#পূর্ণময়ীর_বিসর্জন,পর্ব_শেষ
#মৌমি_দত্ত
দীর্ঘ একটা ঘুমের পর রায়ান ঘুম থেকে উঠলো আয়ান সাহেবের হোয়াটসঅ্যাপ কলের কারণে। ঘুম থেকে উঠে অনবরত বাজতে থাকা মোবাইলটা রিসিভ করলো রায়ান ঘুমু ঘুমু কন্ঠে। লন্ডনে এখন সকাল। আর বাংলাদেশে সবে তারা সকলে মিলে দুপুরের খাবার খেয়েছে। কলে আয়ান সাহেব বললেন,
– পৌছে গেছিস ওখানে?
রায়ান মৃদু হেসে বললো,
– হ্যাঁ বাবা। পৌছে গেছি অনেক আগে। কল করা হয়ে উঠেনি শুধু।
আয়ান সাহেব স্বস্তির নিশ্বাস ফেলতেই রায়ান প্রশ্ন করলো,
– মা, অনুবিকা আর পূর্ণ কোথায়? ওখানে সব ঠিক আছে তো?
আয়ান সাহেবের কথার বুলি যেন ফুরিয়ে গেলো। একবার ভাবলেন ছেলেকে এক্ষুনি জানিয়ে দেবেন সবটা। আবার ভাবলেন পূর্ণর কাছে তিনি কথা দিয়েছেন। রায়ান বাবার এমন নীরবতায় ধড়ফড় করে উঠে বসলো,
– ওরা কোথায় বাবা?
প্রশ্ন করলো ব্যস্ত কন্ঠে। আয়ান সাহেব হালকা কেশে বললেন,
– যে যে যার যার কাজে আছে।
রায়ানের সন্দেহ যেন গেলো না। তড়িৎ সে বললো,
– আমি ভিডিও কল করছি। সকলকে দেখাও এক্ষুনি।
এবার আয়ান সাহেব পড়লেন ফ্যাসাদে। অপরদিক থেকে রায়ান ক্যামেরা অপশন অন করেছে। যার কারণে স্ক্রিনে বারবার জ্বলজ্বল করছে তারও ক্যামেরা অন করবার সাজেশনটি। কিন্তু উনি তো চাইলেই আর ক্যামেরা অন করতে পারবেন না। তাই উনার মাথায় তৎক্ষণাৎ বুদ্ধি এলো।
– রায়ান আমি,, ঘ,,চ,,ঘ,,ট,,ক্ষ।
এটুকু বলেই কল কেটে দিলো আয়ান সাহেব। এরপর মোবাইল হাতেই ছুটলেন পূর্ণর রুমে। পূর্ণ ব্যাগ গুছাতে ব্যস্ত। অনুবিকাও মনমরা হয়ে গল্প করছে। রেহানা পূর্ণর ব্যাগ গুছিয়ে দিতে সাহায্য করছেন। আয়ান সাহেবকে হঠাৎ দেখে তারা অবাক হলো। রেহানা প্রশ্ন করলেন,
– কি হলো?
আয়ান সাহেব অস্থির ভাবে বললেন,
– পূর্ণকে আর তোমাদের দেখতে চাইছে তোমার ছেলে। এই যা হয়েছে!
পূর্ণ ভাবুক ভঙ্গিতে চুপ করে রইলো কিছুক্ষন। এরপর খাটে ধপ করে বসে পড়ে বললো,
– একটা কথা বলো তো, রায়ান কোথায় গেছে?
