পোড়া_কপালী।পর্ব_১০ (শেষ)
#শতাব্দী_নাওয়ার।
কাজী সাহেব রিয়ার আর তানভীরের বিয়ে পড়ানো শুরু করলেন।
রিয়ার চোখ দীপ্তর চোখের দিকে।
দীপ্ত নয়ন ভরা জলে ঠোঁটে হাসি নিয়ে হাতের ইশারায় বলে,
তোমায় দারুণ লাগছে।
রিয়া হেচকি তুলে কাঁদতে থাকে।
দীপ্ত মাথা নাড়িয়ে ইশারায় কাঁদতে নিষেধ করে।
রিয়া এবার বসা থেকে উঠে দাঁড়িয়ে যায়।
-কি হলো রিয়া?বসো।
-আমি এ বিয়ে করতে পারবোনা তানভীর।
-কেন করতে পারবেনা?
-আমার পক্ষে এ বিয়ে করা সম্ভব না।
-কেন সম্ভব না?
-কারণ আমার এখনো ডিভোর্স হয়নি।
আর প্রথম স্বামী বর্তমান থাকা অবস্থায় বিয়ে করা যায়না।
-তুমি বসো,বিয়ের পর আমরা ডিভোর্স লেটার পাঠিয়ে দেবো।
-এ হয়না,আর হবেও না।আর আমি ওকে ডিভোর্স দিতে পারবোনা।
-কেন পারবেনা?
-কারণ আমি আজো ওকে ভালবাসি।আর আমি ওকে ভালবেসেই সারাজীবন কাটিয়ে দিতে চাই।
-যে কিনা তোমার কোন খবরই রাখেনি।বিয়ে করে সুখে আছে,তার জন্য তুমি কেন নিজের জীবন টা নষ্ট করতে চাও?কি হবে এমন বেঈমান কে ভালবেসে জীবন টা নষ্ট করে?
-চুপ একদম চুপ,আমি ওর সম্পর্কে আর একটা বাজে কথাও শুনতে চাইনা।
তবে আমার চেয়ে খারাপ আর কেউ হবেনা।
সবাই যেন চুপচাপ দাঁড়িয়ে শুটিং দেখছে।
আর ওরা যেন সিনেমা বা নাটকের অভিনয় করে যাচ্ছে।
-বাহ্ আজ প্রাক্তন স্বামীর জন্য দরদ উতলে পড়ছে।আসলে তোমার মত বাজে মেয়েদের কি ই বা বলার থাকে।
আর কিছু বলার নেই আমার।
-তানভীর,আর একটা কথাও না।নইলে খুব খারাপ হয়ে যাবে বলে দিচ্ছি।
-মানে কি দীপ্ত ভাই?আপনি কেন এমন রিয়েক্ট করছেন?
-তুমি আমার স্ত্রীকে যা তা বলে যাবে আর আমি চুপচাপ দাঁড়িয়ে দেখে যাবো?
-হা হা হা কি বলছেন ভাই?আপনার স্ত্রী?
আরে আপনার স্ত্রী হলেতো এক বছরে ওর খবরই নিতেন।আর বসে বসে বিয়ের তামাশা দেখতেন না।প্রথমেই বাধা দিতেন।
-কি বলতে চাও তুমি?
-কি আর বলতে চাইবো ভাই, আমি চাচ্ছিলাম আপনি বিয়ে টা বন্ধ করুন।বাধা দিন।কিন্তু না আপনি তো দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে আপনার বউ এর বিয়ে হয়ে যাওয়া দেখছেন।
আর শেষমেস রিয়াই দাঁড়িয়ে গেলো।
-তুমি সব জানো?
