পিচ্চি চাচাতো বোন(সিজন ২),পর্বঃ১৪
আবির হাসান নিলয়
যতোটা সম্ভব জান্নাতকে এড়িয়ে চলার
চেষ্টা করি।এমনিতে সব কিছু ঠিকঠাক
থাকলেও যখন ও কথা বলে তখন
ইচ্ছা করে ধুমছে মার শুরু করি।আজ
কোর্ট থেকে কল করে বলল,ডিভোর্স
লেটার রেডি হয়ে গেছে।দুজনের সাইন
লাগবে।জান্নাতকে মেরে ফেললেও
ও কোর্টে কখনো যাবে না।তাই আমাকেই
যেতে হবে।
জয়ঃকিরে কি ভাবছিস?
এসব নিজে নিজে ভাবছি তখনি জয়ের
ডাকে ভাবনার জগত থেকে বের হলাম।
আমিঃকিছু না।
জয়ঃমন খারাপ?
আমিঃমন খারাপ হবে কেনো?
জয়ঃকিছু বলছিলি না তাই
আমিঃকাল জান্নাতকে ডিভোর্স দিচ্ছি
রাফিঃহোয়াট?
আমিঃহ্যা
রাফিঃতোর মাথা ঠিক নেই,দোস্ত
এটা ভুলেও করিস না।
আমিঃঅনেক ভেবেছি
রাফিঃজান্নাত তোকে অনেক বেশিই
ভালোবাসে প্লিজ ওর সাথে এমন
কিছু করিস না।মেয়েটা তোকে ছাড়া
থাকতে পাড়বে না।
আমিঃতখন তো একাই ছিলো
জয়ঃএখনো সেই আগের কথা নিয়েই
পড়ে আছিস?
আমিঃপড়ে থাকারই বিষয়।
রাফিঃএটা অনেক খারাপ হবে।
আমিঃতোর যাচাই করতে হবে না।
রাফিঃআমরা তোর বন্ধু,ভালো মন্দ
যাচাই করার অধিকার আছে।
আমিঃউহু,নেই।কারণ আমার ভালো
আমি নিজেই বুঝতে শিখেছি।
রাফিঃকিন্তু তুই ভুল করছিস ভাই
—কি ভুল করছে?
কথা বলার মাঝে প্রিয়া আসলো।মূলত
প্রিয়ার জন্যই সবাই এক হওয়া।
জয়ঃকি খবর তোর?
প্রিয়াঃএইতো চলছে।তোদের কি অবস্থা?
আমিঃমোটামুটি
প্রিয়াঃতা কি মনে করে আজ এখানে?
আমিঃতোর আর রাফির বি…..
রাফিঃকিছু না,আর আমি এসবে
জড়াতে চাই না।
আমিঃসালা তুই তো বলে বলে মাথা
শেষ করছিলি কিন্তু আজ কি হলো।
রাফিঃকিন্তু একটু আগে তোর কথাবার্তা
শুনে ভালোবাসা উঠে গেছে।
প্রিয়াঃআমি কিন্তু কিছুই বুঝতে পারছি না
আমিঃরাফি তোকে ভালোবাসে কিন্তু
এখন বলছে ভালোবাসে না।
রাফিঃআমার কাছে এখন ভালোবাসার
মানে কিছু না।প্রিয়া আমি সরি তোর
সময় নষ্ট করার জন্য।
প্রিয়াঃএসব বাদ দে,এতোদিন পর
দেখা চল কিছু খাই।
জয়ঃহ্যা চল
বসে না থেকে সবাই মিলে হোটেলে
গিয়ে খাওয়া দাওয়া করলাম।তবে
রাফির কথাগুলোই কেনো জানি
মাথার মধ্যে ঘুরপাক খাচ্ছে।সালা
কি বোঝাতে চাইলো কিছুই মাথায়
ঢুকলো না।তবে ও যদি আমার
জায়গাতে থাকতো তাহলে বুঝতে।
দিনটা কোনোরকম পাড় করে
সন্ধ্যার দিকে বাসায় গেলাম।অনেক
ক্লান্ত লাগছে তাই তখনি শাওয়ার
নিয়ে ঘুমানোর চেষ্টা করলাম।কিন্তু
সেটা আর বেশিক্ষণ হলো না।
জান্নাতঃশরির খারাপ?
আমিঃ…..(কিছু বললাম না)
জান্নাতঃনিলয়?(হালকা ঝাঁকুনি দিয়ে)
আমিঃকি হয়েছে?
