পিচ্চি চাচাতো বোন(সিজন ২),পর্বঃ২৩

0
1391

পিচ্চি চাচাতো বোন(সিজন ২),পর্বঃ২৩
আবির হাসান নিলয়

—দুলাভাই একখান কথা ছিলো
আপনার লগে?

নেহার দিকে তাকিয়ে কিছু বললাম
না।আমাক্ব চুপ থাকতে দেখে আবার
বলল;
নেহাঃমন খারাপ?
আমিঃকি বলবে সেটা বলো।
নেহাঃস্যার যে বলল আপনাদের
মাঝে ডিভোর্স হয়নি।কিন্তু আপু
বলছে আপনাদের মাঝে কিছু নেই।
আমিঃহুম
নেহাঃকিছু নেই?
আমিঃতোমাকে বলবো কেনো?
নেহাঃবললে কি সমস্যা?
আমিঃতুই চামচামি করে তোর আপুকে
বলে দিবি।তাই বলবো না।
নেহাঃচামচা বললেন কেনো?
আমিঃযেটা সত্যি এটাই তো বললাম।
নেহাঃআমি আপুকে বলে দেবো।
আমিঃএটার জন্যই তোকে সত্যি বলবো না।
নেহাঃনা বললে নাই,ঢং।

আর কিছু না বলে চলে গেলো।নতুন বাসায়
আসার পর থেকে ছাদে যাওয়া হয়নি।
তাই বসে না থেকে ছাদে চলে আসলাম।
সন্ধ্যা রাতে শহরটা বৈদ্যুতিক আলোতে
ভরে গেছে।মইমই করছে পুড়ো শহরটা।
ঘিরিলের একপাশে বসে শহরটাকে
অনেকটা সময় নিয়ে পর্যবেক্ষণ
করলাম।হঠাৎ জান্নাতের কল পেয়ে
রিসিভ করলাম।
জান্নাতঃকোথায় আপনি?
আমিঃছাদে কেনো?
জান্নাতঃরাত্রি কয়টা বাজে খেয়াল
আছে?আর এতো রাতে ছাদে কি?
আমিঃএমনি দেখছিলাম যান্ত্রিক শহরটা।
জান্নাতঃবাসায় আসেন।
আমিঃকেনো?
জান্নাতঃকথা আছে।
আমিঃএকটু পরে আসছি।

আর কোনো কথা না বলে কল কেটে
দিয়ে ওভাবেই বেশ কিছু সময় বসে
রইলাম।মোবাইলের দিকে তাকিয়ে
যখন দেখলাম ১০ টা বেজে গেছে
তখন বাসায় আসলাম।।নেহা বাইরে
বসে নেহার ল্যাপটপ চালাচ্ছে।
নেহাঃআপু দুলাভাই আসছে।
জান্নাতঃতোকে বলছি না উনাকে
দুলাভাই বলবি না।
আমিঃতো কি ডাকবে?
জান্নাতঃকিছুই না।আর ফ্রেস হয়ে
আসে ডিনার করেন।
আমিঃএখন আর খাবো না,ভালো
লাগছে না।
জান্নাতঃকেনো?
আমিঃএমনি

