প্যারানরমাল #পর্ব_৩_৪_ও_শেষ_পার্ট

0
874

প্যারানরমাল
#পর্ব_৩_৪_ও_শেষ_পার্ট
বিনতে_লোহানী_ফিদা
০৩

শূ্ণ্যে ভাসছে।
আবার মুখ দিয়ে কেমন সব আওয়াজ করছে।
আমি দৌড়ে গিয়ে পারুলের গায়ে হাত দিতেই মনে হলো,কেউ একজন ওকে ছুড়ে নিচে ফেলে দিলো।
তারপর থেকে পারুল অসুস্থ।
কোমড়ের একটা হাড় ভেঙে গেছে।
সোহানকে বিষয়টা জানাতেই ওকে খানিকটা চিন্তিত মনে হলো।
ও হয়তো ভাবছে কিছু।
পারুল প্রায় ২ দিন কিছুই খায়নি।
এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে শুধু।
এতো টুকু একটা মেয়ে,
আজ আমার জন্য ওর কি অবস্থা।
নিজেকেই খুব অপরাধী মনে হচ্ছে আমার।
ওকে আমার কোন প্রশ্ন করতে ইচ্ছে করছেনা,কি হয়েছে,কি হয়নি,কিছুই না।
দুধের গ্লাসটা হাতে ওর পাশে বসতেই
ও বলে উঠলো,
-আপু আমি বাড়ি যাইতে চাই।
এখানে আর থাকবো না আপু।
ভাইয়াকে বলো আমি বাড়ি যাবো।
আচ্ছা আচ্ছা শান্ত হ।
তোকে বাড়ি দিয়ে আসবো।
টিকেট করতে গেছে তোর ভাইয়া।
কাল সকালেই তোকে রেখে আসবে।
আজ লক্ষি মেয়ের মতো দুধটুকু খেয়ে ঘুমিয়ে পড়তো।

সারারাত পারুলের চিন্তায় ঘুমাতে পারিনি।
আজ সোহান পারুলকে রাখতে যাচ্ছে ওর বাসায়।
আমাদের বাসাতেই ওর এতো বড় ক্ষতি হলো তাই সোহানকে বলেছি তুমিই রেখে আসো ওকে।
আর ওর মায়ের হাতে কিছু দিয়েও এসো।
আমি আজকের রাতটা একা থাকতে পারবো।
ও কাল সকালে আবার ব্যাক করবে।

পারুলের ব্যাক গুছিয়ে দিচ্ছিলাম এমন সময় পারুল বলে উঠলো,
আপু তোমাদের এই বাড়িতে ভুত আছে।
ভুত আছে না কি আছে আমি জানিনা,
কিন্তু পারুলকে এই সময় ভয় দেখালে চলবেনা।
তাই আমি হাসতে হাসতে বললাম,
তাই,কেমনরে ভুত দেখতে কেমন জানিস তুই?
পারুল চোখ বড়বড় করে বললো,
একদম কালো কুচকুচে দুইটা ভুত।
মানুষের থেকেও অনেক লম্বা।
ওই যে সেদিন ওরাই তো আমাকে ছাদে ধরে রাখছিলো।
বলতে বলতেই সোহান চলে এলো।
পারুল রেডি?
চলো বের হতে হবে।
তারপর আমাকে বিদায় জানিয়ে দুজনে চলে গেলো।

খুব একটা শান্তি পাচ্ছি না আমি।
ভয় পাচ্ছি আজ রাতে বাসায় আমি একা।
আর পারুল,ও যে দুইটা লোকের কথা বললো,ও তো ভুল কিছু দেখেনি।
সত্যি তো আছে ওরা।
ওরা কে?
কেন ওরা এখানে?
এই বাসাটা এখন আমার কাছে বিভৎষ।
তেলের বোতলটা বেরকরে রান্নাঘরে রেখে এলাম।
আমি আমার রুমে শুয়ে আছি।
৩.৩০ বাজে।
হঠাৎ রান্নাঘর থেকে খসখস আওয়াজ আসছিলো।
বুঝতে পারছিলাম রান্নাঘরে কেউ এসেছে।
হয়তো ওই দুইজন।
কিন্তু আমি মনেমনে ঠিক করলাম
না আমি ওইদিকে মনোযোগ দিবো,
না দেখতে যাবো।
আমি আমার ফেসবুক স্ক্রল করে যাচ্ছি।

