নেশা ভরা সন্ধ্যা,পর্ব_০৩
অধির রায়
সকাল বেলা এমন একটা কান্ড ঘরতে পারে শুভ্র কল্পনাও করেনি। শুভ্র চোখ মেলে দেখতে পায় রাত শুভ্রকে জড়িয়ে ধরে শুয়ে আছে। রাতকে একদম মায়াবী লাগছে। শুভ্র চাইলেও রাতকে দূরে সরিয়ে দিতে পারছে না৷
ঠিক তখনই মনে পড়ে যায় রাতের দৃশ্যগুলো। রাত পার্কে একটা পাশে বসে তার কাঁধে মাথা রেখে কথা বলছিল৷
— আমি তোমাদের ছাড়া বাঁচবো না৷ তোমরা কোনদিন আমাকে ছেড়ে চলে যাবে না৷ আমি তোমাদের অনেক ভালোবাসি৷ (রাত)
— ছেলেটি রাতের মাথায় হাত রেখে, ” আমি যতদিন আছি ততদিন তোর চোখে জল মুছে দিব৷ মুছে দিব কি? আমি তোর চোখে কখনো জল আসতেই দিব না৷ আমিও তোকে খুব ভালোবাসি।”
শুভ্র আর মনে করতে পারছে না৷ শুভ্র কানে হাত দিয়ে চিৎকার করে উঠে৷ শুভ্রর চিৎকার শুনে রাত জেগে উঠে।
— কি হয়েছে তোর? এভাবে চিৎকার করছিস কেন? আমার কান ফেটে যাবে তো?
— রাতকে বিছানায় চেপে ধরে, ” তুই আমার বিছানায় কি করছিস? রাতে আমার ঘুমের সুযোগ নিয়েছিস৷ তোর মতো মেয়ে আর কি পারে।”
— শুভ্রকে দূরে ঠেলে দিয়ে,” আমার মতো মেয়ে। আমার মতো মেয়ে সব পারে৷ এই কথা তুই কতবার বলছিস৷ আমি করেছি তুই আমাকে দোষী ভাবিস৷” চোখ পাকিয়ে বলে।
— বল কি করিস নাই? বলতেও লজ্জা করে। তোর মতো আমার মন ততটাও নিচু নয়৷ আমি বলতে পারব না৷
শুভ্র উঠে চলে যেতে নিলেই রাত বলে উঠে, ” বুকের মধ্যে সৎ সাহস নেই৷ সৎ সাহস থাকলে আমাকে অন্ধকারে রেখে দোষারোপ করতে পারতিস না৷”
রাতের কথা শুনে শুভ্র দাঁড়িয়ে পড়ে। শুভ্র রাতের দিকে তেড়ে আসে৷ রাতের বাহু চেপে ধরে বলে উঠে, ” তোর কি মনে হয়? আমি কাউকে মিথ্যা কথা বলি। তাহলে শুন তুই একটা অসভ্য অভদ্র মেয়ে।
আমার সাথে তোর বিয়ে হওয়ার পরও তুই তোর প্রেম চালিয়ে গেছিস অন্য একটা ছেলের সাথে।
— এই তোর মাথা খারাপ হয়েছে। তুই আমাকে কি বললি জানিস? তুই নিজেই জানিস না আমাকে কি বললি?
— আমি কিছু ভুল বলি নি। মিথ্যা বলতে পারবি তুই পার্কে অন্য ছেলে কাঁধে মাথা রাখিস নি৷ তুই তাকে ভালোবাসার কথা বলিস নি৷
— আর ইউ মেড৷ আমি অন্য কোন ছেলের কাঁধে নিজের মাথা রাখবো। তুই ভালো করেই জানিস আমি এমন কোন কাজ করি না৷
এইজন্য তুই আমাকে উপেক্ষা করিস!
— তোর মতো মেয়রা শুধু মিথ্যা কথা বলতেই পারিস৷ দিনটা ছিল সানডে৷ ছুটির দিন৷ মাস নভেম্বর, সাল ২০২০। সকাল ১১ টার দিকে তুই কারো কাঁধে মাথা রেখে বলিস নাই তুই তাদের ছাড়া বাঁচতে পারবি না৷
— আমার মনে পড়েছে। তবে আমি তোকে একটা কথা বলতে চাই৷ তোর ভালোবাসা যাছাই করার জন্য তুই কেন আমার সামনে আসলি না৷ তাহলে আমরা দুই মেরুতে দাঁড়িয়ে থাকতাম না৷
— শান্ত গলায় শুভ্র বলে উঠে, ” ব্যাস আর নাটক করতে হবে না৷ তুই বুঝাতে চাইছিস আমি তোকে ভুল বলছি৷ আমি যা দেখেছি সব মিথ্যা৷
— আমি তোকে বলিনি তুই ভুল বলেছিস৷ তবে আমি একটা কথা বলতে চাই৷ আমরা যা দেখি তা আমাদের চোখের ভুলও হতে পারে৷ আজ তোকে আমি সব জানাবো৷ চল আমার সাথে।
— তুই আমাকে কোথায় নিয়ে যাচ্ছিস৷
— কোন কথা না বলে তুই আমার সাথে চল।
রাত শুভ্রকে নিয়ে নিলয়ের কাছে চলে আসে৷ নিলয় ক্ষুধার তাড়নায় ছটফট করছে। হাত পা বাঁধা থাকলেও মুখ দিয়ে জল চেয়ে যাচ্ছে।
— শুভ্র অবাক হয়ে বলে উঠে, ” নিলয়কে তুই এখানে বেঁধে রেখেছিস কেন? তুই আমার ফ্রেন্ডকে বেঁধে রেখেছিস কেন?
