পিচ্চি চাচাতো বোন(সিজন ২),পর্বঃ২১
আবির হাসান নিলয়
অনেকটা রাতে ঘুম ভেঙে গেলো।জান্নাত
হয়তো ডাকেনি ক্লান্ত শরির নিয়ে ঘুমানোর
জন্য।শুয়ে না থেকে ফ্রেস হয়ে রুমের
বাইরে এসেও জান্নাতকে পেলাম না।
পাশের রুমে উকি দিয়ে দেখলাম টেবিলে
বসে পড়ছে।কিছু না বলে রুমে গিয়ে
বিছানার উপর বসলাম।তখনো কিছু
বললো না।হয়তো পড়া নিয়ে অনেক
বেশিই ব্যস্ত তাই আমার দিকে তাকাচ্ছেও
না।কিছু সময় ওভাবেই বসে থাকার
পর রুম থেকে বের হয়ে আসবো তখন
পেছন থেকে বলল;
জান্নাতঃকিছু বলবি?
আমিঃনা,এমনি আসছিলাম।তুই পড়।
জান্নাতঃহুম,ডাইনিং টেবিলে দেখ
খাবার গরম করে রাখছি।
আমিঃখাবার পেলি কোথায়?
জান্নাতঃবাইরে গিয়ে নিয়ে আসছিলাম।
আমিঃখাবারের সাথে কিছু মিশাসনি তো?
জান্নাতঃকুত্তা বিশ্বাস না হলে খাস না
আমিঃহুম সেটাই,তার থেকে বরং আমি
বাইরে থেকে খেয়ে আসি।
জান্নাতঃবাইরে যাওয়া হবে না।আর
যেটা আনছি সেটাই খাবি।
আমিঃপারবো না
জান্নাতঃতোর বাপ পাড়বে।
চেয়ার থেকে উঠে এসে আমার কলার
ধরে বাইরে নিয়ে আসলো।
আমিঃকলার ধরবি না
জান্নাতঃধরলে কি করবি?
আমিঃআমিও ধরি?ধুর তোর তো
কোনো কলারই নাই।
জান্নাতঃচুপচাপ এখানে বস
আমিঃবললাম তো খাবো না।
জান্নাতঃতুই বসবি?
আমি;নে বসলাম।
জান্নাতঃএখন হা কর।
মুখের সামনে বিরিয়ানির দলা
আনতেই হা করলাম।একটু
খাওয়া পর বললাম;
আমিঃতুই খাইছিস?
জান্নাতঃনা
আমিঃখাবি না?
জান্নাতঃতুই খেয়ে নে,হা কর।
আমিঃউহু তুই খা
জান্নাতঃহুম
আমিঃতুই জানিস তুই আগের থেকে
অনেক কিউট হয়েছিস?
জান্নাতঃআগেই ভালো ছিলাম।
আমিঃকিভাবে?
জান্নাতঃতোর সাথে থাকতে পাড়তাম।
আমিঃতো এখন কি আলাদা নাকি?
জান্নাতঃদুজন একসাথে আছি কিন্তু
আমাদের মাঝে বিশাল একটা দেয়াল
রয়েছে।যেটা চাইলেও ভুলে যাবো না।
আমিঃওসব বাদ দে তো।
জান্নাতঃচাইলেই কি দেয়া যায়?
আমিঃশোন,তুই অনেক বড় হবি।আর
দেখবি আমার থেকেও ভালো একটা
স্বামী পাবি।যে তোকে অনেক বেশিই
কেয়ার করবে ভালোবাসবে।
জান্নাতঃকিন্তু আমি তো তোকে চাইতাম।
আমিঃআমার ভুল হয়েছিলো।
জান্নাতঃভুলের মাশুল তোকে দিতে হবে।
এখন খেয়ে নে।
আমিঃহুম
খাওয়া শেষ করে একটা রুমে আসলাম।
দুজনের এক রুমে থাকা সম্ভব না,তাই
জান্নাতকে একটা রুমে থাকতে বলে
আমি অন্য একটা রুমে আসলাম।বসে
বসে জান্নাতের ফোন নিয়ে অনলাইনে
ঘুরছি তখন জান্নাত আসলো।
আমিঃফোন নিবি?
