পিচ্চি_বউ,part_3

0
3250

#পিচ্চি_বউ,part_3
#Writer_Kabbo_Ahammad

-: কিন্তু ফোন রেখে পিছন দিকে তাকাতেই দেখি, পিচ্চিটা আমার পিছনে দাঁড়ানো! চোখ থেকে অশ্রু গাল গড়িয়ে পড়ছে। আমি ফিরে তাকাতেই দৌড়ে রুমে গিয়ে দরজা লক করে দিলো! যাবার আগে বলে গেল সে এ জীবন রাখবে না!

আমি যাওয়ার আগেই পিচ্ছিটা দরজা লক করে দিল।
খুব ভয় হচ্ছে এখন, তারপর আমি আসতে আসতে দরজার কাছে গিয়ে বললাম।

–প্লিজ আমার পিচ্চি বউ দরজা খুলো, আর ওমন কথা বলবো না খুব কষ্ট হচ্ছে! প্লিজ দরজাটা খুলো।

কিন্তু পিচ্ছিটা দরজা খুলছে না। তখন একবার মনে মনে ভাবলাম,মা-বাবাকে ডাক দেয়। পিচ্চিটা যদি কিছু করে ফেলে। তারপর আমি যখনি মা’কে ডাক দিবো, তখনি পিচ্চিটা দরজা খুলে বললো”

—কী বললা? আমি তোমার পিচ্চি বউ। তুমি কি করে ভাবলে আমি সুসাইড করবো? আর ওই শাকচুন্নিটা তোমার সাথে ঘর করবে। আমি তোমায় ছাড়ছি না। তবে আমি সব শ্বশুর কে বলে দিবো।

:- বলবো, তুমি এক শাকচুন্নিকে বলছো, যে তুমি তাকে বিয়ে করবে। আমাকে ডির্ভোস দিবে।

–আরে না না তেমন কিছুই না, আমি তো মজা করছি, আমার বউটা কত্তো কিউট!

—অ্যা অ্যা, মিথ্যা গুছিয়ে বলতে হয়। আমাকে ঢপ দিচ্ছো। আমি বাবাকে ঠিকই বলে দিবো।

–প্লিজ মিরা বলো না!

—হুম বলবো না তবে একটে শর্ত আছে।

–কিসের শর্ত?

—আমাকে পাঁচমিনিট কিস করতে হবে।

–হোয়াট কিস?

—নাহ্ লিপ কিস!

–সম্ভব না, প্লিজ পাগলামী করো না।

—কি করবো? আমি না তোমার বউ বাসর রাতে কিছু করছো? না বিড়াল মারছো? না কি অন্য কিছু।
একটা বিড়াল ধরে মারলে কি এমন ক্ষতি হতো। ভাবী তো বলে দিল ঠিকমতো বিড়াল মারতে। এখন আবার লিপ কিসও করতে চাচ্ছো না। আমি ছোট বলে ঠকাচ্ছো! আমি বাবাকে সব বলে দিব। বলবো যে তুমি।
আচ্ছা এক্ষুনি বলছি, বাবা ও বাবা।

কথাটা বলার আগেই শত অনিচ্ছা থাকা সত্ত্বেও নিজেকে বাঁচাতে পিচ্চিটার ঠোঁটের সাথে ঠোঁট মিলিয়ে দিলাম। দেখলাম পিচ্চির চোখ জোড়া বন্ধ হয়ে আছে। পিচ্চিটা শক্ত করে জড়িয়ে ধরে আছে আমায়। আমি ছাড়াতে চেয়েও ছাড়াতে পাচ্ছিনা।

তখন হঠাৎ দরজার বাহিরে থেকে জান্নাত ডাকছে। জান্নাত দরজা ধাক্কা মেরে খুলার সাথে সাথেই, আমি মিরাকে নিজের কাছ থেকে ছাড়িয়ে নিলাম।
তারপর জান্নাত এসে বললো যে, বাবা আমাকে আজ অফিস যেতে বলছে।
তারপর জান্নাত কে আমি বললাম বাবাকে বল আমি অফিস যাচ্ছি।
.
.
.
তারপর রেড়ী হয়ে বাসা থেকে বের হয়েই স্বস্তির নিঃশ্বাস নিলাম। পিচ্চিটার হাত থেকে বাচঁলাম।
তখন গাড়িতে থাকা অবস্থায়, একটা ম্যাসেজ আসলো। “ম্যাসেজে লেখা” ইমুতে আসো’। ইমুতে গিয়ে দেখি, সাথী হাঁত কেটে পিক দিয়েছি। সাথে সাথেই ফোন দিলাম। কতক্ষণ রিং হওয়ার পর ফোন ধরলো সাথী!

