ে করে নিন।

— আর তুমি? তুমি আমাকে ছেড়ে চলে যাবে! একবারের জন্যও কি আমার কথা মনে পড়বে না। আমাকে কি আর ভালোবাসতে পারবে না তুমি?

.
আমার কাঁধ ধরে ঝাঁকিয়ে নির্ঝর কথাগুলো বললেন। নির্ঝরের চোখ দুটো পানিতে টলমল করছে। নির্ঝরের এই অবস্থা দেখে আমার বুকের ভিতরটা কষ্টে দুমড়ে মুচড়ে যাচ্ছে। নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করা আমার পক্ষে ক্রমেই অসম্ভব হয়ে উঠছে। আমি আর পারছিনা নির্ঝরের সামনে মিথ্যে বলতে, নিজেকে লুকাতে, নিজের কষ্টটাকে লুকাতে,, ইচ্ছে করছে নিজেকে উনার বুকে বিলীন করে দিয়ে সব কষ্ট হাওয়াও উড়িয়ে দেই। মন বলছে নিজেকে নির্ঝরের বুকে বিলিয়ে দেই। কিন্তু মস্তিষ্ক মনের ইচ্ছাকে সায় দিচ্ছে না। মস্তিস্ক বারবার বলছে চলে যেতে এখান থেকে, নির্ঝরকে সুখে থাকতে দিতে কিন্তু পারছিনা। ভীষণ কষ্ট হচ্ছে। আমি উনাকে এখনও ঠিক আগের মতোই ভালোবাসি। হয়তো এখন আগের থেকেও বেশি ভালোবেসে ফেলেছি তাকে। এই দেড় মাসের বিয়ের সম্পর্কে আমার ভালোবাসা কয়েকগুণ বেড়ে গেছে।

— ছাড়ুন আমাকে নির্ঝর। কেনো বারবার আঁকড়ে ধরছেন আমাকে? আমার সাথে আপনার ভাগ্যে শুধুই কষ্ট আছে। কখনো আপনাকে সুখী করতে পারব না আমি। তবে কেনো আমাকে নিজের কাছ থেকে সরিয়ে দিচ্ছেন না? কেনো আমার মত একটা বন্ধ্যা কে স্ত্রী বানাতে চান। যে মেয়ে আপনাকে কখনো সন্তানের সুখ দিতে পারবে না তাকে কেনো বিয়ে করতে চান? কেনো নিজের জীবনসঙ্গী বানাতে চান?

— কি বললে তুমি? সন্তানের সুখ দিতে পারবে না মানে? কি বলতে চাইছো তুমি?

— যা সত্যি সেটাই বলতে চাইছি। আমি আমি কখনও মা হতে পারবেনা। তবে কেনো আপনি আমাকে এতোটা আপন করছেন? কেনো আমাকে আপনার জীবন থেকে যেতে দিচ্ছেন না? কেনো বারবার আটকে ধরেছেন? কেনো? (কথাগুলো বলতে বলতে তৃষ্ণা কান্নায় ভেঙে পরলো)

আমি কখনো মা হতে পারব না নির্ঝর। সন্তান জন্ম দেওয়ার যোগ্যতা আমার নেই। কখনও সন্তান জন্ম দিতে পারব না।

— এসব তুমি কি বলছো তৃষ্ণা? তুমি আমায় মিথ্যে বলছো তাই না? আমার কাছে থেকে নিজেকে সরাতে আবারও মিথ্যে বলছো।

–আমি মিথ্যে বলছি না নির্ঝর আমার মনের প্রতিটি কথা সত্য। আমি কখনো মা হতে পারব না। উপরওয়ালা আমাকে পরিপূর্ণ নারী হওয়ার ক্ষমতা দেননি।

.
.
.
.
নির্ঝর আমার দুই বাহু ছেড়ে দিয়ে একটু দূরে সরে গেলেন। মনে হলো আমার কথায় অনেক বড় একটা ঝটকা পেয়েছেন? বাকরুদ্ধ দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছেন আমার দিকে। আর আমি ছলছল দৃষ্টিতে নিচের দিকে তাকিয়ে আছি। নির্ঝরের সাথে চোখ মেলানোর সাহস পাচ্ছি না। হয়তো চোখ মেলে তাকানোর শক্তি আমার আর নেই!!

চলবে..

[আমার বাড়িতে প্রোগ্রাম থাকায় অনেক তাড়াহুড়ায় লিখেছি। পর্বও ছোট হলো। দুঃখিত। গল্প প্রায় শেষের দিকে। আশা করি আপনাদের ভালো লাগছে। কেমন হচ্ছে জানাবেন। ধন্যবাদ।]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here