#পোড়া_কপালী,পর্ব_৫
#শতাব্দী_নাওয়ার।
দীপ্ত ঘুমাচ্ছে,
কি নিষ্পাপ একটা মুখ।
আর কতই না ভালো মানুষটা।
কি থেকে কি হয়ে গেছে।
আমিও পাশ ফিরে দুচোখ বন্ধ করে শুয়ে পড়লাম।
তার কিছুক্ষণ পরই দেখি দীপ্ত আমাকে জড়িয়ে ধরছে।
এই কি করছেন আপনি?ছাড়ুন আমাকে,ছাড়ুন।
দীপ্ত আমাকে আরো শক্ত করে জড়িয়ে ধরছে,
মা মা,দেখো কত রক্ত,ওমা আমি রক্ত দেখবোনা,আমাকে বাসায় নিয়ে চলো।ও মা এটা কে?এত রক্ত কেন ওর মুখে?
মা বাসায় চলো।
দীপ্তর কথা গুলো শুনে বুঝতে আর বাকি রইলোনা আমার,
ও যে ঝুমুরের লাশ স্বপ্নে দেখেছে।
আর তাই আঁতকে উঠেছে।
ভয় পাচ্ছে।
আর আমি কিনা কি না কি ভেবে নিয়েছিলাম মানুষটার বিষয়ে।
-এই যে, উঠুন উঠুন।চোখ খুলুন,দেখুন কিছু নেই।কিছু নেই সামনে।
কোন রক্ত নেই এখানে।
তাকান তাকান।
-না আমি চোখ খুলবোনা।
-খুলুন প্লিজ।দেখুন কোন কিছু নেই,
আচ্ছা ছাড়ুন একটু আমাকে আমি লাইট টা জ্বালিয়ে দেই।চোখ খুলুন,দেখুন আমি এখানে,আপনার বউ।আর কেউ নেই।
-না না,আমি ছাড়বোনা।তুমি চলে গেলে আমি আরো ভয় পাবো।
আমি অনেক ক্ষণ পর্যন্ত বুঝিয়ে দীপ্তর চোখ খুলালাম
লাইট জ্বালালাম।
-দেখেছেন?কিছু আছে?কেউ আছে?
আছে কোন রক্ত?
আমি আর আপনি ছাড়া কেউ নেই।
দীপ্ত যখন চারপাশ চেয়ে দেখলো আসলেই কিছু নেই।তখন আবার শুয়ে পড়লো।
-তাহলে আমি এত রক্ত কিভাবে দেখলাম?
-আপনি স্বপ্ন দেখেছেন।আর স্বপ্নে মানুষ কত কিছু দেখে।ওগুলা কিছুনা।
ঘুমিয়ে পড়ুন,
আমি আপনার মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছি।
আমি দীপ্তর মাথায় হাত বুলিয়ে দিলাম,আর দীপ্ত ঘুমিয়ে পড়লো আমার অপর হাতটা ধরে।
যেভাবেই হোক দীপ্তর মন থেকে ভয় টা আগে দূর করতে হবে।
সকাল বেলা ঘুম থেকে জেগে রান্না ঘরে গিয়ে নাস্তা বানালাম।
-এ কি মা তুই কেন করছিস এগুলো?
তুই এ বাড়ীর নতুন বউ,সারাজীবনতো তোকেই এগুলো করতে হবে।
এখন না হয় একটু রেস্ট কর।
-আমার এগুলো করে অভ্যেস আছে মা।
আপনি যান টেবিলে গিয়ে বসুন আমি নাস্তা নিয়ে আসছি।
নাস্তা রেডি করে দীপ্তকে ডেকে তুল্লাম,
বলে বলে ব্রাশ করালাম।
ফ্রেশ হয়ে অন্য ড্রেস পরে আসতে বললাম।
যা যা বলছি তাই তাই ই করছে ও।
ভাবিনি এত ইজি হয়ে যাবে সব কিছু।
নাস্তা করা হলে,
দীপ্তকে জিজ্ঞেস করলাম, আজ দুপুরে কি খাবেন আপনি?
-কেন তুমি রান্না করবে?
