পত্রপ্রেম
সূচনা_পর্ব
লেখনিতে_স্পর্ষীয়া_ভূমি
‘আমি আপনাকে ডাকছি। শুনছেন আপনি?আমার ঠোঁটের পাশে এমনটা হলো কি করে?দেখুন আমি জানি আপনি ঘুমোচ্ছেন না।সো ড্রামা না করে উঠে পড়ুন।’
অদ্রি মিনমিনে চোখে তাকিয়ে চোখ মেলার চেষ্টা করল।কয়েক সেকেন্ড পর এদিক সেদিক তাকিয়েই খাটে রিক্তকে জ্বলন্ত চোখ নিয়ে তাকিয়ে থাকতে দেখে চট করে উঠে বসল।সোফা থেকে নেমে উঠে দাঁড়িয়ে উদ্ভ্রান্তের মতো চেয়ে থাকতেই রিক্ত আবারও বলল,
‘ আমার ঘুমন্ত অবস্থার সুযোগ নিয়েছেন আপনি? আমার ঠোঁটে কামড় দিয়েছেন ?ছিঃ!এতোটা নির্লজ্জ্ব আপনি?আপনার সাহস কি করে হয় আমার ঠোঁটে আপনার ঠোঁট ছোঁয়ানোর?একটা মেয়ে হয়ে কি করে এতোটা নির্লজ্জ্ব হয় আমি তো তাই বুঝতে পারছি নাহ।’
কথাটা বলেই দ্রুত খাট থেকে নেমে পড়ল রিক্ত।চোখে মুখের রাগ নিয়ে কাঁট কাঁট চেহারায় অদ্রির দিকে তাকাল।অদ্রি কথাগুলো শুনে নিজের অবস্খান থেকে দু পা এগিয়ে ড্যাবড্যাব করে তাকাতেই রিক্ত সজোরেই একটা চড় বসিয়ে দিল তার ধবধবে ফর্সা গালে।চড়টা জোরে দেওয়াতে কিছুটা ছিটকে সরে গেল অদ্রি।নিজেকে সামলে নিয়েই অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকল।দীর্ঘদিনের অপেক্ষার প্রহর গুণে রিক্তকে পাওয়া।তবুও তো পেল না। তাতে আক্ষেপ নেই তার।কিন্তু রিক্তের হাতে এমন দাবাং মার্কা চড় খাবে এমনটাও ভাবে নি সে।এভাবে সজোরে চড় বসিয়ে দিবে তার গালে?অদ্রি টলমলে চোখজোড়া নিয়ে রিক্তর দিকে তাকিয়ে থাকতেই আবারো বলে উঠল রিক্ত,
‘ প্রবলেম কি আপনার?আমি বলেছিলাম না?আমাদের সম্পর্কটা অন্যান্য স্বামী স্ত্রীর মতো হবে না।কানে ডুকে নি কথা?আপনাকে বলেছিলাম তো সোফায় ঘুমোতে। তাই না?আপনি কোন সাহসে পা বাড়িয়ে আমার কাছে এসেছেন?কোন সাহসে?আবার আমার ঠোঁটে কামড় দিয়েছেন?ছিঃ!এতোটা বেহায়া মেয়ে!’
অদ্রির টলমলে চোখজোড়া বেয়ে এবার গড়িয়ে পড়ল জল।ফর্সা ধবধবে মুখে টসটসে চোখের পানি গড়িয়ে পড়তেই ঝাপসা হয়ে উঠল চাহনি।রিক্তের দিকে একইভাবে তাকিয়ে থেকেই কাঁপা কন্ঠে বলে উঠল,
‘ ক কি কি বলছেন আপনি?’
রিক্তের মেজাজ এবার দ্বিগুণ খারাপ হয়ে গেল।চোখেমুখে রাগ টা আরো জোরালো হয়ে দেখা দিল।অদ্রির ডানহাতটা শক্ত করে ধরে নিয়েই দাঁতে দাঁত চেপে বলে উঠল,
‘ একদম ড্রামা করবেন নাহ।একদম না।আমার ঘুম ভাঙ্গার আগ মুহুর্তেও আমি বুঝতে পেরেছি কেউ একজন আমার খুব নিকটে।আর সে মেয়েই ছিল।লম্বা চুলগুলো ঘুমের মধ্যে আমার মুখে লাগছিল।বাট চোখ খুলে দেখি কেউ নেই। কেউ না থাকলেও আমার ঠোঁটে কামড়ের চিহ্ন টা তো প্রমাণ।আর এই রুমে আপনি ব্যাতীত আর কেউই নেই।তাহলে কি দাঁড়াল?’
অদ্রি চমকে উঠল।চোখের পানিটা এবার গড়গড়িয়ে পড়ল গাল বেয়ে।রিক্তের সাথে আজকেই তার বিয়ে হয়েছে।বাসর ঘরে প্রথমে ডুকার পরপরই রিক্ত বলে দিয়েছি তাকে সে স্ত্রী হিসেবে মেনে নেয় নি।সে শর্তমতে সোফায় ঘুমোতেও বলে দিয়েছে।অদ্রি রিক্তের কথামতো সোফাতেই ঘুমিয়েছিল।তবে?এসবের মানে কি?চোখে মুখে বিস্ময় নিয়ে রিক্তর দিকে তাকাল।রিক্তের ঠোঁটে একনজর তাকিয়ে ভ্রু কুঁচকে বলল,
‘ আপনার ঠোঁটে কেথায় কামড়ের চিহ্ন মিঃ রিক্ত চৌধুরী?’
