পত্রপ্রেম
শেষ_পর্ব
লেখনীতে: স্পর্ষীয়া ভূমি
‘ ঐ যে? উইশ করব ভাবলাম তাই। ভালো থাকিস।’
কথাটা বলেই রিয়া পথ বাড়াল। পেছন ফেরার ইচ্ছা হলো না তার।চোখজোড়া দিয়ে বইল তৎক্ষনাৎ টলমলে নোনতা পানি।যে মানুষটাকে নিয়ে এত অনুভূতি এসে ভীড় করল হৃদয়ে সে মানুষটা আজ তাকে চিনতেই পারল না।ভালো না হয় নাই বাসুক অন্তত বন্ধুত্ব মনে করে কি মনে রাখতে পারত নাহ তাকে?কেন মনে রাখল না তাকে নিষাণ?কেন ভুলে গেল? রিয়া দূর আকাশে চাইল।রাস্তা তখন একেবারে নিস্তব্ধ।নিস্তব্ধ রাস্তায় হুট করেই যদি রাতের আঁধারে হারিয়ে যেতে পারত রিয়া কোন ক্ষতি হতো কি?কেউ কি বিষন্ন মন নিয়ে তার জন্য এখানে এসে অপেক্ষা করত?তাকে খুঁজত?তাকে মনে করে কি কাঁটিয়ে দিত সহস্র রাত?কে জানে!কেই বা করত? নিষাণ?নিজের কল্পনায় প্রশ্নটার উদ্ভব ঘটতেই চমকে উঠল রিয়া।নিষান?সে তো আজ অন্য কারোতে মুগ্ধ।রিয়া নামক মেয়েটিকে নিয়ে ভাবার সময় আছে কি আধো তার?নিশ্চিত নেই।সেই জায়গায় তার এই কল্পনা মানায় নাহ।এই প্রশ্নটাতো আর ও মানায় নাহ।রিয়া নিঃশব্দে কাঁদল। রাস্তার ল্যাম্পপোস্টের আলোতে তখন পেছন থেকে একটা ছায়া ভেসে উঠল রিয়ার সামনে।ছায়াটা হয়তো অনেক্ষন এভাবে স্থির। হয়তো রিয়া টের পায়নি।আচমকা পেছনের ছায়টাকে দেখেই ভয়ে কুঁকড়ে উঠল হৃদয়।ঘাড় ঘুরিয়ে পেছন ঘুরতেই পেছনের মানুষটির বিমুগ্ধ চাহনি চোখে পড়ল কেবল।হাতজোড়া বুকে ভাজ করে ঠিক আগের মতোই তাকিয়ে আছে সে।রিয়া বিভ্রান্ত চাহনিতে তাকিয়ে বলল,
‘ ত তুই?আমার সাথে আসলি নাকি? ‘
নিষাণ হাসল। মাথার কোকড়ানো চুলগুলো ঝাকিয়ে বলে উঠল,
‘ কাঁদছিলি?’
রিয়া সঙ্গে সঙ্গে টের পেল তার চোখ ভেজা। ছায়া দেখে আতঙ্কে চোখের পানি মুঁছতেই ভুলে গিয়েছে সে। ছিঃ!নিষাণ কি ভাবল?একজনের আপন মানুষকে সে মন দিয়ে ফেলেছে এটা জানার পর কি ভাববে? ছিঃ!নিষাণ নিশ্চয় তাকে খুব নিচু মানসিকতার মেয়ে ভাববে।রিয়াকে ভাবনায় বিভোর থাকতে দেখেই নিষাণ আবার ও বলে উঠল,
‘ এতকাল হলো, এখনো বিয়ে করে সংসার করলি নাহ?’
রিয়া তাচ্ছিল্যের হাসি হাসল।
‘ সবকিছু কি ঐ বিয়ে সংসার পর্যন্তই নাকি রে?পৃথিবীতে কেউ আছে একের পর এক মানুষকে ভালোবেসে যায় আর কেউ আছে কেবল একজনকেই ভালোবাসে।একজনকে না পেলে অন্যজনকে ভালোবাসতে পারা মানুষগুলোর কাছে সুখ, সংসার এগুলো খুব সহজ বুঝলি?তারা নিশ্চুপেই একজন থেকে অন্যজনের প্রেমে পড়ে যায়।অদ্ভুত!’
