পিচ্চি চাচাতো বোন(সিজন ২),পর্বঃ২০

0
917

পিচ্চি চাচাতো বোন(সিজন ২),পর্বঃ২০
আবির হাসান নিলয়

জান্নাত নিজের চোখেরজল মুছে নিতেই
ওকে উদ্দেশ্য করে বললাম;
আমিঃএখন চোখেরজল মুছে সবাইকে
দেখাতে চাস,তুই অনেক স্ট্রং?
জান্নাতঃ….(আমার দিকে তাকালো)
আমিঃতুই ততোটাও স্ট্রং না যতোটা
সবাই তোর থেকে এক্সপেক্ট করে।তুই
তো একটা ধ্বংসিত তারা মাত্র।যার নেই
টিকে থাকার ইচ্ছা থাকলেও সবার
মাঝে টিকে থাকতে পাড়বে না।আমি
জানি তুই এখনো ঐ মহিলাটার চাইতে
বাসার ভিতরে যারা আছে তাদেরকেই
বেশিই ভালোবাসিস।
জান্নাতঃকিন্তু তিনি আমার নিজের মা।
আমিঃশুধু জন্ম দিলেই মা হওয়া যায় না।
জান্নাতঃকিন্তু….
আমিঃআমার দিকে দেখ,কে আমি?আমি
নিলয় যাকে তুই ভালোবাসিস সরি লাভ
করতি।একটা সময় সবার থেকে তো আমাকে
বেশি সময় দিতি।কিন্তু এখন তো একনজর
দেখা করার জন্যও তোর কাছে যেতে হয়।
কারণটা তোর জেদ।তুই উনাকে ভুলে
গিয়ে যেখানে ছিলি সেখানেই থাক।সবাই
একসাথে হ্যাপি ফ্যামিলি হয়ে।
জান্নাতঃএটা আমার জন্য না।
আমিঃএখানে অনেক কথা বলছিস।
কিন্তু বাসায় কারো সামনে উল্টাপাল্টা
কথা বললে কসম খারাপ কিছু করবো।
(পেছন থেকে চুলের মুঠি ধরে)
জান্নাতঃছাড় আমাকে(ঝাড়ি মেরে)
আমিঃনে ছেড়ে দিলাম।

জান্নাতকে ছেড়ে দেয়ার পর কিছু
সময় বাইরের দিকে তাকিয়ে রইলো।
বাসার গার্ডেনে গাড়িটা পার্ক করে
সবাই মিলে বাসার ভিতরে গেলাম।
আব্বু আর চাচ্চু ছাড়া বাইরে আর
কেউ নেই।আমাদের দেখে আব্বু
সবাইকে বাইরে আসতে বলল।রুম
থেকে আম্মু,ছোট মা এবং আভাকে
কোলে নিয়ে ভাবি বাইরে আসলো।
জান্নাতকে দেখেই ছোট মা এসে দৌড়ে
জড়িয়ে ধরে কান্না করে দিলো।তাদের
এমন নাটক অনেকটা সময় চলার পর
জান্নাতকে নিয়ে জড়িয়ে নিয়ে সোফার
উপর বসলো।
ছোট মাঃআমাদের কেনো এমন করছি মা?
জান্নাতঃআম্মু তোমরা আমার নিজের
মা নও সেটা তোমরা জানো।আমার
নিজের মা ওখানে পড়ে আছে।
চাচ্চুঃহ্যা,আমরা তোর নিজের বাবা মা
না।কিন্তু একবারো বলতে পারবি আমরা
তোকে অবহেলা করছি?কখনো মনে
করতে দিয়েছি আমরা তোকে কুড়িয়ে
পেয়েছি?
জান্নাতঃকিন্তু আব্বু এটাই তো সত্যি তাই না?
আব্বুঃকিছু সত্যি জানার পরেও সেসব
ভুলে থাকতে হয়।
জান্নাতঃকিন্তু উনি আমা মা।
আমিঃআসার পথে কি বলেছিলাম আমি?
জান্নাতঃতুই আমার এমন কেউ না যে
তোর কথা আমি শুনবো।
আমিঃতোর আমি কিছু না?
জান্নাতঃনা…শুধু তুই না।এখানকার কেউই
আমার আপনজন না।তোমাদের রক্ত
আমার শরীরে নেই।
আমিঃহ্যা,তোর শরিরে তো ঐ বাজে
মহিলাটার রক্ত বইছে।
জান্নাতঃভাষা ঠিক কর।
আমিঃআরে কি ভাষার কথা বলছিস
তুই আমাকে?এই দুজন মানুষ তোকে
রাস্তা থেকে তুলে এনে কোলেপিঠে করে
মানুষ করেছে।তোর সুখের জন্য একমাত্র
তোকে হারাবে বলে শহর ছেড়ে চলে
যায় সেই গ্রামে।তোকে আগলে রেখেছে
নিজের মেয়ের চাইতেও বেশি স্নেহে।তোকে
তো আমার আব্বু আম্মু আমার চাইতেও
তোকে বেশি সাপোর্ট করতো।কি করেনি
এই পরিবার তোর জন্য?একটা ভুল
দেখা,যেটা তোর জন্য উনারা করতে
পারেননি।তুই উনাদের ছেড়ে যাওয়ার
একটা ভুল বল আর চলে যা।
জান্নাতঃআমাকে সত্যি না বলা।