-কিছুই জানতাম না ভাই,আপনার মাকে যখন রিয়ার কাছে দিয়ে চলে আসছিলাম,
তখন মনে হলো রিয়ার কাজল নষ্ট হয়ে গেছে,তাই মুছে দিয়ে আসি।
যেই আমি আবার রুমের কাছাকাছি গেলাম,
দেখি আপনার মা আর রিয়া কাঁদছে।
আর আপনাদের জীবন কাহিনী আলোচনা করছে।
সব টুকু শুনলাম বাইরে দাঁড়িয়ে।
আর ভাবলাম হয়তো আপনি এ বিয়েটা হতে দিবেন না।কিংবা রিয়াই করবেনা বিয়ে।আর যদি দুজনই চুপ থাকেন তবেে সিদ্ধান্ত নিলাম,আপনার আর রিয়ার মিলটা আমিই করিয়ে দেবো।
এখনো এতটা বেঈমান হয়ে উঠিনি ভাই,
যে দুজন ভালবাসার মানুষকে আলাদা করে দিবো।
-তানভীর,
-থাক ভাই, আর কিছু বলতে হবেনা।
-আসলে আমিও চাচ্ছিলাম রিয়া নিজেই বিয়ের জন্য না করে দিক।
মনে মনে ভাবছিলাম,যদি আমার জন্য ওর মনে একটুও মায়া ভালবাসা থাকে,আর আমার ভালবাসা যদি সত্যি হয় তাহলে রিয়া ঠিক এই বিয়ের জন্য না করে দিবে।
তাই আমি চুপ ছিলাম।
আর দেখছিলাম রিয়া কি করে।
আমার বিশ্বাস ছিলো রিয়া এ বিয়ে কিছুতেই করবেনা।
রিয়া কেঁদে যাচ্ছে,কেঁদে যাচ্ছে তানভীর আর দীপ্তর মা।
-তানভীর,আমাকে ক্ষমা করে দিবেন আপনি।
-আরে পাগলী,তোমার কোন দোষ নেই।
আমি সরি,তোমাকে বাজে মেয়ে বলার জন্য।আসলে আমি চেয়েছিলাম দীপ্ত ভাই রিয়েক্ট করুক।
দীপ্ত ভাই তোমাকে খুব ভালবাসে,তার চোখের জলই তা প্রমাণ করে দিচ্ছে।
দীপ্ত ভাই এর সাথেই তুমি সুখী হবে।
আমার সাথে না।
দুজন এক হয়ে আমাকে এবার মুক্তি দাও।হা হা হা।
-তানভীর,তোমার এ ত্যাগ আমি কোন ভুলতে পারবোনা।
-আরে না ভাই কিসের ত্যাগ,
বিয়ে তো আমি করবোই।জামাই যখন সেজেছি।
মিস কারিমা,আপনি কি আমার মিসেস হবেন?
-হুম হবো।(কাঁদতে কাঁদতে)
-বউ যখন সেজেছি বিয়ে তো আমিও করবোই,
এই যে মিঃ দীপ্ত আপনি কি আরেক বারের মত মিসেস দীপ্তকে কবুল করে নিবেন?
দীপ্ত রিয়াকে সবার সামনে জড়িয়ে ধরে।
দুজনই কাঁদতে থাকে।
এদিকে তানভীর আর কারিমার বিয়ে হতে থাকে।
রিয়া দীপ্তকে হাত ধরে তানভীরের মায়ের রুমে নিয়ে যায়।
-কেমন করে খুঁজেছেন যে নিজের বউকে খুঁজে পান নি?মন থেকে খুঁজলে ঠিকি পেতেন।মন থেকে খুঁজেনি তো তাই পানও নি।
-কোন জায়গা বাদ রাখিনি যেখানে তোমাকে খুঁজিনি।
আমি কি করে জানবো আপনি বৃদ্ধাশ্রমে আছেন।বৃদ্ধাকালে হারালেও না হয় খুঁজতে যেতাম।কিভাবে ভাব্বো এই ইয়াং বয়সেই আমার বউ বৃদ্ধাশ্রমে ঠাই নিয়েছে।
-হয়েছে থাক,এত কিছু বলতে হবেনা।
আগে এটা বলুন,
ঝুমুর কেমন আছে?আর ওর কি হলো,ও তো আপনাকে খুব ভালবাসতো।
আর ওই দিন যে আপনাকে আর ঝুমুরকে এক সাথে দেখলাম,
আচ্ছা ওই দিন কি আপনি আমাকে দেখে আমার কাছেই আসছিলেন?
-এত গুলো প্রশ্ন এক সাথে করলে কোন টা রেখে কোন্টার উত্তর দিবো আমি হুম?
অই দিন ঝুমুর একাই শপিং করতে গিয়েছিলো,আর আমিও শপিং করতে গিয়েছিলাম,শপিং মলে হঠাৎ ই ওর সাথে আমার দেখা হয়।
তাই দুজন কথা বলছিলাম।
আর হঠাৎ করেই চোখ যায় আমার তোমার উপর।তাই ওকে ওখানে রেখেই তড়িঘড়ি করে তোমার দিকে এগিয়ে আসছিলাম।
কিন্তু যখন তোমার সাথে তানভীরকে দেখলাম,
বুঝে নিলাম তোমাদের মাঝে কোন সম্পর্ক আছে।আর যখন তুমি তানভীরের হাত ধরলে,তখন ধারণা টা আরো গভীর হলো।তাই আর আমি তোমায় বুঝতে দেইনি যে আমি তোমার কাছেই আসছিলাম।
-আর আমিও যখন আপনার পেছনে শাড়ী পরা অবস্থায় ঝুমুরকে দেখেছি তখনি তানভীরের হাত ধরেছি।
আর ভেবেছি,আপনি আমাকে চিনলেও যেন আমাকে ভুলে ঝুমুরকে নিয়ে সুখী হতে পারেন।
-আহারে দয়ার সাগরিকা।
-এটা আবার কি?
-কিছু না।
-আপনি ছেড়ে আসার পর ঝুমুরের কি হলো?
