পদ্মফুল #পর্ব_২(অন্তিম পর্ব)

0
1635

#পদ্মফুল
#পর্ব_২(অন্তিম পর্ব)
#নাজমুন_বৃষ্টি

গভীর রাতে মেইন দরজায় কড়া পড়তেই পদ্ম দ্রুত উঠতে নিল দরজা খোলার উদ্দেশ্যে কিন্তু উঠতে চেয়েও আর উঠলো না। সে ঐভাবেই ঘুমের ভান ধরে শুয়ে রইল। আজ গেস্ট রুমে শুয়েছে সে। আর মাত্র আজকের রাতই তো!

অনেক্ষন কড়া নাড়ার পরেও কেউ যখন খুললো না, রাহান ভ্রু কুঁচকে তাকালো। পদ্ম তো প্রতিদিন রাহান এসে দরজা নাড়ার অপেক্ষায় থাকে। এই তিনবছরে কোনোদিন এতবার কড়া নাড়তে হয়নি। মেয়েটার কী অসুস্থ! রাহানের অপেক্ষা না করেই ঘুমিয়ে পড়েছে যে! এমন তো আর হয়নি!

আরও কিছুক্ষন কড়া নাড়ার পরেও যখন কেউ দরজা খুললো না, তখন রাহান পদ্মকে কল করার উদ্দেশ্যে মোবাইল হাতে নিতেই দরজা খোলার শব্দ হলো। সে মোবাইল থেকে চোখ সরিয়ে দরজার দিকে তাকাতেই দেখল, বুলি ঘুম-ঘুম চোখে বিরক্ত-মাখা দৃষ্টিতে দরজা ধরে দাঁড়িয়ে আছে। বুঝাই যাচ্ছে, মেয়েটার সদ্য কাঁচা ঘুম ভাঙাতে বেশ বিরক্ত সে!

রাহানের কোথাও জানি শূন্যতা অনুভব করলো। সে মনে করেছিল, বুলির জায়গায় পদ্ম থাকবে। দরজা খুলেই বিরক্ত-মাখা কণ্ঠে বলে উঠবে,’জানো, তোমার জন্য কতক্ষন ধরে আমি না খেয়ে বসে আছি। তোমার কী সেই ধারণা আছে!’

কিন্তু এমন কিছুই হলো না। বুলি দরজা খুলেই ভাইজানকে দেখেও না দেখার ভান করে রাহান বাসায় ঢুকতেই দরজা লক করে দিয়ে রুমের উদ্দেশ্যে পা বাড়ালো।

-‘তোর ভাবি কই?’

বুলির আজ কেন জানি রাহানকে সহ্য হচ্ছে না। সে না চাইতেও বিরক্ত-মাখা কণ্ঠে উত্তর দিল,
-‘ঘুমাচ্ছে হয়ত। টেবিলে আন্নের খানা রেখে দিছে আমার বুবু। খাইলে খাইয়ে নিন।’ বলেই সে রুমে চলে গেল। তার এই ভাই আর বুবুরে দেখলে মনে হতো, সে সবচেয়ে সুন্দর একটা পরিবারে বাস করছে কিন্তু আজ তার ধারণা ভুল। সে এই মানুষটাকে মনে করতো, উনার মতো মানুষ পাওয়া খুব কঠিন কিন্তু আজ তার ভাবনাকে সম্পূর্ণ ভুল প্রমাণিত করে দিল। মানুষটা এতো কিছুর পরেও কিভাবে আশা করেছে যে বুবু তার অপেক্ষায় থাকবে! ঘরে ঢুকতেই রাহানের আশে-পাশে তাকানো দেখে বুলি বুঝে গেছিল যে রাহান ভাই ভেবেছিল হয়ত বুবু তার অপেক্ষায় ছিল। বুলি মনে মনে ভেংচি কাটলো, হু! নেক্যামি যত্তসব! কেন জানি এই মানুষটাকে তার মোটেও সহ্য হচ্ছে না কিন্তু পদ্ম বুবু কী নির্দ্বিধায় স্বাভাবিক ছিল! বুলি বুঝতে পেরেছিল, বুবু ভেতরে ভেতরে শেষ হয়ে যাচ্ছিলো কিন্তু তবুও মুখ ফুটে কাউকে কিচ্ছু বলেনি। আরও এই মানুষটার জন্যই আজ তার পছন্দের রান্না করেছিল বুবু!

