পরিবর্তন।প্রথম_পর্ব।

0
3541

স্কুল থেকে একা একা বাসায় ফিরছিলাম,
আর ওমনি কোথায় থেকে কে যেন এসে পেছন থেকে আমার হাত টেনে ধরলো।ভয়ে যেন এখনি আমার প্রাণ টা বেরিয়ে যাবে।

এমনিতেই মন খারাপ,তার মধ্যে ভয়।
স্কুলে যাবার কোন ইচ্ছেই ছিলোনা।তবুও আম্মু জোর করে স্কুলে পাঠালো।
ধীর পায়ে বাসার উদ্দেশ্যে হেঁটে যাচ্ছিলাম।আর তারই মধ্যে এই ঘটনা।

হাত টা ধরার সাথে সাথে পেছনে ফিরে তাকিয়ে দেখি আফিফ।

আফিফ আমার ক্লাসমেটের ভাই।
এই ছেলের বোন টাও ইদানীং আমাকে যেন বেশ চোখে চোখেই রাখছে।
আমি যেখানে ও নিজেও সেখানে।
আর আজ ওর ভাই আমার হাত টেনে ধরলো।

অভদ্রতার একটা লিমিট থাকা দরকার।

~এই যে আপনি আমার হাত ধরেছেন কেন?
হাত ছাড়ুন বলছি,ছাড়ুন।
~আচ্ছা ছেড়ে দিলাম।
~এ কেমন অভদ্রতা?রাস্তার মাঝে এই ভাবে একটা মেয়ের হাত কেউ ধরে?
ফাজিল কোথাকার।

~সরি।

আফিফ সরি বলার পর পরই আমি সেখান থেকে প্রস্থান করি।

পরের দিন স্কুলে যাচ্ছি,
দেখি আফিফ ওদের বাড়ীর সামনে দাঁড়িয়ে আছে।

আমি দেখেই না দেখার ভান করে চলে যাচ্ছিলাম।

ওমনি পেছন থেকে আমাকে ডেকে বলে,
ওড়না টা মাথায় দিয়ে যাও।
আর রাস্তাঘাটে চুপচাপ থাকবে।
কোন কথা বলবেনা কারো সাথে।
তাহলে সবাই অভদ্র মেয়ে বলবে।

আমি কোন কথা না বলেই চলে গেলাম স্কুলে।
বান্ধবীরা বল্লো,
আরিফার ভাই তোকে এ কথা বল্লো কেন?
~কিজানি আমি কি করে বলবো?

একদিন স্কুল থেকে ফেরার পথে খুব বৃষ্টি হচ্ছিলো।
অনেক ক্ষণ এক টা দোকানে দাঁড়িয়ে থাকার পরও যখন বৃষ্টি থামছিলোনা,
তখনই আমি বৃষ্টিতে ভিজে ভিজেই বাড়ীর দিকে রওনা দিলাম।

আর কিছু দূর যেতেই দেখি আফিফ ছাতা নিয়ে আমার দিকে এগিয়ে আসছে।
~ভিজে আসছো কেন?
আমি তো ছাতা নিয়ে তোমাকে এগিয়ে আনতেই যাচ্ছিলাম।
~আপনার ছাতা নিয়ে আপনিই থাকুন।
আর কখনো যেন আমার সামনে আপনাকে না দেখি।
লোকে দেখলে আপনাকে না,
মন্দ আমাকে বলবে।সো প্লিজ।

সেদিনের পর থেকে আফিফ আর আমার রাস্তা আগলে দাঁড়ায়নি।
কিংবা আমার সামনে আসেনি।

এরই মাঝে আমাদের টেস্ট এক্সাম হয়।এই এক্সামে এলাউ হলেই ফাইনাল দিতে দিবে।

কিছু দিন পর রেজাল্ট।

রেজাল্টের দিন বুকের ভেতর কি পরিমাণ যে ধুকপুক ধুকপুক করছিলো বলে বোঝানো যাবেনা।
ছাত্র ছাত্রী যারা ছিলেন তাদের তো আর বোঝানোর দরকারও নেই আমার মনে হয়।
কারণ সবাই ই সেটা ফীল করেছেন।