রিক্ত ক্ষেপে গেল।জ্বলন্ত চাহনি নিয়ে তাকিয়ে নিচের ঠোঁটের বাম পাশের ফোলা অংশটা দেখিয়ে বলে উঠল,
‘ দেখেছেন?’
অদ্রি সরু চোখে তাকাল রিক্তের আঙ্গুলের ইশারা বরাবর।এবার আর কান্না আসল নাহ তার।হু হা করে হেসে উঠল।ভ্রু বাকিয়ে বলল,
‘ উহ মিঃ রিক্ত চৈধুরী!আপনি নিশ্চয় স্বপ্নে উল্টাপাল্টা কিছু দেখছিলেন তাই আপনার এমন ফিল হচ্ছে।ছেলে মানেই এমন একটু আধটু স্বপ্ন থাকবেই।আমি কিছু মনে করি নি।কিন্তু স্বপ্নের মেয়েটা কে ছিল?চিনেন?আই মিন স্বপ্নকুমারী পরিচিত কেউ, মানে আপনার প্রেমিকা.. ‘
অদ্রির বাকিকথাটা না শুনেই নাক চোখ কুঁচকে নিল রিক্ত।চরম বিরক্ত দেখিয়ে বলে উঠল,
‘ আপনার এসব ফাউল কথাবার্তা নিজের কাছেই রাখুন । ওকে?’
অদ্রি মিনমিনিয়ে তাকাল।কোমড়ে হাত জোড়া দিয়ে গভীর মনোযোগ দিয়ে রিক্তের ঠোঁটে তাকাল।লালচে খয়েরিতে চমৎকার ঠোঁটজোড়া।ঠোঁটের ভাজে ভাজে কেমন আকৃষ্ট হওয়ার মতো জড়তা।নিচের ঠোঁটের বামপাশেই একটা উজ্জ্বল লাল তিল।মুখের খোঁচা দাঁড়ির মাঝে অপূর্ব ঠোঁটজোড়ার পাশে তিলটা বেশ মানিয়েছে।দেখে একবার ছুঁয়ে দেওয়ার ইচ্ছে থাকলেও ছোঁয়া যাবে না।সেই অধিকার তার নেই।কথাটা মাথায় আসতেই হতাশ হলো সে।তিলের পাশে ফোলা অংশটায় নির্বিকার তাকিয়ে থেকে বলল,
‘শুনুন,আপনার ঠোঁটে যে এটা কামড়ের চিহ্ন আপনি কি করে নিশ্চিত হলেন?অনেক কারণেই ঠোঁটের কোন এক পাশ এমন ফুলে যেতে পারে।তাই না?তাই বলে সেটাকে কিস হিসেবে, আই মিন কামড় হিসেবে চালিয়ে দিয়ে আমার উপরেই দোষটা চালিয়ে দেওয়া কিন্তু মস্ত বড় ভুল রিক্ত চৌধুরী।’
রিক্ত জ্বলে উঠে বলল,
‘ হেই ইউ।মিথ্যে কথা বলবেন তো উপরে তুলে সোজা নিচে আছাড় দিয়ে ফেলব।আমাকে চিনেন না।সত্যিটা বলুন।কেন কামড় দিলেন?’
অদ্রি বিরক্ত হলো।চোখ মুখ কুঁচকে নিয়ে সোফার এক কোণে গিয়ে বসে পড়ল।রিক্তের শক্ত হাতের চড় খেয়ে গালে রিক্তের হাতের পাঁচ পাঁচ টা আঙ্গুলের চাপ বসে গেছে তার।ফর্সা গালে আঙ্গুল গুলোর লাল আকার বিচ্ছিরি দেখাচ্ছে।কয়েক পা দূরে রাখা ড্রেসিং টেবিলের আয়নায় মুখটা দেখেই চমকে উঠল অদ্রি।ঠোঁটের কোণে রক্তের ও দেখা মিলল মুহুর্তেই।রিক্তের ভুবন কাঁপানো থাপ্পড়ের জোর সম্পর্কে জানতে আর দুই সেকেন্ডও দেরি হলো না।মিনমিনে চোখে একনজর রিক্তের দিকে তাকিয়ে বিরক্ত নিয়ে বলল,
‘ আমি কি মানুষের মাংস খাই? আপনাকে শুধু শুধু কামড়াতে যাব কেন বলুন তো।আজব কথাবার্তা বলছেন নয় কি?আমি ছিলাম সোফায় আর আপনি খাটে।তবে কামড়ালাম কিভাবে?আর আপনি দেখেছেন আমায় কামড় দিতে?প্রুভ আছে?মিথ্যে কেন বলছেন।আর আপনি যখন কথা গুলো বলছিলেন তখনও আমি সোফাতেই ছিলাম।কথাগুলো শুনে উঠে দু পা বাড়াতেই চড় খেলাম।তবে আমি আপনার কাছে কখন গেলাম বলুন?’