এভাবে থাকতে থাকতে কখন যে ঘুমিয়ে পড়েছি মনে নেই।
ঘুম ভেঙে দেখি পুরো বাড়ি অন্ধকার।
বুঝতে পারলাম সন্ধ্যা পেরিয়েছে।
দিনের বেলা কোন রুমেই আমি লাইট দেইনা।
তাই পুরো বাড়ি এখন অন্ধকার হয়ে আছে।
আমি ফোন হাতে নিয়ে ফ্লাশটা অন করে পাশে চোখ যেতেই দেখি,
বিরাট লম্বা মোটা একটা লোক আমার পাশে হাত পা ছিটিয়ে উপর হয়ে সুয়ে আছে।
চোখ দুটো চকচক করে জ্বলছিলো।
আমি চিৎকার দিয়ে বিছানা থেকে উঠে দাড়ালাম।
সাহস করে ফ্ল্যাশলাইট টা আবার বিছানায় দিতেই দেখি বিছানা ফাঁকা।
আমি ধীরেধীরে সব ঘরের লাইট জ্বালিয়ে দিলাম।
রান্নাঘরের লাইট জ্বালিয়ে দেখি,
পুরো মেঝেতে তেল চিপচিপে হয়ে আছে।
আমি সেদিকে আর চোখ না দিয়ে ড্রইং রুমে আসলাম।
টিভি দেখছিলাম।
হঠাৎ মনে হলো,
গেস্ট রুম থেকে বেডরুমের দিকে কে যেনো হেটে গেলো।
আমি সোফায় বসে থাকায় স্পষ্ট দেখতে না পেলেও বুঝতে পারছিলাম বারবার হাটচলা করছিলো।
পা টেনে টেনে হাটার আওয়াজ আসছিলো।

আমি মনে মনে সাহস করে বের হলাম।
আর ভালো লাগছেনা এভাবে।
এই ভয়েভয়ে থাকতে।
যা হবে দেখা যাবে।
আমি এখন জানি এই বাড়িতে আমি ছাড়াও আরো দুজন আছে।
আমি ড্রইং রুমের দরজার সামনে দাড়িয়েছি মাত্র দেখি আমার সামনে,,,,,
চলবে,,,

#পর্ব_৪_ও_শেষ_পার্ট

ওই বিদঘুটে কালো লম্বা দুটো মানুষ দাঁড়িয়ে।
এতো ভয়ংকর তাদের চেহারা।
পুরো শরীর তেলে চকচক করছিলো।
এই মুহুর্তে আমার মনে হচ্ছে এই দৃশ্য দেখার আগেই আমি মরে গেলাম না কেনো?
আমি কি করবো ভেবে না পেয়ে ওদের পাশ কেটে আমার রুমে যাওয়ার চেষ্টা করতেই আমি পড়ে গেলাম।
মনে হচ্ছে ওরা আমার পা টেনে ধরেছে।
পিছনে তাকিয়ে দেখি সত্যি তো,
ওরা আমার টেনে ধরেছে।
আমি আমার রুমের দরজাটা শক্ত করে ধরেছি,নিজের সর্বশ্ব দিয়ে দিয়ে নিজেকে বাঁচানোর চেষ্টা করে যাচ্ছি।
ইতিমধ্যে আমার বা হাতের আঙুলের সব নখ ভেঙে রক্তাক্ত অবস্থা।
মনেমনে আমি যতো সূরা জানতাম সব পড়তে শুরু করে দিয়েছি,আল্লাহকে ডেকে চলছি বারবার।

দরজার ধাক্কায় জেগে উঠলাম।
আমি তখনো মেঝেতেই শুয়ে।
আশেপাশে তাকিয়ে দেখি অসংখ্য জিনিস মেঝেতে ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে আছে।
ঘড়িতে থাকিয়ে দেখি দুপুর প্রায় ১২ টা বাজে।
আঙুলের রক্ত শুকিয়ে জমে গেছে।
আর প্রচন্ড ব্যাথা।
মাথাটা ভীষণ ঘুরছে।
কাল রাতে তাহলে ওরা আমায় কিছু করেনি।
দরজায় ধাক্কার আওয়াজ বেড়েই চলছে।
কোনমতে উঠে দরজা খুলতেই দেখি সোহান।
সোহানকে দেখে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললাম আমি।
ও এগিয়ে এসে বললো,
তুমি ঠিক আছো তো?
আর কি হয়েছে তোমার?
ঘরের এ অবস্থা কেনো?
তারপর আমি সোহানকে আগের রাতে ঘটে যাওয়া পুরো ঘটনা খুলে বললাম।
আর এও বললাম,
আমি জানি তুমি আমার কথা বিশ্বাস করোনা।
কিন্তু সত্যি এ বাড়িতে কিছু তো একটা আছে।