-হ্যাঁ আমি রান্না করবো।কি খাবেন বলুন।
-সরষে ইলিশ খাবো।পারো রান্না করতে?
-হ্যাঁ পারি।আচ্ছা ঠিক আছে আমি আজ তাই রান্না করবো।
কিন্তু ইলিশ মাছ যে বাজার থেকে নিয়ে আসতে হবে।
-ইলিশ মাছ আছে তো রিয়া ফ্রিজে।(মা)
-মাকে ইশারা দিয়ে বললাম,না মা ওটা শেষ।
-ও হ্যাঁ শেষ তো।
-আপনি আনতে পারবেন বাজার থেকে ইলিশ মাছ?
-আমি?
-হ্যাঁ আপনি।আপনি ছেলে মানুষ না?ছেলেরাই তো বাসার বাজার করে।
পারবেন না আপনি মাছ কিনে আনতে?
-হ্যাঁ পারবো।মা মা,ব্যাগ আর টাকা দাও আমি ইলিশ মাছ আনতে যাবো।
-ও কি পারবে রে মা?
-আমি আছিতো মা,চিন্তা করবেন না।
দীপ্ত টাকা আর বাজারের ব্যাগ নিয়ে বাজারের উদ্দেশ্যে রওনা দিলো।
বাসা থেকে বাজার ৬ ৭ মিনিটের পথ।
দীপ্ত অসুস্থ হবার পর মায়ের সাথে কয়েক বারই বাজারে গেছে তাই ও বাজার টা ঠিকই চিনে।
আমিও দীপ্তর পেছন পেছন বাজারে গেলাম ওকে ফলো করতে করতে।
এমন ভাবে গেলাম যাতে ও না দেখে।
বাজারে গিয়েই ইলিশ মাছের দোকানে ঢুকেছে ও।
-ভাই ভাই,আমাকে একটা ইলিশ মাছ দেন।
-কয় কেজি নিবেন ভাই?
-একটা মাছে যে কয় কেজি হয় তাই দেন।
লোকটা একটা মাছ ওকে ব্যাগে ভরে দিলো।
দীপ্ত তাকে ১০০০ টাকার একটা নোট দিয়ে চলে আসলো।সে আর ডাকলোও না।
আমি লোকটার কাছে গিয়ে উপস্থিত হলাম।
দীপ্তকে ডেকে নিয়ে গেলাম।
-মাছ কত টাকা কেজি?
-৭০০
-এটা কয় কেজি?
-১ কেজি আপা।
-তাহলে আর ৩০০ টাকা কই?
-না মানে,উনি টাকা না নিয়েই চলে গেছে।
-তাই বলে আপনি ওকে ডেকে দিবেন না?
-এই নেন আপা ৩০০ টাকা।
-দেখেছেন কি করে কেনা-কাটা করতে হয়?
আগে দাম জিজ্ঞেস করতে হয় তারপর কিনতে হয়।
কখনো কখনো বিক্রেতারা দাম বেশি চায়।আর তখন দাম কমিয়ে বলতে হয়।
মনে থাকবে?
-হুম মনে থাকবে।
-এবার চলুন বাসায় চলুন।
-তুমি কখন এলে?
-আপনার পিছু পিছুই এসেছি,জানতাম আপনি টাকা বেশি দিয়ে আসবেন হুহ।
-সরি।
-এই নিন,মাছের ব্যাগ আপনার হাতে নিন।
-আচ্ছা দাও।
কিছু দূর যাওয়ার পর দেখি একটা কুকুর,বার বার মাছের ব্যাগের দিকে মুখ বাড়াচ্ছে।
আর দীপ্ত বার বার আমার আড়ালে লুকাচ্ছে।
-এই যে,আপনি বার বার আমার কাছে এসে লুকাচ্ছেন কেন?
আপনি না ছেলে মানুষ?মেয়েরা ভয় পায় কুকুর দেখে।ছেলেরা না।
আপনি এটাকে তাড়ান।
-কিভাবে তাড়াবো?আমিতো ভয় পাই।
-আপনি কুকুর টার সামনে সাহসী হয়ে দাড়ান।বুক ফুলিয়ে দাঁড়ান আর জোরে একটা ধমক দিন।দেখবেন ও নিজেই ভয় পেয়ে চলে গেছে।
-সত্যি?
