পদ্মাবতী,সূচনা পর্ব

0
5813

পদ্মাবতী,সূচনা পর্ব
লেখা: নাহার

সকাল থেকেই টিপটিপ বৃষ্টি পড়ছে। কখনো আবার দুনিয়া অন্ধকার করেই বৃষ্টি নামছে। নিলা বারবার তার ছোট বোনকে বলছে,
— “বোন আজ কলেজ যাওয়ার দরকার নেই। দেখ বাইরে বৃষ্টি পরছে। আজ বাসায় থেকে যা।”

সকাল থেকে বড় বোনের ঘ্যানঘ্যান শুনতে শুনতে পদ্মের মাথাটা খারাপ হয়ে গেছে। কাবার্ড খুলে সাদা ড্রেস বের করে নিলাকে পাশ কাটিয়ে ওয়াশরুমে চলে গেলো। নিলা হতাশ হয়ে বসে রইলো পদ্মের খাটের উপর। পদ্ম ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে নিলাকে বসে থাকতে দেখে আরেকদফা বিরক্ত হয়ে বললো,
— “আপু প্লিজ আমাকে আমার মতো চলতে দাও। আমি তোমার রুলস ফলো করতে পারবো না।”

— “তুই এই বৃষ্টির মধ্যে সাদা জামা পরে যাবি বাইরে?”

— “হ্যাঁ। কি সমস্যা এতে?”

নিলা পদ্মের হাত ধরে টেনে পাশে বসিয়ে দুই হাতে গাল ধরে বললো,
— “আমার বোনটাকে তো ভিজে গেলে সদ্য ভেজা পদ্মের মতো স্নিগ্ধ লাগে। আর এই স্নিগ্ধতা অন্য কেউ দেখে মজা নিবে এটা তো মানতে পারছি না বোন। এভাবে বাইরে যাস না।”

পদ্ম বিরক্তিতে কপাল কুচকে ফেলতো। এক ঝটকায় সরে দাঁড়ালো। নিলা হতাশ চোখে তাকিয়ে আছে। পদ্ম ব্যাগ গুছিয়ে নিয়ে বের হওয়ার সময় বললো,
— “আপু আমরা ফ্রেন্ডরা মিলে ইনজয় করবো তুমি এতো জেলাস হও কেনো বলবে? তুমি এসব করতে পারছো না তাই? আর শুনো আমি তোমার মতো ব্যাকডেটেড হতে চাই না।”

পদ্ম বের হয়ে গেলো। নিলা ঠায় বসে রইলো খাটের পাশে। ভেতরে ফুলে ফেপে কান্নারা বের হতে চাইছে। কিন্তু উপরে নিজেকে শান্ত রেখেছে নিলা। পদ্ম কখনোই নিলার কথা শুনে না। যা করতে বলবে সবসময় তার উলটো কিছু করবে।

নিলার বাবা মারা যায় তিন বছর আগে। সামান্য একটা এক্সিডেন্ট করেছিলো। ডাক্তার বলেছিলো ভালো হয়ে যাবে খুব শীঘ্রই। কিন্তু তার বাবা আর ভালো হয়নি। হাসপাতাল থেকে সোজা কবরস্থানে উঠেছে। নিলার মা পদ্মের জন্মের পর তার পুরানো প্রেমিকের সাথে চলে গেছিলেন। সেই থেকে নিলার বাবাই তাদের দুই বোনকে দেখেশুনে রেখেছেন। ছোট্ট একটা ডুপ্লেক্স বাড়ি নিলাদের। নিলার ফুপি মনিরার বাচ্চা জন্মদানে অক্ষম তাই ডিবোর্স হয়ে গেছে। সেই থেকে এ বাড়িতেই থাকেন তিনি।

মনিরা নিলার কাছে এসে বললেন,
— “কিছু বললেই অপমানিত হস। তাও কেনো বলতে যাস? ওকে ওর মতো ছেড়ে দে না মা।”

নিলা ফুপিয়ে কেঁদে উঠে। কান্না থামিয়ে বললো,
— “কিভাবে ওকে ছেড়ে দেই ফুপি বলো? পদ্ম যেই ছেলেদের সাথে বন্ধুত্ব করেছে সেই ছেলেগুলো মোটেও ভালো না। আমার বোনটার দিকে বাজে নজর আছে। আর আমি কিভাবে চুপ করে থাকি বলো?”