নিলয় শুভ্রর কথা শুনে কিছুটা সাহস পায়৷ নিলয় বলে উঠে, ” শুভ্র প্লিজ আমাকে বাঁচা। আমাকে কেন ধরে আনা হয়েছে জানা নেই?
রাত নিলয়ের গালে কষিয়ে দুইটা থাপ্পড় বসিয়ে দেয়। ক্ষেপে বলে উঠে, ” দেখ নিলয় আজ সত্যি বলছি তুই যদি কোন মিথ্যা কথা বলিস তাহলে তোর জীবন আমি শেষ করে দিব৷ তোকে আজ বিধাতাও বাঁচাতে পারবে না৷ যদি তুই কোন মিথ্যা কথা বলিস৷
— নিলয় মুচকি হেঁসে “তুই কোনদিন সত্য কথা জানতে পারবি না৷ তোকে আমি কোনদিন সত্যের মুখোমুখি হতে দিব না৷ ”
— রাত হাতে প্লাস নিলে ” আমি আজ তোর মুখ থেকে সত্য কথা বের করেই ছাড়বো।”
রাত প্লাস দিয়ে নিলয়ের নখ তুলতে থাকে। নিলয় জ্ঞান হারালে গরম জল দিয়ে নিলয়ের জ্ঞান ফিরিয়ে আবার নখ তুলতে থাকে। নিলয় বাদ্য হয় সত্য বলতে।
— নিলয় কান্না করে বলে উঠে, ” প্লিজ রাত তুই আমাকে মেরে ফেল তাও আমাকে এত কষ্ট দিস না৷”
— রাত নিলয়ের মুখ চেপে ধরে বলে উঠে, ” আমি তোকে মারব না৷ তুই আমাকে সঠিক ইনফরমেশন গুলো দে। ”
— ওকে। তুই কি জানতে চাস?
— তোরা যে মেয়েকে তুলে নিয়ে গিয়েছিলে সে মেয়েটি কোথায়? মানে নিঝুম কোথায়?
— আমরা সেদিন নিঝুমকে তুলে নিতে চেয়েছিলাম কিন্তু এতে নিঝুম আমাদের সাথে যুক্ত৷ কারণ আমি নিঝুমকে খুব ভালোবাসি৷ আমাদের ভালোবাসা তারা মেনে নিতে চাইনি৷ তাই আমি নিঝুমকে তুলে নিয়ে বিয়ে করি৷ নিঝুম আমার কাছেই আছে। তোদের ফোনটা দে আমি নিঝুমের সাথে কথা বলিয়ে দিচ্ছি৷
— শুভ্র ক্ষেপে বলে উঠে, ” ব্যাস রাত আমি আর কোন নাটক দেখতে চাই না৷ তোর সাথে সেদিন ওই ছেলেটা কে ছিল? তুই ওর কাছে নিয়ে চল। নিলয়কে এর মাঝে না টানলেও পারতিস৷
— নিঝুম আমার বোনের মতোন৷ তাই নিলয়কে তুলে এনেছি৷ নিলয়ের প্রতি আমার কোন অভিযোগ নেই৷ নিলয় তুমি তোমার মতো জীবন যাপন কর৷ আর তোমাকে কোন বিরক্ত করব না৷
রাত আর শুভ্র মিলে নিলয়কে তার বাড়িতে পৌঁছে দেয়৷ নিলয়কে তার বাড়িতে পৌঁছে দিয়ে রাত শুভ্রকে নিয়ে একটা হোস্টেলে আসে৷
শুভ্র রাতের সাথে যে ছেলেকে দেখেছিল সেই ছেলে রাতের কথামতো হোস্টেলের বাহিরে আসে৷ শুভ্র তাকে দেখে রাগ উঠে যায়৷ শুভ্র ছেলেটার কলার ধরে মারতে শুরু করে৷
— শাওন বলে উঠে, ” জিজু আমাকে এভাবে মারছো কেন? আমি কি দোষ করেছি?”
জিজু ডাক শুনে শুভ্রর হাত থেমে যায়। শাওন হলো রাতের ছোট সৎ ভাই। রাতকে তারা অনেক অবহেলা করত। এইজন্য শাওন বাড়িতে ফিরে না৷
— রাত চোখের জল মুছে বলে উঠে, ” শাওন আমার ভাই৷ তার কাঁধে মাথা রেখেছিলাম বলে তুই আমাকে ভুল ভেবেছিলি৷ ”
— শাওন কিছু না বুঝেই,” কি হয়েছে দি। তুই এভাবে কান্না করছিস কেন?” মা তোকে কিছু কি বলেছে?
— না শাওন তুই হোস্টেলে ফিরে যা। আমি ঠিক আছি৷
শাওন কোন কথা না বলে রাতের কথামতো চলে যায়৷ রাতকে শাওনের মা অনেক কষ্ট দিত৷ সেজন্য রাতের বাবা রাতের বিয়ে দিয়ে দেয়৷ কিন্তু শুভ্র একটা ভুলের জন্য রাতকে মেনে নিতে পারেনি৷
— রাত শুভ্রকে উদ্দেশ্য করে বলে উঠে, ” সেদিন যদি তুই আমাদের সামনে আসতিস তাহলে আমাদের জীবন আজ এমন হতো না৷ একটা ভালো কাঁপল থাকতাম আমরা। ”
— শুন রাত আমি জানতাম তোর ছোট ভাই আছে। আমি ভেবেছিলাম তুই একা৷ তোর কোন ভাই নেই।
— হয়েছে আর কিছু বলতে হবে না৷ চল এখান থেকে।
রাত সারা রাস্তায় শুভ্রর সাথে কোন কথা বলে নি৷ শুভ্র অনেক চেষ্টা করেছে কথা বলার জন্য৷
চলবে….