পূর্ণতা_নাকি_শূন্যতা,০৪,০৫

0
322

#পূর্ণতা_নাকি_শূন্যতা,০৪,০৫
#রেজওয়ানা_রমা
#পর্ব_০৪

সিদ্ধাত ভাইয়া ধরে নিলো। আমি সিদ্ধাত ভাইয়ার কোলে। দুইজন দুইজনের দিকে অপলক ভাবে তাকিয়ে আছি। কোথায় যেন হারিয়ে গেছি দু’জনই। সবাই যে আমাদের দেখে মিট মিট করে হাসছে সে খেয়াল আমাদের কারো ই নেই। মনে হচ্ছে যেন এ কোনো এক কল্পনা রাজ্য। যেখানে শুধু মাত্র আমি আর সিদ্ধাত ভাইয়া। চারিপাশে ফুলের সৌরভ। পাখির কিচিরমিচির আওয়াজ। নদীর স্রোতের কলকল শব্দ। দু’জনই মুগ্ধ চোখে তাকিয়ে আছি। আমার সামনে থাকা মানুষ টি অসম্ভব সুন্দর। মায়াবী চোখে তাকিয়ে আছে আমার দিকে। আমিও ডুক্স গিয়েছি তার ওই চোখের চাহনি তে। এতো সুন্দর একটা রোমান্টিক মুহুর্ত কে বারো টা বাজিয়ে নোভা বলে উঠলো,

– আপনাদের শুভদৃষ্টি শেষ হলে আমরা অনুষ্ঠান টা শুরু করতে পারি।

নোভার এমন কথায় তারাতারি দুইজন দুইজনকে ছেড়ে দিয়ে উঠে দাঁড়ালাম। উফফ। ধ্যাত এখন লজ্জা লাগছে। কারো দিকে তাকাতেই পারছি না। লজ্জায় মাথা নিচু করে দাড়িয়ে আছি। নোভা হাত ধরে টেনে নিয়ে গেলো। আর সিদ্ধাত ভাইয়া চলে গেল উনার ফ্রেন্ড সিফাত ভাইয়ার কাছে।

আমাদের হল রুম টা খুব সুন্দর করে সাজানো। ফুল আর লাইট দিয়ে পুরো রুম টা সাজানো হয়েছে। এখানে সবাই আছে। আমার পরিবারের সবাই। আম্মু, আব্বু, দাদা, দাদিমা, কাকাই, কাকিমনি, ফুপ্পি, ফুপা। আমার কাজিনরা সবাই আছে। আবার নানু, নানিমা, মামা, মামিমা, খালা মনি। সবাই আছে। পুরো বাড়ি টা আত্মীয় স্বজন গমগম করছে। আর সিদ্ধাত ভাইয়ার পরিবারেরও সবাই আছে। লামু ( ফুপাতো বোন) এসে আমাকে টেনে নিয়ে যায়।
লামু : এই তো ঈশা আপু আর সিদ্ধাত ভাইয়া চলে এসেছে। নাও এবার শুরু করো।

আম্মু: হ্যাঁ হ্যাঁ। এই নে ঈশা এটা সিদ্ধাত কে পরিয়ে দে মা।

আমি: হুম

আম্মু আমার হাতে একটা আংটি ধরিয়ে দিলো। আর বড় মা সিদ্ধাত ভাইয়ার হাতে। মানে আজকে আমাদের এনগেজমেন্ট। সিদ্ধাত আংটি নিয়ে এগিয়ে আসছি। উফফ কিভাবে তাকিয়ে আছে রাক্ষস টা। এতো সুন্দর কেন এই রাক্ষস টা। ইসস কিভাবে হাসছে। আমি এবার চোখ নামিয়ে নিলাম। রাক্ষস টা আমার সামনে এসে দাড়িয়েছে। মৃদু হাসি মুখে। আমার হাত ধরে আংটি পরাতে যাবে আমি তখন উনার দিকে একটু খানি তাকিয়েছি আর ওমনেই চোখ মারলো আর আমি সাথে সাথে চোখ নামিয়ে নিলাম। রাক্ষস একটা। উফফ। আমিও আংটি পরিয়ে দিলাম। এবার আমাদের দুইজন কে পাশাপাপাশি বসিয়েছে। সবাই আছে এখানে। তৌহিদ (মামাতো ভাই) এবার সকলের উদ্দেশ্য বলে,

