পদ্মাবতী,পর্ব-৬
নাহার
সামিরের পরিবার চলে যাওয়ার পরে নাস্তার প্লেট গুছিয়ে রাখলো পদ্ম। ঘরটা গুছিয়ে শাড়িটা ছেড়ে ঘরোয়া কাপড় পড়ে এশার নামাজে দাঁড়িয়ে গেলো। নামাজ শেষে পদ্ম বিছানায় চুপটি করে বসে আছে। খাওয়া শেষে হাত ধুয়ে সামির হাতের পানির ঝাপটা পদ্মের মুখে মেরে দ্রুত সরে যায় সেখান থেকে। পদ্ম তখন এদিকেই আসছিলো তাওয়াল নিয়ে। সামিরের এহেন কান্ডে পদ্ম নতজানু হয়ে দাঁড়িয়ে ছিলো। সামির মিটিমিটি হেসে সরে যায়। কিছুক্ষণ আগের ঘটে যাওয়া ঘটনাগুলো মনে করে পদ্ম আনমনেই লালচে হয়ে উঠছে লজ্জায়। নিলা এসে পাশে বসলে পদ্ম স্বাভাবিক হয়ে বসে। সামিরের চিন্তা একেবারেই মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলে। নিলা কোমল গলায় বললো,
— “কেমন লাগলো সামিরকে?”
নিলাও মিটিমিটি হাসছে। পদ্ম লজ্জায় মাথা নিচু করে ফেললো। হঠাৎই পদ্মের চোখ ছলছল করে উঠে। পদ্মের চোখ লালচে বর্ণ ধারণ করে। নিলা সেদিকে তাকিয়ে পদ্মকে একহাতে জড়িয়ে ধরে আদুরে গলায় বললো,
— “প্রতিটা মেয়েকেই স্বামীর বাড়ি যেতে হয়। নিজের ঘর, পরিবার ছেড়ে আরেকটা পরিবারকে নিজের করে নিতে হয়। কষ্ট পাস না। সময়ের সাথে সব ঠিক হয়ে যাবে।”
পদ্ম কান্না আটকে রেখে মিনমিনে স্বরে বললো,
— “সরি আপু।”
নিলা পদ্মের মুখের দিকে তাকালো ভালো করে। কান্নার দমকে পদ্মের শরীর কেঁপে উঠছে বারবার। নিলা বুকের সাথে জড়িয়ে ধরে পদ্মকে। ঠিক তেমন করে ছোট বেলায় পদ্ম ভয় পেলে যেভাবে জড়িয়ে ধরতো। নিলা পদ্মের মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বললো,
— “সরি বলছিস কেনো পাগলি?”
দুজনেই চুপ করে ছিলো। পদ্ম কান্নার কারণে কথাই বলতে পারছে না। পদ্মের খুব কষ্ট লাগছে। নিজের জন্য নয়। নিলার জন্য। সাথে একটা অপরাধবোধ। পদ্ম বেশ খানিক সময় পর কাঁদো স্বরে বললো,
— “আমার অবাধ্যতার কারণে তোমার বাম চোখের দৃষ্টি কমে গেছে আপু। শুধু আমার কারণে। তোমার এই অবস্থার জন্য শুধুই আমি দায়ী। মাফ করে দিও আপু…… প্লিজ।”
নিলা আরেকটু শক্ত করে পদ্মকে নিজের সাথে চেপে ধরে। খুব ভালোবাসে পদ্মকে। খুব বেশিই। তাই পদ্মের কান্না সহ্য হয়না নিলার। পদ্মের গাল এবং চোখের নিচের পানি মুছে দিলো। পদ্মকে এখন চার পাঁচ বছরের বাচ্চার মতো লাগছে। ছোটবেলায় ব্যাথা পেলে বা পদ্মকে বকলে তখন ঠিক এভাবেই কেঁদে বুক ভাসাতো। পদ্মের মুখের দিকে তাকিয়ে নিলা হাসলো। ছোটবেলার কথা মনে পরে গেছে। পদ্মের কপালে চুমু দিয়ে আবারো জড়িয়ে ধরে। বললো,
— “আমার চোখের দৃষ্টি কমে যাবে সেটাতো আমি দুনিয়ায় আসার আগেই লিখা হয়ে গেছিলো। নিজের দোষ দিচ্ছিস কেনো। আল্লাহ আমাকে এভাবেই ভালো রাখতে চেয়েছেন। আর দেখ আমি কিন্তু তোর মাহিব ভাইয়ার সাথে অনেক ভালো আছি। তাই আর কখনো নিজের দোষ দিবি না। সেই চার বছর আগের কথা আর মনে রাখিস না। ভুলে যা।”
— “আমি যে সবসময় অপরাধবোধে ভুগছি আপু। আমি নিজেকে কিভাবে স্বাভাবিক করবো?”