যদি কামড় দেয়?
-কিচ্ছু করবেনা।আমিতো আছি।
-আচ্ছা ঠিকাছে।
দীপ্ত এবার সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে দুইবার জোরে জোরে নিঃশ্বাস নিয়ে কুকুর কে এক ধমক দিয়ে বল্লো,
-ওই গেলি?এক্কেবারে মারবো হুস।(হাত দিয়ে থাপ্পড় দেখিয়ে)
আর কুকুর দৌড়ে চলে যায়।
-দেখেছো কুকুর পালিয়েছে?ইয়াহু আমি সাহসী।
-হুম আপনি সাহসী।আর কখনো কোন কিছুতে ভয় পাবেন না,ওকে?
-ওকে।
বাসায় এসে রান্না করলাম।
আমি যত ক্ষণ রান্না করেছি তত ক্ষণ দীপ্ত আমার পাশে দাঁড়িয়ে ছিলো।
ভাজির জন্য ফুলকপি আর আলুও কেটে দিতে দিয়েছিলো।
আমি কাটতে দেইনি।
রান্না শেষে দীপ্তকে বললাম এবার চলুন গোসল করবেন।আর গোসল করে আমরা নামাজ পড়বো।আপনি মসজিদে যাবেন।আর আমি বাসায় পড়বো।তারপর নামাজ পড়ে আপনি আসলে আমরা সবাই এক সাথে দুপুরের খাবার খাবো।
দীপ্ত আমার কথা মত গোসল করে নামাজ পড়তে মসজিদে চলে গেলো।
মা আমাকে ডেকে বললেন,
-মারে,তুই যে আমার ছেলেটাকে সুস্থ করতে পারবি এটা আমার বিশ্বাস ছিলো।কিন্তু এত তাড়াতাড়িই যে ওকে সব কিছু বুঝাতে পারবি,ও তোর সব কথা শুনবে তা আমি স্বপ্নেও ভাবিনি।
-আপনি শুধু দোয়া করবেন মা।আমি আপনার আগের সেই দীপ্তকে আপনার বুকে ফিরিয়ে দেবো।
-দোয়া করি তুই তোর কাজে সফল হ।আর সুখে থাক তোরা সারাজীবন।
এভাবেই দিন কাটছে,
আমি যেকোন ভাবে দীপ্তকে পারিবারিক জীবন,সামাজিক জীবন,বাস্তবতা সম্পর্কে জ্ঞান দিচ্ছি, বুঝাচ্ছি।
আর ও গুড স্টুডেন্টের মত সব বুঝে যাচ্ছে,বুঝে নিচ্ছে।
মা ও তার ছেলের সুস্থতা দেখে খুশি।
আর কিছু দিন গেলেই হয়তো দীপ্ত ওর আগের সব স্মৃতি ফিরে পাবে।সব কিছু হয়তো মনে পড়ে যাবে।
কিন্তু মাঝে মাঝে চিন্তা হয়,তখন যদি দীপ্ত আমাকে না চেনে?তখন কি হবে?এই পোড়া কপালীর কপালে সুখ সইবেতো?
আবার এই ভেবে আনন্দও হয়,ও সুস্থ তো হয়ে উঠবে।আর এটাইতো আমি চাই।
সুন্দর ভাবেই চলে যাচ্ছে আমাদের জীবন।
দীপ্ত এখন অনেকটা সুস্থ।স্বাভাবিক ভাবে কথা বলে,স্বাভাবিক ভাবে চলাফিরা করে।
একদিন দীপ্ত আর আমি শপিং করে বাসায় ফিরছিলাম।
কিছু জামা-কাপড় কেনাকাটা করে।
আমার হাত থেকে একটা ব্যাগ পড়ে যায় বলে আমি ব্যাগ টা উঠাতে থাকি আর দীপ্ত ৩ ৪ কদম সামনে চলে যায়।
আর তখনি একটা বাস এসে দীপ্তকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেয়।
আর আমি দীপ্ত বলে চিৎকার করে উঠি…