রায়ানের মানা ছিলো যাতে পূর্ণ কিছু না জানে। পূর্ণর জন্মদিন সামনেই। তাই সে জন্মদিনের দিন তাকে সারপ্রাইজ দিবে। কিন্তু এখন তো চলছে নতুন প্রস্তুতি। পূর্ণর আলাদা প্ল্যানিংয়ে সাথে থাকবার কথা দিয়েছেন বাড়ির সকল সদস্য। তাই অনুবিকা মুখ গোমড়া করে বলেই ফেললো,
– ভাইয়া লন্ডন গেছে। তোর কাগজপত্র সহ সব জরুরি জিনিস আনতে। তোকে এখানেই একটা কলেজে ভর্তি করে দেবে।
পূর্ণ হা হয়ে তাকিয়ে রইলো রেহানা, অনুবিকা ও আয়ান সাহেবের লটকে থাকা মুখের দিকে। এদিকের এই অবস্থা, অপরদিকে রায়ান বোকার মতো মোবাইল সামনে ধরে বসে আছে। একটু আগে এটা কি হলো? ঘরের ওয়াইফাই কানেকশন কি কাট হয়ে গেলো? তার দিক থেকে তো ফুল কানেকশন দেখাচ্ছে। রায়ান আবারও কল লাগালো আয়ান সাহেবকে। মোবাইল রিং হিতেই পূর্ণ সহ সকলের হুশ ফিরলো। পূর্ণ ব্যস্ত কন্ঠে বললো,
– প্ল্যানিং চেঞ্জ। আমি যেখানেই যাই কাগজগুলো লাগবে। তাই রায়ান আসার পর সেই কাগজগুলো হাত করেই যেতে হবে আমাকে। এখন যাওয়া যাবে না।
অনুবিকা আর রেহানার মুখে হাসি ফুঁটলো। আর আয়ান সাহেব বুকে হাত দিয়ে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললেন। পূর্ণ তাড়াতাড়ি লাগেজের চেইন লাগিয়ে তা খাটের নিচে লুকালো। এরপর খাটে শুয়ে পড়লো রেহানার কোলে মাথা রেখে। আয়ানকে ইশারায় বললো কল রিসিভ করতে। আয়ান সাহেবও রুম থেকে একটু দূরে দাঁড়িয়ে কল রিসিভ করলেন। ভিডিও কলে উদ্বিগ্ন মুখটা দেখা গেলো রায়ানের। আর আয়ান সাহেবের ঘর্মাক্ত মুখ দেখে অবাক হলো রায়ান।
– তুমি এতো ঘামালে কেন বাবা?
রায়ানের কথায় চমকে আয়ান সাহেব দ্রুত হাতের উলটো পিঠে গলা ও গালের ঘাম মুছে হাত ঝাড়তে ঝাড়তে বললেন,
– সিড়ি বেয়ে উঠতে গিয়ে ঘামিয়ে গেছি।
রায়ান চিন্তিত ভঙ্গিতে বললো,
– তোমার শরীর ঠিক আছে? কোলেস্টেরল বেড়ে যায়নি তো? বা প্রেশার?
আয়ান সাহেব বোকার মতো বত্রিশ দাঁত দেখিয়ে হেসে বললো,
– আমি ঠিক আছি। বয়স হচ্ছে তো।
রায়ান চিন্তিত ভঙ্গিতেই বললো,
– মা, অনু আর পূর্ণ কোথায়?
আয়ান সাহেব যেন এই কথার জন্য প্রস্তুত ছিলো। তিনি ব্যাক ক্যামেরা অন করে হাঁটতে লাগলেন পূর্ণর রুমের দিকে। যেন সবে এসেই কল রিসিভ করেছেন ছেলের। পূর্ণর দরজার সামনে এসে হালকা ভেজানো দরজাটা টোকা দিয়ে খুলে দেখালেন অনুবিকা, পূর্ণ আর রেহানা আড্ডায় ব্যস্ত। আয়ান সাহেবকে দেখে যেন সকলে অবাক হয়েছেন। আয়ান সাহেবও শুনিয়ে বললো,
– রায়ান দেখতে চেয়েছে।
আয়ান সাহেব গিয়ে মোবাইল ধরিয়ে দিলেন রেহানার হাতে। অনুবিকা উঠে এসে বসলো রেহানার পাশে। একটা চেয়ারে বসে রইলেন আয়ান সাহেব। পূর্ণ রায়ানকে শুনিয়ে বললো,
– আমি ওয়াশরুম থেকে আসছি আম্মু।
পূর্ণ ক্যামেরা থেকে সড়ে আয়ান সাহেবের পাশে বসে পড়লো। রেহানা আর অনুবিকা কথা বলতে লাগলো।
– কোথায় আছিস তুই? কি খবর ঐদিকের?
