পত্রপ্রেম
পর্ব_০৮
লেখনীতে:স্পর্ষীয়া ভূমি
হলুদ রংয়ের খাম।পাশের ফুলদানিটার পাশেই খামটা রাখা।রিক্ত ভ্রু কুচকে তাকিয়েই রুমের চারপাশে নজর দিল।রুমের কোথাও অদ্রি নেই।চোখজোড়ার দৃষ্টি সরু হয়ে উঠতেই বেলকনি থেকে মেয়েলি গলায় গান ভেসে উঠল,
আমারও পরাণও যাহা চায়,
তুমি তাই,
তুমি তাই গো,
আমারও পরাণও যাহা চায়…….
অদ্রির গলায় কখনও নিস্তব্ধ পানে গান শোনা হয় নি রিক্তের।তবুও অদ্রির কাছে গিয়ে গানটা শুনতে ইচ্ছে হলো নাহ।এই মুহুর্তে সকল অনুভূতি কেবল ঐ খামে।খামের ভেতর কাগজটা নিয়ে আরো বেশি উদ্দীপনা। চোখে মুখে অদ্ভুত এক আগ্রহের শিখা লেলিয়ে উঠছে।অদ্রির আসা কিংবা না আসার অপেক্ষা না করেই চিঠির খামটা ছিড়ে বের করে নিল চিঠিটা।সাদা পাতায় কালো কালিতে লেখা,
প্রিয় বরসাহেব,
দেখুন এতদিন বর বলে সম্বোধন করতে না পারলেও এখন কিন্তু পারব।কারণ এখন আপনি আমার।ঠিক না?ওহ হ্যাঁ চিঠি চেয়েছিলেন বলেই লিখছি।নয়তো আপনাকে এখন আর চিঠি দিতে মন চায় নাহ।আপনি দিয়েছেন নাকি কখনও চিঠি?দেন নি।
আচ্ছা সেসব বাদ।আপনার উপর প্রেমে পড়া নিয়ে ব্যাখ্যা করি তবে?তখন সবে ক্লাস টেইনের গন্ডি পেরিয়েছি।নাহ একেবারে পেরিয়েছিলাম তেমন নয়।সবে এসএসসি পরীক্ষা দিয়ে ঢাকায় ছুটি কাটাতে এসেছিলাম ফুপিদের বাসায়।তারপর একদিন হুট করেই আব্বু আসল।তার নাকি কোন বন্ধুর বাড়িতে যেতে হবে।তো নিয়ে নিল সাথে আমাকেও।বন্ধুর বাড়িটা মূলত আপনার চাচার বাড়ি ছিল।সেদিন হয়তো কোন বিশেষ অনুষ্ঠান ছিল আপনাদের।সকল আত্নীয় স্বজনই ছিলেন সেখানে। আমিও গিয়েছিলাম।কাউকে চিনতে না পেরে সোফার এক কোণায় বসে ছিলাম মুখ কালো করে।তারপর কি বুঝেই মনে হলো একটু পায়চারি করি।তাই উঠে একটু হাঁটব ভাবতেই ফ্লোরে পড়ে থাকা জুসে স্লিপ খেয়ে পড়েই গেলাম।ঠিক ঐ সময়টাতেই আপনি আমার সামনে হাজির হলেন।মুখে চোখে একগাধা রাগ হাজির করে।দাঁতে দাঁত চেপে বলে বসলেন,” এই মেয়ে হাঁটতে পারো নাহ?পড়ে গেলে কিভাবে?”আমি ড্যাবড্যাবিয়ে উপরে তাকিয়ে এমন কাউকে দেখব আশা করিনি।চোখজোড়া জ্বলন্ত রাগ দেখেই টুপ করে প্রেমে পড়ে গিয়েছিলাম।আশেপাশের কাউকে চিনতে না পেরে অস্থির মন নিয়ে এদিক ওদিক চোখ ঘুরালাম।অস্থিরতাটা বোধ হয় মুহুর্তেই আপনাকে দেখে চুপসে গেল।টগবগ করতে লাগল শরীরে বহমান রক্ত গুলো।তারপর থেকে আমার কিশোরী মনে আপনাকে নিয়ে ভাবনার সূচনা।