পোড়া_কপালী ৩য়_পর্ব।
#শতাব্দী_নাওয়ার
-তাহলে কিভাবে হলো এমন মা?
-আজ থেকে ২ বছর আগের কথা যখন ও মাস্টার্সে পড়ে।
আমি রান্না করছিলাম আর ও আমাকে পেছন থেকে এসে জড়িয়ে ধরে বল্লো,
-আমার লক্ষী মা,রান্না করছো তুমি?
-দেখতেই তো পাচ্ছিস।কিছু বলবি?
-তুমি এই বয়সেও কত খাটা খাটনি করো।এখন তোমার বিশ্রামের প্রয়োজন,আর তুমি কিনা এত কাজ করো।
কত করে বললাম একটা কাজের মেয়ে রেখে দেই,না।তা রাখবেনা।
-কাজের লোক দিয়ে কি আর সব কাজ হয় বাবা?
-তাইতো ভাবছি,কিভাবে আমার মায়ের কষ্ট টা লাঘব করা যায়।
-হয়েছে হয়েছে,মায়ের জন্য এত দরদ দেখাতে হবেনা।
কি বলতে এসেছিস তাই বল।
-কি আবার বলতে আসবো?এমনিই এসেছি।
-না বাবা আপনি এমনিই আসেন নি,
আজ হঠাৎ মায়ের প্রতি এত ভালবাসা জেগে উঠেছে।
মায়ের জন্য এত চিন্তা হচ্ছে হঠাৎ করে।
নিশ্চয়ই এর পেছনে কোন কথা আছে।
বাপ জান বলে ফেলুন বলে ফেলুন।
কি বলবেন হুম?
বলুন বলুন।কিছু লাগবে?
-না মানে ইয়ে,
-কি বল?
-মা আমি একটা মেয়েকে ভালবাসি।
-কিহ?
-তুমি রাগ করলে মা?
-না না,রাগ করবো কেন?আমিতো অবাক হচ্ছি রে।আমার ছেলে কাউকে ভালবাসে।তারমানে আমার ছেলে এখন বড় হয়ে গেছে।
অথচ আমি তো ভাবতাম আমার দীপ্ত সেই পিচ্চি দীপ্ত টাই আছে।
-এভাবে বলোনা,লজ্জা লাগেতো।
-আহা,প্রেম ভালবাসার সময় লজ্জা লাগেনি,এখন লজ্জা লাগে।
-এবার বল মেয়েটা কে?কি করে?দেখতে কেমন?
-ওর নাম ঝুমুর,আমার সাথেই পড়ে।আমরা দুজন এক সাথে পড়ি।দেখতে ভালোই।তোমার পছন্দ হবে।
-তাহলে আর কি সমস্যা?দুজন পড়তে থাক,মাস্টার্স শেষ কর দুজনি।তারপর তুই আরো ভালো একটা জব নিয়ে বিয়ে করে নিস।
আমার কোন আপত্তি নেই।তোর পছন্দই আমার পছন্দ।
ওকে একদিন বাসায় নিয়ে আসিস।
-আচ্ছা আনবো,কিন্তু সমস্যা হচ্ছে ওরা খুব ধনী।ওর বাবা আমার কাছে হয়তো ওকে বিয়ে দিতে রাজি হবেন না।
এদিকে ওর জন্য নাকি পাত্রও দেখছেন তারা।
-তাহলে উপায়?
-আমি জানিনা মা,আমি ওকে খুব ভালবাসি।আমাদের ৪ বছরের সম্পর্ক।আমি ওকে ছাড়া থাকতে পারবোনা,যে করেই হোক আমি ওকে চাই মা।
ওকে ছাড়া আমার জীবন টা নষ্ট হয়ে যাবে।
-এভাবে বলিস না বাবা,
তুই আমার এক মাত্র ছেলে।জীবনে তোর কোন ইচ্ছে আমি অপূর্ণ রাখিনি।
ওকেও তোর করে দেয়ার চেষ্টা করবো বাবা।
আল্লাহ্ যদি ভাগ্যে রাখেন তবে ও তোরই হবে।
আমি ওর বাবার সাথে কথা বলবো,বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে ওদের বাসায় যাবো।
-লাভ ইউ মা।
-পাগল ছেলে আমার।যা বস আমি নাস্তা দিচ্ছি।
নাস্তা করে ও খুশি মনে কলেজে চলে যায়।আর আমি ভাবতে থাকি কি করে ঝুমুরের বাবাকে আমি রাজি করাবো।
-ঝুমুর ঝুমুর ঝুমুর।
-কি হলো কি হলো?ছাড়ো ছাড়ো পড়ে যাবোতো।
-আমি মাকে তোমার কথা বলে দিয়েছি।
-তারপর তারপর?
