#পিচ্চি_বউ,part_11_last
#Writer_Kabbo_Ahammad
-: এদিকে রাইসার কান্না দেখে, সবাই কাঁদছে। মিরার কাছে মনে হচ্ছে, তাঁর কলিজাটা ফেঁটে যাচ্ছে। কিছুক্ষণ পর কাব্য কেমন জানি করতে লাগলো। ডাক্তার এসে দেখতেই কাব্য কেমন যেন নড়াচাড়া বন্ধ করে দিলো।
তারপর রুম থেকে বের হয়ে ডাক্তার চোখের পানি ছেড়ে দিয়ে বললো।
—স্যরি। আমাদের আর কিছু করার নেই। আপনারা আল্লাহ্কে ডাকেন আল্লাহ্ যদি তাকে স্বয়ং সুস্থ করে দেন। (ডাক্তার)
ডাক্তারের কথাটা শুনেই মিরা হসপিটালের ফ্লরে পড়ে গেলো। তারপর সবাই মিরাকে নিয়ে বেডে শুইয়ে দিলো। এদিকে সবাই কান্না করছে। রাইসা গিয়ে কাব্যর মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে। আর বাবাই বাবাই করে ডাকছে। রাইসার কান্না দেখে সবাই কাঁদছে। কাব্যর স্যালাইন নেওয়া ও বন্ধ হয়ে গেছে।
হঠাৎ তখনি ডাক্তার এসে কাব্যর মুখ থেকে অক্সিজেন মাক্স খুলে দিলো। তারপর স্যালাইনটাও খুলে দিয়ে বললো।
—কাব্য আর কোনদিন ফিরবে না। যা ভেবেছিলাম তাই হলো।(ডাক্তার)
এদিকে মিরা ভাবতে পারছে না কাব্য মারা গেছে।
সবাই কান্না করছে মিরা নিঃস্তব্ধ হয়ে গেছে রাইসা কাঁদছে আর বলছে।
—বাবাই ওও বাবাই কথা বলো বাবাই। কথা বলবে না আমার সাথে? বাবাই তুমি আর আমাকে পাপ্পি দিবে না? আমার না খুব কষ্ট হচ্ছে বাবাই। আল্লাহ্কে পিচ্চি বলে আমার চোখের পানি দেখে না। ও আল্লাহ্ তুমি তো বলেছে, ছোট বাচ্চারা নিষ্পাপ হয় তাঁদের কোন পাপ থাকে না তাঁদের কথা অগ্রাহ্য করতে পারো না।
ওহ আল্লাহ্ দেখো আমি কাঁদছি, তুমি আমার বাবাই কে বলো আমার সাথে কথা বলতে, তুমি কথা বলতে বললেই বাবাই আর চুপ করে থাকতে পারবে না। দেখতো বাবাই আমার সাথে অভিমান করেছে, আমাকে খোলে নেই না আঁদর করে না। আমার কষ্ট হয় না বুঝি। বাবাই ও বাবাই কথা বলো।
:- মা মা দেখ বাবাই কথা বলছে না। বাবাইকে বলো কথা বলতে।
এদিকে সবাই কাব্যর জানাযা করে কবরে নিয়ে যাচ্ছে। মিরা বাকরুদ্ধ হয়ে গেছে ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে আছে কাব্যর চলে যাওয়ার দিকে।
মিরার কলিজাটা ফেঁটে যাচ্ছে, আজ একটি ভুলের জন্য কাব্য সারাজীবনের জন্য হারিয়ে গেলো মিরার জীবন থেকে।
—মম বাবাইকে কোথায় নিয়ে যায়। বলো না মা, বাবাইকে সবাই কোথায় নিয়ো যায়। বাবা কি রাগ করেছে তাই নিয়ে যাচ্ছে। বাবা আবার কখন আসবে মা? বলো না মা আমার বাবাইকে সবাই কোথায় নিয়ে যায়। (রাইসা)
রাইসার কথা শুনে মিরার কষ্টে বুকটা ফেঁটে যাচ্ছে নিশ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে। রাইসাকে বুকের সাথে শক্ত করে জড়িয়ে ধরেছে মিরা। রাইসাকে কি বলবে,
সে উওর যে মিরার কাছে নেই। এদিকে কাব্যকে কবরে নামালে মিরা আর থাকতে পারে না, দৌঁড়ে চলে যায় কবরের কাছে গিয়ে বলতে লাগে।
—আমি আমার স্বামীকে কোথাও যেতে দিবো না। তোমরা কেউ আমার স্বামীকে দূরে সরিয়ে দিয়ো না।
.