রিক্ত গম্ভীর গলায় বলল,
‘ সেটা তো আপনি জানবেন তাই না?আই ডোন্ট নো।’
অদ্রি বিরক্তির চরম পর্যায়ে গিয়ে বলে উঠল,
‘ আপনি এবার বিষয়টাকে শুধু শুধু পেঁচিয়ে পেলছেন নয় কি?এখন আমিও বলতে পারি আপনি আমার ঠোঁটে কামড় দিয়েছেন।দেখুন আমার ঠোঁটের কোণে রক্ত।এটাকেও আমি কামড়ের চিহ্ন হিসেবে চালিয়ে দিতে পারি।কি বলুন?’
রিক্ত অদ্রির ঠোঁটের দিকে তাকাল।ঠোঁটের একপাশ কেঁটে রক্ত ও জমাট বেঁধেছে অল্প।থাপ্পড়ের বেগটা বোধ হয় একটু বেশিই ছিল ভেবে চোখ নামিয়ে মৃদু কন্ঠে বলল,
‘ওটা থাপ্পড়ের কারণে।’
‘ তো?এটা থাপ্পড়ের কারণে হলে আপনারটাও অন্য কারণেই হবে তাই না?’
‘ নাহ।’
অদ্রি অসহায় চাহনিতে তাকাল।সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে আবারও কোমড়ে হাত রেখে বলল,
‘ আপনি একটু বেশিই ঘাড়ত্যাড়া মিঃ চৌধুরী।ঠোঁটের ফুলাটা হয়তো অন্য কারণে হয়েছে।অন্য কিছু ও তো কামড়াতে পারে তাই না?যেমন, পিঁপড়া, ইদুর, সাপ।’
রিক্ত ভ্রু জোড়া কুঁচকে নিল। টাউজারের পকেটে হাত ডুকিয়ে সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে বলল,
‘ হোয়াট?ইদুর, সাপ?কিসব বলছেন আপনি?মিথ্যে বলতে গিয়ে দেখছি মাথা ফুল আউট হয়ে গিয়েছে।’
অদ্রি ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেল।জিহ্বা কেঁটে কয়েক সেকেন্ড চুপচাপ দাঁড়িয়ে থেকে বলল,
‘ আই মিন, মানুষকে তো মানুষ ছাড়াও পিপড়া, ইদুর, সাপ আরও অন্যান্য প্রাণী কামড়াতে পারে তাই না?’
রিক্তের সোজা উত্তর,
‘ হ্যাঁ পারে।’
অদ্রি বিজয়ী হাসি হাসল। জোরে নিঃশ্বাস নিয়ে বলল,
‘ পারে তো?’
রিক্ত কপাল কুঁচকাল।ডান চোখের ভ্রু উঁচু করে বলল,
‘ পারে, তো?’
‘ তো আপনাকেও তেমন কিছুই কামড় দিয়েছে ধরে নিন।’
রিক্ত আর কিছু বলল না।গম্ভীর রূপ ধারণ করে হঠাৎ ঐ বেলকনির দিকে পা বাড়াল।চারপাশের পরিস্থিতি বিরক্তিকর লাগছে।এভাবে হুট করে বিয়ে।বিয়ের পর একটা অপরিচিত মেয়ের সাথে রুমে একসাথে থাকা।সবই বিরক্তিকর। সাথে বেরিয়ে আসল এক লম্বা শ্বাস।যে শ্বাস ভেতর থেকে কুড়িয়ে আনল হাজারও কষ্ট। মিলিয়ে গেল মুহুের্তে হাওয়ায়।
_____________
সোফায় এক পাশ হয়ে শুঁয়ে শরীর মেঝমেঝ করছে অদ্রির।ডানহাতটা দুই তিনবার নড়াচড়া করেই উঁকি দিল বেলকনির সাথে লাগোয়া জানালায়।থাইগ্লাসের ওপাশে রিক্তের লম্বাচওড়া শরীরের ছায়া।বেলকনির লাইট অফ থাকায় ছায়ার মানুষটিকে দেখা সম্ভব হলো না।দু পা বাড়িয়েই জানালার পর্দাটা অল্প সরিয়েই তাকিয়ে থাকল কেবল। কয়েক সেকেন্ড পর কি বুঝেই হেসে উঠল।পর্দাটা আরো কিছুটা সরাতেই রুমের আলো গিয়ে ঠেকল বেলকনিতে।রিক্ত চোখ মুখ কুঁচকেই পেছন ফিরল।অদ্রিকে ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে থাকতে দেখেই বিরক্ত হলো।কি আজব!এভাবে চোখ দিয়ে গিলে নিয়ে কি প্রমাণ করতে চাইছে?বাইরে থেকে আসা হাওয়ায় চুলগুলো নড়ে উঠলে একহাত দিয়ে পেছনে ঠেলে দিল রিক্ত। অদ্রির দিকে তাকিয়ে গম্ভীর গলায় বলল,
‘ এনি প্রবলেম?’
