পতিতা পল্লী ১ম পর্ব

0
4166

পতিতা পল্লী
১ম পর্ব

#বাসর রাতে নিজের স্বামীর জায়গায় যখন অন্য কেউ ধর্ষন করেছিল তখন বুঝেছিলাম কষ্ট কাকে বলে।আমার কথাটা শোনে হয়ত খুব অবাক লাগছে?কিন্তু এটাই হয়েছে আমার সাথে।সেদিন বুঝেছি যন্ত্রণা কাকে বলে।অসহায়ত্বের মাত্রা কতটা গুরুতর হলে মানুষ এমন পরিস্থিতিতে পড়ে ।

বাবা, মায়ের খুব আদরের সন্তান ছিলাম।বলতে গেলে সোনার চামচ নিয়ে জন্মেছি।কত ভালোবাসত আমার মা।সারাদিন আমাকে নিয়েই পড়ে থাকত।কিন্তু সে সুখ বেশিদিন জুটে নি আমার কপালে।৮ বছর বয়সে ক্যান্সারে আমার মা মারা যায়।সেদিন মাকে হারিয়ে আমি খুব কেঁদেছিলাম।প্রতিটা মুহুর্তে শুধু মাকে মিস করতাম।বাবাও মায়ের জন্য অনেক কষ্ট পেত।কিন্তু আমাকে বুঝতে দিত না।কিন্তু বাবা প্রায়সময় ব্যাবস্যার কাজে ব্যাস্ত থাকত।আমাকে তেমন দেখাশোনা করতে পারত না।তাই আত্নীয়স্বজন সবাই বলতে লাগল আরেকটা বিয়ে করার জন্য।কিন্তু বাবা, মাকে অনেক ভালোবাসত আর নতুন বউ যদি আমাকে মানতে না পেরে আমাকে কষ্ট দেয় এজন্য সহজে বিয়ে করতে রাজি হয় নি।কিন্তু সবার জোরাজোরি আর আমার কথায় বাবা ২য় বিয়ে করে।

সেদিন বাবাকে বলেছিলাম বাবা নতুন মা না এনে দিলে আমি আর তোমার সাথে কথা বলব না।ভেবেছিলাম তো আমার নতুন মা টাও আমার আগের মায়ের মত হবে।কে জানত আমার কপালটা এমন হবে।সেদিন সত্যিই বাবাকে নতুন মা আনতে বলে নি এখন মনে হচ্ছে সেদিন আমি বাবাকে খাল কেটে কুমির আনতে বলেছিলাম।

বাবা যখন নতুন বিয়ে করে বউ নিয়ে ঢুকে আমি উকিঝুকি মেরে নতুন মা কে দেখতেছিলাম আর খুব খুশি হয়েছিলাম।কয়েকটা দিন হয়ত নতুন মায়ের সাথে ভালো ছিলাম।কিন্তু পর কখনও আপন হয় না আর সৎ মা কখন ও আপন মা হয় না সেটা বুঝতে পারি কয়েকটা দিন পর।যে আমাকে আমার মা খাবার নিয়ে আমার পিছনে পিছনে দৌঁড়াত আর আমি বায়না করতাম এটা খাব না ঐ টা খাব না সে আমি আজকে ঠিক মত খেতে পারছি না।এখন মনে হয় লবন, মরিচের ভাত ও অনেক মজা।যে আমি সারাদিন বসে বসে পুতুল খেলে সময় পার করতাম সে আমি এখন অনেক কাজ করি তাও আমার নতুন মায়ের মন ভরে না।নানারকম কথার বেড়াজালে আটকা পড়ে গেছি।ইচ্ছা করলেও এ কথার বেড়াজাল থেকে বের হতে পারছি না।

দিনের পর দিন মানসিক আর শারিরীক যন্ত্রনা নিয়ে বেড়ে উঠেছি।আমার বাবাও বদলে গেছে।যে বাবা আমার সুখের কথা ভেবে বিয়ে করতে চায় নি।আজকে সে বাবায় নতুন মা কে পেয়ে আমাকে ভুলে গেছে।নতুন মায়ের কথায় উঠে আর বসে।মারধর করে।নতুন মায়ের কোলে নতুন যে মেয়ে হয়েছে বাবার কাছে এখন সে মেয়েই সব আর আমি তো এক পরগাছা।৮ বছর বয়সে মাকে হারিয়ে যতটা কষ্ট পেয়েছিলাম তার থেকে বেশি কষ্ট এখন প্রতি মুহুর্তে পাই।কষ্টটা আরও বেড়ে গিয়েছিল যখন আমার বাবা মাত্র ১৪ বছর বয়সে আমার বিয়ে ঠিক করে আমার থেকে ২৬ বছরের বড় এক মধ্যবয়স্কের সাথে।সেদিন একটু প্রতিবাদ করেছিলাম আর ফলশ্রূতিতে মাইর আর মানসিক যন্ত্রনাটাই পেলাম।

না সহ্য করতে পেরে।কোন উপায় না পেয়ে বিয়েতে রাজি হয়েছিলাম।ভেবেছিলাম বয়স বেশি দেখতে অসুন্দর তাতে কি হয়েছে খেতে পড়তে তো পাড়ব।সংসার কাকে বলে তখন বুঝতে পারে নি।সংসার বুঝে উঠার আগেই বাবা, আর নতুন মায়ের চাপে ১৪ বছর বয়সেই আমি বিয়েটা করে নিই।