নিষাণ হু হা করে হেসে উঠল।পকেটে দুই হাত ডুকিয়ে সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে বলল,
‘ ওয়াও!তুই তো খুব বড় হয়ে গেলি রে। মাথায় এত জ্ঞান!এক কাজ করা যায় বুঝলি?তোরা জ্ঞান গুলো রাস্তা ছুটে চলা গাড়ি গুলোয় করে কোথাও পাঠিয়ে দিলে কেমন হয়?’
রিয়া গম্ভীর চাহনিতে তাকিয়ে বলল,
‘ একটু আগে চিনতেই পারছিলি নাহ এখন আবার বড় হওয়ার কথা বলছিস। অদ্ভুত!তুই যে তোর বার্থডে তে তোর প্রিয় মানুষকে সময় না দিয়ে এখানে আসলি।রাগ করবে না তোর প্রিয় মানুষ?’
নিষাণ ভালোভাবে তাকাল রিয়ার দিকে।মুখে হাসি রেখে বলে উঠল,
‘ সুন্দর নাহ?তোর থেকে হাজারগুণ সুন্দরী কিন্তু।’
‘ আমি কি কোনদিন বলেছিলাম নাকি আমি সুন্দরী?’
‘ রেগে যাচ্ছিস কেন?আচ্ছা ধর সুন্দরী মেয়েটার পরিচয় এই মুহুর্তে তোর কাছে যেটা সেটা মিথ্যে।তখন?তখন কি কিছু করবি তুই?’
রিয়া কিছুটা সময় চুপ থাকল।তারপর ব্যস্ততা দেখিয়েই বলে উঠল,
‘ আমাকে যেতে হবে।বাই।’
‘ বাসায় ই তো যাবি।থাক নাহ।কিছুক্ষন। সমস্যা কি?’
রিয়া চোখে চকচকে দৃষ্টি নিয়ে তাকাল।চোখ মুখ অবাক করে বলে উঠল,
‘ তুই হঠাৎ আমাকে নিয়ে এত সিরিয়াস হতে যাচ্ছিস কেন?আমি থাকি বা না থাকি তোর কি?বাসায় যা।তার সাথে সময় কাঁটা।ভালো লাগবে।এন্ড থেংক্স!আমার নিরাপত্তার জন্য এতটুকু আমার সাথে আসার জন্য।’
রিয়া পা জোড়া এগিয়ে নিতে নিলেই নিষাণ চেপে ধরল তার হাত। একটানে নিজের কাছাকাছি এনে গম্ভীর কন্ঠে বলে উঠল,
‘ সোজা কথা কি সোজাভাবে বলা যায় না?এত রাগ দেখাচ্ছিস কার সাথে?আমি বারবার তোর সামনে গিয়ে ভালোবাসি বলেছি।তুই কখনো পাত্তা দিয়েছিস আমায়?তুই কখনো বলেছিস ভালোবাসি?সবসময় আমাকেই কেন বলতে হবে? সোজাসুজি ভালোবাসিস কথাটা কি আমায় একবার বলতে পারতি নাহ?’
রিয়া হতবাক চেয়ে রইল।নিষাণের হঠাৎ রাগের কারণ বুঝে উঠলেও মাথায় কিছুই ডুকল নাহ।নিষাণের দিকে স্থির তাকিয়ে মদু কন্ঠে বলল,
‘ হাত ছাড় নিষাণ, ব্যাথা লাগছে।’
নিষাণ হাত ছাড়ল না।রিয়ার হাতটা আরেক টান দিয়ে কয়েক ইঞ্চি দূরত্ব রেখেই বলল,
‘ কি ভাবিস আমায়?হাজার মানুষকে ভালোবাসতে পারা মানুষ?একজনকে না পেয়ে দুই সেকেন্ডে অন্য একজনকে মন দিয়ে দেওয়া মানুষ?এতোটা লেইম ভাবিস?’
