পর্ব:২৬(শেষাংশ),২৭

0
1013

#ভালোবাসার_লাল_বৃত্ত
#পর্ব:২৬(শেষাংশ),২৭
লেখনীতে:তাজরিয়ান খান তানভি
পর্ব:২৬(শেষাংশ)

এক পা ছড়িয়ে পিঁড়িতে বসে আছে ফারিনা। গতকাল রাতে পা পিছলে পড়ে গিয়ে তার হাঁটু ছুলে গেছে। অন্য পা হাঁটুর কাছে ভেঙে রেখেছে। মাছ কা*টছে সে। রান্না নিয়ে তটস্থ অরুনিকা। আঁচল গুঁজে রেখেছে কোমরে। কপালে লেপ্টে আছে চুল। ঘর্মাক্ত মুখখানাতে একটু পরপর তাকায় ফারিনা। মুচকি হাসে সে। অরুনিকা ব্যস্ত ভঙ্গিতে চোখ রাঙিয়ে বলল—

“হেসো না তো। জলদি করো। আজ আসুক ফাহিম। ছেলেটা যে কী করে! যখনই ওকে বাজারে পাঠাই দুই ঘণ্টা লাগিয়ে দেয়।”

ফারিনা একগাল হেসে বলল—

“ভাবিজান রাগ করেন কেন? আইয়া পড়ব।”

“এসে পড়বে তো জানি। কিন্তু আসবে টা কখন? দেরি হচ্ছে আমার।”

“বউমা!”

নমিতা বেগম ডাকলেন। ত্রস্তে তাকল অরুনিকা। তাড়া নিয়ে বলল—

“আরেকটু আম্মা, এই যে চা হয়ে যাচ্ছে।”

নমিতা বেগম সহজ হেসে বললেন—

“চা নিতে আসিনি। তোমার ফোন এসেছে।”

অরুনিকা উচ্ছ্বাস নিয়ে বলল—

“কে ফোন করেছে? আম্মু?

“না। বলল তোমার কি আত্মীয় হয়। তুমিই কথা বলে দেখো।”

অরুনিকা সন্দিহান চোখে তাকিয়ে হাত বাড়িয়ে নমিতা বেগমের হাত থেকে মোবাইল নিল। নাম্বার দেখেও সে চিনতে পারল না। সে কানের কাছে মোবাইল নিল সন্দিগ্ধ অভিব্যক্তিতে। নরম স্বরে বলল—

“হ্যালো!”

ওপাশের ব্যক্তি হেসে উঠে বলল—

“কেমন আছিস?”

অরুনিকা ভ্রূ কুঁচকাল। চোখ ছোটো ছোটো করে চাইল। তার মস্তিষ্কের স্নায়ুতে চাপ প্রয়োগ করে সে বুঝতে চাচ্ছে কে কল করেছে। কিন্তু পারল না। তাই সে প্রশ্ন করল—

“কে আপনি?”

“ভুলে গেলি? তোর জন্য কী মা*ইরটা মার*ল তোর বাবা আমাকে।”

ফট করে হেসে উঠল অরুনিকা। নিষ্প্রভ মুখটা সহসা রোদের মতো জ্বলজ্বল করে উঠল। বলল—

“তুমি! এতদিন পর? কেমন আছ?”

নমিতা বেগম আশ্বস্ত হলেন। অরুনিকার কথা শুনে তিনি বুঝতে পারলেন ফোনের ওপাশের ব্যক্তিকে অরুনিকা চিনতে পেরেছে। তিনি ফারিনার দিকে এক ঝলক তাকিয়ে রান্নাঘর থেকে চলে গেলেন।

ওপাশের ব্যক্তি বলল—

“আগে বল কেমন আছিস? বিয়ে করে ফেললি, একটু জানালিও না?”

অরুনিকা নিভে যাওয়া গলায় বলল—

” আম্মু তোমাকে কিছু বলেনি? বিয়েটা তো হঠাৎ করেই হয়েছে। কোনো অনুষ্ঠান ছাড়াই। আর তুমিও তো আমাদের বাড়ি আর এলে না।”

“আসবো কী করে? তোর বাবা আমাকে সহ্য করতে পারলে তো। শুধু শুধু আমাকে ভুল বুঝল।”

অরুনিকা বিব্রত গলায় বলল—

“ওসব বাদ দাও। তুমি কেমন আছ বলো?”

