প্রজাপতি মন (পর্ব-10)

0
585

#প্রজাপতি মন (পর্ব-10)

♡আরশিয়া জান্নাত

আমি বুঝলাম না তুই এতো নির্দয় ক্যান হাসিব ভাই? আগে যখনই ফোন করতাম সারাক্ষণ আনু এই করছে আনু ঐ করছে। এসব বলে বলে কান পাকাইতি। আর এখন যখন আনু সত্যিই তোর বৌ তোর কোনো পাত্তাই নাই! আমি ভাবছিলাম বিয়েটা যেমনই হোক তুই বলবি ভাবীর আর তোর শ’খানেক ছবি তুলতে। কিন্তু তুই এমন কিছুই বললিনা। একটাদিন দেখলাম না ফোনে কথা বলতে কিংবা মিট করতে। এসবের মানে কি?
মানুষ নতুন বিয়ে করলে এমন করে?

তো কেমন করে? বিয়ে হয়েছে বলে কি এখন ঘন্টায় ঘন্টায় কল করে কথা বলতে হবে? আর অনুষ্ঠান তো হয়নি ওখানে এতো ছবি তোলার কিছু ছিল না।

নাহ এভাবে বললে হবে না কিছু একটা তো হইছেই। তোকে যখন উনি জিজ্ঞাসা করলো তুই রিপ্লাই করিস না। তোদের মধ্যে কি কিছু নিয়ে ঝগড়া চলছে?

বেশি পাকামি করতে আসবিনা। ও আমার বন্ধু ওরে তো কোনোদিন প্রেমিকা ভাবিনাই যে ওর সাথে বিয়ে হওয়াতে খুশিতে গদগদ হবো। আর ও যেই বোরিং বন্ধু হিসেবে টলোরেট করা গেলেও বৌ হিসেবে করা যাবে কিনা কে জানে!

তুই এসব মুখে বলছিস নাকি মন থেকে বলছিস জানিনা। তবে আমি বিশ্বাস করি একটা ছেলে আর একটা মেয়ে যখন খুব ভালো বন্ধু হয় এখানে কেবল বন্ধুত্ব থাকেনা। বন্ধুত্বের চেয়ে বড় কিছু ঘটে।

এইসব নিয়ে গবেষণা বেশি করোস বলেই তোর কোনো বান্ধবী নাই। ফাজিল।

এখন বুঝতেছোস না। তবে আমি সিওর একদিন বুঝবি! আর শোন কথাটা এমনি এমনি বলিনাই। মামী বলছে জিজ্ঞাসা করতে। তোর কান্ডকারখানা সবার চোখেই পড়তেছে। মামী বললো বিয়ের দুই সপ্তাহ হয়ে গেল অথচ তুই একটাবারও ও বাড়ি গেলি না মিট করলিনা। আমি যেন তোকে বলি ভাবীকে নিয়ে ঘুরে আসতে।

ঘুরতে যাওয়ার কি আছে? আমরা এমনিতেই অনেক জায়গায় ঘুরছি। আর আনুর পড়াশোনা আছে, আমি চাইনা আমার জন্য সেখানে ইন্টারাপ্ট হোক।

ওহ আচ্ছা এই ব্যাপার! তবে আমার কি মনে হয় জানিস তুই যে ইগ্নোর টা করছিস এতেই উনার বেশি ইন্টারাপ্ট হচ্ছে। আলাদা প্রেশার ক্রিয়েট না করে সম্পর্কটা স্বাভাবিক কর। এই মোমেন্টগুলো ইনজয় কর। শেষে কিন্তু পস্তাবি।

তুই আমার ছোট নাকি আমি তোর ছোট? এমনভাবে জ্ঞান দিচ্ছিস যেন বড় ভাই বিয়ে করে অভিজ্ঞতার ঝুলি খুলে বসছে!