– এবার সবাই একটা করে গান গাইবে।

নোভা: হ্যাঁ হ্যাঁ একদম ই তাই।

আম্মু: তোদের এইসব গানে আমি নেই

বড় মা: আমিও নেই

গানের কথা শুনে তো বড় বাবা আর আব্বু আগেই উঠে গেছে। তার পর আম্মু আর বড় মা এমন করে বলে। এক এক করে সবাই চলে যায়। কিন্তু দাদা, দাদিমা আর নানা, নানিমা কে কেউ যেতে দেয় নি। বাড়ির গুরুজন সবাই আমাদের দুইজন কে দোয়া করে চলে গেলো। এখন আছি আমরা, আমার কাজিন, নোভা, ইতি, আর সিফাত ভাইয়া। আমি স্টেজের মাঝখানে বসে আছি। ডান পাশে রাক্ষস, বাম পাশে নোভা আর ইতি। আর রাক্ষসের পাশে সিফাত ভাইয়া। সবাই আড্ডা দিচ্ছে। আমি এখনো রাক্ষসের সাথে ভালো করে কথা বলছি না। হুহ বলবো ও না। আমাকে অনেক কাদিয়েছে। এর মধ্যেই ইতি বলে,

– এখন গান হবে

মিতু ( আমার কাজিন): না না ইতি আপু গান নয় নাচ হবে

নোভা: নাচ, গান দুইটাই হবে।

তৌহিদ : কিন্তু নাচবে কে?

মিতু: তুই নাচবি

মিতুর কথায় সবাই হেসে দিলো। আর তৌহিদের মুখ টা দেখার মত ছিল।

নোভা: আচ্ছা টস হবে। যা উঠবে তাকে তাই করতে হবে।

সবাই নোভার কথায় সমর্থন জানালো।নোভা আর ইতি কিছু কাগজে নাচ, গান, অভিনয় ইত্যাদি লিখেছে। ওরা সবাই এবার খেলছে। আমি দেখছি আর রাক্ষস টা আমার সাথে কথা বলার চেষ্টা করছে। হিহি কিন্তু আমি পাত্তাই দিচ্ছি না। আমার পাত্তা না পেয়ে রাক্ষস টা লুচির মত ফুলছে। আমার বেশ মজাই লাগছে। এবার রাক্ষস টা আমার গলার কাছে মুখ এনে ফিস ফিস করে বলল,

– কথা বলবি নাকি অন্য রূপ দেখবি

এই কথা শুনে আমার কলিজার পানি শুকিয়ে গেছে। একটা ঢোক গিলে উত্তর দিলাম,

– তোমার রূপ কয় টা?

– অনেক গুলো (ভিলেন মার্কা হাসি দিয়ে)

– বহুরূপী মানুষ কিন্তু আমার মোটেও পছন্দ নয়।

– ওই আমি বহুরূপী?

-তুমি ই তো বললে

-উফফ।

– কিইই

– তুই এমন কেন?

– আমি কেমন?

– অনেক কিউ….

– কি বলেন?

– পেত্নী

– ভালো

হুহ আমি নাকি পেত্নী। শালা খাটাস একটা। আমাকে পেত্নী বলে। হুহ আর কোনো কথাই বলবো না। একটু খানি কথা বলছি ভাব বাড়ছে হুহ। মুখ ঘুরিয়ে বসে আছি। আর রাক্ষস টা মিটমিট করে হাসছে। আমার আরো রাগ হচ্ছে। গা জ্বলে যাচ্ছে আমার। আমার রাগ আরো বাড়িয়ে দিতে রাক্ষস টা আবার মুখ টা কাছে এনে বলে,

– তোকে কেন বিয়ে করেছি জানিস?