রেহানার প্রশ্নে রায়ান মৃদু হেসে বললো,
– পূর্ণ কোথায়?
অনুবিকা বোকা বোকা হেসে বললো,
– পূর্ণ তো ওয়াশরুমে গেছে ভাইয়া।
রায়ান মিষ্টি হেসে বললো,
– আজকে একদিনেই সব কাজ শেষ। আজকে রাতের ফ্লাইটে উঠবো আবার। অর্থাৎ আগামীকাল মধ্যরাতে বাংলাদেশের মাটিতে পৌছে যাবো। পূর্ণর সব নেওয়া হয়ে গেছে। অনু, তুই মুখ সামলে রাখিস। পুর্ণ যাতে কোনো ভাবেই না জানতে পারে কিছু। আর আমাদের একটা ছোট্ট ভুল হয়ে গেছে। ওর জন্মদিনে আর মাত্র ৩ দিন বাকি, ৭ দিন না। তাই তোরা আগামীকালই শপিং করে নে সব। আর বাপিকে বল কেক সহ সব জিনিসের অর্ডার দিয়ে রাখতে। ওকে? মা তুমি খেয়াল রেখো সব।
রেহানা আর অনুবিকা বোকা বোকা হাসতে লাগলেন। কারণ ভিডিও কলে স্পিকার অন থাকায় সবটাই পূর্ণ শুনেছে। পূর্ণ মলিন মুখে বসে আছে। সিদ্ধান্তটা কি নিয়ে ভুল করলো?
রুবিক্স কিউব হাতে মেঝেতে শোয়া একটা ২২ বছর বয়সী যুবক খুব মনোযোগ দিয়ে তার মনিমা অর্থাৎ ফুপুর কথা শুনছিলো। এতো ইন্টেরেস্টিং গল্প সে ফেসবুক ঘেটেও পায়নি। হঠাৎ মনিমা চুপ হয়ে যাওয়াতে অস্থির গলায় ছেলেটা বললো,
– এরপর কি হয়েছিলো ফুপি? তুমি না লক্ষী মনিমা? বলো না।
অনুবিকা মৃদু হাসলো আর বললো,
– এরপর তোর মাতাজি আমার ভাই আসার অপেক্ষায় ঘাপটি মেরে ছিলো। যেই না ভাই আসলো। অমনি তার লাগেজ থেকে সব চুরি হলো কাগজপত্র। এরপর তোর মা নিখোঁজ। তবে তোর মা কোথায় ছিলো ঐটা তোর দাদুই একমাত্র জানতো। দাদিমা আর আমিও জানতাম না। তোর বাবার সে কি অবস্থা। মিস্টার রায়ান জেন্টালম্যান থেকে হয়ে গেলো পাগলম্যান। পূর্ণ কোথায় চলে গেলো আর কেন চলে গেলো এই দুই প্রশ্ন নিয়ে সারাদিন কাতর থাকতো। এরপর মাসখানেকের মাথায় হয়ে গেলো রোবোম্যান। শুধু অফিস যায়, বাসায় আসে। নিশ্চুপ খাওয়া দাওয়া করে, ভুতের মতো নীরবে চলাফেরা করে। ভাইয়ের এই অবস্থা আমার সহ্য হলো। বাপ নেওটা, মা নেওটা অনেক হয়। কিন্তু আমি ছিলাম ভাই নেওটা। ভাইকে ভয় পেলেও ভাই অন্ত প্রাণ। দিলাম পূর্ণকে কল আর শুরু হলো ঝাড়ি। আমার ঝাড়ির চোটে তোর মা ৪ বছরের কোর্স ১ বছর ৪ মাস করেই বাড়িতে আসতে বাধ্য হলো। রায়ান পূর্ণকে পেয়ে যেন আবার পাগল হয়ে গেলো। তোর মা ততোদিনে ট্রিটমেন্ট করিয়ে সুস্থ স্বাভাবিক। কিন্তু তোর বাবা পূর্ণকে বাচ্চাদের মতোই ট্রিট করতো। খাইয়ে দিতো, কোলে নিয়ে ছাদে যেতো।
