#পোড়া_কপালী,পর্ব_৯
#শতাব্দী_নাওয়ার।
হঠাৎ ই রিয়া ওর চোখের পানি মুছতে থাকে।
যখন রিয়ার চোখ যায়,খয়েরী রঙের শাড়ী পরে দীপ্তর পেছনে দাঁড়িয়ে থাকা ঝুমুরের উপর।
রিয়া সঙ্গে সঙ্গে তানভীরের হাত ধরে বলে উঠে,এই শাড়ীটা পরে মা আরাম পাবে।এটা নাও।
আর দীপ্ত এসে বলে উঠে,
-আরে তানভীর তুমি এখানে?
-এইতো ভাই মায়ের জন্য শাড়ী কিনতে এসেছিলাম।আপনিও বুঝি শপিং করতে এসেছেন?
-হ্যাঁ,শার্ট কিনতে এসেছি,আবার ও শাড়ী কিনবে।
তো ইনি কে?
-ইনি হচ্ছেন,
-থাক থাক বুঝতে পেরেছি আর বলতে হবেনা।
-আচ্ছা শপিং করো তাহলে,ও ওখানে দাঁড়িয়ে আছে।আমি যাই।
তানভীর আর দীপ্ত একই অফিসে জব করে।
ঝুমুর দীপ্তর দিকে অপলক চেয়ে থাকে।
আর মনে মনে বলতে থাকে,
-আমার দীপ্ত আমাকে চিনলোনা।
অথচ আমি ভেবেছি ও আমাকে চিনেই আমার দিকে এগিয়ে আসছিলো।
থাক,ঝুমুরকে নিয়ে ভালো থাকুক ও।সুখে থাকুক।
রিয়া আর তানভীরের শপিং শেষ।ওরা যার যার মত ওদের গন্তব্যে চলে যায়।
রিয়া কিছুতেই দীপ্তর মুখটা ভুলতে পারছেনা।
তানভীরের মা পরের দিন আবার আসে রিয়ার কাছে।
অনেক অনুরোধ করে,কান্না করে বুঝায়।
লিপি দিদি আর আশ্রমের সবাই ওকে বুঝায়,তাই রিয়া শেষমেস রাজি হয় তানভীর কে বিয়ে করতে।
বিয়ের ডেইট ফিক্সড হয়।
তানভীর দীপ্তকে বিয়ের দাওয়াত দেয়।সাথে অফিসের সবাইকে।
-ভাই আমার বিয়ের দাওয়াত রইলো।বাসার সবাইকে নিয়ে অবশ্যই আসবেন।
-লাভ ম্যারেজ করছো না?কত দিনের রিলেশন তোমাদের?
-লাভ আবার এরেঞ্জ দুটোই।
-যেমন?
-ওই যে ভাই কথায় আছে না প্রথম দেখায়ই ভালবাসা।ওরকম আরকি,
আমি প্রথম দেখায়ই ওকে ভালবেসে ফেলেছি।
-আর ও এখন পারিবারিক ভাবে বিয়ের জন্য রাজি হয়েছে।
তাহলে দুটোই হলোনা?
-দোয়া করি সুখী হও।
-হ্যাঁ ভাই,ওর জীবনেও অনেক কষ্ট।আমি ওর সব দুঃখ কষ্ট ভুলিয়ে সুখের সীমানায় নিয়ে আসতে চাই।
-আল্লাহ তোমাদের মঙ্গল করুন।
রিয়া আর তানভীর দুজন মিলে বিয়ের শপিং করে নেয়।
আজ রিয়ার আর তানভীরের বিয়ে। তানভীরদের বাসায় রিয়াকে আগেই নিয়ে আসা হয়েছে।
সাজানো হয়েছে রিয়াকে।
রিয়াকে আজ অপ্সরীর মত লাগছে।
রিয়াকে যখন বিয়ের সাজে সাজানো হয় তখন রিয়া বার বার ওর আর দীপ্তর বিয়ের কথা মনে করছিলো।
ওই স্মৃতি রিয়ার মনে বার বার দোলা দিচ্ছিলো।
আমি কেন পারছিনা দীপ্ত তোমাকে ভুলতে?