অদ্রি উত্তর দিলো না।আগের মতোই তাকিয়ে থাকল। চোখের কোণে হালকা টলমলে জল।মুখে উৎসুক দৃষ্টির ভরপুর ছায়া।রিক্ত আরেক দফা বিরক্ত হলো।মেয়েটাকে সে চড় মেরেছে।মেয়েটার উচিত তার উপর ক্ষেপে যাওয়া, রেগে যাওয়া।মেয়েটা তেমন কিছুই করছে না?উল্টে তার দিকে এমনভাবে তাকিয়ে আছে যেন তার প্রেমে হাবুডুবু খাচ্ছে।রিক্ত ভ্রুজোড়া পয়তাল্লিশ ডিগ্রি কোণে বাঁকিয়েই অদ্রির মুখ চাহনিতে তাকাল।নজর এখনো সরায়নি মেয়েটি।ঠোঁটের কোণে শুকনো রক্ত। ফর্সা ধবধবে গালে তার হাতের পাঁচ আঙ্গুলের চাপ লালচে হয়ে স্পষ্ট হয়ে ফুটে উঠেছে।তবুও মেয়েটির রাগ হচ্ছে না?কেন হচ্ছে না?টিপ্যিকাল আর চার পাঁচটা মেয়ের মতো এই মেয়েটিও মার খেয়ে চুপ থাকবে?হয়তো চুপ থাকবে।তার জানা নেই।তবে মন বলছে মেয়েটা প্রতিবাদ করবে। প্রতিবাদ করাই তো উচিত।তার ওভাবে থাপ্পড় মারাটা মোটেই উচিত হয়নি।স্যরি বলে দিবে কি?স্যরি বলাটা কি উচিত?কয়েক সেকেন্ড থম মেরে দাঁড়িয়ে থেকেই দু পা এগিয়ে থাই গ্লাসের একদম সামনে দাঁড়াল রিক্ত।ভ্রু উঁচিয়ে বলল,
এই, আপনি এভাবে তাকিয়ে আছেন কেন?আজব!’
অদ্রির হুঁশ ফিরল।কথাটা শুনে প্রথমে অদ্রি কিছুটা ভ্যাবাছেকা খেলেও পরমুহুর্তে হেসে উঠল খিলখিলিয়ে।হাসি থামিয়ে আড়চোখে রিক্তের মুখে তাকাতেই উৎফুল্লতায় ভেতরটা হৈ চৈ করে উঠল।দীর্ঘদিন ধরে যেই মানুষটার প্রতীক্ষায় দিন কাটিয়েছে সেই আজ তার বর।সেই সুদর্শন যুবকটি তার স্বামী।খুশিতে চোখ টলমল করে উঠলেও পরমুহুর্তে নিজেকে সামলে নিল অদ্রি। আরো কিছুটা সময় হা হয়ে তাকিয়ে থেকেই মৃদু হাসল।রিক্তের ঘন পাপড়িতে ডাকা চোখজোড়ার দিকে তাকিয়েই জমে গেল অদ্রি।এই সুন্দর চোখে নিরন্তর দৃষ্টি রাখার ইচ্ছে কত আগে থেকে। কিন্তু কখনো দৃষ্টি রাখা হয়ে উঠে নি।আজকে তো দেখার বারণ নেই।আজ সুদর্শন পুরুষটি তার বর।আচ্ছা পুরুষ মানুষ কি এতোটা সুন্দর হয়?
অদ্রির আবারও ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে থাকা দেখে বিরক্তিতে ভ্রু জোড়া কুঁচকে নিল রিক্ত।কঠিন চাহনিতে অদ্রির দিকে একনজর তাকিয়েই ডান চোখের ভ্রু উঁচিয়ে বলে উঠল,
‘ এভাবে হা হয়ে আছেন কেন অাপনি?অসহ্য।’
অদ্রি আনমনেই চট করে বলে বসল ,
‘সুন্দর ছেলে চোখের সামনে থাকলে কি করা যায় বলুন!’
কথাটা বলার কয়েক সেকেন্ড পরই অদ্রির বোধগম্য হলো চরম রকমের নির্লজ্জ্বতার পরিচয় দিয়ে দিয়েছে সে।সাথে সাথেই জিহ্বায় কামড় দিয়ে দাঁত মুখ খিচে বলে উঠল,
‘ছিঃ!আমি?আমি আপনার দিকে তাকিয়ে আছি মিস্টার রিক্ত?এটা কিভাবে ভাবতে পারলেন আপনি?জানেন আপনার থেকেও কত ভালো ভালো ছেলে রিজেক্ট করে এসেছি আমি?আর আপনি তো সেখানে গম্ভীর, মুখ চাপা একটা লোক!দেখতে ঐ দস্যু দস্যু।আমি তাকিয়ে থাকব আপনার মতো মুখ চাপা দস্যুর দিকে?আমাকে দেখেছেন আপনি?আমি আপনার থেকে দ্বিগুণ সুন্দর বুঝেছেন?আর আমি তাকিয়ে থাকব আপনার দিকে?মোস্ট ইম্পোর্টেন্ট কথা আপনি আমায় চড় মেরেছেন।মিথ্যে দোষারোপ করেছেন।আমি তো আপনাকে এর কানা কানা প্রতিশোধ ফেরত দিব।দেখে নিবেন?
রিক্ত বিরক্তি নিয়ে তাকাল।অদ্রির কথাগুলো শুনে পাল্টা উত্তর দিয়ে ঝগড়া করার এটুকুও প্রয়োজন বোধ করল না সে।সে জানে তার দিকেই তাকিয়ে ছিল মেয়েটি।এখন যে মিথ্যে বলছে তাও স্পষ্টই বোঝা যাচ্ছে।কেবল শীতল কন্ঠে বলল,
‘ওকে। ‘
‘ ওকে?আপনার কি মনে হয় আমি আপনার থেকে প্রতিশোধ নিতে পারব না?’