জান্নাতঃনা
আমিঃতো?
কিছু না বলে আমার পাশে বসলো।
আমিঃহঠাৎ এতো কাছে?
জান্নাতঃকাল একটু হাসপাতালে যাস
আমিঃকেনো?
জান্নাতঃমায়ের কাছে
আমিঃপারবো না
জান্নাতঃপ্লিজ,কাল আমাকে ক্লাস
করতে হবে।
আমিঃআমি উনার কাছে যাবো না।
জান্নাতঃআমার দিকে দেখ(থুতনি ধরে)
আমিঃকিহ?
জান্নাতঃপ্লিজ(মলিন কণ্ঠে)
আমিঃজানিনা তোর মধ্যে কি আছে,
কিন্তু এখন আর আগের মতো কথা
ফেলতে পাড়ি না,রাগটাও করতে
পারিনা।
জান্নাতঃকারণ আমি এতিম তাই।
আমিঃঠাসস,কখনো আমাকে এসব
বলবি না।তুই সব সময় চাচ্চুর মেয়ে।
জান্নাতঃমারলি আমাকে?
আমিঃতোকে তো আরো অনেক কিছু
করা উচিৎ।
জান্নাতঃকি করবি তুই?(গলা উঁচিয়ে)
আমিঃআদর করবো যে(কোলে বসিয়ে)
জান্নাতঃকুত্তা ডিভোর্স দেয়ার সময়
মনে ছিলো না,আইছে এখন আদর
করতে।দূরে যাইয়া মর।(চুল ধরে)
আমিঃব্যথা লাগছে তো
জান্নাতঃতো তোকে আরাম পাওয়ার
জন্য চুল ধরছি নাকি?
আমিঃওকে,এখন কেমন লাগে?
জান্নাতের চুল হালকা করে ধরতেই
আমার চুল ধরে জোরে টানাটানি
করতে লাগলো।বেচারি আমাকে
বসা অবস্থা থেকে চুল ধরে ফেলে
দিতেই সে নিজেও আমার উপর
এসে পড়লো।উনার হয়তো খেয়াল
ছিলো না আমিও তার চুল ধরে আছি।
জান্নাত শুয়া অবস্থায় না থেকে
উঠে আমার পেটের উপর বসে
হাটু দিয়ে আমার হাত চেপে ধরলো।
জান্নাতঃএখন বল আমার মধ্যে
কিসের কমতি ছিলো যার জন্য
তুই আমাকে ডিভোর্স দিলি?
আমিঃকিছু নেই,বরং ডাবল ডাবল
আছে সব কিছুই।
জান্নাতঃঠাস,সোজাভাবে উত্তর দে।
আমিঃবললাম তো কমতি নাই।
জান্নাতঃতাহলে ডিভোর্স দিলি কেন?
আমিঃতুই সাইন করলি কেনো?
জান্নাতঃঠাস,তুই নিজেই তো সাইন
করে আমাকে দিয়েছিলি।
আমিঃওয়েট এ মিনিট,আমি…..
এখন উঠ তো।
জান্নাতঃউঠবো না
আমিঃএকজনকে কল দিতে হবে
জান্নাতঃতো দে বারণ করছে কে?
আমিঃরাগ হচ্ছে কিন্তু
জান্নাতঃতাতে আমার কি?
আমিঃউঠলে কিন্তু খারাপ হবে
জান্নাতঃযা খুশি কর
আমিঃসত্যি?
জান্নাতঃহ্যা
অনেকটা ঝাড়ি মেরে জান্নাতকে
ফ্লোরে ফেলে দিয়ে পিচ্চিটার উপরে
বসে হাত চেপে ধরলাম।
আমিঃএখন কি করবো?
জান্নাতঃজাহান্নামে যা,একটা নিরীহ
মেয়েকে পেয়ে এমন করে টর্চার
করছিস।আল্লাহ মাফ করবে না।
আমিঃআইছে নিরীহ মাইয়া,এতো
টাইম যে আমাকে মাড়ছিলি সেটা?