অরুনিকা এক হাতে চুলো থেকে চায়ের পাতিল নামিয়ে তাকের ওপর রাখল। দেয়ালে হেলান দিয়ে দাঁড়াল।

“ভালো আছি।”

“আমার শ্বশুরবাড়িতো এলে না?”

“চিনিই তো না। যাব কী করে?”

“তাহলে ঠিকানা দিচ্ছি। চলে এসো।”

“তুই ভালো আছিস?”

“হুম।”

“আমি তোর শ্বশুরবাড়ির কাছেই আছি। রাব্বি টি স্টলের কাছে। কিন্তু বাকি পথ চিনতে পারছি না।”

অরুনিকা উন্মত্ত জোয়ারের মতো হেসে বলল—

“তুমি এখানে এসেছ?”

“হ্যাঁ। ঠিকানা নিয়েই এসেছি। তোকে দেখেই চলে যাব। তোর বাপ জানলে আবার কেলেঙ্কারি বাধাবে।”

“বাসায় আসো। আমার শ্বশুর -শাশুড়ি বাসায় আছেন। শৈবালও চলে আসবে। দুপুরে খেয়ে যেও।”

“না রে। ফিরতে হবে আমাকে। তুই আয়। তোকে একটু দেখেই চলে যাব।”

“তাই বললে কী হয়! কখনো তো আসোনি?”

“সুযোগই তো দিলি না। তুই আসবি না কী আমি চলে যাব?”

“আরে না, না। তুমি দাঁড়াও, আমি আসছি।”

অরুনিকা কল ডিসকানেক্ট করে মোবাইলটা সিমেন্টের তাকে রাখল। কোমরে গুঁজে থাকা আঁচল নামিয়ে নিল। মুখটা মুছে বলল—

“তুমি মাছ কে*টে ধুয়ে রাখো। আমি একটু আসছি।

ফারিনা সম্মতি দিয়ে বলল—

“আইচ্ছা।”

” আর আম্মাকে চা টা গরম করে দিয়ে দিয়ো।”

“আইচ্ছা।”

অরুনিকা চটজলদি বাসা থেকে বের হলো। প্রায় ঘণ্টা দেড়েক পর দরজার কাছে এসে চেঁচাতে লাগল ফাহিম। ঘরের দরজা খুলে রাখা। তা ভেজানো ছিল। নমিতা বেগম রুম থেকে বেরিয়ে এসে মূল দরজার কাছে দাঁড়ালেন। ফাহিম অরুনিকার উদ্দেশ্যে বলল—

“ভাবিজান, বাজার নিয়া আইছি। ধরেন।”

রান্নাঘর থেকে অরুনিকা এলো না। ফারিনা উচ্চ আওয়াজে বলল—

“ভাবিজান ঘরে নাই। তুই বাজার এদিকে নিয়া আয়।”

নমিতা বেগম শঙ্কিত চোখে তাকালেন। তিনি দ্রুত রান্নাঘরে গিয়ে বললেন—

“বউমা কোথায়?”

ফারিনা ফড়ফড় করে বলল–

“ভাবিজান তো তার আত্মীয়ের লগে দেখা করতে গেছে।”

নমিতা বেগম আতঙ্কিত গলায় বললেন—

“কখন?”

“মেলা সময় অইছে।”

“কী বলছ?”

” আম্মা?”

শৈবালের কণ্ঠ পেয়ে যেন আত্মা শুকিয়ে এলো নমিতা বেগমের। তিনি শৈবালের দিকে ফিরে তাকালেন। শৈবাল ফিকে গলায় কৌতূহল নিয়ে বলল—

“কী হয়েছে আম্মা? ফাহিম ওখানে দাঁড়িয়ে আছে কেন? আর আপনি রান্নাঘরে কেন? অরু কোথায়?”

শৈবাল দরজা খোলা পেয়ে সোজা নিজের রুমে গিয়েছিল। অরুনিকাকে না পেয়ে রান্নাঘরে ফিরে আসে। নমিতা বেগম থতমত গলায় বললেন—

“কে যেন বউমা’কে ফোন করেছিল। তার সাথে দেখা করতে বেরিয়েছে সে।”

“কী? কে ফোন করেছে?”