সোহান আমার ধারণাকে ভুল প্রমান করে বললো,আমি তোমায় অবিশ্বাস করিনা।
আসলেই এ বাড়িতে সমস্যা আছে।
আমি বললাম,
তুমিও কি কিছু ফিল করেছো?
সোহান বললো,
পারুলের সাথে ওই ঘটনার পর একদিন
তুমি ঘুমিয়েছো আমি অফিসের কিছু কাজ করছিলাম।
হঠাৎ কেমন একটা শব্দ কানে আসছিলো।
খসখস ধরনের।
মনে হচ্ছে কেউ কিছু কাটছিলো।
কি শব্দ হচ্ছে দেখতে দরজা খুলেই দেখি,
আমাদের দরজা বরাবর ঠিক নিচে,
মেঝেতে দুজন মোটা কালো লোক বসে মাথা উঁচু করে আমার দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।
আমি মূহুর্তেই দরজা বন্ধ করে দেই।
বিশ্বাস করো আমি প্রচন্ড ভয় পেয়েছিলাম।
কিন্তু সেই সময় এই বিষয়গুলো তোমায় বলা উচিত হবে না ভেবেই বলিনি।
কিন্তু এই বাড়িতে এমন একটা সমস্যা আছে জেনেও আব্দুর রউফ স্যার কেন আমাদের কাছে এই বাড়ি বেঁচলেন?

প্রশ্নউত্তর খোঁজার সময় এখন নেই।
এতোটুকু আমরা বুঝে গেছি এই বাড়ি আমাদের জন্য নিরাপদ না।
আর আমাদের বাসার খুব কাছাকাছি কোন বাসাও নেই এখানে।
খুব মনোরম নিরিবিলি শান্ত একটা পরিবেশ।
কিছুটা সামনে আছে এক ভাবীর বাসা।
আমরা আমাদের প্রয়োজনীয় কিছু জিনিসপত্র নিয়ে সেখানে চলে গেলাম।
মীরসরাই এ আমার এক খালাতো বোন আছে সেখানে আজ রাত থেকে কাল আমরা দিনাজপুরের উদ্দেশ্যে রওনা হবো।
দিনাজপুর আমার শশুড় বাড়ি।
কিন্তু বাড়িটা যেহেতু এখন আমাদের
তাই এই বাড়ির রহস্য জানাও এখন আমাদের কর্তব্য।
তাই এখন উউদ্দেশ্য ওই ভাবীর বাসায় যাওয়া আর সব জানা।
কেউ ই আমাদের এই বাড়ির বিষয়ে আগে কিছুই বলেনি।
কিন্তু এখন এসব জানা আমাদের প্রয়োজন।

ভাবী আমাদের দুজনকে হয়তো এভাবে দেখবেন আশা করেন নি।
কিছুটা ইতস্তত করেই প্রশ্ন করে বসলেন,
কি ব্যাপার ভাবী?
আপনারা এখন, এখানে?
কোন সমস্যা হয়নি তো?
আমি বললাম,
ভাবী সমস্যার কথাই তো জানতে এসেছি।
আশা করছি কোন কিছু লুকোবেন না।
ভাবী আমরা যে বাড়িটায় থাকি সেই বাড়িটায় কি কোন সমস্যা আছে।
ভাবী যেনো এবার একটু নড়েচড়ে বসলেন।
তারপর ভীত চোখে আবার প্রশ্ন করলেন,
কেন কিছু হয়েছে কি?
আমি আর থাকতে না পেরে পুরো ঘটনা খুলে বললাম।
তারপর ভাবী যা যা বললো তা শোনার জন্য আমরা মোটেও প্রস্তুত ছিলাম না।
হ্যা জানতাম কিছু তো একটা সমস্যা আছে।
কিন্তু এমন কিছু কখনোই ভাবিনি।

