#প্রজাপতি মন (পর্ব-14)
♡আরশিয়া জান্নাত
হাসিবদের ক্যাম্পাসে দুই দলের মাঝে প্রচুর মারামারি লেগেছে। সেখানে তার বেশ কয়েকটা ফ্রেন্ড মারাত্মকভাবে ইনজুরড। হাসিব সেই খবর পেয়েই ছুটে গেছিল।
বিকালে নাফিজ সাহেব আনহাকে ফোন করে বললেন, আনহা হাসিবকে একবারো ফোন করেছিলি?কিংবা দেখা হয়েছে? একটু আগে ওদের কলেজে অনেক বড় হাঙ্গামা হয়েছে। অনেক ছাত্র আহত হয়েছে। হাসিব তখন কোথায় ছিল কে জানে। ফোন করে খবর নে ওর।
চারপাশের শোরগোলে ফোনটা হঠাৎ ই কেটে গেল।তখনই তো হাসিব বেরিয়েছে, নিশ্চয়ই খবর পেয়েই গেছে ওখানে। ওর তো আবার অভ্যাস মারামারিতে আগে থাকা। টেনশনে আনহার হাত পা ঘামতে লাগলো। টিভিতে তখনো ব্রেকিং নিউজ চলছে, ওখানের ভিডিও ফুটেজ দেখে বোঝাই যাচ্ছে কতোটা গুরুতর মারামারি লেগেছিল।
আনহা হাসিবের নাম্বার ডায়াল করলো, ফোন রিং হচ্ছে অথচ কেউ রিসিভ করছেনা। আনিসা মেয়ের কান্নাকাটির শব্দ শুনে দৌড়ে এসে বললেন, কিরে কি হয়েছে?
আনহা তখনো কেঁদেই যাচ্ছে। কান্নায় অস্থির হয়ে বললো,”ও বাড়িতে ফোন করো মা হাসিবের খবর নাও”
কথাটা শেষ করতেই সে অজ্ঞান হয়ে পড়ে গেল।
তুমি জানো আনহা অল্পতেই প্যানিক হয়ে যায় খবরটা আমাকে না বলে ওকে বলতে গেলে কেন?
আমি ঐখানে ডিউটিতে ছিলাম মাথা ঠিক ছিল না,তাই ওকে ফোন করেছি। আমার এই ব্যাপারটা মাথাতেই ছিল না! এখন ওর কি অবস্থা জ্ঞান ফিরেছে?
নাহ। ফিরবে হয়তো কিছুক্ষণ পর! হাসিবের খবর নিলে ও ঠিক আছে তো?
আরেহ ওর কিছু হয়নি। ও তখন ওখানেই ছিল না। ওর ফ্রেন্ড কয়েকটা ইনজুরড হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে ও ঐখানে ছিল সারাদিন।
যাক আল্লাহ বাঁচাইছে। ওকে আনহার কথা বলেছ?
হু। ওরা পথেই এতোক্ষণে চলে এসেছে বোধহয়।
হাসিব মেজাজ খারাপ করে আনহার বেডের পাশে বসে আছে। ইচ্ছে করছে ওকে টেনে তুলে আচ্ছামতো বকতে। এ নাকি দুদিন পর ডাক্তার হবে। রুগীর সিরিয়াস অবস্থা শুনে নিজেই তো হার্টফেল করে পড়ে থাকবে, চিকিৎসা করবে আর কি? মেয়েটা এতো নরম মনের ক্যান? ঘটনা সম্পূর্ণ না শুনেই এতো প্রেশার কেউ নেয়? হাসপাতালে এতো ভীড়ের মাঝে ফোনের রিংটোন ও শুনতে পায়নি, তাই রিসিভ করতে পারেনি। পরে যখন কল ব্যাক করলো আনিসা বললো আনহা সেন্সলেস হয়ে গেছে। কিসের উপর দিয়ে সে এখানে এসেছে নিজেও জানে না। আর মহারাণী আরামসে এসির নীচে শুয়ে আছে! যত্তসব ন্যাকা।
হাসিবের মা রুমে এসে বললো, কি রে এখনো জ্ঞান ফেরেনি? ওকে ডাক না এমন হাবলুর মতো বসে আছিস কেন? আজব ছেলে! তোর টেনশনে মেয়েটা মরে যাচ্ছে আর তুই বলদের মতো হা করে বসে আছিস? আরো বেশি করে মারামারি কর যা? তোর স্বভাব জানে বলেই মেয়েটা এমন ভয় পেয়েছে। দুইদিন পরপর যে কান্ডকারখানা ঘটাস! এই ছেলে কেমন পাষাণ! এখন পর্যন্ত একটু দরদ দেখাতে দেখছি না। কোথায় ডাক্তার ডাকবে, ওর চোখেমুখে পানি নিয়ে তোলার চেষ্টা করবে তা না!
