পরী পর্বঃ১ম
লেখাঃনীলাদ্রিকা নীলা
.
রুমের ভিতর পাইচারি করতে করতে আবারও ঘড়ির দিকে তাকালো প্রত্যাশা। রাত ১১ টা পার হতে চললো। আজও সায়েম দেড়ি করে বাড়ি ফিরছে। অফিসের কি যেন মিটিং এর কাজ আছে তার। সায়েম প্রত্যাশার হাজবেন্ড। দুই বছর আগে পারিবারিক ভাবেই ওদের বিয়ে হয়। বন্ধুর বিয়েতে গিয়ে ওখানেই প্রথমবার প্রত্যাশাকে দেখার সাথেই তার প্রেমে পড়ে যায় সায়েম। নিজেকে সামলাতে না পেরে প্রত্যাশার রুপে পাগল হয়ে তখনই প্রত্যাশাকে প্রেমের প্রস্তাব দিয়ে ফেললো সায়েম। প্রত্যাশা সেটাকে তখন পাত্তা না নিয়ে এড়িয়ে যায়। কিছুদিন পর নতুন চাকুরী পেয়ে অফিসে জয়েন করার পর প্রত্যাশার বাড়িতে সরাসরি বিয়ের প্রস্তাব দেয় সায়েম। সায়েমকে দেখে প্রত্যাশার বাবা মা মেয়েকে বিয়ে দেওয়ার জন্য রাজি হয়ে যায়। ছেলে দেখতে ভালো। ফ্যামিলি ভালো। ভালো চাকুরী করে। রাজি না হয়ে উপায় নেই। তখনই প্রত্যাশার সাথে ভালো ভাবে কথা বলার সুযোগ হয় সায়েমের। আস্তে আস্তে সায়েমকেও চেনা জানার সুযোগ হয় প্রত্যাশার। কয়েকদিন পরেই ধুমধাম করে বিয়ে হয় দুজনের। বিয়ের কয়েকমাস পরেই অফিসের কাজে এই শহরে এসে ভালোবাসার সংসার সাজায় দুজন। এই বাড়িটি সায়েমের অফিস থেকে দেয়া হয়েছে। সায়েম প্রত্যাশাকে অনেক ভালোবাসে আর সব সময় ওর খেয়াল রাখে। প্রত্যাশার জীবনেও সায়েমই প্রথম ভালোবাসা।
.
ফোনটা হাতে নিয়ে সায়েমকে কল করলো প্রত্যাশা। রিং হলো কিন্তু রিসিভ করলো না। এই নির্জন সুনসান বাড়িতে একা একা আর কতক্ষণ থাকা যায়। কাজের মেয়েটিও আজ তার বাড়িতে কে যেন অসুস্থ তাকে দেখতে চলে গেছে। বাড়িতে একা খুব ভয় করছে প্রত্যাশার। খুব বেশি নিরব থাকায় বাহিরে থেকে ঝি ঝি পোকার আওয়াজ শোনা যাচ্ছে। বাড়ির পাশেই রাস্তা। রাস্তার পাশে বেশ কিছু গাছপালা থাকায় জঙ্গলের মতো হয়ে গেছে। প্রত্যাশা দুতলায় বেড রুমে বসে সায়েম আর তার বিয়ের ছবি গুলো দেখছিলো। হঠাৎ করে ফোনের রিংটন বেজে ওঠায় চমকে উঠল প্রত্যাশা। ফোনের দিকে তাকাতেই দেখলো সায়েমের হাসিমাখা একটি ছবি ফোনের স্কিনে ভেসে উঠছে। অস্থির হয়ে ফোনটা হাতে নিয়ে কলটা রিসিভ করলো প্রত্যাশা।
– কোথায় ছিলে তুমি? কতবার ফোন দিলাম। কখন আসবে?
– এইতো জান মিটিং শেষ হলো মাত্র। আমি এক্ষুনি বের হবো।
– তাড়াতাড়ি এসো! একা একা ভয় করছে তো৷
– চিন্তা করো না লক্ষী সোনা। আমি আসছি। তুমি খেয়ে নিও।
– তুমি আসো তারপর এক সাথে খাবো।
– আচ্ছা ঠিকাছে৷ রাখছি এখন। বাই৷
.
ফোন রেখে দিয়ে প্রত্যাশা বেড রুমের জানালাটা বন্ধ করে দিলো। বাতাসে জানালার পাল্লা দুটো বার বার বাড়ি খাচ্ছিলো। মেঘ করেছে। বৃষ্টি আসবে বোধহয়। হঠাৎ বিদুৎ চলে যাবে ভেবে হাতে কাছে মোমবাতি আর দিয়াশলাই আগেই রেখে দিয়েছে প্রত্যাশা।
.