রিয়া জ্বলন্ত চাহনি নিয়ে বলল,
‘ ভাবাভাবির তো কিছু নেই নিষাণ।যা চোখের সামনে তাকে কি মিথ্যে বলব আমি?চারবছর যথেষ্ট সময়।একজনকে ভুলে অন্য একজনকে মন দিয়েই দিতে পারিস।অস্বাভাবিক কিছু নাহ।’
নিষাণ রাগে হাসফাস করে উঠল।রি রি করে উঠল শরীরের শিরা উপশিরা। রিয়ার দিকে তাকিয়ে হুট করেই হাতটা ছেড়ে দিল।চাপা কন্ঠে বলল,
‘ ও আমার কাজিন রিয়া।আন্টিরা গাড়িতেই আসছে।এসেও পড়বে হয়তো এক্ষুনি।আন্টিই বলেছিল ওকে আমার সাথে আনতে। তাই।এছাড়া কিছু নাহ।চারবছর আগেও নিতুকে নিয়ে এমনটাই ভেবেছিলি।নিতুর সাথে আমার কোন সম্পর্ক ছিল না রিয়া।নিতু আমায় পছন্দ করত।আমি নাহ।তুই বিষয়টাকে শুরু থেকেই প্রেম হিসেবে নিয়ে নিয়েছিলি তাই আমিও চালাতে লাগলাম সেই নাটকের দৃশ্যপট।কেন এত বেশি বুঝিস?একটু তো বুঝতে পারতি আমায়।তুই কোনকালেই আমায় বুঝিসনি রিয়া।বুঝার চেষ্টাই চালাস নি।যে মানুষটা নির্দ্বিধায় তোকে ভালোবাসি বলছে সে নিশ্চয় তোর সাথে মজা করছে না। তাই না?কিন্তু তুই বুঝলি নাহ।আমাকে বুঝলিই না কোনদিন।কেন?’
রিয়া চমকে তাকাল।নিষাণের রাগ, ক্ষোভ নাকি কষ্ট এগুলো?কে জানে।কিছুক্ষন চুপ থেকেই হঠাৎ রিয়া জড়িয়ে ধরল কোকড়া চুলওয়ালা মানবটাকে। খুশিতে আত্নহারা হয়ে জড়িয়ে রেখেই বলে উঠল,
‘ ভালোবাসি।আমিও তোকে ভালোবাসি।থেংক্স রে কাউকে মন না দেওয়ার জন্য।আমি বোধ হয় সেখানেই মরে যেতাম।নিজের বাকি জীবনটা আসলে কাঁটাতে পারতাম কিনা জানি নাহ।তোর জন্য নাহ, আমি আমার জন্য তোকে ভালোবাসি।আমার বেঁচে থাকার জন্য তোকে ভালোবাসি।আমার নিঃশ্বাস নেওয়ার সুযোগটা থাকার জন্য কেবল এবং কেবল তোকে ভালোবাসতে চাই।দিবি সুযোগ?বাসবি ভালো?বলবি আগের মতো ভালোবাসি?প্লিজ!’
নিষাণ বোকা বনে গেল।যে মেয়েটা একটু আগেও কিছু বলে নি সেই মেয়েটাই হঠাৎ এভাবে জড়িয়ে ধরল!আষ্ঠেপৃষ্ঠে শক্ত করে এমনভাবে জড়িয়ে রেখেছে যেন তাকে যেতেই দিবে নাহ।কত নিঃসংকোচে জড়িয়ে রেখেছে।রিয়ার দিকে একপলকে তাকিয়ে কথাগুলো ভাবার মাঝেই রিয়া ঠোঁট উল্টিয়ে বলে উঠল আবার,
‘ আমার সাথে যোগাযোগ রাখলি নাহ যে?কেন?কতগুলো দিন তোর সাথে দেখা হলো নাহ, কথা হলো নাহ।আমি কত কান্না করেছি।তুই এত খারাপ! এত খারাপ!কেন?’