রাহান বুলির যাওয়ার দিকে ভ্রু-কুঁচকে তাকিয়ে রইল। মেয়েটার আবার হঠাৎ কী হলো! এমন সজোরে দরজা বাধারই বা কী কারণ! হঠাৎ হঠাৎ পাগলে ধরে কী না কে জানে!

সে টেবিলে সাজানো খাবারগুলোর দিকে একবার তাকিয়ে রুমে চলে গেল। আজ আর খেতে ইচ্ছে করছে না। প্রতিদিন পদ্ম খাবার টেবিলে তাকে খেতে দিয়ে বসে থাকতো বিধায় একা লাগতো না তাই খেয়ে নিতো কিন্তু আজ তো সে একা। খিদা থাকা সত্ত্বেও সে আর খেলো না।

————–
পদ্মর আজ মনটা ভীষণ খারাপ। সে কাল সকাল সকাল চলে যাবে এই বাড়ি ছেড়ে। এই বাড়ির মানুষ থেকে শুরু করে ক্ষুদ্র থেকেও ক্ষুদ্র প্রতিটা জিনিসের উপর তার মায়া জন্মে গিয়েছে। কিভাবে থাকবে সে!

আচ্ছা? রাহান তাকে কিভাবে পারলো এই কথাগুলো বলতে! সারাদিন পর রাহানের সাথেই তো প্রাণ খুলে একটু কথা বলতে যায়, সেই কথাগুলোও রাহানের কাছে বেজায় বিরক্ত লাগে!
কী জানি! বিয়ের তিনবছর পেরিয়ে গেছে, হয়ত এখন আর এসবে ওর মন গলে না। এতো বছরে তো বিরক্ত আসতেই পারে। জোর করে তো আর কিছু হয় না। সে যখন বলেই দিয়েছে, মুক্তি চায়। তাহলে মুক্তি দিবে পদ্ম। না চাইতেও এসব ভুলতে হবে তার।

পদ্ম আর কিছু না ভেবে শাশুড়ির রুমের দিকে অগ্রসর হলো।
রুমে গিয়ে আবছা অন্ধকারে শাশুড়ির পায়ের নিচে বসে পড়লো। এই মানুষটাকে সে না চাইতেও বিয়ের প্রথম দিন থেকেই মায়ের আসনে বসিয়ে ফেলেছে। কিভাবে থাকবে মানুষটাকে ছাড়া!

———-

রাহান রুমে গিয়ে লাইট অন করে দেখল, কেউ নেই। কিন্তু পদ্ম কই গেল!
সে এতকিছু না ভেবে ওয়াশরুমে চলে গেল ফ্রেশ হওয়ার উদ্দেশ্যে। ফ্রেস হয়ে এসেও রুমের কোথাও পদ্মকে না দেখে ভ্রু কুঁচকে তাকালো। বিয়ের এই তিনবছরে কোনোদিন পদ্ম এই রুম ছাড়া কোথাও থাকেনি, এমন কী বাবার বাড়ি গেলেও চলে আসতো। সে সবসময় বলতো,’এই রুমটাতে না শুইলে আমি ঘুমাতে পারি না!’

তখন রাহান হেসে বলতো,’ এই রুমটা না-কি এই রুমের মানুষটাকে ছাড়া থাকতে পারো না!’
তখন পদ্ম হেসে কিল বসাত স্বামীর গায়ে। আর রাহানও শেষপর্যন্ত প্রিয়তমাকে পরম আদরে বুকে জড়িয়ে নিতো।

রাহান আশেপাশে তাকিয়ে কোন সময়ে ভাবনায় চলে গেল! সে মাথা নেড়ে মোবাইলের দিকে দৃষ্টি দিল। মনে করেছিল, মোবাইলের স্ক্রিনের দিকে তাকাতেই পদ্মর নাম্বার থেকে এতো এতো কল থাকবে কিন্তু এমন কিছুই হলো না আজ।
এমন তো কোনোদিন হয়নি!
এই তিনবছরে রাহান রাতে ফিরতে একটু দেরি হলেই রাহানকে ফোনের উপর ফোন করতে থাকত অথচ আজ একটা কল দিয়ে পর্যন্ত দেখলো না!
এতদিন পদ্মর এই কার্য-কলাপগুলোর উপর রাহান বেজায় বিরক্ত হলেও এখন বুঝতে পারছে সে পদ্মর এই অভ্যাসে পরিণত হয়েছে।