মনিরা নিলাকে বুকে জড়িয়ে নেন। খারাপ লাগছে তারও। পদ্মকে অষ্টম শ্রেণী থেকেই ভালোভাবে চলার পরামর্শ দিয়ে আসছে নিলা। কিন্তু পদ্ম এসব কানেই তুলে না। যখন তখন নিলাকে অপমান করে ফেলে। মুখে যা আসে তাই বলে ফেলে।

পদ্মের বেরিয়ে যাওয়ার পর থেকেই নিলা অন্যমনস্ক হয়ে আছে। অজানা আশংকায় বারবার ভেতরে কেঁপে উঠছে। পদ্মের একটা বন্ধু আছে নাম হচ্ছে সৌরভ। ওকে মোটেও সুবিধার মনে হয় না। কেমন যেনো কামুক দৃষ্টি নিয়ে তাকিয়ে থাকে পদ্মের দিকে। শুধু পদ্ম নয়। নিলার দিকেও একইভাবেই তাকায়। একদিন পদ্মের সব বন্ধুরা এসেছিলো বাসায়। সেদিন নিলা ভার্সিটিতে যায়নি। হালকা মাথা ব্যাথা ছিলো সকাল থেকেই। দুপুরে পদ্মের দশজন বন্ধু-বান্ধবি আসে। সবার জন্য রান্না করে রাখতে বলে পদ্ম। নিলাই সব রান্না করে রাখে। দুপুরে তাদেরকে একসাথে খেতে দেয়। নিলাই সার্ভ করছিলো। তখন নিলা খেয়াল করে সৌরভকে। ছেলেটা নিলাকে আপাদমস্তক পর্যবেক্ষণ করতে শুরু করে। নিলার খুব অস্বস্তি হয়। তাড়াতাড়ি করে চলে আসে রান্নাঘরে।

একগ্লাস পানি খেয়ে নেয় নিলা। রান্নাঘরে থেকে রুমের দিকে যাওয়ার সময় তখন খেয়াল করলো ছেলেটা পদ্মের কোমড় জড়িয়ে ধরে রেখেছে। তারা সবাই এতোই ব্যস্ত ছিলো যে নিলাকে খেয়ালই করেনি। পদ্মকে কোলে বসিয়ে খাইয়ে দিলো সৌরভ। এসব দেখে লজ্জায়, ঘৃণায় নিলা নিজের রুমে চলে আসে। নিজের বোনের এমন চলাফেরা দেখে ভেতরে ভেতরে আতকে উঠে। খাওয়া দাওয়া শেষে সবাই পদ্মের রুমে বসে সাউন্ড বক্সে জোরে গান ছেড়ে নাঁচতে শুরু করে। নিলা দুইহাতে কান চেপে ধরে। গান শুনার শাস্তি কি সেটা নিলার অজানা নয়। তাছাড়া নিলা শুনেছে, রাসূল (সাঃ) বাঁশির আওয়াজ শুনলেই দুই হাতে কান চেপে ধরতেন। নিলার ইচ্ছে করছিলো রুমে গিয়ে সাউন্ড বক্সটা আছাড় মেরে ভেঙে ফেলতে। কিন্তু কিছু করলো না। কারণ পদ্মের আত্মসম্মান নষ্ট হবে এতে।

আছরের আজান দেয়ায় গান বন্ধ করলো তারা। নিলা দম ছেড়ে মনে মনে বললো,
— “যাক অন্তত আল্লাহর ডাকে এরা গান বন্ধ তো করেছে। যাই এবার তাড়াতাড়ি নামাজ পড়েনি।”