আরিয়ান হেসে ফেললো ফিক করে। অনুবিকাও দুলে দুলে হাসছে। আরিয়ান হাসতে হাসতে মুখ গোমড়া করে ফেললো। তা দেখে অনুবিকা কিছু বলতে যাবে। তার আগেই আরিয়ান অপ্রস্তুত হেসে বললো,
– মাকে খুব মিস করি মনিমা।
অনুবিকাও জল ছলছল চোখে বুকে জড়িয়ে নিলো আরিয়ানকে। এমন সময় সেই জায়গায় এলো বিহান। অনুবিকাকে কাঁদতে দেখে ছুটে এসে বললো,
– কাঁদছো কেন অনু? কি হলো? শরীর খারাপ লাগছে? মন খারাপ?
ফুপার এতো চিন্তা দেখে ফিক করে হেসে অন্যদিকে তাকালো আরিয়ান। অনুবিকা চোখ বড় করে রাগী স্বরে বললো,
– এখন তোমার মেয়ে কোনোদিক দিয়ে আসলে হবে। বেশরমির চোটে এই আদর সোহাগ বের করে দেবে।
অমনি রুমে আয়ান সাহেব ও রেহানার হাত ধরে টানতে টানতে প্রবেশ করলো ২০ বছর বয়সী আয়না। আয়ান সাহেব আর রেহানা নিজেদের ছাড়াতে ব্যস্ত। আয়ান সাহেব ব্যস্ত স্বরে বলে উঠলেন,
– কি হয়েছে বলবে তো প্রিন্সেস!
আয়না আয়ান সাহেব আর রেহানাকে অনুবিকার সামনে দাঁড় করিয়ে বললো,
– তোমার মেয়ের শাস্তি চাই আমি নানাজান। তোমার মেয়ে এই একই গল্প পূর্ণময়ীর বিসর্জন আমাকে পুরো না শুনিয়ে ঐ ককরোচটাকে শোনাচ্ছে। এর উপর আবার তোমারই মেয়ে আমার বাপির উপর অধিকার জমাচ্ছে, আমার আদরের ভাগ কেড়ে নিচ্ছে।
এই কথা শুনেই সোফায় অনুবিকার পাশে বসে থাকা বিহান সড়ে এলো। অনুবিকা রাগে কটমট করে ইশারায় বললো,
– এখন কেন সড়ে গেলে? এখন কেন? এসো এর পরের বার কাছে। দেখে নেবো আমিও।
বিহান পড়েছে মহা ফ্যাসাদে। মেয়েটা কার মতো হয়েছে তাই বুঝে উঠতে পারেন না। আয়ান সাহেব আর রেহানা মৃদু হেসে বসলেন সোফায়। আরিয়ানকে দেখে একটা ভেঙচি কেটে নানা ও নানির মাঝে বসে পড়লো আয়না। আরিয়ান বাঁকা হেসে অনুবিকাকে জড়িয়ে ধরে অনুবিকার কোলে মাথা রেখে দিলো মেঝেতে বসে। তারপর আয়নার দিকে তাকিয়ে ভ্রু নাচিয়ে ইশারায় প্রশ্ন করলো,
– এবার কেমন লাগে?