জান্নাতঃআমি তো আমার…
আমিঃকি ডার্লিং?
জান্নাতঃকিছু না
আমিঃতোর ঠোঁটের পরশ লাগবে।
জান্নাতঃমিমি আপুর নেগা।
আমিঃসে নিজেই দিতে চেয়েছিলো।
জান্নাতঃতারমানে তুই উনাকে কিস
করছিস?
আমিঃআরে না,আমি আটকাই ছিলাম।
জান্নাতঃবিশ্বাস করি না,উঠ কুত্তা
আমিঃএখনি..?কিছুই তো করলাম না
জান্নাতঃকি করবি?
আমিঃতুই তো বললি যা খুশি।
জান্নাতঃএখন সরতে বলছি,ভালো
লাগছে না।উঠ প্লিজ।
আমিঃআমার দিকে তাকা
জান্নাতঃকি?
আমিঃভালোবাসিস?
জান্নাতঃহুম
আমিঃওকে
জান্নাতঃকি হলো?
আমিঃএখন উঠ
জান্নাতের থেকে সরতেই জান্নাত
থুতনি ধরে দুজনের ঠোঁট মিলিয়ে
নিবে তখনি হাত দিয়ে মুখ চেপে
ধরলাম।
আমিঃমিমি কিস দেয়ার সময় হাতের
জায়গা গ্লাস দিয়েছিলাম।
জান্নাতঃতাই বলে তোর এখন হাত
দেয়া লাগবে?
আমিঃহিহি
জান্নাতঃথাক তুই কুত্তা,আমি গেলাম।
আমিঃওকে
জান্নাতঃতুই আমার ফোন দে
আমিঃএকজনকে কল দিতে হবে।
জান্নাতঃতোর ফোন দিয়ে দিগা
আমিঃব্যালেন্স নাই
জান্নাতঃআমার ফোন দেবো না।
আমিঃজান্নাত সিরিয়াস কথা।
জান্নাতঃওকে,গুড নাইট
আমিঃগুড নাইট
রুম থেকে বের হয়ে যাবে তখনি
আবার কিছু একটা মনে করে
ফিরে এসে ধুমছে আমাকে মার
শুরু করলো।বাধা দেয়ার আগেই
আবার চলে গেলো।জান্নাতের এমন
আচরণে হাসি পেলেও পিটটা ব্যথা
করছিলো।সোফার উপর থেকে
জান্নাতের ফোন নিয়ে ভাইয়াকে
কল দিলাম।।
ভাইয়াঃহ্যা জান্নাত বল
আমিঃআমি
ভাইয়াঃহ্যা বল
আমিঃমাহমুদ উকিলের নাম্বারটা দে
ভাইয়াঃকেনো?
আমিঃউনার সাথে কিছু কথা আছে।
আমার ফোন ভাবি ভাঙার পর আর
ঐ সিম অন করিনি।
ভাইয়াঃজিজ্ঞাস করছি কি কথা।
আমিঃবলবো যে আমার আর জান্নাতের
ডিভোর্স পেপারে আমার সাইন আছে কিনা।
ভাইয়াঃতোর সাইন নেই
আমিঃমানে?
ভাইয়াঃমানে তুই সাইন করতে ভুলে গেছিলি
আমিঃভাই আমি মজা করছি না
ভাইয়াঃবিশ্বাস হয় না?