আমি রাক্ষসের কথাই প্রশ্নসূচক চাহনি তে তাকিয়ে আছি। রাক্ষস টা আবারও বলে,

– জানিস না তো? জানবি কি করে। তোকে তো বলি নাই। কষ্ট পাবি তাই।

এবার গম্ভীরস্বরে বললাম।

– বলে ফেলো।

– শুনবি?

– হুম

– কষ্ট পাবি তো

– পাবো না বলো

– আসলে তোকে দেখতে তো পুরোপুরি পেত্নীর মত। গায়ের রং একবারেই কালো। ঠিক পাতিলের তলার মতো। আর চোখ গুলো ট্যারা। হাটিস তো প্রতিবন্ধিদের মত। তোকে তো কেউ বিয়ে করতো না। দয়া দেখিয়ে আমি বিয়ে করে নিলাম আর কি।

রাক্ষসের কথা শুনে আমার পুরো গায়ে আগুন জ্বলছে। রাগে বোম হয়ে গেছি পুরোটা। রাগে রাক্ষসের শার্টের কলার ধরে চিৎকার করে বললাম,

– ওই রাক্ষসের বাচ্চা রাক্ষস।কি বললি তুই? আর একবার বল? জাস্ট একবার বল। বল। সাহস থাকলে আর একবার বল। আমি দেখতে কি? পেত্নীর মত? আমি পাতিলের তলার মত কালো? আমার চোখ গুলো ট্যারা? আমি প্রতিবন্ধিদের মত হাটি? ওই রাক্ষসের বাচ্চা। তুই পাতিলের তলার মত কালো। তোর চোখ ট্যারা। তুই নিজে প্রতিবন্ধি। শালা খাটাস, রাক্ষস, মুডির বাচ্চা।

আমার এসব কথা শুনে বাকি খেলা বন্ধ হয়ে গেছে অলরেডি। সিদ্ধাত ভাইয়া তো একবারেই চুপ হয়ে গেছে। আমার মুখে এসব কথা আগে কখনই শুনে নি। বেশ অবাক হয়েছে বুঝতে পারছি। নোভা আর ইতি সাথে সাথে আমার কাছে চলে আসে।

নোভা: কি হয়েছে ঈশা এতো রাগ করছিস কেন?

ইতি: হঠাৎ রেগে গেলি কেন?

আমি: চুপ থাক তোরা।

বলে উঠে এলাম হল রুম থেকে। দৌড়ে নিজের রুমে যাচ্ছিলাম। বড় মা পিছন থেকে ডাকে,

বড় মা: ঈশা মা কোথায় যাচ্ছিস এভাবে?

আমি: বড় মা ( বলেই কেদে দিলাম)

বড় মা: কি হয়েছে মা

আমি: আমার চোখ ট্যারা? আমি পাতিলের তলার মত কালো? আমি প্রতিবন্ধিদের মত হাটি?

বড় মা: কে বলেছে এসব? নিশ্চয় সিদ্ধাত?

আমি: আহ! বলো না আগে

বড় মা: না মা। আমার মেয়ে একটুও ট্যারা নয়। আমার চোখ গুলো তো হরিণী চোখ। আর গায়ের রং তো দুধে আলতা।

আমি: তোমার ছেলের রাতে ভাত বন্ধ

বড় মা: সিদ্ধাত মজা করেছে মা।

আমি: চুপ করো। বলেছে কেন জিজ্ঞাসা করো। বিচার চাই আমার। না হলে আজকে আমি কিচ্ছু খাবো না। গেলাম এই আমি

বড় বাবা: ঈশা মা সিদ্ধাত কাজ টা মোটেও ঠিক করে নাই। তুমি মন খারাপ করো না। সিদ্ধাত কে খুব বকে দেবো।

আমি: তোমার ছেলে আরো কি কি করেছে জানো? এই দেখো আমার হাত দুটি দেখো

বড় বাবা : মেরেছে?

