পরিবর্তন।পর্ব_৩

0
2955

পরিবর্তন।পর্ব_৩
#তিতিশ্মা_মুসাররাত_কুহু।
.

সামির ভাইয়া ফুলের বদলে সিগারেট দিয়ে আমাকে প্রপোজ করেছে।
আমার মনে হয়না আজ পর্যন্ত এমন সিগারেট প্রপোজ কেউ পেয়েছে।

আমি সামির ভাইয়াকে ওখানেই রেখে হাসতে হাসতে বাসায় চলে এলাম।

সামির ভাইয়া হেবলা কান্তর মত আমার দিকে চেয়ে রইলো।

এর মধ্যে অনেক দিনের বন্ধ পাই,রেজাল্ট দেয়ার আগ পর্যন্ত কোন চিন্তা ভাবনাও নেই পড়াশোনা নিয়ে।
বেড়াতে,খেলাতে সময় কেটে যায়।

রেজাল্ট দেয়ার পর যখন কলেজে ভর্তি হই,
দেখি সামির ভাইয়া প্রায়ই কলেজের সামনে দাঁড়িয়ে থাকে।

আমি তাকে দেখলেই সিগারেট প্রপোজের কথা ভেবে হাসি।
আর সে লজ্জা পেয়ে মাথা চুলকাতে চুলকাতে সেখান থেকে চলে যায়।

হঠাৎ তাকে আর কলেজের সামনে দেখি না।
আমারো যেন কেমন লাগতে শুরু করলো।
তাকে এখন মিস করতে শুরু করলাম।

হঠাৎ কেয়া বল্লো,
আশা কিন্তু সামিরকে পছন্দ করে।
তুই পাত্তা দিস নি বলে আশার কাছে আবার চলে গেলো কিনা দেখ।
প্রায়ই আশার সাথে রাস্তায় এখন কথা বলতে দেখি।
আর আশাও তো কম সুন্দরী না।

কেয়ার কথা শুনে খুব খারাপ লাগলো।
বাসায় ফিরেও বারবার সামিরের কথা মনে হচ্ছে।
ও কি সত্যি সত্যিই আশাকে ভালবেসে ফেল্লো?

আর বাসলেই বা আমার কি?
আমার কেন খারাপ লাগছে?
তাহলে কি আমি সামির ভাইয়াকে ভালবেসে ফেললাম?

পরের দিন কলেজে যাবার সময় রাস্তায় সামির ভাইয়ার সাথে দেখা।

আমি তার সামনে গিয়ে হঠাৎ ই বলে ফেললাম।
-আমি আপনাকে ভালবাসি।
-কিহ?শুনিনি।
-আই
লাভ
ইউ।
-এত উন্নতি কিভাবে হলো?আবার আপনি করেও বলছিস।
-এত কথা বলোনাতো সামির ভাইয়া,
-এই কথা টা বলতে এত দিন সময় লাগলো?
-এত দিন কোথায় ছিলে তুমি?কত মিস করেছি জানো?
-এত দিন চোখের সামনে থাকলে বুঝতেও পারতিনা তুই আমাকে ভালবাসিস।
আর আমার জানাও হতোনা।
-বুঝলাম বুঝলাম,এখন আমি গেলাম।ক্লাস আছে আমার।

হয়ে গেলো আমাদের মাঝে ভালবাসার সম্পর্ক।দিন রাত মোবাইলে কথা আর মেসেজিং।
ভালো ভাবেই চলছে আমাদের প্রেম।
কলেজে গেলে দেখা হয় আমাদের।

হঠাৎ একদিন আব্বু দোকান থেকে এসে আম্মুকে বলে,কুহুর জন্য একটা পাত্র দেখলাম।
খুব ভালো ছেলে।পরিবারও ভালো।কুহুকে ছেলের বাসার সবাই চিনে।
উনারা প্রস্তাব দিলেন আমাকে।
আর ছেলে আজ সরাসরি কথাও বলেছে।আমার সাথে।

-তাহলেতো ভালোই।দেখো তাহলে,
মেয়ে যখন হয়েছে,বিয়েতো একদিন দিতেই হবে।ভালো ছেলে হলে হাত ছাড়া করতে হবেনা।

