পিচ্চি_বউ,part_7,8

0
2742

#পিচ্চি_বউ,part_7,8
#Writer_Kabbo_Ahammad
#part_7

-: পরের দিন সকালবেলা টেলিভিশন অন করতেই আমি যা দেখলাম তা দেখার জন্য আমি মোটেও প্রস্তুত ছিলাম না।

“কারণ খবরে দেখলাম গতকাল রোড একসিডেন্টে সজিব আর সাথী দুজনেই মারা গিয়েছে। মনে মনে ভাবলাম, আল্লাহতালার বিচার সবচেয়ে বড় বিচার। যার হাত থেকে কারো রেহাই নেই।

পরের দিন, মিরার পছন্দের নীল শার্টটা বের করার সময় আলমারি খুলে একটা ডাইরি পেলাম।

“ডাইরিটা হাতে নিয়েই বুঝতে পারলাম এটা মিরার লেখা ডাইরি।

“না পড়া সেই ডায়রিটার”
প্রথম পাতা উল্টাতেই নীল কালিতে লিখা দেখলাম!

“গতকাল আমার বাসর রাত ছিলো। বাসর রাত সব নারীর জীবনেই শেষ্ট একটি রাত থাকে, কিন্তু আমি বাসর রাতে স্বামীর হাতের স্পর্শে, ঠোঁটের রক্ত ঝরিয়েছি।

মা-বাবাকে হারিয়ে, ভেবেছিলাম স্বামীর পায়ের নিচেই বাকি জীবনটা কাটিয়ে দিবো, কিন্তু আল্লাহ যার কপালে সুখ রাখে না। সে কীভাবে সুখী হবে!

প্রতিদিন মাঝরাতে সবাই যখন ঘুমিয়ে থাকতো, আমি অভাগী একা একা ঘুম থেকে উঠে পড়তাম! আল্লাহর কাছে মাঝরাতে স্বামীকে চেয়ে কান্না করতাম।

যেদিন আমার স্বামীর সাথে আমার প্রথম যৌনসভ্রম হলো, সেদিন সব কষ্ট ভুলে গেয়েছিলাম। মনে মনে আল্লাহর দরবারে লক্ষ কোটি শুকরিয়া জানিয়েছিলাম আল্লাহতালা আমার বরকে আমার করে দিয়েছে।

কিন্তু পরের দিন যখন আমার স্বামী জন্মনিয়ন্ত্রণ পিল নিয়ে এসে আমাকে খেতে বলে, মুর্হূতে আমার পৃথিবীটা উলট-পালট হয়ে যায়। আমার স্বামী বাধ্য করে আমাকে জন্মনিয়ন্ত্রণ পিল খাওয়ার!

আমি আল্লাহর কাছে কত কেঁদেছি। সন্তানটাকে গর্ভধারণ করার জন্য। কিন্তু……….

খুব কষ্ট হতো, বুকের ভেতরটা ফেটে কান্না আসতো যখন দেখলাম “আমার স্বামী সাথী নামে মেয়েটার সাথে অবৈধ কাজ করে! আর নিজে যখন তাদের কুকর্ম ঢেকে রাখার জন্য দরজা টেনে দেয়। বাবাকে বলি, যে সাথী আমার ফ্রেন্ড! নিজের স্বামীকে বাঁচাতে নিজের ভালোবাসার অধিকার বির্সজন দিয়েছি!

সবচেয়ে বেশী কষ্ট লেগেছে সেদিন, যেদিন শুনেছি আমাকে মারার জন্য আমার স্বামী আর সাথী প্ল্যান করছে, সব জেনেও মনকে এ বলে সান্ত্বনা দিয়েছি যে, কাব্য যদি আমার জীবনের বিনিময়ে সুখি হয় তাহলেই আমি স্বার্থক!
.
.
.
.
ডাইরিটা পড়ে, আমি আর নিজেকে ঠিক রাখতে পারলাম না। আমি পিছন দিকে তাকাতেই দেখি, মিরা আমার পাশে দাঁড়িয়ে কান্না করছে!

