এক বস্তা অলঙ্কার পরে এক ভুতুড়ে বাড়ি শহর থেকে অনেক দুরে যেখানে মানুষের চিহ্ন টুকু নাই সেখানে একটা অদ্ভুত রুমে চৌকিখাটে বসে আছি । আমার পাশে বসে আছে এক সুদর্শন পুরুষ। যাকে আমার দেখার অনুমতি নাই, তবে তার শরীরের ঘ্রাণ আর অলৌকিক আলো আমাকে এটা জানান দিচ্ছে সে কোন সাধারণ মানুষ নয়।
অবশ্যই নয় কারন কোন সাধারণ মানুষ এমন হতে পারে না।
আজ আমার বিয়ে ছিল কিন্তু দুঃখ জনক ভাবে আমি পালিয়েছি।
এটা এতো গর্বের সাথে বলার কোন মানে নাই আমি জানি কিন্তু আমার বিয়েতে আমার মত ছিল না তাই পালিয়েছি।
কিন্তু পালাতে পালাতে যে শহর থেকে এতো দুরে চলে আসব এই আজব প্রাণীর সাথে দেখা হবে এটা ভাবি নি আমি কখনো ভাবি নি।
আমরা খুব কাছাকাছি বসে আছি কিন্তু লোকটা আমাকে তার দিকে ফিরতে একদমই বারণ দিয়ে দিয়েছে।
আর আমারও ওতো সখ নাই অন্য কাউকে দেখার, বাই দ্যা রাস্তা আমার কিন্তু ইচ্ছে হচ্ছে তার মুখ টা দেখার কারন তার শরীরের অদ্ভুত আলো আর মিষ্টি ঘ্রাণ জাস্ট অসাধারণ।
আমি কিন্তু ফ্লাট করছি না কেউ এটা ভেবো না প্লিজ।
সত্যি তাকে দেখতে বড্ড ইচ্ছে হচ্ছে।
আমার মনে মনে আকাশ পাতাল ঘুরে আসার প্রায় ২০ মিনিট পর ভদ্রলোক আমাকে বললেন,
–আপনি কেন এই রাতে বৌ সাজে পালিয়েছেন?
— আসলে বিয়েটা আমার মতের বিরুদ্ধে হচ্ছিল তাই।
–তাই বলে শহর থেকে এতো দুরে কেন আসতে গেলেন?
–ইচ্ছে ছিল ভুতেদের সাথে দেখা করার।
–বাহ্ আপনার ইচ্ছের তারিফ করতে হয় কিন্তু।
–দেখুন আমি আপনাকে দেখতে চাই।
–না দেখা যাবে না।
–কেন?
–প্রেমে পরলে সমস্যা ।
— হোয়াট প্রেমে আমি। আমি যাকে ফেলে পালাইয়াছি সে কতো সুন্দর আপনার ধারণা নাই।
–ধারণা থাকার প্রয়োজন নাই।
–কি মনে করেন নিজেকে?
–কিছুই না আল্লাহ তায়লার সৃষ্টি একটা প্রাণী আর কিছুই না।
–সেইটা তো বলছি দেখব আপনাকে।
–ক্ষমা করবেন,
–আমি ফিরবো কিন্তু।
–না ফিরতে পারবেন না।
–কিন্তু কেন?
–আমার উপর একটা ভবিষ্যৎ বাণী আছে আমি জীবনে প্রথম আমার মা বাদে যে নারীকে দেখব আমার বিবাহ তার সাথেই হবে।
–হোয়াট এই যুগে এসে এসব কথায় বিশ্বাস করেন আপনি মানে হাউ।
–আমি এ দুনিয়া থেকে আলাদা ইভেন আমি না আমরা কেউই এই দুনিয়ার না।
–মানে কি?
–মানে বললে ভয় পাবেন।
–ও হ্যালো যদি ভয় পেতাম না তবে এতো রাতে এই দুঃসাহস করতাম না ওকে।
–হুম আপনি খুব সাহসী মানুষ।
–হ্যাঁ।
–দেখুন যেহেতু রাত, এই রাতে আপনাকে ত আমি ছাড়তে পরি না । আবার দেখা গেল কোথাও কোন সমস্যায় ফেসে গেলেন তো রাতটা এখানে থাকুন সকালে চলে যাইয়েন।
–কেন এখনি চলে যাই।
–না এখনি যাবার কোন দরকার নাই।
–ওকে thank you এতোটুকু করার জন্য।
–ইটস ওকে।
কথাটা বলে সে রুম থেকে চলে গেল। কিন্তু তার মিষ্টি ঘ্রাণ আর সেই অদ্ভুত আলো কেন জানি না এখনো বুকের মাঝে শীতল হাওয়া বইয়ে দিচ্ছে।
–আই ওয়ান্ট টু সি হিম। এট এনি কস্ট।
বাট লোকটার কথা গুলো কেমন অদ্ভুত তাই না?
–আমাকে নিয়ে এতো না ভেবে খাবার খেয়ে নিন।
হটাৎ লোকটার কথা শুনে পেছনে ফিরতে আমি থ হয়ে গেলাম।
সাদা পাঞ্জাবী পরা চুল গুলো মাঝামাঝি অসম্ভব সুন্দর হলুদ ফর্সা লোকটা শরীরে অদ্ভুত আলো আর মিষ্টি ঘ্রাণ সব মিলিয়ে কি বলব লিখে প্রকাশ করা সম্ভব না।
ও দিকে অপর পাশে রোদ যেন সকাল কে দেখে দৃষ্টি স্থির করে ফেলছে।
সকাল আহামরী সুন্দরী না বিয়ে সাজে তাকে ঠিক কেমন লাগছে তা বুঝানোর ভাষা হয়ত রোদের নাই।
কিছু সময় দু’জন দু’জনের দিকে পাথরের মতো।
কিছু সময় পর রোদের খেয়াল এলো, সে সঙ্গে সঙ্গে অপর দিকে ফিরে পরলো,
–আপনি এটা কি করলেন আমি বলেছিলাম আপনাকে আপনি কেন আমার দিকে ফিরলেন?