সে টাইম দেখে শুয়ে পড়তে নিলে কী বুঝে যেন রুম থেকে বেরিয়ে মায়ের রুমের দিকে এগিয়ে গেল।

মায়ের রুমে এগিয়ে যেতেই আবছা অন্ধকারে একটা প্রতিচ্ছবি মায়ের পায়ের ধারে বসে থাকতে দেখে সে কিছুক্ষন থমকে গেল।

আস্তে আস্তে আরও এগিয়ে গিয়ে বুঝতে পারল, এটা পদ্ম। পদ্ম মেঝেতে হাঁটুমুড়ে বসে রহিমা বানুর পায়ের ধারে মাথা রেখে ঘুমিয়ে পড়েছে।

রাহান এগিয়ে মাকে একবার দেখে নিল। মা ঘুমাচ্ছে। মায়ের মাথায় হাত বুলিয়ে চলে আসতে নিলে পদ্মর দিকে চোখ পড়লো। মেয়েটা শীতে কাঁপছে। তবুও শাশুড়ির পায়ের ধার থেকে উঠছে না। সে দৌড়ে তার রুম থেকে একটা পাতলা কাঁথা নিয়ে এসে জড়িয়ে দিল।
আবছা অন্ধকারে মেয়েটার মুখের দিকে তাকিয়ে বুঝতে পারলো, অনেকদিন মেয়েটাকে মন দিয়ে দেখা হয় না। এখন মনে হচ্ছে, আজ কয়েক যুগ পরে মেয়েটার দিকে তাকিয়েছে।
কেন জানি, সবকিছুতে বিরক্ত লাগে। অফিসের এতো এতো চাপে কিছুতে মন বসাতে পারে না। রাহানের মাথা ধরেছে। এই মুহূর্তে এক মগ কফি হলে মন্দ হয় না কিন্তু পদ্মর সাথে আর আগের মতো সেই সম্পর্ক নেই যে পদ্মকে বলবে অথবা রাহান বলার আগেই পদ্ম চুপচাপ কফি এনে চোখের সামনে রাখবে। রাহান আর কিছু না ভেবে নিজের রুমে গিয়ে শুয়ে পড়লো।

————–

প্রিয়,
আপনি হয়ত সকালে উঠে প্রচুর রেগে গিয়েছেন কারণ আজ আপনাকে জাগায়নি বলে। তাই তো অ্যালার্ম দিয়ে দিয়েছি। আজ থেকে অ্যালার্ম এর অভ্যাস করুন। আপনার ঘুম ভারী তাই পরপর দুইবার অ্যালার্ম দিয়েছি কিছু মনে করবে না। প্রতিদিন দুইবার করেই দিও নাহলে অফিসে গিয়ে গালি খেতে হবে।
কি নামে ডাকবো বলো তোমায়?আমার দেয়া ভালোবাসার সব নাম তুমি এখন ভুলে গেছো। সমস্ত আমি’টাই এখন তোমার কাছে অতীত।
নাহ,কোন অভিযোগ করছি না। তোমার বিরুদ্ধে আমার কোন অভিযোগ, অনুযোগ কিছুই নেই। আসলে অনুভূতি গুলোই মরে গেছে। তোমার কি দোষ বলো,সব দোষ সব ভুল আমার। আমিই তোমাকে সম্পূর্ণ না জেনে তোমার পছন্দ/অপছন্দের কথা না ভেবে তোমায় সবসময় বিরক্ত করতাম। ভাবতাম, বিয়ের পর পর প্রথম দিনগুলোর মতো আজও তুমি অফিস থেকে ফিরে আমাকে খুজবে!আমার পাগলামিগুলো মিস করবে। তাই তো তুমি অফিস থেকে ফেরার সাথে সাথে তুমি বলার আগেই আমি হাজির হয়ে যেতাম..। আচ্ছা? তোমার কী প্রথম প্রথম দিনগুলোর কথা মনে আছে? আগে তো তুমি আমার এই কাজগুলোকে ভীষণরকম পছন্দ করতে। কিন্তু এখন এতো বিরক্ত! আমি মিলাতে পারছি না। আমি তো আগের মতোই আছি। তখন তো আমি লজ্জায় বা সংকোচে আসতাম না কিন্তু এখন আর এসব লাগে না তাই হয়তো তোমার আর ভালো লাগে না, তাই না?
মাঝে মাঝে নিজেকে প্রশ্ন করি,
কিভাবে এতটা ভুল করলাম আমি? হয়ত অনেক আগেই আমার উপর থেকে তোমার মন উঠে গিয়েছে কিন্তু কী পাগল দেখো আমি। বুঝতেই পারিনি। বুঝলে হয়ত আরও অনেক আগে সরে যেতাম। তোমাকে এতো বিরক্ত হওয়া লাগতো না।