–এই মিরা কাঁদছো কেন? আমি তোমাকে কষ্ট দিয়েছি, তার ফল ভোগ করছি। (আমি বললাম)

—এই কাব্য কি হয়েছে তোর? কার সাথে কথা বলছিয়া? (আম্মু)

–আম্মু কথা বলো না, দেখো না মিরা কান্না করছে। আম্মু আমি ওকে খুব কষ্ট দিয়েছি। (আমি)

—কোথায় মিরা? আর তুই কেন মিরাকে কষ্ট দিতে যাবি?(আম্মু)

তারপর আমার আর কিছুই মনে নেই।

পরেরদিন মা-বাবা আমাকে হসপিটালে নিয়ে গেলো। এখন আমার কোন চিন্তা নেই কারন আমি এখন মিরাকে সাথে নিয়েই ঘুমাই!

সালার ডাক্তার নাকি বলে আমি পাগল হয়ে গেছি! সালার পড়ালেখা করে নিজে পাগল হয়েছে, এখন আমাকে পাগল বলে কত্তোবড় সাহস।

আরেকবার যখন পাগল বলছে তখন, গলা ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিয়েছি।

তারপর আমাকে জোর করে একটা রুমে আকঁটে রেখেছে। এখন রুমে শুধু আমি আর মিরা। তারপর আমি একটা নার্সকে জিজ্ঞেস করলাম।

–আমি এখন কোথায়?

—আপনি এখন পাবনায় আছেন, আপনার বউ মিরার সাথে!(নার্স বললো)

কখাটা বলে একটা কিসের যেন ইনজেকশন আমাকে দিয়ে দিলো! তারপর আমি হারিয়ে গেলাম ঘুমের রাজ্যে
.
.
.
সকালবেলা ঘুম থেকে উঠে দেখি মিরা আমার দিকে চেয়ে চেয়ে হাসছে। সাথে বাবা-মাও আসছে। তারপর আমি বাবাকে বললাম।

–বাবা আমার এখানে থাকতে ভালো লাগে না! আমাকে তোমাদের সাথে নিয়ে চলো। সাথে তোমাদের বউমা মিরাকেও নিয়ে চলো।

কিন্তু আম্মু-আব্বু কেউ কোন কথা বলছে না। শুধু কাঁদছে, তাই আমি আবারো প্রশ্ন করলাম।

–ও বাবা তোমরা কাঁদছো কেন? আমাকে এখান থেকে নিয়ে যাবে না? জানো বাবা এখানে কেউ আমার সাথে কথা বলে না। শুধু মিরা ছাড়া, এখানে শুধু মিরা আমার সাথে কথা বলে আর কেউ না। ও বাবা আমাকে নিয়ে চলো না। আমি থাকবো না এখানে।

(কথাগুলো বলেই কাঁদতে লাগলাম।)

কিন্তু বাবা কিছু না বলে মাকে নিয়ে চলে গেলো। তারপর একটা নার্স এসে ইনজেকশন দিয়ে গেলো! তারপর আর আবারো সেই ঘুমের রাজ্যে, আর কিছু মনে নেই। আমি সব সময় শুধু মিরার সাথেই কথা বলতাম।
.
.
.
.
৫ বছর পর।
আজ মা-বাবা আমাকে নিতে আসছে। এখন মিরাও আমার সাথে আর কথা বলে না। আমি জানি মিরা মারা গেছে। তারপর মা-বাবা আমাকে বাসায় নিয়ে এসে বললো।

—কাব্য বাবা তুমি পাঁচ বছর পাগল হয়ে পাবনা মানসিক হসপিটালে ছিলে!
আর এ ৫ বছরে আমাদের অনেক পর্রিবতন হয়ে গেছে! আমরা আজ নিঃস্ব। ব্যবসাতে ক্ষতি হয়েছে, ব্যাংকের লোকদের ঋণ পরিশোধ করতে বাড়িটাও বিক্রি করে দিয়েছি! এখন এই বাসাটাতে ভাড়া আছি। (আব্বু)

বাবার কথাগুলো শুনে আমার নিজের অজান্তেই চোখের কোণে পানি চলে আসলো, আমার বাবা এ বয়সে মানুষের অফিসে কাজ করে।