“তাতো বলতে পারব না। একটা ছেলে মনে হলো।”

ফারিনা দ্রুত গিয়ে নমিতা বেগমের মোবাইল ফোন এনে শৈবালের হাতে দিলো। বলল–

“এইহানে নাম্বার আছে।”

শৈবাল রিসিভড কলে নাম্বার চেক করে আবার ডায়াল করল। কিন্তু মোবাইল সুইচ অফ। শৈবালের চোয়াল শক্ত হয়ে এলো। সে ফাহিমকে বলল যেন সামনের রাস্তাটা ভালো করে দেখে আসে। শৈবাল কাউকে ফোন করল। সে উদ্বিগ্ন, উৎকণ্ঠিত। রোষে ফেটে পড়ে বলল—

“একটা মেয়েকে দেখে রাখতে পারেন না আপনারা? কী করেন সারাদিন?”

তৌফিক সাহেব এসে দাঁড়ালেন সেখানে। তিনি নম্র গলায় বললেন—

” এত চিন্তার কী আছে? গেছে, চলে আসবে আবার।”

“আর যদি না আসে?”

এই প্রশ্নে থমকে গেল সবাই। হতভম্ব দৃষ্টি তাদের। শৈবালের শিরায় শিরায় কাঁপন ধরেছে। ক্রোধে বিহ্বল সে। ডাইনিং টেবিলের চেয়ারে একটা জোরালো লাথি বসাল। ধপ করে কাউচে বসল। বসেই রইল। মিনিট পনেরো পর একটি ছেলে হম্বিতম্বি করে ঘরের ভেতর ঢুকল। তাকে দেখেই উঠে দাঁড়াল শৈবাল। ছেলেটির সারা মুখ লালচে। ঘামের দরিয়া বইছে। চোখের দৃষ্টি এলোথেলো। অস্থির গলায় বলল—

“সরি স্যার। মা ফোন করেছিল। কল রিসিভ করতে করতে কখন যে ছেলেটা ম্যামকে নিয়ে উধাও হয়ে গেল খেয়ালই করতে পারলাম না।”

নমিতা বেগম বিস্ফোরিত চোখে চেয়ে আছেন। এই ছেলেটাকে তিনি মাস খানেক ধরে তাদের বাড়ির সামনের রাস্তাটায় দাঁড়িয়ে থাকতে দেখেছেন। মাঝে মাঝে উঁকিঝুঁকিও মার*তো। শৈবাল রোষে চেপে ধরল ছেলেটির গলা। ফ্যাসফ্যাসে গলায় বলল—

“তোকে এর জন্য রেখেছি আমি? ওর যদি কিছু হয় , জানে মে*রে ফেলব তোকে আমি।”

ছেলেটি কাঁপতে শুরু করল। শৈবাল ছেলেটিকে ছেড়ে দিয়ে নিজের চুল খামচে ধরল। চোখে-মুখে ভয়, আতঙ্ক আর বিদঘুটে চিন্তা-ভাবনারা ডুবকি লাগাচ্ছে। শৈবাল হঠাৎ করে বাইরে যাওয়ার জন্য পা বাড়াতেই বলে উঠলেন তৌফিক সাহেব—

“কোথায় যাচ্ছিস?”

শৈবাল স্থির হলো। নতমুখে বলল—

“অরুনিকার কাছে।”

চলবে,,,

#ভালোবাসার_লাল_বৃত্ত
#পর্ব:২৭
লেখনীতে:তাজরিয়ান খান তানভি

একটা হলুদাভ উজ্জ্বল বাতি জ্বলছে। চারপাশের দেয়াল এখনো ছাই রঙা। পলেস্তারা করা হয়েছে। খরখরে! জানালার জায়গাটুকুতে গ্রিল এনে লাগানো হয়েছে। কিন্তু তা এখনো শুকায়নি। সিমেন্ট, বালুর মিশ্রণের নতুন আমেজ দেখলেই বোঝা যাচ্ছে। মেঝেতেও সিমেন্টের শেষ প্রলেপ পড়েনি। ছোটো ছোটো ভাঙা ইটের টুকরো, পলেস্তারার ছোটো টুকরো, জালাইয়ের ছাই এমনকি লোহার ছোটো টুকরোও পড়ে আছে।