নিলা তাড়াতাড়ি করে নামাজ পড়ে নেয়। গান আবার ছেড়ে দেয়ায় তাড়াতাড়ি করে ছাদে চলে আসে। ছাদে অনেক বাতাস। যার কারণে নিলার মনটা ভালো হয়ে যায়। ছাদের এক কোণে কাঠগোলাপ গাছটাতে দুটো ফুল ফুটতে দেখে নিলা সেদিকে এগিয়ে যায়। একটু সামান্য ঝুকে ঘ্রাণ নিলো। সোজা হয়ে দাঁড়াতেই খোপা খুলে গেলো। মাথার কাপড় সরিয়ে খোপাটা আবার করে ওড়না মাথায় দিলো। পেছন ঘুরতেই দেখলো পাশের ছাদের ছেলেটা ওর দিকে তাকিয়ে আছে। দৌড়ে নেমে যেতে নিলেই ছেলেটা ডাকলো,
— “এই নিলা দাঁড়াও। তুমি আমাকে দেখলে এভাবে পালাও কেনো? আমি কি বাঘ নাকি ভাল্লুক..হ্যাঁ?”

নিলা আস্তে করে বললো,
— “তার চেয়ে বেশি।”

— “আচ্ছা এভাবে আর কতদিন লুকোচুরি খেলবে বলো? প্লিজ এবার আর ফিরিয়ে দিও না আমায়।”

নিলা কঠিন চোখে তাকালো মাহিবের দিকে। মাহিব কিছুটা দমে গেলো। নিলা চোখ সরিয়ে নেয়। চলে যেতে চাইলেই মাহিব আবার বললো,
— “কাল তোমার বাসায় আমার আম্মাকে পাঠাবো বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে। অন্তত তখন রাজি হইয়ো।”

নিলা কিছু না বলেই চলে গেলো। মাহিব একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো। গত তিন বছর যাবৎ নিলাকে চিনে সে। প্রথম প্রথম প্রেমের প্রস্তাব দিয়েছিলো। কিন্তু নিলার চলাফেরা, আল্লাহভক্তি দেখে আর প্রেমের প্রস্তাব দেয়নি। নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে উঠে পরে লাগে। যেভাবেই হোক মাহিব নিলাকে বিয়ে করতে চায়।

ঘরে এসে দেখলো মেইন দরজা খোলা। নিলা সেদিকে এগিয়ে গেলো। দরজার বাহিরে পদ্মকে আর সৌরভকে এতোটা কাছাকাছি দেখে আবারো খারাপ লাগা শুরু হলো। কিভাবে পদ্মকে এইদিক থেকে ফিরাবে কিছুই বুঝতে পারছে না নিলা। সৌরভ পদ্মকে আলিঙ্গন করলো। ঠোঁট ছোয়ালো পদ্মের ঠোঁটে। নিলার সর্বাঙ্গে যেনো আগুন ধরে গেলো। সরে এলো সেখান থেকে। মনে মনে ঠিক করলো, “আজ কথা বলতেই হবে এসব নিয়ে পদ্মের সাথে।” নিলা রুমে অপেক্ষা করছে পদ্মের রুমে ফিরার। কিছুক্ষণ পর পদ্ম ফিরলো। নিলা পদ্মকে ডেকে বললো,
— “আমার রুমে আয় পদ্ম।”

পদ্ম নিলার রুমে ঢুকলেই সজোড়ে থাপ্পড় দিলে পদ্মের গালে। নিলার চোখ দিয়ে ফুলকি বের হচ্ছে। পদ্ম গালে হাত দিয়ে তাকিয়ে আছে নিলার দিকে। এই নিলাকে সে আগে কখনো দেখেনি। নিলা হুংকার দিয়ে বললো,
— “কবে থেকে শুরু করেছিস এসব? এসব মেলামেশা কবে থেকে শুরু করেছিস? তোকে আমি এই শিক্ষা দিয়েছি? তোকে কিছু বলিনা বলে বেশ বাড় বেড়েছিস। নিজের ঘরের সামনে দাঁড়িয়ে একটা গায়েরে মাহরামের সাথে এভাবে আলিঙ্গন করতে একটুও বাধলো না? তুই জানিস তুই কতবড় অপরাধ করেছিস? এর শাস্তি কি ইসলামে জানিস? ইসলামে বেগানা নারী পুরুষের মেলামেশা হারাম এটা জানিস না? তাহলে এতো বড় সাহস কিভাবে হলো তোর? শুন এইসব বন্ধুবান্ধব বাদ দিবি তুই। শুনেছিস তুই?”