–এই পাগলী এমনটা কেউ করে? আমি কাকে নিয়ে বাঁচবো। আমি যে তোমাকে ছাড়া বাঁচবো না।

—কি করবো? তোমার বউ হয়ে তোমার বাড়িতে আমার যাওয়ার কথা ছিলো। নিজের ভালবাসার মানুষ অন্যের বুকে। যাকে নিজের থেকে বেশি ভালবাসলাম আজ সে আমার না। কেন যে আল্লাহতালা আমাকে এসব দেখার জন্য বাঁচিয়ে রেখেছে। আমি সত্যি বাঁচতে চায় না কাব্য। যে জীবনে তোমাকে পাবো না সে জীবন রেখে লাভ কী বলো?

–প্লিজ সাথী থামবে তুমি! আমার যে আর সহ্য হচ্ছে না। তুমি আজ বিকেলে প্লিজ আমার সাথে পার্কে দেখা করো।

—আচ্ছা ৪ টায় দেখা করবো।

এদিকে অফিস শেষ করে ৪ টায় পার্কের দিকে রওয়ানা দিলাম। পার্কে গিয়ে দেখি, সাথী নীল শাড়ি পড়ে বসে আছে। তারপর আমিও সাথীর পাশে গিয়ে বসলাম।বাতাসে সাথীর চুল থেকে মাতাল হাওয়া আসছে। আমার বসা দেখে সাথী আমার দিকে চেয়েই কেঁদে দিলো।

সাথীর চোখ থেকে টুপ টুপ করে পানি পড়ছে। মনে হচ্ছে আমার হৃদপিন্ডে রক্তক্ষরণ হচ্ছে। সাথীর কালজ কালো চোখজোড়া চোখের পানিতে লিপ্টে যাচ্ছে। চোখ গুলি ফুলে গিয়েছে। হাতের দিকে তাকাতেই কলিজাটা কেঁপে ওঠলো। সাথী হাতে ব্যান্ডেজ বুঝতে বাকি রইলো না যে এটা সাথীর পাগলামী। চোখ দিয়ে অনবরত পানি আসছে। কিভাবে ভূলবো তিন বছরের ভালোবাসা।

–এই তুমি কাঁদছো কেনো? তুমি না আমার প্রাণ। আর কত কষ্ট দিবে। জানো যখন শুনেছি তোমার বিয়ে হয়ে গেছে মনে হয়েছে প্রাণটা কেউ বের করে নিচ্ছে। কত স্বপ্ন দেখেছিলাম তোমাকে নিয়ে। সব আজ শেষ। আমায় একটু বুকে নিবে!

(কাঁদতে কাঁদতে কথাটা বললো সাথী)

সাথীর বলতে দেরী হয়েছে পাগলামীটাকে শক্ত করে জড়িয়ে নিতে দেরী হয়নি। বুকটা কেমর যেন ভিজা ভিজা লাগছে পাগলীটার চোখের পানিতে গায়ের শার্টটা ভিজে যাচ্ছে। পাগলীটা এমন ভাবে জড়িয়ে ধরে আছে? মনে হচ্ছে ছোট্ট বাচ্চা ভয় পেলে যেভাবে আকড়ে ধরে থাকে সেভাবে জড়িয়ে আছে আমায়। এভাবে কিছুক্ষণ জড়িয়ে ধরে থাকার পর বললাম”

–কি হলো আর কতক্ষণ জড়িয়ে ধরে থাকবে আমায়? সবাই ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে আছে আমাদের দিকে।

—কি করবো? তোমার বুকটাকেই যে আমার ঠাঁয়। জানো কাব্য, প্রতিরাতে স্বপ্নে দেখতাম তোমায় নিয়ে। কতটা ভালোবাসতাম তোমায়। কিন্তু আজ তুমি অনেক কাছে থেকেও অনেক দূরে! কাব্য আমার কপালে একটা চুমু দিবে। খুব কাছে পেতে ইচ্ছে করছে তোমায় দাও না প্লিজ..? (সাথী)