সবসময় কেবল সেই চোখজোড়া, সেই চেহারাই কল্পনায় উঠে আসত।মাসখানেকের মধ্যে আমি দিশেহারা হয়ে উঠলাম।আমার আপনাকে লাগতই।নাহলে যেন দম বন্ধ হয়ে আসছিল।আপনাকে এই পৃথিবীতে আমি ছাড়া অন্য কেউ পাবে ভাবতেই রাগে থিতিয়ে উঠছিল শরীর।কে জানে তখন সেটা ভালোবাসা ছিল নাকি ভালোলাগা।আমার জানা নেই। তবে এটুকু বুঝেছিলাম পৃথিবীতে বাঁচতে হলে আমার আপনাকে লাগতই। আষ্ঠেপৃষ্ঠে জড়িয়ে থাকব এই আপনাতে এই ভাবনায় দিনরাত পাগল হয়ে উঠছিলাম।চট্টগ্রাম ফিরেই পাগলামোটা আরো বেড়ে গেল।ইনিয়ে বিনিয়ে বাবার কাছ থেকে আপনাদের ঠিকানাটা জেনে নিয়েছিলাম।তারপর থেকেই চিঠি দিতাম।কখনও দিন পনেরো পর কখনও বা সপ্তাহ কি মাস পর পর।আচ্ছা আপনিও কিন্তু তখন চাইলে আমায় চিঠি দিতে পারতেন।কি পারতেন না?তাহলে বারবার চিঠির আশায় আমার কিশোরী মনে হাজার কষ্ট,যন্ত্রনা চাপা হতো নাহ।কিন্তু আপনি চিঠি দেন নি।অদ্ভুত ভাবে কষ্ট দিয়েছিলেন। যে কষ্টে আমি তখন শিউরে মরতাম।হৃদয়ে অদ্ভুত যন্ত্রনায় ছটফটিয়ে মরতাম।সেই দুঃখগুলো কখন ও আমার চোখে বর্ষনের প্রকৃতি দেখায় নি তবে হৃদয়ে বইয়ে দিয়েছে যন্ত্রনা , কান্না, এক সাগর পরিমাণ দুঃখ।আমি কাঁদতাম নাহ কিন্তু আমার হৃদয় হাহাকার করত।একপাক্ষিক ভালোবাসায় সুখ আছে তবে অতোটাও সহজ নাহ। প্রতিনিয়ত দুঃখ যন্ত্রনায় ডুবে থেকে ও হাসতে হয়।ভুলতে হয়, ভোলাতে হয় নিজেকে।ঐ যে, ঐ মানুষটা আমার কাছে প্রিয় তার কাছে তো আমি প্রিয় নাহ এই কথাটা বলে।ঠিক এই কথাটা বলে নিজেকে শান্তনা দিয়ে একপাক্ষিক ভালোবাসাগুলো চেপে রাখতে হয়। বুঝলেন?আমি হয়তো অতোটাও চাপা স্বভাবের মেয়ে নাহ তাইতো কাগজ কলম নিয়ে বসে পড়েছিলাম চিঠি লিখতে।তবে? জেনে গেলেন তো কিভাবে আপনার প্রেমে পড়েছিলাম?
শুনুন, শরৎ এর নীল আকাশ দেখায়, বর্ষার বর্ষনে ভিজিয়ে নেওয়ায়, শীতের কুয়াশা আপসা দৃষ্টিতে, গ্রীষ্মের ভ্যাপসা গরমে, হেমন্তে সবুজ ফসলের মাঠে কিংবা বসন্তের ফুল সমরোহ পরিবেশে আমি কেবল আপনাকে চাই।আপনার মধ্যে এটুকু জায়গা হবে আমাকে দেওয়ার?যে জায়গাটুকু সম্পূর্ণ আমার।ঐটুকুতে কেবল আমার রাজত্ব থাকবে।আমি আপনার সবটুকু চাই নাহ। একটু খানি জায়গা দিলেই হবে।সেখানে একটা ছোট্ট ঘর থাকবে।ঘরটায় আমি ধীরে ধীরে নিজের করে সাজিয়ে নিব।দিবেন সেই অধিকার?ভালোবাসি।ভালোবাসি আমার হৃদয়ে এটুকু এটুকু করে গড়ে তোলা অনিভূতি গুলোর মধ্যমানুষটাকে।
ইতি,
জানেন তো কে..
