পোড়া_কপালী,২য়_পর্ব

0
708

#পোড়া_কপালী,২য়_পর্ব
#শতাব্দী_নাওয়ার।

তার কামড়ে আমার হাত থেকে দরদর করে রক্ত পড়তে শুরু করলো।
আর তা দেখে লোকটা হাতে তালি দিয়ে হাসতে শুরু করলো।
আর তার হাসি দেখে আমার চোখ থেকে পানি পড়তে শুরু করলো।

আমি কাঁদছি তা দেখে লোকটার হাসি থেমে গেলো।
-কি হয়েছে তোমার, কাঁদছো কেন?

আমি কোন উত্তর না দিয়ে কেঁদেই যাচ্ছি।

-কি হয়েছে তোমার?কাঁদছো কেন?আমি তো দুষ্টুমি করেছি।

লোকটার কথা গুলো একদম বাচ্চা দের মত।

-ওমা!তোমার হাত থেকে দেখি রক্ত পড়ছে।

এই বলে সে নিজেই এখন কান্না শুরু করে দিলো।

নিজের জ্বালায় বাঁচিনা,এদিকে উনার কান্না শুরু।

কাঁদতে কাঁদতে নিজের দাঁত দিয়ে কিভাবে যেন নিজের গায়ের শার্ট টা ছিঁড়ে ফেল্লো সে।
আর কিছু অংশ আমার হাতে পেঁচিয়ে দিলো।

-সেরে যাবে দেখো,সেরে যাবে।
তুমি ভয় পেও না কেমন?
আমি ফুঁ দিয়ে দিচ্ছি, ফুঁ ফুঁ।

আমি মানুষটার দিকে অদ্ভুত দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছি।
আমার আর বুঝতে বাকি নেই,মানুষটা মানসিক ভাবে অসুস্থ।

অসুস্থ হওয়া সত্বেও কি সুন্দর ভাবে আমার হাতে শার্টের টুকরোটা বেধে দিলো।আবার আমার হাত থেকে রক্ত বের হচ্ছে দেখে কান্না করলো।

আর দেখতেও কি সুন্দর।
চোখ দুটো দেখলে তাকিয়েই থাকতে ইচ্ছে করে,কি নিষ্পাপ চাহনি।
কি অদ্ভুত সুন্দর হাসি।
মায়া ভরা মুখ।
দেখলে বোঝাই যায়না সে যে মানসিক রোগী।

কিন্তু মানুষটার এই অবস্থা হলো কি করে?নাকি জন্ম থেকেই উনি এমন।
আমাকে তা জানতে হবে।

আর মামা মামীর কাছে আমি এতটাই বোঝা ছিলাম তা এখন বুঝতে পারছি।
তাই তো তারা আমাকে এই মানুষটার সাথে বিয়ে দিয়েছেন।যে কিনা নিজের ভালো মন্দই বুঝেন না।আর সংসার কি বুঝবেন।

পোড়া কপালীর কপাল টাই বুঝি পোড়া।এ কপালে বুঝি আর সুখ নেই।

মামা মামী,তোমরা এত টা নিষ্ঠুর না হলেও পারতে।
সমস্যা নেই আমি এ বাড়ীর ছায়ায়ই থাকবো।তোমাদের বাড়ীতে আর পা রাখবোনা।মানসিক ভাবে অসুস্থ এই মানুষটাকে যে আমি বিয়ে করেছি।
স্বামী যে আমার এখন সে।
তাই তাকে ছেড়ে আমি কোথাও যাবোনা।
আর যেভাবেই হোক তাকে আমি সুস্থ করে তুলবো।
আর এটাই আমার প্রতিজ্ঞা।

-এই কি ভাবছো তুমি?
-না কিছুনা।
-চলো চলো তুমি এখন রেস্ট নিবে চলো।তোমার হাত থেকে কত রক্ত বের হয়ে গেছে।এখন তোমার ডিম দুধ আর ভালো ভালো খাবার খেতে হবে।রেস্ট নিতে হবে,তাহলেই তুমি সুস্থ হয়ে যাবে।
-লোক টা তো অনেক কিছুই বুঝে দেখছি।
পাগল হবার অভিনয় করছে না তো আবার?
-এই কি হলো?চলো চলো।

সে আমাকে ধরে তার রুমে নিয়ে গেলো।
এখানে শুয়ে থাকো।
আমি মাকে ডেকে নিয়ে আসছি।

-কি হয়েছে রিয়া?তোমার হাত থেকে নাকি রক্ত বের হচ্ছে?কিভাবে কি হলো?
-যে আপনাকে ডেকে নিয়ে এসেছে তাকেই জিজ্ঞেস করুন।
-কিভাবে হয়েছে এমন দীপ্ত?
-আমি দুষ্টুমি করে কামড়ে দিয়েছিলাম ওকে মা।(কান্না করে)
-এ কি করেছিস তুই?তুই জানিস ও তোর কি হয়?
-কি হয়?
-ও তোর বউ।তোর স্ত্রী।তুই ওকে মারবিনা,কামড় দিবিনা ওকে ভালবাসবি,আদর করবি।কেউ ওকে মারতে আসলে তাকে মেরে দিবি।ওর যত্ন নিবি।তুই তো ওর বর,ওর স্বামী।