.
.
.
.
এদিকে মিরার চিল্লানী শুনে কাব্যর বাবা মিরাকে গিয়ে জিজ্ঞাস করলো।
—কি হয়েছে মা তুই কাঁদছিস কেন?(আব্বু)
—বাবা কাব্যকে কবর দিয়ে দিচ্ছে। বাবা প্লিজ কাব্যকে কবর দিতে দিয়েন না। ওকে ছাড়া আমি বাঁচবো না। বাবা সত্যি ওকে ছাড়া মরে যাবো।(মিরা)
—মা’রে তুই দুঃস্বপ্ন দেখেছিস। কাব্য বেঁচে আছে। ডাক্তার আল্লাহকে ডাকতে বললো। আমি জানি তুই কাব্যকে অনেক ভালোবাসিস। এতো কষ্ট দেওয়ার পরেও তুই ওকেই ভালোবেসে গিয়েছিস।
—বাবা কাব্য কোথায়?
—কাব্যর বেডে।
তারপর মিরা দৌড়ে কাব্যর বেডে গিয়ে দেখে রাইসা কাব্যর বুকে শুয়ে আছে। মুখে অক্সিজেন মাক্স লাগানো। শরীরে স্যালাইন যাচ্ছে। মিরা তাড়াতাড়ি গিয়ে কাব্যর কপালে চুমু দিয়ে কাব্যর পা ধরে কাঁদতে লাগলো।
—প্লিজ তুমি আমাকে ছেড়ে দিও না, কীভাবো বাঁচবো আমি তোমায় ছাড়া। তুমি যে আমার জীবন। তুমি যে আমার ভালোবাসা।(মিরা)
—প্লিজ ম্যাডাম এভাবে কাঁদবেন না। পেশেন্ট এর সমস্যা হবে। পারলে আল্লাহ্কে ডাকেন। (নার্স)
তারপর মিরা ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখে, রাত ১ টা বাজে। মিরা তাড়াতাড়ি গিয়ে দু’রাকাত নফল নামায শেষ করে, মোনাজাতে দুটি হাত উত্তোলন করে বলতে লাগলো।
“হে পরম করুণাময় আল্লাহতালা, হে রহিম রহমান।
এই শেষ রাতে পৃথিবীর সকল মানুষ যখন ঘুমন্ত এমন সময় তোমার পবিএ দরবারে দু’টি হাত তুলে ধরেছি। ছোটকালেই মা-বাবাকে হারিয়েছি, বাবার স্নেহ কি জিনিস কখনো তা পায়নি। পায়নি মায়ের ভালোবাসা। এখন আমার জীবনের একমাএ অবলম্বন আমার স্বামী। আজ আমার স্বামীর জীবন ভিক্ষা চায় তোমার দরবারে। হে আল্লাহ্ ফকির এক দরজার ভিক্ষা না পেলে অন্য দরজার যায়। আর তুমি ছাড়া তো আমার কোন দরজা নাই, এই ভিক্ষারিণীকে তুমি খালি হাতে ফিরাইওনা। আমি কিছু চায়নি কোনদিন তোমার দরবারে। কোনদিন বলেনি বা অভিযোগ করেনি মা-বাবাকে কেন কেড়ে নিলে। আল্লাহ্ তোমার কাছে আমার স্বামীর জীবন ভিক্ষা চায়। আল্লাহ্ আমার জীবনের বদৌলতে হলেও আমার স্বামীকে বাঁচিয়ে দাও। আমার মেয়েকে তুমি বাবা হারা করো না।