আমি: না। আমার হাত শক্ত করে চেপে ধরেছে। দেখো না কি হয়েছে।

বড় বাবা: সিদ্ধাত কে বকে দেবো। কেন আমার মেয়ের হাতে ব্যাথা দিয়েছে।

আম্মু: ভাইজান আপনার আসকারা পেয়ে পেয়ে ঈশা একটা বাদর তৈরী হয়েছে। ওকে আর আসকারা দেবেন না

আমি: এই ভিলেন আম্মু। একদম চুপ থাকো। নিজে একটা ভিলেন আমার ভালো বড় বাবা কেও ভিলেনগিরি শেখাচ্ছো। তোমাদের সিদ্ধাত কি ধোয়া তুলসী পাতা?

এর মধ্যে হল রুম থেকে সবাই বের হয়। রাক্ষস টা আগে আগে। রাক্ষস কে দেখে বড় মা বলে,

বড় মা: কি রে সিদ্ধাত কি বলেছিস মেয়ে টা কে?

সিদ্ধাত: আমি? আমি কি বললাম?

আমি : আমি পেত্নীর মত দেখতে। চোখ গুলো ট্যারা। এসব কে বলেছে? ( কোমরে হাত দিয়ে)

সিদ্ধাত: কে বলেছে?

আমি: এ বাড়িতে একটা রাক্ষস থাকে। সে বলেছে

সিদ্ধাত: ওমা তাই নাকি। তো কোথায় সে রাক্ষস টা?

বড় মা: সিদ্ধাত এসব কেন বলেছিস তুই ওকে?

সিদ্ধাত ভাইয়া: আমি বলেছে?? কখন বললাম?

বড় বাবা: তুই বলিস নাই?

সিদ্ধাত ভাইয়া: না

আমি: সিদ্ধাতের বাচ্চা তুই রাক্ষস জানতাম, কিন্তু মিথ্যাবাদি সেটা জানতাম না। খবিস, তুই আমার সাথে আর কথাই বলবি না। খাটাস

বলেই নিজের রুমে চলে আসি। বড় মা, বড় বাবা সবাই আমাকে ডাকছিলো কিন্তু কারো কথাই কোনো কর্ণপাত না করে চলে এসেছি। রুমের দরজা বন্ধ করে রেখেছি। রাগ হচ্ছে খুব। রাক্ষস টা অস্বীকার করলো। একবার পাই হাতের কাছে তুলে একটা আছাড় দেবো। রাগে গা জ্বলছে। মনে হচ্ছে রুমের সব ভেঙে ফেলি। রাগে গজগজ করছি আর জুয়েলারি গুলো খুলছি। শাড়ি টা আর চেঞ্জ করলাম না। ধরাম করে বিছানায় লাফিয়ে পড়লাম। উপুড় হয়ে শুয়ে আছি। এখনো রাগ হচ্ছে। কি বলল রাক্ষস টা। আমাকে দয়া করে বিয়ে করেছে। উনি বিয়ে না করলে আমার বিয়ে হতো না। কত বড় কথা। এই কথা টা তো বড় বাবা বড় মা কে বলতেই ভুলে গেছি। উফফ ঝগড়ার সময় মেইন মেইন পয়েন্ট গুলো ভুলে যাই। ধ্যাত। এবার তো নিজের ওপর রাগ হচ্ছে। এখন আনুমানিক রাত ১০ টা বাজে। ডিনার টাইম। আম্মু ডাকতে এসেছিলো। খাবো না বলে দিয়েছি। রুমের লাইট অফ করে শুয়ে পড়লাম। কখন যে ঘুমের দেশা পাড়ি জমালাম নিজেও জানি না।

☆☆ হাই, আমি সিদ্ধাত চৌধুরী। ওরফে ঈশার রাক্ষস রাজা । এতোক্ষন তো ঈশার স্টোরি শুনলেন। আমার স্টোরি টা শুনবেন না? চলুন আমার স্টোরি শেয়ার করি, আমার স্টোরি টা শুরু হয়েছিলো আজ থেকে ১১ বছর আগে। যখন আমি এসএসসি এর পর ঈশাদের বাড়িতে গিয়েছিলাম তখন থেকে আমার গল্প শুরু। সেদিন যখন আব্বুর প্রস্তাবে আংকেল বলেছিলো,