তারপর আমি পাগলীটাকে আবারো বুকে টেনে নিয়ে কপালে আলতো করে ভালবাসার স্পর্শ এঁকে দিলাম।

—আচ্ছা কাব্য তুমি না বলোছো, ওই মেয়েকে ডির্ভোস দিবে।

–হ্যাঁ।

—তাহলে আমার মাথা ছুঁয়ে কসম করো ওকে ডির্ভোস দিবে। যদি ডির্ভোস না দাও তাহলে আমার মরা মুখ দেখবে।

হঠাৎ সাথীর কথাটা যেন আমার কলিজাতে গিয়ে বিধঁলো। নিজের অজান্তেই সাথীর মাথায় হাত রেখে ওয়াদা করলাম মিরাকে ডির্ভোস দিবো। কথাটা বলার সময় পিচ্চির মুখটা বার বার চোখের সামনে ভেসে ওঠছিলো!

এদিকে সাথীকে ওর বাসায় পৌঁছে দিয়ে। ফোনটা বের করে দেখি,৭৩ টা মিসকল। ফোন সাইলেন্ট ছিলো তাই বুঝতে পারিনি। তারপর সন্ধ্যায় বাসায় এসে দেখি, মিরা কোথাও নেই। তখন মা বললো ফ্রেশ হয়ে আসতে।

তারপর আমি ফ্রেশ হওয়ার জন্য যখনি, বার্থরুমের দরজা ধাক্কা দিয়েছি তখনি এক চিক্কার!

—ওমাগো ভূত!!!!!

মিরার চিক্কারে আমি মিরার দিকে তাকাতেই দেখি, পিচ্চিটা শাওয়ার নিচ্ছে শরীরে কাপড় নেই এক দৌঁড়ে বাথরুম থেকে বের হয়ে সোজা রুমে গিয়ে বসে আছি। কিছুক্ষণ পর দেখি পিচ্চিটা ভেজা চুলে, আয়নার সামনে গিয়ে বসলো। শাড়িটা কোনরকম শরীরে পেঁচিয়েছে। আমার শরীরটা রাগে ফাটতেছে! বার্থরুমের ঘটনার কথা মনে করে তাই গিয়ে জিজ্ঞেস করলাম।

–ওই পিচ্চি মেয়ে, বাথরুমে শাওয়ার নিলে দরজা লর্ক করে নিতে হয় না?

—হুম নিতে হয় তো, আমি তো জান্নাতকে বলেই দিয়েছি, আমি দরজা বন্ধ করে শাওয়ার নিতে পারি না ভয় হয় আমার। আর ওকে পাহাড়া দিতে বলেছি, যেন কেউ না আসে।

তখন আমি মনে মনে বলছি, এই জনই তো ডেবিল বোনটা ওয়াশরুমে যেতে দেখে মুচকু মুচকি হাসলো। এদিকে পিচ্চিটার দিকে চেয়ে দেখি,পিচ্চিটা চোখে কাজল দিতে গিয়ে চোখের নিচে লেপ্টে ফেলেছে। যতটা না রাগ হচ্ছে তাঁর চেয়ে বেশি হাসি পাচ্ছে।

—এই গোমরা-মুখো হাসো কেন?
আমি কি করবো? কখনো কোনদিন সাজিনি। কিন্তু তুমি আমাকে আঁদর করো না, ভালোবাসো’না, তাই আমার লক্ষী ননদিনীটা আমাকে এভাবে সাজতে বলেছে। কিন্তু আমি তো কাজল দিতে পারি না। দিয়ে দাও না। সেদিনের মতো শাড়ি পড়িয়ে দাও না প্লিজ।

পিচ্চিটার কথা শুনে আমার খুব রাগ হচ্ছে। বাবা যে কি দেখে পিচ্চিটাকে আমার ঘাড়ে চাপিয়েছে।

–এই পিচ্চি আরেকবার শাড়ি, এবং কাজল দিয়ে দেওয়ার কথা বললে ঘর থেকে বের করে দিবো। (আমি বললাম)

পিচ্চিটা, কথাটা শুনে সাথে সাথেই কান্না করে দিলো। আর হেঁচকি দিতে দিতে বললো।

—আমাকে তাঁড়িয়ে দিয়ো না, তুমি তাঁড়িয়ে দিলে আমি কোথায় যাবো? আমার যে কেউ নেই তুমি ছাড়া?