এবার নিজেকে আর আটকে রাখতে
পারলাম না।অনেক জোরে জোরে বলতে
শুরু করলাম…
আমিঃকি বা** সত্যি বলবে তোকে?
যখন তোকে ড্রেনের পাশে পেয়েছিলো
তখন তোর চেহারা একটা পৈশাচিক
ছিলো।মানুষজন তোকে দেখে ভয়
পেতো। কিন্তু উনারা করেনি।কারণ
তোর মাঝে যে মায়া আছে সেটা শুধু
উনারা দেখছেন। আর আজ এতো
বছর পর বলছিস সত্যি বলেনি?কি
বলবে তোকে শুনি?তোকে আগ
বাড়িয়ে বলতে যাবে,“জান্নাত তুই
আমাদের মেয়ে না তোকে কুড়িয়ে
পেয়েছি আমরা”।এটা তোকে উনারা
আগে থেকে বললে তোর উপর কি রকম
মানসিক চাপ পড়তো জানিস তুই?
তোকে বকা দিলেও তুই মনে করতিস
তুই তাদের মেয়ে না বলে তোকে বকা
দেয়।আমি নিজেও হয়তো তোকে
এসব বলে পচাতাম।তখন তোর কেমন
লাগতো বলবি?
জান্নাতঃ…….(মাথা নিচু করে রইলো)
আমিঃবল এখন?

আবারো চুপ করে থাকায় রাগটা
বেরে গেলো।মারার জন্য এগিয়ে
যেতেই ভাইয়া বাধা দিলো।
চাচ্চুঃনাফিসা ওকে যেতে দাও।
ছোট মাঃকি বলছো এসব?
চাচ্চুঃযা বলছি ঠিক বলছি।আমরা
তোমাকে কেউ না।তুমি ফ্রি এখন
থেকে।যেখানে খুশি চলে যাও কেউ
আটকাবে না।
ছোট মাঃনা,আমার মেয়েকে আমি
কোথাও যেতে দেবো না(আকরে ধরে)
চাচ্চুঃতুমি আমাকে নাকি এই মেয়েকে চাও?