রিক্ত ছোট নিঃশ্বাস ফেলল।বেলকনি থেকে রুমে এসে বলল,
‘ কেন পারবেন না?’
অদ্রি ফিটফিট চোখে তাকিয়ে বলল,
‘ তবে এত সহজে ওকে বললেন কেন?’
রিক্ত ভ্রু নাচিয়ে বলল,
‘ কি বলা উচিত?’
অদ্রি বিরক্ত হলো।রিক্ত নামক মানুষটাকে এই মুহুর্তে থাপ্পড় দিয়ে সোজা করে ফেলতে ইচ্ছে করছে।মানুষটা এমন ভাবে তাকে ইগনোর করবে কেন?এমন অধিকার তাকে কে দিয়েছে?তার সদ্য বিয়ে করা বউ সে।বউ হিসেবে না মানলেও এটুকু পাত্তা দেওয়া তার অবশ্যই উচিত।কিন্তু এই লোক সেই পাত্তাটাও দিচ্ছে না?তার কথাতেই কথা মিলিয়ে নিচ্ছে?অদ্রি বিরক্তিভরা দৃষ্টি দিয়ে কয়েক সেকেন্ড তাকিয়ে থেকেই বলল,
‘ আপনি খুব বোরিং মিঃ রিক্ত।মুখচাপা দস্যু ওয়ার্ডটা আপনার সাথেই ভালো যায়।’
অদ্রির বিরক্তিভরা কন্ঠে কথাগুলো রিক্ত নিশ্চুপে শুনল। কিছু না বলে খাটের এক কোণে গিয়ে বসে ল্যাপটপটা কোলে নিয়ে অদ্রির দিকে একনজর তাকিয়ে বলল,
‘আপনি জেগে আছেন কেন?ঘুমিয়ে পড়ুন।’
অদ্রি নিশ্চুপে চেয়ে রইল।টপাটপ গড়িয়ে পড়ল চোখের পানি।একটা মেয়ে কতটা স্বপ্ন নিয়ে বিয়ে করে।কত গুলো স্বপ্ন সাঁজাতে স্বামীর ঘরে আসে।অথচ সে স্বামী তাকে মেনে নিল না
।কতশত স্বপ্ন সাজিয়েছে সে এই মানুষটাকে নিয়ে অথচ মানুষটা তাকে মন থেকে মেনে নিতে পারি নি?তাহলে বিয়ে কেন করল?কেন?মাথায় হাজার চিন্তার ঘুরপাকে ক্রুদ্ধ দৃষ্টিতে রিক্তের দিকে তাকাল সে।রিক্তকে ল্যাপটপ নিয়ে বসে থাকতে দেখে ঠোঁট চেপে বলে উঠল,
‘আপনি কি কাউকে ভালোবাসেন ? আমাকে স্ত্রী হিসেবে মানতে কি সমস্যা আপনার?আমি কি আপনার যোগ্য না?আর যদি নাই বা মানেন আপনার কি এই বিষয়টা বিয়ের আগে জানানো উচিত ছিল না আমাকে?’
রিক্ত কয়েক সেকেন্ড চুপ থাকল।হয়তো বলার মতো তেমন কিছুই নেই।চোখের ভাবমূর্তীতে ফুটে উঠল কেবল একের পর এক চিঠি।ভালোবাসার অনুভূতিতে ভাসানো চিঠি। না, চিঠি গুলো রিক্তের লেখা নয়।চিঠি গুলো এক যুবতীর লেখা।কত কথাই না লেখা থাকত সেসব চিঠিতে।কত আবেগ!কিন্তু তারপর হঠাৎই সে চিঠি প্রেরিকা হারিয়ে গেলো।কালো অন্ধকারে তলিয়ে গেল।আচ্ছা সে চিঠি প্রেরক কি বুঝেছিল রিক্তও ঠিক ততটাই ভালোবেসে নিয়েছিল অচেনা মোয়েটিকে?ঠিক যতোটা তার চিঠির লেখায় ফুটে উঠত রিক্তের প্রতি। হয়তো তার থেকেও অধিক ভালোবেসেছিল রিক্ত তাকে কিন্তু প্রকাশ করা হয়ে উঠে নি।কেন দেড় বছর আগে সে চিঠি দেওয়া বন্ধ করে দিল?কেন?সে কি বেঁচে নেই?নাকি হারিয়ে গিয়েছে?
রিক্তর চোখজোড়া রাগে লাল হয়ে উঠল।কিসের ভালোবাসা?ভালোবাসলে কি সে হারিয়ে যেত নাকি?ভালোবাসলে কি ভালোবাসার মানুষের মনের কষ্ট বুঝত না?কথাগুলো ভেবেই ঘন পাপড়িতে ডাকা চোখজোড়া অস্থির হয়ে উঠল।অদ্রির কষ্টে ভেসে উঠা চেহারায় একবার তাকিয়ে ছোট নিঃশ্বাস ফেলল।মেয়েটির ফর্সা ধবধবে মুখে তাকিয়ে সে কোন অনুভূতিই খুঁজে পেল না।কেবল ঠোঁটের কোণের রক্তটা আর গালের পাঁচ আঙ্গুলের লালচে বর্ণ চোখে পড়ল।সাধারণ একটা মেয়ের দিকে যেভাবে তাকানো উচিত ঠিক সেভাবেই একনজর তাকাল কেবল রিক্ত।গভীর দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল,
‘আপনি কখনো চিঠি লিখেছেন?কিংবা এমন কাউকে ভালোবেসেছেন যে আপনাকে চিনেই না জানেই না তবে চিঠিতে অনুভূতি প্রকাশ করেছেন।বেসেছেন এমন কাউকে ভালো?’