আমিঃনা
ভাইয়াঃশোন তাহলে,তুই ডিভোর্স
পেপার জমা দেয়ার পরপরই ওখান
থেক চলে আসিস।আর ওদিকে
মাহমুদ সাহেবও একটু দেরিতে
পেপারগুলো দেখে।কিন্তু যখন
দেখে ওখানে তোর সাইন করা নেই।
তখনি তোকে কল দেয়।কপাল
ভালো যে তোর ভাবি অনেক বড়
উপকার করছে আমাদের।তোর
ফোন ভাঙার জন্য মাহমুদ সাহেব
তোর ফোন বন্ধ পাচ্ছিলো তাই
আমাকে কল দেয়।সব কিছু খুলে
বলতেই আমি উনাকে বারণ করি
জেনো কোনো ভাবেই ডিভোর্স না
হয়।সেদিন তোর অজান্তেই তোকে
অফিসে রেখে আমি কোর্টে যায়
আর সেখান থেকে পেপারগুলো
ফিরে আনি।আমি জানতাম একদিন
তুই ঠিকি বুঝতে পাড়বি যে,একমাত্র
জান্নাতই তোর যোগ্য।
আমিঃসেই দিনটা চলে আসছে।আর
পেপারগুলো ছিরে ফেলিসনি কেন?
ভাইয়াঃযদি তোরা বিশ্বাস না করিস তাই।
ভাইকে কোনো কথা না বলে মোবাইল
হাতে নিয়ে কিছু সময় নাচলাম।কিছু
সময় পর কানে নিতেই শুনতে পেলাম
ওপাশ থেকে হ্যালো হ্যালো করছে।
আমিঃভাই অনেক অনেক ভালো করছিস।
ভাইয়াঃজান্নাতকে সব বল এখন।
আমিঃনা,যখন ওর মা টপকে যাবে
তখন সব বলবো।জেনো কষ্ট কম পায়।
ভাইয়াঃতুই উনাকে মেরে ফেলার জন্য
পার্থনা করছিস নাকি?
আমিঃমেরে ফেলতে ইচ্ছা করছে।
ভাইয়াঃএসব করবি না,তাহলে মেয়েটা
অনেক কষ্ট পাবে।
আমিঃথ্যাংক ইউ ভাইয়া।
ভাইয়াঃহোপ,আমাদের জন্যই তোদের
এতো ভুল বোঝাবুঝি। এটুকু যদি না
করি তাহলে কেমন হয়।
আমিঃসেটা ঠিক।আর জান্নাত জেনো
এসব না জানে ওকে?
ভাইয়া;ওকে
আমিঃবাই
কল কেটে দিয়ে কিছু সময় পাগলা
ড্যান্স দিলাম।ক্লান্ত হয়ে পড়তেই
জোরে একটা চিৎকার দিয়ে আধমরার
মতো বিছানার উপর পরে রইলাম।
হঠাৎ লক্ষ্য করলাম জান্নাত আমাকে
ডাকছে।কিছু না বলে পাগলিটাকে
জড়িয়ে নিলাম।
জান্নাতঃকি হয়েছে?
আমিঃআমার ভয় করছে
জান্নাতঃবলবি তো কি হয়েছে?
আমিঃকেউ একজন আমাকে মারার
জন্য এসেছে।অনেক ভয়ানক।
জান্নাতঃছাড় আমাকে,ফাজলামি
করার জায়গা পাস না।কি করছিলি
যে সারা শরির ঘেমে গেছে,আর কুত্তার
মতো হাপাচ্ছিস কেনো?
আমিঃপ্লিজ আমাকে তোর রুমে নিয়ে
যা।না হলে সে এসে আমাকে মেরে ফেলবে।
জান্নাতঃকে আসবে
আমিঃভুত
জান্নাতঃথাপ্পড় খাবি
আমিঃসত্যি,প্লিজ আমাকে একা ফেলে
যাস না।আমি মরে য…..
জান্নাতঃচুপ,বাজে কথা মুখ থেকে বের
করলে আমার থেকে খারপ কেউ হবে না।
আমিঃতাহলে আমাকে নিয়ে ঘুমা।
জান্নাতঃটি-শার্ট খোল ঘেমে গেছিস।
আমিঃহুম
ফ্যান ছেড়ে দিয়ে জান্নাত আমার
বিছানার এক পাশে শুয়ে মাঝখানে
একটা কোলবালিশ রাখলো।
আমিঃবালিস কেন?