-আমার যখন বিয়ের আসরে তোমার কথা মনে পড়ে যায় আমি তখনই ঝুমুরের কাছে ক্ষমা চেয়ে চলে আসি।
আর বলি ও যেন কাউকে বিয়ে করে নেয়।
-তারপর?
-ঝুমুর ওর খালাতো ভাইকে বিয়ে করে নেয়।ওর খালাতো ভাই ওকে খুব ভালবাসতো।তাই আরো বিয়েটা সহজ হয়।
-তাই?কেমন আছে এখন ও?
-সেদিন যখন দেখা হলো ওর সাথে,বল্লো তো ভালো আছে।ওর বর নাকি ওকে খুব ভালবাসে।
-আলহামদুলিল্লাহ্।
ঝুমুরের সাথে ওর কাজিনের বিয়ে হয়।
ঝুমুর যখন স্মৃতিশক্তি হারিয়ে চুপচাপ থাকতো কোন কথা বলতোনা,তখন ফাহাদ (ওর কাজিন ব্রো)এসে ওকে অনেক হাসানোর চেষ্টা করতো,কথা বলানোর চেষ্টা করতো।
কোন কথা না বল্লেও,ঝুমুর ওর কান্ড দেখে হাসতো।
ফাহাদ ওকে সুস্থ করার চেষ্টা করতে করতে কখন যে ঝুমুর কে ভালবেসে ফেলে ও তা নিজেও জানেনা।
ভেবেছে ঝুমুর সুস্থ হলে ঝুমুরকে বলবে।
কিন্তু এরই মধ্যে যখন ঝুমুরের ওর অতীত মনে পড়ে যায়,তখন ফাহাদ ওদের বাসায় আসলে ও ফাহাদকে বলে ও কয়েক দিনের মধ্যেই বিয়ে করতে যাচ্ছে দীপ্তকে।
যাকে ও খুব ভালবাসে।তাই আর ফাহাদ ঝুমুরকে ওর ভালবাসার কথা বলেনা।
কিন্তু যেদিন দীপ্ত বিয়ের আসর থেকে উঠে চলে আসে সেদিন ফাহাদ ঝুমুরকে সবার সামনে বলে,
-ও যাকে ভালবাসে ও তার কাছে চলে গেছে।
আমি তোকে ভালবাসি,তুই কি আমার হাত ধরবি সারাজীবনের জন্য?
আমি তোর সাথে সারাজীবন কাটাতে চাই।
তুই যখন অসুস্থ ছিলি তখনও তোকে হাসানোর চেষ্টা করেছি।
আর বাকি জীবনও তোকে হাসানোর দায়িত্ব নিতে চাই।
দিবি সেই দায়িত্ব আমায়?
ঝুমুর ওর বাবার মুখেও শুনেছে ফাহাদ ওর কতটা যত্ন নিয়েছে।আর ঝুমুরকে ফাহাদ কতটা ভালবাসে।
ঝুমুরের বাবাও ঝুমুরকে বলেন বিয়ে করে নিতে ফাহাদকে।
আর ঝুমুরও ফাহাদের ওর প্রতি ভালবাসা দেখে বিয়েতে রাজি হয়ে যায়।
আর ওইদিনই ফাহাদ আর ঝুমুরের বিয়ে হয়ে যায়।
-চলো রিয়া,তানভীর আর কারিমার বিয়ে হয়তো হয়ে গেছে এত ক্ষণে।
এবার আমরা আবার বিয়ে টা করে নেই।
-হুহ,আমি এমন পঁচা মানুষকে বিয়ে করিনা।
-একবার যখন করেছেন,এ জীবনে আর ছাড়াছাড়ি নেই।সারা জীবন এই পঁচা মানুষটার সাথেই কাটাতে হবে।
-আমি শুধু এই জীবন না,মৃত্যুর পর যেই জীবন আছে,যেই জীবনের শুরু আছে শেষ নেই।সেই জীবন টাও এই পঁচা মানুষটার সাথেই কাটাতে চাই।
-লাভ ইউ।
-লাভ ইউ টু।
বিয়ে হয়ে যায় তানভীর আর কারিমার।
তারপর ২য় বারের মত বিয়ে করে নেয় দীপ্ত আর রিয়া।
ঝুমুরও ফাহাদকে নিয়ে ভালো আছে।
তানভীর কারিমা,
ঝুমুর ফাহাদ,
দীপ্ত রিয়া সুখে শান্তিতে বসবাস করতে থাকে।
শেষমেস পোড়া কপালীর জীবনে দীপ্ত নামের সুখ পাখিটা এসে বাসা বাধে।আর রিয়ার জীবনের সকল দুঃখ কষ্ট মুছে দিয়ে সুখ,শান্তি আদর ভালবাসায় ভরিয়ে দেয় রিয়ার জীবন।
(সমাপ্ত)
সবাই ভালো থাকুন,সুস্থ থাকুন,এই দোয়া করি।
আর আমার জন্যও সবাই দোয়া করবেন।
আল্লাহ্ হাফেজ!