আমি পাশের রুম থেকে আম্মু আব্বুর কথা শোনে সামির ভাইয়াকে মেসেজ দিয়ে বল্লাম,

-আব্বু আমার বিয়ে ঠিক করতেছে।
তুমি তোমার বাসার সবাইকে আমাদের রিলেশনের কথা জানাও আর তাদের বলো আমাদের বাসায় প্রস্তাব নিয়ে আসতে।

সামির মেসেজের কোন রিপ্লাই দেয়নি।

এদিকে আব্বু আম্মুতো ওই ছেলের কাছেই আমাকে বিয়ে দিবে বলে ঠিক করে ফেল্লো।

আমি সুযোগ বুঝে সামিরকে ফোন করলাম,

-তুমি কি মেসেজ দেখোনি?
কি বলেছি আমি?
-আমি আমার বাসার কাউকে বলতে পারবোনা।তারা মানবেনা।
-মানেকি?
-মানে,যদি হয় তবে আমার সাথে পালিয়ে চলো।এছাড়া আমি তোমাকে বিয়ে করতে পারবোনা।

-তুমি কি কাপুরুষ নাকি?
বাসায় কেন বলতে পারবেনা?
মা আমার বিয়ে ঠিক করেছে আরজু খালার মেয়ের সাথে।
আর বলেছে আমি যদি ওই মেয়েকে বিয়ে না করি তাহলে মা বাড়ী ছেড়ে চলে যাবে।

-ওহ তাহলে তুমি আমাকে আগে বলোনি কেন?
আর তুমি আমায় কেমন ভালবাসো যে বাসায় একটু জানাতে পারবেনা।
তাদের রাজি করাতে পারবেনা।

-আমি এখন ঝগড়া করার মুডে নেই কুহু।
যদি আমার হতে চাও,তাহলে বাড়ী থেকে বেরিয়ে এসো।আমি তোমাকে বিয়ে করবো।

-আমি কোন কাপুরুষের সাথে পালিয়ে বিয়ে করতে চাইনা।
যদি তুমি তোমার বাসায় বলতে পারো তাদের রাজি করাতে পারো তবেই আমার সাথে যোগাযোগ করো।
আর আমার বাসায় প্রস্তাব দিও।
তখনই আমি তোমায় বিয়ে করবো।
পালিয়ে কোন দিনও না।

এই দিকে আব্বু আম্মু আমার বিয়ে ঠিক করে ফেলতেছে ওই ছেলের সাথে।

দিন তারিখও পাকা হয়ে যায়।

যেদিন বিয়ের দিন তারিখ পাকা হবে তার আগের দিন আমি আমার আব্বু আম্মুকে সামিরের কথা জানাই।
আর বলি,
আমি সামিরকে ভালবাসি,
ওকে বিয়ে করতে চাই।

আব্বু-কুহুর মা তোমার মেয়ে কি বলছে এসব?
আম্মু-এখন আমার মেয়ে হয়ে গেলো তাইনা?যখন গুণ দেখবে তখন তোমার মেয়ে।আর যখন দোষ দেখবে তখন আমার মেয়ে।

আব্বু-সামিরও কি তোকে ভালবাসে?
-হুম।
-তাহলে ওর মা বাবাকে নিয়ে আমাদের বাসায় ওকে আসতে বল।
-সত্যি আব্বু?তোমরা রাজি?
-তুই যাকে নিয়ে সুখী হবি,আমি তোকে তার কাছেই বিয়ে দিবো।
আমরা আজ আছি কাল নেই,সারাজীবন তোরা এক সাথে থাকবি।
তাই তোদের মতামতেই বিয়ে হওয়া উচিৎ।

আমি কল্পনাও করতে পারিনি আব্বু এত সহজে রাজি হয়ে যাবে।

আজ যেন আমার খুশির সীমা নেই।
সামিরকে ফোন দিলাম।
সামির রিসিভ করতেই ওকে বললাম।

-আমি আব্বু আম্মুকে তোমার কথা বলেছি,তারা রাজি হয়েছেন।
তুমি আজই তোমার মা বাবাকে নিয়ে আমাদের বাসায় আসো।