নিষাণ হাসল।
‘ ভার্সিটি চেঞ্জ করে চলে গিয়েছিলাম যেদিন শুনলাম তোর আর সাফাদ ভাইয়ের বিয়ের কথা চলছে।অদ্ভুত কারণে তোর সাথে যোগাযোগ রাখার ইচ্ছেও হলো নাহ আমার।জম্মাল প্রচুর ঘৃণা,অভিযোগ, অভিমান।শত সহস্র কষ্ট নিয়ে আমি তোর থেকে চিরতরে আলাদা হতে চেয়েছিলাম।পারলাম কোথায়?বছরখানেক পর শুনলাম তোদের বিয়ের কথা চলছিল কিন্তু বিয়ে হয় নি।তুই আর সাফাদ ভাই একে অপরকে ভালোবাসতি এটা নিতান্তই আমার ভুল ধারণা।সেদিন চাইলে হয়তো আমি তোর সাথে দেখা করতাম, কথা বলতাম।কিন্তু ঐ যে অভিমান, অভিযোগ ওসব কি হার মানে এত সহজে?মন বিশ্বাস করছিল নাহ তুই আমায় ভালোবাসতে পারিস। ভালোবাসলে নিশ্চয় আমায় খুঁজে আমার সামনে চলে আসতি।’
‘ সে পথ রেখেছিলি কি?অন্য শহরে পা রেখেই তো আমায় চিরতরে ভুলে বসেছিলি।সবাইকে জিজ্ঞেস করার পরও আমি জানতে পারিনি তুই কোথায় থাকিস।কোন রকম যোগাযোগের পথও তো রাখিস নি।’
‘ হু!তারপর ঠিক করলাম একেবারে তোকে যখন নিজের করার যোগ্য হবো তখনই তোর সামনে যাব।তুই ভালো না বাসলেও জোর করে নিজের করে নিব।আমি তোকে ছাড়া থাকতে পারতাম নাহ।এর থেকে ভালো কোন উপায় তখন মাথায় আসে নি।’
রিয়া ফ্যালফ্যাল চোখে তাকিয়ে বলল,
‘ তুই অনেক খারাপ!অনেক!’
নিষাণ হাসল।আস্তে করেই কানে ফিসফিসিয়ে বলল,
‘ ভালোবাসি। যা এবার ছাড়।দম বন্ধ হয়ে আসছে আমার।তোর মতো মেয়ে এভাবে জড়িয়ে রাখলে দুই মিনিটে মৃত্যু নিশ্চিত আমার।তাছাড়া বেলকনিতে দেখ দুইজোড়া চোখ কেমন চেয়ে আছে।তুই সেই দৃষ্টির সম্মুখীন হলে লজ্জ্বায় মরে যাবি নিশ্চিত।’
রিয়া সঙ্গে সঙ্গেই নিষাণকে ছেড়ে দিল।চারদিকে চোখ ঘুরাতেই বেলকনির হালকা আলোয় দেখা গেল দুইজন মানুষকে।
______
রিয়া তখন বাসায় এসে নিজের রুমে গিয়ে দরজা লাগিয়েছে।অদ্রি ড্রয়িং রুমে এসে রিয়ার লজ্জ্বামাখা মুখ দেখে ফিক করে হাসল।অগোছাল চুল গুলো এক হাতে পেছনে ঠেলে হাত খোপা করতেই পেছন পেছন রিক্ত আসল। চোখে মুখে তুমুল বিরক্তি নিয়ে বলে উঠল,
‘ মিসেস অপরিচিতা, আপনাকে কয়বার বলা লাগবে চুলগুলো ছেড়ে দেওয়া থাক।আপনাকে খোলা অগোছাল চুলেই আমার বেশ লাগে।’
অদ্রি ঘাড় ঘুরিয়ে তাকিয়ে বলল,
‘ মানে?আপনার জন্য কি সবসময় আমি চুল খোলা রাখব নাকি?আজব কথাবার্তা বলছেন তো।এই গরমে আমি খোলা চুলে থাকব?আপনি জানেন এই সময়ে কতটা গরম অনুভব হয়?’