রিক্ত হাসল।চিঠিটা ছেড়া খামের ভেতর ঠিক সেভাবেই রেখে পেছন ফিরল।অদ্রির গলার গানটা থেমে গিয়েছে।দৃষ্টি আকাশের রংয়ে ছোট ছোট উজ্জ্বল তারাগুলোয় স্থির।বড়সড় একটা চাঁদও উঠেছে আকাশে।চারদিকে আলো ছড়িয়ে সে যেন খিলখিলিয়ে হেসে উঠছে আর তারাদের দিকে ফিরে ফিরে চাইছে।আধো কি চাঁদ এমন করবে?অদ্রি হাসল।নিজের মনের ভাবনাটাকে অতি হাস্যকর ভেবেই আবারও তাকাল আকাশে।ঠিক তখনই কেউ একজন অতি সাবধানে তার পেছনে এসে দাঁড়িয়েছে।মুখটা তার কাঁধে রেখেই হাতজোড়া দিয়ে জড়িয়ে নিল তাকে।অদ্রি প্রথম দফায় কেঁপে উঠলেও পরে স্বাভাবিক হয়েই ঘাড় বাকিয়ে হেসে বলল,
‘ আপনি এখানে কেন?আমাকে জড়িয়ে ধরলেনই বা কেন? আজব!ছাড়ুন বলছি।’
রিক্ত হেসে উঠল।অদ্রিকে না ছেড়ে শাড়ির আঁচলের তলায় হাতজোড়া দিয়ে চেপে ধরল অদ্রির পেট।অদ্রির কানের কাছে মুখ নিয়েই বলে উঠল,
‘ শোনো অপরিচিতা কন্যা, তুমি আমার, শুধু আমার।তোমায় জড়িয়ে ধরতে পার্মিশন লাগবে আমার?’
‘ কে বলল আমি আপনার?’
রিক্ত বাঁকা হেসে বলল,
‘ কেউ বলা লাগবে নাকি?বিশ্বাস হচ্ছে নাহ?’
‘ নাহ তো।’
‘ওহ। তবে প্রমাণ দিব? ‘
অদ্রি চুপ থাকল।কোন কথা খুঁজে না পেয়ে স্থির দাঁড়িয়ে রইল।কিছু সময় পরই আবার বলে উঠল,
‘ আচ্ছা আপনি কি করে জানলেন চিঠির মেয়েটা আমি?কি করে?’
‘ উহ!না বললে?’
‘ বলুন বলছি।নাহলে আপনার সাথে কথা বলব নাহ।’
রিক্ত মুখটা অদ্রির কাঁধে রেখে বলল,
‘ ওহ, তবে তো বলতেই হয়।আপনার টেবিলের ড্রয়ারে বেশ কিছু মুছড়ে যাওয়া কাগজ দেখেছিলাম।কৌতুহলবশত একটা কাগজ ভালো করে মেলে ধরে দেখি চিঠি।ঠিক অপরিচিতা যেভাবে লিখত তেমনই লেখা।চিঠির লেখাগুলো কলমের কালি দিয়ে কাঁটা হলেও অনেকগুলো লেখাই বুঝা যাচ্ছিল। ঐ যে আপনি বলেছিলেন পরবর্তীতে চিঠি পাঠানোর জন্য চিঠি লিখলেও ছিড়ে ফেলতেন হয়তো সেগুলোই হবে।ছিড়ে ফেলেছেন কিছু কিছু মুঁছড়ে রেখেছেন।তারপর আপনার বোনকে যখন জিজ্ঞেস করলাম ড্রয়ারে কাগজগুলোর এমন বেহাল দশা করে কে রেখেছে সে বলল আপনিই।তারপর যখন জিজ্ঞেস করলাম লেখাগুলো কার সে সোজাসুজি বলে দিল আপনার।তো তাহলে কি দাঁড়াল?’
‘ এমনও তো হতে পারত চিঠি গুলো আমাকে দিয়ে লিখিয়ে আপনার অপরিচিতা আপনাকে পাঠাত?কিন্তু অপরিচিতা আমি নই?’
‘ প্রথমত ঐ বিষয়টা একদমই হবে নাহ।কারণ কেউ নিজের মনের অনুভূতি গুলো নিশ্চয় অন্যকে বলে সাজিয়ে লিখবে নাহ!তাই না?দ্বিতীয়ত আপনার শেষ চিঠিটা।যেটা বিয়ের পরে আমার কাছে এসেছিল।সেটাতে অপরিচিতার এটুকুও কষ্ট হয় নি আমার বিয়ের খবর পেয়ে।আবার সে এটাও বলেছিল যে সে সিদ্ধান্ত নিয়ে নিয়েছে আমার আশেপাশেই থাকবে এবার থেকে।ড্যাবড্যাবিয়ে তাকিয়ে থাকবে। আমি যেন তাকে নিষেধ না করি।ঠিক সেভাবে আপনিও আমার দিকে তাকিয়ে থাকতেন।সো সে আপনিই ছিলেন এটা বুঝতে আমার দেরি হওয়ার কথা নাহ।’
অদ্রি মৃদু হাসল।রিক্ত হাসিটা দেখল কিনা কে জানে।কানের কাছে মৃদু স্বরে বলে উঠল,
‘ ভালোবাসি।আমায় ভালোবাসার সবটুকু অধিকার তোমার। নিয়ে নিবে সেই অধিকার?ছোট্টঘর টা বুনে দেবে আমার হৃদয়ে?যে ঘরে তোমার বিচরণে মোহিত হবো আমি। অনিভূতিতে অনুভূতিতে ভেসে যাব আমি।কি নিবে তো সেই অধিকার?’