আর কিছু না বলে রুমে চলে আসলাম।
ছ্যাঁচড়ার মতো পিছু পিছু জান্নাত নিজেও
রুমে আসলো।
জান্নাতঃকি হয়েছে তোর?
আমিঃযেকোনো একটা কিছু বলে সম্বোধন
করবি।হয় তুই না হলে আপনি।
জান্নাতঃনেহার সামনে তুই করে বলতে
পাড়বো না।আর একা থাকার সময়
আপনি করে বলতে পাড়বো না।
আমিঃতোর পাড়তে হবে না,তুই যা।
জান্নাতঃবলো না কি হয়েছে?
আমিঃতুই আমাকে ভালোবাসিস না?
জান্নাতঃ….(মাথা নিচু করে রইলো)
আমিঃকি হলো?
জান্নাতঃদেখো এসব বাদ দাও,তুমি
খুব ভালো করেই জানো আমরা
আর কখনো এক হতে পারবো না।
আমিঃযেটা বললাম সেটার উত্তর দে।
জান্নাতঃহ্যা
আমিঃআজ থেকে আমরা দুজন
একসাথে একরুমে ঘুমাবো।
জান্নাতঃপারবো না।
আমিঃআমিও খাবো না।
জান্নাতঃএবার কিন্তু বাড়াবাড়ি হচ্ছে।
আমিঃতুই যা (ধাক্কা দিয়ে)
জান্নাতঃযাবো না
আমিঃএটা তোর রুম?
জান্নাতঃহ্যা আমার
আমিঃঠিক আছে তুই থাক আমি নিজেই
তাহলে যাচ্ছি।
জান্নাতঃপ্লিজ খেয়ে নে,তোর জন্য আমিও
এখনো কিছু খাইনি।
আমিঃতো এতো টাইম কি করছিলি?
জান্নাতঃপড়ছিলাম
আমিঃখেয়ে নে,আমি খাবো না
জান্নাতঃআমিও তাহলে খাবো না।তারপর
না খেয়ে যখন অসুস্থ হয়ে পড়বো তখন
তোর ঠিক হবে।
আমিঃহুম ভালো।
জান্নাতঃআমার কথা কেনো শুনবি আমি
তো আর তোর কেউ না।একটা কুড়িয়ে
পাওয়া মেয়ে মাত্র,আমার কথা কেনো
শুনতে যাবি তুই…!
আমি;যেটা শুনতে আমি বিরক্তি হয়
সেটা বলবি না।(গলা ধরে)
জান্নাতঃতুই নিজেই বাধ্য করিস
আমিঃআজ দুজন একসাথে থাকবো।
জান্নাতঃআমার ক্যারেক্টার ঢিলা তাই?
আমিঃআবার..??

চুলের মুঠি ধরে একদম মুখের কাছে
নিয়ে আসলাম।চোখ বন্ধ করে বাম
হাতটা চুলের মুঠি ধরে রাখা আমার
হাতটা ধরলো।ঘনঘন নিশ্বাসের
প্রভাবটা কেমন একটা এলোমেলো
করে দিচ্ছিলো।আরো খানিকটা
কাছে টেনে এনে দেখতে লাগলাম
বিহারিণীকে।যার মধ্যে লুকিয়ে
আছে আমার প্রতি তার ভালোবাসা।
একটা অদ্ভুত টান চেহারার উপর
জমে আছে।নিজের মায়াতে জড়িয়ে
নেয়ার জন্য বার বার আকৃষ্ট করছে।
ডান হাত দিয়ে গালটা চেপে ধরে
কানে কানে বললাম;
আমিঃআর কখনো যদি এসব বলিস
সারাজীবনের জন্য আমাকে হারাবি।
কথাটা শেষ হতেই ধাক্কা দিয়ে দূরে
ঠেলে দিলাম।কিছু সময় জান্নাত
মাথা নিচু করে থাকার পর বললাম;
আমিঃচল খেতে দে।
জান্নাতঃ……
কোনো জবাব না দেয়ার কারণে হাত
ধরে ডাইনিং টেবিলে নিয়ে বসালাম।
আমিঃতুই খাবি না?
নেহাঃআমি?
আমিঃহ্যা
নেহাঃখেয়েছি আমি
আমিঃরুমে যা এখন
নেহাঃওকে