— “একটা মা যখন সিজারে বাচ্চা প্রসব করে তখন কিন্তু পেটে সেলাইয়ের দাগ থেকে যায়। তখন মা কি বলে, আমার পেটে তোর জন্য দাগ পড়েছে তাই তোকে ভালোবাসবো না। অথবা, তোর জন্য শুধুমাত্র তোর জন্যই আমার এই সুন্দর শরীরের দাগ পরেছে। কখনো ক্ষমা করবো না। কখনো দেখেছিস এসব বলতে? বরং মা তার সেই সন্তানকে দেখে খুশিতে তার সব কষ্ট ভুলেই যায়। তোকে আমি জন্ম দেয়নি ঠিক। কিন্তু আমিতো তোকে মেয়ের মতো করেই আদর যত্নে বড় করেছি। সেই তুই একটু দাগ দিয়েছিস তাই বলে কি ভালোবাসা বন্ধ করে দিবো? কখনোই না। তোকে জন্মের পরের দিন থেকেই আমি লালন পালন করেছি পদ্ম। আর কখনো এসব বলবি না।”
নিলার কণ্ঠ ভারি হয়ে এলো। পদ্ম নিলাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বললো,
— “ভালোবাসি আপু তোমাকে। খুব বেশি। আমি কিভাবে থাকবো তোমাকে ছাড়া? আমি কিভাবে অন্য জায়গায় মানিয়ে নেবো তোমাকে ছাড়া? আমার সারা জীবন জুড়েই তো শুধু তুমি ছিলে আপু।”
দুইবোন একসাথে কাঁদছে। মনিরা এসে ওদের দেখে হেসে ফেললেন। চারবছর আগে যেদিন নিলা পদ্মের ভাইরাল হওয়া ভিডিও দেখে সেন্সলেস হয়ে খাট থেকে পরে যায় তার একমাস পর জানতে পারলো নিলার বাম চোখের দৃষ্টি কমে গেছে। অনেক ক্ষীণ আলো তার বাম চোখে। তাই ডাক্তার নিলাকে চশমা পরতে দিয়েছে। তা না হলে ডান চোখেরও ক্ষতি হবে। পদ্ম এই একটা কারণেই সবসময় অপরাধবোধে ভুগে। মনিরা দুইবোনের মাথায় চুমু দিয়ে বললেন,
— “আরো কাঁদবি নাকি খেতে আসবি?”