জান্নাতঃশরির খারাপ কি?
আমিঃনা
জান্নাতঃমাথা ব্যথা করছে?টিপে দেবো?
আমিঃবলেছি একবারো?
জান্নাতঃনা(মাথা নিচু করে)
আমিঃতাহলে এতো কথা বলার কি আছে?
জান্নাতঃসরি
আমিঃযা এখান থেকে
আর কোনো কথা না বলে উঠে গেলো।
ঘুমানো চেষ্টা করতে কখন যে ঘুমিয়ে
গেছি নিজেই বলতে পাড়বো না।
কিন্তু সেই ঘুমটাও আর হলো না।
ভাবিঃখাবি উঠ
আমিঃঘুমাতে দাও তো
ভাবিঃকথা না বলে উঠ,খেয়ে ঘুমাস
আমিঃখাবো না
ভাবিঃতোর জন্য অন্য কেউ না খেয়ে
থাকবে সেটা তো হয় না।কম বেশি
যা হয় খেয়ে নে।
আমিঃভাবি যাও তো
ভাবিঃতোর কি একটুও জান্নাতের
দিকে চোখ পড়ে না?মেয়েটা দিন
দিন একটা কঙ্কালে পরিণত হচ্ছে।
এই বাসা ছেড়ে অন্য যেখানেই থাকুক
না কেনো অনেক ভালো থাকবে।
কিন্তু শুধুমাত্র তোর জন্য এই নরকে
পড়ে আছে।আর তুই কি করছিস
ছোট্ট মেয়েটার সাথে??
আমিঃও ছোট?
ভাবিঃকতোই আর বড়?
আমিঃযতোটা বড় হয়েছে এটাই অনেক
ভাবিঃকথা না বলে উঠ
আমিঃতুমি যাও আমি আসছি
ভাবিঃ৩মিনিটে নিচে আসবি।না
হলে এসে একদম জল ঢেলে দেবো।
যেতে যেতে আরো কিছু বকা
দিয়ে গেলো।শুয়ে না থেকে ওয়াশরুমে
গিয়ে মুখটা ধুয়ে নিচে আসলাম।আভা
জান্নাতের কোলে খেলা করছে।ভাবি
ঠিকিই বলছিলো,দিন দিন মেয়েটা
একদম শুকিয়ে যাচ্ছে।ছোট মা,চাচ্চু
এই অবস্থাতে দেখলে না জানি কান্নার
প্রতিযোগিতা শুরু করে দিতো।
আমিঃআভা কাম মামনি
আভাঃনো
আমিঃবুড়ি,এখন আসলে না।পরে
আর কখনো কোলে নিবো না।
আভাঃওকে,আমি মাম্মামদের সাথে
তাকবো।তুমার কাতে যাআবো না।
জান্নাতঃমামনি চাচ্চুর কাছে যাও
আভাঃতুমি রাখবে না আমাত?
জান্নাতঃপরে নেবো,এখন যাও
আমিঃলাগবে না।ও যার কাছে
খুশি থাকবে সেখানেই থাকুক।
ভাবিঃজান্নাত আজ তুই থাক আমি
নিজেই সবাইকে খাবার দিচ্ছি।
জান্নাতঃঠিক আছে ভাবি।
টুকটাক কথা বলার পাশাপাশি
ভাবি সবাইকে খাবার বেড়ে দিলো।
আম্মুঃঅরিতা তুইও বস মা
ভাবিঃহ্যা আম্মা বসবো।
আম্মুঃবস
ভাবিঃআভা,তুমি আমার কাছে
আসো।ছোট মাম্মামের শরির
খারাপ তাকে একা খেতে দাও।
জান্নাতঃনা ভাবি,থাক আমার কাছে।
আম্মুঃআভা তো চলে যাচ্ছে না।
খাওয়া শেষ করে আবার নিস।আগে
খেয়ে নে।
জান্নাতঃহুম(আভাকে ভাবি নিলো)
আব্বুঃতোরা দুজন কোথাও থেকে
ঘুরে আয়।দেখবি ভালো লাগবে।
আমিঃআমি আর কে?
আব্বুঃতুই আর জান্নাত
আমিঃমেয়েটা তো তোমাদের তাই
ওকেই যেতে বলো।
আব্বুঃজান্নাত বাড়ির বউ আর তুই
এই বাড়ির ছেলে।সব কিছুর জন্য
ওর না,তোর মত দরকার।
আমিঃযাক,একটা তো ঠিক কথা বলছো।
কিন্তু এখন ওকে সাথে নিয়ে যেতে পাড়বো না।
কথা শেষ হতে না হতেই জান্নাত খাবার
রেখে উঠে গেলো।
আম্মুঃকোথায় যাচ্ছিস?