-আমি ওর বর?ও আমার বউ?ছোট বেলায় না কত বর বউ খেলতাম ওই বর বউ?
-হ্যাঁ ওই বর বউ।কি বলেছি মনে থাকবে?
-হুম থাকবে।
-ঠিক আছে,তুই এখন একটু বাইরে যা,আমি রিয়ার সাথে একটু কথা বলবো।
-আমার বউর সাথে কথা বলবে?আমার সামনেই বলো।
-মায়ের কথা না শুনতে হয় বাবা?সোনা বাবা আমার,যা না একটু বাইরে।
-আচ্ছা যাচ্ছি।কিন্তু বেশি ক্ষণ কিন্তু আমি বাইরে থাকবোনা বলে দিলাম।আমি আমার বউর সেবা করতে চলে আসবো।
-আচ্ছা ঠিক আছে।এবার তো যা।
-যাচ্ছি।

দীপ্তর মা আরকি আমার শাশুড়ি মা আমার হাত ব্যান্ডেজ করে দিতে দিতে বললেন: আমি জানি মা,আমরা তোমাকে ধোকা দিয়েছি।
তোমাকে না জানিয়ে আমার অসুস্থ ছেলেটার সাথে তোমাকে বিয়ে দিয়েছি।
যা করা আমাদের মোটেও ঠিক হয়নি।

কিন্তু বিশ্বাস করো,আমি চাইনি তোমার কাছ থেকে এসব গোপণ রাখা হোক।
তোমার মামা মামীকে আমি বলেছিলামও তোমাকে জানিয়ে দিতে।

কিন্তু তারা বললেন,তোমাকে বিয়ের পরেই জানাবে।
আর আমার কাছে তো আমার ছেলের বিয়েটাই ছিলো অনেক বড় কিছু।
তাই আমি আর জোর করিনি তাদের।
ডাক্তার আমাকে বলেছেন যে করেই হোক দীপ্তকে বিয়ে করাতে।
আর বউ এর সেবা,আদর, ভালবাসাই পারবে ওকে সুস্থ করে তুলতে।
এছাড়া আর কোন পথ নেই।

কেননা বছর ২ হয় তারা অনেক চেষ্টা করেছেন।কিন্তু ওকে পুরোপুরি সুস্থ করে তুলতে পারেননি।কিন্তু কিছুটা সুস্থ হয়েছে বটে।
তাদের ধারণা যদি ও বিয়ে করে,
ওর বউ যদি ওর সেবা যত্ন করে,ওকে ভালবাসে তবে হয়তো ও সুস্থ হয়ে যেতেও পারে।আর যদি না হয় তবে আর তারা কিছু বলতে পারবেন না।আল্লাহর উপর ছেড়ে দিবেন।

আমাকে তুমি ক্ষমা করো মা।
বাপ মরা এক মাত্র ছেলে আমার।ওর ভালোর জন্যই আমি এসব করেছি।ক্ষমা করে দাও তুমি আমাকে।ক্ষমা করে দাও।

কথা বার্তায় বুঝতে পারলাম আমার শাশুড়ি মা খুব ভালো মানুষ।
সে তার ছেলের ভালোর জন্য আমাকে না জানিয়েই তার ছেলের সাথে আমার বিয়ে দিয়েছেন।
যেকোন মা ই তার সন্তানের ভালো চাইবেন।
আমিও তাই চাইবো।
তাই তার কান্না দেখে আমি তাকে ক্ষমা করে দিলাম।

-আপনার ক্ষমা চাইতে হবেনা মা।আপনি আপনার ছেলের জন্য এমন করেছেন।
আপনার জায়গায় আমি হলেও হয়তো।তাই করতাম।
দোষ তো করেছে আমার মামা মামী,দোষ আপনার না।
আপনি কাঁদবেন না।

-বলো তুমি আমাকে ক্ষমা করেছো,
-হ্যাঁ মা আমি আপনাকে ক্ষমা করে দিয়েছি।

আজ থেকে তুই আমার বউমা না,তুই আমার মেয়ে।আমার মেয়ের মত থাকবি তুই এ বাড়ীতে।
আর আজ থেকে আমার ছেলের সব দায়িত্ব তোর উপর।
তুই যেভাবেই পারিস মা আমার ছেলেটাকে সুস্থ করে তোল।

আর ডাক্তার রা তো আছেনই।
আমার এক মাত্র ছেলের এই অবস্থা আমি আর দেখতে পারছিনা মা।
আমি আর দেখতে পারছিনা।

-মা,উনি কি জন্ম থেকেই এমন?
-না না,ও একদম সুস্থ ছিলো।একদম সুস্থ ছিলো ও।আমার ছেলে ডিগ্রী পাশ জানিস?
স্কুল থেকে ও সব সময় ভালো রেজাল্ট করে এসেছে।
স্কুল কলেজের স্যার ম্যাডামরা ওর জন্য আমাকে কত সম্মান দিতো।

এই যে আশে পাশের মানুষ গুলোও আমাকে বলতো,
দীপ্তর মা,তুমি নিশ্চয়ই কোন ভালো কাজ করেছিলে,তাই তুমি এমন সোনার টুকরো ছেলে পেয়েছো।

গর্বে আমার বুক টা ভরে যেতো।

-তাহলে কিভাবে হলো এমন মা?
-আজ থেকে ২ বছর আগের কথা যখন ও মাস্টার্সে পড়ে।
আমি রান্না করছিলাম আর ও আমাকে পেছন থেকে এসে জড়িয়ে ধরে বল্লো…

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here