অদ্রি অবাক হল।তার কথা গুলোর একটা কথাও কি রিক্তর কানে পৌঁছায়নি?নাকি ইচ্ছেকরেই উত্তরগুলো দিল না?জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে রিক্তর দিকে তাকিয়েই বলল,
‘আমি অন্য প্রসঙ্গে কথা বলছিলাম মিঃ রিক্ত।’
রিক্ত লালচে খয়েরি ঠোঁট প্রসারিত করে হালকা হাসল।হাসিটা অপূর্বই ছিল।কেবল অদ্রির কাছেই কি এই হাসিটা এতোটা চমৎকার লাগল?অদ্রির জানা নেই।আড়চোখে রিক্তর হাসিমাখা মুখটার দিকে আরেকনজর তাকাতেই রিক্ত হালকা কাশল।কলারটা টেনে ঠিক করে নিয়ে বলল,
‘ আপনি জানেন তো আমার বাবা অসুস্থ?বিয়েটা মূলত সেই জন্যই করা ।ফুফু, চাচু, মামা সবার ঐ একই সিদ্ধান্ত।বাবা হয়তো বেশিদিন বাঁচবেন নাহ।ছেলের বিয়েটা অন্তত দেখে যাক।প্রথমে বিয়েতে আমার মত না থাকলে ও পরে যখন বাবা নিজেই আমার হাত ধরে দুর্বল কন্ঠে বলেছিল আমার তখন নিজেকে খুব অসহায় বোধ হচ্ছিল।খুব।কিন্তু বাবার মুখটার দিকে তাকিয়ে না করাটা হয়ে উঠে নি।তার তিনদিনের মাথায় বিয়েও হয়ে গেল দেখুন।হ্যাঁ হয়তো আমি আপনাকে ঠকিয়েছি।কিন্তু কেবল স্বামী বলে ভালোবাসা হীন একটা শারিরীক সম্পর্কে জড়িয়ে পড়াও তো ঠকানো বলুন?আমরা একে অপরকে চিনি ও না এখনো। তাই না?’
কথাগুলো এক নাগাড়ে বলে ছোট একটা নিঃশ্বাস নিয়ে কিছুটা সময় চুপ থাকল রিক্ত।হয়তো অদ্রির থেকে কোন উত্তর আশা করছিল।কিন্তু অদ্রির চুপ থাকা দেখে পরক্ষণেই আবার বলে উঠল,
‘ ঘুমিয়ে পড়ুন।সারাদিনের ব্যস্ততায় ক্লান্ত নিশ্চয় আপনি।’
এতোক্ষণ চুপ করে থাকলেও এবার ঠোঁট নড়ল অদ্রির।কিছুটা সংকোচ নিয়েই বলল,
‘না ক্লান্ত না। চিঠি?চিঠির কথা কেন বললেন?’
রিক্ত আবার ও হাসল।ঠোঁটে অদ্ভুত হাসি ঝুলিয়ে বলল,
‘ ওটা এমনিই বলেছি।কখনো কখনো কিছুর প্রতি অতি দুর্বল হলে দেখা যায় সব জায়গা সেই জিনসটাকেই গুলিয়ে নিচ্ছি।তেমনই আর কি।’
রিক্তের পেছানো কথাগুলো অদ্রির মাথায় কিছুই ডুকল না।কয়েক সেকেন্ড রিক্তর দিকে হা হয়ে তাকিয়ে থাকতেই রিক্ত উঠে দাঁড়াল।টাউজারের পকেট থেকে সিগারেটের বক্সটা এক হাতে নিয়ে একটা সিগারেট বের করে পা বাড়িয়ে আবারও বেলকনিতে গেল।তৎক্ষনাৎ বেলকনির দরজা লাগানোর আওয়াজ হলো।আওয়াজটা একটু বেশিই ছিল।অদ্রি থ মেরে কিছুটা সময় সেদিকে তাকিয়ে হালকা হাসল।হাসিটা কিসের?কষ্টের?নাকি সুখের?অদ্রি নিজেই বুঝে উঠল না।তবে তার কোথাও যেমন বিষাদময় কষ্টে ভরে উঠছে ঠিক তেমনই কোথাও আনন্দ হচ্ছে।কিন্তু কিসের আনন্দ?লোকটাকে কাছ থেকে দেখার?