তারপর আমি মনে মনে ভাবলাম, আমার কোন না কোন একটা জব করতে হবে! যেই ভাবা সেই কাজ, কয়েক জায়গাই আবেদন করলাম সাথে একটা প্রাইভেট প্রতিষ্টানে শিক্ষকতা করার জন্যেও আবেদন করলাম। সপ্তাহখানেক পর, নোটিশ আসলো, সে প্রতিষ্টানে আমাকে জয়েন করতে বলেছে।

আর এভাবে দিনগুলো ভালোই কাটছিল, কিন্তু প্রতিরাতেই মিরার স্মৃতি গুলো আমাকে ঘুমাতে দেয় না। মিরার সেই দুষ্টমি গুলো আজো আমাকে কাঁদায়। প্রতিরাতে আমি মিরার ছবি বুকে নিয়ে ঘুমায়! খুব কষ্ট হয়, মাঝরাতে মোনাজাতে শুধু একটা কথায় বলি, আল্লাহ্ আমার স্ত্রীকে ভালো রেখো!

এদিকে একদিন আমি স্কুলে একটা বাচ্চাকে দেখে খুব অবাক হয়ে গেলাম! কি সুন্দর করে হাসে ঠিক মিরার মতো! কি মায়াবি চাহনী, মনে হচ্ছে এ যেন মিরার প্রতিচ্ছবি তার মাঝে দেখতে পাচ্ছি। তারপর আমি মেয়েটাকে ডাক দিয়ে বললাম।

–তোমার নাম কী মামনী?(আমি)

—আসসালামু আলাইকুম!(পিচ্চি মেয়েটি)

–ওয়ালাইকুম আসসালাম।

উওরটা দিয়ে মনে মনে ভাবতে লাগলাম, এতটুকু একটা বাচ্চা মেয়ে হাই, হ্যালো না বলে সালাম দিলো।

—আপনি কি জানেন না? কারো সাথে কথা বলতে হলে, প্রথমে সালাম দিয়ে কথা শুরু করতে হয়!
আর আমার নাম “তাসনিয়া কারিমা রাইসা”
(নামটা শুনে বুকটা কেমন যেন কেঁপে ওঠলো)
“আচ্ছা আপনি আমাদের নতুন টিচার”?

–হ্যাঁ মামনী আমি তোমাদের নতুন টির্চার!

—এই নাও চকলেট, আমরা আজ থেকে ফ্রেন্ড কেমন!?

–হুমম ফ্রেন্ড।

—তুমি আমার চকলেট নিলে, আমাকে পাপ্পি দিবে না? তুমি এতো কিপটে কেনো?তোমার সাথে আড়ি। কান ধরো, কান ধরে বলবে, রাজকন্যার সাথে আর কোনদিন অপরাধ করবো না! তুমি জানো না, রাইসা নামের অর্থ হলো “রাণী”। (রাইসা)

–মামনী আমি না তোমার টির্চার, টির্চারকে কান ধরতে বলা লাগে?

—টির্চার না ছাই, তুমি এখন আমার বন্ধু, কিছুক্ষণ আগে চকলেট দিয়ে বন্ধু বানিয়েছি। তোমার টির্চারগিরি ক্লাসে দেখাবে। এখন কান ধরো, নইলে ফাইন ধরবো!

(কথাগুলো বলে, মুখে চেপে হেসে দিলো)

আমি কি বলবো ঠিক ভেবে পাচ্ছি না, খুব হাসি পাচ্ছে, মেয়েটার চোখের দিকে তাকিয়ে দেখি, মেয়েটা রাগি লুক নিয়ে তাঁকিয়ে আছি!

—কি হলো আমার কথা বুঝোনি? বন্ধু হলে কেন? বন্ধু হয়েছে যেহেতু, কান ধরে বলো আর এমন অপরাধ হবে না। যদি কান না ধরো তাহলে! দাঁত পড়ে যাবে। আর দাঁত পড়ে গেলে বিয়ে হবে না!