জান্নাতঃআমাদের মাঝে স্বামী-স্ত্রীর
সম্পর্ক নেই তাই।
আমিঃভয় লাগছে আমার।
জান্নাতঃনিলয় প্লিজ মজা করিস
না।ঘুমা তো এখন।
আমিঃএকটা পাপ্পি দে
জান্নাতঃতখন কি করছিলি মনে নাই?
আমিঃতখন তো আমি….
জান্নাতঃকি হলো বল
আমিঃবা** বালিশের গুষ্টি।
(ছুরে দেলে দিলাম ফ্লোরে)
আমিঃশোনেন ম্যাডাম(গালে হাত দিয়ে)
জান্নাতঃকি?
আমিঃচলেন আজ বাসর করি
জান্নাতঃপাগল হয়ছিস?
আমিঃনা
জান্নাতঃদুরে যা
আমিঃতাহলে পাপ্পি দে
জান্নাতঃদেবো না
আমিঃআমি নিবোই
জান্নাতের গাল ধরে জোর করে
ভালোবাসার পরশ একে নিতেই
খাট থেকে উঠে গেলো।
জান্নাতঃতুই মরে গেলেও এখন
আর আসবো না।ঘুমা তুই একা।
আমিঃওগো বউ,আমাকে রেখে
যেওনা বউ।অনেক ভালোবাসি যে?
জান্নাতঃশুয়োর সালা
ফ্লোর থেকে কোলবালিশ তুলে
কয়েকটা মেরে পাশের রুমে
চলে গেলো।অনেকটা সময় হাসাহাসি
করার পর ঘুমানোর চেষ্টা করলাম।
পরেরদিন,,,,,,,
জান্নাতের ডাকাডাকিতে ঘুম থেকে উঠে
ফ্রেস হয়ে রুমের বাইরে আসলাম।
জান্নাতঃরান্নার জন্য কিছু নেই,বাইরে
থেকে খেয়ে হাসপাতালে চলে যাস।
আমিঃতুই খাবি কোথায়?
জান্নাতঃক্যান্টনি থেকে কিছু খেয়ে নেবো।
আমিঃওহ
জান্নাতঃকথা দে তুই মায়ের সাথে
খারাপ ব্যবহার করবি না?
আমিঃআমার ঐ মহিলাটাকে ভালো
লাগে না।কেনো লাগে না জানিনা।
জান্নাতঃকিন্তু তোর উনাকে সহ্য
করতে হবে।না হলে…
আমিঃআচ্ছা খারাপ করবো না।
জান্নাতঃপাক্কা?
আমিঃহ্যা
জান্নাতঃআসি
আমিঃশোন
জান্নাতঃকি?
কোনো কথা না বলে জান্নাতকে
অনেকটা শক্ত করে জড়িয়ে ধরলাম।
জান্নাত নিজে থেকে চাইলেও পাড়ছে
না,কারণটা তো সবাই জানেন।
জান্নাতঃআচ্ছা হয়েছে,এখন ছাড়।
আমিঃআরেকটু থাকি না
জান্নাতঃসালা আমি তোর বউ লাগি
নাকি যে সারাক্ষণ জড়িয়ে নিয়ে থাকবি?
আমিঃবউয়ের চাইতেও বেশি ডার্লিং
জান্নাতঃএখন যেতে হবে,না হলে
ক্লাস মিস করতে হবে।
আমিঃউম্মাহ সাবধানে যাস(কপালে চুমু দিয়ে)
কিছুটা সময় জান্নাত চোখের দিকে
তাকিয়ে থেকে কিছু না বলেই বের
হয়ে গেলো।জান্নাত চলে যাওয়ার পর
অনেকটা সময় বাসাতে কাটিয়ে দেয়ার
পর বাইরে এসে গাড়ি নিয়ে একটা
রেস্টুরেন্ট থেকে খাবার খেয়ে জান্নাতকে
কল দিয়ে বললা;ওর মায়ের জন্য কি
কি নিয়ে যেতে হবে।জান্নাতের থেকে
শোনার পর বাজার থেকে সেগুলো
কিনে নিয়ে হাসপাতালে গেলাম।।আমাকে
দেখে মহিলাটি মুচকি হেসে দিয়ে তার
কাছে বসতে বলল;
(উনাকে আন্টি বলে সম্বোধন করলাম)
আন্টিঃআমার উপর রেগে আছো বাবা?
