#পিচ্চি_বউ,part_10
#Writer_Kabbo_Ahammad
-: ডাইরিটা পড়তেই চোখ দিয়ে জল গড়িয়ে পরলো মিরার। মিরার আজকে একটা মিথ্যার জন্যই কাব্য মৃত্যুর কিনারায়। খুব কষ্ট হচ্ছে মিরার কাব্যর মুখটা বারবার মিরার সামনে ভেসে ওঠছে। মিরার কানে বার বার বাজছে। কাব্যর লেখা শেষ কথাগুলো। মিরা এসব ভাবছিলো। আর তখনি হঠাৎ বাহিরে কিছু ভাঙার শব্দ পেলো।
মিরা তাড়াতাড়ি করে রুমের বাহিরে এসে দেখে রাইসা কাঁদছে। আর খাবারের প্লেট ফেলে দিয়েছে।
—মা রাগ করে না খেয়ে নাও।
—তুমি আমাকে মা বলবে না। আমাকে বাবাই এর কাছে নিয়ে যাও। আর তুমি আমার বাবাইকে কষ্ট দিয়েছো। আমার সাথে কথা বলবে না। (রাইসা)
—প্লিজ রাইসা মা আমার। তোমার বাবার কিছুই হবে না। প্লিজ কান্না করো না। খেয়ে নাও।
(কান্না চেপে বললো মিরা)
—আমাকে বাবাই এর কাছে নিয়ে যাও। বাবাইকে না দেখে আমি খাবো না।
.
.
.
হঠাৎ তখনি সবুজকে ঘরে আসতে দেখেই মিরা ভাইয়া বলে কেদে দিয়ে বললো।
—ভাইয়া কাব্য বাঁচবেনা। কাব্যকে ছাড়া আমিও যে বাঁচবো না ভাইয়া।
সবুজ মিরাকে বুকে নিয়ে শান্তনা দিয়ে বললো।
—কান্না করিস না বোন আল্লাহতালা সব ঠিক করে দিবেন।
:- তোর কান্না যে আমি দেখতে পারি না। মা-বাবাকে তো ছোটবেলায় হারিয়েছি। তানিয়াটাকেও প্রথম দেখাতেই হারিয়ে ফেলেছি। তুকে খুন করার জন্য, সাথী নামের মেয়েটা কন্টাক্ট করেছিলো। তোকে খুন করতে এসে তোর গলার লকেট দেখেই চিনে ফেলি তুই আমার ছোটবেলায় হারিয়ে যাওয়া বোন মিরা। কিন্তু সে সময়, তানিয়াকে গাড়ির নিচে পিস্ট হতে দেখি। তোর চেহেরা তানিয়ার মতোই ছিলো, তাই যখন দেখলাম, তানিয়া রাস্তায় পাশে পড়ে আছে, দৌঁড়ে বুকে টেনে নেই। সন্ত্রাসী ছিলাম, মানুষের রক্ত দেখলে হাসি পাইতো, কিন্তু যখন নিজের বোনটার রক্ত আমার শার্ট ভেজে যাচ্ছিলো, তখন বুঝেছি, আপন মানুষদের রক্ত শুধু তাঁদের শরীর থেকে ঝড়ে না, অাপন মানুষটির কলিজা থেকেও ঝড়ে। তোকে আর তানিয়াকে পেয়ে, অন্ধকার রাস্তা থেকে সরে আসি।
তারপর কাব্যর বাবার প্ল্যান অনুযায়ী, তানিয়াকে মিরা বানিয়ে কাব্যর বাড়িতে পাঠাই, আর রিচি পায় তাঁর মাকে।
রিচির বাবা রফিক ভাইয়ার সাথে সব প্ল্যান করি। কিন্তু এ জন্য যে কাব্য আজকে মৃত্যুর মুখামুখি হবে, তা জানলে কখনো, এতটা মিথ্যার আশ্রয় নিতাম না।
.
.
.
.