পদ্মের চোখে পানি চলে এলো। এর আগে কখনো তার বোন তাকে গায়ে হাত তুলেনি। আর আজ। নাহ এসব মানা যায়না। পদ্ম শান্ত সরে বললো,
— “যদি না মানি কি করবে তুমি আপু?”

— “পদ্ম! তোকে আমি মানা করছি এসব করতে। আবার এসব নিয়ে কথা বলছিস কেন? আর ওই ছেলের সাথে কিসের এতো মেলামেশা তোর? ওর কোলে বসে খাচ্ছিস? ছেলেটার নজর কত খারাপ তুই জানিস? তোকে কতটা বাজে ভাবে ছুয়ে দিচ্ছিলো। বুঝতে পারিস না? আমার বোনকে কেউ বাজে স্পর্শ করবে আর আমি সেটা কিভাবে মেনে নেই বল?”

— “তোমার মানতে হবে কেনো? তোমাকে তো স্পর্শ করছে না। করলে আমাকে করছে। আর সৌরভের অধিকার আছে আমাকে স্পর্শ করার। কারণ আমি ওকে ভালোবাসি…।”

আরেকটা থাপ্পড় পরলো পদ্মের গালে। পদ্মের দুই বাহু ধরে ঝাকিয়ে বললো,
— “পাগল হয়ে গেছিস তুই? কিসব বলছিস? ইসলামে অন্য একটা ছেলের প্রতি যদি ফিলিংস কাজ করে সেটাও গুনাহ। কেনো বুঝতে চাইছিস না আমার বোন। তোকে আমি গুনাহ থেকে বাচাতে চাইছি। আর নিজের স্বামীকে ছাড়া অন্য কোনো ছেলেকে ভালোবাসা হারাম।”

— “তোমার এসব লেকচার তোমার কাছে রাখো। তোমার এসব কথা আমি শুনতে চাইনা। আমি তোমার মতো ঘর কুনো হতে চাইনা। এটা আমার জীবন আমি আমার মতো বাঁচবো। আর আমার গায়ে হাত তুলবে না তুমি। আমি সৌরভকে ভালোবাসি এটাই শেষ কথা।”

পদ্ম চলে যেতে চাইলে নিলা পদ্মের হাত ধরে বললো,
— “প্লিজ জেদ ধরিস না। নিজের ক্ষতি করে বসবি। প্লিজ আমার কথাটা শোন। তুই যাদের সাথে মেলামেশা করিস তারাই তোকে বিপদে ফেলবে একদিন। সেই বিপদের দিন আসার আগে আমার কথা শোন। ফিরে আয়। ওদের সঙ ত্যাগ কর।”

— “বললাম তো আমার লাইফ, আমার রুলসে হবে। তোমার কোনো রুলস আমি মানবো না। আর আজকে থেকে তো একদমই না। তোমার মতো খেত থাকতেও পারবো না। আমরা এ যুগের মেয়ে। আমাদের অনেক বন্ধুবান্ধব থাকবেই। তাই নিজের চরকায় তেল দাও।”

পদ্ম বেরিয়ে গেলো। নিলা অপমানে, কষ্টে ডুকরে কেঁদে ফেললো। পদ্ম কেনো যে ওকে বুঝতে চায়না। সেদিন থেকেই পদ্ম আরো বেশি অবাধ্য হয়ে পরেছে। কোনো কথাই শুনে না। ইদানিং তো সৌরভের সাথে প্রায় রাতের দশটায় বাড়ি ফিরে আসে। আশেপাশের মানুষ অনেক বাজে ভাবে দেখে বিষয়টা।

বর্তমানে,
সাদা জামায় ভিজে পদ্ম বাসায় এলো। হাসিখুশি লাগছে খুব। কিন্তু সাদা জামা ভিজে যাওয়ায় শরীরের প্রতিটা ভাজ স্পষ্ট। নিলা সোফায় বসে পদ্মের জন্য অপেক্ষা করছিলো। পদ্মকে এ অবস্থায় দেখে নিলা বিষ্ময় নিয়ে তাকিয়ে রইলো। ওড়নাটা গায়ে নেই ঠিক মতো। নিলার দৃষ্টি উপেক্ষা করে পদ্ম রুমে চলে গেলো। নিলা খাবার বেড়ে পদ্মের রুমে গেলো। খাবার টেবিলের উপর রেখে পদ্মের চুল ধরে বললো,
— “চুল তো একদম ভিজা। ভালো করে মুছিস নি? ঠান্ডা লাগবে তো তোর।”