কিছু সময় পর রোদ দেখলো সকালের কোন রেসপন্স নাই তাই সে আবার একি কথা বলল।
কিন্তু এবার ও কোন রেসপন্স না পেয়ে রোদ পেছনে ফিরে তাকায়,
মেয়েটা সেই একি দৃষ্টিতে তার দিকে তাকিয়ে আছে।
পলক হীন ভাবে।
রোদ একটু একটু করে সকলের দিকে এগিয়ে যায়।
কিন্তু সকাল তাও ঠিক সেভাবে তাকিয়ে আছে রোদের দিকে,
এবার রোদ সকালের এক দম কাছে চলে যেয়ে বলল,
–কি প্রেমে পরে গেলে তো?
–হু,
এবার সকালের ধ্যান ফিরল।
–ইয়ে মানে সরি আমি আসলে হটাৎ।
–আচ্ছা থাক দেখা যখন হয়েই গেল তখন আর এগুলা বলে লাভ নাই আপনি খাবার খেয়ে নিন।
–আমি আসলে,
–আপনি তো দেখছি খুব বেশি প্রেমে মগ্ন হয়ে গেলেন।
–কে বলছে এ কথা?
–আমি।
–কেন?
–কথাই বার হচ্ছে না ঠিক মতো তাই।
–আপনি সত্যি করে বলেন আপনি কে?
–আমি রোদ, রোদ ক্রিচান। এ দুনিয়ার কাছে একজন ইঞ্জিনিয়ার।
–রোদ ক্রিচান?
ক্রিচান কেমন শব্দ। আর এ দুনিয়ার কাছে মানে?
–আমাদের ওখানে সবি এমন অদ্ভুত।
–আপনাদের ওখানে মানে?
–তুমি বুঝবে না।
–আচ্ছা আমি আপনার সম্পর্কে জানলাম আপনি আমার সম্পর্কে জানতে চাইলেন না?
–না।
–কেন?
–কারন আমি সব জানি,
তুমি সকাল চৌধুরী। মা বাবার দুই মাত্র কন্যা এবার ইন্টার ১ম বর্ষে।
মা বাবা সত্যি খুব জলদি বিয়ে দিয়ে দিচ্ছে যা তোমার পছন্দ না তাই পালিয়েছো।
মাইন্ড টা তোমার বাচ্চা বাচ্চা তাই তো এই রকম একটা পদক্ষেপ নিছো।
নাহলে ভাবতা এই রাতে বার হচ্ছি তাও এই সাজে কোন বিপদ হলে কে সামলাবে এট অল।
আমি তো শুধু হা করে তার কথা শুনছি প্রতিটি কথা সত্যি।
তবে আমার মাইন্ড বাচ্চা বাচ্চা কি না জানি না কিন্তু সত্যি আমি ২ বার ভাবি নি এটা নিয়ে যে এতো রাতে এই সাজে বার হচ্ছি কেমনে কি হবে।
–জি হলো চুপ হয়ে গেলে কেন সকাল?
–আমি কি বলব আপনি তো সব বলে দিচ্ছেন।
–ও আচ্ছা তাই তো সকাল খেয়ে নেও।
–আমি এই সব পরে,
–আমি জানি গরম পরছে তাই খুব অসস্তি বোধ হচ্ছে তোমার , কিন্তু কিছুই করার নাই আমার কাছে তোমায় দেবার মতো পোশাক নেই।
–হুম খাবো না,
–একটা বুদ্ধি আছে যদি তুমি চাও তো অবলম্বন করতে পারো।
–কি?
–আমার পাঞ্জাবী আর পেটিকোট পরতে পারো।
–আমি পাঞ্জাবি!
–হ্যাঁ otherwise আমার কাছে কোন উপায় নাই।
–(হয়তো ওটা পরলে একটু কম্ফোর্ট ফিল করব। এভাবে থাকার থেকে ওনার বুদ্ধি নেওটা ভালো) মনে মনে,
–কি ভাবছো?
–আচ্ছা দিন।
উনি আমার কথা শুনে আলমারি থেকে সাদা রঙা একটা পাঞ্জাবি বের করে দিলেন।
–নেও।
আমি ওটা নিয়ে ওয়াশরুমে চলে গেলাম।
কাপড় পাল্টে পুরা ফ্রেশ হয়ে বেরিয়ে এলাম। সব সাজ তুলে।
দেখি ভদ্রলোক নাই।
টেবিলের উপর খাবার টা রাখা।
গিয়ে খাবার গুলো খেয়ে নিলাম।
অনেক ক্ষুদা পাইছিল সারা দিন প্লান করতে করতে কিছু খাই নি।
(বিঃদ্রঃ পালানোর প্লান)
খাওয়া শেষ করে পেছনে তাকাতে দেখি ভদ্রলোক হাজির।
এ এমন কেন আল্লাহ আমি তো কিছুই বুঝি না।
–আচ্ছা এখানে ঘুমিয়ে পড়ুন আমি বাইরে আছি।
কথাটা বলে সে চলে গেল।
আমি ওনার বিছনায় শুয়ে পরলাম কিছু সময়ের মধ্যে ঘুম চলে এলো,।
মাঝরাতের দিকে মনে হচ্ছে যেন সেই ঘ্রাণ আর কোন শীতল স্পর্শ,
চলবে,
পূর্ব_সকালে_রোদ?
পর্ব_০১
#লামিয়া_রহমান_মেঘলা