ল্যাপটপ নিয়ে রুমে চলে যাওয়ার পর
জান্নাতকে খাবার বেড়ে দিলাম।
আমিঃকি হলো খাচ্ছিস না কেনো?
জান্নাতঃখাবো না
আমি;ঢং বাদ দে,খাওয়া শুরু কর।
জান্নাতঃ…..(তবুও খাচ্ছে না)
উঠে গিয়ে জান্নাতের পাশে বসে
খাইয়ে দেয়ার জন্য লোকমা তুলতেই
খেয়ে নিলো।বুঝতে পাড়লাম আমার
থেকে খাওয়ার জন্য এমন করছে।
জান্নাতকে খাইয়ে দেয়ার পাশাপাশি
নিজেও খাচ্ছিলাম।তখন জান্নাত বলল;
জান্নাতঃমায়ের অপারেশন করতে হবে।
আমিঃকবে?
জান্নাতঃসোমবার।
আমিঃপাঁচদিন পর।
জান্নাতঃহ্যা
আমিঃঠিক আছে।
জান্নাতঃঅপারেশন করার আগে টাকা
জমা দিতে হবে।
আমিঃঠিক আছে,হা কর।
জান্নাতঃহুম,আচ্ছা মা সুস্থ হওয়ার পর
কোথায় থাকবে?
আমিঃতোর মা তুই জানিস
জান্নাতঃতুমি বিয়ে করছো না কেনো?
আমিঃতুই করছিস না কেনো?
জান্নাতঃমাকে অপারেশন করার কিছুদিন
পর আমিও বিয়ে করে নেবো।
আমিঃতুই বিয়ে করলে আমিও করবো।
জান্নাতঃদুজনের একদিনে বিয়ে হলে
কেমন হয়?
আমিঃখুব ভালো হয়।
জান্নাতঃআচ্ছা,দুজন একদিনে বিয়ে
করবো।তুই অন্য কাউকে বাসায় আনবি
আর আনি অন্য কারো সাথে তার বাসায়
চলে যাবো।
আমিঃহুম,মাথা থেকে তখন জান্নাত
নামের প্যাঁড়াটা দূর হবে।
জান্নাতঃশয়তান।
দুজন খাওয়ার পর আমি আমার
রুমে এসে ঘুমালাম এবং জান্নাত
আর নেহা একরুমে ঘুমালো।

দেখতে দেখতে পাঁচদিন চলে গেলো।
আজ অপারেশন,জান্নাত আর নেহা
ভোর থেকে হাসপাতালে তার মায়ের
সাথে কথা বলছে।এদিকে সব কিছু
গোছানোর দায়িত্বটা আমাকে দিয়েছে।
বেলা আনুমানিক ১০টা হতেই আন্টিকে
নিয়ে অপারেশন থিয়েটারে নিয়ে যাবে
তখন আমাকে ডেকে শুধুমাত্র একটা
কথা বলল;
আন্টিঃজান্নাতকে কষ্ট দিও না বাবা,
মেয়েটা অনেক বেশিই ভালোবাসে তোমাকে।
উনার চোখে জল দেখেছিলাম।কি
বলবো খুঁজে পাচ্ছিলাম না।হাত ধরে
শুধুমাত্র মাথা নেড়ে হ্যা সূচক উত্তর
দিয়েছিলাম।আর দেরি না করে আন্টিকে
থিয়েটারে নিয়ে গেলো।জান্নাত নেহা
দুজন একসাথে হাত ধরে বসে আছে।
অনেক বেশিই টেনশন করছে,এমন
ভিতি চেহারা আগে কখনো দেখা
হয়নি আমার।প্রায় ঘণ্টা খানিক সময়
পাড় হয়ে গেছে।সকালে জান্নাত
এবং নেহা কিছুই খায় নাই।দুজনের
কাছে গিয়ে বললাম;
আমিঃহয়তো আরো দেরি হবে।তোমরা
দুজন কিছু খেয়ে আসো
জান্নাতঃনা,এমনি ঠিক আছি।
আমিঃআরে এখানে তো আমি আছি
জান্নাতঃকিন্তু…
আমিঃবেলা ১১টা বাজে,যা নেহাকে
নিয়ে কিছু খেয়ে আয়।

দুজনকে জোর করে পাঠিয়ে দিলাম।
ওদের যাওয়ার ১৫ মিনিট যাওয়ার
পর ভিতর থেকে ডাক্তার বের হলো।
আমিঃডাক্তার উনার এখন কি খবর?
—উনার মেয়েরা কোথায়?
আমিঃসকালে নাস্তা করতে গেছে।
—আসলে তোমাকে কি বলবো….
আমিঃসত্যিটা আমাকে বলুন
—উনার ভিতরের সব কিছু নষ্ট
হয়ে গেছিলো।প্রথমদিকে উনার কোনো
প্রকার চিকিৎসা দেয়া হয়নি।তবুও
আমরা চেষ্টা করেছিলাম বাচানোর
জন্য।কিন্তু আমরা সরি উনাকে আমরা
বাঁচাতে পারি নাই।
কথাটা শেষ হতেই বেঞ্চের উপরে বসে
পড়লাম।ডাক্তার কাদে হাত রেখে বলল;
—নিজেকে শক্ত করো,উনার মেয়েগুলোকে
শান্তনা দেয়ার জন্য তো শক্ত হতে হবে।
আমিঃজ্বি