তারপর আমি রাইসার কথা শুনে কান ধরে বললাম।

–আচ্ছা আমার ভুল হয়ে গেছে, আর এমন ভুল হবে না না।

বলেই মেয়েটাকে টান দিয়ে কোলে নিয়ে, গালে মুখে চুমু দিয়ে বললাম।

–মামনী এখন হয়েছে?

—হুমমম,বেশ হয়েছে। তুমি সত্যিই অনেক ভালো।

তখন হঠাৎ পাশ থেকে দশ বছরের মতো একটা মেয়ে এসে বললো।

—রাইসা আব্বু এসেছে চলো। দাঁড়িয়ে আছে।

—ও আপু তুমি আমার ফ্রেন্ড এর সাথে পরিচিত হয়ে নাও। এই যে স্যার এটা আমার আপু রিচি। রিচি আপু আমার স্যারকে সালাম দাও!

—আসসালামু আলাইকুম, আমি রিচি। স্যার আজকে আসি।

বলতেই হঠাৎ দেখি, একটা ভদ্রলোক এসে রাইসাকে কোলে নিলো! রাইসা বাবাই বাবাই বলে লোকটাকে জড়িয়ে ধরলো!

তারপর লোকটা রাইসা আর রিচিকে নিয়ে গাড়ি করে চলে গেলো। মনে মনে ভাবলাম, আজ যদি মিরা বেঁচে থাকতো, তাহলে আমাদের সন্তানটাও ঠিক এতটুকু বড়ই হতো।

তখন নিজের অজান্তেই চোখের পাতাটা ভিজে ওঠলো।
আর সাথে সাথেই মিরার চাঁদমুখটা ভেসে উঠছে, স্মৃতিপটে।
.
.
.
এদিকে বাসায় এসে দেখি, বাবা অসুস্থ!
তারপর বাবাকে নিয়ে হসপিটালে গেলাম! ডাক্তারের রুমে গিয়ে স্কুলের সেই ভদ্রলোকটাকে। লোকটাকে দেখলাম কেমন বিচলিত ভঙ্গিতে বসে আছে। তারপর ডাক্তার লোকটিকে বললো।

—রফিক সাহেব, যদি ও নেগেটিভ রক্ত না পাওয়া যায় চারঘন্টার ভেতর তাহলে আপনার মেয়েকে বাঁচানো সম্ভব না!

এদিকে আমি একজন ডাক্তার কে নিয়ে বাবাকে দেখালাম। ডাক্তার বললো “তেমন কিছু না, পেশারটা একটু বেড়েছে।

তারপর আমি বাবার বেড থেকে বের হয়ে, পাশের বেড়ের দিকে তাকাতেই বুকটা কেমন যেন হু হু করে কেঁদে ওঠলো! কি মায়াবি মুখটা, কেমন যেন অন্ধকারে ঢাকা পড়ে গেছে। মুখে অক্সিজেন মাক্স লাগানো। মনে হচ্ছে, এ যেন আমার নিজের আপন কেউ। আর কেন আমার এতটা কষ্ট হচ্ছে মেয়েটাকে দেখে, বুকের ভেতর চিনচিনে ব্যাথা করছে। তারপর আমি ডাক্তারের রুমে গিয়ে বললাম।

–মেয়েটার কি হয়েছে?

তখন পাশ থেকে লোকটি বললো।

—গতকাল স্কুল থেকে আসার সময় আমাদের গাড়ি নিয়ন্ত্রণ হায়িয়ে এক্সিডেন্ট হয়। রাইসা মামনীর প্রচুর ব্লাড যায়, মাথায় অনেক আঘাত পেয়েছে। তাঁর মা, মেয়ের খবর শুনে অজ্ঞান হয়ে পড়ে আছে। মেয়েটার যদি কিছু হয়ে যায় তাহলে তাঁর মা বাঁচবে না!
যদি এখন রক্ত না পাওয়া যায় আল্লাহ্ যে কি করবেন? কথাটা বলেই কেঁদে দিলো।

এদিকে এক নার্স এসে বললো।

—স্যার চট্রগ্রামের আশে-পাশে প্রায় সব ব্ল্যাডব্যাংকে খবর নিয়েছি, কিন্তু কোথাও রক্ত পাওয়া গেলো না! এদিকে পেশেন্ট এর অবস্থাও ভালো না! জানিনা কি হবে?