তখন আমি কোন জবাব না দিয়ে রুম থেকে বের হয়ে গেলাম। মা খাবার বেড়ে দিলে যখনি খাবার মুখে দিবো তখনি বললো।

—কাব্য বাবা, মিরা মা’টা খায়নি, মিরা বলছিলো, তুই আসলে খাবে! “জানিস বাবা ছোট মেয়ে তো সারাদিন এত করে বলার পরেও কিছু খায় নি” মেয়েটার মুখের দিকে তাকানো যায় না। ওকে নিয়ে একসাথে খা”

মা’র কথা শুনে, নিজের অজান্তেই মনটা খারাপ হয়ো গেলো। পিচ্চি মেয়ের পাগলামী দেখে।

–আচ্ছা মা তুমি বসো আমি মিরাকে নিয়ে আসছি।

এই বলে রুমে গিয়ে দেখি পিচ্চিটা ডেসিং টেবিলের সামনে বসে এখনো কাঁদছে।

–এই মিরা তুমি খাওনি কেন?

—স্বামীকে ছাড়া কোন স্ত্রী খায়?

–আচ্ছা চলো একসাথে খাবো। আর হ্যাঁ আজকের পর খাওয়ার সময় হলে খেয়ে নিবে, আমার জন্য অপেক্ষা করতে হবে না।

—নাহ্ আমি খাবো না। তুমি একটা পঁচা, আমাকে আঁদর করো না। খেতে পারি, তাঁর আগে আমার চোখে কাজল দিয়ে দিবে। কালকের মতো শাড়ি পড়িয়ে দিবে। জানো তোমার স্পর্শ আমার অঙ্গজুড়ে থাকে। তুমি বুঝোনা তোমার স্পর্শে আমি কতটা শিহরিত।

তারপর নিজের অনিচ্ছা সত্ত্বেও পিচ্চিটার চোখে কাজল, এবং শাড়ি পড়িয়ে দিলাম। রাতে একসাথে খেয়ে, একটা বালিশ আর চাদর নিয়ে আমি ফ্লরে সুয়ে পড়লাম পিচ্চিটাকে খাটে শুতে দিয়ে।

এদিকে পিচ্চিটা খাটে শুয়ে থাকার জন্য বললেও ধমক দিতেই আর কিছু বলেনি। এদিকে রাতে ঘুমিয়ে গেছি হঠাৎ বুকটা ভারী ভারী লাগছে চোখ খুলতেই ভূত দেখার মতো ভয় পেলাম। কারণ মিরা আমার বুকে শুয়ে আছে, চাঁদের আলো জানালার কাচ ভেদ করে পিচ্চিটার মুখে এসেভপড়ছে। এতো মায়াবতী লাগে কোন মেয়েকে চাঁদের আলোয়। না দেখলে হয়তো আমার অজানায় থেকে যেতো। তখন হঠাৎ সাথীর কথা মনে হতেই পিচ্চিটাকে বুক থেকে সরিয়ে দেওয়ার জন্য ধাক্কা দিতেই আরো শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো।

–এই কি করছো, ওঠো বলছি।

কিন্তু মিরা ঘুমের মাঝেও চুখ খুলতে খুলতে বললো।

—আমার স্বামীকে জড়িয়ে ধরে আছি। এতে খারাপের কি আমার অধিকার আমি আদায় করে নিবো।

তখন আমি মিরাকে বুক থেকে ছাড়িয়ে কষে একটা খাপ্পর দিয়ে বলতে লাগলাম।

–তোকে বলেছি না, আমাকে স্বামী না ভাবতে, কেন জড়িয়ে ধরে থাকিস, আমি বলছি না তোকে ডির্ভোস দিয়ে দিবো।

কথাটা বলতেই খাটে চলে গেল মিরা। আমি আবার গভীর ঘুমে হারিয়ে গেলাম।

এদিকে ঘড়ির কাটা ১ টা বাজতেই মিরা ঘুম থেকে ওঠে, সুন্দর ভাবে ওযূ করে দু’ রাকাত নামায শেষ করে, মোনাজাত ধরে বলতে লাগলো।