_________
সময়ের পাতা তখন বছর চার পর। রিয়া ব্যস্ত হয়ে হন্তদন্ত হয়ে বেরিয়ে এল বাসা থেকে। আজ নিষাণের জম্মদিন।কে জানে আজ সে বাসায় ফিরবে কিনা জম্মদিনে কিছু সময় কাঁটাতে।গত বছর তো এসেছিল।কিন্তু দুর্ভাগ্যক্রমে রিয়া জানতেই পারে নি নিষাণ বাসায় এসেছিল। তাই তো আর দেখা হলো নাহ।গত চারবছরে যেমন একবারও দেখা হয় নি ঠিক সেভাবেই দেখা না হওয়ার মতো রয়ে গেল দুজনে।কি অদ্ভুত!যে বন্ধুটা তার এত কাছের ছিল তার সাথে এখন আর দেখা হয় নাহ, কথা হয় নাহ।সম্পর্ক গুলো কেমন পাল্টে যায়, মানুষগুলো কেমন বদলে যায়।রিয়া টলমলে চোখে অন্ধকার রাস্তায় তাকাল।নিষাণকে সে ভালোবাসে। আজ সেটা সে জানলেও বলার মানুষটা তার কাছে নেই।রাত বারোটায় এভাবে বাসা থেকে বেরিয়ে আসা কি আধো ঠিক হয়েছে।নিষাণদের বাসার গেটটা খোলা নাও তো থাকতে পারে এই সময়ে।রিয়া ড্যাবড্যাব করে উপরে তাকিয়ে ছোট নিঃশ্বাস ফেলল।অদ্রি ভারী শরীর এর ক্লান্তি নিয়ে হয়তো ঘুমিয়ে গিয়েছে।দক্ষিণের ঘরে এখন আর তার বাবা থাকে নাহ।সেই বছর তিন আগে সবাইকে ছেড়ে ওপারে চলে গেল কি অদ্ভুতভাবে।রিক্ত ও হয়তো কাজে ব্যস্ত কিংবা ঘুমে।এভাবে ভাই ভাবিকে না জানিয়ে এত রাতে বাইরে আসাটা কি ঠিক হয়েছে?কে জানে।তবুও মন বলছে নিষাণ যদি আসে?একটু অপেক্ষা করতে ক্ষতি কি?দু পা বাড়িয়ে নিষাণদের গেটের সামনে দাঁড়িয়েই চকচক করে উঠল রিয়ার চোখ।গেইট খোলা এত রাতে?দারোয়ানের দিকে তাকিয়েই জিজ্ঞেস করে বসল তৎক্ষনাৎ,
‘ ভাইয়া এতরাতেও গেইট খোলা রাখলেন যে?কেউ আসবে নাকি?’