রেজাল্ট পেয়ে আমি আর আমার বান্ধবীরা রাস্তা দিয়ে হেঁটে বাসায় যাচ্ছিলাম।
আর আমি সারা রাস্তা কাঁদতে কাঁদতে বাসায় ফিরেছি।

আমার কান্না দেখে আফিফ সেদিন দৌড়ে আমার সামনে আসে।

~কেঁদনা প্লিজ কেঁদোনা।হার জিত সবার জীবনেই আছে।
এবার হেরেছো তাতে কি হয়েছে?
পরের বার আরো ভালো করে পড়বে।
দেখবে সব ঠিক হয়ে যাবে।
তখন আর পাশ করা ঠেকায় কে।
কেঁদনা প্লিজ কেঁদনা।

~পাশ করা ঠেকায় কে মানে?আমি কি ফেইল করেছি নাকি?
~তাহলে কাঁদছো কেন?
~আমার বান্ধবী ফেইল করেছে,এই যে ও।
আমরা আর এক সাথে থাকতে পারবোনা তাই কেঁদেছি।

~ও মোর আল্লাহ্‌।যে ফেইল করেছে তার কান্নার খবর নেই।
আরেকজন কান্না কাটি করে দুনিয়া ভাসিয়ে ফেলছে।
যাও বাসায় যাও,বাসায় গিয়ে ভালো মত পড়াশোনা করো।
এস.এস.সি তে A+ পেতে হবে তোমার।

সেদিনের মত আমি বাসায় চলে আসি।

কিছু দিন পর আমার জন্য একটা বিয়ের প্রপোজাল আসে।
ছেলে ইতালি থাকে।
খুব ভালো পরিবার।
বিয়ে করে বউ ইতালি নিয়ে যাবে।
এমন ছেলে আজকাল পাওয়াই যায়না।
ছেলের মামা আমাকে রাস্তায় দেখেছে,
স্কুল থেকে আসার পথে।
তখনি আমাকে ফলো করে বাড়ী পর্যন্ত চলে আসে।
আর বাসা চিনে নিয়ে আব্বুর কাছে প্রস্তাব দেন।

আর গ্রাম অঞ্চলে ক্লাস টেন এ পড়া মেয়েই অনেক বড়।
তাই আত্মীয় স্বজনরা সবাই বল্লো কুহুর জন্য এত ভালো ছেলে আর পাওয়া যাবেনা।
তাই বিয়েটা দিয়ে দিতে।

বিয়ের পরও এক্সাম দেয়া যাবে।

আমি কথা গুলো শুনে নিশ্চুপ হয়ে গেলাম।
কিছুই বললাম না বাসায়।

পরের দিন কোচিং ক্লাস করতে স্কুলে চলে গেলাম।
স্কুল থেকে ফেরার পথে আফিফ আমার সামনে এসে দাঁড়ালো।

~তোমার নাকি বিয়ে ঠিক হচ্ছে?
~হুম।
~তুমি রাজি?
~জানিনা।
~শোন তোকে একটা কথা বলে রাখি,
এ জীবনে তোর যদি বিয়ে হয় তবে সেটা আমার সাথেই হবে।
আর যদি তা না হয় তবে আগে তোকে মারবো,তারপর আমি মরবো।
কথা টা যেন মনে থাকে।
যা বাসায় যা।

এই প্রথম আমি আফিফের চোখে মুখে রাগ দেখেছি।
আর ও এতটাই সিরিয়াস ভাবে বলছিলো আমার তো হাত পা কাঁপা ই শুরু হয়ে গিয়েছিলো।

কিছু দূর যেতেই আফিফ আমাকে ডেকে বল্লো,

ওই শোন,
~হুম।
~আমার বউ হবার জন্য প্রস্তুতি নিতে থাক।
বাকিটা আমি দেখছি…

পরিবর্তন।প্রথম_পর্ব।
#তিতিশ্মা_মুসাররাত_কুহু।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here