হয়ত আজকের বিষয়টা তুমি অনেকদিন আগে থেকে মাথায় নিয়েছো কিন্তু মুখ ফুটে বলোনি। নাহলে এতো স্বাভাবিক ভাবে কিভাবে বলতে পারলে -মুক্তির কথা! ভালোবাসাটা কী একদম মরে গিয়েছে! তোমার মনে কী আমার জন্য একটুও জায়গা নেই! এতোই মূল্যহীন হয়ে গেলাম!

তুমি কি পারবে ফিরিয়ে দিতে আমার ফেলে আসা সেদিন গুলো?
পারবে দিতে ফিরিয়ে আমার বিনিদ্র সে রাত গুলো। যে রাত গুলো কেটেছে শুধুই তোমায় সাথে । জানি পারবে না। যেখানে আমার ভালোবাসার ই কোন মূল্য নেই তোমার কাছে সেখানে আমার চোখের জলের কি মূল্য দেবে তুমি?
তোমার যে ব্যপার টা আমাকে সবচেয়ে বেশী অবাক করে তা হলো তোমার অনুশোচনাহীন অনুভূতি। তোমার ভেতর আমি এতটুকু অনুশোচনা,আত্নগ্লানি দেখিনি। মুক্তির কথা মাথায় রেখেও কি অদ্ভুত ভাবে তুমি এতদিন স্বাভাবিক জীবন যাপন করছো।

অভিযোগ করবোনা বলেও অনেক অভিযোগ করে ফেললাম। কি করবো বলো,আমার আগের দিনগুলো আমাকে ঘুমোতে দেয় না।

পরিশেষে বলছি,সবসময় ভালো থেকো। আম্মার খেয়াল রেখো। আম্মা দুই-চারটা বকা দিলে অভিমান করিও না। রাতে ঠিকটাইমে বাসায় ফিরে আসিও। এখন তো আর আমি থাকবো না তাই তাড়াতাড়ি ফিরে এসে আম্মাকে টাইমমতো ওষুধটা দিও। আর শুনো, এসেই ওষুধ খাওয়াইওনা। আগে খাবার খাইয়ে দিও। বুলি ওষুধ দিতে জানে না, আর আম্মা বুলিকে খাবার নিয়ে অনেক ঘুরায়, খেতে চায় না। আর সকালে অফিস যাওয়ার আগে তোমার চোখের সামনে আম্মাকে নাস্তা করতে দিও। বুলি ইদানিং স্কুল যেতে চায় না, ওকে একটা কড়া করে ধমক দিও। আবার দেখিও, রাম-ধমক দিও না। তখন আবার বেচারি কেঁদে-কেটে অবস্থা খারাপ করে ফেলবে। আর তোমার কফি বুলি বানাতে পারে না তাই আমি একটা মেশিন এনে রেখেছি, তোমার ব্যাড সাইটে রেখেছি। নিজে নিজে খেয়ে নিও। আলমারি থেকে একটা কাপড় নিতে গিয়ে সব কাপড় ফেলে দিও না। আমি ভাজ ভাজ করে রেখেছি। একটা একটা করে রেখো।

যদি কখনও ভুল করে মনে পড়ে ফিরে এসো।তোমায় ফেরাবো না আমি। তোমায় ফিরিয়ে দেয়ার সাহস আমার নেই। কারণ, আমি ছলনা করিনি
আমি তোমায় বড় বেশী ভালোবাসি।
ভালো থেকো। নিজের এবং পরিবারের খেয়াল রেখো। আমার দোয়া সবসময় থাকবে। অনেক বড় মানুষ হও।
শুভ কামনা~

———

চিঠি পরেই রাহান স্তব্ধ হয়ে গেল। সে চারপাশে তাকিয়ে পদ্মর অস্তিত্ব বুঝার চেষ্টা করলো কিন্তু পেলো না। আজ তার ভুল হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছে। অফিসের কাজের চাপে পদ্মকে বিরক্ত লাগতো আর সে ভাবতো সে বুঝি পদ্মকে আর ভালোবাসে না। ভালোবাসার পার্থক্যও বুঝতে পারলো না সে!

