নেশা ভরা সন্ধ্যা,পর্ব_০৫ (শেষ)
অধির রায়
পরের দিন সকাল বেলা রাত এমন একটা ডিসিশন নিবে শুভ্র ভাবতেও পারিনি৷
ঘুম ঘুম চোখে শুভ্র উঠে দেখে তার পাশে রাত নেই৷ শুভ্রর আগেই রাত উঠে চলে গেছে। শুভ্র ঘুম থেকে উঠে ছাঁদে এক্সারসাইজ করতে যায়৷ এক্সারসাইজ শেষ করে শুভ্র নিচে নেমে আসে। কিন্তু রাতকে কোথায় দেখা যায় না৷ না আছে কিচেনে৷ না আছে ডাইনিং রুমে।
— শুভ্র সোফায় বসতে বসতে তার মাকে বলে উঠে, ” মা রাত কোথায়? রাতকে কোথাও খুঁজে পাচ্ছি না৷ ”
— রাত একটু বাহিরে বের হয়েছে? বলল ওর কিছু কাজ আছে। কাজ শেষ করেই ফিরে আসবে।
— সকাল নয়টার ওর বাহিরে কিসের কাজ আছে। আমাকে সে কিছু বলে নি তো।
— আমাকেও তেমন কিছু বলে নি৷ মনে হয় তুই ঘুমিয়ে ছিলি তার জন্য তোকে বিরক্ত করতে চাইনি৷
— আচ্ছা৷ মা আমি রুমেই আছি৷ রাত আসলে বলবে আমি তাকে ডেকেছি৷ কোন কাজ দিও না আবার৷
— আমার ছেলে দেখি এখন বউকে মিস করা শুরু করে দিয়েছে।
— মা তুমিও না৷ যা না তাই বলে যাও৷
— মায়ের চোখ ফাঁকি দেওয়া ততটা সহজ নয়৷
শুভ্র তার রুমে এসে পায়েচারী করতে থাকে। রাত এত সকালে কোথায় যেতে পারে৷ দেখতে দেখতে দুপুর ১২ টা বেজে গেল৷
শুভ্র ফোন নিয়ে বাহিরে বের হতে নিলেই রাত রুমে প্রবেশ করে৷
— শুভ্র রেখে বলে উঠে, ” কই ছিলি তুই? তুই ভোরে বের হয়েছিস৷ এখন কত বাজে দেখেছিস! তোর মতো সময় সম্পর্কে জ্ঞান আছে কি?”
— রাত কোমল স্বরে বলে উঠে, ” আমার সময় সম্পর্কে ভালো জ্ঞান আছে৷ আর অপমানের সম্পর্কেও জ্ঞান আছে। আমি কাউকে বিপদে ফেলতে চাই না৷ ”
— তুই কাকে বিপদে ফেলতে চাস না। তুই সারাদিন মেবি এই কাগজটার পিছনে ছুটেছিস৷ (রাতের হাতে রাখা কাগজের দিকে তাকিয়ে)
রাত কিছু বলতে নিলেই রাতের ফোন আসে৷ রাত ফোন রিসিভ করে বেলকনিতে চলে যায়৷ রাতের পিছু পিছু শুভ্রও বেলকনিতে চলে যায়৷
—- হ্যাঁ আমার কাজ হয়ে যাবে তো?
——- অপর পাশ
— শুভ্র মনে মনে বলে উঠে, ” রাত কার সাথে হেঁসে হেঁসে কথা বলছে। নাকি আবারও কোন ছেলের সাথে কথা বলছে। আমি কি ভাবছি৷ এবারও ভুল ভাবছি এটা ভাবা আমার ঠিক নয়৷ আমি বরং তাদের কথা শুনি এখানে দাঁড়িয়ে থেকে।”
— রাত গ্রিলে হাত রেখে বলে উঠে, ” আমি কোন এক্সকিউজ শুনতে চাই না৷ আমি আমার কাজটা হওয়া যায়৷ ”
—-
— আমি আর ইন্ডিয়ায় থাকতে চাই না৷ আপনি জলদি আমার পাসপোর্টের ব্যবস্থা করেন৷
রাত কিছু আর কিছু না বলে ফোন রেখে দেয়৷ রাত পিছনে ফিরতেই দেখতে পাই শুভ্র রাতের দিকে অসহায় ভাবে তাকিয়ে আছে। শুভ্রর চোখে জল স্পর্শভাবে বুঝা যাচ্ছে।
— রাত মনে মনে বলে উঠে, ” মি. শুভ্র চৌধুরী। আমাকে ইগনোর করা। এখন দেখবি এই রাত কি করতে পারে। আমি তোকে ছাড়বো না ঠিক কিন্তু তুই যেন আমায় আর ভুল বুঝতে না পারিস সেই ব্যবস্থা করে যাব৷
রাত শুভ্রকে পাশ কাটিয়ে চলে যেতে নিলেই শুভ্র রাতের হাত টান দিয়ে রাতকে সামনে নিয়ে আসে।
— কাঁদো কাঁদো স্বরে বলে উঠে, ” তুই দেশ ছেড়ে চলে যাবি মানে কি?”