কেন পারছিনা?
তানভীর তো দেখতে ভালো,আমাকে খুব ভালও বাসে।তাহলে কেন পারছিনা আমি তানভীরের দিকে মন আনতে?
কেন আমার মন থেকে সরে যাচ্ছোনা তুমি?
প্লিজ আমায় মুক্তি দাও এবার।এবার তো মুক্তি দাও।প্লিজ প্লিজ প্লিজ।
রিয়া একা একা এসব বলে কাঁদতে থাকে।
একটু পরেই রিয়ার আর তানভীরের বিয়ে।
দীপ্ত এসে গেছে,সাথে ওর মা ও এসেছে।
দীপ্তদের অফিসের অনেকেই এসেছে।
তাদের মধ্যে কারিমা নামের মেয়েটা চোখের জল লুকাচ্ছে বারে বারে।
নক মুখ ফুলে আছে মেয়েটার।
কি হয়েছে কে জানে?
-এই কারিমা,কি হয়েছে তোমার?বাসায় কোন সমস্যা হয়েছে?চোখ মুখ ফোলা কেন?কেঁদেছ কেন?এ্যানিথিং রং?
-রাইট ই বা ছিলো কবে তানভীর ভাই?
-কি হয়েছে খুলে বলো তো?
-এখন আর বলেই বা কি হবে?
-আজব!না বললে জানবো কি করে?
-আমি জানিনা তানভীর ভাই,কবে কখন কিভাবে আমি আপনাকে ভালবেসে ফেলেছি,আপনাকে নিয়ে স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছি।কিন্তু এভাবে আমার স্বপ্ন গুলো যে ভেঙে যাবে তা আমি কোন দিনও ভাবতে পারিনি।
-তুমি তো কখনো বলোনি আমায়।
-ভেবেছি বলবো,কিন্তু তার আগেই আপনার বিয়ের দাওয়াত পেলাম।
-প্লিজ মন খারাপ করোনা,কপালের লিখন কেউ বদলাতে পারেনা।
-হুম হয়তো তাই।সুখী হোন।দোয়া থাকলো।
-যাও ভেতরে বসো।
দীপ্ত দীপ্তর মাকে নিয়ে এসেছে।
ওর এক বন্ধুর বিয়ে বলে,
দীপ্ত দীপ্তর মায়ের সাথে তানভীরকে পরিচয় করিয়ে দেয়।
তানভীর দীপ্তর মাকে রিয়ার কাছে নিয়ে যায় পরিচয় করিয়ে দিতে।
রিয়া পেছন ফিরে দাঁড়িয়ে আছে।
-রিয়া,এই দেখো উনি আমার বন্ধু দীপ্তর মা।
আর আন্টি ও হচ্ছে রিয়া।
-আসসালামু আলাইকুম।
-আচ্ছা তোমরা কথা বলো আমি ওদিক টা দেখছি।
দীপ্তর মা ধীর পায়ে রিয়ার দিকে এগিয়ে আসে।
রিয়ার দুচোখ ভরা জল।
-কেমন আছিস রে মা?
-ভালো আছি মা।
-এত তাড়াতাড়ি ভুলে গেলি রে মা।কত খুঁজেছি আমরা তোকে।
আমার দীপ্তটা পাগলের মত খুঁজেছে।
একটা বারও কি আসতে পারিসনি আমাদের দেখতে?এতটা পাষাণ কি করে হলি রে তুই?
-মা,দীপ্ত?ও আমার কথা জানে?
-হ্যাঁরে মা জানে।তোকে কত খুঁজেছে ও।
-কেন খুঁজেছে মা?এখন তো আর ওর জীবনে আমাকে প্রয়োজন নেই।ওর জীবনে তো এখন ওর ভালবাসা ঝুমুরই আছে।
-কেউ নেই রে মা কেউ নেই।
আমার ছেলে একা,খুব একা।আমি ছাড়া কেউ নেই এখন আর ওর জীবনে।
-ঝুমুর কে ও বিয়ে করেনি?