জান্নাতঃএমনি আম্মু খেতে ভালো
লাগছে না।তোমরা খেয়ে নাও।
আম্মুঃআর একটু খেয়ে যা
আমিঃযে খেতে চাইছে না তাকে
জোর করে খাওয়ানোর কি আছে?
জান্নাতের দিকে লক্ষ্য করলাম মাথা
নিচু করে রুমে চলে গেলো।
খাওয়া শেষ করে ছাদে গিয়ে কিছু
সময় বসে থাকার পর রুমে আসতেই
জান্নাত ঘুরে কিছু একটা করলো।
পুনরায় আমার দিকে ঘুরলে লক্ষ্য
করলাম চোখটা লাল হয়ে আছে।
এতোটা সময় হয়তো কান্না করছিলো।
আমিঃশোন
জান্নাতঃবলো(কাছে এসে)
আমিঃএতো ন্যাকামি করিস কেনো?
(কোমরে হাত দিয়ে কাছে এনে বললাম)
জান্নাতঃতোমার কাছে কোনটা ন্যাকামি না?
আমিঃতখন খাওয়া শেষ না করে উঠে
আসার মানে কি?(মুখ ধরে)
জান্নাতঃআসাতে তো খুশি হয়েছিস
আমিঃতুই মরে গেলে বেশি খুশি হবো
জান্নাতঃতো মেরে ফেল(ঝাড়ি দিয়ে)
আমিঃছাদ থেকে লাফ দিয়ে মরে যা
জান্নাতঃইচ্ছা নেই
আমিঃজাহান্নামে যা
জান্নাতঃতোর এতো শখ…..
আমিঃবিরক্তি করবি না।এখন ঘুমাবো।
জান্নাতঃআমি খাটে ঘুমাবো
আমিঃএমনিতেই তোকেই বলতাম,আজকেই
তো শেষ। তাই তুই নিজেই ঘুমা।
জান্নাতঃমানে?
আমিঃকি মানে?
জান্নাতঃআজকে শেষ মানে?
আমিঃআপনার খাট,প্লিজ ঘুমান(দেখিয়ে দিয়ে)
আর কোনো কথা না বলে একটা বালিশ
নিয়ে সোফার উপর শুয়ে থেকে ছোট
একটা বাটন ফোন টিপছি।মোবাইলটা
ভাঙবার পর এটাই আপাতত ব্যবহার করছি।
অনেকটা সময় মোবাইলটার মধে ঢুবে
থাকার পর ঘুমানোর চেষ্টা করলাম।
পরেরদিন,,,,,,
নাস্তা করে অফিসের জন্য বের হবো
তখন জান্নাত বললো;
জান্নাতঃআসার পথে আমার জন্য
একটা শিউলি ফুলের মালা আনবে?
আমিঃনিজে গিয়ে এনে নে
জান্নাতঃনিজে গিয়ে আনা,আর তোমার
থেকে পাওয়া কি এক?
আমিঃঢং করিস না তো।
জান্নাতঃতোমার দেয়া সব তো আমার
কাছে অনেক বেশিই ভালো লাগে।
দ্বিতীয় প্রিয় উপহার তোমার সেই
ব্রেসলেট।যেটা এখনো আমার কাছে আছে।
আমিঃআনতে পাড়বো না।
জান্নাতঃঅপেক্ষায় থাকবো
কোনো উত্তর না দিয়ে বাইরে চলে
গেলাম।বাইক নিয়ে অফিসে চলে
এলাম।কাজের চাপটা একটু বেশি
থাকায় মাথার সব চিন্তাভাবনা দূরে
চলে গেছে।অফিসের কাজ শেষ
হতেই ভাইয়া আসলো।
ভাইয়াঃবাসায় যাবি না?
আমিঃহুম,তুই যা আমার একটু
কাজ আছে।
ভাইয়াঃকি কাজ?
আমিঃএকটা উকিলের বাসায় যাবো
ভাইয়াঃকেনো?