রিক্ত অদ্রিকে এক হাতে জড়িয়ে নিয়েই বলে উঠল,
‘ জানি তো।তাই তো বললাম বেলকনিতে গিয়ে বসুন।ভালো লাগবে।আমি ফ্লোরে গুটিশুটি হয়ে আপনার কোলে শুঁয়ে আমার বেবির সাথে কথা সারব।আপনি দিলেন কোথায়?’
‘ উহ!আপনার এই বাজে বুদ্ধির জন্যই রিয়া আর নিষাণের জমালো প্রেমে হাড্ডি হয়ে গেলাম আমি।আমি বেলকনিতে যেতামই নাহ যদি না আপনি বলতেন। ইশ!রিয়া কি লজ্জ্বাটাই না পেল। ‘
রিক্ত হাসল,
‘ ওদের প্রেম সম্বন্ধে আরো বহুকাল আগে থেকেই ধারণা ছিল।একটু থেকে একটু হলেই রাগ অভিমানের মেলা বসত।জানতাম শেষ পর্যন্ত এমন কিছুই হবে।নিষাণ আমায় আগেই বলেছিল ও রিয়াকে ভালোবাসে। শুধু রিয়ার বিষয়টাতে একটু কনফিউশান ছিল।এখন শিউর।’
‘ কি শিউর?’
‘ ওসব আপনার মাথায় ডুকবে নাহ। বুঝলেন? এক বাচ্চার মা হয়ে যাচ্ছেন এখনো মাথায় বুদ্ধি সঞ্চয় করতে পারলেন নাহ আপনি।’
অদ্রি মুখ ফুলিয়ে তাকাল।ফর্সা ধবধবে শরীরের রংয়ে আরো উজ্জ্বলতা মিশেছে।আলুথালু শরীরে ভরা পেট।শাড়ির নিচে পেটটা ফুলো দেখাচ্ছে।গোল ফর্সা মুখটা দেখতে টমেটোর মতো লাগছে।রিক্ত একনজর তাকিয়েই নিচের ঠোঁটে কামড় বসিয়ে বলল,
‘ কি ব্যাপার বলো তো অপরিচিতা?ইদানিং একটু বেশি বেশি সুন্দর দেখায় তোমায়।নাকি আমার চোখের ভুল?’
অদ্রি ভ্রু জোড়া কুঁচকে বলল,
‘ মানে?আগে সুন্দর দেখাত না আমায়?’
‘ উহ!তা বললাম নাকি?আপনাকে ইদানিং দেখলেই কেমন কাছাকাছি থাকতে ইচ্ছে করে।আশেপাশে ঘুরঘুর করলে ক্ষতি নেই বলুন?’
অদ্রি বিরক্তি নিয়ে বলল,
‘ আজাইরা কথাবার্তা!আমার ঘুম পাচ্ছে।আপনার এসব কথা শুনার মতো সময় বা ইচ্ছা কোনটাই নেই আমার।’
রিক্ত অবাক হয়ে বলল,
‘ এই না হুট করে জেগে গিয়ে বললেন আপনার ঘুম আসছে নাহ?এখন আবার ঘুম পাচ্ছে?অদ্ভুত তো!’