আয়না রেগেমেগে উঠে পড়তে গেলেও উঠলো না। সেও মেঝেতে বসে রেহানার কোলে মাথা রেখে আবারও ভেঙচি কাটলো। আরিয়ান প্রসঙ্গ পালটে প্রশ্ন করলো অনুবিকাকে।
– পূর্ণময়ীর বিসর্জন কেন গল্পের নাম? আর এরপর কি বাবা মায়ের বিয়ে সহজ সুন্দর ভাবে হয়ে গেছিলো?
অনুবিকা মৃদু হেসে আরিয়ানের চুলে হাত ডুবালো। আরিয়ান চোখ বুজে মাথা আরেকটু গুঁজে দিলো অনুবিকার কোলে মাতৃ স্নেহ পেয়ে। অনুবিকা বলতে শুরু করলো,
– পূর্ণময়ীর বিসর্জনই হয়েছিলো বটে। কথাটা আমরা সবাই বুঝলাম তখন, যখন ও বাড়িতে এসে থাকতে লাগলো আবারও। আগের মতোই নিষ্পাপ অথচ কঠোর ও দৃঢ় একটি চরিত্র হয়ে উঠেছিলো তোর মা। রায়ানকে বিয়ে করেও সংসার আর নিজের পড়ালেখা চালিয়ে যেতে লাগলো সে। ফ্যাশন ডিজাইনিং নিয়ে কোর্স শেষ করে কয়েকটা বুটিকের সাথে ডিল করে নিলো। নিজের ডিজাইন করা ড্রেস আর কিছু শ্রমিক নিয়ে শুরু করলো নিজের গার্মেন্টস। দিন কাটে, মাস কাটে, বছর কাটে। তোর জন্মের পরও সে থেমে থাকেনি। এখন বর্তমানে নামকরা মানুষ তোর মা মিসেস পূর্ণতা আহমেদ। নিজ পূর্ব স্বত্তাকে বিসর্জন দিয়ে নতুন করে ভালোবাসা টিকিয়ে রাখতে গড়ে উঠেছিলো তোর মা।
গল্প শেষ হতেই চোখ বুজে থাকা আরিয়ান পড়ে রইলো অনুবিকার কোলে মাথা রেখে। এমন সময় তার মাথায় হাতের স্পর্শ পরিবর্তন হলো যেন। আরিয়ান ভ্রু কুঁচকে বিষয়টা অনুধাবন করেই অন্যদিকে মুখ করে পড়ে রইলো চোখ বুজে। কাঠ কাঠ গলায় বললো,
– মনিমা? বলে দাও উনাকে। আমার জন্য দরদ দেখাতে হবে না। নিজের ডিলের জন্য আবার কানাডা উড়াল দিতে বলো।
পূর্ণ অসহায় চোখে তাকালো রায়ানের দিকে। রায়ান তাকে এয়ারপোর্টে রিসিভ করতে গেছিলো। আজকে যে সে আসবে, তা রায়ান ছাড়া কেও জানতো না। ছেলের জন্য সারপ্রাইজ। কেননা গত ৬ মাস ধরে সে কানাডায় ছিলো। পূর্ণর দৃষ্টি দেখে রায়ানও মুখ ফিরিয়ে নিলো। এতোগুলো বছরে অনেকবার পূর্ণ বাইরে গেছে। তবুও অভ্যেস হয়নি রায়ানের পূর্ণকে ছাড়া থাকার। তাই প্রতিবার পূর্ণকে এসে ছেলের আর জামাইয়ের, দুজনের রাগই ভাঙ্গাতে হয়। পূর্ণ রায়ানের কথা ভুলে ছেলের থুতনি ধরে মুখ উঠিয়ে কপালে চুমু খেলো। আরিয়ান চোখ খুলে লাল লাল চোখে তাকালো মায়ের দিকে। এরপর মায়ের কোলে মুখ গুঁজে পড়ে রইলো। পূর্ণ বুঝে নিলো। ছেলের অভিমান গলছে। আয়নাও এসে বাঁদরের মতো পূর্ণর গলা ধরে ঝুলে বসে রইলো। ব্যস পরিবারটা আবার পরিপূর্ণ ভেবেই রেহানা আর আয়ান একে অপরের দিকে তাকিয়ে শান্তির হাসি হাসলেন। এতিম বিহান যখন অনুবিকাকে বিয়ে করেছিলো। তখনও ভাবতে পারেনি পরিবারটা এতো সুন্দর হবে। সে অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলো প্রতিবারের মতো। অনুবিকার হাত চেপে সবার আড়ালে অনুবিকার কানে কানে বললো,
– ধন্যবাদ। আমাকে এতো সুন্দর একটা পরিবার দেওয়ার জন্যে।
অনুবিকা মিষ্টি হেসে জামাইয়ের হাত নিজের হাতের মুঠোয় নিয়ে নিলো।
.