– আমার মেয়ে এখনো ছোট।

সেদিন খুব রাগ হয়েছিল। রেগে সেদিন খাবার টেবিল থেকে উঠে গিয়েছিলাম। মাথায় শুধু একটা কথাই ঘুরছিলো ঈশা কে আমার চাই তো চাই। সেটা যেকোনো মুল্যে। ঈশা দের বাড়ি থেকে বের হয়ে সোজা সিফাতের বাসায় গেলাম। সিফাত কে নিয়ে পার্কে যাই। অতঃপর,,,
.
.
#চলবে_কি?

#পূর্ণতা_নাকি_শূন্যতা
#রেজওয়ানা_রমা
#পর্ব_০৫

ঈশাদের বাড়ি থেকে বের হয়ে সোজা সিফাতের বাসায় গেলাম। সিফাত কে নিয়ে পার্কে যাই। অতঃপর,,

– বল কি হয়েছে এভাবে ডেকে আনলি কেন?

– ঈশার যোগ্য হতে বলেছে আংকেল।

– মানে?

– মানে আব্বু আজকে ঈশা আর আমার বিয়ের কথা বলেছিলো। কিন্তু আংকেল বলেছে উনার মেয়ে ছোট। এখন এসব নয়

– কিন্তু এখন তো বিয়ে দিতে বলা হয় নি। ঈশা যখন বড় হবে তখন তোদের বিয়ে হবে

– আরে বা*ল সেটাই তো আমার বাপ বলেছে। কিন্তু আংকেল বলেছে ঈশার যোগ্য হতে।

-তুই কি ঈশার অযোগ্য?

– হয়তো অযোগ্য

– ধুরু।

-কিছু একটা করতে হবে দোস্ত। যেন ঈশার যোগ্য বলে মেনে নেয়

– কি করবি? তোদের যা কিছু সব তো তোরই হবে।

– হুম। কিন্তু সেটা তো বাবার। যার উত্তরাধিকারি আমি। কিন্তু আমার নিজের কিছু একটা করতে হবে

– কি করবি

– এমন কিছু একটা করতে হবে। যেটা অনেক অনেক কষ্টের। এতো বেশি কষ্টের যে ঈশা কে ভুলে যেন থাকতে পারি

– আচ্ছা, তুই ওই বাচ্চা মেয়ে টার মধ্যে কি পেয়েছিস বল তো। ক্লাসে এতো সুন্দর সুন্দর মেয়ে থাকতে ওই পিচ্চি মেয়ে টা কেন?

– জানি না। আমি কিচ্ছু জানি না। ঈশা ছাড়া আমার আর কাউ কে ভালো লাগে না। যে কোনো মূল্যেই ঈশা কে আমার চাই চাই।

– এখন কি করবি?

– প্রচন্ড কষ্ট এমন একটা প্রফেশন দরকার

– তুই কি জব করবি?

-হুম

– অনেক কষ্টের জব?

-হুম

– অনেক অনেক বেশি কষ্টের?

– আরে বা*ল হ্যাঁ

-তাহলে তুই আর্মি তে জয়েন কর

– আর্মি?