চাচ্চুর এমন কথা শুনতে হবে ছোট মা
হয়তো কখনো আশা করেনি। নিজের
অনিচ্ছা সত্ত্বেও জান্নাতকে ছেড়ে দিলো।
জান্নাত দাঁড়াতেই এক মুহূর্তের জন্য ভেবে
নিলাম হয়তো এখনি চলে যাবে।কিন্তু
সেটা না করে চাচ্চুর সামনে হাটু গেড়ে
বসে পড়লো।মাথাটা নিচু করে গম্ভীর
কণ্ঠে বললো…
জান্নাতঃআব্বু আমাকে তাড়িয়ে দিচ্ছো?
চাচ্চুঃ…(চুপ করে রইলো)
জান্নাতঃযখন আমি জানতে পাড়লাম
তোমরা আমার আসল বাবা মা তখন
নিজেকে অনেক বেশি একা লাগছিলো
আশপাশ আমি ঘোর অন্ধকার দেখছিলাম।
ওয়াশরুমে গিয়ে সারাটা রাত কান্না
করছিলাম। নিজেকে বোঝাতে চাইছিলাম
তোমরাই আমার আসল বাবা মা।পরদিন
সকাল হতেই তোমাদের কাছে ছুটে আসি
জিজ্ঞাস করি আমার সম্পর্কে।কিন্তু
তোমাদের থেকে কোনো উত্তর পায়নি।
সেই জন্য আবার ছুটে যায় হাসপাতালে
পুনরায় টেস্ট করি।কিন্তু সেবারও একই
হয়।নিজের না চাইতেও তখন আমি
ঐ মহিলাটার কাছে যায়।অনেকবার
ভাবতাম কেনো উনার সাথে দেখা
হলো।যদি দেখা না হতো তাহলেই
ভালো হতো।কিন্তু যখন ডক্টর এসে
বললো উনাকে তাড়াতাড়ি অপারেশন
করতে হবে।কিন্তু অপারেশনটাও
অনিশ্চিত,বাঁচবে কিনা সেটাও জানিনা।
৪০% এর মতো বেঁচে থাকার গ্যারান্টি।
তাই ভাবলাম কিছুদিন তোমাদের
সাথে না থেকে উনার সাথে থাকি।
আর আমি জানি তোমরা অনেক
বেশিই আমাকে ভালোবাসো।তোমাদের
সবটা বুঝিয়ে বললে তোমরা আমাকে
বুঝবে।উনি জীবন মরণের সাথে লড়াই
করছে।উনার পাশে কি আমার মেয়ে
হিসাবে থাকা জরুরি নয়??
আমিঃনা নয়
জান্নাতঃআব্বু কিছু বলো(পা ধরে)

জান্নাতকে ধরে দাড় করিয়ে বলল;
চাচ্চুঃযা
জান্নাতঃসত্যি বলছো?
চাচ্চুঃহ্যা
জান্নাতঃরাগ করবে না তো?(কান্না করে)
চাচ্চুঃনারে মা,কিছুদিনের জন্য নিজের
মায়ের কাছেই থেকে আয়।যখন সব
কিছু ঠিক হবে তখন ফিরে আসিস।আর
যদি আসতে না….