-আমাকে তুমি আর ফোন দিও না কোন দিন কুহু।
-মানে কি?
-খালা খালুরা সবাই আমাদের বাসায় এসেছেন আমার বিয়ের পাকা কথা বলতে।আমি আমার মা বাবাকে কষ্ট দিতে পারবোনা।তাদের এক মাত্র সন্তান আমি।
আমার মায়ের অবাধ্য হতে পারবোনা।
তুমি আমাকে ক্ষমা করে দিও।
আর প্লিজ আমাকে আর কোন দিন ফোন দিওনা।
-তোর মত কাপুরুষ,হিজড়াকে ফোন দেয়াতো দূরের কথা।তোর মুখে থুঃ থুঃ ফেলতেও আজ থেকে আমার ঘৃণা হবে।
সুখী হ বেঈমান।

ফোনটা কেটে দিয়ে চিৎকার করে কাঁদতে লাগলাম।
মানুষ কিভাবে এতটা পরিবর্তন হতে পারে?
কিভাবে পারে এত টা পরিবর্তন হতে?

আম্মু এসে কান্নার কারণ জিজ্ঞেস করায় আম্মুকে সব খুলে বললাম।
আম্মু বল্লো,যা হয়েছে ভালোই হয়েছে।আপদ বিদায় হয়েছে।
কাঁদিস না তুই।

রাতে আম্মু আব্বুকে সামিরের কথা জানায়।পরের দিন বিকেলে আব্বু চাচ্চুরা ছেলের বাসায় গিয়ে বিয়ের ডেট ফাইনাল করে আসে।

সন্ধ্যা বেলা আব্বু চাচ্চু বাসায় এসে বিয়ের ডেট বলতেই আম্মু তার এক মাত্র বড় বোন,আমার খালামনিকে ফোন দেয়।

-আপা,কুহুর বিয়ের ডেট ফাইনাল হয়ে গেছে।
ওমুক তারিখে ওর বিয়ে।
তুমি আগামীকালই দুলাভাই,অভ্র আর অরণ্যকে নিয়ে চলে এসো।
-আচ্ছা ঠিকাছে রে ঠিকাছে।
আমরা কাল সকালেই চলে আসবো।
১০টা না ৫ টা না একটা মাত্র মেয়ে আমাদের।
আমরা সবাই মিলে ধুমধাম করে বিয়ে দিবো।
-আচ্ছা আপা রাখি তাহলে।চা খেয়েই চলে আসবে কিন্তু।
-আচ্ছা আল্লাহ্‌ হাফেজ।

রাত ১২ টার দিকে আম্মুর মোবাইলে খালামনির ফোন।

-হ্যালো আপা বলো।
আপা,এই আপা,
কাঁদছো কেন তুমি?
কি হয়েছে আপা?

-কাকলীরে,অরণ্যকে নিয়ে আমরা এখন হসপিটালে।
-কেন কি হয়েছে কার?
-অরণ্য ঘুমের ওষুধ খেয়েছে রে।
আমার ছেলেটার কিছু হবেনাতো?ওর কিছু হলে আমি বাঁচবোনারে।
-তুমি কেঁদোনা আপা,কিচ্ছু হবেনা আমাদের অরণ্যের।
আমি আর কুহুর বাবা এখনি আসছি।
কেঁদোনা তুমি।
এখনি আসছি আমরা।

এদিকে আম্মুর আর খালামনির কথা শুনে আমি পারিতো অজ্ঞান হয়ে যাই।
আর কাঁদতে থাকি।
আম্মু আমাকে বলে,কাঁদিস না।কিচ্ছু হবেনা তোর ভাইয়ার।
কাঁদিস না।

আমি মনে মনে বলি,তোমরাতো জানোনা আম্মু আমি কেন কাঁদতেছি।
অরণ্য ভাইয়ার কিছু হলে তোমরা তোমার মেয়েকেও হারাবে।
কারণ পুলিশ এসে সকালেই আমাকে ধরে নিয়ে যাবে।
অরণ্য ভাইয়ার সাথে লাস্ট কথা আমিই বলেছি,আর অরণ্য ভাইয়াকে মরতেও তো আমিই বলেছি।
আমিতো কাঁদছি এখন আমার মরার ভয়ে…

চলবে…

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here