-হুম। শুনেছি এটা অনেক কষ্টের হয়।

– ভেবে দেখি

এর পর কলেজে ভর্তি হলাম। সব বন্ধু রা প্রেম করছে। গার্লফ্রেন্ড নিয়ে ঘুরতে যাচ্ছে। শালা সিফাত টাও। আমিও চাইলে পারতাম প্রেম করতে কিন্তু আমার মন ঈশার কাছে পড়ে থাকতো। ঈশা ছাড়া আমার কাউ কে ভালো লাগতো না। খুব অবাক করা বিষয় তাই না? যে একটা বাচ্চা মেয়ের মধ্যে কি পেয়েছিলাম। আসলে কি পেয়েছিলাম তা আমার নিজেরও জানা নেই। আমিও তখন ভাবতাম ঈশার মাঝে কি আছে, এতো মেয়ে থাকতে ঈশা কেন। উত্তর টা আজও আমার অজানা। ঈশা কে নিয়ে উপন্যাস লেখা যাবে তবুও এই ভালোবাসার কারন খুজে পাওয়া যাবে না। কলেজ লাইফে একটা প্রেমপত্র পেয়েছিলাম। মেয়ে আজও আমার জন্য অপেক্ষা করছে। আমি তবুও মেয়েটা কে প্রশ্রয় দেই নি। গোটা শিক্ষাজীবন সিঙ্গেল থেকে কাটিয়ে দিয়েছি ঈশার জন্য। আমার লক্ষ্য ছিল ঈশার যোগ্য হওয়ার। ইন্টারমিডিয়েট দিয়ে সিফাতের কথা মত আর্মি অ‍্যাপ্লাই করি। এক্সামে পাস করে যাই। এক এক করে সব কিছু পেরিয়ে যখন আইএসএসবি তে গ্রীন কার্ড পেলাম সেদিন আমার মত খুশি কেউ ছিল না। এবার আংকেল নিশ্চয় বলবেন যে আমি ঈশার যোগ্য। চলে গেলেন চট্টগ্রাম ট্রেনিং এ। এর পর ট্রেনিং শেষ করে ইউনিটে জয়েন করলাম। আমি যখন ইউনিটে জয়েন করি ততদিনে ৫ বছর কেটে যায়। এই ৫ বছরে ঈশার কথা ভীষন মনে হতো। যখনই ঈশার কথা মনে পড়তো তখনই পুশআপ দিলাম। রাগে একশ দেড়শ পুশআপ অনায়াসে দিয়ে ফেলতাম। যা কোনো ভাবেই সহজ ছিলো না। এভাবেই কেটে যায় ঈশা কে ছাড়া আমার ১১ টা বছর। প্রতি দিন ঈশা কে ভেবে কমপক্ষে ৫০ থেকে ১০০ পুশআপ দেওয়া আমার ডেইলি রুটিন ছিল।

সেদিন দুই সপ্তাহের ছুটি তে বাড়ি ফিরছিলাম। তারিখ টা ছিল ১০ এপ্রিল ২০২২। রাস্তায় আমার গাড়ি তে একটা মেয়ের ধাক্কা লাগে। দোষ টা অবশ্য মেয়েটার ছিলো। হঠাৎ করেই সামনে চলে আসে। গুরুতর আঘাত পায় নি যদিও তবুও হসপিটালে নিয়ে গিয়েছিলাম। চেকআপ করিয়ে মেয়েটার বাড়ি পৌঁছে দিতে যাই। দরজা খুললেন একজন মধ্য বয়স্ক মহিলা। মুখ টা খুব চেনা চেনা লাগছে মনেই করতে পারছি না। অতঃপর বললাম,

– আসলে ওর ছোট একটা এক্সিডেন্ট হয়েছে আমার গাড়ির সাথে। হসপিটালে নিয়ে গিয়েছিলাম। ওখান থেকেই আসছি।

ভদ্রমহিলা বললেন,
– হায় আল্লাহ! কিছু হয় নি তো। তুই ঠিক আছিস মা।

মেয়েটি: হ্যাঁ আম্মু আমি ঠিক আছি।

মহিলাটি মেয়ে কে নিয়ে ভিতরে গেলেন। আমি এখনো ভাবছি কে ইনি। এতো চেনা কেন লাগছে। যা ভাবছি সেটা নয় তো? কিছু টা সংকোচ নিয়ে জিজ্ঞাসা করলাম,

– আচ্ছা আন্টি যদি কিছু মনে না করেন একটা কথা জিজ্ঞাসা করতে পারি?

– হ্যাঁ বাবা বলো

– আপনি কি শাহানাজ আন্টি?

– তুমি কে বাবা?