চাচ্চুকে আর কিছু বলার সুযোগ না
দিয়েই জড়িয়ে ধরে কান্না করে দিলো।
জান্নাতঃআমি তোমাদের ছাড়া থাকতে
পাড়বো না আব্বু।আমাকে তো ফিরে
আসতেই হবে তোমাদের কাছে।তাই
এমন কোনো কথা বলো না প্লিজ।
চাচ্চুঃঠিক আছে,এখন তুই যা।
আম্মু,ছোট মা,ভাবিকে জড়িয়ে ধরে
চলে যাবে তখন আমার হাত ধরে
টেনে বাইরে নিয়ে আসলো।
জান্নাতঃভালোবাসিস আমাকে?কোনো
প্যাঁচাল পাড়বি না।শুধু yes or no.
আমিঃNo way
জান্নাতঃঠাসসস,কুত্তা আমি মজা করছি
না।প্লিজ বলনা।
আমিঃতোর মতো কাউকে পায়নি যে
আমাকে বুঝবে।তাই না চাইতেও….
জান্নাতঃভালোবাসিস আমাকে।
আমিঃহ্যা?
জান্নাতঃঠাসসস কিন্তু আমি তোকে
ভালোবাসি না।আর কখনো বাসবোও না।
আমিঃসেটার জন্য তো প্রমাণ দিতে হবে।
জান্নাতঃকি প্রমাণ?
আমিঃঅন্য কোনো ছেলেকে বিয়ে করা।
জান্নাতঃসেটা তো করতেই হবে।কারণ
প্রথমত আমাদের মধ্যে ডিভোর্স হয়েছে।
ইসলামে এমন কোনো বিধান নেই যে
ডিভোর্স দেয়ার পর পুনরায় আবার তাকে
বিয়ে করা যাবে।যদি তাকে বিয়ে করতেই
হয় তখন অন্য কারো সাথে কিছুদিনের
জন্য হলেও সংসার করতে হয়।আর
আমি সেটা করতে পারবোনা।
আমিঃকোনটা পারবি না।
জান্নাতঃএইযে নিজের স্বামী রেখে
আবার তোর কাছে চলে আসবো।
আমিঃতুই যেখানে খুশি থাকবি সেখানে
থাকবি এতে আমার কিছু বলার নেই।
জান্নাতঃবললেও তো কোনো লাভ হবে
না।কারণ আমরা আলাদা।
আমিঃআমার বুকে হাতটা রেখে বল
তুই আমাকে ভালোবাসিস না।
জান্নাতঃপারবো না।
আমিঃকেনো পাড়বি না?
জান্নাতঃব্যস পাড়বো না।
আমিঃওকে,আমি ভিতরে যাচ্ছি
জান্নাতঃযেতে বলছি?
আমিঃতো কি করবো?

কিছু সময় চুপ থাকার পর বলল;
জান্নাতঃআমাকে ডিভোর্স কেনো দিলি?
আমিঃতখন যেটা মনে হয়েছিলো সেটা
করেছি?
জান্নাতঃদাঁত ক্যালানো বন্ধ কর।
আমিঃওকে
জান্নাতঃতুই এখন আমার সাথে যাবি
আমিঃকোথায়?
জান্নাতঃহাসপাতালে
আমিঃপাগল নাকি,ঐ মহিলার কাছে
গিয়ে আমি কি করবো।
জান্নাতঃব্যস যাবি তুই।
আমিঃযাবো না যা
জান্নাতঃনা গেলে আমি সুইসাইড করবো।
আমিঃসত্যি করবি?
জান্নাতঃহ্যা সত্যি..।
আমিঃতাহলে তাড়াতাড়ি করিস।
জান্নাতঃশুয়োর তোর লগে কি
আমি ফাজলামো করছি?
আমিঃতোর এতো সুন্দর মুখ থেকে
কিসব কথাবার্তা বের করিস?(ঠোঁটে স্পর্শ করে)
জান্নাতঃ…..(কামড় দিলো)
আমিঃআউচ,কি করলি?
জান্নাতঃমুখ দিয়ে সরাসরি বললেই
পাড়িস কিস করতে ইচ্ছা করছে।

আমাকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই
মাথার চুল আঁকড়ে নিয়ে দুজনের
ঠোঁট এক করে নিলো।বেশ কিছু সময়
এমন অবস্থায় থাকায় আমাকে ছেড়ে
দিয়ে শার্টের নিচে ধরে মাথা নিচু করে
দাঁড়িয়ে রইলো।
আমিঃবললি তো ভালোবাসিস না।
জান্নাতঃপ্লিজ চল না।
আমিঃওখানে গিয়ে কি করবো?
জান্নাতঃআমার পাশে থাকবি।আমাকে
সাহস জোগাতে সাহায্য করবি।
আমিঃএকটু আগেই তো বললি আমরা
দুজন আলাদা।
জান্নাতঃতারমানে তুই যেতে চাস না?
আমিঃআমার দিকে দেখ(থুতনি উঁচু করে)
জান্নাতঃহু
আমিঃতোর সাথে গেলে খুশি হবি?
জান্নাতঃহ্যা
আমিঃওখানে থাকবো কোথায়?
জান্নাতঃসারাদিন আমার সাথে থাকবি
বিকেল হতেই রওনা দিবি।বাসায় আসতে
দেড় ঘণ্টা লাগবে।
আমিঃঠিক আছে,বাসায় সবাইকে বলতে হবে।
জান্নাতঃহুম,আর একটা কথা…
আমিঃকি?
জান্নাতঃকেমন একটা ভয় করছে।
আমিঃসমস্যা নেই বল
জান্নাতঃহাতে যে টাকা ছিলো সবটাই
প্রায় শেষ। মেডিসিনের জন্য টাকা
লাগবে এবং অপারেশনের জন্যও লাগবে।
আমিঃউনার জন্য আমি একটা টাকাও
দিতে পাড়বো না আগেই বলছি।
জান্নাতঃকুত্তা
আমিঃচল বাসায় বলে আসি,না হলে
টেনশন করবে।
জান্নাতঃযেটার কথা বললাম…
আমিঃআরে পাগলি ব্যবস্থা করবো।
জান্নাতঃথাংক ইউ(জড়িয়ে ধরে)
আমিঃছি:,অপরিচিত ছেলেকে জড়িয়ে
ধরে।লজ্জাশরম নাই?
জান্নাতঃশুয়োর তুই যে তখন আমার
সাথে সাড়া দিচ্ছিলি তখন?
আমিঃএই শুয়োর বলা বাদে দে।
জান্নাতঃগালিটা অনেক ভালো লাগে।
আমিঃতোর ভালো লাগার গুষ্টি,এখন
বাসার ভিতরে চল।
জান্নাতঃহুম

জান্নাতের কাদে হাত দিয়ে দুজন বাসার
ভিতরে গেলাম।ভিতরে গিয়ে আমাকে
কিছু বলতে না দিয়ে জান্নার নিজেই বলল;
জান্নাতঃবড় আব্বু আমি চাই ও আমার
সাথে ওখানে যাক।
ভাইয়াঃও মানে?
জান্নাতঃনিলয়
ভাইয়াঃও তোর কি হয়?
জান্নাতঃকাজিন
ভাইয়াঃশুধুই কাজিন?
জান্নাতঃআমাদের মাঝে আর কোনো
সম্পর্ক করা সম্ভব না।যেটা তোমরা
সবাই অনেক ভালো করেই জানো।
আম্মুঃকেনো?
জান্নাতঃকারণ আমাদের ডিভোর্স হয়েছে।
ভাইয়াঃতাই নাকি?তাহলে তোর কাদে
নিলয় হাত দিয়ে আছে কেনো?
জান্নাতঃচাচাতো ভাই,দিতেই পাড়ে।
ভাবিঃতাই বুঝি..?
জান্নাতঃভাবি তুমিও…আচ্ছা তাহলে
কি নিলয়কে সাথে নিয়ে যাবো?
আম্মুঃহ্যা
ভাইয়াঃকিন্তু নিলয় একটা প্রমিজ কর
আমিঃকি?
ভাইয়াঃতুই ওখানে গিয়ে উনিকে কিছু
বলবি না।উনি যেমনি হোক না কেনো
জান্নাতের মা হয়।রাগারাগি করবি না।
আমিঃওকে
জান্নাতঃআমরা এখন যাই?
আব্বুঃহ্যা যা
জান্নাতঃআম্মু তুমি একদম মন খারাপ
করবা না।আমি তোমার কাছে ফিরে
আসবোই।তবে কিছুদিনের জন্য যেতে
হবে।অপারেশন ঠিকঠাক হলে নেহাকে
মায়ের কাছে রেখে তোমার কাছে
চলে আসবো(চোখেরজল মুছে দিয়ে)।
ছোট মাঃহুম
জান্নাতঃআমাকে আদর করবা না?
ছোট মাঃউম্মাহ,সাবধানে থাকিস।