‘ তখন ঘুম আসে নি।এখন যে ঘুম আসবে নাহ এমন কিছু বলেছি আমি আপনাকে?আজব! ‘
অদ্রি অন্যদিক ঘুরল।রিক্ত সরু চোখে চেয়ে রইল।হঠাৎ ঐ অদ্রির সামনে গিয়ে অদ্রিকে জড়িয়ে ধরে কপালে ঠোঁট জোড়া স্পর্শ করাল।অদ্রি ইষৎ কাঁপলেও শক্ত করে জড়িয়ে ধরল রিক্তকে।রিক্ত মৃদি হেসে বুকের উপর অদ্রির লালরাঙ্গা মুখটা নুইয়ে যেতে দেখেই বাঁকা হাসল। কানে ফিসফিসিয়ে বলল,
‘ কি হলো?লজ্জ্বায় নুইয়ে গেলেন যে মিসেস অদ্রিয়া?আমি কিন্তু কিছুই করিনি।কিভাবে যেন ঠোঁট লেগে গেল আপনার কপালে।’
অদ্রি সরু চাহনিতে তাকাতেই রিক্ত হাসল।ঠোঁটজোড়া অসংখ্যবার ছুঁয়ে দিল অদ্রির লালরাঙ্গা গালে, ঠোঁটে, কপালে। ঘাড় নিঃশ্বাস গুলো উপছে গড়িয়ে দিল অদ্রির মুখে।সেই নিঃশ্বাসের উপস্থিতিতেই বোধ হয় সেকেন্ডে সেকেন্ডে কেঁপে উঠল অদ্রির শরীর।রিক্ত দু চোখ স্থির করে তাকিয়ে রইল অদ্রির মুখে।অদ্রিকে আচমকা কোলে তুলে নিয়েই খাটে এনে বসিয়ে দিল।পেছনে বালিশ দিয়ে হেলান দিয়ে বসিয়েই অদ্রির পেটের কাছে মুখ ফিরিয়ে নিজেও শুয়ে পড়ল।কোমড়ে হাত জোড়া দিয়ে জড়িয়ে মুখটা অদ্রির পেটে গুঁজে বলে উঠল,
‘ আমি জানি আপনার ঘুম পাচ্ছে নাহ।মিথ্যে বললেন কেন? এটাই শাস্তি এখন।আমার আর আমার বেবির কথোপকোথনে বিরক্ত করবেন নাহ প্লিজ।আপনার যা ইচ্ছে তাই করুন তবুও বিরক্ত করবেন নাহ বলে দিলাম।নয়তো খুন করে ফেলব!’
অদ্রি বিস্ময় নিয়ে তাকাল।
‘ তাই নাকি?’
‘ অবশ্যই। তোমার কি মনে হয় মিথ্যে বলছি আমি অপরিচিতা?’
‘ উহ, নাহ।’
রিক্ত হাসল।পেটে মুখ গুঁজে বেশ কিছুক্ষন ফিসফিসিয়ে কথা বলেই উঠে বসল।অদ্রির কপালে ঠোঁট ছুঁয়ে বলে দিল,
‘ ভালোবাসি পত্রপ্রেমিকা!আমার পত্রপ্রেমের অপরিচিতা।অন্নেকগুলো ভালোবাসি।আমাকে জীবনে এত সুখ দেওয়ার জন্য আমি তোমায় কিভাবে ভালোবাসব জানি না তবুও ভালোবাসি।’
অদ্রি খিলখিলিয়ে হাসল।রিক্তের ঠোঁটে আচমকা ঠোঁট ছুঁয়ে কামড় বসাল ঠোঁটের পাশের লাল তিলে। চোখ টিপে বলল,
‘ আমিও ভালোবাসি। ‘
রিক্ত হাসল।এই চারবছরে লাল তিল নিয়ে অসংখ্যবার জ্বলেছে সে।চারবছরে অসংখ্যবার কামড় বসেছে ঠোঁটের পাশের ঐ লাল তিলে।এটা নতুন কিছু নাহ তার কাছে।তাই বিস্মিত না হয়ে ঠোঁট চওড়া করে হাসল।অদ্রিকে শুয়ে পড়তে ইশারা দিয়েই বলে উঠল,
‘ ঘুমিয়ে পড়ুন। ‘
অদ্রি শান্ত নজরে তাকাল।এই মানুষ তার।কেবল তার।যাকে নিয়ে এত মুগ্ধতা, ভালোবাসা সে শুধুমাত্রই তার।ভাবলেই হৃদয় প্রসন্ন হয়।
সমাপ্ত।