.
রাতে আয়না আর আরিয়ানকে খাইয়ে দিলো পূর্ণ। সবার খাওয়া দাওয়া শেষে যে যে যাররুমে গেলো। তবে সব থেকে দেরিতে গেলো রুমে রায়ান। পূর্ণর উপর রাগ করে ছাদে অনেকটা সময় কাটিয়ে যখন রুমে গেলো সে। দেখলো রুম খালি। পূর্ণকে ছাড়া থাকা সম্ভব না ভালোই জানা আছে তার। তাই রাগ ভুলে ব্যালকনিতে গেলো। গিয়েই চোখ আটকে গেলো তার। নীল কালারের একটা শাড়ি পড়ে খোলা চুলে হালকা সাজগোজে দাঁড়িয়ে আছে পূর্ণ আকাশের দিকে তাকিয়ে। ঘরে কারোর উপস্থিতি অনুভব করতে পেরে ঘাড় ঘুড়িয়ে রায়ানের দিকে তাকালো। এরপর রায়ানের দিকে এগিয়ে যেতে নিলেই রায়ান হাতের ইশারায় থামিয়ে দিলো পূর্ণকে। দেখতে থাকলো দু’চোখ ভরে পূর্ণকে। বয়সের হালকা ছাপ পড়েছে। তবুও সেই আগের মতো মনকাড়া। এই মেয়েটাকে সে ভালোবাসতো, ভালোবাসে। আর শেষ নিশ্বাস অব্দি ভালোবেসে যাবে। রায়ান পূর্ণর একহাত টেনে নিজের বুকে মিশিয়ে নিলো পূর্ণকে। বুকে চেপে ধরে দাঁড়িয়ে থাকলো ব্যালকনিতে। অনেকক্ষণ পর মুখ খুললো রায়ান,
– তোমাকে অনেকগুলো ধন্যবাদ আমার জীবনে আসবার জন্য।
বুকে থেকেই মৃদু হাসলো পূর্ণ। কৌতুহল নিয়ে বললো,
– পূর্ণময়ীর বিসর্জন হয়ে গেছে অনেক। এখনের পূর্ণতা কি সত্যিই পেরেছে পূর্ণময়ীর মতো তোমার সবটা জুড়ে মুগ্ধতা নিয়ে বুরাজ করতে?
রায়ান মৃদু হেসে আরেকটু জড়িয়ে নিলো পূর্ণকে। এরপর মৃদু স্বরে বললো,
– পূর্ণময়ীকেও ভালোবাসতাম। পূর্ণতাকেও ভালোবাসি। তবে পূর্ণতাকে একটু বেশি ভালোবাসি। কারণ পূর্ণতা আমার ভালোবাসা বুঝে ভালোবাসা বিনিময় করেছে, আমাকে পূর্ণ করেছে তাই।
সেভাবেই থেকে গেলো নীরবে পূর্ণ আর রায়ান। এই ভালোবাসার সমাপ্তি না ঘটুক এই আশায় শেষ হলো পূর্ণময়ীর বিসর্জন।
সমাপ্ত