-তারপর,
-তারপর কি?বলো।
-তারপর মা,
-তারপর মা কি দীপ্ত?
-মা বলেছেন,
-কি বলেছেন?
-বলছেন,
-আরে বাবা কি বলেছেন,
বলবেতো নাকি?
-বলেছেন তার কোন আপত্তি নেই,আর মা তোমাদের বাসায় বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে যাবেন।তোমার বাবাকে যেভাবেই হোক রাজি করাবেন।
-সত্যি বলছো?
-হ্যাঁ হ্যাঁ সত্যি বলছি।
-থ্যাংক ইউ সো মাচ দীপ্ত।
-শুধু থ্যাংক ইউ তে চলবেনা,আরো কিছু দিতে হবে।
-কি?
-এই যে পাপ্পি।
-ওটা বিয়ের পর দিবো।আপনার পাওনা রইলো।
-ধ্যাত।
-হি হি।
-আচ্ছা শোনো,মা আরো বলেছেন।
তোমাকে একদিন বাসায় নিয়ে যেতে।
যদি তোমাকে তার দেখে পছন্দ হয়,তবেই যাবেন প্রস্তাব নিয়ে।
-সত্যি?আর যদি পছন্দ না হয় আমাকে?
-না হলে বিয়ে হবেনা।
(ঝুমুর কান্না শুরু করে দিয়েছে)
-এই না না আমি মজা করেছি,মা এমনিই তোমাকে নিয়ে যেতে বলেছেন।তোমাকে দেখবেন বলে,আর এসব তো আমি মজা করে বললাম।
-যাও তোমার সাথে আর কথা নেই।
-সত্যি চলে যাবো?
-এই না না।
-পাগলীটা।
ভালোই চলছিলো ওদের সম্পর্ক।
একদিন দীপ্ত ঝুমুরকে আমাদের বাসায় নিয়ে এলো।
-তারপর?(রিয়া)
-তারপর,ঝুমুর আমার পায়ে হাত দিয়ে সালাম করলো।
-এই কি করছো কি করছো?পায়ে হাত দিয়ে সালাম করতে হয়না।মুখে সালাম দিলেই হয়।আর তুমি আমার মেয়ে আমার বুকে থাকবে।
-সত্যি মা?
তারপর ঝুমুর আমাকে জড়িয়ে ধরলো।
আমি ঝুমুরকে আর দীপ্তকে খেতে দিলাম।
দুজনের খাওয়া দাওয়া শেষে আমরা গল্প করলাম।ঝুমুরের সাথে কথা বলে বুঝতে পারলাম ঝুমুরও দীপ্তকে খুব ভালবাসে।
আর যেকোন মতে ওকেই বিয়ে করতে চায়।ওরও টাকা পয়সা বাড়ী গাড়ীর প্রতি কোন লোভ নেই।লোভ শুধু দীপ্তর ভালবাসা পাবার।কথা বার্তা শেষে দীপ্ত ওকে ওদের বাসার সামনে পর্যন্ত এগিয়ে দিয়ে আসলো।
আমারো ঝুমুরকে খুব পছন্দ হলো।
তাই পরের দিন দীপ্তকে নিয়ে আমি ঝুমুরদের বাসায় গেলাম।
ঝুমুরের বাবা খুব ব্যস্ত মানুষ।তার হাতে যেন সময়ই নেই।
ঝুমুরের অনুরোধে তিনি ৩০ মিনিটের জন্য বাসায় এসেছেন।
ঝুমুর আমাদের নাস্তা দিলো।
ঝুমুরের বাবার কল আসছেতো আসছেই।
-জ্বী,কি ব্যাপারে নাকি কথা বলতে এসেছেন আপনারা আমার সাথে।ঝুমুর বল্লো।
ছেলের জব লাগবে?
-না ভাইজান,আমার ছেলে একটা জব করে।
-তাহলে?
-আসলে ঝুমুর আর আমার ছেলে দীপ্ত দুজন একই সাথে পড়াশোনা করে।
-হুম তো?