নার্সের কথাটা শুনে, রফিক সাহেব কেঁদে দিলেন। আমার কেন যেন কথাগুলো শুনে খুব কষ্ট হচ্ছে।
তখন আমি ডাক্তার সাহেব কে বললাম।

–ডাক্তার সাহেব আমি রক্ত দিবো, আমার রক্তের গ্রুপ ও নেগেটিভ!(আমি)

ডাক্তার তখন তাড়াহুড়া করে আমায় নিয়ে শুইয়ে দিলেন। দুই ব্যাগ রক্ত নিয়ে রাইসাকে দিলো। আমি কিছুক্ষণ শুইয়ে থেকে, বাবার কাছে চলে আসলাম। পরের দিন বাবাকে নিয়ে বাসায় ফিরি! হসপিটাল থেকে আসার সময়, রাইসার বেডের দিকে তাকিয়ে দেখি একটা মেয়ে রাইসাকে জড়িয়ে ধরে আছে। মনে হচ্ছে এটাই রাইসার মা, কিন্তু মানুষটাকে খুব পরিচিত লাগছে! এক ধ্যানে তাকিয়ে আছি মেয়েটার দিকে।

—কিরে কাব্য বাসায় যাবি না? এভাবে দাঁড়িয়ে পড়লি যে? (আব্বু)

বাবার কথা শুনে, ক্ষাণিকটা চমকে উঠে বললাম।

–চলো বাবা!

তারপর বাবাকে নিয়ে বাসায় আসার পর, বিছানায় গা’টা এলিয়ে দেয়।
.
.
.
তারপর পরের দিন হঠাৎ কে যেন দরজা নর্ক করছে, আমি দরজাটা খুলতেই আমার মাথাটা ঘুরতে লাগলো! পা দুটো কাঁপছে এ আমি কি দেখছি? এটা স্বপ্ন না বাস্তব।

–মিরা তুমি বেঁচে আছো? (আমি)

—হ্যাঁ বেঁচে আছি তুমি কি ভেবেছিলে আমি মরে গেছি? যাকে আল্লাহ্ বাঁচায় তাকে কেউ মারতে পারে না।(মিরা)

–কিন্তু আমি যে স্পর্ষ্ট দেখেছি সেটা তুমি। রোড একসিডেন্টে মারা গিয়েছো।

—তুমি ভুল দেখেছো কাব্য, তুমি জানো না এ পৃথিবীতে একজন মানুষের ন্যায় আরো সাতজন মানুষ রয়েছে।
আচ্ছা বাদ দাও, এই নাও আমার বিয়ের কার্ড তুমি কিন্তু আসবেই! আঙ্কেল আন্টি সাথে জান্নাতকেও নিয়ে আসবে!

–মিরা তোমার বিয়ে মানে? কি বলছো এসব? আর আমি তোমাকে ভালোবাসি, বড্ড বেশী ভালোবাসি। আমি আমার ভুল বুঝতে পেয়েছি, প্লিজ আমাকে ক্ষমা করে দাও! তোমাকে ছাড়া সত্যি আমি বাঁচবো না। প্লিজ আমাকে ছেড়ে যেও না। বিশ্বাস করো এখন আমার বুক থেকে তোমাকে আর কেউ কেড়ে নিতে পারবে না।

(কান্না করতে করতে, কথাগুলো বললাম। চোখ থেকে তখন টুপ-টাপ করে পানি পড়ছে। নিজের অজান্তে তখন মিরার হাতটা আমি ধরে ফেললাম!)
.
কিন্তু মিরা “ঠাস, “ঠাস করে চড় বসিয়ে দিলো, আমার গালে,
.
.
চলবে…………………………♥