– আমার নাম সিদ্ধাত। সিদ্ধাত চৌধুরী

আমার নাম শুনে যেন তিনি আকাশ থেকে পড়লেন। দ্রুত পায়ে আমার দিকে হেঁটে এলেন। আমার গাল ধরে বললেন,

– সিদ্ধাত? শাহাদাত ভাইয়ের ছেলে সিদ্ধাত?

– জ্বী। আপনি সত্যি শাহানাজ আন্টি? আর ও-ওই মেয়েটা ঈশা?

– হ্যাঁ বাবা। আমি শাহানাজ আন্টি। আর ও ঈশা।

ওই মূহুর্তে আমার যে অনুভূতি হয়েছিল আমি কখনও কাউকে বুঝাতে পারবো না। আমার ঈশা কে এতো দিন পর এতো কাছ থেকে দেখলাম অথচ চিনলাম না। চোখে পানি টলমল করছিল। পুরুষ মানুষ কাদে না। কিন্তু সেদিন আমার চোখের পানি কিসের ছিল তা জানি না। এই যে আবারও শুরু হলো আমাদের দেখা হওয়া, কথা হওয়া, আসা যাওয়া চলছে দুই পরিবারের। ঠিক আগের মত। ঈশার সাথে আমার খুনসুটি চলেই। সারাদিন ওকে জালানোই আমার প্রধান কাজ। ওকে রাগিয়ে দেওয়াই আমার উদ্দেশ্য। ওর বাচ্চা বাচ্চা স্বভাব আমার খুব ভালো লাগে। সে বার ওই দুই সপ্তাহ ছুটি ঈশার সাথে কাটিয়েছিলাম। ১১ বছর পর আমি আবারও প্রান খুলে নিশ্বাস নিয়েছিলাম সেই সময় টাতে। সে সময়ের অনুভূতি টা কখনও বোঝাতে পারবো না। আমার ছুটি শেষ হলে আমি চলে আসি। এর পর থেকে ঈশার সাথে আমার ডেইলি ৩/৪ বার কথা হতো। রাতে ঘন্টার পর ঘন্টা কলে থাকতাম। ও পড়তো আর আমি ঘুমিয়ে যেতাম ওভাবেই কলে রেখে। ঈশাও অনেক ফ্রি হয়ে যায়। কয়েক মাস চলে যায় এভাবে। এরপর একদিন ঈশা আমাকে মেঘের কথা বলে।

মেঘের কাহিনি পরে আপনাদের কে বলবো। এখন যাই আমার জানপাখি টা না খেয়ে ঘুমিয়ে গেছে ওকে খাইয়ে দিয়ে আসি।

ঘুমের মধ্যে পেটের ওপর কিছু অনুভব করতেই চোখ খুলে দেখি সিদ্ধাত ভাইয়া। তিড়িং করে লাফিয়ে উঠে বসলাম।

– একি সিদ্ধাত ভাইয়া তুমি এখানে কি করছো?

– বিয়ের পর প্রথম রাত টা বাসর রাত হয়। তাই আর কি….

– এই খাটাসের বাচ্চা তুই এখানে কেন আসছিস। বাসর না? করাচ্ছি তোরে বাসর।

বলেই বালিশ তুলেছি মারবো খপাত করে বালিশ টা কেড়ে নিয়ে রাক্ষস টা বলে,

– ওই বড় দের সাথে কিভাবে কথা বলতে হয় জানিস না?

আমিও আবার বালিশ টা নিয়ে বললাম,

– ওই ছোটদের কিভাবে স্নেহ করতে হয় তুমি জানো না?

– সেটা করতেই তো আসছি

– কিহ!!! তুমি আমার পেটে টাচ করেছো কেন?

-হাহাহা। পেট বের ঘুমিয়ে ছিলি কেন?

– তাই বলে তুমি টাচ করবে?

– হোপ। শাড়ি ঠিক করে দিচ্ছিলাম।

– তোমাকে বিশ্বাস করা যায় না

– কিহ!!

– আচ্ছা সিদ্ধাত ভাইয়া দরজা তো ভিতর থেকে লক করা। তাহলে তুমি কিভাবে আসছো?