আমিঃএমনি কাজ আছে।
ভাইয়াঃতারাতারি বাসায় আসিস
আমিঃহুম
দুজন একসাথে অফিস থেকে বের
হয়ে আমি বাইক নিয়ে চলে আসলাম
মাহমুদ খানের বাসায়।উনাকে রিকুয়েস্ট
করার জন্য পেপারটা নিজের কাছে
রেখেছেন।আর আজ সারাদিন এতো
কাজের চাপে অফিস থেকে বের হতেই
পারিনি।বাসায় গিয়ে কয়েকবার কলিং
বেল বাজানোর পর একটা ছেলে
দরজা খুলে দিলো।
আমিঃমাহমুদ সাহেব বাসায় আছে?
—জ্বি আছে।ভিতরে আসুন।
আমিঃহুম
—আব্বু তোমার সাথে একজন দেখা
করতে আসছে।
মাহমুদঃআসছি
ভিতর থেকে কথাটা বলতে বলতে
রুমের বাইরে আসলো।
মাহমুদঃমি. নিলয়,আপনি পেপারটা
রুম থেকে আনছি।
আমিঃওকে
মাথা নিচু করে বসে আছি তখন
উনার স্ত্রী বিস্কুট এবং এক গ্লাস
পানি দিলো।ইচ্ছা না থাকা সত্ত্বেও
দুএকবার মুখে দিতে হলো।মাহমুদ
খান রুম থেকে পেপারস এনে আমার
হাতে দিয়ে বলল;
মাহমুদঃদুজন সাইন করে কোর্টে নিয়ে
যাবেন।বাকিটা আমি দেখবো।
আমিঃধন্যবাদ।আর আজ উঠি।
মাহমুদঃঠিক আছে।
বসে না থেকে উঠে চলে আসলাম।
মাথায় এতোটা সময় জান্নাতকে
ডিভোর্স দেয়ার কথা ঘুরপাক খেলেও
এখন কেমন একটা ভয় কাজ করছে।
ডিভোর্স লেটার দেয়ার পর কি হবে…!
হাজারটা চিন্তাভাবনা নিয়ে বাইক
চালাতে চালাতে বাসায় চলে আসলাম।
কাউকে কোনো কথা না বলে সোজা
ছাদে চলে আসলাম।অনেক কিছুর
সিদ্ধান্ত নিতে হবে,সেটার জন্য একটু
তো ভাবতে হবেই।দোলনার উপর
বসে চোখটা বন্ধ করে ভাবতে লাগলাম
কি করবো।বার বার শুধু জান্নাতের
ভুলটাই চোখে পড়ছে।সন্ধ্যা হয়ে
গেছে কিন্তু এখনো আমার সিদ্ধান্তটাই
নেয়া হচ্ছে না।
জান্নাতঃএখানে বসে কি ভাবছো?
এসব ভাবার মধ্যেই জান্নাত এসে
হাজির হলো।মেয়েটাকে যতোই
মারি বকা দেয় না কেনো,দিন শেষে
আমার সাথে হাসি মাখা চেহারা
নিয়েই কথা বলে।
জান্নাতঃকি হলো?
আমিঃএ্যাঁ?
জান্নাতঃকি করছো এখানে?
আমিঃতোর জন্যই অপেক্ষা করছি
জান্নাতঃশিউলি ফুলের মালা দিবে বলে?
আমি জানতাম তুমি আনবে,দাও।
আমার দিকে হাতটা এগিয়ে দিলো।
কোনো কথা না বলে ব্যাগ থেকে
ডিভোর্স লেটার বের করে জান্নাতের
হাতে দিলাম।একটু না অনেক বেশিই
অবাক হয়ে আমার দিকে তাকালো।
জান্নাতঃকি এটা?
আমিঃপরে দেখ।
কোনো কথা না বলে দ্রুত দেখতে
লাগলো কিসের পেপারস।মুহূর্তের
মধ্যে হাসিমাখা মুখটা ফ্যাকাসে হয়ে
গেলো।বাল্বের আলোতে স্পষ্ট বুঝা যাচ্ছিলো
চোখ থেকে ফোটা ফোটা জল পড়ছে।
জান্নাতঃতুমি আমাকে সত্যিই ছেড়ে
দিতে চাও?
আমিঃতোকে মুক্তি দিতে চাই
জান্নাতঃমুক্তি আমাকে দিচ্ছো নাকি
নিজেকে আমার থেকে গুটিয়ে নিচ্ছো?
