পিচ্চি_বউ,part_2

0
3495

#পিচ্চি_বউ,part_2
#Writer_Kabbo_Ahammad

-: আমি শাড়ী পড়াতে পারিনা।
আর বড় বড় কথা তো বলতে পারো আমি ছোট না। কাপড় টাই পড়তে পারো না। আর হ্যাঁ কাপড় পড়াতে পারলেও আমি তোমাকে কাপড় পড়িয়ে দিবোনা। নিজে পড়ে নাও। (আমি)

—বাবা, ও বাবা আপনার ছেলে আমাকে শাড়ী পড়িয়ে দেয়না। (মিরা)

–ওই চুপ করবি তুই! চুপ কর।

—অ্যা-অ্যা-অ্যা।
আমি বাবা’কে বলবো তুমি রাতে শাড়ী টেনে হিঁচড়ে খুলে এখন পড়িয়ে দিচ্ছো না! (মিরা)

–কিহ্……?
হে আল্লাহ এ মেয়েটার কথা শুনে মনে হচ্ছে সেভেন’আপ কে বিষ ভেবে খেয়ে মরে যায়!

—অ্যা-অ্যা তুমি মরার কথা বলো কেন! আমি তোমাকে ছাড়া বাঁচবোনা। প্লিজ মরার কথা বলো না। যেদিন কালেমা পড়েছি সেদিন থেকেই তোমাকে স্বামী বলে গ্রহণ করেছি। তোমার পায়ে যদি একটা কাঁটা ফুটে সেটা আমার কলিজাতে ফুটে! আমি কি করবো আমি শাড়ী পড়তে পারিনা! আচ্ছা আমি পড়তেছি। তাও তুমি এমন অলক্ষণে কথা মুখেও এনো না।

(কথাটা করুণ সুরে বললো মিরা)
.
.
তখন আমি মেয়েটার দিকে তাকাতেই বুকটা কেমন করে ওঠলো, পিচ্চিটার চোখে পানি চিকচিক করছে।
তবুও নিজেকে সামলে নিয়ে বললাম।

–আচ্ছা মনে থাকে যেন নিজে শাড়ি পড়া শিখো।

—আচ্ছা আমি পড়তেছি।

বলে পিচ্চি মেয়েটা শাড়ি পড়ছে।
কিন্তু একি শাড়ি পড়ছে নাকি শরীলে কাপড় পেচাচ্ছে? এটা দেখে আমি নিজের অজান্তেই হেসে ফেললাম। তখন মিরা বলে উঠলো।

—আমি পড়তে পারি না। এভাবে হাসার কি হলো?

কথাটা বলার সাথে সাথেই মিরার শাড়িটা খুলে গেলো।
তখন আমি অন্যদিকে তাকিয়ে বললাম।

–কি লজ্জা সরম কিছু মা-বাবা শিক্ষা দেয়নি?

—কেন আপনি কি কুরআন পড়তে জানেন না?

পিচ্চি মেয়ের মুখে এমন কথা শুনে ক্ষানিকটা বিস্মিত হলাম! তারপর প্রশ্ন করলাম।

–কি বলছো এসব। শাড়ি পড়ার সাথে কুরআনের কী সম্পর্ক?

—কেন? আপনি কি জানেন না? আল্লাহতালা বলেছেন, স্বামী-স্ত্রী একে অন্যের পোষাক স্বরূপ।
“অমি ছোট মানুষ শাড়ি পড়তে পারি না, কোথায় আপনি পড়িয়ে দিবেন তা না করে,অন্য দিকে ফিরে আছেন। আমার শরীরের প্রতিটা অঙ্গ বৈধ ভাবে দেখতে পারবেন আপনি, এখানে অন্য দিকে ফিরে থাকায় কি আছে! দেন না আমাকে শাড়ি পড়িয়ে।

(কাঁদো কাঁদো ভাব নিয়ে কথাটা বললো মিরা)

পিচ্চিটার কথা শুনে আমি পিচ্চির দিকে তাকালাম। পিচ্চিটা লজ্জায় লাল হয়ে গেছে। চোখ বুজে আছে।
এবার আমি শাড়িটা খুলে, সুন্দর করে কুঁচি দিয়ে পড়িয়ে দিচ্ছি মেয়েটা চোখ বন্ধ করে আছে। লজ্জায় পিচ্চির সুন্দর মুখটা লাল টোমেটো হয়ে গেছে। লজ্জা পেলে যে পিচ্চিটাকে এতো সুন্দর লাগে না দেখলে হয়তো তা আমার অজানায় থেকে যেতো। তারপর ফ্লোরে পড়ে থাকা শাড়িটা হাতে সম্পূর্ণ কুঁচি দেওয়ার পর নাভির কাছে গুজে দেওয়ার সময় কেমন যেন কেঁপে ওঠলো! পিচ্চির নিঃশ্বাস ভারী হয়ে আসছে। ঠোঁট দুটি কাঁপছে। এদিকে আমি আর নিজেকে কন্ট্রোল করতে লপারছি না। পিচ্চির ঠোঁট দুইটা হঠাৎ, আমার ঠোঁঠের সাথে মিশে যাওয়ার আগেই আমার হাতটা ধঁরে ফেললো।

–কি হলো? (আমি)

—প্লিজ আর না। আমি আর পারছিনা। শরীরটা থরথর করে কাঁপছে।(মিরা)

–কেন কী হয়েছে শরীর খারাপ করলো নাকি?