“হে পরওয়ার দেগার, আমার আল্লাহ্।
তুমি তো সর্বশক্তিমান, তোমার হুকুম ছাড়া গাছের একটা পাতাও নড়ে না, তুমি ছাড়া তো আমার কষ্ট বোঝার মতো কেউ নেই।

এই মধ্যরাতে পৃথিবীর সবাই যখন গভির ঘুমে,,
তখন তোমার অভাগী বান্দীটা তোমার দরবারে দুটি হাত তুলে ধরেছে তুমি কি দেখ না আল্লাহ।
আমি আমার স্বামীকে কতটা ভালোবাসি। আমার বুক থেকে আমার স্বামীকে তুমি কেঁড়ে নিয়ো না। তোমার পবিএ কালাম পড়ে বিবাহ নামক পবিএ বন্ধনে আবদ্ধ হয়েছি, এ বাঁধন ছিন্ন করো না। বাঁচবো না আল্লাহ্।
ও আল্লাহ আমার স্বামীর পায়ের নিঁচের জায়গা টুকু আমাকে ভিক্ষা দাও।

কথাটা বলে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদতো লাগলো মিরা।

পরের দিন সকালে মায়ের ডাকে ঘুম ভাঙলো।
বাবা আজকে অফিসে যেতে না বলে মিরাকে কলেজে ভর্তি করিয়ে দিতে বললো!

আমি বাবার কথায় না করতে পারি না, তাই অনিচ্ছা থাকা সত্ত্বেও ডিস্টার্বকে নিয়ে বাইকে করে রওয়ানা দিলাম!

তারপর কলেজের গেটে বাইক দাঁড় করানোর সাথে সাথেই যা দেখলাম তা দেখার জন্য আমি একেবারেই প্রস্তুত ছিলাম নাহ্। কিন্তু এখন আমি কি করবো ভেবে পাচ্ছি না কিছু,, সাথী কেমন করে যেন তাকিয়ে আছে আমার দিখে। মনে হচ্ছে এখনি বৃষ্টি নামবে।

তারপরেও আমি সাথীকে না দেখার ভান করে মিরাকে নিয়ে কলেজের ভিতর ডুকে পড়লাম। এবং মিরাকে কলেজে ভর্তি করে দিয়ে যখনি কলেজ গেট পার হয়েছি তখনি দেখি কলেজের পাশে রেললাইনে একটা মেয়ে দাঁড়িয়ে আছে।

আর মিনিট দশেক পর ট্রেন আসবে।

বুঝতেছিনা কি করবো, বাইক নিয়ে একটু কাছে যেতেই বুকটা কেঁপে ওঠলো। কারন এ আর কেউ না সাথী রেললাইনের মাঝখানে দাঁড়িয়ে আছে।

ট্রেন আসার শব্দ হচ্ছে। মিনিট পাঁচেক এর মাঝে ট্রেন আসবে। এদিকে আমি সাথীকে ডাকছি, সাথী চোখ বন্ধ করে আছে। আমার বাইক রেললাইনের সাইডে পাথরের সাথে ধাক্বা লেগে হঠাৎ নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে পড়ে যায়, আর বাইক পড়ে আমার গায়ের উপর।
আমি খুব করে চেষ্টা করছি আমার উপর থেকে বাইক সরাতে। কিন্তু পাচ্ছিনা।

এদিকে দেখা যাচ্ছে ট্রেন প্রায় কাছে এসে পড়েছে।
বুকের হার্টবির্ট বেড়ে যাচ্ছে! সাথীকে গলা চেঁচিয়ে ডাকছি তারপরেও সাথী শুনছে না।

নাহ্ এ দৃশ্য আমি সহ্য করতে পারবো না, মনে মনে আল্লাহ্ তায়ালার কাছে সাহায্য চাচ্ছি। চোখ দিয়ে নীরবে অশ্রু ঝরছে, হাটু কেটে রক্ত বের হচ্ছে!
বুকটা ফেঁটে যাচ্ছে। পাগলের মতো আল্লাহকে ডাকছি, আর বাইক সরাতে চেষ্টা করছি। মনে মনে বলছি, হে আল্লাহ্ আমাকে শক্তি দাও বাইক সরানোর,
আমার হৃদয়টা রেললাইনের মাঝে।