দুইজন স্বাভাবিক হয়। নিলা পদ্মের কপালে চুমু দিয়ে রুম থেকে বের হয়ে আসে। পদ্মও বেরিয়ে আসে নিলার পেছনে। সবাই একসাথে বসে খেয়ে নেয়।
——————————
পরেরমাসে পদ্মের বিয়ে তারিখ ফেললো। তারা এসে আকদ করিয়ে ফেলবে। তার একসপ্তাহ পর ওয়ালিমা করে বউ উঠিয়ে নেবে। এভাবেই সব ঠিক হলো। পদ্মের শ্বাশুড়ি শপিং এর জন্য পদ্মকে নিয়ে যেতে চেয়েছেন। কিন্তু পদ্ম যায়নি। এমনিতেই লজ্জা পাচ্ছে। আবার যদি ভুল ক্রমে সামিরের সামনে পরে তো লজ্জায় সেখানেই মিশে যাবে। তাই সে যায়নি। নিলা এবং পদ্মের শ্বাশুড়ি দুজনে মিলে বিয়ের সব শপিং করেছে।
দেখতে দেখতে তথাকথিত সেই দিন চলে এলো। সকাল থেকেই তোড়জোড় চলছে ভিষণ। নিলা কিছুক্ষণ পরপর এসে পদ্মকে দেখে যাচ্ছে। পদ্ম লজ্জায়, এক অজানা ভয় এবং অনুভূতিতে ভেতরে ভেতরে কেঁপে উঠছে। বিয়ের শাড়ি খুলে দেখার সময় সেখানে এক টুকরো কাগজ পেলো পদ্ম। যাতে লিখা ছিলো, “আজ রাতে মন ভরে দেখবো তোমায়। লজ্জাবতী।” তারপর থেকেই পদ্মের এই অবস্থা।
যথাসময়ে সামিরের পরিবার চলে এলো। চাচা, জেঠার ছোট বাচ্চাগুলো “বর এসেছে, বর এসেছে” চিৎকার শুরু করে দিয়েছে। পদ্মের কানে চিৎকার চেচামেচির আওয়াজ আসতেই পদ্ম লজ্জায় আরো গুটিয়ে গেলো। বুকের ভেতর ঢিপঢিপ শুরু হয়েছে। বারবার মনে হচ্ছে, এই বুঝি সামির এসেই তার হাত ধরে বলবে, “এই যে লজ্জাবতী আজ কিন্তু আমি সম্পূর্ণ অধিকার নিয়েই তোমায় দেখতে এসেছি।” পদ্ম লজ্জায় দুইহাতে মুখ ঢেকে নিলো। না চাইতে মনটা হাজার স্বপ্নের আঁকিবুঁকি করছে। একটা ছোট্ট সংসার হবে তার, স্বামী হবে, শ্বশুর শ্বাশুড়ি ভাবতেই পদ্মের ঠোঁট প্রসারিত হয়ে উঠছে।
যথাসময়ে পদ্মের বিয়ের কার্যক্রম শেষ হলো। বিয়ের আসরেই সামির পদ্মকে দেহমোহর সম্পূর্ণ শোধ করে দিলো। বিয়ের আসরে অনেকেই অবাক হয়েছে। এভাবে কেউ দেহমোহর তো শোধ করে না।
আমাদের সমাজে দেহমোহর দিগুণ ধরে নিয়ে মনে করে ছেলেটাকে মেয়ের সাথে বেঁধে রাখবে। যদি কখনো ডিভোর্সের কথা উঠে তাহলে এই মোটা অঙ্কের দেহমোহরের কারণে আটকা পরে যাবে। এটা একটা ট্রেন্ড হয়ে গেছে। বিয়ের কথা উঠলেই আগেই ডিভোর্সের কথা চিন্তা করে রাখে। হাস্যকর। অথচ রাসূল (সাঃ) বলেছেন, কম দেনমোহরে ছেলে মেয়েদের বিয়ে দিয়ে দিতে। এছাড়া রাসূল (সাঃ) বলেছেন, “ভবিষ্যতে আমার উম্মতগণ বিয়ের পরেও যিনায় লিপ্ত থাকবে। এক হলো তারা দেহমোহর পরিশোধ না করে। আর দুই হলো সেই সব পরিবার যারা ঝগড়ার সময় স্বামীকে বলে, তোমার ভাত আমি আর খাবো না। তোমার সংসার করবো না। এইসব বলে তারা বাপের বাড়ি চলে যায়। মনমালিন্য শেষ হলে আবার এসে সংসার শুরু করে। অথচ তাদের এইধরনের কথার কারণে বিয়ের মতো পবিত্র বন্ধনে তারা আর আবদ্ধ থাকে না।”
সব মেহমানকে খাওয়া দাওয়া জন্য বসানো হয়েছে। পদ্মের শাশুড়ী, নিলা এবং ফুপির সাথে খোশ গল্পে মেতেছেন। পদ্ম নিজের রুমে বসে আছে। একটু পর দরজায় খট করে আওয়াজে পদ্ম পেছন ফিরে তাকালো। এখনো কেউ রুমে প্রবেশ করেনি। তবুও বুকের ভেতর ঢিপঢিপ করছে। ঘামতে শুরু করেছে পদ্ম। চোখ বন্ধ করে একহাতে মাথাটা চেপে ধরেছে। হঠাৎ গম্ভীর স্বরে কেউ বললো,
— “মাথা কি বেশি ব্যাথা করছে?”