মাত্র এক বছরের ডিফারেন্স। এইটুকুতে কেউ ভাইও ডাকে না নেহাত আমি তোকে সম্মান করে ভাই ডাকি। আর শোন আমি তোর মতো কাঠখোট্টা না অন্য মেয়েদের বেলা উজাড় করে ভালোবেসে বৌয়ের বেলা জিরো ফিলিংস হয়ে থাকবো। এজন্য প্রেম ভালোবাসায় আমি নাই। আমার সব ভালোবাসা উড বির জন্য সংরক্ষিত।

ভালো তো ফুপ্পীকে বলি এভার তোর বিয়ের ব্যবস্থা করুক।

বল বল আমিতো দুই পায়ে রাজী।

হাসিব আরাফকে ঘুষি দিতে উদ্যত হলো আরাফ অবস্থা বুঝে দৌড়ে পালালো।
আরাফের কথাগুলো হেলায় ফেলা গেল না। সে ঠিকই মনে মনে কিসব ভেবেই যাচ্ছে!

আনহা ক্লাস শেষ করে বের হতেই দেখে হাসিব গেইটে বাইক নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে সেই আগের মতোই। অনেক মাস পর হাসিবকে এখানে দেখে যেমন খুব ভালো লাগছে তেমনই ভয় হচ্ছে আবার কোন ঘটনা ঘটে! সে কি বলতে আসছে এইসব বিয়ে মানেনা আনু যেন ডিভোর্স দিয়ে দেয়? নাকি অন্য কেউ আছে এখানে? আনহার ক্লাসমেট হিয়া আর এনি বলল, আনহা দেখ তোর বর এসেছে। আমাদের ট্রিট দেওয়ার ভয়ে এতোদিন আসেনি আজ তো ছাড়বোনা।

একটা বিয়ের জন্য কয়বার ট্রিট লাগে তোদের? আমার থেকে না আদায় করেছিস?

উফফ বুঝেনা বলদি। তোদের বিয়ে একটা হলেও আমরা দুইদিকেই ট্রিট পাবো। আফটার অল হাসিব ও আমাদের ফ্রেন্ড। ওরে এতোদিন নাগালে পাইনাই বলে নিতে পারিনাই। আজ যখন তোকে নিতে আসছে এই ই সুযোগ।

আস্সালামু আলাইকুম দুলাভাই! কেমন আছেন?

হাসিব ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে বললো, পেত্নিদের মুখে আজ চন্দনফুল উঠলো কেমনে? জীবনে তো কোনোদিন সালাম দেস নাই আজ হঠাৎ?

এনি– শোন সম্পর্ক বদলে গেছে বুঝছোস। এখন তুই আমাদের ফ্রেন্ডের হাবি মানে আমাদের দুলাভাই। তো এখন একটু রেসপেক্ট তো ডিজার্ভ করিস!

ও আচ্ছা! ট্রিটখোর বুঝছি তো ক্যান এতো আদিখ্যেতা। আগেই বলে দিচ্ছি আমার পকেটে এক টাকাও নাই কোনো ট্রিট দিতে পারমুনা।

হিয়া– দেখ এটা কিন্তু হবেনা। যদি বিয়েটা আনুষ্ঠানিকভাবে হতো তোকে কতগুলি খরচ করতে হতো, গেইট ধরা হাত ধোঁয়ানো ইত্যাদি ইত্যাদি। এসব খরচ তো বেঁচে গেছে তাই না? এখন সামান্য একটু ট্রিট দিতে পারবি না!

আনহা– তোরা থামবি? ও তো বলছেই টাকা নাই বাদ দে। তোদের বেশি খাইতে ইচ্ছে করলে চল আমি তোদের খাওয়াবো।

হাসিব এবার আনহার দিকে তাকিয়ে বললো– পাশেই নতুন একটা ক্যাফে খুলছে চল সবাই।

আনহা– শান্তি তো? যা এবার। আমি যাই।

এনি– ওমা তুই যাবি না?

