পরিবর্তন।শেষ_পর্ব।
#তিতিশ্মা_মুসাররাত_কুহু।
পুলিশ এসে সকালেই আমাকে ধরে নিয়ে যাবে।অরণ্য ভাইয়াকে মরতে তো আমিই বলেছি।
আমিতো কাঁদছি এখন আমার মরার ভয়ে…
-এই কুহু কান্না থামা।আমি আর তোর বাবা যাচ্ছি,
-অরণ্য ভাইয়ার কি অবস্থা এখন,আমাকে গিয়েই জানাবে কিন্তু।
-আচ্ছা জানাবো।
আম্মু আব্বু হসপিটালে চলে যায়।
সন্ধ্যা বেলা আম্মু খালামণিকে বিয়ের ডেইট ফাইনাল হবার কথা জানাতেই
অরণ্য ভাইয়া আমাকে ফোন দেয়।
-তোমার নাকি বিয়ে ঠিক হয়ে গেছে?
-হুম ভাইয়া,খালামণি আর সবাইকে নিয়ে চলে আসবেন।
-হুট করে কিভাবে বিয়ে ঠিক করে ফেল্লো খালামণি আর খালু?
-আমি কিছু জানিনা।
-বিয়েটা বন্ধ করতে বলো।
-কেন ভাইয়া?
-ভাইয়া মাই ফুট।কিসের ভাইয়া?
-কি বলছেন এসব ভাইয়া?
-একটা কথা বলি মন দিয়ে শোনো।
-মন দিয়ে আবার কথা শোনা যায় নাকি?
কথা তো কান দিয়ে শোনা যায়।
-কুহু (রেগে)
-জ্বী ভাইয়া।
-কুহু শোনো,ভাইয়া ভাইয়া বলা বন্ধ করো।
-আচ্ছা ঠিকাছে ভাইয়া।
-কুহু কান দিয়ে ভালো করে কথা টা শোনো,
আমি তোমাকে ভালবাসি।
-এ কি বলছেন ভাইয়া?
-ওই তোর কি কানে কথা যায়না?বার বার ভাইয়া ভাইয়া ভাইয়া।
আমি তোকে ভালবাসি।আর বউ তুই আমারই হবি।
সেই ছোট থেকে তোকে নিয়ে স্বপ্ন দেখেছি।
তুই আমার বউ হবি।
ভেবেছি পড়াশোনা শেষ করবি তারপর মাকে বলবো।
কিন্তু খালামণি যে তোকে এখনি বিয়ে দিয়ে দিবে কে জানতো।
এখন তোর মতামত বল,
তুই আমাকে বিয়ে করতে রাজি না?
-আপনি আমার ভাই,আপনাকে আমি কিভাবে বিয়ে করবো?
-যেভাবে আর সবাই করে,যেভাবে ওই ছেলেটাকে বিয়ে করতি।
-আমি পারবোনা আপনাকে বিয়ে করতে।
-আমি তোকে খুব ভালবাসি কুহু।
ছোট থেকে তোর জন্য মনের মধ্যে ভালবাসা পুষে বড় হয়েছি।
তোকে আমি অন্য কারো হতে দিবোনা।
বাঁচবোনা আমি তোকে ছাড়া।
-হি হি হি,তাহলে মরে যান।
-সত্যি বলছিস?
-হুম সত্যি।
-আমি কিন্তু সত্যি সত্যি মরে যাবো,আর প্রমাণ করে দিয়ে যাবো তোকে আমি কতটা ভালবাসতাম।
-ভালবাসা আজকাল কার ছেলেদের কাছে টিস্যু পেপারের মত।
যখন ইচ্ছে হবে ভালবালাম,যখন ইচ্ছে হবে ফেলে দিলাম।
আমি এসব ভালবাসা টালবাসায় বিশ্বাসী না।
-আমি তোকে সত্যি ভালবাসি কুহু।
আর সবার ভালবাসার সাথে আমার ভালবাসা মিলাস না।আমি সত্যি সত্যিই তোর জন্য মরে যেতে পারি।
-আচ্ছা মরে যান।
আল্লাহ্ হাফেজ।
আমি এই কথা বলে মোবাইল অফ করে শুয়ে ছিলাম।
কিন্তু বুঝিনি অরণ্য ভাইয়া সত্যি সত্যিই মরার জন্য ট্রাই করবে।
এখন যদি তার কিছু হয়ে যায়,তাহলেতো আমার নির্ঘাত ফাসি হবে।
আল্লাহ্ তুমি অরণ্য ভাইয়াকে ঠিক করে দাও।প্লিজ প্লিজ প্লিজ।
আম্মু আব্বু হসপিটালে গিয়ে উপস্থিত হয়।
কিন্তু তাদের ফোন দেয়ার কোন খবরই নেই।
ভয়ে ভয়ে আমিই প্রায় এক ঘন্টা পর তাদের ফোন দিলাম।
আম্মু আব্বু কেউই রিসিভ করলোনা।
ভয় টা আরো বেড়ে গেলো।
অনেক ক্ষণ পর আম্মু আমাকে ফোন দিয়ে জানায় অরণ্য ভাইয়া এখন আশংকা মুক্ত।
আমি যেন হাফ ছেড়ে বাঁচলাম।
পরের দিন অরণ্য ভাইয়াকে হসপিটাল থেকে বাসায় নিয়ে যাওয়া হয়।