পদ্ম ঝট করে চোখ খুলে ফেললো। সামিরকে নিজের এতো কাছাকাছি দেখে মনে হলো হৃদপিন্ড লাফ দিয়ে মুখে চলে এসেছে। দুই কদম পিছিয়ে গেলো পদ্ম। এখন আরো বেশি ঘামছে। কপাল বেয়ে চিকন ঘাম গড়িয়ে পরছে। সামির একই জায়গায় বুকের উপর দুইহাত ভাজ করে দাঁড়িয়ে পদ্মের দিকে তাকিয়ে আছে। পদ্মের এমন অবস্থা দেখে সামিরের খুব হাসি পেলো। তবুও যথেষ্ট গম্ভীর হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। পদ্ম বিব্রতবোধ করছে। কি করবে বা কি বলবে বুঝতে পারছে না। সামির আবার বললো,
— “তোমার কি খুব বেশি মাথা ব্যাথা করছে? আমি ম্যাসেজ করে দিবো?”
পদ্ম তৎক্ষনাৎ ঝট করে বললো, “না।”
সামির ভ্রু কুচকে তাকালো। পদ্ম জোরপূর্বক হেসে কাঁপা কাঁপা কণ্ঠে বললো, “না মানে…আ..আসলে লা..ল..লাগবে না।” পদ্ম কোনোরকম উত্তর দিয়ে মাথা নিচু করে ফেললো। সামির এবার এগিয়ে এলো পদ্মের দিকে। পদ্মের আধা হাত দূরত্বে দাঁড়িয়ে কণ্ঠে আবেগ মিশিয়ে বললো,
— “এতো বেশি নার্ভাসনেস এর কারণ কি? আমিতো আজকে কিছু করবো না।”
পদ্মের কি হলো কে জানে মেঝেতে বসে ফুপিয়ে কেঁদে ফেললো। সামির একটু ঘাবড়ে গেলো। তারপর মুচকি হেসে পদ্মের সামনে বসে পড়লো। পদ্মের একহাত নিজের হাতের মুঠোয় নিয়ে বললো,
— “কি হয়েছে আমাকে বলা যায়না?”
পদ্ম ফুপিয়ে কেঁদে বললো, “আমি… আমি খুব অপবিত্র। কেন আমাকে বিয়ে করলেন? আপনি জানতেন না আমার একটা ভিডিও…।”
পদ্ম আর কিছু বলতে পারলো না। সামির পদ্মের ঠোঁটে আঙ্গুল চেপে ধরে চুপ করিয়ে দিয়েছে। পদ্ম ভেজা চোখে সামিরের মুখের দিকে তাকালো। সামির পদ্মের কপালে এসে পরা অবাধ্য চুলগুলো সরিয়ে দিয়ে বললো,
— “ভুল করার পর তওবা করে আল্লাহর দরবারে ফিরে আসার পর সেই মানুষটা যেভাবে আল্লাহকে আকড়ে ধরতে চায় সেটা কখনো ভুল না করা মানুষ বুঝতে পারে না পদ্মাবতী। তুমি ভুল করেছো এখন তওবা করেছো এরচেয়ে বেশি কিছু জানার প্রয়োজন নেই আমার। শুনো, আল্লাহ বলেন দুনিয়ায় যদি তার বান্দা ভুল না করতো তাহলে তিনি আমাদের ধ্বংস করে দিয়ে এমন এক জাতি সৃষ্টি করতেন যে ভুল করবে এবং ভুল বুঝতে পেরে আল্লাহর দরবারে ফিরে এসে তওবা করে ক্ষমা চাইবে। কারণ আল্লাহ বারবার ক্ষমা করে দিতে ভালোবাসেন।”
পদ্ম চোখ মুছে তাকালো সামিরের দিকে। সামির দুষ্টুমি করে বললো, “কান্না থামালে কেনো? আরেকটু কাঁদো দেখতে ভালোই লাগছিলো।”
পদ্ম ভেঙচি দিলো। খেয়াল করে দেখলো পদ্মের দুই হাটু সামিরের কোলে। পদ্ম তাড়াতাড়ি সরিয়ে নিলো হাটু। দুইজনে উঠে দাঁড়ালো। সামির চেয়ারে বসে বললো,
— “এরপর যদি আবার এসব কথা শুনি তো একটা গভীর ডোজ দিবো। তাতেই সেরে যাবে।”
পদ্ম অবাক হয়ে বললো, “কিসের ডোজ?”