জান্নাতের কপালে চুমু দেয়ার পর দুজন
বাসার বাইরে এসে একটা গাড়ি নিয়ে
বের হলাম।অনেকটা সময় যাওয়ার
পর বললাম;
আমিঃএকটা কথা বলি?
জান্নাতঃবল
আমিঃতোর বোন অনেক লোভী
জান্নাতঃতোরে বলছে
আমিঃপ্রমাণ পেয়েছি
জান্নাতঃকেমন প্রমাণ?
আমিঃওর বার্থডেতে একটা ব্রেসলেট
গিফট করি।কিন্তু সেটা দেখে রীতিমত
আমাকে অপমান করে ফিরিয়ে দিছে।
জান্নাতঃজানি আমি
আমিঃকিভাবে জানিস?
জান্নাতঃভাইয়া বলছে।
আমিঃকিভাবে?
জান্নাতঃনেহা শুধুমাত্র ভাইয়ার কথামতো
কাজ করছে।তোকে বোঝাতে চাইছে
আমিই একমাত্র তোর জীবনে পারফেক্ট।
আমিঃকিন্তু ভাইয়া তো জানে আমাদের
মাঝে ডিভোর্স হয়ে গেছে।
জান্নাতঃসেটা আমিও জানিনা।বারণ
করেছিলাম কিন্তু শোনেনি।
আমিঃকিন্তু নেহা এমন করবে কেনো?
জান্নাতঃহয়তো জব দিয়েছে তার জন্য।
আমিঃউহু,এর পেছনে হয়তো কোনো
কারণ আছে।এই মহিলাটার অপারেশন
শেষ হলে জিজ্ঞাস করবো।
জান্নাতঃনিলয় উনি আমার মা।
আমিঃআমার তো কিছু না,তোর সাথে
সম্পর্ক আমার শুধুমাত্র চাচ্চু আর ছোট
মায়ের জন্য।তাই বেশি বাড়াবাড়ি করিস না।
জান্নাতঃতাছাড়া কিছু নেই?
আমিঃছিলো,কিন্তু…
জান্নাতঃহ্যা নাই।আচ্ছা বিয়ে করবি কবে?
আমিঃবিয়ে করবোনা।তুই কি করবি?
জান্নাতঃমাত্র তো মেডিকেলে পড়ছি।
আগে নিজের পায়ে দাঁড়াই। তারপর
ফ্যামিলি থেকে যেখানে খুশি বিয়ে দিবে।
আমিঃকোন ফ্যামিলি?
জান্নাতঃআম্মু আব্বু আর এই মা।
আমিঃযদি তাদের পছন্দ ভিন্ন হয়?
জান্নাতঃসব সময় নেগেটিভ নিস কেন?
আমিঃআমার ঐ মহিলাটাকে একদম
পছন্দ হয় না।দেখিস তোকে বিয়ে দেয়ার
সময়টাতেও কোনো ক্যাচাল করবে।
জান্নাতঃআইছে জ্যোতিষী।