অফিস থেকে বের হয়ে বাইকে উঠে বসলো সায়েম। প্রিয়তমার কথা ভাবতে ভাবতে মুচকি হেসে বাইক চালু করে চলতে শুরু করলো। পাগলীটা সারাক্ষণ তার কথা ভাবে। ভাববে নাই বা কেন। বাড়িতে তো সময় কাটানোর জন্যও তো একটা মানুষ থাকা চাই। একা একা আর কতক্ষণ থাকা যায়। ইদানিং একদমই সময় দিতে পারছে না তাকে। কাজের চাপ প্রচুর বেড়ে গেছে। বেশিভাগ সময়ই অফিসের কাজে ব্যস্ত থাকতে হয়। বেচারির বড্ডো কষ্টই হচ্ছে। সামনের সপ্তাহের ছুটির দিনটাই ওকে কোথাও ঘুরতে নিয়ে যেতেই হবে।
.
অনেকটা পথ চলে আসার পর হঠাৎ করেই বাইকটা থেমে গেল। এটা আর চলছে না। সায়েম অনেকবার চেষ্টা করেও আর চালু করতে পারলো না। ফাকা রাস্তায় সামনে কিছুটা এগিয়ে গিয়ে বাইকটা একটা গ্যারেজে ঠিক করতে দিয়ে হাটা ধরলো। এখান থেকে বাড়ি বেশি দূরে নয়। হেটেই বাড়ি যাওয়া যাবে।
.
রাত সাড়ে ১২ টা বাজে। সায়েমের আসতে দেড়ি হচ্ছে দেখে প্রত্যাশার চিন্তা আর ভয় হচ্ছে। বেলকুনিতে গিয়ে দাঁড়িয়ে রাস্তার দিকে যে চেয়ে থাকবে সেই সাহসও নেই । একা একা বেলকুনিতে যেতেও ভয় করে।
.
আকাশে মেঘ করেছে। বাতাসে রাস্তার দুইপাশে গাছপালা গুলো দুলছে। এই শীতল পরিবেশে ফাকা রাস্তায় হাটতে হাটতে সায়েম গান ধরলো। গান গাইতে গাইতে হাটছে সায়েম। মেঘ গুলো কখনো কখনো আকাশে ভেসে থাকা চাঁদটাকে আড়াল করছে। এরকম শীতল পরিবেশের মধ্য একটা জায়গায় এসে একটু গরম অনুভুত হতে লাগলো সায়েমের। পিচ ঢালা রাস্তার ওপর এই জায়গাটায় পা দিতে গিয়ে মনে হলো কিছু একটার ছায়া সরে গেল। থমকে গেল সায়েম। আশেপাশে তাকিয়ে কিছু দেখতে না পেয়ে আবার চলতে শুরু করলো। বাতাসে রাস্তার দুইপাশের গাছ গুলো দুলছে। হয়তো সেগুলোরই ডালপালার ছায়া পরেছিলো। এটা ভেবে আবারও গান গাইতে গাইতে হাটতে লাগলো।
.
হাটতে হাটতে হঠাৎ পা দুটো ভাড়ি ভাড়ি মনে হতে লাগলো। পিছনে কেউ যেন টেনে ধরছে এমন মনে হচ্ছে। পা দুটো যেন আর চলছেই না। এতো বাতাসের মধ্যেও সায়েমের গরম লাগছে। সায়েম ঘামতে শুরু করলো। হয়তো কাজের চাপে সারাদিন ব্যস্ত থাকায় এখন খুব ক্লান্ত লাগছে সেই জন্যই এমন মনে হচ্ছে। মনে জোর নিয়ে সায়েম এবার জোরে জোরে হাটা শুরু করলো । হাটতে হাটতে মনে হলো জুতার ভিতর দুই পায়ের পাতা ছিড়ে যাচ্ছে। জ্বলে যাচ্ছে পা।
.
হাটা থামিয়ে দিয়ে পা থেকে একটা জুতা খুলে দেখলো রক্তে সাদা মোজা ভিজে গেছে। মোজাটা পা থেকে খুলে ফেলে দিয়ে দেখতে পায় সত্যই পায়ের পাতা ছিলে গেছে আর ওখান থেকেই প্রচুর রক্ত বের হচ্ছে। এরকম তো হবার কথা নয়। তেমন বেশি একটা পথও তো হেটে এসেনি। তাহলে এরকম হলো কেন। কোথাও তো আঘাতও পায় নি। ওপর পায়ের জুতা খুলেও একই অবস্থা দেখা যায়।
.
চলবে….