ডাক্তার চলে যাওয়ার পর মাথা নিচু করে
বসে রইলাম।চোখে দিয়ে কয়েক ফোটা
জল পড়ে যাওয়ার পরেও কোনো
আক্ষেপ হলো না।হঠাৎ জান্নাতের কথা
শুনে সামনে তাকালাম…..
জান্নাতঃকিরে বের হয়েছে?
আমিঃ…….(তাকালাম ওর দিকে)
জান্নাতঃতোর চোখে জল কেনো?
মায়ের কিছু হয়নি তো?

দৌড়ে কেবিনে ঢুকতে যাবে তখনি
ঝাপটে ধরলাম।চিৎকার করে কান্না
শুরু করে দিয়েছে।নেহা আমার দিকে
একবার দেখেই ওখানে বসে কান্না
করতে লাগলো।জান্নাত আমার
থেকে ছাড়ানোর জন্য চেষ্টা করছিলো।
কিন্তু শক্ত করে ধরে রাখার জন্য
ছুটতে পারছিলো না।জানিনা এখন
ওকে ছেরে দিলে কি করে বসবে।
চিৎকার করে কান্না করতে করতেই
জ্ঞান হারালো।
আমিঃজান্নাত,এই জান্নাত
গালে হাত দেয়ার পরেও কোনো
সারা দিলো না।আমার থেকে ছাড়িয়ে
নিয়ে দাড় করাতে লুটিয়ে পড়বে
তখন আবার ধরলাম।ধরে বেঞ্চটার
উপরে শুইয়ে দিয়ে নেহার কাছে
গেলাম।
আমিঃযেটা ভাগ্যে ছিলো সেটাই হয়েছে,
এই জন্য এমন পাগলামো করে তো
আর লাভ হবে না।তোর বোনটার দিকে
দেখ কেমন হয়ে গেছে।এখন একটু
শান্ত হো প্লিজ।
অনেকটা সময় নেহাকে বোঝানোর
পরেও কান্না করেই যাচ্ছিলো।পকেট
থেকে ফোন বের করে ভাইয়াকে কল
দিলাম।ভাইকে সব কিছু বলে কলটা
কেটে দিয়ে একজনের থেকে পানির
বোতল এনে জান্নাতের চোখেমুখে
ছিটিয়ে দেয়ার পর আবার তার কান্না
শুরু করে দিলো।বার বার থিয়েটারের
দিকে ছুটে যেতে চাওয়ার জন্য শক্ত
করে ধরে রইলাম।

প্রায় আড়াই ঘণ্টা যাওয়ার পর
জান্নাত নিজেও শক্ত করে জড়িয়ে
ধরে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কান্না করতে
লাগলো।মেয়েটাকে কখনো এভাবে
কান্না করতে দেখিনি।এমনি চোখ
দিয়ে জল গড়িয়ে পড়বে তবে কখনো
এভাবে কান্না করেনি।নেহাকে নিয়েও
পাশেও বসিয়েছি।যে মায়ের জন্য
এতো কিছু আজ সেই মেয়েটাও
তার মাকে হারালো।দুজনকে বার
বার শান্তনা দেয়ার সময়টাতে সবাইকে
লক্ষ্য করলাম।আমাদের দেখে দ্রুত
আমাদের কাছে আসলো।জান্নাত
আব্বু আম্মুকে দেখে তাদের জড়িয়ে
ধরে কান্নায় ভেঙে পড়লো। ছোট মা
চাচ্চু গ্রাম থেকে আসতে একটু দেড়ি
হবে।জান্নাতকে আম্মু বার বার বোঝানোর
পর আম্মুকে জড়িয়ে ধরে একদম
চুপ করে রইলো।ভাবি নেহাকে ধরে
শান্তনা দিতে লাগলো।