আল্লাহ্ সন্তান কাঁদলে নাকি মা সহ্য করতে পারে না! ওহ্ আল্লাহ্ তুমি তো দুনিয়ার মায়ের চেয়ে তোমার বান্দা-বান্দীকে লক্ষ কোটিগুণ বেশি ভালোবাসো। আল্লাহ্ এই নিশিরাতে তুমি কি আমার কথা শুনতে পাচ্ছো না? আমার স্বামীকে সুস্থ করে দাও হে আল্লাহ্। আমার বেঁচে থাকার অবলম্বনকে আমার কাছ থেকে দূরে সরিয়ে দিয়ো না। নিশ্চয়ই তোমার গোনাহ্গার বান্দীর দোয়া কবুল করেছ ো।
এই কথা বলে মোনাজাত শেষ করে জায়নামাযেই ঘুমিয়ে গেলো মিরা।
তারপর ভূরের আলো পড়তেই মিরার ঘুম ভেঙে যায়। আর মিরা উঠে দৌড়ে যায় কাব্যর বেডে। মিরা গিয়ে দেখে কাব্যর অক্সিজেন মাক্স খোলা তারপর ডাক্তার এসে বললো।
—স্যরি কাব্য আর ফিরবে না।
কথাটা বলেই ডাক্তার চলে গেলো।
সাথে সাথেই মিরা চিল্লায়ে কাঁদছে। আর বলছে।
—নায়ায়ায়ায়ায়ায়ায়া
আমার কাব্য আমাকে ছেড়ে কোথাও যেতে পারে না।
তখন সাথে সাথেই কাব্যর পা দুটি জড়িয়ে ধরে বলতে লাগলো।
—এই তুমি আমাকে ছেড়ে যেও না আমি সত্যিই তোমাকে ছাড়া বাঁচবো না। তোমার বুকই যে আমার শেষ ঠিকানা। প্লিজ কথা বলো, আর চুপ করে থেকো না।
এসব বলছে আর কাব্যর পা জড়িয়ে ধরে কাঁদছে মিরা।
মিরা কাঁদতে কাঁদতে কাব্যর কপালে গিয়ে ভালোবাসার স্পর্শ এঁকে দিলো। আর তখন কে যেন, মিরাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো। মিরা মাথা তুলে তাখিয়ে দেখে কাব্য মিরাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরেছে। তারপর কাব্য বলছে।
–আমি কি আমার পিচ্চি বউটাকে রেখে মরতে পারি? আমি যে আমার পিচ্চি পরীটাকে বড্ড বেশী ভালোবাসি। আমার পিচ্চিটাকে কী জড়িয়ে ধরতে পারি?
—যাহ্ দুষ্ট।
কথাটা বলেই, কাব্যর বুকে মুখ লুকালো মিরা।
–এই কি করছো শার্ট তো ভেজে গেলো।
—ভিজুক কেন কষ্ট দিলে আমায়।
–তুমিও তো আমাকে কম কষ্ট দাওনি, পাঁচবছর তোমাকে ছাড়া কাটিয়েছি। তাই আমিও ডাক্তারকে সব কিছু বলে ডাক্তারের সাথে প্ল্যান করে এসব করেছি। তবে হ্যাঁ একসিডেন্ট কিন্তু সত্যি সত্যি হয়েছিলো।
আচ্ছা মিরা সত্যিই যদি আমি হারিয়ে যেতাম?
কথাটা বলার সাথে সাথেই মিরা আমার মুখে হাত দিয়ে ফেললো।
—কি বলছো, তাহলে আমার কি হবে। এখনো তো বাসর রাত বাকী। আর এখন আমি কিন্তু আর পিচ্চি না।
আমি তখন হেসে দিয়ে মিরাকে জড়িয়ে ধরলাম। আর তখনি হঠাৎ রাইসা এসে বললো।
—বাবাই শুধু মাকেই আঁদর করবে, আমায় করবে না?
তারপর আমি রাইসাকে কোলে নিয়ে দুজনেই হেসে দিলাম।
সমাপ্ত…………………………♥♥