সর সর এখান থেকে হারামজাদা।
হাসিব মুখ কালো করে বললো, তুমি আমাকে অযথাই বকছো মা! ওকে ডাক্তার ইনজেক্ট করে গেছে, ওর জ্ঞান ফিরতে টাইম লাগবে। এমন ননীর পুতুল মেয়ে দেখেনি বাবা। এইটুকুতেই কেল্লা ফতে!
খবরদার একদম উল্টাপাল্টা বলবি না ফাজিল। মেয়েটা তোকে কত ভালোবাসে সেটা দেখোস না! বজ্জাত,তোর নসীবে এমন মেয়ে জুটছে এটা তোর সাত কপালের ভাগ্য।
হাসিব আর কিছু বললোনা। ওর মা যে মুডে আছেন বেশি কিছু বললে এখন মাইর দিতেও কুন্ঠাবোধ করবেন না, ভুলেই যাবেন এটা ছেলের শ্বশুরবাড়ি।
??????
নিশিথা যখন থেকে জেনেছে হাসিবের সাথে আনহার বিয়ে হয়েছে ওর টেনশনে কিছুই ভালো লাগছেনা। হাসিব খুব ভালো ছেলে ওর সাথে আনহা সুখেই থাকবে কিন্তু এখানে যে অনেক বড় একটা মিসান্ডারস্ট্যান্ডিং আছে সেটা তো কেবল নিশিথা জানে। সেদিনের পর হাসিব আনহাকে টোট্যালি ইগ্নোর করেছে এ তো নিশিথা নিজ চোখে দেখেছে। সেখানে আনহা কি অবস্থায় আছে কে জানে! নিশিথা চেয়েছিল তিতলি সেজে সবটা ঠিকঠাক করবে কিন্তু হাসিব তো তখন ওর কল রিসিভ ই করেনি। আনহার জন্য মনটা খুব খারাপ লাগছে। মা যখন ফোনে বলেছে আনহার সাথে কি কি ঘটেছে ওর চলে আসার পর থেকে। নিশিথার ভেতরটা দুমড়ে মুচড়ে একাকার হয়ে গেছে। ওর বোনটা দোষ না করেই এতোকিছু সহ্য করেছে ওর জন্য। ওর রাগ হওয়াটাই স্বাভাবিক। অথচ নিশিথা কি না আনহার অবহেলায় কত কি ভেবেছে।
নিশিথা ঠিক করলো ও হাসিবের সঙ্গে কথা বলবে, সবটা ভালোমতো বুঝিয়ে বলবে। এখানে আনহার কোনো হাত ছিল না এটা ভালোমতো বোঝাতে হবে। নিশিথাকে এমনিতেও কেউ ভালো বলেনা। হাসিব ও বলবেনা তবুও সমস্যা নেই। আনু অন্তত ভালো থাকুক। এসব ভাবতে ভাবতেই নিশিথার আবার গা গুলিয়ে এলো।
শোনো নাহিয়ান তোমার বোনকে বলে দাও ভালো করে এসব আমি একদম মানবোনা। মনটা এমন টিকটিকির মতো ছোট না করে বড় করতে বলো। কঠিন পরিস্থিতিতেও মানুষ কত স্ট্রং থাকে আর সে কি না এইটুকুতেই,,,, যাই হোক আমি যেন আর কখনোই এমন ঘটনা না শুনি।
আনহা অন্যদিকে ফিরে বললো, কাউকে তো বলিনি নিজের কাজকর্ম ফেলে আমার পাশে বসে ঘটনা শুনতে!