#পিচ্চি_বউ
#Writer_Kabbo_Ahammad
#part_8
#collected
.
-: কিন্তু মিরা “ঠাস, “ঠাস করে চড় বসিয়ে দিলো, আমার গালে। তারপর হঠাৎ কি যেন পড়ায় শব্দে আমার ঘুম ভেঙে যায়। উঠে ফ্লরের দিকে চেয়ে দেখি, বুক থেকে মিরার ছবিটা পড়ে ভেঙে গিয়েছে। তারমানে এতক্ষণ যা দেখলাম সব স্বপ্ন ছিলো? গলাটা শুকিয়ে গেছে, টেবিল থেকে এক গ্লাস পানি খেয়ে, এসে বিছানায় ধপ করে বসে পড়লাম।

আমি বুঝতে পারলাম, আমি মিরাকে নিয়ে বাজে স্বপ্ন দেখেছি! তখন মুহুর্তে মিরার মুখটা বার বার ভেসে ওঠছে। তারপর আবারো ঘুমিয়ে পড়লাম।
.
.
.
কয়েক দিন পর , স্কুলে গিয়ে দেখি, রফিক সাহেব বসে আছে। আমি ওনাকে সালাম দিলাম।

–আসসালামু আলাইকুম।

–ওয়ালাইকুম আসসালাম।
স্যার আপনাকে আজ আপনাদের বাড়িতে দাওয়াত। সন্ধ্যায় আসবেন কিন্তু। আজ আমাদের রাইসার পঞ্চম জন্ম বার্ষিকী!

(রফিক সাহেব কথাটা বলে বাড়ির ঠিকানা দিয়ে চলে গেল)

এদিকে সন্ধ্যায় আমি রফিক সাহেবের ঠিকানা দেওয়া বাসায় গিয়ে নর্ক দিলাম। নর্ক দেওয়ার কিছুক্ষণ পর একটা কাজের মেয়ে এসে, দরজাটা খুলে দিলো! বাসাটা খুব সুন্দর করে সাজানো হয়েছে। আমাকে দেখে রাইসা দৌঁড়ে এসে আমায় জড়িয়ে ধরলো!

খুব সুন্দর লাগছে আজ রাইসাকে। তারপর আমি মেয়েটাকে কোলে নিয়ে গালে মুখে চুমু দিয়ে বুকে জড়িয়ে নিলাম। অজানা এক প্রশান্তি মনে হচ্ছে ছুঁয়ে গেলো আমার হৃদয়!

বাড়িতে প্রায় আমাদের স্কুলের সব টিচারদের দাওয়াত করা হয়েছে।

তখন হঠাৎ, সিঁড়ি দিয়ে কাউকে নামতে দেখে আমি থমকে গেলাম! নীল রঙের চশমাটা খুলে মুছে আবার চোখে পড়লাম। বুকের স্পর্দন বেড়ে যাচ্ছে। কারণ এ তো অন্য কেউ না এটা মিরা। এটা কিভাবে সম্ভব যাকে নিজ হাতে দাফন করেছি। যার চাঁদমুখটা এখনো ভেসে ওঠে। কিন্তু মিরা আবার বেঁচে আছে। মিরার দিকে তাকিয়ে পলক ফেলতে পারছি না। নিজের অজান্তেই মিরা নাম ধরে ডাকতে গিয়েই গলাট কেমন যেন ধরে এলো। তাই অন্যদিকে ঘুরে গেলাম। তখন পাশ থেকে কে যেন বলে ওঠলো।

—“তানিয়া” তোমার সাজতে এতো লেট হয় কেন? কখন থেকে সবাই অপেক্ষা করছি!

কিন্তু আমি কিছু ভাবতে পারছি না, এদিকে রফিক সাহেব মিরার হাত ধরে মিরাকে নামাচ্ছে। মিরার সাথে কয়েকবার আমার চোখাচোখিও হয়েছে, কিন্তু কোন কথা হয়নি।

এদিকে কিছুক্ষণ পর রাইসার জন্মদিনের কেক কাটলাম। তার কিছুক্ষণ পর হঠাৎ কাধে কারো হাতের স্পর্শ পেলাম। আমি পিছন দিকে তাকাতেই দেখি মিরা!

—আসসালামু আলাইকুম! আমি তানিয়া রেজওয়ান রফিক।

–ওয়ালাইকুম আসসালাম! কেমন আছেন?