জান্নাতের গ্রামের বাড়িতে নিয়ে লাশ
নিয়ে যাওয়ার পর গোসল করানো
হলো।মাগরিব নামাজ শেষে জানাজা
দেয়া হলো।আন্টির অন্তিম কাজ শেষ
করে সবাই জান্নাতকে বাসায় নিয়ে
যেতে চাইলেও গেলো না।আমাকে
শক্ত করে জড়িয়ে ধরে আছে।
ছোট মাঃমা এবার বাসায় চল
জান্নাতঃআম্মু তোমরা যাও,আমি
এখন বাসায় যাবো না।
আম্মুঃতাহলে যাবি কই?
জান্নাতঃযেখানে থাকি সেখানে
চাচ্চুঃতোকে একা তো আমরা ছাড়তে
পাড়ি না মা।আমাদের সাথে সেখানে
কিছুদিন থাক,তারপর আবার আসিস।
জান্নাতঃআব্বু প্লিজ জোর করোনা।
তুই উনাদের কিছু বলছিস না কেনো?
আমিঃকি বলবো?
ভাইয়াঃছোট মা,এখানে কিছুদিন থাক,
যখন মন ভালো হবে তখন যাবে আর
ওকে তো এখানে থেকেই পড়াশোনা
করতে হবে।
ছোট মাঃকিন্তু মা….
আমিঃছোট মা,আমি বলবো সব পরে।
আম্মুঃনেহা মা তুই আমাদের সাথে চল।
নেহাঃআমি কেনো?
ছোট মাঃকারণ তুই আমার আরেকটা মেয়ে।
জান্নাতঃনেহা তুই উনাদের সাথে যা।
নেহাঃকিন্তু আপু আমি তো…
জান্নাতঃভরসা পাস না আমাকে?
নেহাঃহ্যা আপু
জান্নাতঃতাহলে যেটা বলছি সেটা কর।
এখানে আমি থাকতে পাড়বো।
ভাবিঃআমি জান্নাতের সাথে এখানে
কিছুদিন থাকি।
জান্নাতঃনা ভাবি,আমি নিলয়ের সাথে
এখানে থাকতে পাড়বো।
ভাইয়াঃনিলয়কে তোর সাথে রাখবি?
জান্নাতঃহ্যা,কেনো তুই থাকবি না?
আমিঃথাকবো তো।
ভাইয়াঃতোমরা সবাই চলো,তোমাদের
আমি যেতে যেতে সব বলবো।
আব্বুঃকিন্তু নীল তুই…
ভাইয়াঃআব্বু আমি সব বলছি তো।
কোনো কথা নাই চলো সবাই।
ছোট মাঃখেয়াল রাখিস মা।

জান্নাত আমাকে ছেড়ে দিয়ে ওর
আম্মুকে জড়িয়ে ধরলো,একে
একে সবাইকে বিদায় দিয়ে আমার
কাছে এসে একটা হাত চেপে ধরে
রইলো।উনারা গাড়িতে উঠে চলে
যাওয়ার পর দুজন গাড়ি করে
আমরা বাসায় চলে আসলাম।