— ভালো হয়েছে তুই আমার কথাগুলো শুনতে পেয়েছিস৷ আমি ভাবছিলাম তোকে কিভাবে কথাগুলো বলবো। দেখ সৃষ্টিকর্তা ঠিক পথ দেখিয়ে দেয়৷ তিনি কাউকে নিরাশ করেন না৷
— তুই কি বলতে চাইছিস? তোর কথার কোন আগা মাথা আমার জানা নেই৷ তুই ভালো করেই জানিস আমি ঘুরিয়ে ফিরিরে কথা বলতে পারি না৷
রাত কিছু না বলে শুভ্রর সামনে ডিভোর্স পেপার এগিয়ে দেয়৷ শুভ্র ডিভোর্স পেপার দেখে এক পা পিছিয়ে যায়৷ শুভ্র ভাবতেও পারেনি রাত এমন কাজ করবে।
— শুভ্র ভাঙা ভাঙা গলায় বলে উঠে, ” তুই আমাকে ডিভোর্স দিতে চাস! কেন তুই এমন করছিস? আমি ভাবছি আমি এই সম্পর্কটাকে এগিয়ে নিয়ে যাব৷ আর তুই ভাবছিস এই সম্পর্কটাকে গলা টিপে মেরে ফেলতে। কেন তুই আমার সাথে থাকতে চাস না? ”
— ওলে বাবা এতগুলো প্রশ্ন এক সাথে করলে উত্তর দিব কিভাবে? তুই বরণ প্রশ্ন গুলো একে করে কর? ”
— রাত আমি কিন্তু সিরিয়াসভাবে কথাগুলো বলেছি৷
— সবগুলো উত্তর আমি দিচ্ছি৷ আমি তোর সাথে মানিয়ে নিয়ে চলতে পারব না৷ তোর সাথে আমি মিসফিট৷ আমি তোর জন্য আমার স্বপ্নকে নষ্ট করতে পারব না৷ সেজন্য তোকে ডিভোর্স দিতে চাই৷
— বাট আমি তোকে ডিভোর্স দিব না৷
— তাতে আমার কিছু যায় আসে না৷ আমি ডিভোর্স পেপারে সাইন করে দিয়েছি৷ পারলে তুই সাইন করে অন্য কাউকে বিয়ে করে নিস৷
শুভ্র এক টানে ডিভোর্স পেপার ছিঁড়ে ফেলে৷
রাত মনে মনে বলে উঠে, ” আমি জানতাম তুই ডিভোর্স পেপার ছিড়ে ফেলবি৷ আরে গাধা ওইটা তো কোন ডিভোর্স পেপারই ছিল না৷ ওইটা আমি কম্পিউটার দোকান থেকে ওমনভাবে বানিয়ে এনেছি৷ ভালো করে তো তুই দেখবি৷ ”
— শুভ্র রাতকে দেয়ালের সাথে চেপে ধরে৷ রাতের চোখে জল এসে পড়ে, ” তুই কেন এমন করছিস৷ আমি তোর সাথে কি দোষ করেছি?”