—জ্বী ভালো, আমি আপনার কাছে অনেক কৃতজ্ঞ, আপনি আমাদের কলিজার টুকরাটাকে রক্ত দিয়ে বাঁচিয়েছেন! রাইসার আব্বুর কাছে আপনার কথা শুনেছি। আপনি কি বিয়ে করেছেন? একদিন ম্যাডামকে নিয়ে বেড়াতে আসবেন!

মিরার এ প্রশ্নের জবাবে আমি কি বলবো ঠিক বুঝতে পারছি না, এটা আমার মিরা নয়, কিন্তু মনে হচ্ছে এটাই আমার ভালোবাসার মানুষ। আমার স্ত্রী! কিন্তু আমি কিছুু ভাবতে পারছিনা। বুকটা ফেঁটে যাচ্ছে। না এখানে আর থাকা সম্ভব হচ্ছে না আমার। তাই বিদায় নিয়ে চলে আসছি।

আসার সময় বাড়ির গেট পর্যন্ত রাইসা আর তার মা এগিয়ে দিয়ে গেলো!
.
.
.
বাসায় এসে মিরার স্মৃতিগুলো ভাবতে লাগলাম। আমি জানি এটা মিরা নয়, কিন্তু কেন যেন বার বার আমার মন বলছে এটাই মিরা। এটাই আমার পিচ্চি বউ মিরা।

তারপর থেকে এখন প্রায় প্রায় তাদের বাসার নিঁচে দাঁড়িয়ে থাকি। দেখি প্রতিদিন কোথায় যেন যায়, তানিয়া। যাকে আমার মন বলে এটা তানিয়া নয় মিরা।

পরে খবর নিয়ে জানতে পারি মিরা অফিসে যায়। নিজের অফিস আছে।

তাই একদিন অফিসে যাওয়ার পথে, মিরার গাড়ি আগলে দাঁড়ালাম। গাড়ি দাঁড়া করাতেই বললাম।

–Excuse me
যদি কিছু মনে না করেন, পার্কে গিয়ে বসতে পারি? আপনার সাথে কিছু কথা আছে!(আমি)

—আচ্ছা চলেন!(মিরা)

তারপর একটা পার্কে নিয়ে গাড়ি দাঁড় করালো। তারপর বললো।

—কিছু বলবেন? আমার যেতে হবে।(মিরা)

–একটা সত্যি কথা বলবেন?

—হুমম, বলেন কি বলতে চান?

–আমার মন বলছে, তুমি তানিয়া না আমার মিরা। আমার মন বলছে। প্লিজ মিথ্যা বলো না।

—আপনি কি ঠিক আছেন মিঃ কাব্য?
আমি তানিয়া রেজওয়ান রফিক। আপনার মিরা কে? আর কি বলছেন এসব। আপনি এসব বলতে আমাকে এখানে এনেছেন? ছিঃ লজ্জা করেনা আপনার?

–প্লিজ আমি মিথ্যা বলছি না বিশ্বাস করুন।

এর পর মিরার সাথে ঘটে যাওয়া সব কিছু তাকে খুলে বললাম। তারপর ওনি বললো।

—কি, আশ্চর্য অাপনি কি, আমাকে নাটকের স্ত্রীট শুনাচ্ছেন???

–প্লিজ আমি জানি তুমি আমার মিরা, তুমি আমার সাথে মিথ্যা বলছো।

—কি আশ্চর্য আমার বিয়ে হয়েছে বাচ্চাও আছে দুটা!

–প্লিজ মিরা তুমিই আমার মিরা বলো তুমি মিথ্যা বলছো? আমার মন কখনো মিথ্যা বলেনা।

কথাটা বলেই মিরার হাত টা ধরে ফেললাম! আর সাথে সাথেই মিরা হাতটা ছাড়িয়ে, “ঠাস “ঠাস করে চড় বসিয়ে দিয়ে বলতে লাগলো!