এখন বিকেল। দামাল সূর্য তার আঁচ কমিয়ে এনেছে। হেলতে শুরু করেছে পশ্চিমাদেশে। গোলাকার সূর্য তার ফিকে হলুদ রঙ ছাড়িয়ে কমলা রঙে নিজেকে রাঙিয়ে নিচ্ছে। ধূসর আকাশে গুচ্ছ গুচ্ছ মেঘের উড়ে চলা।কোথাও জমাট বেধে আছে শুভ্র মেঘ আকাশের ভাঁজে ভাঁজে। উঁচু বিল্ডিংগুলোর ছায়া নামতে শুরু করেছে। ক্লান্ত শহর একটু একটু করে এগিয়ে যাচ্ছে সায়ংকালের দ্বারে।

বদ্ধ ঘরটির একপাশে দেয়ালে মাথা লাগিয়ে বসে আছে অরুনিকা। নিভু নিভু চোখ মেলে তাকাচ্ছে সে। মাথাটা ঝিমঝিম করছে। শ্বাস ভারী! অরুনিকা চোখের পলক টেনে তুলল। তা আবার অচিরেই নেমে যাচ্ছে। মাথাটা কষ্ট করে সোজা করল। তারপর…মন্থর গতিতে শ্বাস ফেলতে ফেলতে তাকাল সামনে। অমিত বসে আছে একদম তার নিকটে।

অরুনিকা দেহভঙ্গি খানিকটা দৃঢ় করল। তার হাত বাধা উলটো করে। পায়ের গোড়ালিতেও মোটা দড়ির অস্তিত্ব। অরুনিকার হাত এখন পেছনের খরখরে দেয়ালের সাথে লেগে আছে। অসাবধানতায় ঘষা লেগে খানিকটা ছুলে গেছে। সেদিকে মনোযোগ না ঢেলে সামনের ব্যক্তিকে বলল—

“কেন নিয়ে এসেছ আমাকে?”

অমিত হাসল। অরুনিকার একটুও পছন্দ হলো না সেই হাসি। খুবই বিশ্রি আর বিদঘুটে মনে হলো তার। অমিত সরস চোখে তাকাল। বলল—

“এখন কেমন লাগছে তোর? আমি কিন্তু তোকে সিডাকটিভ দিতাম না। প্ল্যানই ছিল না। বাধ্য হলাম। ওই ঘাউরা শৈবাল যে তোকে দেখে রাখার জন্যও যে লোক রেখেছে, তা কী আমি জানি! অবশ্য তোকে বেহুঁশ না করলে তুই আসতিও না আমার সাথে। শৈবাল তোকে কী জাদু করেছে কে জানে! এতকিছুর পরও আঠার মতো লেগে রইল ওর সাথে।”

অরুনিকা ওষ্ঠাধর আলগা করে শ্বাস ফেলল। গলা শুকিয়ে আছে তার। অস্ফুট স্বরে বলল—

“পানি খাবো আমি।”

“আচ্ছা, দাঁড়া দিচ্ছি।”

অমিত পানির বোতল নিয়ে তার ঢাকনা খোলে। অরুনিকার হাত ধরে তাকে পানি খাওয়াতে গেলে অরুনিকা প্রতিবাদ করে বলল—

“ছোঁবে না তুমি আমাকে।”

মিচকে হাসল অমিত। বলল–

“গাড়ি থেকে এ পর্যন্ত তোকে বুকের সাথে লাগিয়েই নিয়ে এসেছি।”

বলেই আবারও হাসল অমিত। অরুনিকার গা ঘিনঘিন করে উঠল। অমিত অরুনিকার মুখে বোতলের মুখ ধরতেই সে গলগল করে কয়েক ঢোক গিলে নিল। তারপর লম্বা শ্বাস ফেলে অমিতের দিকে চাইল। সপ্রতিভ গলায় বলল—

“কীসের শত্রুতা তোমার শৈবালের সাথে?”