_______________________
রাত তিনটে…
বেলনিকনিতে ঢিম লাইটের আলো।বেলকনির গ্রিল ভেদ করে দৃষ্টিটা নিচে নিক্ষেপ করতেই চোখে পড়ল বাগানের হলুদ অলকানন্দা।বাগানের লাইটের আলোতে এইখান থেকে বেশ স্পষ্টই চোখে পরছে ফুলগুলো।মায়ের প্রিয় ফুল ছিল।গাছগুলোও মায়ের লাগানো।কিন্তু এখন আর গাছগুলোর যত্ন নেয় না কেউ।কেন নিবে?ফুলগাছগুলো যে মানুষটার প্রিয় ছিল সেই মানুষটি তো এখন নেই।পৃথিবীর কোথাও তার অস্তিত্ব নেই।তবে তার প্রিয় গাছগুলো ও কেন যত্ন পাবে?নাহ, পাবে না।এটা সেই মানুষটার শাস্তি।সবাইকে এভাবে হুট করে ছেড়ে যাওয়ার শাস্তি।যেটা তার প্রিয় গাছগুলো পাবে।বুকের ভেতর অদ্ভুত যন্ত্রনা নড়া দিয়ে উঠতেই রিক্ত আকাশের উজ্জ্বল তারাটার দিকে তাকিয়ে মা কে অনুভব করার চেষ্টা করল।কেন মা ছেড়ে গেল তাদের?মা ছেড়ে না গেলে হয়তো আজ এমন কিছুই হতো না।মায়ের শোকে বাবাও অসুস্থ হতো না আর তাকেও এমন পরিস্থিতিতে পড়তে হতো না।কিন্তু মা তো নেই।স্বার্থপরের মতো মাস ছয় আগে কি সুন্দর চলে গেল তাকে আর রিয়াকে রেখে ।এখন বাবাও অসুস্থ।মায়ের মৃত্যুর পর বাবা বোধ হয় একটু নিশ্চুপই হয়ে গিয়েছিল।কিন্তু এখনকার নিশ্চুপ থাকাটা মেনে নেওয়া যে আরো কষ্টকর।রিক্ত নিজেকে মানিয়ে নিতে পারলেও রিয়া?এইটুকু বয়সে সে মেনে নিতে পারবে বাবা মা উভয়কে হারানোর কষ্ট?ভাবতেই বুকটা হাহাকার করে উঠল।অদ্ভুত যন্ত্রনায় ঘিরে ধরল হৃৎপিন্ডকে।গত সাড়ে পাঁচ বছরের একটু একটু করে গড়ে তোলা অনুভূতিগুলো আজ কত সুন্দরভাবে হেরে গেল।মানুষ হয়তো হারানোর পরই তার মূল্য বুঝে।সাড়ে চার বছর অপরিচিতা এতো এতো চিঠি পাঠালেও কখনও রিক্তর কাছ থেকে একটা চিঠিও যায় নি তার ঠিকানায়।বরাবর ঐ অপরিচিতার পাগলাটে অনুভূতি গুলো গুটিকয়েক লাইনে পড়াই তার অভ্যাস ছিল।নিজের অনুভূতিটা কখন ও ব্যক্ত করার প্রয়োজনই বোধ করে নি সে।হয়তো সাড়ে চার বছরে সেই মেয়েটির ভালোবাসা কমে গিয়েছিল এইপাশ থেকে কোন সাড়া না পেয়ে।রিক্ত দীর্ঘশ্বাস ফেলল।পরের সিগারেটে আগুন ধরিয়ে ঠোঁটে ছোঁয়াল।লাল রক্তিম চোখ নিয়ে একইভাবে আকাশে তাকিয়ে ভাবল,সেও চিঠি দিয়েছিল।কেবল একটি।তাও মেয়েটি হারিয়ে যাওয়ার মাস তিন পর।আধো চিঠিটা প্রাপকের ঠিকানায় পৌঁছেছে কিনা কে জানে।অপরিচিতাকে সে দেখে নি।মেয়েটি দেখতে কেমন তাও জানে নাহ।মেয়েটির বয়স পড়ালেখা কিছু সম্পর্কেই সে কিছু জানে না।শুধু জানে মেয়েটি তাকে প্রচন্ডরকম ভালোবাসত।যা তার চিঠির লেখাতে অনুভব করা যেত।একবার মেয়েটির দেখা পেলে কি ক্ষতি হয়ে যেত?আচ্ছা অপরিচিতা তার সকল বর্ণনা জানে।তার সম্পর্কে সব বলতে সবই জানে।তাহলে এই যে আজ তার বিয়ে হলো এই খবর কি পৌঁছেছে তার কাছে?জেনেছে সে তার বিয়ের খবর?কে জানে।হয়তো জানে নি।জানলে কি একবার খবর নিত না?রিক্ত দীর্ঘশ্বাস ফেলল।সিগারেটে ঠোঁট ছুঁইয়ে শেষ টান দিতেই সিগারেটটার জ্বলন্ত অংশ আঙ্গুলে লাগল।তৎক্ষনাৎ ছিটকে ফেলে দিল সেটা।পা দিয়ে ফিসে জ্বলন্ত সিগারেগটা নিভিয়ে নিল।পরমুহুর্তেই বেলকনির ফ্লোরের দিকে তাকিয়ে নিজেই অবাক হলো ক্ষণিকে।এতোগুলো সিগারেটের অবশিষ্ট অংশ?একটু বেশিই সঙ্গী করে নিল কি আজ নিকোটিনকে?বেলকনির এটুকু জায়গায় নিকোটিনোর কালো ধোঁয়ার ঘনত্বটা কমে আসতেই লাল টকটকে চোখজোড়া দিয়ে আকাশের দিকে তাকাল রিক্ত।চোখ টলমল করে উঠতেই ভেতরের মন বলে উঠল,
“বিধাতা তুমি চাইলে কি পারতে না সব ঠিক করতে?কেন আম্মু আমায় ছেড়ে গেল?কেন আব্বু অসুস্থ হলো?কেন?আমার প্রিয়জনরা কেন আমায় ছেড়ে যাবে?আচ্ছা!অপিরিচিতা?সে কি থাকতে পারত না আমার এই জীবনে?কেন থাকল না?কোথায় সে অপরিচিতা?কোথায়? অবহেলাটা কি মেনে নেওয়া যেত না?ভালো যখন বেসেছিলোই আমায় আমার অবহেলাটা মেনে নিয়ে আমার সামনে আসা কি যেত না?কেন হারালো সে?কেন আমার হলো না?আর যে চাইলেও কিছু সম্ভব নয় বিধাতা। তাকে ভুলতে হবে যে এইবার। অপরিচিতা নামটা মুঁছে নিতে হবে মন থেকে।আমি ভুলতে পারব কি তাকে?এতদিনের ভাবনা, স্বপ্ন, বাস্তব সবকিছু থেকে এত সহজে মুঁছে দিতে পারব?”