হে পরম করুণাময় রহম করো তোমার বান্দাকে। বলেই বাইক সরানোর জন্য চেষ্টা করছি। তারপর আল্লাহর নাম নিয়ে বাইকে জোড়ে একটা ধাক্বা দিতেই বাইক সরে যায় আমার উপর থেকে। এদিকে ট্রেন প্রায় সাথীর কাছে এসে পড়েছে। আমি তখন দৌড়ে গিয়ে সাথীকে রাস্তা থেকে সরিয়ে, তাড়াতাড়ি করে বুকে জড়িয়ে নিলাম।

সাথী কাঁদছে, এদিকে এখনো আমার হাটু থেকে রক্তবের হচ্ছে। সাথী কান্না করে করে আমার শার্ট ভেজিয়ে দিচ্ছে।

তারপর সাথীকে বুক থেকে ছাড়িয়ে, কষে একটা থাপ্পর দিয়ে বললাম”

–এ পাগলী কেন এমন পাগলামী করছো? জানো না তোমাকে ছাড়া আমি নিজেকে ভাবতে পারি না! কেন মরতে যাচ্ছিলে?

—আমি তো সেই কবেই মারা গিয়েছি, মারা গিয়েছি তখনই যখন শুনেছি, আমার ভালোবাসার মানুষ অন্য মেয়েকে বিয়ে করেছে।
আমার চোখ দিয়ে আষাড়ো শ্রাবণ ঝরণা ধারা নেমেছিলো। বিরহের অনলে প্রতিনিয়ত পুড়ছি আমি।
আমার দেহটা ছাড়া আত্মাটা সেই কবেই মরে গেছে!
জানো আজ যখন তোমার বাইকের পিছনে ওই মেয়েটাকে দেখলাম কলিজাটা ফেঁটে যাচ্ছিলো আমার।
মনে হচ্ছে ধম বন্ধ হয়ে মারা যাবো।
কাব্য আমি তোমার পাশে অন্য কাউকে সহ্য করতে পারি না! কি করবো তোমাকে অন্য একজন জড়িয়ে ধরে থাকবে, আর আমি এটা কিভাবে দেখবো?
তাই ট্রেনের নিচে পড়ে তুমি হীনা এই জীবন নিঃশেষ করতে চেয়েছিলাম।
কেন বাঁচালে আমাকে, আমি যে তিলে তিলে শেষ হয়ে যাচ্ছি!
বলতে পারো কেন এতটা ভালোবাসার পরেও তুমি আমার নও? কেন আজ তোমার বুকে অন্য জনের ঠাঁয়, যে স্বপ্নগুলো তোমায় নিয়ে দেখতাম সে স্বপ্নগুলো অন্য কেউ নিয়ে দেখে? প্লিজ তুমি আমাকে গলা টিপে হত্যা করো নয়তবা তোমায় পায়ের নিচে আমাকে একটু জায়গা দাও! যানো কাব্য তুমি বিয়ে করার পর একটা রাতও আমি ঘুমাতে পারি না! প্রতিরাতে কেঁদে কেঁদে বালিশ ভিজিয়েছি! তোমায় বুকে একটু জায়গা দিবে? একটু জড়িয়ে নাও না প্লিজ! নাও না, নাও না প্লিজ কাব্য।

(কান্না করতে করতে কথা গুলো বললো সাথী)

সাথীর মুখে এমন কথা শুনে বুকের বা পাশটা চিন চিনে ব্যাথা করছে। চোখ দিয়ে টুপটাপ করে পানি গাল বেয়ে গড়িয়ে পড়ছে। কিছু ভাবতে পারছি’না খুব ইচ্ছে করছে, সাথীকে জড়িয়ে দরে বলি, “সাথী খুব ভালোবাসি তোমায় নিজের থেকেও বেশি। মনে হচ্ছে কথাটা বললে বুকের ব্যাথাটা কমবে। তাই সাথীকে হেচকা টান দিয়ে শক্ত করে বুকে জড়িয়ে নিলাম। কপালে একটা চুপু দিয়ে বললাম”

–বড্ড ভালোবাসি, খুব বেশি ভালোবাসি তোমায় হয়তো নিজের জীবনের চেয়ে বেশি!