নিলা গামছা দিয়ে ভালো করে পদ্মের চুল মুছে দিলো। চুল আঁচড়ে দিলো। রুমের দিকে তাকিয়ে বললো,
— “এমন অগোছালো করে রেখেছিস কেনো? ভাত এনেছি খেয়ে নে।”

— “ক্ষিদে নেই।”

— “ক্ষিদে নেই মানে। এক চড় দিবো। তাড়াতাড়ি খেয়ে নে। গালটা কেমন শুকিয়ে গেছে দেখ।”

— “তোমার ও তো চোখ ভিতরে চলে গেছে। চোখের নিচে কালি পরে গেছে। বয়স বাড়ছে বিয়ে করছো না। পরে কিন্তু আর ছেলে পাবে না আপু।”

নিলা পদ্মের দিকে খানিক তাকিয়ে থেকে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললো। ভাতের প্লেট এনে পদ্মের সামনে বসে খাওয়াতে শুরু করে। খাইয়ে দিতে দিতে বললো,
— “আমার আর বিয়ে। আমি বিয়ে করে চলে গেলে তোকে কে দেখে রাখবে। যতটা অগোছালো হয়েছিস তুই। আমার বিয়ে হয়ে গেলে আর কে গুছিয়ে দিবে বল? আর তোর চিন্তায় আমার বয়সের ছাপ পরে গেছে। এতোটা টেনশন না দিলেই পারিস।”

পদ্ম গম্ভীর হয়ে বললো,
— “আমি তোমাকে টেনশন দি? তুমি ইচ্ছাকৃত ভাবে টেনশন নিজের ঘাড়ে টেনে আনলে আমি কি করবো? আমার দোষ দিচ্ছো কেনো? আর আমি নিজেকে গোছাতে পারবো।”

— “গায়ের জোরে বড় হয়েছিস। বুদ্ধি এখনো হাটুর নিচেই রয়ে গেছে তোর পদ্ম। যেদিন মা হবি সেদিন বুঝবি।”

— “তুমি তো আমার মা নও।”

নিলা খানিকটা দমে গেলো। কষ্টও পেলো। নিজেকে স্বাভাবিক রেখে বললো,
— “মা নই তা ঠিক আছে। কিন্তু মায়ের থেকে কম করেছি? তাই তোর জন্য এতো চিন্তা হয়। আর যাদের সাথে চলাফেরা করিস তারা মোটেও ভালো না। কিন্তু তুই বুঝতেই চাস না। যেদিন বুঝবি সেদিন দেখিস অনেক দেরি হয়ে যাবে। তখন আফসোস করবি।”

— “প্লিজ আপু জ্ঞান দিও না তো। এসব ভালো লাগে না।”

খাওয়ানো শেষে নিলা পদ্মের রুমটা গুছিয়ে দিলো। পদ্ম মোবাইলে ব্যস্ত ছিলো। নিলা বারবার বলছে, “ঘুমিয়ে পর। রাত জাগিস না।” পদ্ম বিরক্ত হয়ে বললো,
— “আপু প্লিজ বিরক্ত করো না তো। যাও তুমি।”

নিলা মলিন হেসে বললো,
— “হুম যাচ্ছি। তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে পরিস। আর শুন একদিন ঠিক চলে যাবো সেদিন আর কেউ তোকে জ্বালাবে না। কথায় কথায় কৈফিয়ত চাইবে না। সেদিন নিজের মতো করে চলতে পারবি।”

নিলা বেরিয়ে এলো। ডান হাতে বৃদ্ধাঙুলি দিয়ে চোখের পানি মুছে নিজের রুমে চলে এলো। বাবার ছবিটা বের করে বুকে জড়িয়ে কেঁদে ফেললো। বোনটা এতোটা অবাধ্য হয়ে যাওয়ায় খুব কষ্ট হয় নিলার। খুব করে চেয়েও পদ্মকে সঠিক পথে ফিরিয়ে আনতে পারেনা।

চলবে,,,,,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here