১ সপ্তাহ পর………
জান্নাত এখন পুনরায় পড়াশোনায়
মনোযোগ দিয়েছে।সারাদিন এদিক
সেদিক ঘুরাফেরা করে দিন কাটাতে
হয় আমাকে।জান্নাতকে বলে বাসায়
চলে যাওয়া দরকার,এখানে থেকে
কিছুই হবে না।সারাদিন ঘুরাঘুরি
করে বিকেলের দিকে বাসায় আসলাম।
জান্নাতকে দেখলাম সোফার উপর
বসে ল্যাপটপ চালাচ্ছে।চুলগুলো
ভেজা হয়তো মাত্র শাওয়ার নিছে।
পাশে বসতেই বলল;
জান্নাতঃকোথায় ছিলে?
আমিঃঘুরছিলাম এদিক সেদিক
জান্নাতঃওহ
আমিঃএকটা কথা বলার ছিলো
জান্নাতঃবলো(ল্যাপটপ বন্ধ করে)
আমিঃএখানে থেকে আমি কি করবো?
সারাদিন বাসায় থাকতে কি একটা
মানুষের ভালো লাগে?
জান্নাতঃতো কি করবে?
আমিঃআমি চাইছি বাসাত চলে যাবো
জান্নাতঃকবে যাবেন?
আমিঃতুই যেদিন বলবি।
জান্নাতঃতাহলে যেতে হবে না।
আমিঃএখানে থেকে কি করবো?
জান্নাতঃআমার সাথে থাকবি
আমিঃতুই কি বাসায় থাকিস যে
আমি তোর সাথে থাকবো।
জান্নাতঃসারাদিন অফিস করবি
বিকেল হতেই এখানে চলে আসবি।
আমিঃকতোদিন?
জান্নাতঃকতোদিন মানে?
আমিঃএভাবে আর কতোদিন?
জান্নাতঃবুঝতে পাড়ছি,ঠিক আছে
তোর থাকতে হবে না।
আমিঃআরে আমি কি বলছি থাকবো না..?
জান্নাতঃতাহলে যেটা বললাম সেটা কর।
আমিঃতাহলে আমার একটা কন্ডিশন আছে।
জান্নাতঃকি?
আমিঃদুজন একরুমে থাকবো।
জান্নাতঃডাবল বেডে
আমিঃতাহলে তো….
জান্নাতঃতুমি একটা কন্ডিশনের কথা
বলছো সোনা।আর সেটা আমি মানছি।
আমিঃএই শীতের মধ্যে বউ ছাড়া থাকা যায়?
জান্নাতঃতুই এখন শীত পেলি কই?
আমিঃহালকা শীত পড়ছে।
জান্নাতঃযেটা বললাম সেটা করবি।
আমিঃধুর

আর কিছু না বলে জান্নাতের ফোন
নিয়ে রুমে চলে আসলাম।এভাবে
আর কয়দিন থাকবো,কিন্তু এতো
সহজে আমি সব বলবো না।একটা
ফোন কিনতে হবে,জান্নাতের ফোন
নিয়ে সারাদিন পরে থাকলে চলবে না।
অনেকটা সময় বিছানার উপর শুয়ে
দুহাত দিয়ে উঁচু করে ফোন টিপছি
তখন জান্নাত এসে হাতের নিচ দিয়ে
মাথা ঢুকিয়ে দিয়ে জড়িয়ে ধরলো।
এই মেয়ের আবার মাথার তার ছিরে
গেলো নাকি…!
আমিঃজান্নাত
জান্নাতঃহু
আমিঃকি হলো আবার?
জান্নাতঃকিছুনা
আমি;তাহলে কি করছো?
জান্নাতঃএকা থাকতে ভালো লাগছিলো না।
আমিঃওহ
জান্নাতঃতুমি ফোনটা রাখবে?
আমিঃওকে রাখলাম
জান্নাতঃআজ রাতে মুভি দেখবো
(মাথা তুলে আমার দিকে তাকিয়ে)
আমিঃকি মুভি দেখবে?
জান্নাতঃ3 idiots
আমিঃহাহাহা,হঠাৎ এতোদিন পর
জান্নাতঃহ্যা সোনা দেখতে হবে।
আমিঃতোমাকে বাসা থেকে কেউ
কিছু বলেছে?
জান্নাতঃকি বলবে?
আমিঃতাহলে এসব সোনা বলছো কেনো?
জান্নাতঃআমার ইচ্ছা,তোকে সোন,জান
বাবু,কুত্তা,শুয়োর,শয়তান,বাদ……

আর কিছু বলতে না দিতেই জান্নাতের
ঠোঁটের সাথে ঠোঁট মিলিয়ে নিলাম।
অনেকটা সময় দুজন ভালোবাসা
উপভোগ করার পর ছেড়ে দেয়ার
পর জান্নাত মাথা নিচু করে রইলো।

রাতে আর জান্নাত রান্না করেনি।বাইরে
থেকে খাবার নিয়ে এসে বাসায় খেলাম।
জান্নাত আলাদা বেডের কথা বললেও
দুজন একসাথে শুয়েই মুভি দেখলাম।
তবে আমাদের মাঝে বিশাল একটা
কোলবালিশ দেয়া।কোলবালিশ সরানো
তো দূরে কথা টাচ করলেও মাইর শুরু করে।
দুজনের মিষ্টি ঝগড়া,অভিমান আর
ভালোবাসা দিয়েই দুটো বছর চলে
গেলো।

চলবে…………

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here