কিছু বললাম না,এমন অবস্থাতে কিছু
না বলাই বেটার।ওর মা ওর যেটা খুশি
করুক,কিন্তু সেটার জন্য যদি আমার
চাচ্চু,ছোট মা সামান্যতম কষ্ট পায়
ঐ মহিলা কিংবা জান্নাত-নেহা কাউকেই
আমি ছেড়ে কথা বলবো না।রাস্তায়
মাঝে মাঝে টুকটাক কথা বলতে
বলতে হাসপাতালে পৌছালাম।আমি
গাড়িতে বসে থেকে জান্নাতকে যেতে
বললাম।জানিনা ওখানে গেলে আবার
কি হবে তাই এখানে বসে থাকাই ভালো।
অনেক বেশিই সময় পর জান্নাত ফিরে
আসলো।গাড়িতে বসার পর বললাম;
আমিঃএখন কোথায়?
জান্নাতঃহোস্টেলে
আমিঃওখানে গিয়ে আমি কি করবো?
জান্নাতঃথাকবি
আমিঃলেডি’স হোস্টেলে আমি থাকবো?
জান্নাতঃশুধু কিছু সময় থাকবি
আমিঃপাড়বো না,একটা বাসা নিচ্ছি।
জান্নাতঃবাসা দূরে হলে থাকবো না।
আমিঃতোর জন্য না,শুধু আমি থাকবো।
জান্নাতঃসালা ছ্যাঁচড়া।
আমিঃমজা করছিলাম।চল বাসা খুঁজি
আগে।তারপর হোস্টেলে যাস।
জান্নাতঃহুম

কথা বলার পাশাপাশি রাস্তার এদিক
সেদিক টু লেট দেখছিলাম।অনেকটা
সময় যাওয়ার পর একটা বাসা পেলাম।
বাইরে থেকে জান্নাতকে সব বুঝিয়ে
রাখলাম।কারণ এখানে কেউ একটা
ছেলে এবং একটা মেয়েকে থাকতে
দিবে না।নাম্বারে কল দেয়ার পর বাসার
২তলায় যেতে বললো।জান্নাতকে সাথে
নিয়ে দুইতলায় গিয়ে কলিংবেল দিতেই
একটা মহিলা খুলে দিলো।
জান্নাতঃআন্টি আমরা কল করেছিলাম।
মহিলাঃভিতরে আসো।
জান্নাতঃজ্বি
(ভিতরে গিয়ে বসলাম)
মহিলাঃতোমরা কি হও?
জান্নাতঃস্বামী স্ত্রী,আড়াই বছরের মতো
বিয়ে করেছি।মেডিকেলে চান্স পাওয়ায়াই
এখানে আসা।
—ওহ
আমিঃকোনটা ভাড়া দিবেন?
—তিনতলা।
আমিঃভাড়া কতো?
—১০হাজার,বিদ্যুৎ এবং গ্যাস আমাদের।
আমিঃএকটু বেশি হয়ে গেলো না?
জান্নাতঃকিপটামি করছিস কেন(কানে কানে)
আমিঃরাজি হলে সন্দেহ করবে।
—এর থেকে কম হয় নাকি?
আমিঃতবুও যদি একটু কম রাখতেন
সেভিং করতে আমাদের সুবিধা হতো।
—না বাবা এর থেকে কম হবে না।
জান্নাতঃঠিক আছে আন্টি আমরা রাজি।
—তাহলে বাসায় উঠবে কবে?
জান্নাতঃআজ থেকেই
—অগ্রিম কিছু টাকা দিতে হবে।
জান্নাতঃপুরোটাই দাও আন্টিকে।
আমিঃহুম

সালার টাকা তো গাছে ধরে।জান্নাতের
জন্য কিছু বলতে পাড়লাম না।টাকা
দেয়ার পর একটা চাবি দিলো এবং
আমাদের সাথে উপরে এসে দেখিয়ে
দিলো।কিছু সময় বিশ্রাম করার পর
জান্নাতের হোস্টেল থেকে সব কিছু
নিয়ে আসলাম।তেমন কিছু নেই,বই
এবং কিছু ড্রেস।সব কিছু ঠিকঠাক
করতে করতে সন্ধ্যা হয়ে গেলো।ক্লান্ত
শরির নিয়ে বিছানার উপর শরিরটা
এলিয়ে দিতেই কখন যে ঘুমিয়ে
গেছি খেয়াল করিনি।

চলবে…………..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here