আমিঃজানিনা
জান্নাতঃআমি তোমার পায়ে পড়ছি
প্লিজ আমাকে একটা বারের জন্য
সুযোগ দাও।আমি তোমাকে ছাড়া
থাকতে পাড়বো না।(পা ধরে)
আমিঃজান্নাত এটা আমি অনেক
চিন্তাভাবনা করার পর সিদ্ধান্ত নিছি।
তুই আর আমি দুজন আলাদা।
জান্নাতঃআমি বাঁচবো না তোকে ছাড়া?
আমিঃএমন মিথ্যা বলে কি লাভ?
সবাই বাচতে জানে।
জান্নাতঃকিন্তু তুই আমার বেচে থাকার
অক্সিজেন।তোকে ছাড়া আমি সত্যি
মরে যাবো।তুই আমাকে তোর নিজের
হাতে মেরে ফেল তবুও তুই আমার
সাথে এমনটা করিস না।
আমিঃলাস্ট একটা রিকুয়েস্ট করবো
জান্নাতঃতুই যা বলবি তাই করবো
তবুও আমাকে একটা সুযোগ দে।
আমিঃএখানে সাইন কর
জান্নাতঃআমি করতে পাড়বো না।
আমিঃযদি আমাকে জীবিত দেখতে
চাস তাহলে এখানে সাইন কর।
জান্নাতঃনিলয়…!!
চাহনিমাখা চেহারা নিয়ে পা ধরে
রাখা অবস্থাতে তাকিয়ে রইলো।
কিছু না বলে পকেট থেকে কলম
বের করে ওর দিকে এগিয়ে দিলাম।
অনেকটা সময় একদম চুপচাপ
তাকিয়ে থাকার পর দীর্ঘশ্বাস ফেলে
কলমটা হাতে নিয়ে ডিভোর্স লেটারে
সাইন করলো।কলমটা পেপারের
উপরে রেখে দাঁড়িয়ে গেলো।কিছু
একটা বলার আগেই দৌড়ে চলে
যেতে লাগলো।জান্নাত চলে যাওয়ার
পর পেপারস আর কলম তুলে ব্যাগে
নিতেই ভাইয়া আসলো।
ভাইয়াঃকি বলেছিস ওকে?
আমিঃকি বলবো?
ভাইয়াঃও কখনো এমন করে
কান্না করেনি,যেমনটা এখন
করে যাচ্ছিলো।
আমিঃওর থেকেই জিজ্ঞাস কর
ভাইয়াঃতুই বল কি করেছিস ওর সাথে?
আমিঃডিভোর্স লেটারে সাইন করাইছি শুধু
ভাইয়াঃকিসের ডিভোর্স লেটার?
আমিঃআমাদের সম্পর্কের ইতি টানার।
ভাইয়াঃআর কেনো করলি এটা?
আমিঃকারণটা সবার জানা।বিয়ের
রাতে চলে যাওয়ার জন্য।
ভাইয়াঃঠাসসস
সজোরে আমাকে থাপ্পড় মারলো।ব্যালেন্স
ঠিক না রাখতে পেড়ে কয়েক পা পিছু
চলে গেলাম।
ভাইয়াঃকেনো গেছিলো জানিস?
আমিঃ…..(চুপ করে আছি)
ভাইয়াঃজানিস কেনো গেছিলো?ঠাসস
জান্নাতঃভাইয়া প্লিজ ওকে মেরো না
ভাইয়াঃছাড় আমাকে,শুয়োরটা
এতো বড় হয়ে গেছে কিন্তু মাথায়
সামান্যতম জ্ঞান হয়নি।যখন তুই
আমাকে বিদেশ থেকে আনার জন্য
জান্নাতকে ব্যবহার করছিলি তখন
তোর না চাইতেও জান্নাত তোর আর
তোর ফ্রেন্ডদের মেসেজিং দেখে।
জান্নাতঃভাইয়া প্লিজ এসব বলো না,
আমি তোমার হাত ধরে বলছি।ওকে
এসব প্লিজ বলো না।
ভাইয়াঃজান্নাত তুই সর সামনে থেকে।
কেনো ছেড়ে গেছিলো বুঝতে পাড়ছিস?
এখন বল কেনো তুই আমাদের দেশে
আনার জন্য ওকে ইউজ করলি?
আমিঃআমি শুধুমাত্র মজা করছিলাম
ভাইয়াঃতোর মজা তোর কাছেই রাখ।
যদি তখন জান্নাত আমাদের একটা
বার বলতো আমাদের জন্য তুই ওকে
ব্যবহার করছিস দেশে জীবনেও আসতাম না।
আমিঃএসব জানার পরেও ও কেনো
আমাকে বিয়ে করলো?