আমিঃরাগাটাই কি স্বাভাবিক না?
আন্টিঃতা ঠিক।কিন্তু আমার জন্য আমার
মেয়েটাকে কষ্ট দিও না বাবা।মেয়েটা
তোমাকে অনেক বেশিই ভালোবাসে।
জানজাত না কি জানি তোমরা ওকে বলো?
আমিঃজান্নাত
আন্টিঃহ্যা,জান্নাতকে বলেছি অনেকবার
তোমাদের কাছে ফিরে যেতে।কিন্তু কোনো
মতেই তাকে পাঠাতে পারিনি।
আমিঃসমস্যা নেই
আন্টিঃতোমার বাসায় কে কে আছে?
উনার সাথে বেশ কিছু সময় কথা বলার
পর জিজ্ঞাস করলাম।
আমিঃআপনি জান্নাতকে কিভাবে চিনলেন?
আন্টিঃসন্তানের প্রতি মায়ের আলাদা
একটা টান থাকে।ওকে প্রথম দেখাতেই
আমার আপন মনে হয়েছিলো।কিন্তু
ও কিছুতেই বিশ্বাস করছিলো না।আমিও
বলা ছেড়ে দিয়েছিলাম কিন্তু হুট করেই
একদিন আমাকে নিয়ে একটা টেস্ট
করাই।তারপর দুদিন আর আমার সাথে
দেখা করতে আসেনি।কিন্তু তারপর এসে
নিজের মেয়ের মতো সেবা করছে।
আমিঃওহহ
আন্টিঃতোমরা টেনশন করো না বাবা।
আমি আর বেশিদিন বাচবো না।হয়তো
আর মাত্র কয়েকটা দিন,কিন্তু এই
কয়েকটা দিন আমার মেয়েকে আমার
কাছে থাকতে দাও,তোমার কাছে আমি
মাত্র কয়েকটা দিন ভিক্ষা চাইছি।
আমিঃহুম,একটা কথা বলবো
আন্টিঃহ্যা বলো
আমিঃএকটা দুধের শিশুকে ফেলে
কেনো দিয়েছিলেন?
কথাটা শোনার জন্য হয়তো তিনি
মোটেও প্রস্তুত ছিলো না।চোখ দিয়ে
ঝরঝর করে জল ফেলে দিয়ে বলতে
শুরু করলো;
আন্টিঃনিম্ন মধ্যবিত্ত সংসার আমাদের,
বাবা মা সুখের জন্য একটা বড়লোক
ঘরের জানোয়ারের সাথে বিয়ে দেয়।
প্রথমে কিছুদিন ভালো কাটলেও পরে
আমাকে নিয়ে অন্য একটা বাসায়
চলে যায়।তখন থেকেই শুরু হয় আমার
উপর তার অত্যাচার। প্রতিটা রাতে
একটা করে মেয়ে বাসায় নিয় আসতো।
যখনি সেটার প্রতিবাদ করি তখনি
হাতের কাছে যেটা পেতো সেটা দিয়েই
আমাকে মারতো।তাই বলা ছেড়ে
দিয়েছিলাম।কিন্তু যখন জান্নাত হলো
তখন আর ঐসব চোখে দেখতে ঘৃণা
হতো।মেয়েকে দেখিয়ে বলছিলাম,
“এই মেয়েটার জন্য হলেও ভালো
হয়ে যাও”।কিন্তু হয়নি,খাবারের সাথে
আমাকে কিছু একটা খাইয়ে দিয়ে
রাতেই দুধের শিশুটাকে কোথাও
ফেলে আসে।সকালে যখন আমার
ঘুম ভেঙে যায় তখন ওকে বলতাম
আমার মেয়ে কই,তখন আমি পাগল
হয়ে গেছিলাম।এলাকার সব জায়গা
খুঁজেছিলাম। কিন্তু পায়নি,তার অনেকদিন
পর সে নিজেই বলল,জান্নাতকে নাকি