বিয়ে করার পর যে সুখটা ছিল সেটাও চলে গেল।ঘরুয়া ভাবে চুপিচুপি লোকটার সাথে আমার বিয়ে হয়।আমাকে লোকটা গাড়ি করে তার বাড়ি নিয়ে যায়।যাওয়ার সময় লোকটার হাবভাব দেখে মনে হয়েছিল লোকটা নেশাখোর আর চরিত্রহীন।যখন লোকটার সাথে বাড়িতে গেলাম বুঝতে পারলাম লোকটা অনেক ধনী আর সম্পদশালী।আমাকে বাড়ির ভিতর ঢুকিয়ে শক্ত করে হাত ধরে রুমের ভিতর নিয়ে ধাক্কা দিয়ে ফেলল।আর ওনি একের পর এক মদের বোতল শেষ করতে থাকল।সব আশায় তখন নিরাশ হয়ে গেল।বুঝতে পারছিলাম আমার জীবনের সব সুখ উড়ে গেছে তা আর ফিরে আসবে না।

আরও যন্ত্রণায় কাতর হলাম তখন যখন খেয়াল করলাম রাতের বেলায় আমার স্বামীর পরিবর্তে অন্য একটা লোক আমার রুমে ঢুকে আমাকে ঝাপটে ধরে।ভয়ে জোরে চিৎকার করে উঠেছিলাম।পাশের রুম থেকে আমার স্বামী এসে বলল

—কি রে হারামজাদী এভাবে চিল্লাছিস কে?

আমি ওনার এ ভাষাটা শোনে অবাক হলাম।কিছুটা বিস্মিত হয়ে শান্ত স্বরে ওনাকে বললাম

—আপনি দেখেন এ লোকটা এসে আমার সাথে অসভ্যতা করছে।

—কর্কশ হাসি দিয়ে বলল হারামজাদী একে খুশি কর।না হয় তোর কপালে দুঃখ আছে।যা যা করতে বলে তাই কর।

ওনার কথাটা আমার বুকটা ভেদ করে কলিজায় লাগল।তবুও বললাম

—আপনি আমার স্বামী হয়ে এমন কথা বলতে লজ্জা লাগছে না?

—হাহাহা আমি তোর স্বামী কে বলেছে?আমি তোকে তোর বাপের কাছ থেকে কিনে আনছি।আশে পাশের লোক খারাপ বলবে তাই বিয়ের নাটক করেছি।তোর বাপ আমার কাছে তোকে বিক্রি করে দিছে।এখন আমি যা বলি তুই তাই করবি।ওনাকে খুশি কর।

এই বলে ওনি লোকটাকে ইশারা করে দরজা লাগিয়ে চলে গেল।আর লোকটা আমার উপর পশুর মত ঝাপিয়ে পড়ল।আমি বললাম

—আপনি আমার বাবার বয়সী এমন করবেন না।আপনার মা,বোন মেয়ে থাকলে কি এমন করতে পারতেন?আমাকে ছেড়ে দিন।পায়ে পড়ি আপনার।আমার ক্ষতি করবেন না প্লিজ।

কিন্তু তিনি এক পৈচাশিক হাসি দিয়ে আমাকে বলল এসব বলে লাভ নেই সুন্দরী আমাকে একটু খুশি করে দাও।এসব বলে আমার গায়ের উপর এসে আমাকে শক্ত করে ধরল।আর আমাকে খুবলে খুবলে খেল।সেদিন আমার চিৎকার শোনার মত কেউ ছিল না।মনে হয়েছিল এক হায়েনা আমার কাচা মাংস খুবলে খুবলে খাচ্ছে।ওনার খাওয়া শেষ হওয়ার পর আমার স্বামী আমাকে ঠিক একই ভাবে খুবলে খুবলে খেয়েছে।তারা ভুলেই গিয়েছিল আমি একটা মানুষ।আমার কষ্ট হচ্ছে।যন্ত্রনার চিৎকার যেন তাদের সুখটা আরও বাড়িয়ে দিয়েছিল।কাজশেষে আমাকে লাথি দিয়ে ফেলে অন্য রুমে চলে গেল।আমি যন্ত্রণায় ছটফট করতে লাগলাম।সারা শরীরে হায়েনাদের আঘাত করা ক্ষতগুলো ভেসে উঠল।সে সাথে তীব্র যন্ত্রণায় কাতরাতে লাগলাম।

বড় স্বপ্ন নিয়ে বিয়ে না করলেও একটু আশা নিয়ে বিয়েটা করেছিলাম।আজ সে আশাও ভেঙে গেল।জীবনে এতটা কষ্ট ও লিখা ছিল বুঝতে পারে নি।আজকে আমার জীবনের সব শেষ।সারা শরীরটাই সক্ষী দিচ্ছে আমি আজকে কতটা নিরুপায়,অসহায়।

সেদিন বুঝেছিলাম পুরুষ মানুষ কতটা খারাপ।কতটা জঘন্য হলে একজন বাবা তার মেয়েকে এমন লোকের কাছে বিক্রি করতে পারে।কত নিকৃষ্ট হলে একজন বাবার বয়সী লোক আমার মত ১৪ বছরের মেয়েকে এভাবে হায়েনার মত রক্তাক্ত করতে পারে।কতটা কষ্ট সেদিন হয়েছিল আমি জানি।

কষ্টের শেষটা যদি সেখানেই হত তাহলে তো ভালোই ছিল।কিন্তু পরদিন সকালে…..

লেখিকা-#শারমিন আঁচল নিপা।

(এ গল্পটাতে সমাজের কিছু বাস্তবতা তুলে ধরে লিখার চেষ্টা করেছি।আশা করি ভালো লাগবে)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here