‘ নিষাণ ভাই আসব তো তাই আপা।আপনি এতরাতে বাইরে যে?বাইর হইছিলেন নাকি আপনারা? অবশ্য রিক্ত ভাইয়ের বউয়ের তো এই সময় এতক্ষনে বাইর হওয়ার কথা নাহ।’
রিয়া কথাগুলোর পিঠে বলে উঠল,
‘ নিষাণ?ও বলেছিল আসতে।ওর বার্থডে না আজ?তাই।’
‘ ওহ আচ্ছা। তা ভেতরে যান।সবাই এখনও জেগেই আছে।’
রিয়া মৃদু হেসে বলল,
‘ না, ঠিক আছে। আমি নিষাণের সাথে কথা বলে চলে যাব।’
‘ আচ্ছা আপা।আপনি বরং ওখানে টুলে বসেন তাইলে।’
‘ হু রুবেল ভাই।থেংক্স।’
রিয়া গুটি গুটি পায়ে গিয়ে বসে পড়ল টুলটায়। পরনের কালো রংয়ের টিশার্ট আর স্কার্ট।ওড়নাটা দিয়ে মাথা ডেকে রাস্তার দিকে একপাণে তাকিয়ে থাকল।তার কিছু সময় পরই একটা ছেলেকে চোখে পড়ল অন্ধকার রাস্তায় সোড়িয়ামের আলোয়।কোকড়া চুলওয়ালা মুখটা দেখেই অদ্ভুত লজ্জ্বায় মুখ নুইয়ে ফেলল রিয়া।নিষাণের জন্য সাজানো কতশত কথা মুহুর্তেই গুলিয়ে গেল।কি বলবে এখন?যদি জিজ্ঞেস করে কেন এখানে?তবে?হাত পায়ে অদ্ভুত কম্পন ততক্ষনে আরম্ভ হয়ে গিয়েছে। নিঃশ্বাস ঘন হতেই উঠে দাঁড়াল সে।নিষাণ তখন একেবারে সামনে।তাকে দেখে চিনল কিনা কে জানে? চারবছর পর কি ভুলে যাবে রিয়াকে সে?রিয়া কাঁপা গলায় বলে উঠল,
‘ ন ন নি নিষান,’
নিষাণ ঘাড় বাকিয়ে তাকাল।চোখেমুখে রিয়াকে না চেনার ভান ধরেই বলে উঠল,
‘ কে?’
রিয়ার চোখজোড়া এবার টলমলিয়ে উঠল।চেনা মুখ, চেনা মানুষের কাছে কি তবে আজ সে অচেনা? এতবছরের সম্পর্ক চার বছরে ভুলে গেল সব?নিষাণের পেছনে তাকাতেই রিক্সা থেকে নামতে দেখল এক সুন্দরী রমণীকে।লম্বা চুল, ফর্সা শরীরে লাল রাঙ্গা শাড়ি।মুহুর্তেই রিয়া শক্ত হয়ে গেল।টলমলে চাহনি টা এবার দৃঢ় হলো।নিষাণ কেন তাকে ভুলে বসেছে তা আর বুঝতে বাকি রইল নাহ।নিষাণের দিকে তাকিয়েই মৃদু গলায় বলে উঠল,
‘ আরেহ আমি রিয়া।চিনতে পারলি নাহ?হা হা হা.. না চেনারই কথা।যাক শুভ জম্মদিন দোস্ত।বাসায় গরম লাগছিল তাই ভাবলাম বাগানে এসে বাতাস খাব।কিভাবে যে হেঁটে হেঁটে তোদের বাসা পর্যন্ত চলে এলাম কে জানে।তারপর রুবেল ভাইয়ের কাছে শুনলাম আজ নাকি তোর জম্মদিন। তাই উইশ করে যাব ভাবলাম।ওকে বাই। ‘
নিষাণ হাসল।রিয়া দু পা বাড়িয়েই সামনের মেয়েটিকে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখতে লাগল।সত্যিই দেখতে সুন্দরী মেয়েটি।নিষাণের সাথে দারুণ মানায়। লাল রাঙ্গা শাড়ীতে অপ্সরীর মতো বোধ হলো মুহুর্তেই।সেই সঙ্গে চোখে জড়ো হলো টলমলে পানি।যে ছেলেটা তাকে ভালোবাসি বলে তার থেকে দূরে গিয়েছিল আজ সে ছেলেটা তাকে ভুলে বসেছে। ছেলেরা যে সোন্দর্যে ভোলে তা আজ পরিষ্কার।সুন্দরী মেয়ের কাছে অতীতে ফেলে আসা ভালোবাসাটার মূল্য আর কতটুকুই হবে।রিয়ার একনজরে তাকিয়ে থাকার মাঝেই নিষাণ বলে উঠল,
‘ রুবেল ভাই তো জানত না আজ আমার জম্মদিন! তাহলে তোমায় বলল কিভাবে রিয়া ?’
রিয়া অদ্ভুত দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল,
‘ তুমি?’
নিষাণ হাসল। তারপর বলল,
‘ ওহ আগে তুই বলতাম?ভুলে গিয়েছিলাম।’
‘ সেটাই।ভুলে যাওয়াটাই তো স্বাভাবিক।আসি রে।’
‘ এত যাওয়ার তাড়া থাকলে এতক্ষন অপেক্ষা করলি কেন?’
রিয়া তাচ্ছিল্যের হাসি হেসেই বলল,
‘ ঐ যে? উইশ করব ভাবলাম তাই। ভালো থাকিস।’
চলবে…