—নাহ্

(এই বলে শাড়ীর কুঁচিটা হাতে নিয়ে নিজেই গুজে দিয়ে বললো)

—হাদারাম, কিছুই বুঝেনা, কোথায় হাত দিলে কি হয়।

বলেই রুম থেকে বেরিয়ে গেলো মিরা। পিচ্চিটার কথা শুনে ফ্লোরে বসে পড়লাম আমি। তার কিছুক্ষণ পর রুম থেকে বের হতেই সবাই হা করে তাকিয়ে আছে আমার দিখে!

–আমি কি চিড়িয়াখানার বান্দর যে এভাবে সবার তাকায় থাকা লাগবে?

মনে মনে ভাবছি হিটলার টা আমার জীবনটা নষ্ট করে দিয়ে কিভাবে হা করে তাকিয়ে আছে দেখো। আমার কথা শুনে সবাই এক সাথে হেসে দিলো!

পিচ্চিটা মুখ ধরে হাসছে, ইচ্ছা করছে সব দাঁত ভেঙ্গে দেয় কীভাবে হাসছে। সত্যি কী বিয়ে করে চিড়িয়াখানার বান্দর হয়ে গেলাম এরপর সবাইকে উদ্দেশ্য করে বললাম!

–কি হলো সবাই হাসছো কেনো? বলবে তো!

—ভাইয়া তুমি ঠিক মতো লিপিস্টিক দিতে পারো না,
“ভাবী তুমি ভাইয়াকে সুন্দর করে সাজিয়ে দিয়ো!(নুসরাত মিরাকে উদ্দেশ্য করে বললো)

এদিকে সবকিছু যেন আমার মাথার উপর দিয়ে যাচ্ছে। আমি কিছুই বুঝে উঠতে পারছি না। সবাই হাসতেছে।

–আরে তোমরা সবাই কেন হাসছো তা তো একবার বলবে! বুঝতেছিনা।
“ওই জান্নাত ফাইজলামি না করে বল কি হয়েছে। আমি কি বিয়ে করে ঝুকার হয়ে গেলাম। আর তোরা যেভাবে হাসছিস মনে হচ্ছে আমি চিড়িয়াখানা থেকে বের হয়ে আসলাম!

—ভাইয়া তোমার মুখে লিপিস্টিক লেগে আছে যাও ফ্রেশ হয়ে আছে।(জান্নাত)

–মানে,

রাতে পিচ্চিটা এমন কাজ করেছে। নিজের ওপর নিজের’ই রাগ হচ্ছে। পিচ্চিটাকে দেখি মিটি মিটি হাসছে। আর মনে মনে ভাবছে এখন কেমন লাগে, রাতে আমাকে ঠকানোর ফল। পিচ্চিকে ঠকালে আল্লাহ বিচার করে। তারপর আমি দৌঁড়ে চলে গেলাম ওয়াশরুমে! ফ্রেশ হয়ে ব্রেকফাস্ট করে নিলাম। তারপর আবারো রুমে চলে আসলাম। আর এভাবে দিন পার।

সন্ধ্যা বেলায় ফোনটা ক্রিং ক্রিং করে বাজছে! আমি ফোন ধরতেই ওপাশ থেকে চাপা কান্নায় আওয়াজ।
ফোনের ওপাশ থেকে কোন কথা আসছে না, শুধু চাপা কান্নার আওয়াজ ছাড়া! বুকের ভেতরটা হাহাকার করছে। কলিজাটা ক্ষত বিক্ষত হয়ে যাচ্ছে,কারণ ফোনের ওপাশে যে মানুষটি কান্না করতেছে, সে আর কেউ নয় “আমার ভালবাসার মানুষ সাথী! নিজের অজান্তেই চোখ থেকে টুপটাপ করে পানি পড়ছে।

এভাবে প্রায় পাঁচমিনিট পর ওপাশ থেকে সাথী বললো।

—কি অপরাধ করেছিলাম? কেন করলে আমার সাথে এমন? আমি তো তোমার পায়ের নিচে এক টুকরো জায়গা চেয়েছিলাম। কিন্তু তুমি আমার কলিজাতে ছুরি চালিয়ে দিয়ে, বিয়ে করে নিলে।
আমাদের তিন বছরের রিলেশনশিপ। কি ভাবে ভুলবো! তাই সিদ্ধান্ত নিয়েছি সুসাইড করবো। যে জীবনে আমার ভালবাসার মানুষকে পাবো না সে জীবন রেখে কী করবো! (সাথি)

সাথীর মুখে সুসাইডের কথা শুনে, হঠাৎ আমি থমকে গেলাম! আমার মনে হচ্ছে কেউ যেন আমার বুক থেকে কলিজাটা বের করে নিচ্ছে। কি বলবো কিছু ভাবতে পারছি না। তখন সাথীকে বললাম। কীভাবে আমার আর মিরার বিয়ে হয়েছে! আর কেন আমি বিয়েটা করলাম।

সাথীকে বললাম ওই মেয়েকে কাবিনের ছয়লক্ষ টাকা দিয়ে আগামী ছয়মাসের মাঝেই ডির্ভোস দিয়ে দিব বলে সাথীকে একটা পাপ্পি দিয়ে ফোনটা রেখে দিলাম।

কিন্তু ফোন রেখে পিছন দিকে তাকাতেই দেখি, পিচ্চিটা আমার পিছনে দাঁড়ানো! চোখ থেকে অশ্রু গাল গড়িয়ে পড়ছে। আমি ফিরে তাকাতেই দৌড়ে রুমে গিয়ে দরজা লক করে দিলো! যাবার আগে বলে গেল সে এ জীবন রাখবে না!

আমি যাওয়ার আগেই দরজা লক করে দিল পিচ্চিটা।
.
.
চলবে………………♥

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here