ভাইয়াঃশুধুমাত্র তোকে পাওয়ার জন্য।
তুই অন্য কারো জেনো না হয়ে যাস
সেই জন্য বিয়ে করেছে।আর সালা তোকে
আমি এসব বলছি কেনো।তোকে তো
এখন আমার মেরে ফেলতে ইচ্ছা করছে।
ঐদিন কি বলছিলি তোর বন্ধুদের সাথে?
আমিঃসব মজা ছিলো
ভাইয়াঃজান্নাত তুই বল
জান্নাতঃভাইয়া প্লিজ বাদ দাও না
ভাইয়াঃনা বললে তুই আমার মরা…..
আর কিছু বলার আগেই জান্নাত ভাইয়াকে
থামার জন্য অনুরোধ করলো।মাথা
নিচু করে বলতে লাগলো;
জান্নাতঃতখন বিয়ের আর ৩দিন
বাকি ছিলো।নিলয়ের ফোনে থাকা
আমাদের সব ছবি আমার ফোনে
নেয়ার জন্য ওর ফোন নিয়ে ছাদে
চলে আসি।ফোনের ছবিগুলো
নেয়ার সময় একটা মেসেজ আসলো।
নাম্বারটা রাফি দিয়ে সেভ করা ছিলো।
আর মেসেজটা ছিলো“সালা ভাবি
জানতে পাড়লে তোকে বাসর রাতে
মেরে পালাবে।”মেসেজটা দেখে
প্রথমে হাসি পেলেও পরে দেখতে
গেলাম।কিন্তু ভাবতেও পারিনি
আমার জন্য এতো বড় মিথ্যা ভালোবাসা
অপেক্ষা করছিলো।তাদের ইনবক্সে
ঢুকতে দেখতে পেলাম,নিলয় ওর
বন্ধুদের বলছে,(মেসেজিং গুলো)
নিলয়ঃভাইয়াকে এখন আনতে পারবো
রাফিঃকিভাবে?
নিলয়ঃজান্নাতকে ব্যবহার করে।
রাফিঃমানে?
নিলয়ঃসালা,জান্নাতকে বিয়ে করেই
তো ভাইয়াকে দেশে আনছি।
রাফিঃআর ভালোবাসা?
নিলয়ঃভালো তো অনেককেই বাসি
রাফিঃজান্নাতকে তাহলে?
নিলয়ঃআরে কি সব ভালোবাসারে।
ও ভালোবাসার কি বোঝে।শুধুমাত্র
ভাইয়াকে আনার জন্য এসব।জান্নাত
এখন আমার মূল হাতিয়ার।
রাফিঃসালা ভাবি জানতে পাড়লে
তোকে বাসর রাতে মেরে পালাবে
সেদিনের পর থেকে অনেক কিছু
ভেবেছি।সব কষ্ট বুকে চেপে রেখেও
ওর সাথে হাসিখুশি থাকছি।অপেক্ষা
করতাম যদি আমাকে সত্যিটা বলে দেয়
তখন সব ভুলে গিয়ে ওর সাথে সারাটা
জীবন পাড় করে দেবো।কিন্তু সেটা
আর কখনো আমাকে বলেনি।
কথাগুলো শেষ করে মাথা নিচু
করে চুপচাপ একদম বাচ্চা মেয়ের
মতো দাঁড়িয়ে রইলো।
ভাইয়াঃএখন বুঝতে পারছিস জান্নাত
তোর সাথে যেটা করছে ভালো করেছে।
আমিঃএটার মানে কি হলো?
ভাইয়াঃকি?
আমিঃও আমাকে কখনো বিশ্বাসই করেনি।
কথাটি বলতেই জান্নাত মাথা উঁচু করে
আমার দিকে তাকালো।
আমিঃএভাবে তাকানোর কি আছে?
ভালোবাসার মধ্যে সব থেকে বড়
হলো একে অপরকে বিশ্বাস করা।
ভাইয়া আমাকে মারার জন্য এগিয়ে
আসতেই জান্নাত ছাদের উপর লুটিয়ে
পড়লো।আমার দিকে না এসে জান্নাতকে
কোলে নিয়ে নিচে চলে গেলো।দাঁড়িয়ে
না থেকে তাদের নাটক দেখার জন্য
আমিও তাদের চলে যাওয়ার কিছু
সময় পর নিচে চলে আসলাম।
চলবে…………..