ভাবী যাযা বললেন,
আব্দুর রউফ বাসা করার ১ বছর পর
এসে এই বাসায় ওঠেন।
বাসাটা ওনার বউ এর ভীষণ পছন্দের।
উনি পেশায় ডিপুটি ইন্সপেক্টর (ডিআইজি) হওয়ায়,বাসায় খুব একটা সময় দিতে পারতেন না।
সেজন্য নিরিবিলি আর এমন শান্ত একটা জায়গায় বাসা করা।
বাসার সামনে পিছনে বাগান করা।
যাতে করে ওনার বউ বাচ্চার সুন্দর একটা সময় কাটে।
প্রচন্ড রাগী স্বভাবে মানুষ ছিলেন তিনি।
অল্পতেই রেগে যেতেন।
এবং প্রচুর ধনী ছিলেন।

সেই সময় আমাদের এলাকায় খুব
চুরি হচ্ছিলো।
কিন্তু চোর কে ধরতে পারাই ছিল মুশকিল।
কিন্তু এলাকার সবাই জানতো
চোর কে?
সাজুরাজু নামেই জমজ দুই ভাই একত্রে বড়লোকদের বাড়ি লুটতো।
সবসময় গায়ে তেল চপচপ করে মেখে
ঘুরে বেড়াতো তারা।
সবাই শুধুই মুখেই বলতো সাজুরাজুর কথা।
কিন্তু হাতেনাতে ধরার সুযোগ কখনোই
কেউ পায়নি।
দেখতে যেমন বিশাল দেহী,কালো লম্বা দৈত্যের মতোন।
চুরির ক্ষেত্রেও ছিল ভীষণ চালাক চতুর।
একবার ওরা রাত প্রায় ২ টা রউফের বাড়িতে চুরি করতে গিয়ে ধরা পড়ে।
যদিও আমরা নিজ চোখে দেখিনি,
তবে শুনেছিলাম।
রউফ নাকি সাজুরাজুকে পিটিয়ে মেরে ফেলেছিলো।
ওই সময় ওরা নাকি একটু পানির জন্য আকুতি-মিনুতি করলে ওদের মুখে মেরে দাঁত ভেঙে দিয়েছিলো উনি।
তারপর তাদের রান্নাঘরে আটকে রাখা হয় সারারাত।
যদিও সকাল বেলা আমারা কেউই ওদের লাশ দেখতে পারিনি।
কোথায় গেছে জানিনা আজ অব্দি।
তবে তারপর থেকে এলাকায় আর
চুরি হয়নি।
এগুলো ওনাদের বাসায় কেয়ারটেকার সিদ্দিকেরর মুখেই শোনা।

তার ঠিক কিছু দিনেই পরেই কোন এক অজানা কারণে তারা পাড়ি দিলেন কুয়েতের উদ্দেশ্য।
আর রেখে গেলেন কেয়ার টেকার
সিদ্দিক কে।
সেও সপ্তাহ খানেক পর বাড়ি ছেড়ে দিলো।
তারমতে রাত হলে বাড়িতে কান্নার আওয়াজ,চিৎকারের আওয়াজ পাওয়া যায়।
অটোমেটিক লাইট জ্বলে নেভে।
এলাকার সবার ধারণা ছিল,
এই ঘটনাটা আমরা সবাই জানি বিধায় আমাদের এতো ভয়।
নয়তো এসব কিছুই নয়।
এরপর ৪ বছর বাসা একদম ফাঁকা ছিল।
তারপর আপনারা এলেন।
আপনাদের দেখে আমাদের মনেই হয়নি আপনাদের ওই বাড়িতে কোন সমস্যা হচ্ছে।
মনে করেছিলাম,
আসলেই ওসব হয়তো কিছুই নয়।

ওই ঘটনার প্রায় দুইবছর হয়ে গেছে।
হয়তো ওই বাড়ির মালিকের ও কোন সমস্যা হয়েছিলো ওখানে।
ওনারা আমাদের এ বিষয়ে আর কিছুই বলেন নি।
আমরাও আর মাথা ঘামাইনি।
বেঁচে ফেরেছি এই তো অনেক।
তবে কেন জানি মাঝেমাঝে সাজুরাজুর জন্য কষ্ট হয় আমার।
মেরে ফেলতে হবে কেন ওদের।
খুব কষ্ট পেয়েছে হয়তো ওরা।
ওই বাসাটা বন্ধ করে রেখে এসেছি আমরা।
জানিনা এখন কি অবস্থা ওখানকার।

বি.দ্র:কোনপ্রকার ভুলত্রুটি থাকলে ক্ষমাশীল দৃষ্টিতে দেখবেন এবং নিজেস্ব মন্তব্য জানাতে অবশ্যই ভুলবেন না।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here