-নারে মা,ঝুমুর একদিন বিয়ের সব আয়োজন করে আমাদের ওদের বাসায় নিয়ে যায়।
-তারপর?
-বিয়ের কেনা কাটাও করে
দীপ্ত আর ঝুমুর দুজন।
যখনি বিয়ের জন্য দুজন বসে।
আর কাজী বিয়ে পড়ানো শুরু করে তখন কেন যেন দীপ্ত হঠাৎ উঠে দাঁড়িয়ে যায়।
-কি হয়েছে?উঠলি কেন?বস।
-মা,
-কি রে বাবা বস।
-মা আমি কেন আবার বিয়ে করতেছি?
আমি তো এ বিয়ে করতে পারবোনা।
-কি বলছো তুমি দীপ্ত?
-ঠিকই তো বলছি,
-এ সব কি বলছিস বাবা তুই?
-হ্যাঁ মা,আমার তো বিয়ে হয়েছে।আমার চোখের সামনে সব ভাসছে মা।আমি তো অন্য কাউকে কবুল বলেছি।আমি বর সেজে কাউকে বিয়ে করে আনতে গিয়েছিলাম।
আমার বিয়ে হয়েছে।সব কিছু মনে পড়েছে আমার।
সব কিছু মা।
আমি বিবাহিত।আমার স্ত্রী আছে।আমি কেন তাহলে আমার স্ত্রী থাকতেও আরেকজনকে বিয়ে করবো?এ হয়না।
আমার পক্ষে এ বিয়ে করা সম্ভব না।
আমাকে ক্ষমা করে দিও ঝুমুর।
তুমি অন্য কাউকে তোমার জীবন সঙ্গী করে নিও।
আমাকে ক্ষমা করবেন আংকেল।
ক্ষমা করে দিবেন সবাই আমাকে।
আসি।
এই বলে দীপ্ত আমাকে নিয়ে ঝুমুরদের বাসা থেকে চলে আসে।
বাসায় এসে তোকে খুঁজে।
ওর নাকি তোর সাথে কাটানো সব মুহূর্তের কথা মনে পড়ে গেছে।
কিন্তু তোকে খুঁজে পায়না।
আমাকে তোর কথা জিজ্ঞেস করে,আমি সেদিনের সব কথা ওকে খুলে বলি।
আর বলি তুই কোথায় আমি তা জানিনা।
এরপর ও তোর মামার বাসায় যায়।
সব জায়গা তন্নতন্ন করে খুঁজে কিন্তু পায়না।
ও আজো তোরই আশায় আছে মা।
আজো তোর আশায় আছে।
আমি নিজেও জানিনা আজ তোর বিয়েতে ও আমায় নিয়ে এসেছে।
ও বলেছে ওর এক বন্ধুর বিয়ে।
রিয়া চিৎকার করে কাঁদছে দীপ্তর মাকে জড়িয়ে ধরে।
কি করবে কিছুই বুঝতে পারছেনা।
হঠাৎ ই তানভীরের মা রুমে ঢুকে।
-রিয়া, মা।
-জ্বী।
-চলো, কাজী সাহেব ডাকছেন।আপা চলুন।ওদের বিয়ে পড়াবে এখন।
রিয়াকে তানভীরের মা এবং দীপ্তর মা দুজন মিলে ধরে নিয়ে আসেন।
তানভীরও জামাই বেশে বসে আছে।
এদিকে কারিমা চোখ মুছে যাচ্ছে বার বার সবার আড়ালে।
রিয়া দীপ্তর দিকে তাকাতেই দেখে দীপ্তর নয়ন ভরা জল,হঠাৎ ই বৃষ্টির মত চোখ থেকে ঝড়ে পড়ছে।
-বসো রিয়া।(তানভীর)
রিয়া বসে।
আর মনে মনে ভাবে,ভাগ্যের লিখন না যায় খন্ডন।আল্লাহ্ যা করেন বান্দার ভালোর জন্যই করেন।আর এখন তিনি যা করবেন সবার ভালোর জন্যই করবেন।
কাজী সাহেব রিয়ার আর তানভীরের বিয়ে পড়ানো শুরু করলেন।
চলবে