অনেক দূরে ড্রেনের কাছে ফেলে আসছে।
তখন আমি অনেক বেশিই ভেঙে পরেছিলাম
থানায় গিয়ে মামলা করতে চেয়েছিলাম
কিন্তু তখন আমাকে বাধা দিয়ে বলে,
“আমার ভুল হয়ে গেছে,চলো সব নতুন
করে শুরু করি”।আমিও বোকার মতো
সব কিছু মেনে নেয়।তখন বাসায় আর
কোনো মেয়ে নিয়ে আসতো না।প্রায় ২বছর
পর যখন নেহা হলো তখন অনেকটা
সুখেই ছিলাম।কারণ নেহা অনেকটাই
জান্নাতের মতো দেখতে ছিলো।কিন্তু
কথায় আছে না,সব মানুষের কপালে
সুখ শয়ে না নেহা হওয়ার দেড় বছর
পর আমাদের রেখে ও চলে যায়।তারপর
থেকে অনেক কষ্ট করে মেয়েকে পড়াইছি।
গার্মেন্টসে ওভার ডিউটি করতাম শুধুমাত্র
একটু বেশি উপার্জন করার জন্য।মেয়েটা
যখন বড় হলো তখন একদিন অসুখে
পড়ি। কাসির সাথে রক্ত বের হতে থাকে।
অনেক ঔষধ খেয়েছিলাম কিন্তু কাজ
হয়নি।নেহা একদিন জোর করে আমাকে
একটা ভালো জায়গা ট্রিটমেন্ট করাতেই
জানতে পাড়ি আমার ক্যান্সার। আমি
জানি আমি আর বেশিদিন বাঁচবো না।
কিন্তু মেয়ে দুটো কিছুতেই মানে না,তারা
আমাকে নাকি অপারেশন করাবেই।
উনার কথা শুনে নিজেকে অনেক বেশিই
দোষী মনে হচ্ছিলো।একটা মানুষের
প্রতি কিছু না জেনে তার সাথে খারাপ
ব্যবহার করা আমার মোটেও ঠিক হয়নি।
দেড়ি না করে উনার হাত ধরে বললাম;
আমিঃআমার ভুল হয়েছে আন্টি আমি
আপনার সাথে কিসব বাজে ব্যবহার
করেছি।সবটা সময় বাজে মহিলা বলে
গালিগালাজ করেছি।প্লিজ আমাকে
ক্ষমা করে দেন।
আন্টিঃঠিক আছে বাবা
আমিঃযে করেই হোক আমি আপনাকে
বাঁচিয়ে তুলবোই।এখানে না হলেও
বিদেশে গিয়ে আপনার অপারেশন
করাবো।তবুও আপনি সুস্থ হবেন।
আন্টিঃপাগল ছেলে।
আমিঃআচ্ছা এখন এগুলো খেয়ে
মেডিসিন খান।তারপর দুজন বসে
গল্প করবো।
আন্টিঃঠিক আছে।
হালকা কিছু খেয়ে মেডিসিন খেয়ে নিলো।
দুজন বসে অনেক গল্প করলাম,জান্নাতের
সব পাগলামো খুলে বললাম।আন্টি তো
জান্নাতের পাগলামো শুনে কখনো হাসে
আবার কখনো কান্না করে মেয়েটা নিজের
জন্য একটা সুখের পরিবার পেয়েছে।
দুপুরবেলা আন্টিকে খাবার খাওয়ানোর
পর মেডিসিন খাইয়ে দেয়ার পর আরো
কিছু সময় টুকটাক কথা বলার পর বাসায়
আসার পথে লাঞ্চ করে বাসায় এসে
ফ্রেস হয়ে ঘুম দিলাম।কিন্তু সেটা আর
বেশিক্ষণ হলো না।জান্নাতের চিল্লাচিল্লি
শুনে ঘুম থেকে উঠতে হলো।
চলবে……………..