আজ উঠতে ভীষণ দেরি করে ফেলেছে। অ্যালার্ম এর শব্দে বিরক্তিমাখা কণ্ঠে পাশে তাকিয়ে পদ্মকে গালি দিতে গিয়ে চিঠিটা দেখে মুহূর্তের মধ্যে তার ঘুম উবে গিয়েছিল।

সে দ্রুত ওই অবস্থায় ট্রাওজার পড়ে বেরিয়ে গেল ঘর থেকে। তার পদ্মকে আটকাতে হবে। তার পদ্মকে ছাড়া চলা সম্ভব না। দ্রুত গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে গেল। রহিমা বানু দেখেও আটকালো না।

————-

ট্রেন ছেড়ে দিবে। পদ্মর চোখ ভারী হয়ে আসছে। অনেকে তাদের প্রিয়জনকে বিদায় জানাতে এসেছে। ঠিক এরকম প্রতিবার রাহান আর রহিমা বানুও আসতো পদ্মকে বিদায় দিতে। রাহান তো পুরোপুরি পদ্মর সাথেই চলে যেত, এরপর সন্ধ্যার দিকে ফিরতি ট্রেনে পদ্মকে সাথে করে নিয়ে আসতো।
এই প্রথম পদ্ম একা যাচ্ছে। প্রতিবার তার পাশের সিটে রাহান থাকতো অথচ আজ নেই।
“আজ থেকে আর থাকবেও না” ভাবতে গিয়েই পদ্মর চোখ বেয়ে জল গড়িয়ে পড়লো। মানুষটা কখনো পদ্মকে একা কোথাও ছাড়েনি। আচ্ছা? যে মানুষটা সবসময় তাকে আগলে রাখতো সে মানুষটা নাহয় একটু-আধটু রাগারাগি করতেই পারে তাই বলে পদ্ম মানুষটার মুখের উপরে কথাটা নিয়েই মানুষটাকে ছেড়ে একেবারের জন্য চলে যাবে!
মানুষটা সারাদিন অফিস থেকে ফিরে একটু বিরক্ত হয়ে কিছু কথা বলতেই পারে তাই বলে পদ্ম রাগ করে ছেড়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিবে! তারও তো বুঝা উচিত। এতটুকু যদি না বুঝে তাহলে বাইরের মানুষ আর সহ-ধর্মিনীর মধ্যে পার্থক্য কী রইল!
মানুষটা রাগী, জেদি। যা মুখে আসে তা না ভেবেই বলে দেয়। পদ্ম সহধর্মিনী হয়েও কেন বুঝলো না মানুষটাকে! এই ছোটোখাটো কথায় এতো সুন্দর পরিবার ছেড়ে চলে যাবে পদ্ম! এমন হলে সহ-ধর্মিনী কেন হলো! যদি মানুষটাকে বুঝতে না পারে!

ট্রেন ছেড়ে দিচ্ছে। আস্তে আস্তে চলা শুরু করবে। সবাই সবার প্রিয়জনরে হাত নেড়ে বিদায় দিচ্ছে। পদ্ম চোখ মুছে উঠে দাঁড়ালো। সবার প্রিয়জনদের মাঝে উষ্ক-পুষ্ক চুলে রাহানকে ট্রেনের দিকে দৌড়ে আসতে দেখা গেল। পদ্মর চোখ দিয়ে অশ্রু গড়িয়ে পড়লো। ঠোঁটের কোনায় হাসির রেখা। সে দ্রুত এগিয়ে ট্রেন থেকে নেমে পড়লো। ট্রেন চলা শুরু করল। রাহান ভেবেছিল, সে পদ্মকে বুঝি হারিয়ে ফেলতে চলেছিল। ভিড়ের মধ্যে দিয়ে পদ্মকে দেখে সে দৌড়ে গিয়ে জড়িয়ে ধরলো। এইতো তার বাঁচার সম্বল। তার প্রাণ এতক্ষনে বুঝি ফিরে এলো। বুঁকের মাঝখান থেকে পদ্মকে তুলে হাত দিয়ে ছুঁয়ে দিল।

দুইজনেই অভিমান ভুলে একসাথে ক্ষমা চাইলো। এই না হলে সহ-ধর্মিনী। এই না হলে স্বামী। যদি একজন আরেকজনকে নাই বুঝে তাহলে তাদের সাথে বাইরের কারো আর পার্থক্য কিসে!

#সমাপ্ত

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here