______________
গভীর রাত।রুমের এক কোণে নিশ্চুপ দাঁড়িয়ে থেকে ঘড়িতে তাকাল রিয়া।ঘন্টার কাঁটাটা তখন চারের ঘরে।আর একটু সময় পরই চারদিকে আলো ফুটবে।সকাল হবে।অথচ এই সময়ে এসেও রিয়ার চোখে ঘুম মিলছে নাহ।পুরো রাতটাই নির্ঘুম কাটিয়ে দিল সে?ভাবতে নিজেই অবাক হলো রিয়া।চোখে মুখে আশ্চর্য ব্যাপার স্যাপার নিয়ে মোবাইলটা এগিয়ে নিল।রাত একটা থেকে নিষাণকে কল করে জ্বালাবে জ্বালাবে ভেবেও জ্বালানো হয়ে উঠে নি।কিন্তু এবার আর নিজেকে আটকানো গেল না।কল লিস্টে নিষাণের নাম্বারটা খুঁজে নিয়েই কল দিল।ওপাশ থেকে কল রিসিভ হলো না।রিয়াও থামল নাহ।একের পর এক কল। হাতে গুণা ঠিক পনেরো টা কল দেওয়ার পরই ওপাশ থেকে কল রিসিভ হলো।বিরক্তি মিশ্রিত কন্ঠেই ওপাশ থেকে বলে উঠল কেউ,
‘ রিয়ার বাচ্চা রিয়া!তোরে সামনে পাইলে হয়।সোজা উপরে তুলে আঁছাড় দিবো বলে দিলাম।এতো রাতে কল দিয়ে জ্বালাচ্ছিস কেন?এমনিতেই নিতুর সাথে কথা বলে রাত দুইটায় ঘুমিয়েছি।’
রিয়ার মুখের ভাবমূর্তী মুহুর্তে পাল্টে গেল।এতোক্ষণের বিরক্তিতে ভরে উঠা মুখটা মুহুর্তেই হাসিখুশি হয়ে উঠল।দাঁত বের করে ফিক করে হেসেই বলে উঠল সে,
‘ আর কিই বা পারবি প্রেমিকার সাথে রাতদিন বকবক করা ছাড়া?তোর জীবন তো নিতুময়।এনিওয়ে,এই জানিস?আমার না ঘুম আসছে নাহ।কি করা যায় বল তো?’
‘থাপ্পড় খেয়েছিস?এক থাপ্পড়ে তোর মিনিমাম দুইটা করে দাঁত পরবে।দুইগালে দশটা করে বিশটা থাপ্পড় দিব।হিসাব কর তো কয়টা দাঁত পরবে?’
‘ উহ, এভাবে বলছিস কেন বল?তুই আমার ছোটবেলার বন্ধু। তার উপর পুরোপুরি চারমাস পাঁচ দিনের বড়। তুই তো বলিস।তো তোর থেকে তো সাজেশন নেওয়াই যায় বল?’
রিয়ার নরম গলায় কথাটা হজম হলো না নিষাণের। মুহুর্তেই ভেসে আসল তার ধমক,
‘ তোর সাজেশন দাতা আমি?মোস্ট ইম্পোর্টেন্ট কথা রাত চারটায় কোন সাজেশন টাজেশন দেওয়ার সময় না।এটা ঘুমানোর সময়।সো আমাকে আমার মতো ঘুমোতে দে আমি নিজেকে নিজের মতো কাঁথায় জড়িয়ে নিয়েছি।আর হ্যাঁ, আর একবার কল দিবি তো কালকে চড় একটাও মাটিতে পরবে না রিয়ার বাচ্চা রিয়া।’
কথাটার পাল্টা উত্তরে কিছু বলবে সেই সুযোগটাই পাওয়া হলো না রিয়ার।মুখের উপর কলটা কেঁটে দিল নিষাণ।রিয়া হাসল। হাসিটা মুখে ঝুলিয়ে রেখে একের পর এক কল দিল।কিন্তু রিসিভ করল না নিষাণ।হয়তো সাইলেন্ট করে নিয়েছে।অবশেষে ছোট্ট দীর্ঘশ্বাস ফেলে মোবাইলটা বিছানায় ছুড়ে মারল।চোখের চশমাটা ঠিক করে নিয়ে পা বাড়াল ছাদে।
চলবে….
(কেমন হয়েছে জানাবেন।)