পাগলীটা কেঁদে কেঁদে শার্ট ভিজিয়ে ফেলছে! পাগলীটা আরো শক্ত করে জড়িয়ে আছে আমায়! এদিকে সাথীকে বললাম,

–খুব শ্রীঘই আমরা বিয়ে করছি! মিরাকে খুব তাড়াতাড়ি ডির্ভোস দিচ্ছি!

সাথী ডির্ভোসের কথা শুনে আবারো আমাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে কপালে চুপু দিয়ে চলে গেলো!

এদিকে ফোনের দিকে তাকিয়ে দেখি ২ টা ভেজে গেছে! তার মানে ৩০ মিনিট আগে কলেজ ছুটি হয়ে গেছে! তারপর তাড়াতাড়ি বাইক স্ট্যার্ড দিয়ে কলেজের সামনে যেতেই অবাক হয়ে গেলাম! অনেক গুলো মেয়ে জমা হয়ে আছে। কাছে গিয়েই দেখি, মিরা ছোট বাচ্চার মতো কাঁদছে! আর কয়েকটা মেয়ে বোঝাচ্ছে।

আমি কাছে গেতেই মিরা দৌড়ে এসে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে কাঁদতে বললো।

—আমি আর কলেজে আসবো না, তুমি আমায় ভালোবাসো না! কখন কলেজ ছুটি হয়েছে! ছেলেরা কিরকম ভাবে আমার দিকে তাকায়! আমার ভয় লাগেনা সবাইকে বলে দিছি,আমার দিকে তাকালে চোখ তুলে ফেলবে আমার বর! ঠিক বলেছি তো?

এদিকে মিরার কথা শুনে সবাই হাসছে মুখ ধরে। পাস থেকে একটা মেয়ে বলে ফেললো।

—ভাইয়া পৃথিবীতে খুব কম ছেলেই আপনার স্ত্রীর মতো বউ পায়। একটা মেয়ে যে স্বামীকে এতো ভালোবাসতে পারে, সারাটা দিন ক্লাসের মাঝে আপনার কথায় বলেছে। আপনি নিতে আসতে দেরী করেছেন বলে, ছোট-ছোট বাচ্চা মেয়ের মতো কাঁদতেছে। হাসি ও পাচ্ছে আবার কান্নাও আসছে, এখনকার যুগে এমন মেয়েও পাওয়া যায়!

তারপর আমি সবার কাছ থেকে মিরাকে নিয়ে বাইকে উঠাতেই মিরা শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো! মনে হচ্ছে খুব ভয় পাচ্ছে।

তারপর মিরাকে নিয়ে বাসায় আসার পর, মাকে কান্না করে করে সব বললো! এদিকে রাগে আমার শরীর ঘ্যান ঘ্যাণ করছে। তারপর দুপুরে খেয়ে বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিতে চলে গেলাম!

আড্ডা দেওয়া শেষ করে রাত নয়টায় সময় ফোন বের করে দেখি, বাবা ৫ বার ফোন দিয়েছে অন্য দিকে, মিরার নাম্বার থেকে ১০০ + ফোন এসেছে!
তখন তাড়াহুড়া করে বাসায় গিয়ে দেখি বাবা, দরজায় দাঁড়িয়ে আছে।

বাবার সামনে যেতেই বাবা বললো।

—ঘরে নতুন বউ রেখে, বাহিরে কোন ছেলে থাকে?
আর যদি এমন হয় আমার বাড়ি থেকে বের হয়ে যাবি!

তখন আমি কিছু না বলে রুমে গিয়ে শুয়ে পড়লাম! কিছুক্ষর পর দেখি, মিরা আমাকে ডাকছে!

–এই ডাকতেছো কেন? কি হয়েছে?

—তুমি খাবে না? বাবা খুব বকা দিয়েছে তাই না!
এই নাও হা করো, আমি খাইয়ে দেয়!