নাহিয়ান শুনেছ? কেমন আনগ্রেটফুল তোমার বোন?
নাহিয়ান বিরক্ত হয়ে বললো, উফফ তোমাদের ঝগড়া তোমরাই করোনা আমাকে মাঝে রেখে বলছো কেন? আমার গেইমে ডিস্টার্ব হচ্ছে তো!
ঝগড়া করলাম কই?
তো কি এগুলো? ধুরর আমি বরং অন্য রুমে গিয়ে বসি। তোমরা শান্তিতে ঝগড়া করো।
হাসিব ওর যাওয়ার দিকে তাকিয়ে বললো, পাইছি একটা মাত্র শালা, তাও একদম বোনের মতো ঘাড় ত্যাড়া।
কি বললি আমি ঘাড় ত্যাড়া?
বিশ্বাস না হলে ঘাড়ে হাত দিয়ে চেক করলেই পারে?
আনহা ঘাড়ে হাত দিয়ে বোঝার চেষ্টা করলো।
শেষে উঠে এসে হাসিবের সামনে ঘাড় দেখিয়ে বললো, দেখ চেক করে সোজাই আছে।
হাসিব আনহার ঘাড়ের কালো তিলটা আলতো করে ছুঁয়ে দিল। এই জায়গায় কারো এত্ত সুন্দর তিল থাকে? চুলগুলো ভালোমতো উপরে না তুললে এটা দেখার উপায় নেই। আনহা নিজেও জানেনা সে কত সুন্দর একটা জিনিস হাসিবকে আবিষ্কার করতে সাহায্য করেছে।
কি ত্যাড়া মনে হয়েছে? জানি হয় নি। সো আমাকে নেক্সটটাইম ঘাড়ত্যাড়া বলতে আসবিনা।
হাসিব শয়তানি মার্কা হাসি দিয়ে বললো, মানুষ যে কতোটা বেকুব হলে নিজের ঘাড় এমন মেলে ধরে একটা বলদিকে না দেখলে বুঝতাম না। যা দেখেছি আজ অন্য কোনো ছেলে দেখলে কি যে হতো!!
আনহা হাসিবের কথায় হকচকিয়ে সোজা হয়ে দাঁড়ালো। এইটুকুতে আবার কি দেখে ফেলেছে সে? এই ছেলেটার চোখ নাকি অন্যকিছু। এতো কেয়ারফুলি থাকে ওর সামনে তাও কিসব বলে!
তবুও মুখে বললো, অন্য কাউকে তো দেখাইনি নিজের স্বামীকে দেখিয়েছি। এখানে বোকামির কিছু নেই।
আনহার মুখে এমন কথা শুনে হাসিবের মনটা কেন জানি ভীষণ ভালো হয়ে গেল। সে আনহার কানের কাছে ফিসফিস করে বললো, আজ থেকে তোর উঁচু করে ঝুঁটি করা, খোঁপা করা একদম নিষিদ্ধ। তোর ঘাড়ের তিলটা যেন আমি ছাড়া কেউ না দেখে। মাইন্ড ইট!
আনহা নিথর হয়ে দাঁড়িয়ে রইলো। সে কি এই পৃথিবীতে আছে নাকি অজ্ঞান হয়ে গেছে? এটাকেই বুঝি অ্যানাসথেসিয়া বলে?
চলবে,,,