-আর ওরা দুজন দুজনকে খুব ভালবাসে,পছন্দ করে।
আমিও এটা কিছু দিন হয় জেনেছি।আমার ছেলে আমাকে জানিয়েছে।
তাই ভাই আমি চাই আপনি ওদের সম্পর্ক টা মেনে নিন।
-কি বলছেন আপনি?যা বলছেন ভেবে চিন্তে বলছেন তো?
ঝুমুর উনি যা বলছেন তা কি সত্যি?
-হ্যাঁ হ্যাঁ হ্যাঁ বাবা সত্যি।
-তুই ছেলেটাকে ভালবাসিস?ওকে বিয়ে করতে চাস?
-হুম বাবা।
-তোর কি মনে হয় তুই ওকে বিয়ে করলে সুখী হবি?
ও তোর সব চাহিদা মেটাতে পারবে।সব ইচ্ছে পূরণ করতে পারবে।
-হ্যাঁ বাবা।
-বাহ্ আমার মেয়ে বড় হয়ে গেছে,নিজের ভালো মন্দ এখন নিজেই বুঝতে শিখে গেছে।
এমন কি নিজের লাইফ পার্টনারও সে নিজেই ঠিক করে ফেলেছে।
তাহলে আর আমাকে দরকার কি?
তোমরা নিজেরাই বিয়ে করে নিতে।
-ভাইজান,আপনি রাগ করবেন না।আমি বুঝি আপনার মনের অবস্থা।কিন্তু দেখুন,ওরা নিজেরা দুজন দুজনকে পছন্দ করেছে ঠিকই।কিন্তু আমাদেরও জানিয়েছে।আর আমাদের অনুমতি নিয়েই ওরা বিয়ে করবে।
যদি ওরা আমাদের অবাধ্য সন্তান হতো তাহলে ওরা নিজেরাই বিয়ে করে নিতো।আমাদের আর জানাতোনা।
ভাই আপনার কাছে আমার অনুরোধ,আপনি ওদের সম্পর্ক টা মেনে নিন।
আমার ছেলে ওকে খুব ভালো রাখবে।
খুব ভালবাসে আমার ছেলে আপনার মেয়েকে।
-এই ছেলে,তুমি আমার মেয়েকে ভালবাসো?
-জ্বী বাসি।
-কত টুকু বাসো?
-যত টুকু বাসলে ওকে ছাড়া ভালো থাকা যায়না।
-ওকে ভালো রাখতে পারবে সারাজীবন?
-জ্বী পারবো।
-আমার মেয়েকে কোন দিন কষ্ট দিতে পারবেনা।রাজি আছো?
-জ্বী আমি রাজি।
-তাহলে আর দেরি কেন?ডেকে আনো কাজী।
-বাবা, তুমি রাজি?
-কেন আমাকে কি পাষাণ পিতা মনে হয়?
তোর সুখই তো আমার সুখ রে মা।
-লাভ ইউ বাবা।
-আপা তাহলে বিয়ের ব্যবস্থা করুন।আগে ওরা বিয়ে পাশ করুক,তারপর মাস্টার্স পাশ করবেনে।
ঝুমুরের বাবার কথা শুনে আমরা সবাই হেসে দিলাম।
ভাবতেই পারিনি উনি এত সহজে ওদের বিয়ের জন্য রাজি হয়ে যাবেন।
আসলে মানুষের বাইরের রুপ দেখে বোঝা যায়না মানুষ ভেতরে কেমন।
তার মন কেমন।
-তারপর কি হলো মা?(রিয়া)
-তারপর একদিন ময় মুরুব্বিরা মিলে সবাই বিয়ের দিন তারিখ ঠিক করলো।
ঝুমুর আর দীপ্ত খুশিতে আত্মহারা।
ওরা যেন পুরো পৃথিবী হাতের মুঠোয় পেয়ে গেলো।
আর ৫ দিন পরই ওদের গায়ে হলুদ।
-তারপর?
-তারপর একদিন সন্ধ্যায় দীপ্ত আর আমি বিয়ের আয়োজন সম্পর্কে আলোচনা করছিলাম আর ওই মুহূর্তে দীপ্তর মোবাইলে একটা ফোন এলো।
আর দীপ্ত ফোনটা রিসিভ করে কানে দেয়ার সাথে সাথে ওর মোবাইল টা হাত থেকে ফ্লোরে পড়ে গেলো…