“সে অনেক কিছু। আগে তোকে একটা অডিয়ো শোনাই।”

অমিত অত্যধিক আগ্রহ নিয়ে নিজের মোবাইল বের করল পকেট থেকে। তারপর একটা অডিয়ো প্লে করল। মুহূর্তেই অরুনিকার লোচনজোড়া প্রস্ফুটিত হলো।

অডিয়ো রেকর্ডিং –

অরুমিতা বলল—

” শৈবাল গাড়ি থামাও। থামাও বলছি।”

শৈবাল রোষের সাথে বলল—

” এমন কেন করলে অরু? আমাকে ধোঁকা কেন দিলে? কী খামতি ছিল আমার ভালোবাসায়?”

কিছু পড়ে যাওয়ার আওয়াজ। অরুমিতা ভয়ংকরভাবে তাকিয়ে আছে শৈবালের দিকে। শৈবাল ক্ষোভে গাড়ির গতি বাড়াচ্ছে।

অরুমিতা অনুনয় করে বলল—

” প্লিজ শৈবাল, আমার কথা শোনো। আই এম সরি। প্লিজ গাড়ি থামাও। অ্যাকসিডেন্ট হয়ে যাবে।”

শৈবাল তাচ্ছিল্যের সাথে বলল—

” হোক। একসাথে যখন বাঁচতেই পারব না, ম*রতে তো পারব।”

অরুমিতা রাগ ঝেড়ে বলল—

” আর ইউ ক্র্যাজি? তোমার ইচ্ছে হলে তুমি ম*রো, আমি নই। গাড়ি থামাও বলছি।”

গাড়ির গতি তার স্বাভাবিক গতির চেয়ে বেশি। অরুমিতা রুষ্ট গলায় বলল–

“তুমি সব জেনেই আমাকে বিয়ে করেছ। ওই শিমুল স্ক্রা*উন্ডেলটা তো সব বলেছে তোমাকে। তাহলে এখন কী হয়েছে তোমার?”

গাড়ি এলোপাথাড়ি চলছে। শৈবালের চোখ লালাভ। তার কানের পাশ দিয়ে উষ্ণ, স্বচ্ছ জলের সরু ধারা নামছে। সে বিক্ষুব্ধ গলায় বলল—

“ভুল একবার হয় অরু, বারবার নয়। বারবার যা হয় তা পাপ। তুমি পাপ করেছ। তার জন্য তোমাকে আমি ক্ষমা করব না। আমাকে নিঃস্ব করে দিলে তুমি। কতবার ওর সাথে বিছানায় গিয়েছ যে ওর সন্তান তোমার গর্ভে?”

অরুমিতার গলায় শ্বাস রোধ হয়ে এলো। তার অনাকাঙ্ক্ষিত প্রেগন্যান্সির কথা শৈবাল কী করে জানল! সে চরম বিস্ময় নিয়ে বলল—

“এসব কী বলছ তুমি? কে বলেছে তোমাকে এসব?”

শৈবাল স্টেয়ারিং হাত রেখে অরুমিতার দিকে অগ্নিঝরা দৃষ্টিতে তাকাল। হিসহিসিয়ে বলল—

“এবোর্শনও করিয়েছ। আর কত ধোঁকা দেবে তুমি আমাকে? তুমি…।”

“শৈবাল…।”

অরুমিতার প্রাণপন চিৎকার আর ভয়ং*কর, বীভ*ৎস, হৃদয় কাঁপানো আওয়াজের সাথে সব নিস্তব্ধ, নিস্তেজ। অমিত মোবাইল রাখল পকেটে। আলতো হেসে বলল—

“অ্যাক*সিডেন্ট! অরুমিতা ওপরে আর শৈবাল হাসপাতালে। শা*লার প্রাণ কই মাছের প্রাণ। ম*রল না। তিনমাস ছাগলামি করে আবার তোকে বিয়ে করল। ***।”

আরও কিছু অশ্রাব্য ভাষায় গালিয়ে দিয়ে উঠল অমিত। অরুনিকার ইচ্ছে হচ্ছে অমিতের পুরো মুখটা দুই হাতের নখ দিয়ে খামচে ছিন্নভিন্ন করে দিতে। সে দাঁতে দাঁত চেপে চুপ করে রইল। কঠিন স্বরে প্রশ্ন করল—

“মেয়েটার সাথে এমন কেন করলে? ওর কী দোষ ছিল? শিমুল ভাইয়া তো শৈবালের বন্ধু। সেও তোমার সাথে মিলে শৈবালের সাথে এত জঘন্য ঘটনা ঘটিয়েছে?”

