#পোড়া কপালী,১ম_পর্ব
#শতাব্দী_নাওয়ার
বিয়ের ৮ম দিনের দিন আজ আমি আমার বরকে এই প্রথম কাছ থেকে দেখতে পেলাম।আর ও আমার সামনে এসেই এভাবে আমার হাত কামড়ে ধরবে তা আমি কল্পনাও করতে পারিনি।সেই কামড়ে আমার হাত থেকে দরদর করে রক্ত পড়ছে।
আমি রিয়া।
জন্মের আগেই বাবাকে হারিয়েছি,
আমি যখন মায়ের ৫ মাসের পেটে।তখন আমার বাবা রোড এক্সিডেন্টে মারা যান।
আর আমার জন্মের সময় মা।
তাই অনেকেই আমাকে অপয়া,পোড়া কপালী বলে ডাকে।
বুঝ হবার পর থেকে একটু একটু খারাপ লাগলেও,পরে আর খারাপ লাগেনি।এখন আর লাগেইনা।কারণ শুনতে শুনতে অভ্যস্ত হয়ে গেছি এখন আমি।
শুধু অপয়া আর পোড়া কপালী না,কালমুখী,পোড়ামুখী,অলক্ষী কম বেশি সবই শুনতে হয় আমার।
ওই যে জন্মের আগে বাবাকে,আর জন্মের সময় মাকে খেয়েছি বলে।
আচ্ছা,কেউ কি চায় নিজে থেকে এতিম হতে?
নিজের বাবা মার আদর থেকে নিজেকে বঞ্চিত করতে?
আচ্ছা কার কষ্ট বেশি?আমার,নাকি যারা আমাকে এসব বলে গালমন্দ করে তাদের?
তারা আমাকে এই যে অপবাদ দেয়, একটা বার ভাবেনা আমি তো আমার বাবা মাকে খুন করিনি।তবে কেন আমাকে এত কটুকথা বলেন তারা।আমি যদি পারতাম আমার নিজের জীবনের বিনিময়ে হলেও তাদের প্রাণ ভিক্ষা চাইতাম।
চাইতাম একটা বার তাদের আদর পেতে ভালবাসা পেতে।
কিন্তু এ সমাজ যে আমাকে নাম দিয়েই দিয়েছে অপয়া অলক্ষী।
কারণ তাদের কাছে আমি আমার মা বাবার হত্যাকারী।
ছোট বেলা থেকে মানুষ হয়েছি নানা নানুর কাছে।নানা নানু স্কুলে পড়িয়েছেন।
যতটুকু পেরেছেন শখ আহ্লাদ পূরণ করেছেন।
কিন্তু তখনি আমার কপাল পুড়লো,যখন তারা দুজন এই পৃথিবী ছেড়ে মা বাবার কাছে চলে গেলেন।
এরপর থেকে শুরু হলো আমার উপর মামীর অত্যাচার।
সারাদিন রাত গাধার মত খাটাতেন,বিনিময়ে দু মুঠো পেট ভরে ভাতও দিতেন না।
কত রাত যে না খেয়ে কাটিয়েছি তার হিসেব নেই।
পড়া লেখাটাও মাঝ পথে বন্ধ করে দিলেন।
মামা বিদেশ থাকেন,সব রাজ্যতা মামীর আর তার পরিবারের।
একদিন মামী আমাকে কি মাইর টাই না মারলেন,
যেদিন তাকে আমি বললাম,
-মামী রনি মামা না আমার সাথে খারাপ আচরণ করেছে।(মামীর ভাই)
আমি যখন মামাকে চা দিতে গিয়েছি তখন।
আমি কোন মতে তাকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে পালিয়ে এসেছি।মামী আপনি তাকে বলে দিয়েন সে যেন আর আমার সাথে এমন না করে।
সেদিন খুব কেঁদে কেঁদে মামীকে কথা গুলো বলছিলাম।
আর মামী কিনা উলটা আমাকে পিটালো।
-কি?আমার ভাই তোর সাথে নোংরামি করতে চেয়েছিলো?এত বড় মিথ্যে অপবাদ?আমার ভাইয়ের রুচি কি এতই খারাপ যে তোর মত মেয়ের সাথে এসব করতে চাইবে।আজ তোর একদিন কি আমার একদিন,মিথ্যে বলার সাধ আমি আজ তোর মিটাচ্ছি।
সেদিন কি মাইর টাই না মেরেছিলো আমাকে।দুদিন বিছানা থেকে উঠতে পারিনি।
জ্বর এসে গেছিলো আমার।
জ্বরের কারণে কাজ করতে পারিনি বলে দুদিন পেটে ভাত ও পড়েনি।
আজ যদি আমার বাবা মা বেঁচে থাকতো তাহলে কি আমাকে এত কষ্ট করতে হতো?
তবুও কি আপনারা বলবেন,আমার মা বাবার মৃত্যুর জন্য আমি দায়ি?আমি খেয়েছি তাদের?
মামা হঠাৎ বিদেশ থেকে এসে আমার বিয়ের দিন তারিখ পাকা করে ফেললেন।
মামীরই কেমন আত্মীয় যেন ছেলে।
মনে মনে বললাম,থাক অন্তত এই নরক থেকে তো উদ্ধার হবো।
তাই ছেলেকে না দেখেই রাজি হয়ে গেলাম বিয়েতে।
মামা মামীতো আর খারাপ কারো সাথে আমাকে বিয়ে দিবেনা।
কিন্তু এ কি কান্ড,
বিয়ের ৭ দিন চলে গেছে অথচ আমি আমার বরকেই কাছ থেকে দেখতে পেলাম না।
বিয়ের দিন দূর থেকে যে একটু দেখেছি,ওই দেখাই শেষ দেখা।
ওই বাড়ীতে যাবার সময়ও আমাকে আলাদা নেয়া হয়েছে,
তাদের নাকি কি নিয়ম নতুন বর বধূকে ৭ দিন পর্যন্ত দূরে রাখতে হয়।
বিয়ের ৮ম দিনের দিন আজ আমি আমার বরকে এই প্রথম কাছ থেকে দেখতে পেলাম।আর ও আমাকে দেখে দৌড়ে আমার সামনে আসলো,আর এসেই আমার হাত টা ধরলো,
ধরতে দেরি কামড়ে দিতে দেরি নেই।
আর সেই কামড়ে আমার হাত থেকে দরদর করে রক্ত পড়তে শুরু করলো।
আর তা দেখে লোকটা হাতে তালি দিয়ে হাসতে শুরু করলো।
আর তার হাসি দেখে আমার চোখ থেকে পানি পড়তে শুরু করলো।