একটু সুস্থ হলে সবাই তাকে জিজ্ঞেস করে কেন সে এমন কদম উঠালো,কে দায়ী এর জন্য।
সে কিছুই বলেনি কাউকে।
শুধু বলেছে,
মা,বাবা,খালামণি,আংকেল আপনাদের সবাইকে আমি একটা কথা বলতে চাই।
কথা টা হচ্ছে,আমি কুহুকে ভালবাসি।
ওকে বিয়ে করতে চাই।
আর আমি কারো না শুনতে চাইনা।
কথা টা শোনার পর সবাই একদম চুপ হয়ে গিয়েছিলো।
একবার খালামণি আম্মুর দিকে তাকায়,একবার আম্মু আংকেলের দিকে তাকায়।একবার আব্বু খালামণির দিকে তাকায়।একবার আংকেল আব্বুর দিকে তাকায়।
৪ দিন পর
আমি বউ সেজে বসে আছি।
আমার গায়ে নীল রঙের শাড়ী।যদিও বিয়ের শাড়ী আজ অবধি আমি নীল রঙের দেখিনি।কিন্তু আমার বরের নীল রঙ খুব পছন্দ।তাই তার বউকে নাকি সে বিয়ের দিন নীল রঙেই দেখতে চেয়েছেন।
আমার নীল রঙটা একদমই পছন্দ না।
কেন যেন এই রঙটা একদমই ভালো লাগেনা।
তবুও কি আর করার,বরের যেহেতু পছন্দ তাই পরে বসে থাকতেই হলো।
একটু পরে রুমের দরজায় টোকার আওয়াজ।
-আসবো?
-আমি না করলেই কি চলে যাবেন?
সে আর কোন কথার উত্তর দিলোনা।
রুমে চলে আসলেন।
-তোমাকে আজ খুব সুন্দর লাগছে।
একদম আমার বউ এর মত।
-বউ?আপনার আগের বউ আছে?
-ধুর,কি যে বলোনা।
আচ্ছা শোনো,আজ থেকে এ সংসারের সমস্ত দায়িত্ব তোমার।
আর তোমার সম্পূর্ণ দায়িত্ব আমার।
আমরা দুজন মিলে আজ থেকে নতুন জীবনে পদার্পণ করবো।
আজ থেকে আমাদের সম্পর্কের নতুন একটা নাম হয়েছে।
সেটা হচ্ছে স্বামী-স্ত্রী।আজ থেকে আমি তোমার বর তুমি আমার বউ।
-আজ থেকে তুমি আমাকে এই যে শোনছো, এই শোনোনা এভাবে ডাকবে। আর তুমি করে বলবে।
-কিহ?এভাবে কেন ডাকবো?আপনি না আমার ভাইয়া?আমিতো ভাইয়াই ডাকবো।অরণ্য ভাইয়ায়ায়া,ও ভাইয়া,ভাইয়া গো।কই আপনি।
এভাবেই ডাকবো।
-মাইর চিনো?
-হুম চিনিতো,আর জানিও ভাইয়ারাই বোনকে মারে।
-কিন্তু আমি তো তোমাকে মারবোনা,ভালবাসবো আদর করবো।
-এ্যা, এ কেমন কথা ভাইয়া?
-কাছে এসো কানে কানে বলি কেমন কথা।
-ভাইয়ায়া,
-হুম বউউ।
সেদিন আম্মু আব্বু খালামণি আংকেল সবাই অরণ্যর কথায় রাজি হয়ে যায়।তারা বুঝতে পারে অরণ্য ভাইয়া আমাকে ভালবাসে,আর তাই অন্য কারো সাথে আমার বিয়ে টা মানতে পারবেনা বলেই এই পদক্ষেপ নিয়েছিলো।
তাই আব্বু ছেলে পক্ষকে না করে দেন।
আর সবাই মিলে অরণ্যর সাথেই আমার বিয়ে টা দিয়ে দেন।
বিয়ের অনেক গুলো দিন পর,
এখন আমার নীল রঙটা খুব প্রিয়।
আমি এখনো অরণ্যকে দুষ্টুমি করে ভাইয়া বলে ডাকি,ওকে রাগাই।
কিন্তু এখন আমি শুধু মাত্র কারো সন্তানই নই,বরং একজন দায়িত্বশীল স্ত্রী,একজন ভাবী,একজন পুত্রবধূ।
আমি আমার বর অরণ্যকে খুব ভালবাসি।
যেই ভালবাসা টা একটা সময় সামিরের জন্য ছিলো,সেই ভালবাসাটায় হয়তো পাপ ছিলো।কিন্তু অরণ্যকে ভালবাসার মধ্যে কোন পাপ নেই।কেননা ও আমার স্বামী।
অরণ্য আমাকে খুব ভালবাসে।
আর আমিও ওকে।
মানুষ পরিবর্তন হয়,
মানুষের পছন্দ পরিবর্তন হয়।
মানুষ একটা সময় দায়িত্বহীন থেকে দায়িত্ববহন করে দায়িত্ববান হয়।
আর এটাই জীবন।
জীবনের নিয়ম।
সময় এবং পরিস্থিতি মানুষকে পরিবর্তন করে দেয়।
মানুষ পরিবর্তনশীল।
(সমাপ্ত)