“ও তো একটা গবেট! শৈবালকে তো এমনি দেখতে পারত না। আর সেদিন চান্স পেয়ে অরুমিতার সাথে…।
অরুমিতা তখন ড্রিংকস করে বেহুশ। ও ভেবেছিল আমি। কিন্তু আসলে ছিল শিমুল। বেচারা! ফার্স্ট টাইম তো। তাই বুঝতে পারেনি। তাই ওকে ফাঁসাতে সুবিধা হলো। মজার কথা কী বলতো? অরুমিতা জানতই না ওই বাচ্চা শিমুলের।”

অমিত হা হা করে হেসে উঠল। রাগে শিরশির করছে অরুনিকার পুরো দেহ। সে পা দিয়ে লাথি মা*রতে চাইল অমিতকে। অমিত পা চেপে ধরল অরুনিকার। জঘন্যভাবে হেসে বলল—

“ওই, এত তেড়িবেড়ি করিস কেন? ঠিক হয়ে বস। এখানে তোর ওই নেওটা শৈবাল নেই যে তোকে আহ্লাদ করবে। ”

অরুনিকা একদলা থু থু ছুড়ে মা*রল অমিতে দিকে। অমিত সরে বসল। রোষানলে জ্বলে বলল অরুনিকা—

“ছিঃ! কতটা জঘন্য তোমরা! মেয়েটার সাথে এমন করতে তোমাদের বুক কাঁপল না?”

“না, কাঁপেনি। তোর জায়গায় যদি শৈবাল অন্য কাউকে বিয়ে করত, তাহলেও কাঁপতো না। ওর অবস্থাও অরুমিতার মতোই হতো। তুই বলে বেঁচে গেলি।”

“কেন? আমাকে বাঁচিয়ে রাখলে কেন?”

অমিত তার পেছনে রাখা চেয়ার থেকে একটা পেপার নিল। তারপর একগাল হেসে বলল—

“কারণ, তোকে আমি বিয়ে করব। এ ডিভোর্স পেপারে সই করবি, তারপর তোকে নিয়ে আমি এখান থেকে দূরে চলে যাব। ”

অরুনিকা ক্রোধের বর্ষণ ঘটিয়ে বলল—

“তুমি ভাবলে কী করে আমি তোমাকে বিয়ে করব?”

“ভাবার কিছু তো নেই। তোর বর যেমন তোর পেছনে লোক লাগিয়ে রেখেছে, আমিও ওর পেছনে লোক লাগিয়ে রেখেছি। সে বার না হয় বেঁচে গেছে, কিন্তু এইবার? গাড়ির ব্রেকফেল হতেই তোর শৈবাল…. টপ।”

অরুনিকা দেয়ালে হেলান দেওয়া শরীর উঠিয়ে সামনে আগাতেই তার দুই কাঁধ ধরে দেয়ালের সাথে চেপে ধরল অমিত। হিংস্রতার সাথে বলল—

“ওখানেই বস। নাহলে কিন্তু বিয়ে ছাড়াই…।”

“একবার শৈবালকে আসতে দাও।”

অমিত মজা করে হাসল। বলল—

“আসবে কী করে রে? ও কী জানে নাকী আমি কোথায়? আজই তো শিমুল উড়াল দেবে ইন্ডিয়া। তারপর তুই আর আমি।”

অরুনিকার চোখ দিয়ে পানি পড়ছে। কাঁদছে না সে। রাগ হচ্ছে তার। ভয়ং*কর অসহনীয় রাগ। এতবড়ো ভুল কী করে করল সে ? আস্ত একটা শয়*তানকে চিনতে পারল না। দুটো জানো*য়ার মিলে একটা মেয়েকে কীভাবে ফাঁসাল?
অরুনিকার ভাবনা ছুটল তিরিক্ষি মেজাজে। অমিতের দৃষ্টি আর হাত তখন অরুনিকার ফর্সা টলটলে পায়ে। যে ছোঁয়া ধীরে ধীরে শাড়ি গলিয়ে ওপরের দিকে উঠছে। ভয়ে হিম হয়ে এলো অরুনিকার দেহ।

চলবে,,,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here