— তুই কোন দোষ করিস নি শুভ্র। সব দোষ আমার৷ তুই তো বলেছি থ্রার্ড ক্লাস মেয়ের সাথে এক ঘরে থাকা যায় না৷ আমার মতো বাজে মেয়ে তোর জীবনটাকে তেজপাতা বানিয়ে দিয়েছে। আমার সাথে বিছানায় রাত কাটানো যায়৷ কিন্তু আমার সাথে সংসার করা যায় না৷
— এখন এসব কথা উঠছে কেন? আমি তোকে ভালোবাসি রাত৷ প্লিজ তুই আমাকে ছেড়ে কোথাও যাবি না৷
— ভালোবাসা মাই ফুট৷ ভালোবাসা কি তুই বুঝিস? আমিও তোর কাছে হাত জোর করে নিজের ভালোবাসা প্রকাশ করতে চেয়েছি৷ কিন্তু তুই কি করলি তুই আমাকে তাড়িয়ে দিলি৷ আজ আমি তোকে তাড়িয়ে দিচ্ছি৷
রাত শুভ্রকে ধাক্কা দিয়ে রুমে চলে আসে৷ শুভ্র রুমে এসে রাতের হাত ধরতেই রাত শুভ্রর গালে কষিয়ে দুইটা থাপ্পড় বসিয়ে দেয়।
— লজ্জা করে না মেয়ে মানুষের হাত ধরতে। মেয়ে মানুষের হাতে কি মধু আছে? আর মেয়েরা যারা খেলার সামগ্রি মনে করে তাদের লজ্জা আছে বলে আমার মনে হয় না৷
— প্লিজ রাত তুই আমাকে যা খুশি শাস্তি দে৷ আমি মাথা পেতে নিব৷ প্লিজ তুই আমাকে ছেড়ে যাবি না৷ প্লিজ তুই আমাকে বিশ্বাস কর আমি তোকে কোনদিন আর কষ্ট দিব না৷
— রাত উঁচু স্বরে বলে উঠে, ” তার কি গ্যারিন্টি আছে। আজ তুই আমাকে মিষ্টি মিষ্টি কথার মায়াজালে ফাঁসাতে চাইছিস৷ কাল তা ঠিক থাকবে তো।
— আমি তোকে কথা দিচ্ছি তোকে সারাজীবন বিশ্বাস করে যাব৷ আর কখনো ভুল বুঝবো না৷
— কে বলতে পারে তুই আমাকে ভবিষ্যতে ভুল বুঝবি না? আমার নিজের ভাইকে দেখে তুই আমাকে ভুল বুঝলি৷ ভবিষ্যতে যদি অন্য কোনো ছেলের সাথে আমাকে দেখিস তাহলে তুই কি বুঝবি আমার ভালো করে জানা আছে? আমি যদি বিদেশে চলে যায় তাহলে তোকে আর কিছু ভোগতে হবে না৷
শুভ্র আর রাতের কথাগুলো মেনে নিতে পারল না৷ শুভ্র রাতের কোমরে হাত দিয়ে রাতকে নিজের কাছে টেনে আনে৷ রাত শুভ্রর এমন কোমল স্পর্শ পেয়ে কেঁপে উঠে শুভ্রর শার্ট চেপে ধরে।
— শুভ্র কানের কাছে ফিসফিস করে বলে উঠে, ” তুই কি জানি বলছিলি? তুই আমাকে ডিভোর্স দিবি৷ ”
— রাত আমতা আমতা করে বলে উঠে, ” হুম তোকে আমি তোকে ডিভোর্স দিবই৷ ” তুই আমার কাছে আসবি না৷
— শুভ্র রাতকে আরও কাছে টেনে নিয়ে, ” তাহলে আমার কি হবে? আমি তোকে ভালোবাসি যে ভীষণ! ”
— আমি কিছু জানি না৷ তুই দূরে সরে যা৷
— শুভ্র রাতের কোমর চেপে ধরে রাতের গলায় মুখ লুকিয়ে নেশা কন্ঠে বলে উঠে, ” আমি তোকে কোথাও যেতে দিব না৷ তুই সারাজীবন আমার কাছে থাকবি৷ ” তোকে কোথাও যেতে দিব না৷
— আমি চলে যাবই৷ আমি তোর কাছে থাকতে চাই না৷ আমি ভালো করেই জানি তুই
রাত কিছু আর বলতে পারল না তার আগেই শুভ্র রাতের ঠোঁট জোড়া দখল করে নিল। রাত একটু নড়তেও পারছে না। রাত ফ্রিজের মতো দাঁড়িয়ে আছে৷
— ঠোঁট জোড়া ছেড়ে দিয়ে শুভ্র বলে উঠে, ” রাত তুই কি এখনো চলে যাবি?”
— রাত নেশার ঘোরে বলে উঠে, ” ভালোবাসার মানুষকে ছেড়ে কেউ চলে যেতে পারে৷ আমি তোকে ভালোবাসি। তোকে ছেড়ে কোনদিন চলে যাব না৷” তুই তো আমার “নেশা ভরা সন্ধ্যা “।
–শুভ্র রাতকে জড়িয়ে ধরে, ” আমিও তোকে খুব ভালোবাসি। তুইও আমার “নেশা ভরা সন্ধ্যা”.
— তাহলে তুই আামকে আর কোন সন্দেহ করবি না৷
— আমি তোকে আর কোন সন্দেহ করব না৷
রাতও শুভ্রকে ছড়িয়ে ধরে৷
— শুভ্র বলে উঠে, ” তোর আসলেই লজ্জা নেই৷ পাঠকরা ড্যাব ড্যাব করে তাকিয়ে আছে৷ তারা চলে যাক তার পর জড়িয়ে ধরবি তো।
— রাত চিমটি কেটে, ” তুই পাঠকদের সামনে আমাকে কিস করলি সেটা কিছু নয়৷ ”
— দাঁড়া দেখাচ্ছি মজা৷ (শুভ্র)
রাত দৌড়ে দিতেই শুভ্র রাতের হাত টান দিয়ে বিছানা পড়ে যায়৷
সমাপ্তি
ভুল ত্রুটিগুলো ক্ষমা করে দিবেন৷