এদিকে হঠাৎ রাইসা দৌড়ে এসে, মিরাকে জড়িয়ে ধরে বললো।
—মম চলো না বাবাই এর কাছে, আমার সাথে বাবাই কথা বলবে, তোমাদের সবার সাথে রাগ করে থাকলেও আমার সাথে বাবাই রাগ করে থাকতে পারবে না। বাবাই জানে আমার সাথে, অভিমান করলে, তাকে কান ধরে উঠবস করতে হবে।(রাইসা)
তারপর মিরাকে কিছু বলতে দেওয়ার আগেই রাইসা মিরাকে জোর করে গাড়িতে তুলে নিয়ে গাড়ি চালাতে বললো। মিরা রাইসাকে নিয়ে হসপিটালে আসতেই, রাজের বাবার সাথে দেখা হয়।
—মা’রে কেমন আছিস!
—বাবা আমি সত্যি অনেক বড় অপরাধী হয়ে গেলাম। নিজের স্বামীকে কোন স্ত্রী এতটা কষ্ট দিতো না। বাবা সত্যি কাব্যকে ছাড়া আমি বাঁচবো না।
অন্যদিকে রাইসা তার বাবার রুমে গিয়েই বলতে লাগলো।
—ও বাবাই, বাবাই কেমন আছো তুমি? কথা বলবে না আমার সাথে বাবাই? জানো বাবাই তোমাকে মম কষ্ট দিয়েছে বলে, মমের সাথে আড়ি দিয়েছি। ঠিক করেছি না বাবাই। বাবাই তুমি আমাকে বুকে নিবে না আমাকে জড়িয়ে ধরে আম্মু ডাকবে না।
হঠাৎ তখন একটা নার্স এসে বললো।
—মামনী এখানে কথা বলা যাবে না।
—আপনি চুপ করেন তো, দেখছেন না? আমি আমার বাবাই এর সাথে কথা বলছি। কথা বলবেন না একদম আমার বাবাই রাগ করবে।
:- ও বাবাই তুমি জানো? মা তোমার জন্য কতো কান্না করে। তোমাকে আমি ছোটবেলা থেকে দেখেছি, মায়ের সাথে একটি ছবিতে। বাবাই স্কুলের সব মেয়েরা তাঁর বাবাই এর সাথে ঘুরে বেড়ায়। তাঁদের বাবাই, চকলেট আইসক্রিম কিনে দেয়, আমি এসব কিচ্ছু চাই না।
তুমি কথা বলো বাবাই তাহলেই হবে। কথা বলছো না কেন? দেখছো না, তোমার রাইসা কাঁদছে। প্লিজ বাবা কথা বলো, আর চুপ করে থেকো না। আমাকে বুকে নাও না, তোমার বুকে যেতে খুব খুব ইচ্ছে করছে।
ও বাবাই এত্তো অভিমান কিসের তোমার হ্যাঁ।
মাও কাঁদছে বাবাই, বাবা মা তোমার জন্য রাতে কান্না করে। আমাকে বুকে নিয়ে তোমার নাম বলে ঘুমের ঘরেও কান্না করে। তুমি দেখো, দাদুভাই কাঁদছে। কথা বলবে না আমার সাথে? আমি কিচ্ছু খাইনি।
তুমি খাইয়ে দিবে আমায়? তুমি খাইয়ে না দিলে আমি কিন্তু খাবো না। ও বাবা কথা বলছো না কেন? আমার খুব কষ্ট হচ্ছে বাবাই,আমার বুকের মাঝে ব্যাথা করছে বাবাই।
(কথা গুলো বলছে আর কাঁদছে রাইসা)
এদিকে রাইসার কান্না দেখে, সবাই কাঁদছে। মিরার কাছে মনে হচ্ছে, তাঁর কলিজাটা ফেঁটে যাচ্ছে। কিছুক্ষণ পর কাব্য কেমন জানি করতে লাগলো। ডাক্তার এসে দেখতেই কাব্য কেমন যেন নড়াচাড়া বন্ধ করে দিলো।
তারপর রুম থেকে বের হয়ে ডাক্তার চোখের পানি ছেড়ে দিয়ে বললো।
—স্যরি।
কথাটা শুনেই মিরা হসপিটালে ফ্লরে পড়ে গেলো।
.
.
চলবে……………………♥