আনহা– তোদের দুলাভাই ট্রিট দিবে আমার কি! আমি এখন খুব টায়ার্ড বাসায় গিয়েই ঘুম দিবো।

হাসিব– জীবনে আছে কি ঘুম আর পড়া ছাড়া! যেতে যখন বলছি সবাই যাবে। তাছাড়া আজ আসছি একটা কাজে আজাইরা কোথাও হাসিব আসেনা।

এনি আর হিয়া একে অপরের দিকে তাকিয়ে বললো, তোরা এমনভাবে কথা বলছিস কেন? সব ঠিকঠাক তো?

আনহা– আরেহ তেমন কিছু না জানোস তো ও ত্যাড়া কথা বলতে পছন্দ করে।

এনি– কিন্তু তোর বেলা না! যাই হোক চল তাড়াতাড়ি ক্যাফেতে যামু শুইনাই ক্ষুধা বাড়ছে।

হাসিব একটা রিকশা ঠিক করে এনি আর হিয়াকে উঠিয়ে বাইক স্টার্ট দিলো। আনহা দাঁড়িয়ে ভাবছে ও কি রিকশায় উঠবে নাকি বাইকে!
হাসিব তখন রিকশাওয়ালাকে বললো মামা চালান।
আনহা বুঝলো হাসিব ওকে বাইকে উঠতে বলছে।

এনিদের বিদায় করে হাসিব আর আনহা বাসায় ফিরছে এমন সময় হাসিব বলল, মা বলেছে তার বৌমাকে নিয়ে কোথাও ঘুরে আসতে। তা উনার বৌমার কি টাইম আছে!

নাহ।

বেশ তবে সে যেন বলে দেয় তার শাশুড়িমাকে

আনহা মনে মনে বললো, মা বলেছে বৌমাকে ঘুরিয়ে আনতে, বর তো বলেনি! কারো উপর দায়িত্বের বোঝা বাড়িয়ে কোথাও যাবেনা। যেদিন তুই নিজে চাইবি সেদিন যাবো। এর আগে না।

হাসিব আর কিছু বললো না। পুরোটা পথ কাটলে অসহ্যকর নিরবতায়।
????
আনিসা মেয়ের রুমে এসে বললেন, আনু দু চার সেট কাপড় গুছিয়ে নে তো।

কোথায় যাচ্ছ?

আমরা না তুই যাচ্ছিস। একটু পর হাসিব আসবে তোকে নিতে।

হঠাৎ?

হঠাৎ কই? বিয়ে হয়েছে শ্বশুরবাড়ি যেতে হবেনা?

সে তো যেতে হবেই। কিন্তু তাই বলে এভাবে দু চার কাপড় নিয়ে!

তোর শাশুড়ির শরীর খারাপ। তাই তোর বাবা বলেছে তুই গিয়ে কিছুদিন থেকে আয়।

ওহ। আচ্ছা

শোন ওখানে গিয়ে আবার বই নিয়ে পড়ে থাকিস না। হাতে হাতে কাজ এগিয়ে দিবি, তুই কিন্তু এখন ও বাড়ির বৌ। বিষয়টা মাথায় রাখিস।

হুম।

কি হু হা করছিস! যা ব্যাগ গোছা। ও চলে এলো বলে।

আনহা ব্যাগ গোছানো শুরু করলো। কোথায় সে ভেবেছিল রাজপুত্রের মতো করে ব্যান্ড বাজিয়ে হাসিব আসবে, সেও রাণীর বেশে শ্বশুরবাড়ি যাবে। কিন্তু হলো কি!! উফফ কিচ্ছুই মনমতো হলোনা।
ওখানে গিয়ে সে কিভাবে থাকবে হাসিব তো ওর সাথে কথাই বলেনা! হাসিবের সাথে বিয়ে হওয়াটা ওর জন্য কতো সুবিধার ছিল যদিনা আজ পরিস্থিতি এমন হতো। সবাই ই তো চেনাজানা কোনো টেনশনই ছিল না। অথচ দেখো আসল মানুষটাই আজ সব টেনশনের মূল।
হাসিব কি আর কখনোই ঠিক হবেনা???

চলবে,,,,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here