– সেটা সিক্রেট। বলা যাবে না

– চোরের মত কেন আসছো সেটা বলো।

– আমি চোরের মত আসছি?

– তা নয়তো কি।

– কেন আসি সেটা যদি বুঝতি,

– হুম। কেন আসছো বলো? পাতিলের তলার মত কালো, ট্যারা, প্রতিবন্ধি এমন মেয়ের ঘরে এত রাতে তুমি কি করো?

কান্না কান্না কন্ঠে কথা গুলো বললাম। সিদ্ধাত ভাইয়া থ হয়ে বসে আছে। কিছু বলছে না। কিছুক্ষন চুপ থেকে ভাইয়া বলল,

– ঈশু তুই কি সিরিয়ালি নিয়েছিস কথা গুলো?

– কেন নেবো না। তুমি তো সত্যি সত্যি বলেছো। মিথ্যা তো বলো নি তাই না।

সিদ্ধাত ভাইয়া বসা থেকে উঠে একটা খাবারের প্লেট নিয়ে এলো। সামনে এগিয়ে দিয়ে বলল,

– খেয়ে নে

প্লেট টা সরিয়ে দিয়ে বললাম,

– খাবো না

– মেজাজ খারাপ করিস না। খেয়ে নে

– বললাম তো খাবো না। শুনতে পাও নি? কানের সমস্যা টা বেড়েছে নাকি?

– হ্যাঁ বেড়েছে। আমি না বোধক কোনো কথা শুনতে পাই না।

– বেশ তো। থাকো বয়রা হয়ে

বলেই উল্টো ঘুরে শুয়ে পড়লাম।
আমি যেই না শুয়েছি ওমনি হ্যাচকা টানে শোয়া থেকে উঠে বসালো। রাগী কন্ঠে বলল,

– ভালো কথা কি ভালো ভাবে নিতে পারিস না?

– না পারি। হাত ছাড়ো। আর এখন থেকে যাও। ঘুমোতে দাও

বলেই হাত ছাড়িয়ে আবারও শুয়ে পড়ি। সিদ্ধাত ভাইয়া এবার অনেক রেগে গেছে বুঝতে পারছি। কিন্তু আমিও জেদ করে খাবো না। সব সময় এমন করে। দুপুরে কি ব্যবহার টাই না করেছে। আবার সন্ধ্যায় বলল আমাকে দয়া করে বিয়ে করেছে। এখনো নিশ্চয় দয়া দেখিয়ে খাবার নিয়ে এসেছে। খাবো না আমি। লাগবে না কারো দয়া। এর মধ্যেই সিদ্ধাত ভাইয়া আমাকে আবারও তুলে বসিয়ে দিয়েছে। এবার নিজ হাতে খাবার টা আমার মুখের সামনে ধরেছে।

– হা কর

– খাবো বললাম তো

-হা কর ( রাগী কন্ঠে )

– শুনতে পাও নি কি বললাম

– বলেছি না আমি না বোধক কথা শুনতে পাই না। নে হা কর

আমি হাত ধাক্কা দিয়ে খাবার টা ফেলে দিলাম। সিদ্ধাত ভাইয়ার হাত থেকে খাবারের প্লেটটাও নিয়ে ছুড়ে দিলাম ফ্লোরে। তার পর রাগ দেখিয়ে বললাম,

– কথা শুনতে পাও না নাকি বুঝতে পারো না। বলেছি খাবো। কেন জোর করছো? ঘুমাবো আমি শুনতে পেয়েছো? এখন যাও এখান থেকে আর আমাকে একটু শান্তি তে ঘুমাতে দাও।

আমার কথা গুলো শুনে সিদ্ধাত ভাইয়া এবার উনার সেই রাক্ষস রূপে চলে আসে। ফোস ফোস করছে রাগে। আমি একটু ভয় পেয়ে গেলাম। আমাকে এক ধাক্কায় বিছানায় ফেলে দিয়ে দুই হাত আবারও শক্ত করে চেপে ধরে বিছানার সাথে। আমি নিজেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করছি,,,
.
.
.
.
#চলবে_কি

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here