—আমি আপনাকে অনেক ভালো ভেবেছিলাম,
কিন্তু আপনার যে চরিএ খারাপ তা এখন আর বুঝার বাকি রইলো না আমার!
“লজ্জা করে না, অন্যের স্ত্রীর হাত ধরতে, আপনার কি বউ নেই, আর আপনি ভালো করেই জানেন আমার স্বামী আর দুইটা মেয়ে আছে। তারপরেও আমাকে কেন বিরক্ত করেন। নির্ঘাত আমার মেয়ের জীবন বাঁচানোর জন্য আজ আপনাকে লোক ডেকে অপমান করলাম না! নইলে আজ আপনাকে পুলিশে দিতাম!
ছোটলোক, নারীদের সম্মান করতে শেখেননি! মনে হয় জন্মের দোষ রয়েছে আপনার।
(কথাটা বলে জিবে কামড় দিলো মিরা)

এদিকে তানিয়া, যাকে মিরা ভেবে নিজের অজান্তেই হাতটা ধরে ফেলেছিলাম, কিন্তু সে তো আমার মিরা না।
নিজের প্রতি আজ প্রচন্ড ঘৃণা হচ্ছে! আজ আমার জন্য মা-বাবা কথা শুনলো!

—স্যরি আমি ঠিক এমনটি বলতে চায়নি! (তানিয়া)

–না,
ঠিক আছে বলবেন না কেন? আমি যে হতভাগা নিজের স্ত্রীকে কত কষ্ট দিয়েছি, এতটা ভালোবাসা সত্ত্বেও তাকে দূরে সরিয়ে দিয়েছে। তবে জানেন এখনো মাঝরাতে উঠে তার জন্য কান্না করি! তার ছবিটা বুকে নিয়ে ঘুমায়, তার ডাইয়িটা বুকে নিয়ে প্রতিরাতে কাঁদি। পাঁচবছর পাগল হয়ে পাবনা ছিলাম। জানিনা আর কত কষ্ট পাবো, আল্লাহ আরো আমাকে কষ্ট দেন যেন। জানেন যেদিন আপনাকে দেখছি, সেদিন আমার মন বলছে আপনিই আমার মিরা, আমার কলিজার টুকরার মতো, কিন্তু না সেটা আমারি ভুল কারো মতো, দেখতে বা কথা বলতে পারলেই সে যে আপন কেউ হবে তা তো কথা নয়। ক্ষমা করে দিবেন, ভালো থাকবেন। এই যে ডাইরিটা, এখানে সব লেখা আছে।

আবারো বলছি, আপনাকে আমার স্ত্রী ভেবে দৃষ্টাব্দ করার জন্য দুঃখীত! খুব বাজে তো আমি তাই, আচ্ছা আসি!
.
.
.
চোখদিয়ে অঝরে পানি পড়ছে, আর বাঁচার ইচ্ছা করছে না, বুকটা ফেটে যাচ্ছে। এখন শুধু বারবার মিরার চাঁদমুখটা ভেসে ওঠছে। এদিকে কখন যে আমি মাঝরাস্তায় এসে পড়েছি জানি না! পিছন থেকে কে যেন আমাকে ডাকছে, আমি পিছন দিকে চেয়েই দেখি, তানিয়া হাত দিয়ে ইশারা দিয়ে সরে যেতে বলছে। আর আমি শুধু মুগ্ধ নয়নে তাকিয়ে আছি। এদিকে তানিয়া দৌঁড়ে আসছে, কি সুন্দর লাগছে, মনে হচ্ছে আমার কলিজার টুকরা মিরা দৌড়ে আসছে আমাকে ভালোবাসার পরম শিহরণে জড়িয়ে নেওয়ার জন্য। হঠাৎ কি যেন ধাক্বা দিয়ে শূন্যে উড়িয়ে ফেলে দিলো! পাশদিয়ে একটা বাস চলে গেল, আমি ধাক্কা খেয়ে রাস্তায় একপাশে গড়িয়ে পড়লাম! চোখদুটি রক্তে বন্ধ হয়ে আসছে, নাক মুখ দিয়ে রক্ত বের হচ্ছে! অনুভব করতে পারছি, কেউ বুকের সাথে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে আছে আমায় আর বলছে, ক্ষমা করে দাও আমায় আমি তোমার মিরা, তোমার কিছুই হবে না! আমাকে ছেড়ে কোথাও যেতে পারো না।
.
.
চলবে…………………♥

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here