মিরা কথাটা বলে মুখের কাছে খাবার তুলে দিতেই, একটা থাপ্পর বসিয়ে দিলাম! সাথে সাথেই খাবারের প্লেটটা ফ্লরে ফেলে দিলাম! তারপর বললাম।

–এই তুই কি চাস হু?
আমার জীবনটা তো নরক বানিয়ে দিয়েছিস। আমার বুক থেকে আমার ভালোবাসার মানুষটাকে সরিয়েছিস। এখন আমার বাবার কাছ থেকে আমাকে দূরে সরিয়ে আমার সমস্ত সম্পদ তোর করার প্ল্যান করছিস। আমি তুকে এ মাসেই ডির্ভোস দিবো!

(একদমে কথাটা বলে নিলাম! তাখিয়ে দেখলাম মিরার ঠোঁট কেটে রক্ত বের হচ্ছে)

—জানো তোমার সাথে খাবো বলে আমি এখনো খায় নি! ক্ষমা করে দিয়ো প্লিজ।
এতিম তো! এতিম খানায় বড় হয়েছি আমি!
তাই মা-বাবার আঁদর পায়নি। তোমার মা-বাবাকে নিজের বাবা-মা করে নিয়েছিলাম। শুধু ভালোবাসা চেয়েছিলাম আর কিছুই না। এতিম হয়ে জন্ম নিলেও সম্পদের প্রতি কোন মোহ নেই আমার!

আমি মিরার দিকে চেয়ে দেখি মিরা কাঁদছে, চোখগুলি লাল হয়ে গেছে। ন্যাঁকা কান্না দেখে শরীরটা রাগে ফেটে যাচ্ছে। দুনয়নে দেখতে মন চাচ্ছে না মিরাকে।
এই এতিম মেয়েটার জন্যই আজ, সাথী মরতে বসেছিলো!

–এই তুই এখানে কাঁদবি না? প্লিজ তোর অলক্ষলে চেহারা নিয়ে আমার চোখের সামনে থেকে দূর হয়ে যা প্লিজ।

কথাটা বলে শুয়ে পড়লাম!

এদিকে মিরা সুন্দর করে অযু করে, শ্বশুরের দেওয়া কুরআনটা পড়ে, নামাযে দাঁড়িয়ে গেলো। নামায শেষ করলো কেঁদে কেঁদে। নামায শেষ করে আজকেও মোনাজাত ধরে আল্লাহর কাছে অনেকক্ষণ কাঁদলো! তারপর মোনাজাত শেষ করে রুমে গিয়ে শুয়ে পড়লো।

ফজরের নামাযের আযান শুনে ঘুম ভাঙতেই আমি অবাক হলাম। মিরা মেয়েটাকে রাতে এতো বকা দেওয়ার পরেও আমাকে জড়িয়ে ধরে শুয়ে আছে!
মন চাচ্ছে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেয়!

–এই কি হচ্ছে ওঠো?

—আর একটু ঘুমাই!

এই বলে আরো শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো।

এখন আমার ধৈর্য্যের বাঁধ ভেঙে যাচ্ছে! জোরে একটা ধাক্কা দিয়ে বিছানা থেকে ফেলে দিলাম।

—“আহ্ করে চিল্লানি দিয়ে ওঠলো মিরা!

তারপর আমি বিছানা থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে এসে দেখি মিরা খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে হাটছে!

—মিরা মা তোমার কি হয়েছে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে হাটছো কেন? (মা)

—আম্মু রাতে ঘুম থেকে উঠে পাজরে ব্যাথা পাচ্ছি!

কথাটা বলে করুণভাবে আমার দিকে তাকালো মিরা।
এখন নিজেকে অপরাধি মনে হচ্ছে আমার! তারপরেও আমি কিছু বললাম না।

পরের দিন বাবা আমাকে আর মিরাকে হানিমুনে পাঠানোর ব্যবস্থা করে দিলো। আর আমি সাথীকে বলে সব রেডি করে রেখেছি! আমাদের সাথে সাথীও কক্সবাজার যাবে। সবাই জানবে আমি হানিমুন করতে যাচ্ছি মিরার সাথে কিন্তু না, আমি হানিমুন করবো সাথীর সাথে।

সাথীকে, এসব বলে ফোন রাখতেই পিছন দিকে তাকাতেই দেখি মিরা সিলিং ফ্যানের সাথে, ঝুলছে।
.
.
চলবে……………………♥♥

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here