সামির হাতের ঘড়ি ঘুড়িয়ে ঘুড়িয়ে দেখে বললো,
— “কবুলও বলেছি দেনমোহরও পরিশোধ করেছি তাহলে তো সম্পূর্ণ হালাল তুমি আমার জন্য। ডোজ কি এখন লাগবে? আমার কিন্তু একদম আপত্তি নেই। চাইলেই দিতে পারি।”
সামির পদ্মের দিকে তাকিয়ে চোখ টিপ দিলো। পদ্ম বিষম খেলো। এভাবে তাকে লজ্জায় ফেলবে ভাবতেই পারেনি পদ্ম। আর কোন ডোজের কথা বললো পদ্মের মাথাই এলো না এতোক্ষণ। উহ..লোকটা বেশ দুষ্টু। পদ্ম মাথা নিচু করে বসে রইলো। লজ্জায় লাল হয়ে যাচ্ছে। সামির পদ্মের দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসলো। পদ্ম এখনো মাথা নিচু করেই বসে আছে। সামির উঠে দাঁড়িয়ে বললো,
— “আমার সময় শেষ। আসছি। এক সপ্তাহ পর নিয়ে যাবো তোমায়।”
সামির এক কদম এগিয়ে গেলে পদ্মও সামিরের পেছন পেছন আসে। দরজা দিয়ে বেরিয়ে যাওয়ার আগে সামির ঘুরে দাঁড়িয়ে পরে৷ পদ্ম প্রশ্নবোধক চাহনিতে চেয়ে রইলো সামিরের দিকে। সামির মুখটা গম্ভীর করে বললো,
— “তোমাকে রেখে যেতে ইচ্ছে করছে না। মনটা একেবারে সায় দিচ্ছে না। উহ!… কি যাদু করিলা আমায়?”
পদ্ম মাথা নিচু করে মুচকি হাসলো। সামির আরেকটু এগিয়ে এসে পদ্মের কপালে উষ্ণ পরশ দিতেই পদ্ম চোখ বন্ধ করে সামিরের পাঞ্জাবি খামছে ধরলো। সামির বেরিয়ে গেলো। আর যাওয়ার সময় রেখে গেলো পদ্মের মনে একরাশ স্বচ্ছ অনুভূতি। পদ্মের এখন অন্যরকম লাগছে। মনের কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে গেলো সামিরের ছোট্ট একটা উষ্ণ ছোয়ায়।
.
রাত একটা বাজে। এখনো ঘুম আসছে না পদ্মের। উঠে বসলো। খাটের কোণে হেলান দিয়ে বসে বালিশ বুকে জঁড়িয়ে ধরেছে। বারবার সন্ধ্যার সময়টা মনে পরছে। পদ্মের জীবনে শ্রেষ্ঠ সময় ছিলো আজকের সন্ধ্যা। হয়ত এরপরের প্রতিটা মুহুর্ত তার জন্য শ্রেষ্ঠ মুহুর্ত হবে। সামিরের কণ্ঠ এখনো পদ্মের কানে বাজচ্ছে। সামিরের দুষ্টু হাসি, চোখ মারা আর..আর যাওয়ার সময় সেই উষ্ণ পরশ পদ্মের রঙহীন জীবনটা আবারো রাঙিয়ে তুললো। পদ্ম আজ মর্মে মর্মে উপলব্ধি করছে হালাল স্পর্শে কতটা ভালোলাগা মিশে থাকে। নেই কোনো লুকোচুরি, নেই কোনো অপরাধবোধ। স্রষ্ঠা যেনো এক সাগর ভালোবাসা ঢেলে দেন দুইজন অপরিচিত নর নারীর হৃদয়ে শুধু মাত্র একটা পবিত্র লাইন উচ্চারণের মাধ্যমে। পদ্মের কানে সামিরের বলা কথাটা প্রতিধ্বনি হচ্ছে, “কি যাদু করিলা আমায়?” পদ্মের মনে হচ্ছে সামিরই ওকে যাদুতে বশ করে ফেলেছে।
চলবে,,,